পরম করুণাময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং একটি জেহাদ

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। আমাদের সরকারের পুরানো এক উপদেষ্টা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী পাটশিল্প নিয়ে "জেহাদ" করেছিলেন। হ্যাঁ, ঠিক এই কথাগুলিই বলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, জুট নিয়ে তিনি জেহাদ শুরু করেছেন।

khulna.jpg

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়

আমাদের সরকারের পুরানো এক উপদেষ্টা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী পাটশিল্প নিয়ে “জেহাদ” করেছিলেনহ্যাঁ, ঠিক এই কথাগুলিই বলেছিলেন তিনিবলেছিলেন, জুট নিয়ে তিনি জেহাদ শুরু করেছেনজুলাই ২০০৭-এর মাঝামাঝি, বাংলাদেশের শ্রমিকরা যখন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও দিশাহারা একের পর এক জুটমিলগুলিতে লে-অফ ও শ্রমিকছাটাইয়ের দৌরাত্মে, তখন তিনি একদিন বস্ত্র ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সাংবাদিক সম্মেলনে সুশীল ভদ্রতাসমেত জানিয়েছিলেন, পাট খাতকে বাঁচানোর জন্যে তারা নাকি তিন বছর মেয়াদী এক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তা বাঁচানোর কায়দাটা কি? না, খুবই সোজাশ্রমিকদের পেটে লাথি দিয়ে বলা, যা, ভাগ এবার, তোদের ভাত তোরা জোটা

শ্রমিকদের ভাত অবশ্য শ্রমিকরাই জোটায়এমন নয়, তারা বসে থাকে, আর সরকার তাদের বেতন গোণেকিন্তু সেই কাজের পথও বন্ধ করে দেয়ার পথ বানাচ্ছিলেন তারাকেননা তা না হলে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর কাছে তাদের মুখ রক্ষা হয় না, দু চারটে পাটকল পানির দামে কিনে নিজের সম্পত্তি বানানো যায় নাআর সেজন্যেই সেদিনের ওই সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে ২২টি পাটকল বন্ধ করে দেয়া হবেপাটশিল্প বাঁচানোর এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরও প্রায় আট হাজার শ্রমিককে ছাটাই করা হবেগীতিআরা সাফি সেদিন বলেছিলেন, আমি জুটের জন্যে জ্বেহাদ ঘোষণা করেছিলামএই জ্বেহাদে মনে হচ্ছে আমরা কিছুটা হলেও সফল হয়েছিবাকিটুকু মনে হয় আল্লাহর রহমত থাকলে এবং আমাদের সবার প্রচেষ্টা থাকলে আমরা নিশ্চয়ই পারব

গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী নিমিত্তমাত্রতবে যাদের হয়ে তিনি সেই জেহাদ শুরু করেছিলেন, তাদের স্বপ্ন পুরো হয়েছে

আর এর মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র যাদের স্বার্থ দেখে থাকেন, তারা অনেক কিছুই অর্জন করেছেন, সন্দেহ নেই

কিন্তু শ্রমিকরা তারা কী অর্জন করেছে?

তারা অর্জন করেছে বেকারত্ব, তারা অর্জন করেছে আরও ক্ষুধা, তারা অর্জন করেছে আশাহীন, অনিশ্চিত এবং মৃত্যুর মতো কষ্টকর প্রতিটি মুহূর্ত

সব সময় তাদের ওপরেই দায় চাপানোর অপচেষ্টা করা হয়েছেবলা হয়েছে, শ্রমিক আন্দোলনের কারণেই নাকি শিল্পগুলোর এই বিপর্যয়কিন্তু এই পাটশিল্পগুলির কথাই ধরা যাক; গীতি আরা সাফিয়া নিজেই ওই সম্মেলনে বলেছিলেন, ২০০৬ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি পাটকলগুলিতে লোকসানের পরিমাণ চার হাজার ৭৭০ কোটি টাকাপ্রতি বছর ২২টি পাটকল ৪২১ কোটি টাকা লোকসান দেয়এর মধ্যে ১৪০ কোটি টাকা লোকসান হয় যথাসময়ে পাট কিনতে না পারার কারণেআর শ্রমিক অসন্তোষের কারণে লোকসান হয় ৩০ কোটি টাকা

আমাদের সরকারি নীতিনির্ধারকদের বোঝা উচিত, যেসব পাটকলগুলোর উচ্চ পর্যায়ের বিজ্ঞ, জ্ঞানী ও নীতিনির্ধারক লোকজনের কারণে প্রায় চারশ কোটি টাকার লোকসান হয়, সেসব পাটকলে শ্রমিক অসন্তোষ থাকাটাই স্বাভাবিক এবং সেকারণে মাত্র ৩০ কোটি টাকার লোকসান হওয়াটা খুব ন্যায়সঙ্গতমূলত এই ৩০ কোটি টাকা লোকসানের জন্যে শ্রমিক অসন্তোষও দায়ী নয়, এ ৩০ কোটি টাকা হলো নীতিনির্ধারকদের ওই প্রায় চারশ কোটি টাকা লোকসানের জের

মিলগুলি বন্ধ করে দেয়ায় শ্রমিকরা পথে বসেছিলেন, তাদের জন্যে লঙ্গরখানা খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সুশীল সমাজের একাংশসরকার এতে বাধা দেয়, কেননা এর মধ্যে দিয়ে তাদের সেই চিরাচরিত ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার সমূহ কারণ ছিলতবে সুশীল সমাজের এই একাংশ তাদের সাময়িক উত্তেজনার বশে যাই করুক না কেন, অচিরেই বুঝতে পারেন ঐতিহাসিক কারণেই তাদের পক্ষে এরকম কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এবং এ উদ্যোগ থেকে তারা সরিয়ে নেন নিজেদের

কাজ হারানো যেসব শ্রমিকরা যে আন্দোলন করছে, তার সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দলগুলোর সংযোগ রয়েছেকিন্তু তারপরও বোঝা যায়, তারা আসলে সর্বাত্মক কিছু করার চেষ্টা চালাননিদায়সারাভাবে বিবৃতি দিয়েছেন, কথা বলেছেন, শ্রমিকদের সমাবেশে গেছেনএকটি দেশে সামরিক শাসন চলাকালীন অবস্থায় এরকম কিছু হলে ওই ঘটনাকে অবলম্বন করে সেদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক মোর্চা গড়ে ওঠেকিন্তু এবার বাংলাদেশে সেরকম কোনও কিছুও হয়নিকেননা রাজনৈতিক দলগুলি, তা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কিংবা মুখচেনা বামসংগঠন যেটাই হোক না কেন, ভানুর কৌতুকের গৃহকর্তার মতো অপেক্ষা করছিলেন আর ভাবছিলেন, দেখি কী করে!

অতএব যা হওয়ার তাই হলোগরু মেরে জুতো দানের মতো করে মিলগুলি বন্ধ করে শ্রমিকদের ভবিষ্যতে বকেয়া বেতন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলোএর মধ্যে আগস্ট ২০০৭-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে চট্টগ্রাম আমিন জুটমিলের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামলোপুলিশ গুলি চালালো, বকেয়া বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অসহায় শ্রমিকদের বাধ্য করল কাজে ফিরতে এবং ১০ আগস্ট পরম করুণাময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে বিক্ষোভের সময় একজনকে হত্যার অভিযোগ এনে ৬০০ জন শ্রমিকের নামে মামলা ঠুকে দিল

আমাদের পরম করুণাময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরও সামান্য করুণা বর্ষিত হলো কয়েকদিন পর আগস্ট বিক্ষোভের সময় ঢাকা শহরেসরকারের কর্পোরেট মিডিয়াগুলি লিখতে লাগল, জনমনে কোনও বিক্ষোভ নেই, কোথাও কোনও বিক্ষোভ নেই, সামান্য একটু খেদ আছে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি নিয়ে!

কিন্তু মানুষের মনে যে কী প্রচণ্ড ক্ষোভ জমেছিল, এখনও জমে আছে, তা কৃষক আর শ্রমিকরা এই দু’বছরে যেসব বিক্ষোভ মিছিল করেছে সেগুলির দিকে চোখ বুলালেই বোঝা যায়কৃষকরা বিক্ষোভ করেছে সার নিয়ে, ক্ষুব্ধ হয়েছে সরকার হাটবাজার ভেঙে দেয়াতে, শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়েছে ও বিক্ষোভ করেছে জীবনধারণের ন্যুনতম মজুরিও তাদের দেয়া হয় না বলে নির্মম সত্য হলো, আমাদের শহুরে মধ্যবিত্ত নাগরিকরা যদি এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেমে না পড়তেন, তা হলে তারা নিজেরাই অনেক আগে এসব ক্ষোভ-বিক্ষোভকে বড় করে প্রচার করে বেড়াতেন।

যেসব শ্রমিকদের পরম করুণাময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বকেয়া বেতন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কর্মহীন করেছিলেন, মিলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিলেন সেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন এখনও মিটিয়ে দেয়া হয়নিতাঁরা তাই আত্মাহুতি দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন কয়েকদিন আগেকিন্তু পুলিশ পাঠিয়ে তাদের আত্মাহুতিদানে বাধা দেয়া হয়েছেকেননা রাষ্ট্র এদের বাঁচিয়ে রাখতে চায়, এদের মৃত্যুকে উপভোগ করতে চায় রসিয়ে রসিয়ে

চীন থেকে আমাদের বন্ধু শিল্পী রশিদ আমিন ত্বড়িডাক পাঠিয়েছেন : নেট খুলে পত্রিকায় ওই ছবি দেখে আমার কেবলই কান্না পাচ্ছেআপনারা এটা নিয়ে কিছু একটা লিখুন

তিনি লিখতে পারতেন, আপনারা একটা কিছু করুনকিন্তু তিনি তা লেখেননিআমাদের সীমিত সামর্থ্য ও শক্তি তাঁর জানা আছে, যেমন নিজের সামর্থ্যটুকুও

সত্য কথা হলো, এই নিয়ে দিনের পর দিন লেখা হয়েছেসামরিক জান্তা এরশাদের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন শুরু হয়, আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ গড়ে ওঠে, তখন বাংলাদেশের সব মানুষের একটি অন্যতম দাবি ছিল বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধ করতে হবেকেবল শিল্পকারখানার নয়, ব্যাংকেরও বটে

তারপর আমরা গণতন্ত্র পেলামগণতন্ত্র তো নয়, পেলাম গণতান্ত্রিক বিরাষ্ট্রীয়করণের জোয়ারএরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ আর বিএনপি বিরাষ্ট্রীয়করণের বিরুদ্ধে ছিল, তারাই পালাক্রমে হয়ে উঠল এই বিরাষ্ট্রীয়করণের ঘোড়সওয়ারতবুও দেশের সামরিকতন্ত্র আর সুশীলতন্ত্র তাদের ওপর খুব ক্ষেপে উঠল, কেননা ওই ঘোড়াটিকে তারা ঠিকমতো চালাতে পারছিলেন নাতারা মুহাম্মদ ইউনূসকে কাণ্ডারি করতে চাইলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে শুরু করে খনিজ ও গ্যাসসম্পদ সবকিছু বিকিয়ে দিতে চাইলেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আওয়াজ তুললেন, সেই আওয়াজে তেমন সাড়া মিলছে না দেখে রাজনৈতিক দল সংস্কারের বাহানা তুললেনকিন্তু সেটিও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে এখন তারা বেছে নিয়েছেন দুই নেত্রীকে এক আলোচনায় বসাতে

কী চান তারা দুই নেত্রীকে এক করে?

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি, এই দুটি রাজনৈতিক দলের শ্রেণীচরিত্রই এক, অর্থনৈতিক কর্মসূচিও এক, রাজনৈতিক লক্ষ্যও এককিন্তু তারপরও তাদের মধ্যেকার দূরত্বটি কোথায় যে বার বার দু নেত্রীকে একসঙ্গে করার জন্যে কেউ কেউ ছুটোছুটি করতে থাকেন?

দূরত্ব কিছু অবশ্যই আছে এ দুই রাজনৈতিক দলেরমার্কসের একটি মন্তব্য পড়েছিলাম, কোনও কোনও সময় মুখ্য রোগের চেয়ে গৌণ রোগই অনেক বেশি মুখ্য হয়ে উঠতে পারেএ দুটি দলের পরস্পরবিরোধীতার মধ্যে দিয়ে তার সেই মন্তব্যের রূপটিই প্রকাশিত হয়েছেআমাদের বামদের একটি অন্যতম দুর্বলতা হলো, একই শ্রেণীগোষ্ঠীর স্বার্থসংরক্ষণকারী এ দুটি দলের এই বিরোধাত্মক, দূরত্বময় রোগক্ষিপ্ত দিকটিকে তারা কখনোই কাজে লাগাতে পারেননি; বরং জনগণের কাছে দুটি দলের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই,- এই কথাটি বার বার বলতে বলতে যে পরিমাণ ফেনা জমা করেছেন, সেই ফেনার তরঙ্গে নিজেরাই হাবুডুবু খাচ্ছেন

কিন্তু রাষ্ট্রসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা দীর্ঘ এক পথপরিক্রমার মধ্যে দিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, এদের যে দূরত্ব রয়েছে তাতে অবশ্যই প্রলেপ দিতে হবেপ্রলেপ দিতে না পারলে, আর যাই হোক না কেন, নির্ধারিত নীতিগুলি ও দায়িত্বগুলি বাস্তবায়ন করা যাবে না

কী হবে দুই নেত্রী একসঙ্গে বসলে?

কী আর হবে! তারা একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করবেন, যা দেশের সম্পদ বিকিয়ে দেয়ার সহায়ক হবে, যা বিরাষ্ট্রীয়করণের সহায়ক হবে, যা সেনাবাহিনীর ভূমিকার স্বীকৃতি দেবে

ওনারা যতই বুর্জোয়া দল হোক না কেন, নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করতে পারেনঅতএব কেউ যাতে কারও যাত্রা ভঙ্গ করতে না পারে, সেজন্যেই প্রয়োজন ওনাদের একসঙ্গে করামানে সোজা কথা হলো, পরম করুণাময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলতে চাইছেন, যে-ই ক্ষমতায় আসতে চান না কেন, তাদের এইসব রোডম্যাপের দায়ভার নিতে হবে এবং আরেকজনকে তার বিরোধিতা করা চলবে না কিছুতেই

ওদিকে সুশীলদের পার্লামেন্ট মিডিয়াগুলিকে দেখুন যে কলামিস্ট আর সাংবাদিকরা কয়েক মাস আগে এই দু’নেত্রীকে মাইনাস করার জন্যে গলা জলে নেমেছিল, তারা এখন লাফ দিয়ে ডাঙায় উঠে কর্পোরেট চাদর দিয়ে হাতপা মুছে আবার দু’নেত্রীকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্যে হাঁটু মাজতে শুরু করেছেএকটি দৈনিক সংবাদপত্রে পড়লাম, বাহাত্তরে পাওয়া এক বুদ্ধিজীবী লিখেছেন, বাহাত্তুরে পাওয়া লোকজনকে দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, বড়জোর সামন্ততান্ত্রিক গণতন্ত্র নামক এক স্তাবকতামূলক নতুন শাসনব্যবস্থা পাওয়া যায় কী চমকার ব্যাপার, বাহাত্তুরে পাওয়া একজন গালাগালি করছে বাহাত্তুরে পাওয়া আর সবাইকে!

আর তরুণ নাগরিক বুদ্ধিজীবীরাও কম যাচ্ছেন না এইসব ব্যাপারেপঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে আশির দশক এমনকি নব্বইয়ের দশকেও প্রতিবাদী তরুণদের আমরা দেখেছি রাজনীতিমুখী হতেকিন্তু এই সুশীল নাগরিক তরুণ গোষ্ঠী রাজনীতিমুখী নন, তারা নিরপেক্ষতারা নিরপেক্ষতার অমীয় বাণীর নামে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বামদল সবাইকে দায়দায়িত্বহীনভাবে সমালোচনা করতে পারেনরুরি অবস্থা জারি হওয়ার আগে এরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে নম্র স্বরে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংযমী করে তোলার মহান আহ্বান জানিয়েছিলেন। জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর এদের কেউ কেউ লিখেছিলেন, দু’নেত্রীকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে ভাসিয়ে দিলেও নাকি এ দেশের লোকজন কোনও কিছু মনে করতো নাআবার এতদিনে এদের গোত্রীয়ই কাউকে কাউকে লিখতে দেখা যাচ্ছে, এই নেত্রী দুন জনগণের নেত্রীএবং সেজন্যে জনমতকে অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবেআর বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাদের ত্যাগ আর অবদানকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্মান করতে হবে।

এই জন্যেই আহমদ ছফা লিখেছিলেন, বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন, তা শুনলে দেশ স্বাধীন হতো না আর যা বলছেন তা শুনলে এখন দেশ গড়ে তোলা যাবে না

পাটকলের এই শ্রমিকরা মরতে চায়, কেননা তাদের কাজ নেই, আর তাদের বকেয়া ২৫ কোটি টাকা দেব দেব করেও না দেয়ার ধান্ধা করা হচ্ছে

আদমজীর মতো বিশাল একটি পাটকল আমাদের চোখের সামনে দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছেআমরা কতটুকু প্রতিবাদ করতে পেরেছি বলুনআর এতো মাত্র ২৫ কোটি টাকা! এ টাকা মেরে দেয়া কোনও ব্যাপার হলো নাকি?

পাটকলের কর্মহীন শ্রমিকরা তাদের কর্মসূচি আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রেখেছেনআবারও তারা আশায় বুক বেধেছেন

কিন্তু কতক্ষণ আশায় বুক বেধে থাকবেন?

সরকারের পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল বলেছেন, ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বকেয়া শোধ করে দেবেন; অথচ বিজেএমসি খুলনা এলাকার সমন্বয়কারী আর সি পাল সাংবাদিকদের কাছে বলছেন, এমন কোনও সিদ্ধান্তের কথা তার জানা নেই

এই হলো তাদের বকেয়াপ্রাপ্তির ভবিষ্যত

আমি জানি, কোনও সুশীল কিংবা তরুণ সুশীল বলতে পারেন, চলেন, আমরা একটি তহবিল করি; যাতে ওদের মুখে সামনের ঈদের সময় হাসি ফোটে, ওরা ওদের সন্তানদের কিছু কিনে দিতে পারে!

ভারী উত্তম প্রস্তাব, চলুন আমরা তাই করিআর এই তহবিল সংগ্রহের জন্যে চলুন কোনও আলোকিত মানুষকে দিয়ে জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি কলাম লেখাইচলুন, মুষ্ঠি মুষ্ঠি ভিক্ষা দিয়ে দারিদ্র দূর করিআর যদি হুড়োহুড়ি শুরু করে, অসুবিধা কী? আমাদের র-একশন ব্যাটিলিয়নের ভাইরা আছেন, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবেন

হ্যাঁ, এসবই জরুরি, জরুরি তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা, বকেয়া আদায় করা,- কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটিই যে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক, পুরো কাজটিই যে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক, এই কথাটি বার বার কেন আমরা ভুলে যাচ্ছি? বিভিন্নজন বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে কাজ করছেন, তার জন্যে আমাদের কোনও আক্ষেপ নেই। কিন্তু কেন আমরা ভাবছি না তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সবাইকে আসলে রাজনৈতিকভাবেই সংগঠিত হতে হবে? অমুক সভা, তমুক সভা, অমুক সমাজ, তমুক সমাজ, অমুক ফোরাম, তমুক ফোরামের মধ্যে দিয়ে এ নিয়ে আমরা অনেক কথাই বলতে পারি, কিছুদূর এগুতে পারি, কিন্তু কাজটি শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বলেই সেসব উদ্যোগ এক সময় মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।

আমরা কি সত্যিই শক্তিহীন হয়ে গেছি? আমরা কি পারি না রাজনৈতিকভাবে এইসব রাজনৈতিক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে?

আমরা কি পারি না আরও একবার একসঙ্গে জ্বলে উঠতে?

ইমতিয়ার শামীম

আপনারে এই জানা আমার ফুরাবে না...

৭ comments

  1. অলকেশ - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৩:৫৮ অপরাহ্ণ)

    আপনার অবজারভেশনসগুলো পড়লাম। হাতে বেশী সময় না থাকায় আলোচণায় অংশ নিতে পারলাম না। আমার মনে হয়েছে যে, গত দু’বছরে রাজনৈতিক দল গুলো রিস্ক নিতে চায় নি। আমার এটা ও মনে হয়েছে যে, তারা পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেনি তখন। পরে আলোচনার ইচ্ছে রইল।

  2. ফকির ইলিয়াস - ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (১:২৪ পূর্বাহ্ণ)

    বাংলাদেশে রাজনৈতিক আচরণ বিধিমালার ভবিষ্যৎ
    ফকির ইলিয়াস
    ————————————————————-
    বাংলাদেশের অনেক অসুস্খ রাজনীতিকই এখন সুস্খ হয়ে উঠেছেন। বিএনপির সাইফুর রহমান কিংবা আওয়ামী লীগের আবদুল জলিল এখন আবারও সরগরম রাজনীতির মাঠে। টিভিতে আমরা আবারও তাঁদের দেখছি, উঁচু গলা শুনছি। বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি লাভের পর বিএনপির স্খায়ী কমিটির প্রথম সভা হয়েছে। মান্নান ভূঁইয়া এবং আশরাফ হোসেন দু’জনের বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখেছেন খালেদা জিয়া। কিছুটা সময় নিয়ে এদেরও দলে ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন অতীত দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতায়। মান্নান ভূঁইয়ার অনুসারী হয়ে যে সাইফুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্খা নেয়া হয়নি। দলে আবারও আদৃত হচ্ছেন স্খায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান।
    সব মিলিয়ে বিএনপি এখন নির্বাচনমুখী। ইতোমধ্যে চার উপদেষ্টা গিয়ে দেখা করেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর মইনুল রোডের বাসায়। সে সময় দশ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টাও। উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান হাসিমুখে সাংবাদিকদের অনেক কথা বলেছেন। এর মধ্যে প্রধান যে কথাটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তা হচ্ছে, বর্তমান তদারকি সরকার দুই প্রধান দলের মধ্যে [sb]কোড অফ পলিটিক্যাল কন্ডাক্টটি ফিরিয়ে আনতে চায়। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, বেগম জিয়া আমাদের সঙ্গে কোড অফ কন্ডাক্ট বিষয়ে অনেকটাই একমত হয়েছেন। উপদেষ্টা আরও বলেছেন, দুষ্ট শক্তিগুলোকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া কিংবা অনুপস্খিত করে দিতে হবে। আমরা সে বিষয়েই দলগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। [/sb]
    বাংলাদেশের মানুষের মনে আছে এই সরকার ওয়ান-ইলেভেনের পরপরই সংস্কারের নামে একটি নতুন আবহ তৈরি করতে চেয়েছিল। সে সময় মান্নান ভূঁইয়া ছিলেন ড. ফখরুদ্দীন সরকারের গুড বুকে। শেষ দিকে এসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরে ত্বরা জামিন দেয়া হয়।
    এখন দেখা গেল, সাইফুর-মাহবুব-হাফিজদের বিএনপিতে জামাই আদরে ফিরিয়ে নেয়া হলেও শুধু মান্নান-আশরাফের বিরুদ্ধেই থেকে গেল খড়্গ। এর কারণ কী? সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী মান্নান ভূঁইয়া এবং তাঁর মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শুরু থেকেই নানা পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছে। এ সবই কি এখন তামাদি হতে চলল? সা. কা. চৌধুরী, বাবর চক্রের জামিনের পর তবে কি এদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোও এভাবে সলিল সমাধিতে চলে যাবে?
    অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পাচ্ছেন না এখন বাংলাদেশের মানুষ। বেগম জিয়া জামিন পাওয়ার পরই স্খায়ী কমিটির সভায় একটি প্রস্তাব আসে : খালেদা জিয়াই আজীবন বিএনপি প্রধান থাকবেন। পরদিন মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়া আজীবন প্রধান থাকার প্রস্তাব সবিনয়ে নাকচ করে দিয়েছেন। আবার একই দিন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দৈনিক আমাদের সময়কে জানান, মারুফ কামাল খানের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার কোনো এখতিয়ার নেই (আমাদের সময়, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮)।
    নেপথ্যে তা হলে কী ঘটছে? এদিকে তারেক রহমানের দল থেকে অব্যাহতির বিষয়টি নিতান্ত প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। এটা কারও অজানা নয়, তারেক রহমান যে কোন মুহূর্তে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারেন। তা দুই বছর পরে হোক আর ছয় মাস পরে হোক। জেল-জীবনের ধকল কাটিয়ে উঠতেই আপাতত বিদেশ বাস। এবং তা সাময়িক মাত্র। তা নিয়ে বেশি বলার বা ভাবার কিছু নেই। খালেদা জিয়া বিনা চ্যালেঞ্জে বিএনপির দলীয় প্রধান যেমন থাকতে পারবেন, তারেকও তেমনি বিনা চ্যালেঞ্জেই দলের যে কোনো পদ লুফে নিতে পারবেন। এ জন্য প্রস্তাব পাশের কি কিছু আছে? বিএনপিতে পারিবারিক স্বৈরতন্ত্র আছে এবং থেকেই যাবে।
    [sb]দুই. [/sb]
    জামিনে মুক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে শুরু হয়েছে টানাহ্যাঁচড়া। আবদুল জলিল দেশে ফিরে এসে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনিই সাধারণ সম্পাদক। তিনি অসুস্খ থাকা অবস্খায় পদ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর জের ধরেই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান জানিয়ে দেন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। অবশ্য আবদুল জলিল পদ যে ছাড়বেন না তা অনেকেরই ধারণা ছিল আগেভাগে। এখন তিনি শেখ হাসিনার দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। মোট কথা আবদুল জলিল সাধারণ সম্পাদক থাকছেন তা নিশ্চিন্তে বলা যায়। কারণ এ সময়ে শেখ হাসিনা দলে ভাঙন-বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইবেন না।
    একটি বিষয় লক্ষণীয়, খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন জামিনে। আর শেখ হাসিনা মুক্তি পেয়েছেন প্যারোলে।
    যার ফলে খালেদা জিয়া যেভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন শেখ হাসিনা সেভাবে পারছেন না। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ রোববার নিউইয়র্কের একটি হোটেলের বলরুমে তাঁর সম্মানে এক ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। সেখানেও শেখ হাসিনা বক্তব্য দিয়েছেন খুব সাবধানতার সঙ্গে। সব মিলিয়ে এটা বেশ স্পষ্ট, আওয়ামী লীগকে বেশ সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই এগুতে হচ্ছে, যা বিএনপির বেলায় অনেকটাই অবাধ।
    দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর যে উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে তা নিয়েও রয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। আলোচনায় বসে কী এজেন্ডায় কথা বলবেন তাঁরা? তেমন এজেন্ডা বা ইস্যুগুলোর কথাও তো জনগণের জানা দরকার। তেমন কোনে সূচি অবশ্য তাঁরা নিজেরাই তৈরি করতে পারেন। কিন্তু কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগ তো শর্ত দিয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের আলোচনায় বসবেন না। ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে মধ্যস্খতায় রেখে সরকার যে চেষ্টা শুরু করেছে তার ফল পজিটিভ নাকি নেগেটিভ দাঁড়ায় তা দেখার জন্য আরও ক’মাস অপেক্ষা করতে হবে।
    পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে, শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া দু’জনই নির্বাচন করবেন না। আর এভাবেই ওয়ান-ইলেভেনের ফসল জাতির গোলায় উঠবে। এ বিষয়ে আমি একটু অতীতে ফিরে যেতে চাই। এরশাদীয় স্বৈরকালের অবসানের প্রাক্কালে বিএনপি, আওয়ামী লীগের মোর্চায় একটি ‘জাতীয় ঐক্যের রূপরেখা’ প্রণীত হয়েছিল। সেই রূপরেখাটি পরবর্তী সময়ে মেনেছিল কি প্রধান দলগুলো? না, কেউই সেটা মানেনি। বরং দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সামন্তবাদী পেশিশক্তি প্রদর্শন, কালো টাকার দাপট দু’পক্ষই দেখিয়েছে পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। আজ বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা যে ‘কোড অফ পলিটিক্যাল কন্ডাক্ট’-এর প্রচারণায় নেমেছেন তা তো অতীতে কেউ মানেনি। ভবিষ্যতে মানবে তেমন কোনো গ্যারান্টি নেই। আর যদি তারা মানতোই তবে বাংলাদেশে কোনো ওয়ান-ইলেভেনের দরকারই হতো না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এক ধরনের ইগো-পূর্ণ মানসিকতা বারবার দখল করেছে গণমানুষের স্বপ্ন।
    বাংলাদেশে রাজনৈতিক আচরণ বিধিমালার ভবিষ্যৎ যে খুব উজ্জ্বল তা এ মুহূর্তে বলার কোনো অবকাশ নেই। কারণ মুখে যতই বড় বড় বুলি আওড়ানো হোক না কেন বাস্তবে তা কেউই মানবে না। মানতে রাজি হবে না। খালেদা জিয়াকে আজীবন দলীয় প্রধান রাখার প্রস্তাব কিংবা আবদুল জলিলের দীর্ঘকালীন সাধারণ সম্পাদক থাকার খায়েশ সে প্রমাণই দিয়ে যাচ্ছে। এই মানসিকতা গোটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
    প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাজনীতিতে সহনশীলতার নজির সৃষ্টি করতে পারেনি। এরা আগামী নির্বাচনে অংশ নিলেই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই। কারণ এক পক্ষ জিতলে অন্যপক্ষ ক’মাসের মধ্যেই আন্দোলনে নেমে যাবে রাজপথে। আমার বারবারই মনে হচ্ছে ওয়ান-ইলেভেনের অসম্পূর্ণ কর্মকাণ্ড বরং আরও বেপরোয়া করে তুলতে পারে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে, যার পরিণতি হতে পারে আরও ভয়াবহ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এমএ মতিনের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ এর আগাম বার্তা মনে হচ্ছে।
    নিউইয়র্ক ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮
    ———————————————————————————-
    দৈনিক সংবাদ । ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত

    • ইমতিয়ার শামীম - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৯:৪৯ অপরাহ্ণ)

      ইলিয়াস ভাই, আপনি আপনার নিজের অভিমত অনুযায়ী আপনার ভাষ্য এবং অবস্থান খুব স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে আমার লেখাটার সঙ্গে তার প্রাসঙ্গিকতা বোধহয় খুব বেশি নেই। কেননা আমার অবস্থানটি হলো এই যে, যে-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা গতিপ্রবাহ এবং আচরণবিধিই প্রণয়ন করা হোক না কেন, তার উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে অর্থবহ করা নয়, বরং গণতন্ত্র শব্দটিকে ব্যবহার করে কিছু সুনির্দিষ্ট গণবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। এবং পাটকল শ্রমিকরাও এই এজেন্ডার শিকার। এই রাজনৈতিক দলগুলি যদি সহনশীলতার নজির তৈরি করতে পারে, তা হলে ওইসব এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ আরও সুগম হয়ে যাবে এবং আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সে কাজটিই করতে চাইছেন, তাদের মেধা ও ঘাম ব্যয় করছেন।
      কিন্তু যদি এই পরিস্থিতির মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়া হয়, তা হলে একটি আচরণবিধির অভাবে বিএনপি-জামাত বনাম আওয়ামী লীগের মতো দলগুলির মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে, দ্বন্দ্ব রয়েছে তাকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই দূরত্ব ও দ্বন্দ্বকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগাচ্ছে; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এমন কোনও গণতান্ত্রিক বা বাম-গণতান্ত্রিক দলের টিকিটি আজও নজরে পড়ছে না যারা এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।
      আমি মনে করি, রাজনীতির বিরুদ্ধে যে প্রচারণা, তার মূল লক্ষ্যও ওই এজেন্ডা বাস্তবায়নের পরিস্থিতি যাতে প্রতিবাদহীন হয় তার আয়োজন করা। আমি এ কথাগুলিই বলতে চেয়েছি। জানি না, তা আপনার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে কি না।

  3. ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (১২:৫৬ অপরাহ্ণ)

    ইমতিয়ার শামীমকে ধন্যবাদ এই জরুরী বিষয়টি নিয়ে লিখবার জন্য। যে গীতি আরা’র কথা বলা হচ্ছে এখানে, তিনিই কি সেই ব্যক্তি নন, যিনি আর তার স্বামী নাজিম কামরান মিলে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে গত বছর এক প্রবাসী দম্পতিকে মাস্তান সহযোগে মারধোর করেছিলেন? এমনকি প্রবাসী শিক্ষক ভদ্রলোকের পা-ও ভেঙ্গে দিয়েছিলেন? ঘটনাটি যখন ঘটে গীতি আরা তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা, ফলতঃ আইনের উর্দ্ধে। খুব conveniently সে সময় ঘটনার খবর এবং প্রবাসী দম্পতির সংবাদ সম্মেলনের খবর একটিমাত্র পত্রিকা ছাড়া আর কোন পত্রিকা ছাপেনি (অন্তত আমার চোখে পড়েনি)। তাই ব্লগের এই লিন্কটিই ভরসা। এভাবেই আমাদের power elite দের সাথে মাফিয়াদের আর কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়না আজকাল।

    একটু পোস্টবহির্ভূত বিষয়, সেজন্য লেখকের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সাধারণত মানুষের আত্মীয়তা পরিচয়, বংশ, পরিবার এই বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামাইনা। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটু মনে হয় মাথা ঘামানোই উচিত। কারণ যতদূর শুনি, বাংলাদেশের পাওয়ার এলিটরা বিবাহ বা অন্যান্য আত্মীয়তার সূত্রে অনেকেই অনেকের সাথে যুক্ত। যেমন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যেমন আত্মীয়তা সূত্রে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং শেখ হাসিনার সাথে যুক্ত, তেমনি সালমান এফ রহমান এবং সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথেও যুক্ত। আবার শুনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা প্যানেলে গীতি আরাসহ আরো কয়েকজন ছিলেন ফখরুদ্দিন আহমেদের সরাসরি নিকটাত্মীয়। যে যেখানে খুশী আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হতেই পারেন, তাতে দোষের কিছু দেখিনা। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, গীতি আরা আর তার স্বামীর বিরুদ্ধে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোন আইনী পদক্ষেপ হতে দেখা যায়নি, তার পেছনে আত্মীয়তার অবদান কতটা? কিংবা সালমান এফ রহমান কিংবা সালাহউদ্দিন কাদেরের মত মানুষরা যে সব সরকারের আমলেই বহাল তবিয়তে টিকে থাকেন, তার পেছনে পরিবার বা আত্মীয়তার অবদান কতটুকু? আন্ডারওয়ার্লড নিয়ে যত ছবি বা উপন্যাস রয়েছে (যেমন: গডফাদার, মিকি ব্লু আইজ) সেগুলোতে দেখেছি এঁদের কাছে “Family” বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশেও যেন power elite রা দিনদিন Mafia elite-দের মত হয়ে উঠছে, এবং সে অনুযায়ী আচরণ করে যাচ্ছে – একে অন্যের স্বার্থরক্ষার মাধ্যমে, একে অন্যকে দুর্দিনে সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে – “family is important, family is everything” ‌-‌ এই অমোঘ নীতিকে পাথেয় করে।

    এদের একের সাথে অন্যের আত্মীয়তার যোগসূত্রগুলো নিয়ে কেউ কি লিখবেন তথ্যমূলক একটি ব্লগ? হয়তো বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক ক্রান্তিক্ষণের ব্যাখ্যা বা উত্তর মিলে যাবে সেই লেখা থেকে।

  4. ইমতিয়ার শামীম - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৯:৩২ অপরাহ্ণ)

    আপনার দেয়া ব্লগের লিংকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার মনে হয়, গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে স্পষ্ট একটি বক্তব্য প্রথম ওই লিংকটিতেই দেয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই, আত্মীয়তার সূত্র তাঁকে নিষ্কৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে বড় একটি ভূমিকা রেখেছে।
    আপনি যে-বিষয়টির ওপর ব্লগ লেখার আহ্বান জানিয়েছেন, প্রসঙ্গত বলি, অনেক আগে সেই বিষয় নিয়ে আমি একটি লেখা লিখেছিলাম দুই পর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায়। লেখাটির নাম ছিল সম্ভবত এ-রকম রক্তসম্পর্কের রাজনৈতিক নৃতত্ত্ব। লেখাটি ছাপা হয় উনিশশ ছিয়ানব্বই সালের শেষের দিকে। লেখাটি যদি হাতের কাছে থাকত, তা হলে হয়ত আপডেট করা যেত। যদিও পরিস্থিতি পাল্টেছে, কিন্তু ক্ষমতাকাঠামোয় রক্তসম্পর্কের দাপট কতটুকু কমেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা আসলেই বাতুলতা। আমরা যা করতে পারি তার একটি অন্যতম বোধহয় এরকম,- দাপটের এই রূপ কতটুকু অবগুণ্ঠন তৈরির চেষ্টা করছে, কোন পরিস্থিতিতে নগ্ন হয়ে ধরা পড়ছে এবং কখন আবার তা সামান্য দ্বন্দ্বাত্মক হয়ে পড়ছে, সেক্ষেত্রে বুর্জোয়া সংস্কৃতি কতটুকু ভূমিকা রাখছে, সামন্ত সংস্কৃতি কতটুকু ভূমিকা রাখছে তা বোঝার চেষ্টা করা।
    ধন্যবাদ আপনাকে, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করায়… নিশ্চয়ই কেউ না কেউ এ নিয়ে লিখবেন এবং অবশ্যই লেখা উচিত।

  5. সৈকত আচার্য - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (১০:৪০ অপরাহ্ণ)

    @ ইমতিয়ার শামীমঃ
    স্মৃতি থেকে হাতড়িয়েও যদি “রক্তসম্পর্কের রাজনৈতিক নৃতত্ত্বের” একটা কাঠামো দাঁড় করানো যেত আমরা সবাই উপকৃত হতাম। মনে হচ্ছে, আপনার কাছে এই দাবী করা যেতে পারে।

    • ইমতিয়ার শামীম - ২২ অক্টোবর ২০০৮ (৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ)

      আশা রাখি ভবিষ্যতে লেখাটা আবারও নতুন করে দাঁড় করানোর। আপনাকে ধন্যবাদ, রীতিমতো দাবি করবার জন্যে। স্বস্তির ব্যাপার হলো, আপনি পাটকল শ্রমিক নন আর আমিও মালিক বা সরকার নই যে দাবি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘তেড়েমেড়ে ডাণ্ডা করা যাবে ঠাণ্ডা।’ অতএব ভরসা রাখি ধীরেসুস্থে কোনও একসময় লেখার…

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.