বাস্তব কল্পনার চেয়ে বিস্ময়কর, ষড়যন্ত্র রাষ্ট্রযন্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী : বাংলাদেশের রাজনীতির কি পুনরুজ্জীবন সম্ভব?

২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশে যে ভোট হলো এবং তার যে ফলাফল আমরা পেলাম, দুটোই বাস্তব ঘটনা, দুটোই বিস্ময়কর : আমরা কেউই এ রকমটা আশা করিনি, এবং কল্পনায় একটা পেন্ডুলাম সংসদ ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমরা সবাই সতর্ক হতে চাই, যারা আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং আমরা যারা স্বপ্ন দেখছি, আমাদের আকাশ, আমাদের বাতাস, কিন্তু চিরদিন কী পদ্ধতি আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি, আমরা যেন লজ্জাকরভাবে অন্য কোনো দেশের নাম না নিই, একবারও যেন না বলি আমরা সিঙ্গাপুর হতে চাই, মালেশিয়া হতে চাই, থাইল্যান্ড হতে চাই, আমরা যেন দেশে ফিরি, আমরা যেন দেশটাকে ভালোবেসে, পৃথিবীর সকল সম্ভাবনার দুয়ারে কড়া নাড়তে পারি, তেমনটা একবার পেরেছিলাম, এক অসম যুদ্ধে অসীম সাহস নিয়ে জড়িয়ে পড়ে, তেমনটা আবার সম্ভব, এক অদম্য ইচ্ছায় বাংলাদেশের রাজনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে, কেন পুনরুজ্জীবন? কারণ ১১ জানুয়ারি ২০০৭-এ বাংলাদেশের রাজনীতি মৃত্যুবরণ করেছিল।

ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে STATESMAN, আমাদের আগামী প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রীরা শুধু যদি STATESMAN হতে পারেন, তাহলে খুব সহজেই রাজনীতির পুনরুজ্জীবন শুরু হয়ে যেতে পারে। অপ্রত্যাশিত কিছু করবার প্রয়োজন নেই, সুবিশাল কাজের চাপ নিয়ে দিশেহারা হবার প্রয়োজন নেই, one actively engaged in conducting the business of a government or in shaping its policies, সক্রিয় কিছু লোক সরকার পরিচালনায় কূটনৈতিকভাবে পারর্দশী, শুধু এটুকুই, এমন এক ডজন লোকই পারে, পদ্ধতিগত ভাবনাকে সুসংগঠিত করতে।

ষড়যন্ত্র যেন চোখ না এড়ায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র সুসংহত নয়, ষড়যন্ত্রের কাছে তা একেবারেই নাজুক, এবং এক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সতর্কতা যিনি অবলম্বন করতে পারেন, তিনি STATESMANই, সংসদ আপনার সরকার আপনার, কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র যদি আপনার না হয়, তাহলে নাজুক আপনার সরকার ভিত্তিহীন আপনার সংসদ, শুধু রাষ্ট্রপতি দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে আয়ত্তে রাখা যায় না, রাষ্ট্রের সংবিধান আছে, তাকে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে, রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী আছে, তার চরিত্র নাটকীয় ও বহুরূপী, রাষ্ট্রের সচিবালয় আছে, সেখানে চরম অদক্ষতা বাসা বেঁধেছে, রাষ্ট্রের আদালত আছে, সে মোটেই স্বাধীন নয়, রাষ্ট্রের প্রচার ও গোয়েন্দা বিভাগ আছে, সেখানে ভয়ংকর সব লোকের বসবাস। কিছু STATESMAN আপনার লাগবেই শেখ হাসিনা, এছাড়া আপনি পারবেন না, আর তা লাগবে পাঁচ বছর আপনার জন্য, আর আমাদের জন্য : ২০০৯-২০১৩, ২০১৪-২০১৮, ২০১৯-২০২৩। রাষ্ট্রযন্ত্রের ও সংবিধানের সব দুষ্টক্ষত সারাতে পনেরো বছর লাগবেই। তাতেই পুনরুজ্জীবিত হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতি।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৮ comments

  1. নীড় সন্ধানী - ৪ জানুয়ারি ২০০৯ (৪:১৮ পূর্বাহ্ণ)

    আমাদের আগামী প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রীরা শুধু যদি STATESMAN হতে পারেন, তাহলে খুব সহজেই রাজনীতির পুনরুজ্জীবন শুরু হয়ে যেতে পারে।

    জানিনা কোন রাজনীতির কথা বলেছেন। কিন্তু যে রাজনীতি ৩৮ বছরে দেখেছি সে রাজনীতির পুনরজ্জীবন দেখতে চাই না। সে রাজনীতির চিরমৃত্যূ ঘটুক। নিরাপদ হোক মানুষের জীবন, জীবিকা।

    দুবছরের অনাহারী গনতান্ত্রিক সুযোগ সন্ধানীরা ইতিমধ্যে তৎপর হয়ে গেছে নানান জায়গায়। ধার দিচ্ছে পুরোনো ছুরিগুলোতে। বন্দুকের মাজল পরিষ্কার করে নিচ্ছে দ্রুত। নতুন নেতৃত্ব এইসব উৎপাত কতটুকু শক্ত হাতে দমন করতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়। গনতন্ত্রে ফেরার আত্মতৃপ্তির চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা অনেক বেশী জরুরী।

    • মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০০৯ (৫:০৭ অপরাহ্ণ)

      আমাদের ৩৮ বছরের সবকিছুকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে আপনার হাতে সবসময়ে দেখতে পাই সর্বশেষ দুবছরের কীর্তিগুলো পড়ে থাকে, তারা হাসে, কারণ সফলতার সাথে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, আপনি হাসেন না, কারণ আপনি তো গত দুবছরে জন্মের পর থেকে দেখা ৩৬ বছরের রাজনীতির চিরমৃত্যুই কামনা করেছেন।

      ২০০৬-এর নির্বাচন অনুষ্ঠানের রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব হয়নি বলে যে ১১ জানুয়ারি ২০০৭-কে আসতে হলো, এই যে দিনটা এলো, এর মধ্য দিয়ে, বাংলাদেশের রাজনীতির মৃত্যু হয়েছিল। চিরমৃত্যু যে হয়নি, তা বোঝা গেল, ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮-এর নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। এখন এ জায়গা থেকে আমরা ভাবছি বাংলাদেশের রাজনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটানো যায় কি না? এখন আপনার প্রশ্ন হলো কোন রাজনীতি? আমাদের সবসময়ের উত্তর : বাংলাদেশের রাজনীতি। তাহলে কেমন সে রাজনীতি? যে রাজনীতির হাত ধরে বাংলাদেশের সৃষ্টি, সে রাজনীতিই বাংলাদেশের রাজনীতি। বাংলার মানুষের মুক্তির রাজনীতি। শেখ মুজিবের, তাজউদ্দিনের, মণি সিংহের রাজনীতি। ৭৫ পরবর্তী উল্টোপথে চলতে চলতে ৯০-এর স্বৈরাচার পতনের রাজনীতি। কিন্তু আবার উল্টোপথে চলা শুরু খালেদা জিয়ার একতরফা ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠান, এর পর পুন:নির্বাচন অনুষ্ঠানের রাজনীতি। কিন্তু ৯৬-এর আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শুরু আরেক উল্টোপথ : জঙ্গি হামলা, সে পথ ধরে শেষ পর্যন্ত ২০০১-২০০৬-এর দু:শাসন, পাক সার জমিন সাদ বাদ। এই উল্টোপথের চলন থামানো আজো আমাদের রাজনীতির দ্বারা সম্ভব হয়নি, বরং হয়েছে ১১ জানুয়ারি ২০০৭, সেখান থেকে অন্ত:সলীলা রাজনীতি, উপদেষ্টা পরিষদ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮। এবার ঠিক এখান থেকে আবার কী করে সম্ভব বাংলাদেশের রাজনীতির পুনরুজ্জীবন? এটাই এখনকার সবচেয়ে বড় ভাবনা।

      • নীড় সন্ধানী - ৫ জানুয়ারি ২০০৯ (৪:৫০ পূর্বাহ্ণ)

        ১১ জানুয়ারি ২০০৭-কে আসতে হলো, এই যে দিনটা এলো, এর মধ্য দিয়ে, বাংলাদেশের রাজনীতির মৃত্যু হয়েছিল।

        এই মৃত্যূ বহুল কাংখিত ছিল। এই মৃত্যূর কারনেই আওয়ামী লীগ পরিবর্তনের শ্লোগান আনতে বাধ্য হয়েছে, পরিবর্তন ভাবতে বাধ্য হয়েছে। এই মৃত্যূর কারনেই সারাদেশের মানুষ ভোটার কাম জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছে, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা পেয়েছে, অসাধারন একটা নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হয়েছে। বিএনপি জামাতের দুরভিসন্ধিমূলক তৎপরতাকে গনপ্রত্যাখ্যান করানো সম্ভব হয়েছে। ১/১১ না হলে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আওয়ামী লীগ এই বিজয় দেখতে পেতো না। মঈন ইউ আহমদের কাছে আওয়ামী লীগের চির কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

        ছবিযুক্ত ভোটার সহ জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজগুলো অতীতে কোন রাজনৈতিক দল কখনোই করতে পারে নি, করার উৎসাহ দেখায়নি। কারন জনগনের শক্তির কথা মুখে বললেও পুরোপুরি বিশ্বাস করে না জনগনের শক্তিতে। পুষতে হয় দলীয় ক্যাডার-গডফাদার, তেলাতে হয় সেনাকর্তাদের, পদধুলি নিতে হয় পশ্চিমা কুটনীতিকদের। কিন্তু এবারের নির্বাচন প্রমান করেছে ম্যান্ডেট দেবার রাস্তাটা মসৃন করা হলে জনগন যাকে চায় তাকেই ক্ষমতায় বসাতে পারে। ত্বত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই মসৃন করার কাজটাই করেছে। জনগনের শক্তি প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। এজন্য আমরা আজীবন ঋনী থাকবো ১/১১ এর ‘অসাংবিধানিক’ সরকারের কাছে।

        গত দুবছর দুঃশাসন ছিল কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু আমি এখনই নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমরা গত দুবছর রাজনীতিহীন ভাবে ভালো ছিলাম। আমার কাছে রাজনীতির কোন ভুমিকা নাই। আমার চারপাশে যে শত শত মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত কাটাই, তাদের কারো কাছেই রাজনীতির কোন ভুমিকা নাই। আমরা বরং নিরুপদ্রপ ছিলাম। আপনি বাংলাদেশে বসবাস করে থাকলে আপনিও নিশ্চয়ই ভালো ছিলেন।

        আগামী দিনগুলোতে কেমন থাকবো তার লক্ষন দেখা দিতে শুরু করেছে। একটা উদাহরন দেই। নির্বাচনের তিন দিন পরই আমার কাছে তিনজন লোক আসে অফিসে। তাদের সাথে কথোপকথনের কিছু অংশ ছিল এরকমঃ
        -স্যার আমরা এসেছি,
        -কী করতে পারি?
        -আমাদের তো চেনেন নিশ্চয়ই। আমি সাজ্জাদ…..কোম্পানীর পার্টনার …..কলেজের ভিপি। গত কয়েক বছর লুকিয়ে আর জেলে ছিলাম।
        -আচ্ছা তাই নাকি
        -এখন তো সব কাজগুলো আমাদের কোম্পানীকে দিতে হবে।
        -আপনারা তো অলরেডী করেন, তাই না?
        -করি, কিন্তু বাকী যতগুলো আছে সব আমাদের দিতে হবে
        -অন্যগুলো তো অন্যান্য কোম্পানী পেয়েছে
        -এখন ওদের বাদ দিতে হবে, আমাদের সব দিতে হবে
        -এটা কী করে হয়, আপনারা এই কাজ নেয়ার সময় বলেছিলেন অন্য কাজে হাত দেবেন না
        -বলেছি, কিন্তু এখন তো আপনাদেরও ব্যবসা বাড়ছে, নতুন প্ল্যান্ট হয়েছে, সেগুলোর কাজ আমরা চাই
        -ওই সব কাজ তো টেন্ডারের মাধ্যমে বিতরন করা হবে
        -টেন্ডার লাগবে না স্যার আমরা আপনাকে লোয়েষ্ট রেট দেব
        -তা কী করে হয়, একটা প্রক্রিয়া আছে না
        -আমরা ওসব বুঝি না। যা বললাম তা যেন হয়। নইলে গতবারের কথা তো মনে আছে। আমরা আবার আসবো কদিন পর। (আগের বার টেন্ডারের দিন বন্দুক নিয়ে দৌড়ানি দিয়েছিল টেন্ডার অফিসারকে)

        এটা মাত্র শুরু। পাতি নেতা থেকে। তারপর এমপি। মন্ত্রী। কে জানে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকেও ফোন আসবে হয়তো। গত বিএনপি’র সময়ও এরকম হয়েছিল। আমরা কোথায় যাবো? এই উপদ্রপ গায়ে না লাগলে বুঝবেন না।

        আমাদের সবসময়ের উত্তর : বাংলাদেশের রাজনীতি। তাহলে কেমন সে রাজনীতি? যে রাজনীতির হাত ধরে বাংলাদেশের সৃষ্টি, সে রাজনীতিই বাংলাদেশের রাজনীতি। বাংলার মানুষের মুক্তির রাজনীতি। শেখ মুজিবের, তাজউদ্দিনের, মণি সিংহের রাজনীতি।

        গত ৩৮ বছরে শেখ মুজিব-তাজউদ্দিন-মনি সিংহের রাজনীতি চলেনি। চললে এই প্রশ্ন আসতো না। চলেছে সামরিক-বেসামরিক-জগাখিচুরি গনতন্ত্র-নীতিহীন-স্বার্থপর ঐক্য আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। আমি সেই রাজনীতির মৃত্যূ কামনা করেছি।

  2. Sujauddin Hamim - ৪ জানুয়ারি ২০০৯ (২:৩১ অপরাহ্ণ)

    অাপনার সাথে অামি একমত।ষড়যন্ত্র এর কারনেই তো এতদিন ক্ষমতার বা‍হরি ে‍ছলিনে।

    • মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০০৯ (৫:১৫ অপরাহ্ণ)

      ধন্যবাদ। আশা করি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এর মধ্যে আপনি চমৎকার বাংলা টাইপ শিখে নেবেন, এর মানে এ নয় যে তার আগে আপনার মন্তব্য পেতে চাই না, আমাদের প্রস্তাব মন্তব্য করতে করতেই শিখে ফেলুন না, আ-মরি বাংলা টাইপ।

  3. মাসুদ করিম - ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ (২:২১ অপরাহ্ণ)

    ডানা মেলছে কি ষড়যন্ত্র
    আবেদ খান

    হঠাৎ করে আলোকদ্যুতি বিচ্ছুরণকারী এইচ টি ইমাম অন্ধকারে তলিয়ে গেলেন কেন? তিনি সেই মানুষ যিনি অসামান্য মেধা দিয়ে শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রশাসন সাজানোর ব্যাপারেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেননি, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত নিরসলভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে সংগঠিত করেছেন, প্রশাসন কাঠামো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন। তিনি সেই মানুষ যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও পরামর্শ দিয়েছেন, সাহস ও শক্তি জুগিয়েছেন।

    ছাত্রলীগের সমাবেশে তিনি যেভাবে কথা বলেছেন, তাতে ভুল ব্যাখ্যা করার সুযোগ হয়তো রয়েছে, কিন্তু তার অর্থ তো এই নয় যে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করেছেন কিংবা স্যাবোটাজ করার চেষ্টা করেছেন। তার অর্থ এটাও নয় যে, তাঁর সারাজীবনের অবদান এবং ভূমিকা মিথ্যা হয়ে যাবে, আর এইচ টি ইমাম ‘জাতীয় ভিলেনে’ পরিণত হবেন। ছাত্রলীগের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আওয়ামী লীগের কিংবা সরকারের একাংশও এতে অতিশয় ক্রুদ্ধ হয়েছেন। কারও কারও প্রতিক্রিয়া এই পর্যায়ে যে, এখুনি এইচ টি ইমামকে দল থেকে বের করে দেওয়া উচিত, তাঁর বিরুদ্ধে দলদ্রোহিতার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, ইত্যাদি।

    এরই মধ্যে বিএনপি একটা নির্মম রসিকতা করে বসল। তাদের বক্তব্য– এইচ টি ইমাম ‘আমাদের লোক’, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এর ফল ভালো হবে না।

    রাজনীতিতে অবশ্য এ ধরনের রসিকতা চলেই। প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদের প্রতিক্রিয়া বড় কোনো উদ্বেগের বিষয় নয়। উদ্বেগের কথা হল– আওয়ামী লীগের নেতৃপর্যায়ের একাংশের অদূরদর্শী প্রতিক্রিয়া। এর মধ্যে দেখলাম, একমাত্র দলনেত্রী শেখ হাসিনাই ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সেটা আমি বুঝব।’ তাঁর এই বার্তায় রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ছাপ লক্ষ্য করে যেমন আশ্বস্ত বোধ করা যায়, তেমনি মনে শঙ্কারও জন্ম হয় এই ভেবে যে, এত বিশাল, এত ঐতিহ্যমণ্ডিত, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের অনেকের মধ্যে কি কেবল বোধবিবেচনাহীন আবেগই থাকবে?

    আমার পেশাগত জীবনের ব্যাপ্তি তো কম হল না। এই নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সাংবাদিকতা পেশায় পেরিয়ে গেলাম বায়ান্নটি বছর। এই সময়ের মধ্যে রাজনীতিক, আমলা, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, সেনাপতি অনেককেই দেখলাম। এ থেকে আমার ধারণা– রাজনীতি, সংস্কৃতি, দর্শন, মেধা, প্রজ্ঞা, সততা, নিষ্ঠা– সব কিছুরই যেন ক্রমাবনতি ঘটেছে। এই ধারার গতিরোধ যদি করা না যায়, তাহলে যে কোনো গণতান্ত্রিক দল গহীন অন্ধকার আবর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার মুখে পড়তে পারে।

    একদিকে হিসেব করলে শেখ হাসিনার চেয়ে বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি ভাগ্যবান ছিলেন। যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আলোচনা করে নিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী, কামরুজ্জামান-সমেত আরও অনেক পোড়খাওয়া রাজনীতিক সাথী পেয়েছেন। সে হিসেবে শেখ হাসিনা অনেকটা নিঃসঙ্গ। অবক্ষয়মান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তাঁর নির্ভরশীলতার জায়গাগুলো সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জীবদ্দশায় এত নানাবিধ ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়তে হয়নি, যা প্রতিনিয়ম মোকাবিলা করতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে।

    স্বল্পকালীন ক্ষমতায় থাকাকালে বঙ্গবন্ধু খুব একটা বৈরী আমলাবাহিনী পাননি। যারা বিরোধী ছিল, তারা চতুর-ধূর্ত ছিল বটে এবং সুকৌশলে গভীর চক্রান্তের জাল বুনতেও হয়তো সিদ্ধহস্ত ছিল, কিন্তু তারা শাসনব্যবস্থার ভেতরে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। আর যখনই কোনো শৈথিল্যের সামান্যতম সুযোগ পেয়েছে তারা, তখনই তা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে প্রথম সুযোগেই এক ধাক্কায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা তো করেছেই, একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ধ্বংস করতে মেতে উঠেছে, হত্যা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চার কেন্দ্রীয় স্থপতিকে।

    শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হচ্ছে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে। একের পর এক ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, হত্যাপ্রচেষ্টা, অপবাদ– কোনটি বাদ থেকেছে তাঁর বেলায়? একুশে আগস্টের হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে শেখ হাসিনা-সমেত গোটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার আয়োজন করা হয়েছিল। ছিয়ানব্বইয়ের সরকারের সফল অর্থমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার মেধাবী সংগঠক শাহ এম এস কিবরিয়াকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের অনেককে ঘাতকের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে। গোটা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, প্রগতিশীল স্বচ্ছ চেতনার মানুষ নিধনের নিরব বহ্নুৎসব চলেছে।

    এই পরিস্থিতির ভেতর দিয়েই যেতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত তীব্রতর হয়েছে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠানের পর। এর সূচনা হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। সেই সময়ের বিরোধী নেতার নিবাস ক্যান্টনমেন্টে হওয়ার কারণে রকেট গতিতে চক্রান্ত চলতে পেরেছে। আর এই চক্রান্তের পরিণতিতে প্রাণ দিতে হয়েছে সেনাবাহিনীর দক্ষ ও একনিষ্ঠ ৫৭ সেনা অফিসারকে। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে নানাবিধ অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে সরকারের পথচলা কণ্টকাকীর্ণ করার চেষ্টা হয়েছে।

    শেখ হাসিনার এই জটিল দিনগুলোতে তাঁর চারপাশে সপ্তরথীর ব্যূহ তৈরি করা হয়েছিল উপদেষ্টাদের দিয়ে। এঁরা নানা সময় প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন, কার্যক্রম পরিচলনায় সহযোগিতা করেছেন। শেখ হাসিনাকে নিঃসঙ্গ করার জন্য অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে প্রত্যেক উপদেষ্টাকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

    ড. মশিউর রহমানের মতো স্বচ্ছ ও মেধাবী ব্যক্তিকে সুকৌশকলে জড়ানো হয়েছিল তথাকথিত পদ্মা সেতুর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে। সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। ড. তৌফিক এলাহীকে বিদ্যুৎ-বিষয়ক কেলেঙ্কারির ধুয়া তুলে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছিল। সেটা তিনি কাটিয়ে উঠেছেনে বলে মনে হয়। প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীকে ঘিরে গুজব আর ধূম্রজালের তো অন্ত ছিল না। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, এই মেধাবী স্থিরবুদ্ধিসম্পন্ন সেনা কর্মকর্তা যদি ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপটি নিতে ভুল করতেন, তাহলে শুধু সামরিক বাহিনীই নয়, গোটা রাজনৈতিক পরিমণ্ডল অশান্ত হতে পারত হয়তো-বা। অতীতের কালো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও ছিল। কারণ কোনো পর্যায়েই ষড়যন্ত্রকারীরা চুপচাপ বসে থাকেনি কখনও।

    ড. গওহর রিজভীর মতো একজন পণ্ডিত সজ্জন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টার পদে থাকার কারণে বাংলাদেশ আজ নানাবিধ আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সফল মোকাবিলা করতে পারছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বহির্বিশ্বের কোনো কোনো শক্তির বিরূপ ভূমিকার বিরুদ্ধেও অনড়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে। এই গওহর রিজভীকেও তো কম অপবাদ সইতে হয়নি।

    এই বহুমুখী চক্রান্তের সর্বশেষ শিকার এইচ টি ইমাম। আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি না যে, এইচ টি ইমামের মতো নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি কখনও এমন কাজ করতে পারেন যা আওয়ামী লীগ কিংবা সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রীরও অকল্যাণ সাধন হতে পারে।

    একটা কথা সত্য যে, দূর থেকে অবলোকন করলে পুরো ক্যানভাসটা দেখা যায়। কে কোথায় কী করছে, কার গতিবিধি কেমন– তার একটা মোটামুটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। সেই ধারণা ও ভাবনা থেকে মনে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ষড়যন্ত্রকারীরা দক্ষ ছিল বলে তারা ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুকে বন্ধুহীন করার চেষ্টা করেছিল নাটের গুরু খন্দকার মোশতাককে ব্যবহার করে। আর তখন সরল বিশ্বাসের কারণে বঙ্গবন্ধু নিঃসঙ্গ হচ্ছিলেন। এই এত বছর পরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকেও নিঃসঙ্গ করার চেষ্টা চলছে তাঁকে বেষ্টন করা সপ্তরথীর ব্যূহে ফাটল ধরিয়ে। এইচ টি ইমামকে বিতর্কিত করার পর পরই উত্তরা ষড়যন্ত্রের আদলে ‘গুলশান ষড়যন্ত্র’ তারই ইঙ্গিত বহন করে বলে আমার মনে হয়।

    বঙ্গবন্ধুর কিচেন কেবিনেটে সাপ ঢুকেছিল। সেই সাপ একসময় নীলদংশন করেছিল রাজনীতিকে। শেখ হাসিনার সপ্তরথীর ব্যূহে লখিন্দর-হন্তারক কোনো সাপ প্রবেশ না করুক এবং সেই ব্যূহ সুরক্ষিত থাকুক– এই কামনা করি।

  4. মাসুদ করিম - ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ (৪:০২ অপরাহ্ণ)

    https://mknewsmedia.tumblr.com/post/181574389409/hat-trick-for-hasina

    Hasina takes oath as PM for 4th time

    Sheikh Hasina has taken her oath as prime minister for a third consecutive term, report agencies.

    Through the oath taking of new ministers, state ministers and deputy ministers, the country gets a cabinet with all members from the AL after 1973 while Sheikh Hasina became the Prime Minister for a record fourth time.

    President Md Abdul Hamid administered the oath for the prime minister at the Bangabhaban at 3:40 pm on Monday.

    The President also administered the oath for the new ministers, ministers of state and deputy ministers who will form the cabinet.

    The oath-taking ceremony was moderated by Cabinet Secretary Shafiul Alam, who on Sunday, announced the names and offices of the 47 members of the new cabinet at a media briefing.

    The Prime Minister will lead a cabinet of 24 ministers, 19 ministers of state and three state ministers.

    The announcement came as a surprise as it is customary for the list of ministers to be disclosed after they have been sworn in.

    After taking her oath, the Prime Minister hugged her sister Sheikh Rehana.

    Awami League Syeda Sajeda Chowdhury embraced Hasina.

    The Prime Minister then waved to the crowd.

    Speaker Shirin Sharmin Chaudhury, Chief Justice Syed Mahmud Hossain, CEC KM Nurul Huda, diplomats and various representatives from social and cultural organisations attended the event.

    Neither Jatiya Party Chairman HM Ershad nor his wife and former Leader of the Opposition Raushon Ershad were seen at the event.

    But Awami League allies such as Bikalpadhara President AQM Badruddoza Chowdhury, Bikalpadhara Secretary Genreal Abdul Mannan and Joint Secretary General Mahi B Chowdhury and Jatiya Party Presidium Member Fakhrul Imam were present.

    Awami League leaders AMA Muhith, AH Mahmood Ali, Amir Hossain Amu, Tofail Ahmed, Nurul Islam Nahid and Qamrul Islam were also present.

    Advisers to the Prime Minister HT Imam, Tawfiq-e-Elahi Chowdhury and Gowher Rizvi also came to the Bangabhaban for the event.

    Awami League President Sheikh Hasina was greeted at the Bangababan by President Md Abdul Hamid upon her arrival. She entered the Darbar Hall around 3:30 pm.

    After the event, the guests took tea and snacks at the Bangabhaban field. The prime minister was seen mingling with the crowd.

    According to the list of the cabinet members, Prime Minister Sheikh Hasina will keep the portfolios for Cabinet Division, Ministry of Public Administration, Ministry of Defence, Armed Forces Division, Ministry of Power, Energy and Mineral Resources and Ministry of Women and Children Affairs.

    The 24 ministers are AKM Mozammel Huq (Liberation War Affairs), Obaidul Quader (Road Transport and Bridges), Md Abdur Razzaque (Agriculture), Asaduzzaman Khan (Home Affair), Mohammad Hasan Mahmud (Information), Anisul Huq (Law, Justice and Parliamentary Affairs), AHM Mustafa Kamal (Finance), Md Tajul Islam (Local Government, Rural Development and Cooperatives), Dr Dipu Moni (Education), AK Abdul Momen (Foreign Affairs), MA Mannan (Planning), Nurul Majid Mahmud Humayun (Industries), Golam Dastagir Gazi (Textiles and Jute), Zahid Maleque (Health and Family Welfare), Sadhan Chandra Majumder (Food), Tipu Munshi (Commerce), Nuruzzaman Ahmed (Social Welfare), SM Rezaul Karim (Housing and Public Works), Md Shahab Uddin (Environment, Forest and Climate Change), Bir Bahadur Ushwe Sing (Chattogram Hill Tracts Affairs), Saifuzzaman Chowdhury (Land), Md Nurul Islam Sujan (Railways), Yeafesh Osman (Science and Technology-Technocrat) and Mustafa Jabbar (Posts, Telecommunications and Information Technology-Technocrat).

    The 19 state ministers are Kamal Ahmed Majumder (Education), Imran Ahmad (Expatriates’ Welfare and Overseas Employment), Md Zahid Ahsan Russel (Youth and Sports), Nasrul Hamid (Power, Energy and Mineral Resources), Md Ashraf Ali Khan Kashru (Fisheries and Livestock), Begum Monnuzan Sufian (Labour and Employment), Khalid Mahmud Chowdhury (Shipping), Md Zakir Hossain (Primary and Mass Education), Md Shahriar Alam (Foreign Affairs), Zunaid Ahmed Palak (Information and Communication Technology Division), Farhad Hossain (Public Administration), Shawpan Bhattacharjee (LGRD and Cooperatives), Jahid Faruk (Water Resources), Md Murad Hasan (Health and Family Welfare), Sharif Ahmed (Social Welfare), KM Khalid (Cultural Affairs), Md Enamur Rahaman (Disaster Management and Relief), Md Mahbub Ali (Civil Aviation and Tourism) and Sheikh Mohammad Abdullah (Religious Affairs-Technocrat).

    The three deputy ministers are Begum Habibun Nahar (Environment, Forest and Climate Change), AKM Enamul Haque Shamim (Water Resources) and Mohibul Hasan Chowdhury (Education).

  5. Pingback: টানা দুই দশক চাই | প্রাত্যহিক পাঠ

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.