আমার মেমো ৪ : সৈআই ওকা হাহই

তাহলে সময়ের এই ইঙ্গিতে বোঝা যায় আওয়ামি লিগের ভেতর সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে জটিলতা ঘনীভূত হয়েছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ওবায়দুল কাদেরের মধ্যে। [...]

আপনি যদি সত্যিকারের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হতে চান তবে প্রথমেই যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যে কোনো প্রচারিত ভাষ্যের ‘কাল’ বিবেচনা করবেন, এরপর ‘পাত্র’ (কে বলছেন কাকে বলছেন কার ঘাড়ে চাপাচ্ছেন কার উপর ঝাল ঝাড়ছেন – এরকম সম্ভাব্য সব ‘ট্যাগ’) আর ‘স্থান’ বিবেচনা করতেও পারেন নাও করতে পারেন। এবং যেজিনিশটি আপনি একদম ধর্তব্যের মধ্যে আনবেন না তা হল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বটি কী ‘বিষয়’এ কথা বলেছেন। কিন্তু আমাদের এখানে দুঃখজনক হলেও সত্য প্রায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যে কোনো প্রচারিত ভাষ্যের ‘বিষয়’ নিয়েই লেপ্টে থাকেন। ফলে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কী বলা উচিত ছিল তিনি কী বলেছেন সব আলোচনা এনিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে – মানে আমাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যে কোনো প্রচারিত ভাষ্যকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মতো মোকাবেলা করেন অথচ তারা আরো কার্যকর হয়ে উঠতেন যদি তারা রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতো মোকাবেলা করতেন।

বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাম্প্রতিক একটি প্রচারিত ভাষ্যকে উদাহরণ হিসেবে নিলাম।

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ। কিন্তু জাসদের নেতা-কর্মীরা এই সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিল। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই দেশকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করেছিল। তারা যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সমস্ত পরিবেশ সৃষ্টি না করত, তবে বাংলাদেশ একটি ভিন্ন বাংলাদেশ হত। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে দেশ আগেই অর্থনৈতিক অগ্রসরতা অর্জন করত। শুধু হঠকারীদের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এদের একজনকে আবার মন্ত্রিত্বও দেওয়া হযেছে, যার প্রায়শ্চিত্ত আওয়ামী লীগকে আজীবন করতে হবে।

[জাসদ থেকে মন্ত্রী করার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে: আশরাফ]

এখন এই কথার পর আমাদের প্রায় সব রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কথা বলার বিষয় হয়ে উঠল জাসদ, মুক্তিযুদ্ধ, শেখ মুজিব হত্যা আর ইঙ্গিতে বলা হাসানুল হক ইনু। কিন্তু একথা কখন বলা হচ্ছে সেই কালটা নিয়েই কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষককে কথা বলতে দেখলাম না। অথচ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমন এক সময় কথাটা বলছেন, যখন বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের কাউন্সিল এবছর দ্বিতীয় বারের মতো পিছিয়ে দেয়া হয়েছে, এবং কে না জানে, বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের কাউন্সিল মানেই দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবে এই জল্পনাকল্পনা, এবং সবাই খেয়াল করবেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এই কথার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের ওবায়দুল কাদের থেকে এসেছে, তাহলে সময়ের এই ইঙ্গিতে বোঝা যায় আওয়ামি লিগের ভেতর সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে জটিলতা ঘনীভূত হয়েছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ওবায়দুল কাদেরের মধ্যে। এবং ওবায়দুল কাদের ছাত্রজীবনে জাসদঘনিষ্ঠ ছিলেন।

এরপর আসুন হাসানুল হক ইনুর কথায় তার সময়টার এখন বড় বৈশিষ্ট্য হল তিনি মন্ত্রিত্ব নিয়ে কী করবেন তা নয়, তিনি দল নিয়ে কী করবেন সেটাই এখন হাসানুল হক ইনুর অস্তিত্বের প্রশ্ন। তার সামনে ২০১৯ সালের নির্বাচনেরও একটা সম্ভাবনা ঝুলছে এবং সেসম্ভাবনা একটু অন্যরকম ওই জাতীয় পার্টি ২০১৪তে যে ভূমিকা পালন করেছে ২০১৯এ জাসদ সেভূমিকা পালন করতে পারে কিনা সেসম্ভাবনা, এবং আমরা এখনো বলতে পারি না, কিন্তু আদতে যদি সেটা হয় তাহলে তার অবস্থান কী হবে, বা জাসদ কী তাকে সামনে রেখেই সেসম্ভাবনার দিকে যাবে, নাকি আবারও ২০১৪এর জাতীয় পার্টির মতো সেখানে অন্য কোনো মেরুকরণ অনিবার্য হয়ে উঠবে?

এখন এ হল কাল আর পাত্র বিবেচনার ফল। তা না পুরো বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘বিষয়’ নিয়ে লেপ্টে আছে!

সাবস্ক্রাইব করুন
অবগত করুন
guest

4 মন্তব্যসমূহ
সবচেয়ে পুরোনো
সাম্প্রতিকতম সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
4
0
আপনার ভাবনাগুলোও শেয়ার করুনx
  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.