লোকটা ডাকাত সর্দার, ময়মনসিংহ অঞ্চলের একদার যাত্রার হিরো। শেষ তাকে দেখি ঢাকা জেলখানার হাজতিদের ওয়ার্ডের পাহারার দায়িত্বে। আমরা তার অধীন ছিলাম। তার প্রাণে গান ছিল এবং তার যাবজ্জীবন হয়েছিল। ডাকু রমজানের জন্যই রাতটা মাঝেমধ্যে রঙ্গিন হয়। অ্যালুমিনিয়ামের থালায় আঙুল ঠুকে গান গাওয়া ছিল তার রাতের মেরাজ। চোখ বন্ধ করে গাইতে গাইতে সে লুপ্ত হতো নিজের মধ্যে। কোনোদিন সে গাইতো মৈমনসিংহ গীতিকার ‘আলোমতি ফুলকুমার’ থেকে,
‘রাজার ফুল বাগানে যাই, একটু হাঁটিয়া বেড়াই….আমার মনে শান্তি নাই।’
গাইতো,
‘বন্ধু থাকো, বন্ধু থাকো,
বন্ধু থাকো আমার সনে
বন্ধু থাকো ও বন্ধু থাকো
বন্ধু থাকো তোমার ঢংয়ে।’
আবার কোনোদিন গাইতো এই বিষন্ন ব্যালাড,
‘যে আমারে আদর করে রে,
নাম রাইখ্যাছে আদরিণী
আমি কী তার আদর জানি-ই-ই-ই…’
যার অর্থ আমার নাম, তার নাম কী তা আমি জানি? আত্মপ্রেমে ‘আমি’ মাত হয়ে থাকি, কিন্তু আমার ‘আত্ম’ কী তা কি আমি জানি? তাহলে কার জন্য ‘আমি’ প্রাণপাত করি? একদা ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের ৩২ নং খাতা ওয়ার্ডের সর্দার রমজান ডাকাত এই সমস্যায় জাগ্রত হতো; আমি আজ সেই সমস্যায় লুপ্ত।