বই সম্পাদক বই পরিবেশক

বাংলাদেশে বইয়ের দোকান ও বইয়ের প্রকাশক আছে। সংখ্যায় কম বা মানে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে কিন্তু বইয়ের দোকান ও বইয়ের প্রকাশনা এখানে মোটেই অপরিচিত বা বিলুপ্ত কোনো উদ্যোগ নয়। বাংলাদেশে বইয়ের পরিবেশনা একটা ভাল ব্যবসাই ছিল কিন্তু এব্যবসাটা কেন বিলুপ্ত উদ্যোগের তালিকায় চলে গেল আমার জানা নেই [...]

বাংলাদেশে বইয়ের দোকান ও বইয়ের প্রকাশক আছে। সংখ্যায় কম বা মানে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে কিন্তু বইয়ের দোকান ও বইয়ের প্রকাশনা এখানে মোটেই অপরিচিত বা বিলুপ্ত কোনো উদ্যোগ নয়। বাংলাদেশে বইয়ের পরিবেশনা একটা ভাল ব্যবসাই ছিল কিন্তু এব্যবসাটা কেন বিলুপ্ত উদ্যোগের তালিকায় চলে গেল আমার জানা নেই – যদিও আমার মতে বইয়ের পরিবেশনা ব্যবসা ছাড়া বইয়ের প্রকাশনা ব্যবসা ও বইয়ের দোকানের ব্যবসা ঠিকমতো চলার কথা নয়, এবং বইয়ের বাজারের দিকে ভাল করে তাকালে আমরা দেখতে পাব তা ঠিকঠাক চলছেও না। বই প্রকাশনার ব্যবসায়ী যদি হয় পণ্যের উৎপাদক এবং বইয়ের দোকানের ব্যবসায়ী যদি হয় উৎপাদিত পণ্যের বিক্রেতা তাহলে উৎপাদিত পণ্য উৎপাদকের কাছ থেকে বিত্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়ার সরবরাহকারী হল বইয়ের পরিবেশনার ব্যবসায়ী। এখন এই সরবরাহকারী যখন বিলুপ্তের পথে চলে গেছে ফলে বইয়ের সরবরাহের ব্যবসার যে সক্ষমতার জায়গা ছিল তাও অবলুপ্ত হয়েছে, অর্থাৎ উৎপাদিত বই বিক্রেতার কাছে সরবরাহ করার দক্ষতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, ধরুন, খুব চলে এরকম ভোগ্যপণ্যের সরবরাহকারীরা বিলুপ্ত হয়ে গেলে কিন্তু খুব চলে এরকম ভোগ্যপণ্যের উৎপাদক ও বিক্রেতা রয়ে গেল, আমি নিশ্চিত, আপনি সাবান টুথপেস্ট আর নিয়মিত ব্যবহার না করে কিভাবে চলা যায় সেই উপায়ই খুঁজবেন কারণ উৎপাদক ও বিক্রেতার মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করার কাজে নিয়োজিত পরিবেশকের অনুপস্থিতিতে পণ্য সরবরাহের সক্ষমতার যে ঘাটতি তৈরি হবে তাতে আপনি হাতের কাছে সাবান টুথপেস্টের যে বহর দেখতে পেতেন তা আর দেখতে পাবেন না। এখন এই বই পরিবেশকের বিলুপ্তিতে তাই ঘটেছে আর এখন এই বই পরিবেশক গোষ্ঠীকে পুনরায় জাগিয়ে তুলতে না পারলে বইয়ের বাজারে ওই সামান্য সংখ্যক বই ছাপিয়ে তা বিক্রির ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার এই চক্র থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে না। এবং এর ফলে বই লিখে জীবিকা উপার্জনের সম্ভাবনা কোনোদিনই বাস্তবতার মুখ দেখবে না। কাজেই বইয়ের বাজারকে যদি সত্যিই জাতীয় উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে হয় তাহলে বই পরিবেশনার বিলুপ্ত ব্যবসাকে আবার চালু করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

কিন্তু আমি এখন বই সম্পাদকের কথা যদি বলতে চাই, আমি বলব বাংলাদেশে এটা সম্পূর্ণভাবে অপরিচিত একটা পেশা। বই সম্পাদক কী করে? এটা বলার চেয়ে যদি আপনি এটা ভাবেন, একজন পত্রিকা সম্পাদক কী করে? তাহলে সম্ভবত পুরো ব্যাপারটা আপনি খুব সহজে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। একজন সম্পাদক ছাড়া পত্রিকা প্রকাশের কথা কি ভাবা যায়? অথচ বাংলাদেশের বই প্রকাশনার পুরো কর্মকাণ্ডটাই চলছে বই সম্পাদক ছাড়াই। হ্যাঁ, এটা ঠিক বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকার প্রকাশকই সম্পাদক, কিন্তু সেক্ষেত্রেও পত্রিকার প্রকাশনার খাতিরে একজন কারো নাম সম্পাদক হিসেবে যেমন দেখাতে হয়, তেমনি কাউকে না কাউকে সম্পাদনার কাজগুলোও করতে হয়। ঠিক তেমনি ভাল বই প্রকাশককেও দেখা যায় তিনি বই সম্পাদনার সব কাজই করছেন অথবা কাউকে দিয়ে করাচ্ছেন কিন্তু নিজেকে বা যাকে দিয়ে করাচ্ছেন তাকে বই সম্পাদক বলছেন না। কিন্তু এটা বলতে হবে, এবং বইয়ের বাজারে বই সম্পাদককে পরিচিতি দিতে হবে এবং বই সম্পাদনা পত্রিকা সম্পাদনার মতো শেখাতে হবে প্রকাশক নির্ভর পেশা বা স্বাধীন পেশা হিসেবে এর প্রচলন ঘটাতে হবে। এবং এটা হলেই আপনি দেখবেন পাঠযোগ্য কত বই লেখা হবে উৎপাদিত হবে, পত্রিকা সম্পাদকদের প্রত্যয়ে নানান দিকের প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিকদের যেমন পড়ছেন বই সম্পাদকের প্রচেষ্টায় বিপ্র লেখকদেরও আপনি পড়বেন আরো আস্থার সাথে বহুবিধ বিষয়ে বহুতর সংখ্যায়।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

২ comments

  1. Pingback: বই সম্পাদক বই পরিবেশক | প্রাত্যহিক পাঠ

  2. মাসুদ করিম - ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ (৯:০৬ অপরাহ্ণ)

    বিক্রি কি কমছে কলকাতা বইমেলায়?

    প্রতি বছর উৎসবের মেজাজে শুরু হয় কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা; এ বছরও হয়েছে৷ কিন্তু বইমেলা কি জৌলুস হারাচ্ছে? কমছে ব্যবসা? সিরিয়াস পাঠক যাচ্ছেন তো মেলায়? প্রশ্নগুলো উড়ছে হাওয়ায়৷

    দেখতে দেখতে প্রায় ৪২ বছর৷ ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে মাত্র ৫৪টি স্টল নিয়ে শুরু হয়েছিল যে মেলা, আজ তা দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতায় মহীরূহ সমান৷ কলকাতা বইমেলা এখন আর শুধু কলকাতার সম্পদ নয়, সারা পৃথিবীতেই তা নিয়ে যথেষ্ট আলোড়ন৷

    এর কারণও আছে৷ বিশেষজ্ঞদের বিচারে পরিসরের দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলা৷ প্রথম স্থানে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট, দ্বিতীয় লন্ডন৷

    আর দৈনিক ভিড়ের হিসেব ধরলে, কলকাতা বইমেলা সকলের উপরে৷ সব মিলিয়ে প্রতিবছর প্রায় ২ মিলিয়ন, অর্থাৎ ২০ লাখ মানুষের সমাগম হয় এই মেলায়৷ বইয়ের পাশাপাশি আড্ডা, সেমিনার, গানবাজনা, সবই চলতে থাকে এখানে৷

    বস্তুত, বিপুল এই কার্নিভালের মেজাজের জন্যই ১৯৮৪ সালে কলকাতা বইমেলা আন্তর্জাতিক বইমেলার স্বীকৃতি পায়৷ প্রতিবছর কয়েক হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয় এখানে৷ প্রকাশ পায় অগণিত লিটল ম্যাগাজিন৷

    লিটল ম্যাগাজিনের জন্য এখানে তৈরি হয় আস্ত একটা প্যাভিলিয়ন৷ পাশাপাশি তৈরি হয় বিভিন্ন দেশের থিম প্যাভেলিয়ন৷ সেখানে গিয়ে সে দেশের নতুন নতুন বইপত্র দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকে পাঠকদের৷ সুযোগ থাকে সে দেশের লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ারও৷

    কিন্তু এত কিছুর পরেও একটি প্রশ্ন ঘুরতে থাকে কলকাতার আকাশে বাতাসে৷ কলকাতা বইমেলা কি তার মান হারিয়েছে? আদৌ বইমেলা কি সফলভাবে ব্যবসা করতে পারে? যে মেলার ব্যবসাই নেই, সেই মেলাকে কি সফল বলা আদৌ যায়?

    বিতর্ক আছে; পক্ষে বিপক্ষে রয়েছে ভারী ভারী যুক্তি৷ রয়েছে বহু স্মৃতিকাতরতা৷

    অনেকেই বইমেলাকে কেবল একটি ব্যবসার জায়গা বলতে নারাজ৷ তাদের মতে, বইমেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার সংস্কৃতি৷ সাহিত্যের ঐতিহ্য৷ তাই বার বার জায়গার বদল হলেও, পাঠকের সংখ্যা কমলেও, ব্যবসা না দিলেও তারা বইমেলা নিয়ে নেতিবাচক কিছু বলতে চান না৷

    তাদের কাছে বইমেলা একটা মস্ত বড় নস্টালজিয়া৷ শ্রীজাতের মত এ প্রজন্মের লেখকরাও তেমনই মনে করেন৷

    ডয়চে ভেলেকে শ্রীজাত বলেন, তার ইদানিং আরও বেশি করে মনে হয় যে কলকাতা বইমেলা মানুষের স্পন্দনের সঙ্গে জড়িয়ে৷

    মেলার মাঠ স্থানান্তর নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা সমস্যা হয়েছে৷ এক সময় ময়দান থেকে বইমেলা সরে এসেছিল মিলনমেলায়৷ এবার মিলনমেলায় সংস্কারের কাজ চলছে বলে বইমেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সল্টলেকে৷

    জায়গা বদলালে সমস্যা হয় ঠিক, কিন্তু তাতে বইমেলার আকর্ষণ কমবে না বলেই শ্রীজাতের বিশ্বাস৷ আর বইমেলার গুণমান নিয়েও তার কোনো প্রশ্ন নেই৷ বরং তিনি শুনেছেন, আগের চেয়ে বইমেলার বিক্রি বেড়েছে৷

    শুধু শ্রীজাত নন, বইমেলা কর্তৃপক্ষেরও দাবি, আগের চেয়ে ব্যবসা বেড়েছে কলকাতা বইমেলার৷ কিন্তু তা লাভের জায়গায় পৌঁছেছে কি?

    বিষয়টি বিতর্কসাপেক্ষ৷ বস্তুত ইন্টারনেটের এই বিশ্বে, কলকাতা বইমেলার বিপণন ধারা এবং বইয়ের গুণাগুণ নিয়ে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে৷ প্রশ্ন উঠছে, বিপুল অর্থ খরচ করে আদৌ এ মেলা চালানোর কোনো অর্থ আছে কিনা।

    এ বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে পৌঁছে যেতে হবে কলেজ স্ট্রিট পাড়ায়৷ বুঝতে হবে, বছরভর বাংলা বই প্রকাশনার বাণিজ্যটি৷ পাবলিশার্স এবং গিল্ডের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর কলেজ স্ট্রিটে প্রায় আড়াই হাজার নতুন বই ছাপা হয়৷ সংখ্যাটি নেহাত কম নয়৷
    ছোটবড় মিলিয়ে কলেজ স্ট্রিটে মোট প্রকাশকের সংখ্যা পাঁচশর বেশি৷ অর্থাৎ, প্রত্যেক প্রকাশনা বছরে গড়ে পাঁচটি করে নতুন বই প্রকাশ করছে৷ বিশ্ববাজারে এ সংখ্যা নেহাত মামুলি নয়৷

    কিন্তু যাচ্ছে কোথায় সেই বই? আদৌ বিক্রি হচ্ছে তো? প্রকাশকরা সেই বই নিয়ে ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন তো?

    মনে রাখা দরকার, নতুন প্রকাশিত অধিকাংশ বই-ই বইমেলাকে মাথায় রেখে করা হয়৷ পুজোয় যেমন বহু প্রকাশনা পুজো সংখ্যার ম্যাগাজিন প্রকাশ করে, তেমনি বইমেলায় প্রকাশিত হয় নতুন বই৷

    অভিযোগ রয়েছে, বড় প্রকাশনাগুলো ছাড়া অধিকাংশ প্রকাশক ইদানিং নিজেদের খরচে নতুন বই প্রকাশ করে না৷ লেখকই নিজের বই ছাপার অর্থ দেন৷ অর্থাৎ, বই বিক্রির প্রাথমিক তাগিদ না দেখালেও চলে ছোট প্রকাশকদের৷ লেখকের কাছ থেকেই তারা প্রোডাকশনের অর্থ তুলে নেন৷ তাছাড়া যে লেখক নিজের অর্থে বই ছাপান, সেই লেখকের গুণমান নিয়েও প্রশ্ন উঠে যায়৷

    ফ্রাংকফুর্ট বা লন্ডন বইমেলার সঙ্গে তুলনা করা হলেও কলকাতা বইমেলা কিন্তু বাণিজ্যিক মেলা নয়৷ প্রথম থেকেই এটিকে ‘অবাণিজ্যিক’ মেলা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে৷

    বহু প্রকাশনা সংস্থার বক্তব্য, মেলায় স্টল দিয়ে তাদের কোনো মুনাফা হয় না৷ তবু তারা স্টল দেয়, কারণ ব্যবসায় টিকে থাকতে হবে৷

    কথাটি একপ্রকার স্বীকারই করে নিয়েছেন কলকাতা বইমেলার অন্যতম কর্তাব্যক্তি পাবলিশার্স এবং বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়৷

    তিনি মেনে নিয়েছেন, কলকাতা বইমেলায় প্রকাশকরা বই বিক্রির আশায় স্টল দেন না, বিজ্ঞাপনের জন্যই মূলত স্টল দেওয়া হয়৷

    ডয়চে ভেলেকে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বইমেলায় যে দামে বই পাওয়া যায়, কলেজ স্ট্রিটে তার চেয়ে অনেক বেশি ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়৷ কিন্তু বইমেলায় পাঠকের সামনে প্রকাশকরা নতুন নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপন করতে পারেন৷ সেটা জরুরি।”

    প্রশ্ন রয়েছে বইয়ের মান নিয়েও৷ অভিযোগ রয়েছে, পৃথিবীব্যাপী বইয়ের প্রকাশনা ও সম্পাদনায় যখন চোখে পড়ার মতো উন্নতি হচ্ছে, কলকাতার বাংলা বই তখনও ডুবে আছে অতলান্ত সাগরে৷

    অধিকাংশ ছোট প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব সম্পাদক নেই৷ ফলে পুরনো বই রিপ্রিন্ট করার ক্ষেত্রেও অসংখ্য ভুলভ্রান্তি থেকে যায়৷ নতুন বইয়ের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তেমন কোনো মুন্সিয়ানা দেখা যায় না৷ শেষ পর্যন্ত নতুন বইয়ের চাহিদা তৈরি হয় না পাঠকের কাছে৷

    তথ্য ঘাঁটলে দেখা যাবে, গত কয়েক বছরের বেস্টসেলারের তালিকায় পুরনো বইগুলো ঘুরে ফিরে এসেছে৷ নতুন বইয়ের নাম কদাচিৎ চোখে পড়ে৷

    এখনো রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, শরৎ কিংবা সুনীল, শক্তি, শঙ্খ অথবা শীর্ষেন্দুরাই বেস্টসেলার৷ হালের লেখকদের মধ্যে শ্রীজাতের মত কয়েকজন ছাড়া বেস্টসেলারের তালিকায় তরুণদের নাম খুঁজে পাওয়া মুশকিল৷

    অথচ পাঠক বদলে গেছে৷ কলকাতার বাঙালি পাঠক এখন আর বাংলা বইয়ে আটকে নেই৷ খোলাবাজারের দেশে অনলাইনে বিদেশি বই অর্ডার দিচ্ছেন তারা নিয়মিত৷

    এটা অনেকটা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের খেলার মত৷ একসময় এই দুই ক্লাবের ফুটবলের সঙ্গেই পরিচিত ছিল কলকাতার মানুষ৷ আবেগও ছিল ভরপুর৷ কিন্তু টেলিভিশন যখন বিশ্ব ফুটবল চেনালো, রাজ্যের ক্লাব ফুটবলও তার রং হারালো৷

    পাঠক তাই আর এখন বইমেলায় গিয়ে বই কেনেন না৷ বই দেখেন কম, খান বেশি, আড্ডা মারেন আরও বেশি৷

    বই সম্পাদনার বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে সম্পাদক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, “ভারতীয় বাজারের সঙ্গে তুলনায় বাংলা বইয়ের অধিকাংশ সম্পাদকরা এতই কম পারিশ্রমিক পান যে, তাদের কাছ থেকে ভালো কাজ আশা করা বৃথা৷ তাছাড়া বাংলা বইয়ের জগতে সম্পাদক বলতে ঠিক কী বোঝায়, সে ধারণাটাই তৈরি হয়নি৷”

    অন্য এক প্রসঙ্গে আনন্দ পাবলিশার্সের সম্পাদক সুবীর মিত্র বলেছিলেন, “বই বিপণনের নানা পদ্ধতি আছে৷ বই পাড়ায় আনন্দই প্রথম টেলিফোনে অর্ডার নিয়ে বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করে৷ তা ছাড়া শহরের দুই প্রান্তে আমাদের নিজস্ব শোরুমও আছে৷ এখন আমরা নানা জায়গায় আরও শোরুম খুলছি৷”

    মুশকিল হলে, আনন্দ বা দে’জ পাবলিশিংয়ের মতো বড় মাপের প্রকাশনা সংস্থা কলকাতায় নেহাতই কম, যারা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বই বিক্রির কৌশল রপ্ত করে নিয়েছেন।

    সুবীর মিত্ররা বুঝে গেছেন, পাঠক এখন আর বছরের একটি সময় বই কেনার জন্য হা-হুতাশ করে বসে থাকেন না৷ বই কেনা কিংবা অনলাইনে বই পড়ার আধুনিক পদ্ধতি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি রপ্ত করে ফেলেছে৷ ফলে সে অনুযায়ী বিপণন প্রক্রিয়াও তারা শুরু করেছেন৷

    যারা পারেননি, বইমেলায় অনেক নতুন বই নিয়ে এসেও তারা নতুন প্রজন্মের কাছে সেই বই বিক্রি করে উঠতে পারছেন না৷

    এত কিছুর পরও বইমেলা আছে বইমেলাতেই৷ কথায় বলে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ৷ যতদিন যাচ্ছে, বাঙালির পার্বণের সংখ্যা ততই বাড়ছে৷ বইমেলা তার অন্যতম৷

    সুতরাং বই বিক্রি হোক বা না হোক, বইমেলার ভিড় কমবে না; তা সে শহরের যে মুলুকেই হোক না কেন।

    কিন্তু যে মেলার নামের সঙ্গেই ‘বই’ জড়িয়ে, সেখানে যদি বই বিক্রিই কমে যায়, তাহলে তার তাৎপর্য কী? এ প্রশ্ন ছিল, আছে, থাকবে৷ পাঠক আর বিক্রেতারাই এর সমাধানসূত্র খুঁজে বার করতে পারেন৷

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.