লাতিন ভাষার কথা : ১১

সিসেরোর জন্ম ও মৃত্যু, যথাক্রমে, ১০৬ ও ৪৩ খৃষ্ট পূর্বাব্দে। সেই বিপ্লবের কালে, এক সংক্ষুব্ধ সময়ে জীবন কাটিয়েছেন তিনি। আমরা যাকে উচ্চ মধ্যবিত্ত বলি সেরকম এক পরিবারে জন্ম তাঁর, রোমে যাদের ‘équites’, (knights) বলা হতো। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর

 

সিসেরো আর বক্তৃতা বা অলংকারশাস্ত্র

সিসেরোর আবক্ষ ভাস্কর্য

সিসেরোর আবক্ষ ভাস্কর্য

সিসেরোর জন্ম ও মৃত্যু, যথাক্রমে, ১০৬ ও ৪৩ খৃষ্ট পূর্বাব্দে। সেই বিপ্লবের কালে, এক সংক্ষুব্ধ সময়ে জীবন কাটিয়েছেন তিনি। আমরা যাকে উচ্চ মধ্যবিত্ত বলি সেরকম এক পরিবারে জন্ম তাঁর, রোমে যাদের ‘équites’, (knights) বলা হতো। আইনকে যাতে পেশা হিসেবে নিতে পারেন, সব পরিস্থিতিতেই যাতে সুন্দর করে কথা বলতে পারেন, এবং প্রয়োজনে, যুদ্ধেও যোগ দিতে পারেন, একথা বিবেচনায় রেখে একেবারে ব্যতিক্রমী এক পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা দেয়া হয়েছিল তাঁকে। প্রথমে রোমে, পরে এথেন্সে পড়াশোনা করেন তিনি, যেখানে গ্রীসীয় শিক্ষা ধারার যথেষ্ট গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

প্রায় পঁচিশ বছর বয়েস থেকেই বিতর্কিত বিচারগুলোতে সওয়াল-জবাবের জন্য আদালতে উপস্থিত হতে শুরু করেন তিনি, এবং ক্রমে বেশ সুনাম অর্জন করেন। এক সময়ে তিনি প্রশাসনের উচ্চপদে নির্বাচিত হন, আর তার ফলে পরে সিনেটেও স্থান লাভ করেন। হয়ে ওঠেন এক ‘homo novus’, (নতুন মানুষ), তার মানে এমন একজন মানুষ যাঁর পরিবারের কেউ সিনেটে না থাকার পরেও যিনি সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এমনকি কনসাল পদে, আর তার অর্থ, রাষ্ট্র প্রধান হিসেবেও, বৃত হন, এবং সেটা ৬৩ খৃষ্ট পূর্বাব্দে। একজন ‘homo novus’-এর পক্ষে এতদূর যাওয়া ছিল আসলেই অভূতপূর্ব একটি ঘটনা।

জীবনের বাকি কুড়ি বছর সিসেরা — কম-বেশি সাফল্যের সঙ্গে — একেবারে সর্বোচ্চ স্তরে ক্ষমতার খেলা খেলে গেছেন। সিযারের হত্যাকাণ্ডের পর অল্প সময়ের জন্য রোমের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান ছিল তাঁর, কিন্তু পরে, জেনারেল এন্টনিয়াসের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে হেরে যান তিনি, এবং আততায়ীর হাতে নিহত হন। ভাল কথা, এই এন্টনিয়াস-ই কিন্তু চলচ্চিত্র এবং নাট্যপ্রেমীদের প্রিয় ‘এন্টনি ও ক্লিওপেট্রা’-র এন্টনী, যিনি গেইয়াস অক্টাভিয়াস বা পরবর্তীকালে সম্রাট অগাস্টাস নামে পরিচিত রোম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ে হেরে আত্মহত্যা করেন।

সিনেটে, এবংসাধারণভাবে জনগণের উদ্দেশে প্রচুর বক্তৃতা দিয়েছেন সিসেরো। নিজের জীবদ্দশাতে সেগুলোর বেশিরভাগ-ই প্রকাশ করেছিলেন তিনি, এবং সেসবের মধ্যে ৫০টি আমাদের কাছে পৌঁছেছে। সিসেরোর বক্তৃতাগুলো বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। অত্যন্ত দক্ষ বক্তা ছিলেন তিনি; তাঁর কণ্ঠ ছিল ভাল, নিজের কথা বলতেও পারতেন খুব সুন্দর করে, এমনভাবে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করতেন যা শ্রোতাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হতো, আর সবচেয়ে যেটা উল্লেখযোগ্য, শ্রোতাদের তিনি যেভাবে চিন্তা করাতে চাইতেন, কোনো কিছু অনুভব করাতে চাইতেন, অনায়াস দক্ষতায় তা করাতে পারতেন। পেশাগত জীবনেও দারুণ সফল মানুষ ছিলেন তিনি। কৌঁসুলী হিসেবে তিনি চরম ফেরেব্বাজ কিছু লোককেও সাজার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। আর সিনেটে এমন বহুবার হয়েছে যে তাঁর অবস্থানের পক্ষে বাস্তবিক কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি না থাকার পরেও স্রেফ কথার ফুলঝুরি ঝরিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করার অনন্য গুণের কারণে তাঁর বক্তব্যই গ্রহণযোগ্য বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।

একটা ছোট উদাহরণ দেয়া যাক।

এটি ক্যটিলিন-এর বিরুদ্ধে তাঁর বক্তৃতার প্রারম্ভিক অংশ। তিনি যে-বছর কনসাল ছিলেন সে-বছর গোপনে তাঁর বিরুদ্ধে এক ‘coup d’état’-এর পরিকল্পনা করছিলেন ক্যাতিলিন। সিসেরো ব্যাপারটি জানতে পেরে সিনেটে একটি সভা আহ্বান করেন। সেই সভায় তিনি তাঁর সহ-সিনেটরকে একেবারে সরাসরি আক্রমণ করলেন তাঁর বাক্যবাণ দিয়ে। বক্তৃতাটি শুরু হয়েছে এভাবে :

Quo usque tandem abutére, Catilina, patiéntia nostra? Quam diu etiam furor iste tuus nos elúdet? Quam ad finem sese effrenata iactabit audácia. Nihílne te nocturnum praesídium Palati, nihil urbis vigíliae, nihil timor pópuli, nihil concursus bonorum ómnium, nihil hic munitíssimus habendi senatus locus, nihil horum ora vultusque moverunt?

আমাদের ধৈর্যের আর কতটা অপব্যবহার করবেন আপনি, ক্যাতিলিন? আপনার এই উন্মত্ত ক্রোধ আর কতদিন উপহাস করবে আমাদের? আপনার ঔদ্ধত্যপূর্ণ উচ্চাশা আর অসংযমী ধৃষ্টতার কি কোনো সীমা-পরিসীমা নেই? প্যালাটাইন পাহাড়ে রাতে রক্ষীদের অবস্থান, নগরে বসানো পাহারা, জনগণের উদবেগ- উতকণ্ঠা, বিশ্বস্ত নাগরিকদের একত্রিত হওয়া, সিনেট যে এই অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গায় মিলিত হয়েছে, সমবেত হওয়া মানুষগুলোর দৃষ্টি ও চেহারা, এ-সবের কোনো কিছু-ই কি কোনো অর্থ বহন করে না আপনার কাছে?

ভাষাগত দিক দিয়ে বেশ কঠিন এই কথাগুলো। লাতিন ভাষাটির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সখ্য না থাকলে এটা পড়া, বা, এর মর্মোদ্ধার করা মুশকিল। আমরা কেবল এখানে কয়েকটি জিনিসের দিকে নজর দেবো যা বলে দেবে বক্তা কিভাবে তাঁর বাগ্মিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। অনুবাদ থেকে এটা বুঝতে পারা কঠিন নয় যে, ক্যতিলিন একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি, এবং তাঁর কাছ থেকে সবার নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা উচিত, এটা দর্শক-শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরাই সিসেরোর কৌশল। ক্যাতিলিন রাষ্ট্রের শত্রু কিনা তা নিয়ে তর্ক করা নয়, বরং বক্তার উদ্দেশ্য হলো সবাইকে একথা বোঝানো যে আসলেই তিনি তাই। কৌশলটা এতোটাই কাজে লেগেছিল যে সিনেটের সামনে দাঁড়িয়ে যে তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করা উচিত এই কথাটাই ক্যাতিলিনের মনে হয়নি, এবং তিনি চুপচাপ রোম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বক্তার যা প্রধান উদ্দেশ্য থাকে সবসময় — দর্শক-শ্রোতাদের ঠিক তাই চিন্তা করানো যা তিনি তাদেরকে দিয়ে চিন্তা করাতে বা ভাবাতে চান — সে কাজটিতে সিসেরো খুব ভালো ভাবেই সফল হয়েছিলেন।

আর সেই লক্ষ্যে বাগ্মিতার বেশ কিছু কৌশল কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। সেগুলোর কিছু কিছু সহজেই শনাক্ত করা যায়। এই যেমন, বক্তৃতাটি তিনি শুরুই করেছিলেন একের পর এক তিনটি উস্কানীমূলক প্রশ্ন দিয়ে। কিন্তু এমন নয় যে তিনি সেগুলোর জবাব চাইছিলেন ক্যাতিলিনের কাছে, কারণ ওসব প্রশ্নের কোনো যুক্তিসম্মত জবাব দেয়ার ছিল না; আসলে ওগুলো ছিল বিবৃতি বা বিবরণ। আজ আমরা এগুলোকে বলি আলংকারিক প্রশ্ন। তো, এর পরের বাক্যে সিসেরো ‘nihil’ (কিছুই না, মোটেই না বা কোনো কিছুই না) ছয় ছয়বার পুনরাবৃত্তি করেছেন, এই কথাটা শ্রোতাদের মাথায় গেঁথে দিতে যে ক্যাতিলিন নিষ্ঠুর এবংঅনুভূতিশূন্য। এই দুটো হচ্ছে কোনো বক্তৃতাকে কার্যকর করতে হলে যেসব কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে তার দুটো উদাহরণ মাত্র।

অনেকেই এরকম বক্তৃতা দিতে চাইত, এবং সিসেরোর বক্তৃতাগুলোকে আদর্শ হিসেবে ধরে নিয়ে রোমের স্কুলগুলোতে সেগুলো বেশ যত্ন নিয়ে পড়ানো হতো। কিন্তু এই বক্তৃতাগুলো অসম্ভবরকমের সুগঠিত হলে কি হবে আজ আর খুব বেশি লোকে তা পড়ে না। তার কারণ খুব সহজবোধ্য — সেগুলো সাজানো হয়েছিল বিশেষ কিছু উপলক্ষ বা ঘটনাকে সামনে রেখে। বক্তৃতাগুলো বুঝতে হলে রোমের রাজনীতি এবং আইন-কানুন-সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান থাকা চাই। শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে সেগুলো বৈচিত্রপূর্ণ ও সমৃদ্ধ, কিন্তু আধুনিক পাঠকের কাছে তা বাগাড়ম্বরপূর্ণ, এমনকি একঘেয়ে বলেও মনে হতে পারে। তবে সেগুলো যখন বহু যুগ আগে দর্শক-শ্রোতার সামনে উপস্থাপিত হয়েছিল তখন অবশ্য তার প্রভাব নিশ্চয়ই একেবারে ভিন্ন ছিল।

সিসেরো কেবল লোক-বক্তৃতাতেই ওস্তাদ ছিলেন না। বড় একজন অলংকারশাস্ত্রবিদও ছিলেন তিনি। বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি — তাঁর ভাষায় — ‘ars oratória’ বা ‘লোক-বক্তৃতার বিদ্যা বা শিল্প বা কলা’ সম্পর্কে। স্পষ্টতই, ‘ars’ হচ্ছে ‘art’ (শিল্প বা বিদ্যা বা কলা), আর ‘oratoria’ হলো ‘লোক-বক্তৃতা সংক্রান্ত’ (oratorical), আর এটা একটি বিশেষণ, তৈরি হয়েছে বিশেষ্য ‘orator’ বা বক্তা থেকে। আবার, ‘orator’ এসেছে ক্রিয়াপদ ‘orare’, মানে বক্তৃতা দেয়া বা করা থেকে (to make a speech, to orate)। একই বিদ্যা বা জ্ঞান গ্রীক নাম ‘ars rhetorica’ বা ‘বক্তৃতার বিদ্যা’ নামেও পরিচিত ছিল, এসেছে লোক-বক্তার গ্রীক শব্দ ‘rhetor’ থেকে।

গ্রীকরা যেসব বিদ্যা আবিষ্কার করে গেছে তার মধ্যে এই বক্তৃতাশাস্ত্র বা অলংকারশাস্ত্র অন্যতম। তাদের দৃষ্টিতে এটি এক দিক থেকে ‘poetics’ বা কাব্যতত্ত্ব বা সাধারণভাবে সৃজনশীল লেখার তত্ত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত, অন্যদিক থেকে আবার রাজনীতি বা রাষ্ট্রতত্ত্বের সঙ্গে। মুখের কথা দিয়ে কি করে মানুষের আস্থা বা বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, সেটাই এই বিদ্যার আসল কথা। আর, সিসেরোর সময়ে গ্রীকরা এরিমধ্যে বিষয়টার ওপর নানান পাঠ্যবই, গবেষণা-গ্রন্থ লিখে ফেলেছে; শুধু তাই নয়, বেশ কয়েক শত বছর ধরে শিক্ষা-ও দিয়ে আসছে। গ্রীকদের যা শেখানোর ছিল সিসেরো তা তাঁর যৌবনেই শিখে ফেলেছিলেন, কাজেই বাদ-বাকি জীবন তা চর্চার মাধ্যমে তিনি তাঁর অর্জিত দক্ষতা শানিয়ে গেছেন, আর সেই সঙ্গে, অবসর সময়ে, বক্তৃতা বা অলংকারশাস্ত্রের ওপর লাতিন ভাষায় বই লিখেছেন। তাঁর প্রয়াণের একশ বছর পর কুইন্তিলিয়ান (Quintilian) নামে আরেক রোমক ভদ্রলোক রচনা করেন এ-বিষয়ের ওপর সবচাইতে বিস্তারিত এবং সবচেয়ে বিখ্যাত এক বই, নাম যার ‘Institutio Oratoria’, বা, ‘বাগ্মিতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ।

অন্য বেশিরভাগ বিষয়েই প্রাচীনকালে যা কিছু শেখানো হয়েছে তা পরবর্তী কাল বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রাচীনকালের পদার্থবিদ্যা আজ কেবল তাঁদেরই আগ্রহের বিষয় যাঁরা বিজ্ঞানের ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন; একই কথা প্রযোজ্য অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও। কিন্তু বক্তৃতা বা অলংকারশাস্ত্রের কথা ভিন্ন। জনসমক্ষে যাঁরা বক্তব্য রাখতে চান, কথা বা যুক্তি দিয়ে যাঁরা অন্যদেরকে নিজের দলে ভেড়াতে চান, কোনো কিছু বিশ্বাস করাতে চান, তাঁরা প্রায়ই কুইন্তিলিয়ান বা সিসেরোকে সামনে রেখেই, অর্থাত, তাঁদেরকে আদর্শ মেনেই বিদ্যেটা রপ্ত করার চেষ্টা করেন। তার কারণ সম্ভবত এই যে, রোমকদের কাছে বিদ্যেটা এতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তাদের সেরা প্রতিভারা এই বিষয়টির পেছনে যথেষ্ট সময় ও শ্রম দিয়েছিলেন। ফলে, এ-বিষয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গী বা কথাবার্তা আজও প্রাসংগিক ও দামি। বক্তৃতা বা অলংকারশাস্ত্র সম্পর্কে হাল আমলের লেখা সবচেয়ে ভাল বইপত্র এ-বিষয়ের প্রাচীন লেখকদের কাছে অনেকাংশেই ঋণী।

তো, ব্যাপারটি কি সে-বিষয়ে ধারণা পেতে কিছু মৌলিক প্রতিশব্দের দিকে তাকালেই চলবে আমাদের। কেউ কোনো বক্তৃতা দেবার কথা ভাবলে তাকে ৫টি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হতো। তার প্রথমটি হলো ‘invéntio’ বা, ‘আবিষ্কার, উদ্ভাবন’, অন্য কথায় বলতে গেলে যুক্তি-তর্কের ধারা, যা বক্তৃতায় ব্যবহৃত হবে। এরপরের পর্ব, বিভিন্ন অংশের ‘disposíto’ বা ‘বিন্যাস’। আর তার পর ‘elocútio’, ‘প্রকাশ, অভিব্যক্তি’, অর্থাৎ, সঠিক শব্দ বা কথা ব্যবহার করে যুক্তিগুলোর সাজানো। অলংকারশাস্ত্রের এই বিশেষ উপবিভাগটি আধুনিক ‘শৈলীশাস্ত্র’-র (stylistics) উৎস। তো, এর পর হচ্ছে ‘memória’ বা ‘স্মৃতি’ : বক্তা যখন বক্তৃতাটি গুছিয়ে এনে সেটা লিখে ফেলেছেন তখন তাঁকে সেটা মুখস্ত করে ফেলতে হতো আগাগোড়া, এবং অলঙ্কারশাস্ত্র বিষয়ক শিক্ষায় স্মৃতিশক্তি বাড়াবার অত্যন্ত আকর্ষণীয় কিছু কৌশল অন্তর্ভুক্ত ছিল যেসব আজো বেশ কার্যকর। আর সব শেষে ছিল, ‘pronuntiátio’ বা, ‘বক্তৃতাটি দেয়া বা উপস্থাপন করা’, যার ভেতর ছিল কণ্ঠের ওঠা-নামা, অঙ্গ-ভঙ্গী, ইত্যাদি নানান ব্যাপার।

এক অর্থে তাহলে বোঝা গেল, বক্তৃতা দেয়া ছিল প্রাচীন রোমের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক কর্মকাণ্ড। তবে, ভাষাকে ব্যবহারের আরো নানান কায়দা-কানুন বা উপায়-ও ছিল বৈ কি, আর সেগুলো-ও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না মোটেই। অন্য কিছু বিখ্যাত রোমসন্তান সেদিকেও তাঁদের শক্তি ব্যয় করতে কার্পণ্য করেননি।

(ক্রমশ)

জি এইচ হাবীব

জন্ম ১০ই মার্চ ১৯৬৭। পেশা: শিক্ষকতা।

১ comment

  1. Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ১০ | জি এইচ হাবীব

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.