২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশে যে ভোট হলো এবং তার যে ফলাফল আমরা পেলাম, দুটোই বাস্তব ঘটনা, দুটোই বিস্ময়কর : আমরা কেউই এ রকমটা আশা করিনি, এবং কল্পনায় একটা পেন্ডুলাম সংসদ ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমরা সবাই সতর্ক হতে চাই, যারা আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং আমরা যারা স্বপ্ন দেখছি, আমাদের আকাশ, আমাদের বাতাস, কিন্তু চিরদিন কী পদ্ধতি আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি, আমরা যেন লজ্জাকরভাবে অন্য কোনো দেশের নাম না নিই, একবারও যেন না বলি আমরা সিঙ্গাপুর হতে চাই, মালেশিয়া হতে চাই, থাইল্যান্ড হতে চাই, আমরা যেন দেশে ফিরি, আমরা যেন দেশটাকে ভালোবেসে, পৃথিবীর সকল সম্ভাবনার দুয়ারে কড়া নাড়তে পারি, তেমনটা একবার পেরেছিলাম, এক অসম যুদ্ধে অসীম সাহস নিয়ে জড়িয়ে পড়ে, তেমনটা আবার সম্ভব, এক অদম্য ইচ্ছায় বাংলাদেশের রাজনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে, কেন পুনরুজ্জীবন? কারণ ১১ জানুয়ারি ২০০৭-এ বাংলাদেশের রাজনীতি মৃত্যুবরণ করেছিল।
ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে STATESMAN, আমাদের আগামী প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রীরা শুধু যদি STATESMAN হতে পারেন, তাহলে খুব সহজেই রাজনীতির পুনরুজ্জীবন শুরু হয়ে যেতে পারে। অপ্রত্যাশিত কিছু করবার প্রয়োজন নেই, সুবিশাল কাজের চাপ নিয়ে দিশেহারা হবার প্রয়োজন নেই, one actively engaged in conducting the business of a government or in shaping its policies, সক্রিয় কিছু লোক সরকার পরিচালনায় কূটনৈতিকভাবে পারর্দশী, শুধু এটুকুই, এমন এক ডজন লোকই পারে, পদ্ধতিগত ভাবনাকে সুসংগঠিত করতে।
ষড়যন্ত্র যেন চোখ না এড়ায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র সুসংহত নয়, ষড়যন্ত্রের কাছে তা একেবারেই নাজুক, এবং এক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সতর্কতা যিনি অবলম্বন করতে পারেন, তিনি STATESMANই, সংসদ আপনার সরকার আপনার, কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র যদি আপনার না হয়, তাহলে নাজুক আপনার সরকার ভিত্তিহীন আপনার সংসদ, শুধু রাষ্ট্রপতি দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে আয়ত্তে রাখা যায় না, রাষ্ট্রের সংবিধান আছে, তাকে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে, রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী আছে, তার চরিত্র নাটকীয় ও বহুরূপী, রাষ্ট্রের সচিবালয় আছে, সেখানে চরম অদক্ষতা বাসা বেঁধেছে, রাষ্ট্রের আদালত আছে, সে মোটেই স্বাধীন নয়, রাষ্ট্রের প্রচার ও গোয়েন্দা বিভাগ আছে, সেখানে ভয়ংকর সব লোকের বসবাস। কিছু STATESMAN আপনার লাগবেই শেখ হাসিনা, এছাড়া আপনি পারবেন না, আর তা লাগবে পাঁচ বছর আপনার জন্য, আর আমাদের জন্য : ২০০৯-২০১৩, ২০১৪-২০১৮, ২০১৯-২০২৩। রাষ্ট্রযন্ত্রের ও সংবিধানের সব দুষ্টক্ষত সারাতে পনেরো বছর লাগবেই। তাতেই পুনরুজ্জীবিত হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতি।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৮ comments
নীড় সন্ধানী - ৪ জানুয়ারি ২০০৯ (৪:১৮ পূর্বাহ্ণ)
জানিনা কোন রাজনীতির কথা বলেছেন। কিন্তু যে রাজনীতি ৩৮ বছরে দেখেছি সে রাজনীতির পুনরজ্জীবন দেখতে চাই না। সে রাজনীতির চিরমৃত্যূ ঘটুক। নিরাপদ হোক মানুষের জীবন, জীবিকা।
দুবছরের অনাহারী গনতান্ত্রিক সুযোগ সন্ধানীরা ইতিমধ্যে তৎপর হয়ে গেছে নানান জায়গায়। ধার দিচ্ছে পুরোনো ছুরিগুলোতে। বন্দুকের মাজল পরিষ্কার করে নিচ্ছে দ্রুত। নতুন নেতৃত্ব এইসব উৎপাত কতটুকু শক্ত হাতে দমন করতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়। গনতন্ত্রে ফেরার আত্মতৃপ্তির চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা অনেক বেশী জরুরী।
মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০০৯ (৫:০৭ অপরাহ্ণ)
আমাদের ৩৮ বছরের সবকিছুকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে আপনার হাতে সবসময়ে দেখতে পাই সর্বশেষ দুবছরের কীর্তিগুলো পড়ে থাকে, তারা হাসে, কারণ সফলতার সাথে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, আপনি হাসেন না, কারণ আপনি তো গত দুবছরে জন্মের পর থেকে দেখা ৩৬ বছরের রাজনীতির চিরমৃত্যুই কামনা করেছেন।
২০০৬-এর নির্বাচন অনুষ্ঠানের রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব হয়নি বলে যে ১১ জানুয়ারি ২০০৭-কে আসতে হলো, এই যে দিনটা এলো, এর মধ্য দিয়ে, বাংলাদেশের রাজনীতির মৃত্যু হয়েছিল। চিরমৃত্যু যে হয়নি, তা বোঝা গেল, ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮-এর নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। এখন এ জায়গা থেকে আমরা ভাবছি বাংলাদেশের রাজনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটানো যায় কি না? এখন আপনার প্রশ্ন হলো কোন রাজনীতি? আমাদের সবসময়ের উত্তর : বাংলাদেশের রাজনীতি। তাহলে কেমন সে রাজনীতি? যে রাজনীতির হাত ধরে বাংলাদেশের সৃষ্টি, সে রাজনীতিই বাংলাদেশের রাজনীতি। বাংলার মানুষের মুক্তির রাজনীতি। শেখ মুজিবের, তাজউদ্দিনের, মণি সিংহের রাজনীতি। ৭৫ পরবর্তী উল্টোপথে চলতে চলতে ৯০-এর স্বৈরাচার পতনের রাজনীতি। কিন্তু আবার উল্টোপথে চলা শুরু খালেদা জিয়ার একতরফা ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠান, এর পর পুন:নির্বাচন অনুষ্ঠানের রাজনীতি। কিন্তু ৯৬-এর আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শুরু আরেক উল্টোপথ : জঙ্গি হামলা, সে পথ ধরে শেষ পর্যন্ত ২০০১-২০০৬-এর দু:শাসন, পাক সার জমিন সাদ বাদ। এই উল্টোপথের চলন থামানো আজো আমাদের রাজনীতির দ্বারা সম্ভব হয়নি, বরং হয়েছে ১১ জানুয়ারি ২০০৭, সেখান থেকে অন্ত:সলীলা রাজনীতি, উপদেষ্টা পরিষদ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮। এবার ঠিক এখান থেকে আবার কী করে সম্ভব বাংলাদেশের রাজনীতির পুনরুজ্জীবন? এটাই এখনকার সবচেয়ে বড় ভাবনা।
নীড় সন্ধানী - ৫ জানুয়ারি ২০০৯ (৪:৫০ পূর্বাহ্ণ)
এই মৃত্যূ বহুল কাংখিত ছিল। এই মৃত্যূর কারনেই আওয়ামী লীগ পরিবর্তনের শ্লোগান আনতে বাধ্য হয়েছে, পরিবর্তন ভাবতে বাধ্য হয়েছে। এই মৃত্যূর কারনেই সারাদেশের মানুষ ভোটার কাম জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছে, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা পেয়েছে, অসাধারন একটা নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হয়েছে। বিএনপি জামাতের দুরভিসন্ধিমূলক তৎপরতাকে গনপ্রত্যাখ্যান করানো সম্ভব হয়েছে। ১/১১ না হলে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আওয়ামী লীগ এই বিজয় দেখতে পেতো না। মঈন ইউ আহমদের কাছে আওয়ামী লীগের চির কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
ছবিযুক্ত ভোটার সহ জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজগুলো অতীতে কোন রাজনৈতিক দল কখনোই করতে পারে নি, করার উৎসাহ দেখায়নি। কারন জনগনের শক্তির কথা মুখে বললেও পুরোপুরি বিশ্বাস করে না জনগনের শক্তিতে। পুষতে হয় দলীয় ক্যাডার-গডফাদার, তেলাতে হয় সেনাকর্তাদের, পদধুলি নিতে হয় পশ্চিমা কুটনীতিকদের। কিন্তু এবারের নির্বাচন প্রমান করেছে ম্যান্ডেট দেবার রাস্তাটা মসৃন করা হলে জনগন যাকে চায় তাকেই ক্ষমতায় বসাতে পারে। ত্বত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই মসৃন করার কাজটাই করেছে। জনগনের শক্তি প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। এজন্য আমরা আজীবন ঋনী থাকবো ১/১১ এর ‘অসাংবিধানিক’ সরকারের কাছে।
গত দুবছর দুঃশাসন ছিল কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু আমি এখনই নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমরা গত দুবছর রাজনীতিহীন ভাবে ভালো ছিলাম। আমার কাছে রাজনীতির কোন ভুমিকা নাই। আমার চারপাশে যে শত শত মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত কাটাই, তাদের কারো কাছেই রাজনীতির কোন ভুমিকা নাই। আমরা বরং নিরুপদ্রপ ছিলাম। আপনি বাংলাদেশে বসবাস করে থাকলে আপনিও নিশ্চয়ই ভালো ছিলেন।
আগামী দিনগুলোতে কেমন থাকবো তার লক্ষন দেখা দিতে শুরু করেছে। একটা উদাহরন দেই। নির্বাচনের তিন দিন পরই আমার কাছে তিনজন লোক আসে অফিসে। তাদের সাথে কথোপকথনের কিছু অংশ ছিল এরকমঃ
-স্যার আমরা এসেছি,
-কী করতে পারি?
-আমাদের তো চেনেন নিশ্চয়ই। আমি সাজ্জাদ…..কোম্পানীর পার্টনার …..কলেজের ভিপি। গত কয়েক বছর লুকিয়ে আর জেলে ছিলাম।
-আচ্ছা তাই নাকি
-এখন তো সব কাজগুলো আমাদের কোম্পানীকে দিতে হবে।
-আপনারা তো অলরেডী করেন, তাই না?
-করি, কিন্তু বাকী যতগুলো আছে সব আমাদের দিতে হবে
-অন্যগুলো তো অন্যান্য কোম্পানী পেয়েছে
-এখন ওদের বাদ দিতে হবে, আমাদের সব দিতে হবে
-এটা কী করে হয়, আপনারা এই কাজ নেয়ার সময় বলেছিলেন অন্য কাজে হাত দেবেন না
-বলেছি, কিন্তু এখন তো আপনাদেরও ব্যবসা বাড়ছে, নতুন প্ল্যান্ট হয়েছে, সেগুলোর কাজ আমরা চাই
-ওই সব কাজ তো টেন্ডারের মাধ্যমে বিতরন করা হবে
-টেন্ডার লাগবে না স্যার আমরা আপনাকে লোয়েষ্ট রেট দেব
-তা কী করে হয়, একটা প্রক্রিয়া আছে না
-আমরা ওসব বুঝি না। যা বললাম তা যেন হয়। নইলে গতবারের কথা তো মনে আছে। আমরা আবার আসবো কদিন পর। (আগের বার টেন্ডারের দিন বন্দুক নিয়ে দৌড়ানি দিয়েছিল টেন্ডার অফিসারকে)
এটা মাত্র শুরু। পাতি নেতা থেকে। তারপর এমপি। মন্ত্রী। কে জানে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকেও ফোন আসবে হয়তো। গত বিএনপি’র সময়ও এরকম হয়েছিল। আমরা কোথায় যাবো? এই উপদ্রপ গায়ে না লাগলে বুঝবেন না।
গত ৩৮ বছরে শেখ মুজিব-তাজউদ্দিন-মনি সিংহের রাজনীতি চলেনি। চললে এই প্রশ্ন আসতো না। চলেছে সামরিক-বেসামরিক-জগাখিচুরি গনতন্ত্র-নীতিহীন-স্বার্থপর ঐক্য আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। আমি সেই রাজনীতির মৃত্যূ কামনা করেছি।
Sujauddin Hamim - ৪ জানুয়ারি ২০০৯ (২:৩১ অপরাহ্ণ)
অাপনার সাথে অামি একমত।ষড়যন্ত্র এর কারনেই তো এতদিন ক্ষমতার বাহরি েছলিনে।
মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০০৯ (৫:১৫ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ। আশা করি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এর মধ্যে আপনি চমৎকার বাংলা টাইপ শিখে নেবেন, এর মানে এ নয় যে তার আগে আপনার মন্তব্য পেতে চাই না, আমাদের প্রস্তাব মন্তব্য করতে করতেই শিখে ফেলুন না, আ-মরি বাংলা টাইপ।
মাসুদ করিম - ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ (২:২১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ (৪:০২ অপরাহ্ণ)
Pingback: টানা দুই দশক চাই | প্রাত্যহিক পাঠ