স্কুলে থাকতে বছরে ২/৩ বার তো বাড়ি যেতামই কখনো কখনো বছরে ৪/৫ বারও গেছি, ক্লাস সিক্স সেভেন থেকে ক্লাস নাইন টেন পর্যন্ত যখনি গ্রামের বাড়ি যেতাম এদিক ওদিক আপন মনে ঘুরতাম, তার আগে বাড়িতে দাপাদাপি কারো সাথে আত্মীয় বাড়ি এই করেই সময় কাটত। তো এই ৩/৪ বছর আপন মনে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে গ্রামের প্রকৃতিটাকে যেমন আপন করে পেয়েছি তেমনি কিছু ব্যতিক্রমী লোকের সাথেও পরিচয় কথাবার্তা হয়েছে যা আমার মনের উপর বড় প্রভাব ফেলেছে। দুঃখজনক হল গ্রামের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আত্মীয় নয় এমন যেসব মানুষের সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠেছিল এদের কারো সাথেই আর আমার যোগাযোগ থাকেনি এবং পরবর্তীতে কে কোথায় আছে গেছে তারও কোনো খবর রাখা সম্ভব হয়নি।
তাদের মধ্যে আজ এক জনের কথা খুব মনে পড়ছে, পণ্য বর্জনের কথায় তার কথা মনে পড়ে গেল, জীবনে তার সাথেই প্রথম আমার পণ্য বর্জন নিয়ে কথা হয়, তার কাছেই প্রথম শুনি আমরা পণ্য বর্জন করতে পারি, তার একটা মুদ্রা দোষ ছিল কথায় কথায় একটা গল্প বলি বলা, ব্লগপোস্টটার শিরোনামটা তার মুদ্রাদোষ দিয়েই।
তিনি বলছিলেন পড়াশোনার অনেক গল্প তিনি শুনেছেন কিন্তু নিজে তেমন একটা পড়াশোনা করতে পারেননি, তবে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের দেখা পেলেই তিনি তাদের সাথে কথা বলেন, প্রথমত একটা উপদেশ দেয়ার জন্য – কোনো কিছু মুখস্থ করবেন না, মুখস্থ করলে পড়ার স্বাদ চলে যায়, ওই যে সাত আট ক্লাস পাস দিয়েও আজো যে তিনি যেকোনো কিছু নিয়ে বসে পড়তে শুরু করতে পারেন তার পেছনের শক্তিটা হল তিনি ক্লাসের পড়া কখনো মুখস্থ করতেন না ভাবতেন বুঝতেন তাই তার পড়ার রুচি কোনো দিন মরে যায়নি, দ্বিতীয়ত দুইটা কথা মনে রাখার অনুরোধ জানানোর জন্য – বাঙালির শত্রুকে ঘৃণা করতে হবে আর জবরদখলকারি আর উচ্ছেদকারীকে সারাজীবন ঘৃণা করতে হবে, তৃতীয়ত একজন মানুষের ঋণ শোধ কোনো দিন করা যাবে না এটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য – শেখ মুজিবুর রহমান। আমাকে তিনি বলেছিলেন এপর্যন্ত একথাগুলো তিনি যত লোককে বলেছিলেন আমাকেই তার মনে হয়েছে আমি তার কথা শুধু মনোযোগ দিয়ে শুনিনিই মনেও রাখব।
কিন্তু আজ তাকে মনে পড়েছে আমার অন্য কারণে, প্রথমবারের ওই সেশনের পর দ্বিতীয় বার যখন তার সাথে দেখা হয় ২/১ বছর পর, তিনি আমাকে একটা ওয়াদা করানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু আমি ওয়াদাটা করতে পারলাম না, তিনি আমার মনোযোগ সহকারে তার কথা শোনাকে তার প্রতি আমার অকুণ্ঠ সমর্থন ভেবে আমাকে বলেছিলেন, ওয়াদা করুন কোনোদিন পাকিস্তানি পণ্য ও ইহুদিদের পণ্য ব্যবহার করবেন না, আমি সেই বয়সে তাকে বলেছিলাম ওই ওয়াদা আমি করতে পারব না কারণ আমি পণ্য দিয়ে পণ্যই বিচার করি রাষ্ট্র ও ধর্ম বিচার করি না, আজো আমার মনে পড়লে আমার খুব আশ্চর্য লাগে তখনই ওই বয়সে এত যথাযথ স্বতঃস্ফূর্ত সংলাপ আমার আসত।
হ্যাঁ, এখনো আমি, পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের পক্ষে নই, ইসরাইলি পণ্য বর্জনের পক্ষে নই, বার্মিজ পণ্য বর্জনের পক্ষে নই, ভারতীয় পণ্য বর্জনের পক্ষে নই, সৌদি পণ্য বর্জনের পক্ষে নই, ইরানি পণ্য বর্জনের পক্ষে নই – পণ্য নিয়ে আমার কথা একটাই পণ্যের মান নিম্নমানের হলেই তা বর্জনীয়, এবার সেপণ্য দেশি হোক বা বিদেশি হোক। তবে পণ্য বর্জনের আরো একটা নীতি আমি অবলম্বন করছি ইদানিং, একই মানের পণ্য যদি বাংলাদেশের ও বিদেশের পাওয়া যায় আমি বাংলাদেশেরটাই কিনব এবং বাংলাদেশের বানানো কোনো পণ্যের যেমান তার চেয়ে নিম্নমানের ওই পণ্য পৃথিবীর যেদেশেরই হোক আমি বর্জন করব। পণ্য পণ্যবর্জন নিয়ে এটাই আমার শেষ কথা, একথা আপনার পছন্দ হোক আর না হোক।