হোমো সাসেরের জীবন : হাইতি থেকে বাংলাদেশ

প্রতিটি মৃত্যুই মানবতার মৃত্যু। তাহলেও যুদ্ধ, মহামারিসহ প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিপর্যয়গুলো চিরকালই দরিদ্রপ্রেমী। হাইতির মতো দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ যেকোনো বিপর্যয়ের সহজ শিকার হতে বাধ্য। [...]

No man is an island. entire of itself; every man is a piece of the continent, a part of the main; … any man’s death diminishes me, because I am involved in mankind, and therefore never send to know for whom the bell tolls; it tolls for thee.

John Donne, Meditation XVII

প্রতিটি মৃত্যুই মানবতার মৃত্যু। তাহলেও যুদ্ধ, মহামারিসহ প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিপর্যয়গুলো চিরকালই দরিদ্রপ্রেমী। হাইতির মতো দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ যেকোনো বিপর্যয়ের সহজ শিকার হতে বাধ্য। যে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে হাইতির রাজধানী ধূলিতে মিশে গিছে, সেই মাত্রার ভূমিকম্পে নিউইয়র্ক বা সানফ্রান্সিসকো এভাবে ধসে যেত না। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকতো হতো না কয়েকদিন। প্রকৃতি ও সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করা আখেরে যে আত্মঘাতী, সেই বুঝ আজ তাই আসা চাই। যা আমরা রক্ষা করতে পারি না, মানুষ হিসেবে তা আমাদের করবার প্রয়োজন নাই। পুঁজি অল্প সময়ে সর্বোচ্চ উদ্বৃত্ত আহরণ করতে চাইতে পারে, কিন্তু তা পুঁজির অধীন শ্রমিক-কৃষক ও মধ্যবিত্তদের জন্য শেষ বিচারে ভাল নয়।

আজ হাইতিতে যা দেখছি, তা হাইতির দীর্ঘ বিদেশি শোষণ, দুর্নীতি ও অপশাসনের ফল। হাইতির প্রকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে, হাইতির জাতীয় নেতৃত্বকে হত্যা-নির্বাসন দিয়ে শেষ করে সবসময় দেশিয় এলিটদের উতকৃষ্ট দালালটিকে প্রেসিডেন্ট করে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমেরিকা হাইতিকে ‘ক্যারিবিয়ার তাইওয়ান’ বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ হাইতি কেবল বিশ্বের দরিদ্রতম দেশই নয়, এক অকার্যকর রাষ্ট্রের আদর্শ মডেল। মার্কিন মডেলের উন্নয়ন দেশটিকে আরও দরিদ্র করে ফেলে। রপ্তানীমুখী অর্থনীতির ধাক্কায় লাখ লাখ কৃষক গ্রামাঞ্চল থেকে জমি হারিয়ে ভিড় জমায় রাজধানীতে_আমাদের ঢাকার মতোই। বস্তি বাড়তে থাকে, দুর্বল কাঠামোর ওপর বাড়ির ওপর বাড়ি উঠতে থাকে। তারপর ২০ সেকেন্ডের এক ভূমিকম্পে একদিন সব তাসের ঘরের মতো মাটিতে লুটায়। যা লুটালো তা ‘উন্নয়ন’-এর ভ্রান্ত মডেল কিন্তু তার নিচে পড়ে থাকে সেইসব মানুষ, যারা জীবিত অবস্থায় সেই মডেলের শিকার হয়ে অমানবিকতার শেষ দশায় উপনীত হয়েছিল। মানুষের জীবন একটাই, সেই জীবন কীভাবে আগ্রাসী পুঁজির জাঁতাকলে গুঁড়িয়ে যায়, জলবায়ু পরিবর্তন আর হাইতির ভূমিকম্প তা ঘটিয়ে দেখাল।

হাইতি এক দুর্ভাগা দেশ। স্পেনীয় অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাসের এই দ্বীপদেশে পা ফেলার দিন থেকেই হাইতির দুর্ভাগ্যের শুরু। প্রথমে স্পেনীয়, পরে ফরাসিরা দেশটিকে উপনিবেশ বানায়। সোনাসহ এখানকার খনিজসম্পদ পাচার হয়ে যায় ইউরোপে। ইউরোপীয়দের নিয়ে আসা রোগ ও মহামারিতে মৃত্যু হয় অজস্র মানুষের। দখলদারদের বর্বরতায় হাইতি প্রায় জনশূন্য হতে বসে। আফ্রিকা থেকে প্রায় আট লাখ মানুষ ধরে এনে দাস বানিয়ে খাটানো হয় খামারে ও খনিতে। হাইতিবাসী মাথা নত করেনি। বারবার বিদ্রোহ করেছে তারা। অবশেষে ফরাসি বিপ্লবের সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৮০৪ সালে হাইতি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। হাইতির বিপ্লব অতীতে ফেরার রোমান্টিক আদিবাসী বিদ্রোহ ছিল না, তা ছিল মানুষে মানুষে সমকতার দাবিদার। একারণে হাইতির বিপ্লব ফরাসি বিপ্লবের মতোই গুরুত্ববহ। হাইতি লাতিন আমেরিকার প্রথম স্বাধীন দেশ এবং পশ্চিম গোলার্ধে আমেরিকার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও, গোড়া থেকেই হাইতি মার্কিন আগ্রাসনের শিকার হয়ে এসেছে। ১৯৪৭ পর্যন্ত হাইতিকে দাসদের মূল্য বাবদ বাজেটের আশি শতাংশই পরিশোধ করতে হয় ফ্রান্সকে। হাইতিই একমাত্র দেশ, যেখানে প্রথম কোনো দাসবিদ্রোহ জয়ী হয় এবং স্বাধীনতা আসে। হাইতি ভেনেজুয়েলাসহ কয়েকটি দক্ষিণের দেশকে স্বাধীনত হতে সাহায্য করে। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে হাইতির মানুষও রক্ত ছরায়।

১৯১১ সালে হাইতির একমাত্র কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারি কোষাগার এবং ১৯১৬ সালে ঋণের অজুহাতে গোটা দেশটিই দখল করে নেয় আমেরিকা। ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত এই নৃশংস দখলদারি কায়েম থাকে। দখলাধীন ইরাকের কায়দায় মেরিন সেনারা দেশটিতে পুতুল সরকার ও মার্কিনপসন্দ সংবিধান প্রতিষ্ঠা করে। ওই সংবিধানে হাইতির ভূমি বিদেশিদের মালিকানায় দেওয়ার বিধান রাখা হয়। কিন্তু হাইতির সংসদ এটা পাস করতে রাজি না হওয়ায় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। অধিকাংশ হাইতিয়ানকে প্রায় দাসত্বের মধ্যে কাজ করতে হয় মার্কিন মালিকানার চিনি ও কফির খামারগুলোতে। কৃষি উৎপাদন থেকে সরিয়ে তাদের নিয়ে আসা হয় রপ্তানিমুখী অর্থনীতিতে। এভাবে মার্কিন রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনে হাইতি নিঃশেষ হয়ে যায়।

হাইতির জনগণ যতবার বিদ্রোহ করেছে, ততবারই মার্কিন মদদপুষ্ট সেনা অভ্যুত্থান কিংবা সরাসরি মার্কিন সেনা দিয়ে তা দমন করা হয়। বারবার উচ্ছেদ করা হয় নির্বাচিত সরকারকে। ১৯৫৭-১৯৮৭ পর্যন্ত চলে স্বৈরশাসন। ১৯৮৭ সালের গণ-আন্দোলনে তার পতন ঘটে। এরপর থেকে একবার সামরিক শাসন, তারপর তিন-চার মাসের নির্বাচিত সরকার_ এভাবেই চলছে হাইতি। ১৯৯০ এর পর প্রতিটি নির্বাচনে জনপ্রিয় লাভালাস আন্দোলন জয়ী হলেও সরকার চালাতে দেওয়া হয়নি। শেষ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অ্যারিস্টিডকে মার্কিন মদদে উচ্ছেদ করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চিলে’র পর হাইতি, হন্ডুরাসের নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ এবং ভেনেজুয়েলা ও বলিভিয়ার সরকারকে অস্থিতিশীল করবার চেষ্টা প্রমাণ করে নির্বাচন নিচের তলার মানুষের মতায়নের লড়াইয়ের শেষ মঞ্চ নয়, বরং প্রথম মঞ্চ হতে পারে। সবখানেই, তৃণমূল সামাজিক সংগঠনকে প্রতিরোধ করতে হয়েছে সেনা-মিলিশিয়া-গুন্ডা বাহিনীকে। এসব দেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক এলিটদের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ি গোষ্ঠী এবং আমলাতন্ত্র আজকের দুনিয়ায় বৈশ্বিক পুঁজি তথা সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে এমন জৈব সম্পর্কে যুক্ত যে, তারা আর জাতীয় নয়, তারা দেখে সাম্রাজ্যেরই স্বার্থ। হাইতির বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রেভালও এসব শক্তির প্রতিনিধি হিসেবে ফরমান বলে দেশ শাসন।

হাইতি আমাদের শেখায়, যে সরকার ও যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শান্তিকালে জনগণের ভাল করে না, দুর্যোগের সময় সেই সরকার জনগণকে বাঁচাতে পারে না। এ রকম দেশ যেমন নিজে থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় অম থাকে, তেমনি বাইরের সাহায্য নিতে গিয়ে অপরের স্বার্থের কাছে বলিও হয়। এখন হাইতির বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ করছে মার্কিন সেনারা, বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে রাজপথেও তারা। ব্যবসায়িরা দোকান-পাট গুটিয়ে রেখেছে, সরকার উবে গেছে, খাদ্য নাই-জ্বালানী নাই। এরকম অবস্থায় মানুষ যাতে নিজে আইন হাতে তুলে না নেয়, সম্পত্তিবানদের নিশ্চয়তায় ভাগ না বসায় তার জন্য মোতায়েন হচ্ছে সাঁজোয়া টহল। হাইতির পথে রওনা হয়েছে ১০ হাজার সদস্যের মার্কিন সামরিক বাহিনী। কেবল ত্রাণই তাদের উদ্দেশ্য নয়। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রভাবশালী চিন্তাশালা ও লবি হেরিটেজ ফাউন্ডেশন বলছে, ‘এই ভূমিকম্পে একই সঙ্গে মানবিক ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাগত প্রায়োগিকতা রয়েছে।’ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবিক সাহায্য ও উন্নয়নের নামে এভাবেই কেন্দ্রীয় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ‘জাতীয় নিরাপত্তাগত’ স্বার্থের কাছে বিশ্বের অনেক দেশই অসহায়। আফগানিস্তান-ইরাক দেখেছি, বলকান অঞ্চলে তাদের ‘হিউমানেটারিয়ান ইন্টারভেনশনের’ নামে ন্যাটোর প্রসার ও তেলপথের ওপর নিয়ন্ত্রণ দেখেছি। একদিকে ‌উন্নত দুনিয়ার তাহলে আমরা কি আবার বর্বরতার যুগে প্রবেশ করছি? মার্কিন গণমাধ্যম এই চিত্র আড়াল করে হাইতির জনসংখ্যাকেই এই দুর্যোগের জন্য দায়ী করছে, যেমন তারা করে সোমালিয়ার বেলায়। অথচ তাদের দুর্দশা সৃষ্টি করেছে এই উন্নত বিশ্বই। তাদের প্রতি কেবল কবি মিল্টনের এই কথাটিই বলবার রয়েছে, ‘যারা জনগণের চোখ উপড়েছে, তারাই আজ তাদের অন্ধত্বের জন্য দোষারোপ করছে।’

তাদের চোখে তৃতীয় দুনিয়ার মানুষেরা পুরোপুরি মানুষ নয়। তারা অপরের অধিকারভুক্ত মানুষ। ”রোমান সাম্রাজ্যের আইনে এ ধরনের মানুষকে বলা হতো ‘হোমো সাসের’ (Homo Sacer)। এই হোমো সাসেরদের হত্যায় অপরাধ হতো না, আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো বালাই তাদের জন্য খাটবে না। এমনকি তাদের মৃত্যু কখনো মহত্ত্বও পাবে না। তারা ছিল জড় বস্তু কিংবা নির্বাক প্রাণীদের মতো অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। আজ দেখা যাচ্ছে, ‘সন্ত্রাসবাদী’রাই নয় কেবল, রুয়ান্ডা, বসনিয়া, আফগানিস্তান বা ফিলিস্তিনের মানুষ বা অশ্বেতাঙ্গ দরিদ্রদের স্ট্যাটাস হোমো সাসেরের স্ট্যাটাস। এদের নিয়ে যা খুশি তা-ই করা চলবে। আবার একেবারে ফেলেও দেওয়া হবে না এদের। দুর্ভিক্ষ-মহামারি বা গৃহযুদ্ধে তারা মানবিক হস্তপে (হিউমানিটারিয়ান ইন্টারভেনশন) পাবে। এক হাতে কিছুকে মেরে আর কিছুকে রেখে শান্তি কায়েম করা হবে (?), আরেক হাতে দেওয়া হবে মানবিক ত্রাণ। ইরাক-আফগানিস্তান বা সোমালিয়ার মতো দেশে তাই বিদেশি ট্যাংক-বিমান-মিসাইলের সঙ্গে মানবতাবাদী সাহায্যের বহরও ঢোকে। এক আফগান হোমো সাসের এর মর্ম বুঝতে পারেনি। তাই সে আকাশে আঙুল তুলে এক সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করে, যে বিমানটি চক্কর মারছে সেটা কী ফেলবে, বোমা না রুটির বস্তা?” হাইতিরও প্রায় সেই হাল।

হাইতিতে যা ঘটেছে, তা ঢাকাতেও আচানক ঘটে যেতে পারে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের অবস্থান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মাঝে। ঢাকা তেহরানের পরে সবচেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা নগরী_ পৌরাণিক জতুগৃহ। ঢাকার আবাসন ও ভবনের গঠন হাইতির মতো না হলেও নাজুক। (এ বিষয়ে আজ লিখেছি প্রথম আলোয়) এবং এরকম দুর্যোগের সময় (আইলা-সিডর) গোপন সামরিক চুক্তিবলে মার্কিন সেনারা এসেছিল বাংলাদেশে। এখনো হাজারে হাজারে তারা অবস্থান করছে। হাইতি থেকে তাই আমাদের শেখার রয়েছে।
সমস্যা ও বিপন্নতার পাহাড়ে বসে আশার ছলনায় ভোলানো আর কত? বড় রদবদলের জন্য বড় উদ্যোগ চাই, মামুলি খুটখাট দিয়ে ঢাকাকে বাঁচানো আর কাঠি দিয়ে পাহাড় নড়ানোর চিন্তা সমান কথা। কোটি মানুষের জীবন নিয়ে উদাসীনতা তাই অপরাধ।

ইংরেজ কবি জন ডানের বহু পুরাতন সেই হুশিয়ারি তাই আবারো জানাই, ‘যে কোনো মৃত্যু আমারো মৃত্যু। আমি মানবতার অংশ, তাই ঘন্টা কার জন্য বাজে জানতে কাউকে পাঠিও না; জেনো, ঘন্টা তোমার জন্যই বাজে।’ হাইতির মৃত্যু তাই খুব দূরে নয়, মৃত্যুপুরীর পাগলা ঘন্টা ঢাকা শহর থেকেও শোনা যায়।

হাইতি নিয়ে জিজেকের লেখা: Democracy versus the people
* লেখাটির কিছু অংশ ১৮ জানুয়ারির প্রথম আলোর সম্পাদকীয় কলামে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে তা ভিন্ন তাতপর্যে প্রকাশ করা হলো।

ফারুক ওয়াসিফ

চৌখুপি থেকে বেরিয়ে দিকের মানুষ খুঁজি দশদিকে।

১০ comments

  1. বিপ্লব রহমান - ১৮ জানুয়ারি ২০১০ (৭:০৮ অপরাহ্ণ)

    হাইতির জনগণ যতবার বিদ্রোহ করেছে, ততবারই মার্কিন মদদপুষ্ট সেনা অভ্যুত্থান কিংবা সরাসরি মার্কিন সেনা দিয়ে তা দমন করা হয়। বারবার উচ্ছেদ করা হয় নির্বাচিত সরকারকে। ১৯৫৭-১৯৮৭ পর্যন্ত চলে স্বৈরশাসন। ১৯৮৭ সালের গণ-আন্দোলনে তার পতন ঘটে। এরপর থেকে একবার সামরিক শাসন, তারপর তিন-চার মাসের নির্বাচিত সরকার_ এভাবেই চলছে হাইতি।

    এই যেখানে নির্মম বাস্তবতা, সেখানে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হাইতিকেই খাবে, সেখানে ত্রাণের নামে ত্রাণকর্তা হবে মার্কিন সামরিক জান্তা… টিভি নিউজ এবং হলিউডি সিনেমায় আমরা দেখবো বর্বর গেরিলা দমনসহ সাদা সেনার কালো শিশুকে চকলেট বিতরণ, এমন কি কৃষ্ণ লাস্যময়ীর অনাগত প্রেম…এটিই তো অনিবার্য। আর এ ভাবেই আমরা বেমালুম ভুলে যেতে থাকবো — নিজস্ব বর্ণ পরিচয়, একদা ইতিহাসে ঢাকা সবুজ বৃক্ষসকল, ভূমিকম্পের মাত্রার বাইরে নগর-নকশা বিহীন, জলাশয় বুজিয়ে ছত্রাকের মতো বেড়ে উঠতে দেয়া কংক্রিটের উলম্ব দালান-জঙ্গল-গ্রাস!…

  2. ফারুক ওয়াসিফ - ১৯ জানুয়ারি ২০১০ (১২:৪০ অপরাহ্ণ)

    খেলা শুরু হয়েও গেছে, সাহায্যের আগেই সরকারি গুদাম লুট করা, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খালি করার দায়ে ইতিমধ্যে সেখানে ‘লুটেরা’ লটকানো শুরু হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে এনজিওদের এইড-কার্যক্রমের সামরিকীকরণের। জাতিসংঘ তো চিরকালই ধোয়া তুলসীপাতা।

    খেয়াল করবার বিষয় এটাই যে, আজকের সিভিকো-মিলিটারি-কর্পোরেট শাসনব্যবস্থায় কোনো কিছুই আর নির্ভেজাল নয়।

  3. Pingback: Global Voices Online » Bangla blogs: Grieving for Haiti and Lessons Learned

  4. Pingback: Bangla blogs: Grieving for Haiti and Lessons Learned | HAITI.ORG.BR

    • ফারুক ওয়াসিফ - ২৩ জানুয়ারি ২০১০ (১২:১১ অপরাহ্ণ)

      ধন্যবাদ অনেক, লেখাটা অন্যত্র প্রচার করার জন্য।

  5. রায়হান রশিদ - ২২ জানুয়ারি ২০১০ (২:০৩ পূর্বাহ্ণ)

    হাইতিতে ত্রাণকার্য নিয়ে ফিলিস বেনিস এর একটি লেখা। আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে পেন্টাগনের সামরিক হিসাব নিকাশ মানবিক সাহায্য থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। লেখাটির কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি:

    Obama made all the right commitments to the Haitian people, promising emergency assistance AND that we would stand with them into the future. He made clear that it is indeed the role and responsibility of government to respond to humanitarian crises, and that’s a good thing (even if he also anointed his predecessors to lead a parallel privatized response).

    But the reality is, on the ground, some of the same problems that we’ve seen so many times before have already emerged, as U.S. military forces take charge, as the United Nations is pushed aside by overbearing U.S. power, as desperate humanitarian needs take a back seat to the Pentagon’s priorities. Saturday morning’s New York Times quoted Secretary of State Clinton saying, “we are working to back them [the Haitian government] up but not to supplant them.” That was good. But then she said she expected the Haitian government to pass an emergency decree including things like the right to impose curfews. “The decree would give the government an enormous amount of authority, which in practice they would delegate to us,” Clinton said. So much for “not supplanting them.”

    Already the U.S. military controls the airport. That means, according to the UN’s World Food Program, that of the 200 flights in and out each day, “most of these flights are for the United States military. Their priorities are to secure the country. Ours are to feed.” The WFP’s planes full of food, medicine, and water were unable to land in on Thursday or Friday, because the priority was U.S.-defined security. On Saturday at least two Mexican planeloads of humanitarian supplies were turned away while several more planeloads of U.S. troops landed.

    • ফারুক ওয়াসিফ - ২৩ জানুয়ারি ২০১০ (১২:২০ অপরাহ্ণ)

      বাংলাদেশেও সিডরের সময় মার্কিন যুদ্ধজাহাজ এসেছিল, উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্যসেবার নামে মেরিন সেনারা গ্রামাঞ্চলে ক্যাম্প করে থেকেছে গত বছরের শেষাশেষি।

      সাহায্যের সামরিকীকরণ, উন্নয়নের বাণিজ্যিকীকরণ এবং তার মাধ্যমে বৈশ্বিক ইম্পিরিয়াল মিলিটারি স্ট্রাকচারকে প্রসারিত করাটা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সর্বদাই উপেক্ষিত। জলবায়ু বিপর্যয়ের বাংলাদেশে এর পুনরাবৃত্তি আমাদের হয়তো দেখতে হতে পারে।

  6. তানবীরা - ২২ জানুয়ারি ২০১০ (৪:২৮ পূর্বাহ্ণ)

    আরেকটা অসাধারণ লেখা ফারুক। আজকে ডাচ নিউজ পেপারে ছবি দেখছিলাম মার্কিন বিমান বাহিনী হাইতির রাজপ্রাসাদের আঙ্গিনায় কিভাবে ল্যান্ড করেছে আর মার্কিন সৈন্যরা কী বীরদর্পে সেখানে ঘুরছে!!!

    • ফারুক ওয়াসিফ - ২৩ জানুয়ারি ২০১০ (১২:২০ অপরাহ্ণ)

      ধন্যবাদ তানবীরা।

  7. Pingback: Global Voices na srpskom » Bangladeški blog: žaljenje za Haitiem i naučena lekcija

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.