অনেকেরই মনে আছে হয়তো- ‘বাংলাদেশ, ১৯৭১, রক্তে জন্ম, পানিতে মরণ’ শিরোনামের এক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল ২০০৮ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশের প্রচারবহুল এক দৈনিক পত্রিকাতে। লিখেছিলেন ব্রিটেনের দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার প্রতিবেদক জোহান হ্যারি। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চল ঘুরে আসন্ন পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিকে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন তিনি। অবশ্য ওই প্রতিবেদনের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এইচ খানের একটি ভিন্নমতও তুলে ধরা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, জোহান হ্যারির প্রতিবেদনে ছিল আইপিসিসির সঙ্গেই যুক্ত বাংলাদেশের ডাকসাইটে পরিবেশবিদ ড. আতিক রহমানের ভাষ্য, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় যিনি পুরস্কৃত হয়েছেন জাতিসংঘ থেকে। জোহান হ্যারির কাছে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে বসে আরো তথ্য নিয়ে আমার এখন মনে হচ্ছে, আইপিসিসির প্রতিবেদন বিপদের মাত্রাকে কমিয়েই দেখিয়েছে।’ বাংলাদেশকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান আঘাতস্থল বা জিরো গ্রাউন্ড হিসেবে।
জোহান হ্যারির প্রতিবেদনটিতে আমরা আরো পেয়েছিলাম বাংলাদেশি এক তরুণীর ভাষ্য- ইংরেজিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি উপন্যাস লিখে যিনি আলোচিত হয়েছিলেন এবং পরে গার্ডিয়ানের এক কলামে ডিম্বাণু বরফায়িত করে রাখার সংবাদ জানিয়ে অনেককে বিষয়টি সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলেছিলেন। বলেছিলেন তিনি জোহান হ্যারিকে, ‘যা ঘটার তা শুরু হয়ে গেছে। দেশটা যে ডুবে যাবে, তা এখন সবাই বুঝতে শুরু করেছে।’
এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র দুই মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বর, ২০০৮-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তত্ত্বাবধানে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স। যুক্তরাজ্য রাজি হয় পরের পাঁচ বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দেওয়ার জন্য ২৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড দিতে। ২০০৯-এর শেষ দিকে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন। আইপিসিসির প্রতিবেদনের জোরে ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সম্ভব হয় সগৌরবে চড়া গলায় প্রচুর অনুদান দাবি করা। ২০১০ সালে আমাদের জন্য মেক্সিকোতে অপেক্ষা করছে আরো একটি জলবায়ু সম্মেলন, যেখানে কথা রয়েছে পৃথিবীর ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধির একত্র হওয়ার।
আবারও বলি, যেসব সম্মেলন হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, সবখানেই বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে বা হবে করুণার পাত্র হিসেবে। অথচ কোপেনহেগেনের সম্মেলনের আগেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আইপিসিসির বহুল আলোচিত প্রতিবেদন, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তাপমাত্রা বৃদ্ধিসংক্রান্ত পরিসংখ্যান এবং ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ছাঁচে এই কেলেঙ্কারিকে অনেকেই চিহ্নিত করছেন ক্লাইমেটগেট কেলেঙ্কারি হিসেবে।
ডেনমার্কে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে ২০০৯-এর ডিসেম্বরে। তারপর দুই মাসও যায়নি, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেছেন জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কর্মকর্তা ইভো ডি বোয়ের। তিনি অবশ্য কারণ দেখিয়েছেন, আগামী সম্মেলনের আগেই জাতিসংঘ যাতে এ পদে একজন যথাযথ কর্মকর্তা খুঁজে পায়, সেটি নিশ্চিত করতেই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তাঁর পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে আগামী জুলাই থেকে। কিন্তু যাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত খবরাখবর রাখেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, বোয়েরের ওই ব্যাখ্যা কথার কথা, আসল ব্যাপার হলো, ২০৩৫ সালের মধ্যে হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে যাওয়ার যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল, তার কোনো ভিত্তি না থাকার অভিযোগ উঠেছে। ফলে কোপেনহেগেন সম্মেলনই বিরাট এক প্রশ্নের মুখোমুখি এখন। তা ছাড়া বোয়েরের আগেই পদত্যাগ করেছেন ফিল জোনস- যিনি ছিলেন আইপিসিসিকে তাপমাত্রা সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিআরইউর প্রধান। প্রতিষ্ঠান ছাড়ার পর তিনি ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিবিসিতে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, গেল ১৫ বছর ধরে, ১৯৯৫ সাল থেকে, নাকি পৃথিবীর তাপমাত্রা আদৌ বাড়েনি! কিন্তু এ রকম স্বীকারোক্তি দিয়েও ছাড় পাননি ফিল জোনস। কয়েক দিন আগে মার্চ মাসের প্রথম দিনে তাঁকে হাজিরা দিতে হয়েছে ব্রিটেনের দ্য সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কমিটি ইন দ্য কমন্সের সামনে। সেখানে তিনি বলেছেন, তথ্য গোপন করার জন্য তিনি কয়েকটি ‘প্রিটি অফুল ই-মেইল’ দিয়েছিলেন বটে। ফিল জোনস এখন পশ্চিমে পরিচিতি লাভ করেছেন ‘ক্লাইমেটগেট’ রিসার্চ ইউনিটের প্রধান হিসেবে। কেননা এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য জানাচ্ছে, গবেষণার নামে তাঁরা আসলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন, সোজা বাংলায় বলতে গেলে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছেন। তাঁদের এই ফাঁদ পাতার খবর অবশ্য কোপেনহেগেন সম্মেলনের আগেই ধরা পড়ে। ২০০৯-এর ১৭ নভেম্বর একদল হ্যাকারের কল্যাণে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার জলবায়ু গবেষণা ইউনিটের (সিআরইউ) এক ওয়েব মেইল সার্ভারের হাজার হাজার ই-মেইল ফাঁস হয়ে যায়। তখন এই তথ্য বেরিয়ে পড়ে, পৃথিবীতে বর্তমানে গত প্রায় ১৫০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করার তথ্য নিয়ে বিজ্ঞানীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের আপত্তি রয়েছে। তাঁরা বলেছিলেন, কোপেনহেগেন সম্মেলনে এ রকম দাবি করা হবে পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক। কিন্তু ক্লাইমেট রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক ফিল জোনস তাঁদের এ ব্যাপারে প্রভাবিত করেন এবং ই-মেইলে তাপমাত্রা কমে যাওয়াসংক্রান্ত তথ্যগুলো ইন্টারনেটে সার্চ দিলে যাতে খুঁজে না পাওয়া যায় সে রকম ব্যবস্থা নিতে বলেন। এভাবে আইপিসিসির বিজ্ঞানীদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে এমন গ্রাফ তৈরি করানো হয়, যাতে তাপমাত্রার রেখা কেবল ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়!
এমনকি এখন এও দেখা যাচ্ছে যে, তাপমাত্রা গলে যাওয়াসংক্রান্ত গবেষণাটিও আইপিসিসির উদ্যোগে করা হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে, উদ্ধৃতি ব্যবহার করে এ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আর সে তথ্যের উৎস লন্ডনের বিজ্ঞান ম্যাগাজিন ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’। ১৯৯৯ সালে পত্রিকাটিতে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়, যাতে ভারতীয় হিমবাহ বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ ইকবাল হাসনাইনের একটি মন্তব্য ব্যবহার করা হয়। নিউ সায়েন্টিস্টের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি তাঁদের টেলিফোনে জানিয়েছেন, ‘২০৩৫ সালের মধ্যে সব হিমবাহ গলে যেতে পারে।’ ড. ইকবালের এই বাক্যটিকেই পরে ২০০৫ সালে উদ্ধৃত করে চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান ডব্লিউডব্লিউএফ। তিল থেকে তাল হয়- ২০০৭ সালে ওই রিপোর্ট থেকে বাক্যটি লুফে নেয় জাতিসংঘের আইপিসিসি। ৯৯৮ পৃষ্ঠার চতুর্থ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টের দশম অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়, ‘হিমালয়ে হিমবাহ গলছে অন্যান্য স্থানের চেয়ে দ্রুততর গতিতে; আর এ গতি অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে, এমনকি তার আগেও হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে যেতে পারে।’
উদ্ধৃতি থেকে পুনরুদ্ধৃতির মাধ্যমে দাঁড় করানো একটি গবেষণা এভাবে বাংলাদেশের মতো কয়েকটি দেশকে পৃথিবীর সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় ভঙ্গুর দেশ হিসেবে। ভয়ংকর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো কিভাবে ‘টিকে থাকবে’ তারই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নামে উন্নত দেশগুলো। এ রকম প্রতিবেদনে আতঙ্কিত মালদ্বীপ সরকার উদ্যোগ নেয় পুরো মালদ্বীপবাসীকে অন্যখানে স্থানান্তরিত করার, অক্সিজেন মাস্ক পরে পানির নিচে বৈঠকের মহড়াও দেন দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বাংলাদেশেও উচ্চকিত হয় মিডিয়া।
কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, যে-বিরাট মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আইপিসিসির প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সে সম্পর্কে বাংলাদেশের মিডিয়ায় আলোচনা হয়নি বললেই চলে। ভারতীয় বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ ইকবাল হাসনাইন, যাঁর উদ্ধৃতির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ২০৩৫ সালের মধ্যে পানির তলে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি গত ১৯ জানুয়ারি বেশ কয়েকটি নামকরা পত্রিকার কাছে বলেছেন, এ রকম কোনো ভবিষ্যদ্বাণী তিনি আদৌ করেননি। তাঁর বক্তব্যমতে, ১৯৯৯ সালে নিউ সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনের ফ্রেড পিয়ার্স তাঁর সঙ্গে হিমালয়ের হিমবাহসংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য আলাপ করেন। ড. ইকবাল বলছেন, “আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি বলেছিলাম যে, আগামী ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও মধ্য হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহের ‘পুরুত্ব’ খানিকটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” ইকবাল দাবি করছেন, তিনি মোটেও কোনো সময়সীমা বেঁধে দেননি এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে এ রকম ঘটার বিষয়টি সম্ভবত পত্রিকাটিরই উদ্ভাবন।
ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরের সংবাদে আমরা দেখছি, ইকবাল জানাচ্ছেন, ১৯৯৯ সালেই তাঁর বক্তব্যকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করার বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছিল, কিন্তু তা সংশোধনের জন্য তিনি আর যোগাযোগ করেননি।
তাঁর ওই বক্তব্যকে যে এত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হবে, তা তিনি ঘুণাক্ষরেও অনুমান করতে পারেননি। তিনি বলছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রার বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন আর সব হিমবাহ গলে যাওয়া নিয়েও তিনি কোনো কথা বলেননি ওই প্রতিবেদকের সঙ্গে। কিন্তু ড. ইকবালের ওই আলসেমিকে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন আইপিসিসির প্রধান রাজেন্দ্র পাচুড়ি। ইভো ডি বোয়েরের মতো পদত্যাগ করতে এখনো রাজি নন তিনি, উল্টো গত ১৯ জানুয়ারি আবুধাবিতে দ্য ওয়ার্ল্ড ফিউচার এনার্জি সামিটে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন যে, এমনকি হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়াসংক্রান্ত তথ্য যদি বেঠিকও হয়, তার পরও জলবায়ু পরিবর্তনের উপস্থিতির সমর্থনে যেসব প্রমাণ রয়েছে, তার গুরুত্ব কমে যায় না! দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার ইরাকে হামলার সপক্ষে যেভাবে সাফাই গেয়েছেন, পাচুড়িও ঠিক সেভাবে পার পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কিন্তু এত কথা লিখছি কেন? লিখছি এ কারণেই যে, বাংলাদেশের যেসব পরিবেশবিদ ও সাংবাদিক কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশকে পানির তলে ডুবিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের কেউই এই ক্লাইমেটগেট নিয়ে মুখ খুলছেন না। জোহান হ্যারির কাছে বাংলাদেশের যাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদের কাউকেই আর ক্লাইমেটগেট কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে লিখতে দেখা যাচ্ছে না। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোপেনহেগেনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলের শোভাবৃদ্ধিকারী সাংবাদিক বা কলামিস্ট কাউকে। অথচ আমাদের পাশের রাষ্ট্র, আইপিসিসির প্রধান রাজেন্দ্র পাচুড়ির স্বদেশ ভারতে এই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি গত মাত্র এক মাসে রাজনীতির এত বেশি কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে যে, ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখে সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিশেষ দূত শ্যামশরণ পদত্যাগ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে দিয়ে জয় হয়েছে ভারতের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী জয়রাম রমেশের, যিনি মনে করেন, ড. ইকবালের বিবৃতিকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে হয়েছে এর উল্টো- গত ৩ মার্চ বুধবার বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি আবদুল মোমিন তালুকদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়গুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্য থেকে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। আর বাকি ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে দেশের প্রতিষ্ঠিত এনজিওগুলোর মাধ্যমে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ করা টাকার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যয় করা হবে। বাকি অর্থ দেশের স্বীকৃত এনজিওগুলোর মাধ্যমে ব্যয় করা হবে। আর পুরো ৪০০ কোটি টাকাই ব্যয় করা হবে এক বছরের মধ্যে! জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের এই ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার এনজিও!
বোঝাই যাচ্ছে ক্লাইমেটগেট কেলেঙ্কারির বখরা নিতে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এনজিও সবাই তলে তলে জোটবদ্ধ। আমরা জানি, জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে, বিরূপ প্রতিক্রিয়াও পড়ে- কিন্তু সত্যিই কি বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা তলিয়ে দেখেছেন বাংলাদেশে পরিবেশজনিত বিপর্যয়গুলোকে? নাকি তারা নির্ভর করছেন আইপিসিসির পুরনো রিপোর্টের ওপরে, আইপিসিসির তল্পিবাহক গবেষক ও পরিবেশবিদদের ওপরে? মিথ্যার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে এই ৪০০ কোটি টাকাকে আসলে কাদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে? কী করা হবে ব্রিটেন থেকে নেয়া ২৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে? দেশকে করুণার পাত্রে পরিণত করে আনা অর্থ কি তাহলে মিলিয়ে যাবে লুটপাটের অতল তলানিতে?