ক্লাইমেটগেট কেলেঙ্কারি আর ৪০০ কোটি টাকা

অনেকেরই মনে আছে হয়তো- 'বাংলাদেশ, ১৯৭১, রক্তে জন্ম, পানিতে মরণ' শিরোনামের এক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল ২০০৮ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশের প্রচারবহুল এক দৈনিক পত্রিকাতে। লিখেছিলেন ব্রিটেনের দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার প্রতিবেদক জোহান হ্যারি।...

অনেকেরই মনে আছে হয়তো- ‘বাংলাদেশ, ১৯৭১, রক্তে জন্ম, পানিতে মরণ’ শিরোনামের এক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল ২০০৮ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশের প্রচারবহুল এক দৈনিক পত্রিকাতে। লিখেছিলেন ব্রিটেনের দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার প্রতিবেদক জোহান হ্যারি। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চল ঘুরে আসন্ন পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিকে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন তিনি। অবশ্য ওই প্রতিবেদনের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এইচ খানের একটি ভিন্নমতও তুলে ধরা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, জোহান হ্যারির প্রতিবেদনে ছিল আইপিসিসির সঙ্গেই যুক্ত বাংলাদেশের ডাকসাইটে পরিবেশবিদ ড. আতিক রহমানের ভাষ্য, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় যিনি পুরস্কৃত হয়েছেন জাতিসংঘ থেকে। জোহান হ্যারির কাছে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে বসে আরো তথ্য নিয়ে আমার এখন মনে হচ্ছে, আইপিসিসির প্রতিবেদন বিপদের মাত্রাকে কমিয়েই দেখিয়েছে।’ বাংলাদেশকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান আঘাতস্থল বা জিরো গ্রাউন্ড হিসেবে।
জোহান হ্যারির প্রতিবেদনটিতে আমরা আরো পেয়েছিলাম বাংলাদেশি এক তরুণীর ভাষ্য- ইংরেজিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি উপন্যাস লিখে যিনি আলোচিত হয়েছিলেন এবং পরে গার্ডিয়ানের এক কলামে ডিম্বাণু বরফায়িত করে রাখার সংবাদ জানিয়ে অনেককে বিষয়টি সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলেছিলেন। বলেছিলেন তিনি জোহান হ্যারিকে, ‘যা ঘটার তা শুরু হয়ে গেছে। দেশটা যে ডুবে যাবে, তা এখন সবাই বুঝতে শুরু করেছে।’
এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র দুই মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বর, ২০০৮-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তত্ত্বাবধানে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স। যুক্তরাজ্য রাজি হয় পরের পাঁচ বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দেওয়ার জন্য ২৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড দিতে। ২০০৯-এর শেষ দিকে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন। আইপিসিসির প্রতিবেদনের জোরে ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সম্ভব হয় সগৌরবে চড়া গলায় প্রচুর অনুদান দাবি করা। ২০১০ সালে আমাদের জন্য মেক্সিকোতে অপেক্ষা করছে আরো একটি জলবায়ু সম্মেলন, যেখানে কথা রয়েছে পৃথিবীর ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধির একত্র হওয়ার।
আবারও বলি, যেসব সম্মেলন হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, সবখানেই বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে বা হবে করুণার পাত্র হিসেবে। অথচ কোপেনহেগেনের সম্মেলনের আগেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আইপিসিসির বহুল আলোচিত প্রতিবেদন, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তাপমাত্রা বৃদ্ধিসংক্রান্ত পরিসংখ্যান এবং ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ছাঁচে এই কেলেঙ্কারিকে অনেকেই চিহ্নিত করছেন ক্লাইমেটগেট কেলেঙ্কারি হিসেবে।
ডেনমার্কে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে ২০০৯-এর ডিসেম্বরে। তারপর দুই মাসও যায়নি, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেছেন জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কর্মকর্তা ইভো ডি বোয়ের। তিনি অবশ্য কারণ দেখিয়েছেন, আগামী সম্মেলনের আগেই জাতিসংঘ যাতে এ পদে একজন যথাযথ কর্মকর্তা খুঁজে পায়, সেটি নিশ্চিত করতেই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তাঁর পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে আগামী জুলাই থেকে। কিন্তু যাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত খবরাখবর রাখেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, বোয়েরের ওই ব্যাখ্যা কথার কথা, আসল ব্যাপার হলো, ২০৩৫ সালের মধ্যে হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে যাওয়ার যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল, তার কোনো ভিত্তি না থাকার অভিযোগ উঠেছে। ফলে কোপেনহেগেন সম্মেলনই বিরাট এক প্রশ্নের মুখোমুখি এখন। তা ছাড়া বোয়েরের আগেই পদত্যাগ করেছেন ফিল জোনস- যিনি ছিলেন আইপিসিসিকে তাপমাত্রা সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিআরইউর প্রধান। প্রতিষ্ঠান ছাড়ার পর তিনি ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিবিসিতে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, গেল ১৫ বছর ধরে, ১৯৯৫ সাল থেকে, নাকি পৃথিবীর তাপমাত্রা আদৌ বাড়েনি! কিন্তু এ রকম স্বীকারোক্তি দিয়েও ছাড় পাননি ফিল জোনস। কয়েক দিন আগে মার্চ মাসের প্রথম দিনে তাঁকে হাজিরা দিতে হয়েছে ব্রিটেনের দ্য সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কমিটি ইন দ্য কমন্সের সামনে। সেখানে তিনি বলেছেন, তথ্য গোপন করার জন্য তিনি কয়েকটি ‘প্রিটি অফুল ই-মেইল’ দিয়েছিলেন বটে। ফিল জোনস এখন পশ্চিমে পরিচিতি লাভ করেছেন ‘ক্লাইমেটগেট’ রিসার্চ ইউনিটের প্রধান হিসেবে। কেননা এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য জানাচ্ছে, গবেষণার নামে তাঁরা আসলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন, সোজা বাংলায় বলতে গেলে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছেন। তাঁদের এই ফাঁদ পাতার খবর অবশ্য কোপেনহেগেন সম্মেলনের আগেই ধরা পড়ে। ২০০৯-এর ১৭ নভেম্বর একদল হ্যাকারের কল্যাণে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার জলবায়ু গবেষণা ইউনিটের (সিআরইউ) এক ওয়েব মেইল সার্ভারের হাজার হাজার ই-মেইল ফাঁস হয়ে যায়। তখন এই তথ্য বেরিয়ে পড়ে, পৃথিবীতে বর্তমানে গত প্রায় ১৫০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করার তথ্য নিয়ে বিজ্ঞানীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের আপত্তি রয়েছে। তাঁরা বলেছিলেন, কোপেনহেগেন সম্মেলনে এ রকম দাবি করা হবে পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক। কিন্তু ক্লাইমেট রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক ফিল জোনস তাঁদের এ ব্যাপারে প্রভাবিত করেন এবং ই-মেইলে তাপমাত্রা কমে যাওয়াসংক্রান্ত তথ্যগুলো ইন্টারনেটে সার্চ দিলে যাতে খুঁজে না পাওয়া যায় সে রকম ব্যবস্থা নিতে বলেন। এভাবে আইপিসিসির বিজ্ঞানীদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে এমন গ্রাফ তৈরি করানো হয়, যাতে তাপমাত্রার রেখা কেবল ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়!
এমনকি এখন এও দেখা যাচ্ছে যে, তাপমাত্রা গলে যাওয়াসংক্রান্ত গবেষণাটিও আইপিসিসির উদ্যোগে করা হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে, উদ্ধৃতি ব্যবহার করে এ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আর সে তথ্যের উৎস লন্ডনের বিজ্ঞান ম্যাগাজিন ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’। ১৯৯৯ সালে পত্রিকাটিতে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়, যাতে ভারতীয় হিমবাহ বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ ইকবাল হাসনাইনের একটি মন্তব্য ব্যবহার করা হয়। নিউ সায়েন্টিস্টের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি তাঁদের টেলিফোনে জানিয়েছেন, ‘২০৩৫ সালের মধ্যে সব হিমবাহ গলে যেতে পারে।’ ড. ইকবালের এই বাক্যটিকেই পরে ২০০৫ সালে উদ্ধৃত করে চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান ডব্লিউডব্লিউএফ। তিল থেকে তাল হয়- ২০০৭ সালে ওই রিপোর্ট থেকে বাক্যটি লুফে নেয় জাতিসংঘের আইপিসিসি। ৯৯৮ পৃষ্ঠার চতুর্থ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টের দশম অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়, ‘হিমালয়ে হিমবাহ গলছে অন্যান্য স্থানের চেয়ে দ্রুততর গতিতে; আর এ গতি অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে, এমনকি তার আগেও হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে যেতে পারে।’
উদ্ধৃতি থেকে পুনরুদ্ধৃতির মাধ্যমে দাঁড় করানো একটি গবেষণা এভাবে বাংলাদেশের মতো কয়েকটি দেশকে পৃথিবীর সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় ভঙ্গুর দেশ হিসেবে। ভয়ংকর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো কিভাবে ‘টিকে থাকবে’ তারই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নামে উন্নত দেশগুলো। এ রকম প্রতিবেদনে আতঙ্কিত মালদ্বীপ সরকার উদ্যোগ নেয় পুরো মালদ্বীপবাসীকে অন্যখানে স্থানান্তরিত করার, অক্সিজেন মাস্ক পরে পানির নিচে বৈঠকের মহড়াও দেন দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বাংলাদেশেও উচ্চকিত হয় মিডিয়া।
কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, যে-বিরাট মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আইপিসিসির প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সে সম্পর্কে বাংলাদেশের মিডিয়ায় আলোচনা হয়নি বললেই চলে। ভারতীয় বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ ইকবাল হাসনাইন, যাঁর উদ্ধৃতির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ২০৩৫ সালের মধ্যে পানির তলে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি গত ১৯ জানুয়ারি বেশ কয়েকটি নামকরা পত্রিকার কাছে বলেছেন, এ রকম কোনো ভবিষ্যদ্বাণী তিনি আদৌ করেননি। তাঁর বক্তব্যমতে, ১৯৯৯ সালে নিউ সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনের ফ্রেড পিয়ার্স তাঁর সঙ্গে হিমালয়ের হিমবাহসংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য আলাপ করেন। ড. ইকবাল বলছেন, “আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি বলেছিলাম যে, আগামী ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও মধ্য হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহের ‘পুরুত্ব’ খানিকটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” ইকবাল দাবি করছেন, তিনি মোটেও কোনো সময়সীমা বেঁধে দেননি এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে এ রকম ঘটার বিষয়টি সম্ভবত পত্রিকাটিরই উদ্ভাবন।
ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরের সংবাদে আমরা দেখছি, ইকবাল জানাচ্ছেন, ১৯৯৯ সালেই তাঁর বক্তব্যকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করার বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছিল, কিন্তু তা সংশোধনের জন্য তিনি আর যোগাযোগ করেননি।
তাঁর ওই বক্তব্যকে যে এত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হবে, তা তিনি ঘুণাক্ষরেও অনুমান করতে পারেননি। তিনি বলছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রার বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন আর সব হিমবাহ গলে যাওয়া নিয়েও তিনি কোনো কথা বলেননি ওই প্রতিবেদকের সঙ্গে। কিন্তু ড. ইকবালের ওই আলসেমিকে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন আইপিসিসির প্রধান রাজেন্দ্র পাচুড়ি। ইভো ডি বোয়েরের মতো পদত্যাগ করতে এখনো রাজি নন তিনি, উল্টো গত ১৯ জানুয়ারি আবুধাবিতে দ্য ওয়ার্ল্ড ফিউচার এনার্জি সামিটে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন যে, এমনকি হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়াসংক্রান্ত তথ্য যদি বেঠিকও হয়, তার পরও জলবায়ু পরিবর্তনের উপস্থিতির সমর্থনে যেসব প্রমাণ রয়েছে, তার গুরুত্ব কমে যায় না! দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার ইরাকে হামলার সপক্ষে যেভাবে সাফাই গেয়েছেন, পাচুড়িও ঠিক সেভাবে পার পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

কিন্তু এত কথা লিখছি কেন? লিখছি এ কারণেই যে, বাংলাদেশের যেসব পরিবেশবিদ ও সাংবাদিক কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশকে পানির তলে ডুবিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের কেউই এই ক্লাইমেটগেট নিয়ে মুখ খুলছেন না। জোহান হ্যারির কাছে বাংলাদেশের যাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদের কাউকেই আর ক্লাইমেটগেট কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে লিখতে দেখা যাচ্ছে না। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোপেনহেগেনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলের শোভাবৃদ্ধিকারী সাংবাদিক বা কলামিস্ট কাউকে। অথচ আমাদের পাশের রাষ্ট্র, আইপিসিসির প্রধান রাজেন্দ্র পাচুড়ির স্বদেশ ভারতে এই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি গত মাত্র এক মাসে রাজনীতির এত বেশি কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে যে, ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখে সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিশেষ দূত শ্যামশরণ পদত্যাগ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে দিয়ে জয় হয়েছে ভারতের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী জয়রাম রমেশের, যিনি মনে করেন, ড. ইকবালের বিবৃতিকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে হয়েছে এর উল্টো- গত ৩ মার্চ বুধবার বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি আবদুল মোমিন তালুকদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়গুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্য থেকে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। আর বাকি ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে দেশের প্রতিষ্ঠিত এনজিওগুলোর মাধ্যমে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ করা টাকার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যয় করা হবে। বাকি অর্থ দেশের স্বীকৃত এনজিওগুলোর মাধ্যমে ব্যয় করা হবে। আর পুরো ৪০০ কোটি টাকাই ব্যয় করা হবে এক বছরের মধ্যে! জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের এই ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার এনজিও!
বোঝাই যাচ্ছে ক্লাইমেটগেট কেলেঙ্কারির বখরা নিতে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এনজিও সবাই তলে তলে জোটবদ্ধ। আমরা জানি, জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে, বিরূপ প্রতিক্রিয়াও পড়ে- কিন্তু সত্যিই কি বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা তলিয়ে দেখেছেন বাংলাদেশে পরিবেশজনিত বিপর্যয়গুলোকে? নাকি তারা নির্ভর করছেন আইপিসিসির পুরনো রিপোর্টের ওপরে, আইপিসিসির তল্পিবাহক গবেষক ও পরিবেশবিদদের ওপরে? মিথ্যার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে এই ৪০০ কোটি টাকাকে আসলে কাদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে? কী করা হবে ব্রিটেন থেকে নেয়া ২৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে? দেশকে করুণার পাত্রে পরিণত করে আনা অর্থ কি তাহলে মিলিয়ে যাবে লুটপাটের অতল তলানিতে?

ইমতিয়ার শামীম

আপনারে এই জানা আমার ফুরাবে না...

১০ comments

  1. রাগিব হাসান - ৮ এপ্রিল ২০১০ (৩:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    বিজ্ঞানীরা মিথ্যা কথা বলবেন না, রাষ্ট্রীয় বা কোম্পানীয় স্বার্থবাদী কাজ করবেন না, এমন ভাবার কারণ নেই। পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে গলাবাজি করাটা হালের ফ্যাশন মাত্র … বাংলাদেশ ডুবে গেলো, ইত্যাদি বলে লেকচার দেয়াটা বাংলাদেশের নিঝুম দ্বীপে নতুন মাটি ও বসতির খবর বলার চাইতে চমকপ্রদ বটে।

    বিদেশী পত্রিকার রিপোর্টের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিলো, বাংলাদেশের নদী ভাঙনের শিকার ভূমিহীন মানুষদের ক্লাইমেট রিফিউজি বলে চালিয়ে দেয়া। হাজার হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভাঙা গড়ার খেলা চলছে। সেটাকে “নতুন ঘটনা”, “উষ্ণায়ণের ফল” ইত্যাদি বলে চালিয়ে দেয়া হলে সেই বিজ্ঞানই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

    তার উপরে বাংলাদেশের ভূখণ্ড যেখানে বছরে ২০ বর্গকিলোমিটার করে বেড়ে চলেছে, সেখানে অমুক হবে তমুক হবে ইত্যাদি বলে আতংক সৃষ্টি করা দেখলে মতলবটা কী তা নিয়েই সন্দেহ হতে থাকে। প্রমাণ ছাড়া কথা স্বয়ং আইনস্টাইন বললেও তাকে অলংঘনীয় সত্য হিসাবে ধরার কোনো দরকার নাই। এসব তথাকথিত বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা ৭০ এর দশকে বাংলাদেশে ডিপ টিউবওয়েল বসানোর পরামর্শ দিয়ে এখন আর্সেনিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছিলো। আর এখন যেরকম তথ্য গোপন ও বিকৃতির খবর বেরুচ্ছে, তাতে এই আইপিসিসির রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে মনে।

    • অবিশ্রুত - ২৩ এপ্রিল ২০১০ (৬:২৫ অপরাহ্ণ)

      দেখুন, এতক্ষণে অরিন্দম কহিল বিষাদে….

      জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানীদের নতুন তথ্য
      বাংলাদেশ ডুববে না

      বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের উপকূলের বড় অংশ ডুবে যাওয়ার বিপরীতে সম্পূর্ণ নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন।
      বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আগামী ১০০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে পলির পরিমাণ বাড়বে। এর ফলে দেশের বেশির ভাগ উপকূল ও নদী-তীরবর্তী এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
      ২০০৭ সালে জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০৫০ সালের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা এক মিটার বাড়বে। এর ফলে বাংলাদেশের উপকূলের ১৭ শতাংশ ভূমি ডুবে যাবে।
      বিশ্বব্যাপী এই তথ্য ব্যাপকভাবে প্রচারিত এবং এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হিসেবে বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
      ডুবে না গিয়ে পলি জমার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রাকৃতিক সম্পদবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)।
      সিইজিআইএস বলেছে, হিমালয় পর্বতমালা থেকে প্রতিবছর ১০০ কোটি টন পলি বঙ্গোপসাগরে এসে পড়ে। সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার টানে তা বাংলাদেশের উপকূলে এসে জড়ো হয়ে নতুন ভূমি গঠন করে। এভাবে গত ৬৫ বছরে বাংলাদেশের উপকূলে এক হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি জেগে উঠেছে। আগামী ১০০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে দেশের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোতে পানির পরিমাণ বাড়লেও একই সঙ্গে পলির পরিমাণও বাড়বে। ফলে দেশের বেশির ভাগ উপকূল ও নদী-তীরবর্তী এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
      সিইজিআইএসের গবেষণা পরিচালক মমিনুল হক সরকার পরিচালিত ‘মেঘনা এস্টুয়ারি-ইফেক্ট অব ১৯৯৫ আর্থকোয়েক অ্যান্ড ফিউচার ডেভেলপমেন্ট’ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত আরেকটি গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলের ভিত্তিতে তৈরি ‘বাংলাদেশের নদীর ওপরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: মাঠপর্যায়ের গবেষণাভিত্তিক ফলাফল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
      গবেষণা দুটির তত্ত্বাবধানকারী মমিনুল হক সরকার এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ১০০ বছর ধরে বাংলাদেশের উপকূলে বিপুল পরিমাণে পলি এসে জড়ো হচ্ছে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এর আগে যে গবেষণাগুলো হয়েছে, তাতে পলি প্রবাহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে মনে হচ্ছে, আইপিসিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লেও তাতে বাংলাদেশের উপকূল ও নদী-তীরবর্তী ভূমি ডুবে যাবে না।
      আইপিসিসির বক্তব্য: সিইজিআইএসের এই গবেষণার ফলাফলের ব্যাপারে আইপিসিসির চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র প্রসাদ পাচুরি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, শুধু একটি গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে কোনো উপসংহারে পৌঁছানো ঠিক হবে না। আইপিসিসি কোনো গবেষণার ফলাফল প্রকাশের আগে আসলে কী ঘটছে, তার একটি ভারসাম্যমূলক মতামত দেওয়ার চেষ্টা করে।
      আইপিসিসির সদস্য ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এর আগে পলি-ব্যবস্থাপনা তেমন গুরুত্ব পায়নি। যে কারণে অপরিকল্পিতভাবে আমরা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ দিয়ে বিল ডাকাতিয়া ও ভবদহে জলাবদ্ধতা তৈরি করেছি। আগামী দিনের উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পলিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
      আতিক রহমান জানান, হিমালয়কেন্দ্রিক নদীগুলো হয়ে যে পলি বাংলাদেশে আসে, তার তিন ভাগের এক ভাগ দেশের অভ্যন্তরীণ নদী ও নদীর তীরে জড়ো হয়। এর এক অংশ নোয়াখালী, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর এলাকার উপকূলীয় নদী এবং বাকি অংশ সমুদ্র হয়ে (সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড) ইন্দোনেশিয়ার দিকে চলে যায়।
      গবেষণার ফলাফল: সিইজিআইএসের গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালে আসামে ভূমিকম্পের পর হিমালয়ের একটি বিশাল অংশের পলি হিমালয়-সৃষ্ট নদীগুলো দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ পলি হিমালয় থেকে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবাহিত নদীগুলো দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব পলি গিয়ে বাংলাদেশের উপকূল এবং অন্য নদীগুলোর তলদেশ ও তীর উঁচু করছে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে প্রধান নদীগুলোতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পলি আসার পরিমাণও বাড়ছে। এতে জমি উঁচু হচ্ছে বলে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।
      গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মেঘনা হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র সক্রিয় বদ্বীপ এলাকা, যেখানে ভূমি এখনো গঠিত হচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার সীমানায় অবস্থিত পশুর, শিবসা ও বলেশ্বর নদী দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পলি এসে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে জড়ো হচ্ছে। নোয়াখালী উপকূলে সবচেয়ে বেশি ভূমি জেগে উঠেছে। আর সবচেয়ে বেশি ভূখণ্ড ভাঙনের শিকার হয়েছে সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও ভোলা জেলা। তবে ভূমি গঠনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নোয়াখালী জেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। ফলে এই এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
      সিইজিআইএসের বিজ্ঞানীরা এক বছর ধরে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর ওপর গবেষণা চালিয়ে আরও দেখতে পেয়েছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লেও বাংলাদেশে এই তিনটি নদীর তীরবর্তী ভূমি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পলি আসবে এবং তা নদীর তলদেশ, তীর ও প্লাবনভূমি উঁচু করবে।
      গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বর্ষাকালের পানির পরিমাণ বেড়ে বন্যা এলাকা বেড়ে যাবে বলে যে আশঙ্কা করা হয়েছে, তা-ও ঠিক নয়। কেননা বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীগুলোর নিম্নাঞ্চল বা ভাটি এলাকার তলদেশের গভীরতা বাড়বে। ফলে বর্ষার অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশিত হয়ে যাবে। এতে নতুন করে বন্যাপ্রবণ এলাকা বাড়বে না।
      সিইজিআইএসের গবেষণা এলাকা হিসেবে দেশের প্রধান তিনটি নদীর মোহনা ও অববাহিকা এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পদ্মা নদীর ক্ষেত্রে চাঁদপুর থেকে আরিচা হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত; যমুনার ক্ষেত্রে কুড়িগ্রাম থেকে জামালপুর হয়ে টাঙ্গাইল পর্যন্ত এবং নিম্ন মেঘনার ক্ষেত্রে নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা; লক্ষ্মীপুর থেকে চাঁদপুর জেলার নদী-তীরবর্তী এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে এই নদী অববাহিকাগুলোর তলদেশ, তীর ও পার্শ্ববর্তী প্লাবনভূমির ওপর প্রভাব সম্পর্কে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
      আইপিসিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১০০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যে পরিমাণ বাড়বে, তাতে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে।
      অন্যদিকে, সিইজিআইএসের গবেষণা অনুযায়ী, উজান থেকে নেমে আসা পলির কারণে আগামী ১০০ বছরে পদ্মা নদীর তলদেশ স্থানভেদে ৩৩ থেকে ৫২ সেন্টিমিটার উঁচু হবে। পদ্মা ও যমুনার তলদেশ, তীর ও সংলগ্ন প্লাবনভূমি স্থানভেদে ১০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার উঁচু হবে। সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকায় নদীর পানি উঁচু হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সমুদ্র থেকে যত দূরে যাওয়া যাবে, নদীর পানি বাড়ার পরিমাণ তত কমে আসবে। গবেষণায় দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে নদীর পানি বাড়বে ৪৩ সেন্টিমিটার আর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বাড়বে ১৮ সেন্টিমিটার।
      ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন ফর নেচারের (আইইউসিএন) জ্যেষ্ঠ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চিরকালই বাংলাদেশ ডুবে যাবে, এই তত্ত্বের বিপক্ষে ছিলাম।’ বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় হুমকি ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার কারণে কৃষি এবং জীবন-জীবিকার ক্ষতি। তিনি বলেন, সিইজিআইএসের গবেষণায় যে তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে এসেছে, তা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দিয়ে আরও পর্যালোচনা হওয়া দরকার।

      উপকূলে ভাঙা-গড়া
      সময়কাল ভাঙা (বর্গ কিমি) গড়া (বর্গ কিমি) মোট জেগে ওঠার পরিমাণ (বর্গ কিমি) ১৯৪৩: ১৯৭৩ ৮৯০ ২১০০ ১২১০ ১৯৪৩: ২০০৮ ১১৮০ ২৯৭০ ১৭৯০ মোট জেগে ওঠা জমির পরিমাণ এক হাজার ৮০০ কিমি পরিমাণ।সূত্র: সিইজিআইএস

      অবশ্য, বলাই বাহুল্য, পুরানো খবর। কোন উদ্দেশ্যে এতদিন পরে ওনারা মুখ খুললেন, কে জানে!

      • মাসুদ করিম - ২৪ এপ্রিল ২০১০ (৯:৫০ পূর্বাহ্ণ)

        আগের গবেষণায় ‘পলি’কে একদম আমলে আনা হয়নি, আর এবারের গবেষণার পত্রিকার খবর পড়ে মনে হচ্ছে শুধু ‘পলি’কে আমলে আনা হয়েছে — দেশিবিদেশি আরো গবেষণা হতেই থাকবে, যতদিন গবেষণার জন্য টাকাও হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে। কিন্তু এর কোনো গবেষণা থেকেই আমরা হয়তো আশ্বস্ত হতে পারব না — আমরা ডুবব, না, ডুবব না। তবে সব সময় খারাপের প্রতিকারের দিকে দৃষ্টি রেখে এগিয়ে যাওয়া উচিত। কাজেই জলবায়ু উপশম বা সংরক্ষণ নিয়ে আমাদের কার্যক্রম নিতেই হবে — আমরা ডুবব কি ডুবব না, তার চেয়েও জরুরি আমরা আমাদের প্রকৃতির সেবা করব কি করব না।

  2. রায়হান রশিদ - ৯ এপ্রিল ২০১০ (১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

    মুক্তাঙ্গন এর বেশ আগের এক আলোচনায় চ্যানেল-ফোর এ প্রচারিত The Great Global Warming Swindle নামে একটি ডকুমেন্টারির (ইউটিউব লিন্কসহ) উল্লেখ করা হয়েছিল। সেটা দেখা যেতে পারে। এখানে। ডকুমেন্টারিটি প্রচারের পর এ নিয়ে আরেকটি বিখ্যাত বিতর্ক অনুষ্ঠানও প্রচারিত হয় টেলিভিশনে। সেই বিতর্কের ইউটিউব লিন্কও পাওয়া যাবে প্রদত্ত লিন্কে।

  3. মোহাম্মদ মুনিম - ১৩ এপ্রিল ২০১০ (১১:০৫ অপরাহ্ণ)

    এ মাসের National Geographic এ Third Pole নামে খ্যাত হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়া নিয়ে একটা রিপোর্ট হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে Time পত্রিকাতেও এই নিয়ে রিপোর্ট হয়েছিল। দুদুটি নামী পত্রিকাতে ছাপা হয়েছে বলেই ব্যাপারটা সত্যি হয়ে যায় না, সাংবাদিকরাও তো বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে শুনেই লিখেন, বিজ্ঞানীরা যদি বাড়িয়ে বলেন তখন তো সাংবাদিকদের কিছু করার থাকে না।
    ৯০ এর দশকের শুরুতে BBC জনসংখ্যা নিয়ে একটা documentary বানিয়েছিল, সেটাতে সাহারা মরুভূমির আকার বেড়ে যাওয়া (মানে মরুকরণ) নিয়ে বলা হয়েছিল, সাহারা মরুভূমির আকার প্রকৃতপক্ষে বাড়ছে না, প্রাকৃতিক নিয়মেই মরুভুমির আকার বাড়ে আর কমে, কিন্তু শুধু সাহারা মরুভূমির আকার বেড়ে যাওয়ার ডাটা দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, জনসংখ্যা বাড়ার জন্যই দ্রুত মরুকরন হচ্ছে। এছাড়া আরেকটা যে ধারণা আছে, পৃথিবীর জনসংখ্যা অত্যধিক বেড়ে গেলে খাদ্যসঙ্কট দেখা দিবে, documentary টিতে সে ধারণাটাকেও ভুল বলা হয়েছিল, বলা হয়েছিল, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা পৃথিবীতে ৩০ বিলিয়ন লোকের প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন করা যাবে। আরও দেখানো হয়েছিল যে, ইউরোপ আর এশিয়ার জন বসতিপূর্ণ দেশগুলো অনেক স্বল্প জনসংখ্যার দেশের চেয়ে অনেক ভাল আছে।
    বাংলাদেশে আর্সেনিক নিয়ে নব্বইয়ের দশকে ব্যাপক কথাবার্তা হয়েছিল, ৯৯ সালে আমরা বুয়েট থেকে পাস করলাম, তখন আর্সেনিক নিয়ে কথাবার্তা তুঙ্গে, আমাদের অনেক ক্লাস মেট চাকরি না পেয়ে environmental এ মাস্টার্স করা শুরু করলো, পাস করলেই আর্সেনিক প্রকল্পে চাকরী। আমি নিজেও বেকার অবস্থায় এক জাপানী আর্সেনিক গবেষণা দলের সাথে চাঁদপুর আর সোনারগাঁর বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে এলাম (দোভাষির কাজ, দিনে ৫০০ টাকা)। আর্সেনিক আক্রান্ত গ্রামের মানুষদের আর্সেনিক নিয়ে ততটা চিন্তিত মনে হলো না, বরং আগেও ‘সাহেবরা’ এসেছিলেন, সে খবর কেউ কেউ জানালেন। চাঁদপুরে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক বিভিন্ন ঘরে ঘরে ঋন দিয়ে বা মাগনা আর্সেনিক ফিল্টার বসিয়েছে, সেগুলো কোন গ্রামবাসীকে ব্যবহার করতে দেখিনি। সোনারগাঁ ব্র্যাকের সাহায্যে পরিচালিত কিছু প্রকল্প দেখলাম, একটা হচ্ছে বৃষ্টির পানি (যেটা আর্সেনিক দুষিত নয়) জমিয়ে সেই পানি খাওয়া আর রান্নায় ব্যবহার করা। সেই প্রকল্পও খুব একটা জনপ্রিয় হয়েছে বলে মনে হলো না। আমেরিকায় আসার পর বাংলাদেশী এক আর্সেনিক বিশেষজ্ঞের (বৃত্তি নিয়ে এখানে এসেছেন) সাথে কথা হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশে শাক সবজিতেও আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে এই ‘সুসংবাদ’ দিলেন, সেই সাথে আর্সেনিক নিয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য তাঁর আরও দুটি অফার আছে, সে কথাও জানালেন। এরপরে প্রায় দশ বছর হয়ে গেল, আর্সেনিক নিয়ে যে ব্যাপক আশঙ্কা ছিল, তার কিছুই দেখা গেল না।
    হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে কিনা, গেলে কবে নাগাদ গলে যাবে, এই নিয়ে উচ্চাঙ্গের বিতর্ক বিজ্ঞানীরা করতেই পারেন। তবে শিঘ্রী গলে যাবে এটা ধরে নিয়ে যদি এই অঞ্চলের দেশগুলো (ভারত, পাকিস্তান, চীন, বাংলাদেশ) একযোগে কাজ করা শুরু করে, তবে ভালোই হয়। বরফ যদি না গলে তবে তো ভালই, সহযোগিতার ব্যাপারটা তো থেকেই যাবে। আর গললে কি আর রক্ষা আছে, কোটি কোটি লোকের পানির অভাবে নির্ঘাত মৃত্যু, যদি না কোন নতুন প্রযুক্তি বেরিয়ে যায়। সবাই একযোগে কাজ করলে একটা কিছু নিশ্চয় বেরিয়ে যাবে, সমুদ্রের পানি বিশুদ্ধ করে সেটা সরবরাহ করা, এই রকম কিছু একটা। সময় তো আছেই, ২০৩৫ সালে যদি গলেই যায়, এখনো তো ২৫ বছর সময় আছে, সবাই একসাথে কাজ করলে একটা কিছু নিশ্চয় বেরিয়ে যাবে।

    • ব্লাডি সিভিলিয়ান - ২৬ এপ্রিল ২০১০ (১২:০৭ অপরাহ্ণ)

      আমেরিকায় আসার পর বাংলাদেশী এক আর্সেনিক বিশেষজ্ঞের (বৃত্তি নিয়ে এখানে এসেছেন) সাথে কথা হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশে শাক সবজিতেও আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে এই ‘সুসংবাদ’ দিলেন, সেই সাথে আর্সেনিক নিয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য তাঁর আরও দুটি অফার আছে, সে কথাও জানালেন।

      ভদ্রলোক কি টেক্সাস এ এন্ড এম ইউনিতে আছেন? চট্টগ্রাম থেকে আগত?

      • মোহাম্মদ মুনিম - ২৭ এপ্রিল ২০১০ (৩:১৩ পূর্বাহ্ণ)

        তিনি Texas A & M University তে ছিলেন, সেটা সেই ২০০১ সালের ঘটনা, পোস্ট ডক্টরাল করতে এসেছিলেন, এখন নিশ্চয় তিনি সেখানে নেই। তিনি চট্টগ্রামের কিনা সেটা মনে নেই।

  4. aronnok - ২২ এপ্রিল ২০১০ (৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ)

    বাংলাদেশ ডুবে যাবে এই প্রসংগে প্রথম লেখা ছাপা পড়ি নব্বই এর দশকে বিচিত্রায় বা ২০০০ এ।
    সে সময় থেকে মনের মধ্যে একটা ভুল ধারনো গেথে আছে।
    বিজ্ঞানীরাই আজকাল ষ্টান্টবাজিতে পিছিয়ে নেই ।
    আর এই ধরনের তথ্য উপাত্ত বের করতেই পারলেই ইনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলী প্রোডাক্টের নামে লাখে লাখে ট্যাক্স ডলার হাপিশ করা জায়েজ হয়ে যায়।

    লেখাটা পড়ে ভালো লেগেছে।
    http://www.climategate.com

  5. ব্লাডি সিভিলিয়ান - ২৬ এপ্রিল ২০১০ (১২:০৯ অপরাহ্ণ)

    এই লেখাটাও দেখা যেতে পারে। প্রথম আলোয় আজই এসেছে।

    ২৩ এপ্রিল প্রথম আলোয় ‘বাংলাদেশ ডুববে না’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)।
    সংস্থাটির উপনির্বাহী পরিচালক মমিনুল হক সরকার ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ডুববে না’ শিরোনামটি আমরা যা বলিনি এবং গবেষণা থেকে পাইনি এমন একটি বার্তা দিতে পারে। আমরা মনে করি, জলবায়ুর পরিবর্তন হলে আগামীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। এ ক্ষতি কতটুকু এবং কোন মাত্রায় হবে, তা এখনো গবেষণার বিষয়। এই প্রথম আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে মেঘনা নদীর মোহনা ছাড়াও যমুনা ও পদ্মা নদীর গঠনশৈলীর অভিযোজন-প্রক্রিয়া নিরূপণের চেষ্টা করেছি। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের বড় নদীগুলো দিয়ে এদের অববাহিকা থেকে যে পলি আসে তা এ অভিযোজন-প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং রাখবে।
    ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, গবেষণা থেকে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মেঘনা নদীর মোহনার অভিযোজন দ্রুত হবে। অর্থাৎ আগামী ১০০ বছরে যদি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, তাহলে পদ্মা-যমুনা-মেঘনা দ্বারা বাহিত বিপুল পলি ক্রমান্বয়ে জমে মেঘনা মোহনার ভূমির উচ্চতা ১ মিটারের কাছাকাছি পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে পলির পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উপকূলীয় বাঁধগুলোর ভেতরের ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি করাও সম্ভব হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে এ অঞ্চলের ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি অনেক কম হবে, ফলে এ অঞ্চলের একটি বড় অংশ পানিতে ডুবে যাবে। উপযুক্ত পলি সঞ্চালন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ ক্ষতি কিছুটা লাঘব করা যেতে পারে।
    ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আগামী দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যেসব প্রভাব পড়বে, যেমন—ডুবে যাওয়া, বন্যা, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, নদীভাঙন ইত্যাদি নিরূপণের সব গবেষণায় পলির ভূমিকাকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সঠিক গবেষণার মাধ্যমেই ভবিষ্যতে নির্ধারিত হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হবে, কীভাবে তা সফলভাবে মোকাবিলা করা হবে।

    দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বিপদ আছেই।

  6. রায়হান রশিদ - ৬ জুন ২০১০ (১০:৩৭ অপরাহ্ণ)

    ক্লাইমেটগেট কেলেন্কারী নিয়ে আরও একটি লেখা, এ্যাক্সেল বোজানস্কি’র

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.