১.
কেন যেন পেশাজীবিদের মধ্যে সাংবাদিকদের আমি সবচেয়ে বেশী পছন্দ করতাম। ‘করতাম’ বলতে হলো বলে আমি খুব দুঃখিত। কিন্তু এখন ‘করতাম’ না বলে উপায় নেই। ঢালাও ভাবে ভালোলাগার দিন শেষ। বড়জোর বলা যায়, কোন কোন সাংবাদিক ভালো কিংবা কোন কোন রিপোর্ট ভালো।(সাংবাদিক বলতে আজকাল পত্রিকা ও টিভি দুই দলকেই বোঝায়। আমিও দুই দলকেই বোঝালাম)। সাংবাদিকের নৈতিকতা ব্যাপারটা নষ্ট হতে শুরু করেছিল নব্বই দশকের পর থেকে। ব্যক্তিগত দূর্নীতি নিয়ে কোন কোন সাংবাদিক খ্যাতিমান হয়ে উঠেছিল। মোনাজাত উদ্দিনের মতো নিবেদিত প্রান সাংবাদিকের সংখ্যা কমে আসছিল। মুক্ত সাংবাদিকতা ব্যাপারটা অলীক বস্তু হয়ে যাচ্ছিল। পত্রিকাগুলো একসময় বিভক্ত ছিল রাজনীতির মেরুকরনে, এখন বিভক্ত কর্পোরেট মেরুকরনে। তবে এতদিন সবই মোটামুটি সুশীল মোড়কে ঢাকা ছিল। কিন্তু সেদিন এটিএন বাংলার সাংবাদিকেরা যে কাণ্ড দেখালো, তাতে গালিটাও ভদ্র ভাষায় দিতে ইচ্ছে হয় না। সাংবাদিকেরা স্বাধীন নয় জানতাম, কিন্তু কিছু সাংবাদিক যে পোষা কুকুর বা চাকর হয়ে গেছে সেটা জানতাম না।
২.
শুরুতে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকাটিকে আমি খুব পছন্দ করতাম। ‘একতা’র মতিউর রহমানকে প্রথম আলোতে দেখে ভালো লেগেছিল। আমি কমিউনিষ্ট না, কিন্তু কমিউনিজমের প্রতি ভক্তি থাকার কারণেই মতিউর রহমানকে প্রথম আলোর সম্পাদক হিসেবে দেখতে ভালো লেগেছিল। বলা বাহুল্য, সময়ে এসে মতিউর রহমান হতাশ করেছেন। আমরা প্রথম আলোকে কাংখিত জায়গায় দেখতে পেলাম না। অভ্যেসের প্রভাবে বাসায় এখনো ‘প্রথম আলো’ রাখি। তবু প্রথম আলোর ব্যাপারেও বলতে হয়, পছন্দ’করতাম’।
৩.
একসময় আওয়ামীলীগকে পছন্দ করতাম। পেটিবুর্জোয়া দল হলেও ধারণা ছিল এই দলে অন্ততঃ বিএনপির মতো খোঁয়াড়ের জানোয়ার নেই। কিন্তু দুই মেয়াদেই আওয়ামী লীগ দেখিয়ে দিল তাদের দলেও খোঁয়াড়ের জানোয়ারের আধিক্য। তারাই দলের পরিচালক, তারাই দলের পথ নির্দেশক। তাদের সাথে বিএনপির পার্থক্য কেবল ‘যুদ্ধাপরাধী’ ইস্যু। কিন্তু সেই ইস্যুর মধ্যে কতোটা আন্তরিকতা আর কতোটা প্রচারমুখীতা তাতেও আমার সন্দেহ আছে। নিবেদিত প্রাণ নেতানেত্রী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ক্ষমতার কেন্দ্রজুড়ে অযোগ্য নেতৃত্বের ছড়াছড়ি। সুতরাং আওয়ামী লীগের ব্যাপারেও আমাকে লিখতে হলো, ‘করতাম’।
৪.
আমার মনে হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে ‘করতাম’ শব্দটার ব্যবহার অনেক বেড়ে যাবে। আমরা কেবলই নস্টালজিক হতে থাকবো।
যখন ভাবি, আগামীতে আমাদের আস্থা রাখার জন্য কোন বর্তমান অবশিষ্ট থাকবে না, হতাশায় দুমড়ে যাই।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৫ comments
মাসুদ করিম - ২৭ জুন ২০১২ (১০:২৮ পূর্বাহ্ণ)
গত কয়েক বছর ধরে বর্ষায় চট্টগ্রামের যে হাল হয়, এবং গতকাল যা হল, এখন বর্ষাও ঢুকে গেল এই তালিকায়।
নীড় সন্ধানী - ২৫ জুলাই ২০১২ (২:১৪ অপরাহ্ণ)
মেঘহীন রোদেলা দুপুরে আগ্রাবাদ সিডিএকে দেখলে মনে হয় চট্টগ্রাম ভেনিস হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। নৌকার বদলে যেখানে এখনো রিকশা চলছে, এই যা।
রায়হান রশিদ - ২৩ জুলাই ২০১২ (৯:৩১ পূর্বাহ্ণ)
নীড় সন্ধানী সবই বলে দিয়েছেন, এর পর কি আর বলার থাকতে পারে। এদিকে গতকাল ডাক্তাররা আবার সাংবাদিকদের ধরে পিটিয়েছে। ভালো।
ইনট্ারেস্টিং মন্তব্য। এখানে আরও একটা ব্যাপার আছে নীড়দা। এখন ‘আওয়ামী লীগ’ বলতে আমরা যা বুঝি সেটা homogenous কিছু নয় বলেই সন্দেহ হয়। এখানে একের ভেতর কতগুলো যে আওয়ামী লীগ আছে সেটাই একটা গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে এই প্রশ্নটা করি – যে আওয়ামী লীগকে আমরা এখন দেখছি তা কি শহীদ তাজউদ্দিনদের আওয়ামী লীগ নাকি খন্দকার মোশতাকদের? জোর সন্দেহ – শেষোক্তটি।
নীড় সন্ধানী - ২৫ জুলাই ২০১২ (২:০৯ অপরাহ্ণ)
সত্যি বলতে কি তাজউদ্দিনের আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব আমি পাই না। এখন যেটা আছে আবুল কাবুল পরিষদবেষ্টিত হাসিনা আওয়ামীলীগ, তার পরতে পরতে খন্দকার মোশতাকের ভুত।
রায়হান রশিদ - ২৬ জুলাই ২০১২ (১:০০ পূর্বাহ্ণ)
ভুতই সবচেয়ে যথার্থ শব্দ। এই ভুতেরা আমাদের ভবিষ্যত খেয়ে ফেলছে!