দীর্ঘ প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর

প্রশ্নগুলো অত্যন্ত দীর্ঘ। কিন্তু উত্তর খুবই সংক্ষিপ্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, যে জাতি রক্তবন্যা বইয়ে রাষ্ট্র স্বাধীন করেছিল, সে জাতির ভাগ্যে আজ এত দুর্ভোগ কেন? কেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছতে এত হোঁচট খেতে হচ্ছে। আর উত্তর হচ্ছে­ কিছুই হয়নি। কিছুই হচ্ছে না। কিছুই হবে না। যেমন ছিল তেমনি থেকে যাচ্ছে সবকিছু।

ঈদের ছুটি শেষ হলো। এখন দেশে চলছে দূর্গা পূজার উৎসব। ঈদে বেশকিছু টিভি অনুষ্ঠান দেখলাম। নন্দিত নাট্যকারের একটি নাটক দেখলাম। এর নাম ‘মহান চৈনিক চিকিৎসক ওয়াং পি’। হাসির নাটক। নাট্যকার খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিলেন দেশ যেমন ছিল তেমনি অবস্খায় ফিরে যাচ্ছে। অভিনেতা ডা. এজাজ ছিলেন ‘মহান চৈনিক চিকিৎসক’। একটি ভণ্ড চিকিৎসকের চরিত্রে। নাটকের শেষ দৃশ্যে তিনি ‘থু’ বলে শেষ করেন তার সংলাপ।

হ্যাঁ, সবাই তাদের সেই পুরনো চরিত্রে ফিরে যাচ্ছে। মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজরা। নষ্ট রাজনীতির পালে এখন নতুন হাওয়া। প্রশিকার ড. কাজী ফারুক নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ‘সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন’। কারা এই দেশের নাগরিক? লুটেরা বণিক শ্রেণী, নাকি শোষিত মজলুম মানুষ, যারা ঘামে-শ্রমে কাটান প্রতিদিন? এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। যারা যা করার কথা নয় তারাই তা করছে। সবকিছুই নাগরিক অধিকার। আর সে অধিকারে সুশীল ভাবনার ছড়াছড়ি। এই সুশীল ভাবনা আপামর মানুষের কোন কাজে আসে কি না সেদিকে নজর কারও আছে বলে মনে হয় না। মনে না হওয়ারই কথা। কারণ যারা শোষণ করে তাদের শ্রেণী চরিত্র একই।
সমাজে হোক আর রাজনীতিতে হোক। এরা মনে করে জনগণ তাদের তাঁবেদার। যা চাপিয়ে দেয়া হবে জনগণ তা মেনে নেবে। মেনে নেয়ও জনগণ। না নিয়ে উপায় থাকে না। মাঝে মাঝে জনতা বিদ্রোহীও হয়। জন্ম দেয় নতুন নতুন ফুলবাড়ীর।

নতুন অফিসে যাত্রা শুরু করেছে বিএনপির রাজনীতি। হাওয়া ভবনের আদলেই অনেকটা। এখন শুধু তারেক জিয়া নেই। এটি সভানেত্রী বেগম জিয়ার কার্যালয়। কথা ছিল শফিক রেহমানের বাসাটি ব্যবহার করা হবে অফিস হিসেবে। তা এখন বাদ দেয়া হয়েছে পত্রপত্রিকার সমালোচনার মুখে। বিএনপি ভেতরে ভেতরে রাজনীতিমুখী। কিন্তু আওয়ামী লীগ কি করছে? তাদের অবস্খা যে খুব সুসংহত তা বলা যাবে না। শেখ হাসিনার স্খায়ী জামিন এখনও হয়নি। মামলাগুলোর খড়গের নতুন নতুন দামামা বাজানো হচ্ছে।

[sb]দুই.[/sb]

একটা বিষয় বেশ নিশ্চিত বর্তমান সরকার  বেশকিছু ভিআইপিকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। যে কারণে বেশকিছু মামলার রশি ধরে টান দেয়া হচ্ছে জোরেশোরেই। সাইফুর রহমান ও আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে আবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আবার নেপথ্যে জামিনের ব্যবস্খাও করা হচ্ছে! তাহলে প্রকৃত ঘটনা কি? কি করার চেষ্টা করা হচ্ছে?
যারা মুক্তি পেয়েছেন কিংবা পাচ্ছেন, তারা নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তাও নিশ্চিত নয়। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা নির্বাচনের জন্য তৈরি। সে কথা ভাষণের মাধ্যমে জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু কারা নির্বাচন করতে পারবে কারা পারবে না, বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত।

একদিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে নতুন দল তৈরির কারিগরি, দুটো বিপরীত ধর্মী না হলেও একটা গোপন ইচ্ছে থেকেই যাচ্ছে এর নেপথ্যে। সেটা কি তা জনগণ হয়তো সময় মতোই জানতে পারবে। কিন্তু কথা হচ্ছে তা থেকে দেশের মানুষের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু রয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। আর তা হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানও একসময় ভেবেছিলেন, এদেশে আলবদর রাজাকার আর কোনদিনই রাজনীতি করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে এর উল্টো ঘটনা। জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমেই একটি বিশেষ শ্রেণী ঘাতক দালালদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এদেশে সুদৃঢ় করে। পরে এরা ক্ষমতারও ভাগীদার হয়। আজ এই ২০০৮ সালেও যেভাবে দাবার ঘুঁটি পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে সেই পরাজিত শক্তিকেই পুনর্বাসিত করার সুপ্ত ইচ্ছা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও বর্তমান সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত রহস্যজনক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

কীভাবে ওয়ান ইলেভেনের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে কিংবা আদৌ হবে কি না তা বর্তমান নীতিনির্ধারকরাই বলতে পারবেন। তবে জরুরি অবস্খার ছায়া বহাল রেখে তারা যে নির্বাচন করে পার পেতে চাইছেন তার সত্র ধরেই নির্বাচন পরবর্তী সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। যে পক্ষ পরাজিত হবে তারাই এর রশি টানাটানিতে নেতৃত্ব দিতে পারে। সাময়িকভাবে, কৌশলগত কারণে নির্বাচন থেকে ‘বিরত রাখা’ নেতারা বিভিন্ন মারমুখী ইস্যুর নেতৃত্বে চলে আসতে পারে।

বাংলাদেশ এমন কোন গণতান্ত্রিক দেশ নয়, যে দেশের রাজনীতির বহমানতা পরিশুদ্ধ নেতা তৈরি করে। এদেশে নেতা গণতান্ত্রিকভাবে তৈরি হয় না। নেতা তৈরি হয় দলীয় প্রধানের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে। ফলে নবম জাতীয় সংসদে অনেক বিজ্ঞ নতুন মুখ দেখা যাবে বলে যারা ফুলঝুরি ওড়াচ্ছেন­ তা শেষ পর্যন্ত ফাঁকা বুলি বলেই প্রমাণিত হতে পারে। তার কারণ হচ্ছে, রাতারাতি গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলকে এদেশের মানুষ সহজে গ্রহণ করে না তা বার বারই প্রমাণিত হয়েছে।

বিকল্পধারা, গণফোরাম, এলডিপি, পিডিপি, সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন সবই দু’চারটার বেশি আসন পাওয়ার আপাতত সম্ভাবনা নেই। আমরা জানি রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তারপরও যখন দেখি সহস্র শ্বেতাঙ্গ বারাক ওবামার ছবি বুকে লাগিয়ে দৃঢ় ভাষায় বলছেন­ ‘ইউ আর মাই লিডার,’ তখন মনে হয় মানুষ বৈষম্য দু:শাসনের বিরুদ্ধে জয়ী হবেই। আহা! বাংলাদেশের রাজনীতি যদি সে আলোকে পরিচালিত হতো। সুপ্রিয় পাঠক, শারদীয়া শুভেচ্ছা সবাইকে।

নিউইয়র্ক, ৮ অক্টোবর ২০০৮

ফকির ইলিয়াস

একটা সূর্য চাই, একটা চন্দ্র চাই / নদীর নীরব নগরে পসরা সাজাই ।।

২৮ comments

  1. রায়হান রশিদ - ১১ অক্টোবর ২০০৮ (১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

    শারদীয় শুভেচ্ছা আপনাকেও।
    আপনার তালিকায় ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ যোগ করে নিলেই সর্বনাশের ষোল কলা পূর্ণ হয়। আমি সম্ভবত সেই সব নিন্দুকদের দলে যাদের কাছে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ (শব্দটা কেন যেন বরাবরই আপত্তিকর অশ্লীল মনে হয়েছে) কখনই ইতিবাচক কিছু মনে হয়নি। ‘সংস্কার’, ‘দূর্নীতিদমন’ ইত্যাদি বিষয়গুলোতেও তেমন উত্তেজিত হবার মত কিছু খুঁজে পাইনি কখনো। বরং উল্টোটাই আশংকা করেছি সবসময়। সুতরাং, তথাকথিত ‘ওয়ান-ইলেভেন’ এর কাছে প্রত্যাশা খুব বেশী ছিলনা বলেই হয়তো হতাশাবোধটা কিছুটা কমই অনুভূত হচ্ছে।

    • ফকির ইলিয়াস - ১২ অক্টোবর ২০০৮ (৩:০৩ পূর্বাহ্ণ)

      কিন্তু তারা তো বলেছিলেন, দোষীদেরকে শাস্তি দেবেন । বিচার করবেন।
      তা করলেন না বা করছেন না কেন ?
      জাতি তো একটা পরিবর্তন আশা করেছিল।কোথায় গেল সেসব বুলি ???

  2. অলকেশ - ১১ অক্টোবর ২০০৮ (১১:৫২ অপরাহ্ণ)

    @ফকির ইলিয়াসঃ আপনি বলেছেন;

    কীভাবে ওয়ান ইলেভেনের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে কিংবা আদৌ হবে কি না তা বর্তমান নীতিনির্ধারকরাই বলতে পারবেন।

    তাহলে আপনি কি মনে করেন, ওয়ান ইলেভেনের কোন চেতনা ছিল? কি সেই চেতনা? কারা সেই চেতনায় উজ্জীবিত? যদি একটু আলোচনা করেন তাহলে উপকৃত হতাম, এবং আপনার আলোচনার সুত্র ধরে এগুনো যেত।

    • ফকির ইলিয়াস - ১২ অক্টোবর ২০০৮ (৩:০৮ পূর্বাহ্ণ)

      সে চেতনা ছিল , লুটপাটকারী সামন্তবাদীদের বিচার করা।
      সে চেতনা ছিল , মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা করা।
      ওয়ান ইলেভেনের নায়কদের শুরুর ভাষন গুলো দেখুন।
      জনগণ তা মেনেছিল। ”এখন সময় জনগণের”
      এটা ছিল শ্লোগান টিভিতে।
      সে সময় এতো সহজে চুপসে গেলো কেনো ?

  3. অলকেশ - ১২ অক্টোবর ২০০৮ (১২:১৫ অপরাহ্ণ)

    প্রথমতঃ দেখতে হবে, লুঠপাঠকারী কারা ছিল? এরা কেবল কোন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিমাত্র ছিল না।

    এরা ছিল একটা রাজনৈতিক শক্তি।

    যারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল বটে, কিন্ত ক্ষমতার চুড়ান্ত অপব্যবহার করে দেশের সম্পদ রাষ্ট্রীয় ভাবে লুটপাট শুরু করেছিল। নেতারা ব্যক্তিগতভাবে বিত্ত বৈভব গড়ে তুলেছিল, তাদের অনুসারীরাও নিজ যোগ্যতা অনুসারে এই রাষ্ট্রীয় লুটপাটে অংশ নিয়েছিল। ক্ষমতার এই নানা বিচিত্রমুখী অপব্যবহারের অভিযোগ প্রচারমাধ্যমের বদৌলতে আমরা জেনেছি।

    একটা সমাজ যখন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের শিকার হয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে চরম অনিষ্ট তৈরী করে তার বিকল্প কি? অবশ্যই একটা পালটা রাজনৈতিক শক্তির উত্থান। সেই রাজনৈতিক শক্তি যে মাত্রায় শক্তিশালী হবে দুর্বৃত্তায়নের সম্ভাবনা সমমাত্রায় কমতে থাকবে। এর বাইরে গিয়ে, কালকেই দুর্নীতির বারোটা বাজিয়ে ফেলবো, এই ধরনের ঘোষণা যারা দেয়, তারা পুরোপুরি মতলববাজ। আর এই ঘোষণা যারা বিশ্বাস করেছিল, তারা বেশিরভাগই সাধারন মানুষ। দুর্নীতির এই সব নোংরা গল্প শুনতে শুনতে, এই নষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতি যাদের ঘেন্না ধরে গিয়েছিল। ঠিক এই সু্যোগটাই নিয়েছিল সেই তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের প্রবক্তরা। গত ৩৭ বছরে, জাতির সাথে সবচেয়ে বড় প্রতারনার দলিল এটি, একটি Doctrine of mass deception.

    দ্বিতীয়তঃ দেখতে হবে লুটপাট উৎপাটন করার দায়িত্ব তাদের দেয়া হয়েছিল কিনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কথা তো আরো পরে। মানুষ ২২ জানুয়ারীর নির্বাচনকে সাজানো মনে করা শুরু করেছিল, ফলে সাংবিধানিক সীমার মধ্যে থেকে একটি আপাত গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিয়ে তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা ছিল। দেশের ত্রাতা সাজতে তাদের কেউ বলেন নি। ভেবে দেখুন, রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি মানুষের অবিশ্বাস ও সন্দেহকে পুঁজি করে তারাই একের পর এক কর্মসূচী ও এজেন্ডা হাজির করে যাচ্ছিল। ব্যাপক চাল সংকটের পাশাপাশি প্রতিদিনকার খাওয়া পরার সামগ্রীই যখন মানুষের জুটছিল না তখন মানুষের টনক নড়ল। গত অগাষ্টে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিক্ষোভের মধ্যে সাধারন জনগনের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহনের একটা বড় কারন ছিল এটা।

    ফলে, লুটপাটকারী একটা রাজনৈতিক গোষ্টীকে এসে অপর একটা অ-রাজনৈতিক শক্তি উচ্ছেদ করে দেবে এমন দৃষ্টান্ত দুনিয়াতে বিরল। যারাই এই কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে, তারাই দুনীর্তির নতুন নতুন কলাকৌশল শিখিয়ে গিয়েছেন। আমাদের দেশেই এই উদাহরন আছে, বাইরে তাকানোর প্রয়োজন নেই।

    এই কারনেই, ওয়ান ইলেভেনের প্রবক্তরা, একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে হংকং – সিংগাপুর জাতীয় একটা দৃশ্যতঃরাজনীতিমুক্ত রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়। দেশীয় চেম্বার অফ কমার্সের একটা প্রভাবশালি অংশ, বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর একটা সুবিধা ভোগি অংশ এবং সুবিধাভোগী মধ্যবিত্ত ও নব্য গজিয়ে উঠা উচ্চ মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তদের মুখপত্র সুশীল সমাজের একটা প্রভাবশালী অংশ এবং শক্তিশালি কিছু মিডিয়া এবারের মুল খেলোয়াড়। এদের আন্তর্জাতিক ভাবে হাওয়া দেয়ার কাজটি করছে বিদেশী কিছু দাতা গোষ্টি।

    এই ওয়ান ইলেভেনের প্রবক্তরা নতুন নতুন অধ্যাদেশ জারী করে তাদের গত দু’বছরের সংবিধান বিরোধী কাজগুলো জায়েজ করতে চায়, আইনসম্মত উপায়ে বেআইনি ও নৈতিকতা বিরোধী কাজ গুলো সেরে ফেলতে চায়। এই কাজ সুষ্ট ভাবে করতে না পারলে তারা নির্বাচন সহজে করবে বলে মনে হয় না। সে যা হোক, ওয়ান ইলেভেন আমার কাছে এক নতুন ধরনের রাষ্ট্রীয় ধাপ্পাবাজির, মহাপ্রতারনার ও আশা ভঙ্গের একটি দিন।

    • ফকির ইলিয়াস - ১২ অক্টোবর ২০০৮ (৫:২৮ অপরাহ্ণ)

      ধাপ্পাবাজি বলে বিবেচিত হতেই পারে। কেউ প্রতারক। কেউ ত্রাতা। মানুষ
      সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু ত্রাতারা শেষে ভয় পেয়ে গেছেন মনে হচ্ছে।
      যে দেশে পরিকল্পিত ভাবে মানুষকে শিক্ষার আলো থেকে দূরে রাখা হয়,
      সে দেশে বিবেকি মানুষ গড়ে উঠা দু:সাধ্য কাজ। সেটা ই চেয়েছে প্রধান
      দল গুলো সব সময়। এ অবস্থা কাটাতে সম্মিলিত মানুষের ঐক্য দরকার।

    • নীড় সন্ধানী - ১৩ অক্টোবর ২০০৮ (১০:০৫ পূর্বাহ্ণ)

      এই কারনেই, ওয়ান ইলেভেনের প্রবক্তরা, একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে হংকং – সিংগাপুর জাতীয় একটা দৃশ্যতঃরাজনীতিমুক্ত রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়।

      এতে অসুবিধে কার? সিংগাপুরের মতো হতে চাওয়ার মধ্যে খারাপ কিছু তো দেখছি না। গনতন্ত্রের নামে সামরিক বেসামরিক কিছু ধান্ধাবাজ লোকের কাছে দেশকে লীজ দেয়ার চেয়ে সিঙ্গাপুরের মতো রাজনীতি মুক্ত দেশ হলে ক্ষতি কি? রাজনীতি কার খাদ্য? কার স্বার্থরক্ষায় রাজনীতি? খালেদা হাসিনা কার স্বার্থ রক্ষা করার জন্য রাজনীতি করে?

      ১/১১ এর পর আমাদের মতো পরিবর্তনে বিশ্বাসীরা ভেবেছিল এবার নতুন কিছু হবে। ফকির ইলিয়াস কোন চেতনার কথা বলেছেন সেটা বোঝার জন্য তথাকথিত গনতান্ত্রিক ইউটোপিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি হলফ করে বলতে পারি আমরা কেউ বাংলাদেশে একদিনের জন্যও গনতান্ত্রিক সমাজে বাস করিনি। আমি অন্ততঃ জানি না বাস্তবে ঠিক অবস্থাকে গনতান্ত্রিক ব্যবষ্থা বলে। আমার বাবাও দেখেনি, দাদাও না।

      এখানে যেটাকে রাজনীতিবিদরা সুবিধাজনকভাবে গনতন্ত্র বলে, সেটাকে আমার সভ্যতা মনে হয় না। এই গনতন্ত্র জনতার স্বার্থের চেয়ে নেতার স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় বেশী। কিন্তু অগনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উন্নত কিছু দেশে যাবার থাকার জানার সৌভাগ্য হওয়ায় বুঝেছি গনতন্ত্রের নামে কত বছর কোটি কোটি ভুখা মানুষের সাথে প্রতারনা করে যাচ্ছে আমাদের গনতন্ত্রের মহাজনরা। ওসব জাতীয় বাটপারদের হাতে দেশটাকে লুটপাট করতে দেয়ার অধিকারকে যদি গনতন্ত্র বলা হয়, আমি সে গনতন্ত্রের নিকুচি করি। সোজা কথা।

      তবে বাস্তবতা হলো ১/১১ আমাদের শুধু স্বপ্নই দেখিয়েছিল। বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা ছিল না তাদের। এখন মনে হচ্ছে সে স্বপ্নের স্রষ্টারাও অবশেষে হেরে গেছেন। হয়তো আগামী বছর আমরা আবার সেই ‘গনতান্ত্রিক’ কুপমুন্ডকতার ভেতর পতিত হতে যাচ্ছি।

      • ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৩ অক্টোবর ২০০৮ (৯:০৫ অপরাহ্ণ)

        @ নীড় সন্ধানী

        গণতন্ত্রের মুন্ডুপাত করলেন। সে আপনি করতেই পারেন। গণতন্ত্রের এটাই মাহাত্ম যে চাইলে যে কেউ এর মুন্ডুপাত করতে পারেন, নির্ভয়ে। কিন্তু এর পরীক্ষিত বিকল্প হিসেবে এর চাইতেও কার্যকর কোন ব্যবস্থার রূপরেখা যদি না দেন তাহলে তো আর আলোচনা চলতে পারেনা। শুধু রাগ ক্ষোভ প্রকাশ করে কি লাভ বলুন?

        ১/১১’র স্বপ্ন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দুটি শব্দ ব্যবহার করলেন গণতন্ত্রের অনুষঙ্গ হিসেবে: “ইউটোপীয়” এবং “কুপমন্ডুকতা”। এ বিষয়ে বরং অন্যরাই বলুক। আমি শুধু কয়েকটি বিষয় জানতে চাইবো আপনার কাছে:

        ১) একটু ব্যাখ্যা করবেন ‌- এই স্বপ্নের স্বরূপ কি?

        ২) এই স্বপ্নদ্রষ্টারা কারা? একটু নাম পরিচয় ধরে বলবেন কি যাতে আমরাও একটু চিনতে পারি তাদের?

        ৩) একটি জাতিকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে স্বপ্ন (এমনকি মিছেমিছিভাবে) দেখাতেও কিছু ম্যানডেট এবং সেইসাথে গণসম্পৃক্ততার ট্র্যাক রেকর্ড লাগে। আপনি নিশ্চিত আপনার তথাকথিত স্বপ্নদ্রষ্টাদের তা ছিল এবং আছে?

        ৪) স্বপ্নদ্রষ্টাদের যে স্বপ্নের কথা আপনি বলছেন, তা যে গোটা দেশের মানুষের স্বপ্ন, তা আপনাকে কে বললো? কি প্রক্রিয়ায় এই অসাধারণ তথ্যটি জানা গেল?

        ৫) গণতন্ত্রের বিকল্প (‘তথাকথিত’, আপনার ভাষায়) যে শাসনব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং দেখছেন, আপনি নিশ্চিত যে সেটিও অলীক ইউটোপীয় কোন স্বপ্ন নয়?

        ৬) আপনাকে কে বললো যে রাজনীতিবিদহীন সরকারের (যেমন, সামরিক/তত্ত্বাবধায়ক) আমলে দূর্নীতি বন্ধ থাকে, কিংবা আইনের শাসনের উন্নতি হয়?

        ৭) আপনি নিশ্চিত আপনি চান বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের মত হোক?

        সবশেষে শুধু বলবো, স্বপ্ন দেখা বা দেখানোই শেষ কথা না। চাইলে আমরা যে কেউ যে কোন কিছু স্বপ্ন দেখতে পারি। যেমন ধরুন আমি স্বপ্ন দেখতে পারি নেপচুন পৃষ্ঠে বসে নেফারতিতিকে নিয়ে মিষ্টি প্রেমের কবিতা লিখছি। কিংবা ধরুন, আপনি স্বপ্ন দেখতেই পারেন প্যারেড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে আছেন, আর আপনাকে স্যালুট ঠুকে কুচকাওয়াজ করে চলে যাচ্ছে (জনগণের টাকায়) সুসজ্জিত তিন বাহিনী, জনগণকে ঠেঙ্গাতে। তাতে কি কিছু হয়? এখন আমাদের কারো (অলীক) স্বপ্নই যদি সফল না হয়, তাহলে তাকে কি ‘স্বপ্নভঙ্গ’ বলা ঠিক হবে? স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাফল্য/বিফলতা তো অনেক দূরের কথা!

        • নীড় সন্ধানী - ১৪ অক্টোবর ২০০৮ (৫:০৩ পূর্বাহ্ণ)

          ১) একটু ব্যাখ্যা করবেন ‌- এই স্বপ্নের স্বরূপ কি?

          সোজা কথায়, স্বপ্নটা ছিলো পরিবর্তনের। যে ধারার রাজনীতি ২২শে জানুয়ারীর মতো মারমুখী নির্বাচনের দিকে জাতিকে ধাবিত করে, সে ধারা পরিবর্তনের স্বপ্ন। যে পরিবর্তন একাত্তরের চেতনাকে যথাযথ সম্মান দেবে। যে পরিবর্তন সুস্থ রাজনীতির ধারা চালু করবে। উপমহাদেশীয় অসুস্থ রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন।

          ২) এই স্বপ্নদ্রষ্টারা কারা? একটু নাম পরিচয় ধরে বলবেন কি যাতে আমরাও একটু চিনতে পারি তাদের?

          স্বপ্নের স্রষ্টা বলেছি বোধ হয় কথাটা স্বপ্নদ্রষ্টা নয়। স্বপ্ন তো দেখেছি আমরা মূর্খ জনতা। যারা দেখিয়েছে তারা জাতিকে ২২জানুয়ারীর নির্বাচন থেকে রক্ষা করেছে। তাদের নাম পরিচয় বোধহয় আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন।

          ৩) একটি জাতিকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে স্বপ্ন (এমনকি মিছেমিছিভাবে) দেখাতেও কিছু ম্যানডেট এবং সেইসাথে গণসম্পৃক্ততার ট্র্যাক রেকর্ড লাগে। আপনি নিশ্চিত আপনার তথাকথিত স্বপ্নদ্রষ্টাদের তা ছিল এবং আছে?

          স্বপ্ন দেখাতে কোন ম্যান্ডেট লাগেনা। ম্যান্ডেট পেলেই সবকিছু হালাল হয়ে যায় বলেই এদেশে হাজারী-ফালু-লাল্টু-বল্টুদের মতো রাজনীতিবিদেরা জাতির ঘাড়ের উপর চেপে বসে আছে। ৩য় বিশ্বের প্রায় সব দেশে গনতন্ত্র এবং উন্নয়ন বিপরীতমুখী ধারা। আপনাকে উন্নয়ন বেছে নিতে হলে গনতন্ত্র বাদ দিতে হবে। কোরিয়ার উদাহরন নিন কিংবা ভিয়েতনামের অথবা তাইওয়ানের বা মালয়েশিয়ার। সব দেশেই কিছু না কিছু অবিচার আছে। সেটা বৃটেন আমেরিকাতেও আছে।

          ৪) স্বপ্নদ্রষ্টাদের যে স্বপ্নের কথা আপনি বলছেন, তা যে গোটা দেশের মানুষের স্বপ্ন, তা আপনাকে কে বললো? কি প্রক্রিয়ায় এই অসাধারণ তথ্যটি জানা গেল?

          গোটা দেশের মানুষের স্বপ্ন কী তা জানার জন্য গনভোট লাগবে। কিন্তু নিজে পরিবর্তন চান কিনা, সেটা আপনি নিজেকে ১/১১ পুর্ব দিনগুলোতে স্থাপন করে জেনে নিতে পারেন। আমার স্বপ্নটা ছিল পরিবর্তনের স্বপ্ন। সেটা মঈন ফকরুর স্বপ্ন না। ওদের কী স্বপ্ন ছিল আমার জানার উপায় নেই।

          ৫) গণতন্ত্রের বিকল্প (’তথাকথিত’, আপনার ভাষায়) যে শাসনব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং দেখছেন, আপনি নিশ্চিত যে সেটিও অলীক ইউটোপীয় কোন স্বপ্ন নয়?

          হয়তো ইউটোপিয়াই। কারন মান্দার গাছে আম-কাঠাল ধরে না এটা নিশ্চিত।

          ৬) আপনাকে কে বললো যে রাজনীতিবিদহীন সরকারের (যেমন, সামরিক/তত্ত্বাবধায়ক) আমলে দূর্নীতি বন্ধ থাকে, কিংবা আইনের শাসনের উন্নতি হয়?

          দুর্নীতি বন্ধ থাকে না, তবে নিয়ন্ত্রনে থাকে। দুর্নীতি এমনকি টেবিলের নীচে থাকলেও হতো। কিন্তু এদেশে দুর্নীতিবাজ লোক তথাকথিত গনতন্ত্রের ফোকরে ঢুকে জাতীয় সংসদের নেতা হয়, তাদের ভাষন আমাদের সংসদে হজম করতে হয়। রাজনীতিবিদহীন সরকারে আইনের কী অবস্থা সেটা ভিয়েতনামের মতো দরিদ্র দেশে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। যদিও তাদেরকে দরিদ্র বললে আমাদেরকে কী বলা উচিত সেটা ভাবার বিষয়।

          ৭) আপনি নিশ্চিত আপনি চান বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের মত হোক?

          অতবড় স্বপ্নের স্পর্ধা নেই। কিন্তু অর্থনীতির সুচকে অন্ততঃ ভিয়েতনামকে অতিক্রম স্বপ্ন দেখি।

  4. raihan_sayeed - ১৩ অক্টোবর ২০০৮ (১২:৪১ অপরাহ্ণ)

    বহুদিন আগে এক মুসল্মান বাদশাহ (যদিও ইসলামে বাদশাহি ব্যবস্থা নাই) বাংলাদেশের রাজধানি ঢাকায় বেড়াতে এসে উৎফুল্ল হয়ে বলেছিল আরে এটা তো মসজিদের শহর। গরবে আমাদের বুকের ছাতি ৩৩” থেকে ৯৯” হয়ে গিয়েছিল। আত্মপ্রসাদের আনন্দে আমাদের মন বাগ বাগ করে উঠেছিল। বাদশাহ নামদারের উক্তি মতাবেক আমাদের ঢাকা শহরে প্রিথিবির সব শহরের তুলনায় বেশি মসজিদ আছে। অতএব বাদশাহ কে আমরা এতটুকু যে আমাদের ঢাকায় তথা বাংলাদেশে মুসল্লির সংখাও তত বেশি। আসলে কথাটা বাস্তব সত্য। ঢাকার সব মসজিদ এ নামাজের সময় মুসল্লি দ্বারা ভরে ও যেয়ে থাকে।

    আর একবার এক আমেরিকান পর্যটক ঢাকা কে দেখে বলেছিল ” it is the city of beggars”. ব্যপারটা আমাদের
    কাছে অবশ্য গা সওয়া হয়ে গেছে বলে ভিক্ষুকদের এই ক্রমবর্ধমান অস্তিত্ব অতটা নজরে আসেনা। বিশেষ করে প্রত্যেকে (দুই একজন ছারা) যখন রাতারাতি গাড়ী-বাড়ী ও ব্যংক ব্যালান্স এর দিকে নজর দিচ্ছি। তবে আফসোস হচ্ছে যে, আমেরিকার মতো এমন ধনী দেশের লোক হয়ে ঐ ট্যুরিষ্ট ব্যটার নজর এত ছোট হোল কেন যে ঢাকায় এত সুন্দর সুন্দর প্রাসাদ সম অট্টালিকা থাকতে, এমন সুন্দর সুন্দর রাস্তা থাকতে, জিনিসের দাম এমন পারিস এর স্টাইলের আকাশ চুম্বি দাম থাকতে, তার নজরে পড়ল নাম গোত্রো হিন ওই ভিক্ষুক গুলো। অবশ্য কথাটা বাস্তব সত্য।

    এবার ঢাকা সম্পর্কে আরেকটা উক্তি শুনুন। একবার পাকিস্তানের বড় শহর করাচি তে গিয়ে এক মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে গিয়েছি, ইমাম ছিলেন পাঠান মওলানা। তিনি ওয়াজ করতে করতে ঢাকা সম্পর্কে যা বললেন তাতে এতুকু বোঝা গেল যে “ঢাকা আলেম কা শহর হ্যায়”। ঢাকায় এত মসজিদ আর এ পাড়ায় ও পাড়ায় প্রতি রাতে রাত ভর মাইক সহকারে এত ওয়াজ হয় অথবা কোর আন খানি চলে তাতে এ ধারনাটা মিথ্যা হয় কি করে।

    হাল আমলে এক বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশ ঘুরে যেয়ে তার নিজস্ব মতামত ব্যাক্ত করেছেন যে এই দেশের সবাই নাকি জচ্চোর, এ কথাটাও মিথ্যা নয়। বাংলাদেশের যে দিকে তাকাবেন দেখবেন শুধু ভেজাল, ঘুষ, মিথ্যা চুরির দুনিয়া, এ দেশে জার ক্ষমতা বেশি সে পুকের চুরি করছে আর সুযোগ নেই সে চুরির জন্য পই পই করে ঘুরছে। তাই সেই সাংবাদিক বেচারা দোষ নাই। সে হয়ত রিক্সাওালা থেকে উপর অয়ালা পর্যন্ত সবার কাছে ঠকে যেয়েই এদেশ সম্বন্ধে তার মতামত ব্যাক্ত করেছে যে এদেশের সবাই জচ্চোর।

    আবার আমরা মানে বাঙালিরা জানি যে এদেশের কোথাও মসজিদ এ নামাজ পরতে গেলে জুতা বাইরে রেখে যাওয়া যায় না। আমরা কোন মসজিদ এ নামাজ পড়তে গেলে জুতাজোড়াকে বগল দাবা করে ঠিক সিজদা করা জায়গার সামনে রেখে নামজ পড়ি। কারন মসজিদ থেকে জুতা চুরি হবেই, তা এমনি নিশ্চিত ব্যাপার।

    এখন আপনি এই টুকরো টুকরো বাস্তব ঘটনা গুলোকে এক নজরে চিন্তা করে দেখবেন এলজেবব্রার সমীকরনের মত আপনার মানস নেত্রে ভেসে উঠবে দেশে যতো বেশি মসজিদ তত বেশি জুতাচোর। নামাজির সংখ্যা যত বেশি , মিথ্যুক , জুাখোর, ঘুষখোরের সংখ্যা ও তত বেশি। ওয়াজ যত বেশি হয়, কালোবাজারি, ভেজাল, আর মুনাফাখোর তত বেশি হয়, জিনিস পত্রের দাম তত বাড়ে, আর রোজা, ঈদ াসলে তো কথাই নাই। এর ফলে আমাদের সমাজের উপর প্রতিক্রিয়া হচেছ যে চক্রবৃদিদ্ হারে ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যত বংশধর স্বাস্থহীন শ্রীহীন, কংকালসার হচ্ছে। যারা সৎপথে থাকার চেষ্টা করছে, তাদের বাধ্য করা হচ্ছে অসৎ পথে চলতে। দূর্নীতি তে ছেয়ে যাচ্ছে দেশ, মানে আমাদের সামাজিক স্বাস্থ্য দিন দিন রুগ্ন থেকে রুগ্নতর হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পুরো জাতীয় জীবন থেকে বিবেক, নৈতিকতা, ও মানবিকতা আস্তে আস্তে লোপ পাচ্ছে। আমরা প্রত্যেকেই মানসিক দিক দিয়ে হিংস্র পশুতে পরিনত হয়ে যাচ্ছি।

    বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে তুরস্কের এমন অবস্থা হয়েছিল একবার, তখন তাকে বলা হতো “Sick Man of the Europe”। আসলে তখন কি তুরস্কের খলিফা সত্যি সত্যি কংকালসার হয়ে পড়েছিল? না কি সেই দেশের সমস্ত লোক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল? আমার তো মনে হয় শারীরিক দিক দিয়ে তারা সবাই মোটা সোটা নাদুস নুদুস ছিল। নামাজ, রোজা ও তারা নিয়ম মত করতো যেমন এখানে আমরা করি। কিন্তু তাদের সব চাইতে বড় অভাব যে জিনিসটার ছিল, তা চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিক দৃঢ়তা। মানসিক দিক দিয়ে তারা হয়ে গিয়েছিল রুগ্ন, এবং সেই রুগ্নতা ধরেছিল খলিফা থেকে সমস্ত কর্মচারি, ও দেশের ৯০% লোককে, তাই বলা হতো ইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তি। আমরাও আজ রুগ্ন হয়ে পড়েছি, আমাদের বাঙালী জাতীর ৯৯% লোকের চরিত্র বলে আর কিছুই নেই। চতুর্দিকে চলছে ফাঁকি, অন্যায়, অবিচার। এজন্য জনসাধারন দোষ দিচ্ছে সম্পু্র্ন ভাবে সরকার কে, যে, সরকার দেশটাকে ধংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর সরকার দোষ দিচ্ছে জনসাধারন কে, তারা বলছে, আমরা তো ঠিক মতোই দেশের উন্নতির জন্য কাজ করছি, কিন্তু জনগন ফাঁকি দিয়ে, চুরি করে আমাদের নেক উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হতে দিচ্ছে না আসল ব্যাপারটা সবই ঠিক। কাগজে কলমে দেশের উন্নতি করছি ঠিকই, মুখে মুখে দূর্নীতির শ্রাদ্ব করছি ঠিকই, কিন্তু কোনরুপ সুযোগ পেলে কেউই বাম হাতে নিজের পকেট ভরতে ছাড়ছে না। দেশের এই দুরবস্থাকে রোধ করার জন্য যদি বর্তমান সরকারি কর্মচারিদের পুরো সেট কে বাতিল করে জনসাধারন দের ভিতর থেকে সম্পুর্ন নতুন সেট ভাল করা হয়, তবু দেখবেন প্রসাশন যন্র একই গতিতে ঘুরছে। কারন এই ঘুষ, দূর্নীতি, কালোবাজারি, রোগটা হয়ে গেছে জাতিগত। সুতরাং এর চিকিৎসা না করানো পর্যন্ত সমাজ থেকে এর ব্যধি দুর করা যাবে না। মানুষ বদল করে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
    অনেকে বলে থাকে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো তত মজবুত নয় তাই অভাব বেশি। কিন্তু কথাটার বাস্তব কোন ভিত্তি নাই, ওটা হচ্ছে চুরি করার পক্ষে একটা খোড়া যুক্তি দেখানো। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যাদের কোন অভাব নাই, যে জাতি সেই অভাব কে বরন করে ব্যক্তিগত নয়, জাতিগত ভাবে তা থেকে মুক্তির চেষ্টা করে সে জাতি বড় হতে পারে, শুধু বড় নয়, পুরো বিশ্বে কর্তৃত্ব করতে পারে। আর অপর দিকে আমাদের জাতির যে অবস্থা তাতে বড় হওয়াতো দুরের কথা, অস্তিত্ব টিকে রাখাই দুষ্কর।

    সাধারনত একটি জাতির প্রতিটি মানুষের চরিত্র গড়ে উঠে জীবনের কয়েক পর্যায়ে এবং সামাজিক ব্যবস্থার মাধ্যমে, যেমন সর্বপ্রথম নিজ গৃহে, নিজ পরিবারের আচার ব্যবহার ও সুষ্ঠ শিক্ষার মাঝে। এরপর স্কুল কলেজে শিক্ষা ও শিক্ষকের মাধ্যমে। তারপর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবং শেষ পর্যায়ে কর্মজীবনে আপন কর্তব্য সমাপনের গন্ডির মাধ্যমে। এখন আমাদের দেশের এই সামাজিক স্তর গুলি বিশ্লেষন করলে দেখতে পাই – এই দেশের গুটি কয়েক মাত্র পরিবারে ছেলে মেয়েদের চরিত্র গঠন শিক্ষ দেয়া হয়। আর বেশির ভাগ পরিবারেই ছেলে মেয়েদের কে এই ধরনের শিক্ষা দেওয়ার ব্যপারে উদাসীন দেখা যায়। আবার অনেক পরিবারে চরিত্রহীন হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

    এরপর আসে স্কুল কলেজের শিক্ষা। আজকাল দেশের স্কুল কলেজে শিক্ষার নামে কয়েকটা সর্টিফিকেট দেবার চেষ্টাই চলছে। যে ছেলেটা নোট বই বেশী করে পড়ে পরীক্ষার পাতায় বেশী করে উগরাতে পারবে, সেই সবচাইতে ভালো সর্টিফিকেট পাবে, চরিত্র তার যাই হোক না কেন (নকলের কথাতো বাদই দিলাম)। নৈতিকতা, চরিত্র এগুলো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এখন আর আশা করা যায় না।

    এরপর ধর্মীয় জীবন। আমাদের দেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় জীবন এমনই হীন পর্যায়ে নেমে গেছে যে আমরা কয়েকটা ধর্মী্য় অনুষ্ঠান পালন করাকেই মনে করি ধর্ম পালন করা। তাই আলেম সমাজ মুসলমানদের শুধু নামাজ পড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, তাবলীগ জামাত উঠে পড়ে লেগেছে সবাইকে নামাজের সাথে সুন্নাত পালন করে অধিক সওয়াব হাসিলের ভাগি হতে কিন্তু চরিত্র গঠনের দিকে কেউ চেষ্টা করছে না। সমাজের শতকরা ৭০-৬০ জন অশিক্ষিত কে শিক্ষিত করে তোলার দিকে কেউ নজর দিচ্ছেনা। শুধু মুসলমান নামধারী বৃহৎ সমাজ কে সওয়াব নামক এক কল্পিত চীজের লোভ দিখয়ে কতগুলে উদ্দেশ্য বিহীন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে প্রলোভিত করছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, চরিত্র ও বিবেক ত্যগ করে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করলেি কি ধার্মীক হওয়া যায়? তাই যদি হবে ঢাকা মসজিদের শহর এবং এত নামাজী হয়েও কি করে এখানে কালোবাজারি আর জুতা চোর বেশী? এতে বোঝা যাচ্ছে যে, ইসলাম ধর্মের বর্তমান রুপ ও ব্যবস্থা সম্পুর্ন অচল প্রতিপন্ন হয়েছে।

    বাকী থাকল কর্মজীবন। আমাদের কারো জীবনে যখন নীতি বলে জিনিষটা নাই, এবং কেউ নীতি মেনে চলিনা, তখন সামাজিক জীবনে সব ক্ষেত্রে তো দূর্নীতি চলবেই। এই দূর্নীতি , অন্যায়, অবিচার এ আমরা এতই জর্জরিত হয়ে গেছি যে, বেঁচে থাকাটাই একটা দু্‌ঃসহ যন্ত্রনা হয়ে দাড়িয়েছে। সামান্য দু একজন ছাড়া দেশের প্রতিটি লোক এই অভিশাপ থেকে পরিত্রান পাবার উপায় চিন্তা করছে। সবাই কামনা করছে যে এই ঘুনে ধরা পুরোনো সমাজ ব্যবাস্থার আমূল পরিব্রতন। সবাই আশা করছে কামাল আতাতুর্ক এর মতন এমন এক ব্যক্তিত্যের বিকাশ যিনি খান খান করে ভেঙে দেবেন সমাজ ব্যবস্থা, বন্ধ করে দেবেন পর্বত প্রমান দূর্নীতি, বন্ধ করে দেবেন মসজিদ, মন্দির এর ভন্ড উপাসনা। সমাজের প্রতিটি মানুষের চরিত্র গড়ে তুলবে বিবেক, ন্যয়নীতি বোধে ইস্পাত কঠিন করে এবং অন্ত্ঃসার শুন্য অনুষ্ঠান পালন করা ধর্ম নয় এবং সেই সাথে রিপুকে সংযত করা ও বিবেক ন্যয়ের পথে থাকাই ধর্ম – এই চরম সত্য কথাটা সবাই কে উপলব্ধি করানো।

    কিন্তু এই পরিবর্তন কোন পথে সম্ভব? এই যে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে যে সস্তা বুলে আওড়াই, সেই গণতন্ত্র এর পথে এই সংস্কার সম্ভব নয়। কারন আমাদের গণতন্ত্র ও দূর্নীতি তে ভরা। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা সত্যই সর্বাংগীন সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা কিন্তু সেই গণতন্ত্র কায়েম করতে গেলে জন গনের বেশীর ভাগ লোক কে প্রথমে চরিত্রবান ও শিক্ষিত হতে হয়। দেশের বাশীর ভাগ লোক জখন তা না থাকে থখন দরকার হয় একজন অসীম ক্ষমতার অধিকারী চরিত্রবান এক কঠোর এক নায়কের অথবা এক দলিয় শাষন ব্যবস্থার। মোট কথা, আমাদের কে সঠিক পথ দেখানোর জন্য, সব গোড়ামী, ভন্ডামি, দূর্নীতি অবসানের জন্য প্রয়োজন কামাল আতাতুর্ক এর মতন একজন , যিনি কয়েক বছরের জন্য তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন,গোড়া আলেমদের গুলি করে মেরে ধর্মের গোড়ামি কে সংস্কার করেছিলেন।

    আর দ্বীতিয় পথ হচ্ছে ধর্ম কে সমাজ জীবন থেকে সম্পুর্ন বাদ দিয়ে শোষন মুক্ত এক নতুন সমাজ গড়ে তোলা , অপর কথায় কম্যুনিজম কায়েম করা। তবে কথা হচ্ছে কম্যুনিজম আজীবনের জন্য নয়, আর ,পরিবর্তন যে পথেই আসুক না কেন, তা নির্ভর করছে একজন কঠোর চরিত্রবান, মানবকল্যানী এবং সক্রিয় নেতার উপর। দেশের যে শতকরা ১ ভাগ লোক চরিত্রবান আছে, জন গনের মধ্য থেকে বাছাই করে সেই লোকদের নিয়ে দল গঠন করার উপর।

    আমরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কবে আসবে সেই শুভদিন, যেদিন এমন এক মহাপুরুষ আমাদের উদ্ধার করবেন দূর্নীতি জরাগ্রস্ত সমাজ হতে।দেশের প্রতিটা লোক চায় একটা আমূল পরিবর্তন – তা যে পথেই আসুক না কেন

  5. অলকেশ - ১৩ অক্টোবর ২০০৮ (৭:৩৩ অপরাহ্ণ)

    @ নীড় সন্ধানীঃ এরশাদ পতনের পর, খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনার রাজনীতি সাধারন জনগনকে স্বস্তি দিতে পারেনি। কিন্ত সাধারন জনতার ভোট নিয়েই তারা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিন জোটের রুপ রেখাতে তারা স্বাক্ষর করে জাতির কাছে ওয়াদা করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের ধারায় তারা দেশ পরিচালনা করবেন, রেডিও টিভি’র স্বায়ত্বশাসন দেবেন, বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করবেন এবং গনতন্ত্রায়ন করবেন প্রশাসনের প্রতিটি স্তর। এগুলি তারা কেউই মানেন নি। দলীয়করন করেছেন যা কিছু পেরেছেন, পার্লামেন্ট ঠিক মত কার্যকর করা যায় নি। ডিবেট ছিল না। পার্লামেন্টের স্পীকার থেকে শুরু করে ষ্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সরকারের তাবেদারী করেছে। প্রধান বিরোধী দলকে শ্যাডো সরকার হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয় নি, তারা ও সেই দায়িত্ব নেয়ার যোগ্যতা দেখাতে পারেনি। এর পাশাপাশি এদের রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টিতে জনগন ধৈর্যচ্যুত হয়ে গিয়েছিল। সামাজিক পর্যায়ে মাস্তানি-সন্ত্রাসী রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে বেড়ে ঊঠছিল। দলবাজির চুড়ান্ত একটা রূপ মানুষ দেখে ২০০৬ সালের দিকে এসে। অতিষ্ট হয়ে উঠে মানুষ। রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের উপর আস্থা হারাতে থাকে। যেমন হারিয়েছেন,নীড় সন্ধানী। তার এই আবেগের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। হাসিনা খালেদার প্রতি সেই ক্ষোভটা আমার নিজেরও আছে।

    কোন দেশে মাত্র ৩ টি পার্লামেন্টারী নির্বাচন করে পার্লামেণ্টারী গণতন্ত্র প্রতিষ্টা করা মুশকিল বটে। গনতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা নির্মান করার প্রক্রিয়া একটা চলমান প্রক্রিয়া। দুনিয়ার বনেদী গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও যুগের পর যুগ ধরে এই ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যা আজকে এসে একটা সংহত অবস্থানে আমরা দেখতে পাই। একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠে দীর্ঘদিনের চর্চার ফলে। এই চর্চা চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প কিছু নেই।

    ‘৯০ থেকে ২০০৭ এই ১৭ বছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী তেমন কিছুই পায়নি দেশের মানুষ। কিন্ত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বেছে নেয়ার যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তা অর্জন করতে পেরেছিল। পাকিস্তান গত ৬০ বছরে যা শিখতে পারে নি। আমি মনে করি,পাকিস্তানের চাইতে আমাদের গনতান্ত্রিক মানস, ভাবনা এবং সংস্কৃতি অনেক বেশি ভায়াবল। ‘৯০ এর পর মানুষ চিন্তা করতো, যে সরকার আমাদের জন্য কাজ করবে না সামনের নির্বাচনে তার গণেশ উলটে দেয়া হবে। এই জায়গায় এসে, সবাইকেই জবাবদিহিতা করতে হয় এবং হয়েছে। আমরা জানি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের মত এত বিশাল দল, সাইনবোর্ড পার্টিতে পরিনত হয়ে গিয়েছিল। কারন জনগন এদের রাজনীতি গ্রহন করেনি। হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীরা মিলে এদেরকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছিল। মুসলীমলিগ এখন ইতিহাস মাত্র। আমাদের দেশের রাজনীতিতে হাসিনা-খালেদা যদি ব্যর্থ হয়, ইতিহাসের বিচারে তাদের দলও একই পরিনতি ভোগ করবে। কিন্ত গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি চালু রাখতেই হবে। জনগনের মুক্ত চিন্তা করার, খোলামেলা বিতর্ক করার, কথা বলার ও ভিন্নমত পোষণ করতে পারার অধিকার কোন ভাবেই কম্প্রোমাইজ করা যাবে না। কিন্ত কিভাবে এই রাজনীতির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হল পাকিস্তানে। সামরিক বাহিনীর উচ্চাভিলাস ও রাজনীতিতে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ আজকের পাকিস্তানকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। আজকে সে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। সেই ইস্কান্দার মির্জা-আয়ুব- ইয়াহিয়া-জিয়াউল হক-মোশাররফরা মিলে পাকিস্তান কে এই হাল করেছে। এরা হল আমাদের দেশের মোস্তাক-জিয়া-এরশাদ-মইন-ফকরুদ্দিনের যোগ্যপূর্বসুরী। ফকরুদ্দিন কাদের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় তা এখন আর কারো কাছে গোপন নয়। আওয়ামি লীগ-বিএনপি নৈতিক মনোবল হারিয়েছিল বলে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে পালিয়েছিল এতদিন। এর মানে এই নয় যে, ফকরুদ্দিন সাহেবরা যা বলছেন ও করছেন তা ঠিকই করছেন। হঠাৎ তারা উদয় হয়ে, কারো সাথে আলোচনা না করে, দেশের সব ভাল তারা কয়েকজন মিলেই ঠিক ঠিক বুঝে ফেললেন, এমনটি ভাবার কোন কারন নেই। এরা সেই সংসদীয় রাজনীতির ধারাবাহিকতাকে ধ্বংস করার দীর্ঘমেয়াদী চক্রান্তে লিপ্ত। প্রশাসনের সামরিকীকরন এরা চায়। কিভাবে চায়? এশিয়ান হিউম্যান রাইটসের রিপোর্টে এর আলামত দেখুন। ফলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি বিশ্বাস হারানোর মানে সামরিক শাসনের রাস্তা উণ্মুক্ত করে দেয়া।

    সিংগাপুর বিষয়ে আপনি বলেছেনঃ

    সিংগাপুরের মতো হতে চাওয়ার মধ্যে খারাপ কিছু তো দেখছি না। গনতন্ত্রের নামে সামরিক বেসামরিক কিছু ধান্ধাবাজ লোকের কাছে দেশকে লীজ দেয়ার চেয়ে সিঙ্গাপুরের মতো রাজনীতি মুক্ত দেশ হলে ক্ষতি কি?

    বাইরের চাকচিক্য দেখে এই সিটি স্টেট কে বোঝা যাবে না। এই রাষ্ট্রে সবই আছে । নেই শুধু কথা বলার স্বাধীনতা, বিবেকের ও মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা। যে রাষ্ট্রে একটা মাত্র রাজনৈতিক দল বিগত প্রায় ৫০ বছর দেশ শাসন করছে, তাকে আপনি গনতান্ত্রিক বলবেন কি ভাবে? ওদেশের মানুষেরা হয়তো অনেকেই ধনে সুখী কিন্ত মনের সুখ ওদের থাকার কথা নয়। এমন কি আমার আপনার মত ব্লগাররা ও ওদেশে বিবেকের তাড়নায় দু’কলম সত্য কথা লিখতে পারে না। এই গেল মাসে সেখানে এক ব্লগারের করুন অবস্থা দেখুন।

    • raihan_sayeed - ১৪ অক্টোবর ২০০৮ (৪:২০ পূর্বাহ্ণ)

      আমাদের মত হাতে গোনা কয়েকজন ব্লগার এর লেখা বন্ধ হয়েও যদি দেশ টা সিংগাপুর এর মত হয়, এই মুক্ত চিন্তার বিনিময়ে ও যদি এই দেশের মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে বের হয়ে আসে, তাই সই। পেটে ভরা না থাকলে বিবেক তখন এই সব উচ্চ মর্গীয় চিন্তা করতে পারবেনা। সিংগাপুরে সেই এক দলের শাষন আছে বলেই, তারা আজ এত দুর পৌছেছে। এই তথাকথিত গণতন্ত্র আমাদের কিছু দূর্নীতিবাজ ছাড়া আর আই এম এফ এর প্রেসকৃপশন ছাড়া আর কিছুই দেই নি।

      • সৈকত আচার্য - ১৬ অক্টোবর ২০০৮ (৫:৪৫ অপরাহ্ণ)

        @ raihan_sayeed-আপনার এই বাক্যটি স্ববিরোধী মনে হলো;

        পেটে ভরা না থাকলে বিবেক তখন এই সব উচ্চমর্গীয় চিন্তা করতে পারবেনা।

        স্ববিরোধী মনে হল, কারনঃ
        তাহলে, সেই ক্ষেত্রে, সিঙ্গাপুরের মানুষের পেট ভরা থাকার পরেও তাদের বিবেক উচ্চমার্গীয় চিন্তা করতে পারছে না কেন? বা চিন্তা প্রকাশ করতে পারছে না কেন? বাঁধাটা কোথায়? একবার বলছেন, মুক্তচিন্তার বিনিময়ে ভরপেট খাবার চাই, আবার বলছেন, ভরপেট হলেই বিবেক মুক্ত চিন্তা করার সু্যোগ পাবে!

        আপনি কি বোঝাতে চাইছেন, ভাল ধরতে পারলাম না। একটু ধন্দে আছি বৈকি। কারন সিংগাপুরে দুটো এক সংগে আপনাকে দেয়া হবে না। এই কথাটাই ইন্সিডেন্টাল ব্লগার ও অলকেশ বোঝাতে চেয়েছিল বলে আমার মনে হয়েছে।

  6. অলকেশ - ১৩ অক্টোবর ২০০৮ (৮:০০ অপরাহ্ণ)

    @raihan_sayeed

    আর দ্বীতিয় পথ হচ্ছে ধর্ম কে সমাজ জীবন থেকে সম্পুর্ন বাদ দিয়ে শোষন মুক্ত এক নতুন সমাজ গড়ে তোলা , অপর কথায় কম্যুনিজম কায়েম করা। তবে কথা হচ্ছে কম্যুনিজম আজীবনের জন্য নয়, আর ,পরিবর্তন যে পথেই আসুক না কেন, তা নির্ভর করছে একজন কঠোর চরিত্রবান, মানবকল্যানী এবং সক্রিয় নেতার উপর। দেশের যে শতকরা ১ ভাগ লোক চরিত্রবান আছে, জন গনের মধ্য থেকে বাছাই করে সেই লোকদের নিয়ে দল গঠন করার উপর।

    “—–তোমার ভাষা বোঝার আশা
    দিয়েছি জলাঞ্জলী—–।”

  7. ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৪ অক্টোবর ২০০৮ (১২:২৬ অপরাহ্ণ)

    @ নীড় সন্ধানী

    পরিবর্তন কে না চায়! প্রতিটি পরিবর্তনের স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে থাকে আমাদের আশা ভরসা আকাঙ্খার বিনিয়োগ। আর অপাত্রে অসময়ে বিনিয়োগের ফল কি হয় তা কাউকে বলে দিতে হয়না। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেতও পরিবর্তনের আশ্বাস নিয়ে আসে। সে পরিবর্তন ধ্বংসস্তুপের, সে পরিবর্তন মড়কের, অবিবেকি মৃত্যুর। তাই কোন পরিবর্তনটা সমৃদ্ধ আগামীর আর কোনটা সংকেত অশনীর তা চেনাটা জরুরী। ১/১১’র ক্ষমতাবদল ঠিক কেন আপনাকে আশাবাদী করেছিল, তাই বোধগম্য হলনা। এঁদের (১/১১’র নায়কদের) ঠিক কি আছে বা কি ছিল যা তাদের বাকী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর তুলনায় শ্রেষ্ঠতর অবস্থানে বসায়? নিজের ব্যক্তিগত/গোষ্ঠিগত আশা ভরসা ইনভেস্ট করতে চান এঁদের মধ্যে, ভালো কথা। কিন্তু মনে হয় অপাত্রেই তা করলেন!

    আর স্বপ্ন এরশাদও দেখিয়েছে, আইয়ুবও দেখিয়েছে আর মোশাররফরাও দেখানোর চেষ্টা করেছে। ম্যানডেটের প্রশ্নটা তাই জরুরী। আমি অন্তত কোন মঈন কিংবা ফখরুদ্দিনের দেখানো অলীক স্বপ্নে নিজেকে প্রবোধ দেয়ার আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবো। এদের কোন্ এখতিয়ার আছে (বা ছিল) জাতির সামনে দাঁড়াবার, বলতে পারেন? রাজনীতিবিদরা যদি ‘অধম’ হয় (ধরে নিলাম তর্কের খাতিরে), তাতেও কিভাবে মঈন-ফখরুদ্দিনরা ‘উত্তম’ হয়ে যায়, সে আমার বোধগম্য না।

    এ বিষয়ে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। ১/১১’র স্তাবকদের মধ্যে দু’টি শ্রেনী স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমটি মতলবী শ্রেনী (যেমন, মঈন, আফতাব, কোরেশীরা) আর পরেরটি অবুঝ (naive অর্থে) শ্রেনী। আরো একটি শ্রেনীও সম্ভবত আছে, সেটি হল লাগাতার আশাভঙ্গে ক্ষুব্ধ হতাশ শ্রেনী। ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভে এই শ্রেনীটি হিতাহিত জ্ঞান এবং সাধারণ যুক্তিবোধও হারাতে বসেছে আজ। বোঝার চেষ্টা করছি আপনি কোন্ দলে পড়েন।

  8. ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৪ অক্টোবর ২০০৮ (১২:২৮ অপরাহ্ণ)

    @ raihan sayeed

    আপনার প্রথম মন্তব্যটা (#৪) বুঝতে পারিনি। ঠিক কি বলতে চেয়েছেন সেখানে? অবশ্য শেষ করেছেন কোন এক মহাপুরুষের আগমনের আকাঙ্খা ব্যক্ত করে। খুব গোলমেলে! জানতে পারি কি সেই মহাপুরুষটি (নারীও হতে পারেন কি তিনি?) কোথা থেকে উদয় হবেন এবং কিভাবে? সিরিয়াস আলোচনায় ব্যক্তিগত ফ্যান্টাসি শেয়ার না করলেও পারতেন। আর বাংলাদেশে মাত্র ১% মানুষ সৎ, এ আপনাকে কে বললো? যে মানুষ নিজের দেশ আর দেশের মানুষ সম্বন্ধে এতটা শ্রদ্ধাহীন তিনি যে সিঙ্গাপুরের জন্য হাপিত্যেশ করবেন, তাতে আর বিচিত্র কি!

    আপনার দ্বিতীয় মন্তব্যের (#৫) প্রত্যুত্তর:
    উন্নয়নের কথা উঠলেই অনেকে অভুক্ত অনাহারী মানুষদের তর্কের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। আপনাকে কে বললো যে সিঙ্গাপুরের কৃষক সিঙ্গাপুরের শ্রমিক তাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ভালো আছে সুখী আছে? স্কাইস্ক্র্যাপার দিয়ে প্রকৃত মানব উন্নয়ন নিরূপিত হয়, এ ধারণা কোথায় পেলেন? আর পেটে ভাত পাওয়াই যদি জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়, তাহলে তো পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী জীব হল ‘বড়লোকের বাড়ীর কুকুর’, যার কখনো খাবারের অভাব হয়না। কুকুরের সাথে আমাদের এখানেই পার্থক্য। শুধু ভরপেট খেতে পেলেই আমরা বশ মানিনা, আমাদের চাহিদা তার চাইতে কিছু বেশী বই কম নয়। গরীব কৃষক-শ্রমিক রাজনৈতিক সরকারের আমলে নীপিড়িত হয়েছে, গুলি খেয়ে মরেছে; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও নীপিড়িত হচ্ছে। সেই বাস্তবতার উৎস ভিন্ন। আপনার কল্পনার একনায়ক মহাপুরুষকে জায়েজ করতে এই মানুষগুলোকে ব্যবহার করবেন না প্লীজ। আর যাই বলুন না কেন গণতন্ত্র থাকলে অন্তত – এই মানুষগুলোর যন্ত্রণা বঞ্চনার কথা মিডিয়াতে উঠে আসে, এখন যেটা আসেনা, যেমন আসেনা সিঙ্গাপুরে। একদিকে অভুক্ত মানুষের দোহাই দেবেন (উন্নয়নের নামে), অন্য দিকে এর প্রতিকারে এমন এক ব্যবস্থার জন্য ওকালতি করবেন যেটি এমনকি এই মানুষগুলোর মুখের ভাষা পর্যন্ত কেড়ে নিয়ে দম দেয়া পুতুলে পরিণত করতে চায়! ব্যপারটা একটু দু’মুখো হয়ে যায় না কি?

    • নীড় সন্ধানী - ১৫ অক্টোবর ২০০৮ (২:০৪ পূর্বাহ্ণ)

      গণতন্ত্র থাকলে অন্তত – এই মানুষগুলোর যন্ত্রণা বঞ্চনার কথা মিডিয়াতে উঠে আসে, এখন যেটা আসেনা, যেমন আসেনা সিঙ্গাপুরে।

      সিঙ্গাপুরের মানুষের দুর্দশার কথা প্রথম জানলাম আপনার লেখনীর মাধ্যমে। বেচারা সিঙ্গাপুরিয়ানদের জন্য দুঃখ হয়, খামাকা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নষ্ট করেছে পোর্ট-এয়ারপোর্ট বানিয়ে। টাকা পয়সা ধন দৌলত দিয়া কী পেট ভরবে? যদি রাজনীতিই করতে না পেলো তাহলে গুতাগুতির মজাটা বুঝবে কী করে। ১/১১ এর পর বাংলাদেশ থেকে এত রাজনীতিবিদ ওখানে গিয়ে খেয়ে, ঘুমিয়ে, হেগে দুই বছর পার করেছে, এত লোক প্রতিদিন সিঙ্গাপুর যায় কিন্তু কেউ সিঙ্গাপুরের দুর্দশার কথা ভাবে না, বলে না। স্বার্থপর একেকটা। সিঙ্গাপুরের কোন একটা রাজনৈতিক মানবিক উপকারেও তো আসতে পারতো এরা! তাছাড়া বাংলাদেশে না এসে সারা দুনিয়ার বোকাচোদা লোক ওখানে কেন ঘুরে বেড়ায় কে জানে? আমরা কী জিনিস, আমাদেরকে কেউ চিনলো না। আশ্চর্য!!

      আগামীবার সিঙ্গাপুর গেলে আমি আমার সিঙ্গাপুরের বন্ধুদের বুঝিয়ে দিয়ে আসবো ওরা যে আত্মতৃপ্তির কথা শোনায়, তা কতটা ফাঁকা, কতটা ভুয়া। আসলে ওরা কতটা অসহায় তা নিজেরাই জানেনা।

      সিঙ্গাপুরের মানুষের অজানা দুঃখ উদঘাটিত করার জন্য ‘ইনসিডেন্টাল ব্লগার’ কে ধন্যবাদ। আমি কোন ক্যাটাগরি’র আপনি সংশয়ে ছিলেন। আমি ৩য়, অর্থাৎ বোকাচোদা গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত।

      • মুক্তাঙ্গন - ১৫ অক্টোবর ২০০৮ (১০:২৫ পূর্বাহ্ণ)

        ভাষার প্রয়োগে আরো সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ করবো সবাইকে। গালাগালি বা খিস্তি না করেও মত প্রকাশ সম্ভব। সবার সহযোগিতা আশা করছি এ বিষয়ে।

      • সৈকত আচার্য - ১৬ অক্টোবর ২০০৮ (৯:৪৭ অপরাহ্ণ)

        @ নীড় সন্ধানীঃ

        আপনি ইন্সিডেন্টাল ব্লগারের প্রশ্নের জবাবে আলোচণা করতে গিয়ে কতগুলো যুক্তিহীন আবেগের বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আমি মনে করি এ ধরনের আবেগ দিয়ে, পাঠকদের তর্কিত বিষয়ের সাথে এনগেজ করা যায় না।

        ইন্সিডেন্টাল ব্লগার আপনাকে কোন ক্যাটাগরীতে ফেলল বা ফেলল না তা দিয়ে আমরা পাঠকরা আপনাকে বিচার করি না। আমি নিজে মনে করি, কোন বিষয়ে যদি আপনার দৃঢ় আস্থা থাকে, তুলে ধরুন সেই যুক্তিগুলো। যুক্তির একটা লড়াই চলুক। আপনি ১/১১ ও সিংগাপুর ইস্যু নিয়ে কিছু বলতে চান। সেটা বুঝতে পারছি। আপনার কথায় ইংগিত আছে, সেদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়ে কিছু বলার। হয়তো সে দেশের পোলিটীক্যাল সিষ্টেম সম্পর্কে আপার একটা ভিউ আছে। তা বলতে বাঁধা কোথায় ছিল? আপনি যে লাইনে ভাবেন, সেই লাইনের ভাবনা অনেকেই ভাবছে। উন্নতির সিঙ্গাপুর মডেল বিষয়ক অনেক ধরনের আলোচনা চলেছে, এখনো চলছে।

        অলকেশ দু’একটা উদাহরন দিয়ে তার মত করে বলেছে যে, সেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও খোলামেলা কথা বলার স্বাধীনতা নাই। ইন্সিডেন্টাল ব্লগারও প্রসংগ টেনেছেন, এই কথা গুলো বলে যে, সাধারন খেটে খাওয়া মানুষেরা সেখানে কেমন আছে, সে বিষয়ে তার প্রশ্ন আছে। বাহ্যিক চাকচিক্য নিয়ে কথা এসেছে।

        আপনার দিক থেকে আপনিও ওদেশের সিষ্টেম নিয়ে, তার ভাল দিকগুলো তুলে ধরে আলোচনায় আনলে, দারুন একটা তর্ক জমে উঠত। গনতন্ত্রের কোন সুবিধা দেশে না পেলেও বা সিংগাপুরেও যদি নেহাৎ না পাওয়া যায়, এই ব্লগে তো আমরা চর্চা করতে পারি। তর্ক করতে পারি। কথা বলার অধিকারকে তো কেউ এখানে কেড়ে নিচ্ছে না। ঠান্ডা মাথায় দু’দিন পরে ও তো একটা জবাব দিতে পারি এখানে।

        আমি মনে করি যে তর্কটা উপভোগ করছিলাম, তা দুটো আইডিয়ার মধ্যে তর্ক। ব্যক্তি এখানে নিমিত্ত মাত্র।এখানে ব্যক্তিগত অনুভুতির জ্বালা এত প্রবলভাবে আসবে কেন? জেতা হারার বিষয় এখানে নাই। এটা অবান্তর। তর্কে যদি অলকেশ বা ই ব্লগার জিতে যায় বাস্তবের সিংগাপুর তো রয়ে যাচ্ছে। সেই সিষ্টেম তো একদিনে গড়ে উঠে নি। রাতারাতি তাকে ভাঙ্গাও যাবে না। বিতর্কগুলোও চলবে । এভাবেই তো সবকিছু আগায়।

        ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আপনি নিজেকে “বোকাচোদা” বলে আপনার মনের আবিলতাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। এতে আপনার সম্মান বাড়ে নি। যেহেতু আপনি নিজেকে এই কথা বলে অসম্মান করেছেন, অন্য কোন একদিন কোন এক দুর্বল মুহুর্তে, আরেকজনকে এটা বলার ক্ষেত্রে আপনার বাঁধবে না।

        আলোচনাগুলো ফলো করছিলাম। অনেক ব্যক্তিগত-পারিবারিক ব্যস্ততার মাঝেও। ভালো লাগছিল। খোলা হাওয়ায় বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার মত করে নিশ্বাস নেই, যখন ব্লগে ঢুকি। একটা বিষয় খুব ফিল করি। তা হল, কেউ আমাদের বলেনি এখানে লিখতে। মন্তব্য দিতে। নিজের ব্যক্তিগত অনেক কাজের মাঝে ও একটুখানি সময় কিভাবে যেন বের করে নিই। নিতান্ত নিজস্ব ভাল লাগার টানে। সমাজের নানা বিষয়, ছোট ছোট দুঃখ, আবেগ, সুখ স্মৃতি, জীবনের কোন একটা ছোট্ট মূহূর্তকে ধরতে যাই। নিজেই নিজের সম্পাদক আমরা। নিজেকে নিজেই কাটাকুটি করি। জীবিকার তাগিতে কেউ লিখি না। জীবনের তাগিদে লিখি। যা তা লিখি। রবীন্দ্রনাথ বলতেন, যা তা লিখাই নাকি সেরা লেখা। এ রকম মুক্ত স্বাধীনচেতা লিখনি আমাদের সকলের, আমরা অনেকেই লিখনিতে কাঁচা যদিও, কিন্ত দিন কে দিন বলতে পারার সাহস তো এই আমাদের ই আছে। এই ব্লগারদের ই। এই কারনে ব্লগের এই লেখনিগুলো কেবলই সত্যলেখন বলে ধরে নেই আমি। এখানে এসেই অকৃত্রিম লেখার সন্ধান পাই। চারিদিকে নিজের নাম ধাম প্রকাশের, নিজেকে জাহির করার যে প্রতিযোগীতা চলছে আজকাল, তার ভীড়ে এই ব্লগেই তো সত্যের সন্ধান চলে।

        এই ব্লগকে ভালবাসি বলেই উপরের কথাগুলো বললাম। ব্যক্তিগত কাউকে নয়,বরং একটা প্রবনতাকে। আমার বলার ভুল থাকবে। যারা পড়ছেন, তারাই তো আমার আয়না। আমি নিজেকে সেখানেই দেখতে চাই। নিজেকে দেখার এটাই যে প্রকৃত উপায়। এত বড় সত্য কি করে লুকাই।

        • নীড় সন্ধানী - ১৮ অক্টোবর ২০০৮ (৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

          @সৈকত আচার্য
          মত প্রকাশের সুশীল থাকার ব্যাপারে আপনার বক্তব্যের সাথে মোটামুটি একমত। কিন্তু কেউ যদি কুযুক্তি দেখায়, না জিনিসকে হ্যাঁ বলে, তখন মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের মাত্রা বেড়ে যায় বই কি। ফলে জবাবটা একটু কড়া মনে হয়েছে। ব্লগ প্রশাসক আমাকে সতর্কও করে দিয়েছে। আমি জানি আমার শব্দ চয়নে সতর্কতা নেই, আমি লিখি ঠিক তাই যেভাবে মুখে বলি। বলার মধ্যে মাঝে মাঝে slang চলে আসে। সেই slang লেখায়ও চলে এসেছে এক পর্যায়ে। কিন্তু সেটা গালি বা খিস্তি নয়। আমি মনে করি slang পত্রিকায় চলে না, কিন্তু ব্লগে চলে। পত্রিকার সাথে ব্লগের এটাও একটা পার্থক্য। পত্রিকায় লেখালেখি ছেড়েছি সুশীল ভদ্রতায় লিখতে হয় বলে। ব্লগে যৎকিঞ্চিত লেখালেখি করি এই রাগ বা চুলকানি প্রকাশ করার জন্য। এতে কারো মনে কষ্ট লাগলে বা ব্লগের সৌন্দর্যহানি ঘটালে দুঃখিত।

          যে কারনে এ কথার অবতারনা। সিঙ্গাপুরবাসীর বঞ্চনার কথায় প্রসঙ্গটা আসলো। উপরে ইনসিডেন্টাল ব্লগার সিঙ্গাপুরের মানূষের দুর্দশার কথা বললেন তখন আসলে আমার আমোদে হেসে উঠা উচিত ছিল। তা না করে কটাক্ষে জবাব দিয়েছি বলে খারাপ লেগেছে। কিন্তু যাদের বঞ্চনার কথা উদাহরন হিসেবে আনছি তাদের সাথে তুলনা করার স্পর্ধা আছে কি না সেটা ভাবা উচিত না? যে দেশের কথা তুলনা করছি বাংলাদেশ সে দেশের অর্থনীতির কাছাকাছি আগামী ২০০ বছরেও যেতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। বাকস্বাধীনতা তৃপ্তির ঢেকুর এখানে বসে তুলছি, সেটা গল্পের সেই ভিক্ষুকের মতো লাগলো।

          দুই ভিক্ষুককে বাড়ীওয়ালা শুক্রবারে ডেকে এনে খেতে দিয়েছে। খাওয়ার শেষে ভিক্ষুকদ্বয় পানি খেতে চাইল। বাড়ীওয়ালা উঠে ভেতরে গিয়ে বউকে আস্তে করে জগ গ্লাস দিতে বললো। পানি খেয়ে বাইরে এসে এক ভিক্ষুক অন্যজনকে বলছে, “দেখছস ব্যাটা বউরে কেমন ভয় পায়, পানি চাইতেই সাহস পায় না, কেমন আস্তে কথা কয় ডরে। আরে আমি ময়নার মারে এক চিক্কুর মারলে উষ্ঠাইয়া আইয়া পড়বো না? খাওন না থাকলে কী হইছে আল্লায় আমাগোরে মাইয়ালোকের নীচে রাখে নাই।”

          অন্যজন তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সায় দিয়ে বললো, “ঠিক ঠিক”

    • raihan_sayeed - ১৫ অক্টোবর ২০০৮ (৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ)

      দেশের মানুষ এর 1% কে কেন সৎ বলেছি, সেটা আমার লেখাতেই বলেছি। আমরা মাহতির বা কামাল আতাতুর্ক এর মত একজন এর আশা করতেই পারি। আশা টা ফ্যন্টাসি মনে হতে পারে আপনার, কিন্তু এরকম একজন দরকার আমাদের কে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য।
      মানুষের মৌলিক চাহিদা হল – খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। এই মৌলিক চাহিদার কতটুকু পুরন হোয়েছে? যে কৃষক সারাদিন কাজ করে, তার কাছে বাক স্বধীনতার কতটুকু মুল্য বলবেন কি ? যেটা বলতে চেয়েছি, যে, মৌলিক চাহিদা আগে পুরন করতে হবে, আমাদের চরিত্র, শিক্ষা ও উন্নতির জন্য আমাদের এই প্রাশ্চাত্য দেশীয় গণতন্ত্র দিয়ে হবেনা।
      এই তো আমাদের গণতন্ত্র, এক সৈরাচার কে দলে টানার জন্য গণতন্ত্রের ধারক, বাহক দল গুলো টানাটানি করে, নিজের দলে গণতন্ত্র না দিয়ে দেশের গণতন্ত্র উদ্ধার করে, এই গণতন্ত্রের সময় তো “আমার ফাসি চাই” লেখক কে মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়েছিল, তসলিমা কে দেশে আসতে দেয় না কিংবা প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ কে আহত করা হয়েছিল এই গণতন্ত্র চলার সময়। কোথায় বাক স্বধীনতা ?
      রাত্রে অফিস করে বাসায় যাবার সময় কাওরান বাজারে শত শত কুলি, মুটে রাস্তার পাশে তাদের টুকরি তে শুয়ে রাত কাটানোর দৃশ্য দেখেছি, আপনি দেখেছেন কি না জানিনা। তাদের জীবনে বাক স্বাধীনতা, গনতন্ত্র কোন কিছুর মুল্য নাই।
      এই 1/11 না হলে জানতাম না আমাদের গণতান্ত্রিক স্ব রাষ্ট্র মন্ত্রী 20 কোটি টাকা ঘুষ খেয়েছেন এক খুনি কে বাচাঁতে, ত্রানের টিন এর আত্মসাৎ এর খবর ও জানতে পারতাম না। 1/11 না হলে আমাদের গনতন্ত্র এর এই করুন হাল জানতে পারতাম না।
      এই গনতান্ত্রিক দল গুলো শুধু নির্বাচনের জন্য প্রনয়ন করেছে তত্তাবধায়ক সরকারের মত কিছু ভালো ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত দল বীহিন সরকার ব্যবস্থা, তারাই প্রমান করেছে সৎ লোকের দ্বারা গঠিত সরকার ভালো কিছু দিতে পারবে, তারাই প্রমান করেছে আমার কথার যৌক্তিকতা।

      • অলকেশ - ১৭ অক্টোবর ২০০৮ (১২:৩৭ অপরাহ্ণ)

        @raihan_sayeed:

        আপনি আধুনিক গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার তুরস্কের মহান স্থপতি মোস্তফা কামাল পাশা’র মত একজন দেশ নেতার অপেক্ষায় রয়েছেন। একজন কামাল আতাতুর্ক হঠাৎ করে আকাশ থেকে পড়েন না। পাতাল ফুঁড়েও ওঠেন না। একজন কামাল আতাতুর্ক, অনেক দীর্ঘ ও জটিল রাজনৈতিক সংগ্রামের চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে একটি উন্নত চেতনা ও আদর্শিক দৃঢ়তা নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষমাহীন সংগ্রাম চালিয়ে যান। জনতার কাতারে এসে দাঁড়ান। জনতার ভালোবাসায়, জনতার বুকের আলিঙ্গনে নিজের সাহস দ্বিগুন করেন। সাধারন মানুষের সাথে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেক্যুলার তুরস্কের জন্য জীবন বাজি রাখেন। ঘুরে দাঁড়িয়ে যান এবং জনতার মিলিত সংগ্রামের উত্তাপ থেকে কামাল আতাতুর্করা জন্ম নেন।
        জনগনের মুক্তির সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের লড়াই যে দেশে নাই সেদেশে কামাল আতাতুর্ক জন্ম নেন না। পাকিস্তানে যেমন গত ৬০ বছরে আর কোন দেশনেতা জন্ম নেয় নি। সৌদি আরবে যেমন নেয় নি। গনতন্ত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছে বলেই, পাকিস্তানের জনগন পেয়েছে মাথা মোটা সামরিক জেনারেল, সৌদি আরব পেয়েছে আধুনিক ইতিহাসের মধ্যে বর্বরতম মনার্কি আর সিংগাপুরের মত সিটি স্টেট গুলো পেয়েছে একটি বহুদলীয় গনতন্ত্রের মুখোশ পরানো পার্লামেন্ট ও গণতান্ত্রিক আদলে তৈরী করা একটি সংবিধান, যার বুকের খাঁচায় একজন হিটলার কিংবা মুসোলীনির বসবাস।

  9. ফকির ইলিয়াস - ১৫ অক্টোবর ২০০৮ (১:০৬ পূর্বাহ্ণ)

    আপনাদের আলোচনা থেকে অনেক কিছু জানলাম। বুঝলাম।
    খুব প্রানবন্ত আলোচনা। আমরা ব্লগার রা আসলে হয়তো কিছুই পরিবর্তন
    করতে পারবো না। কবি নাগিব মাহফুজ এর ভাষায় বলি-
    আমি ডাক দিয়ে যাচ্ছি। কই থেকে ডাক দিচ্ছি সেটা বিষয় নয়।
    যদি আমার ডাক তোমার কানে পৌঁছে , হাত বাড়িয়ে দিও।

  10. সৈকত আচার্য - ১৮ অক্টোবর ২০০৮ (২:৩৮ অপরাহ্ণ)

    @নীড় সন্ধানীঃ
    আপনাকে ধন্যবাদ। নিজ বক্তব্য উপস্থাপনের সাদামাটা এই ভংগী ভাল লাগল।

    আমার এক প্রিয় শিক্ষক বলতেনঃ

    কোন বিরুদ্ধ মতকে গুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে না। কারন সময়ের ফেরে যে কোন মতই সত্যের মর্যাদা লাভ করতে পারে। বরং দেখবে, ঐ ভিন্ন মতের মধ্যে কোথাও কোন সত্য লুকিয়ে আছে কিনা। কোন দরকারী পয়েণ্ট আছে কি না। সেগুলো এপ্রিশিয়েট করার চেষ্টা করবে। তাহলে তোমার অহম দূর হবে। রাগ ক্ষোভ জল হয়ে যাবে। নিজের আন্ডারষ্ট্যান্ডীং পরিপূর্ন রূপ পেতে থাকবে।

    আপনাদের আলোচনাগুলো থেকে অনেক কিছুই শিখছি। প্রতিদিন। সিংগাপুর ওয়েলদিয়েষ্ট কান্ট্রিগুলোর তালিকায় সবসময়ই উপরের দিকে থাকে তা জানি। আবার উলটা পিঠের যুক্তি গুলো ও শুনি। যেগুলির ইংগিত ইন্সিডেণ্টাল ব্লগার বা অলকেশ দিয়েছেন।

    আমার নিজের কাছে মনে হয় যে, দু’দিকেই সত্য আছে। তবে জীবদেহের সুষম খাদ্য বলতে যেমন একটা কথা পুষ্টিবিজ্ঞানীরা আমাদের শুনিয়ে থাকেন, তেমনি মানুষের সমাজের সুষম উন্নয়ন এবং সুষম বিকাশ বলে একটা কথা আমরা সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের মুখে শুনি। সেইটাকে আমি বুঝি এইভাবেঃ যেমন, কোন মানুষের পুরো শরীরের মধ্যে হঠাৎ করে তার পা দু’টো যদি বেশী মোটা হয়ে যায় বা একটা হাত বেশী বড় হয়ে যায় তাহলে এটা তার শরীরের সুসাস্থ্যের লক্ষন বলে কেউ ভাবে না। এটা সুষম বিকাশ নয়।এই আলোকে বলা যায়, সিংগাপুরের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে একটা সমাজের সুষম উন্নয়নের প্রতীক হিসাবে কতটুকু বিবেচনা করা যায়, সেই বিতর্ক কিন্ত রয়েই যাচ্ছে।

  11. ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৮ অক্টোবর ২০০৮ (১০:৩৮ অপরাহ্ণ)

    নীড় সন্ধানী যেগুলোকে ‘কুযুক্তি’ বলেন, সেগুলোই সভ্য সমাজের যুক্তি। আর সভ্য সমাজের যুক্তিতে তার ‘মাথায় রক্ত চলাচল’ যদি বেড়ে যায়, তবে তার জন্য আপাতত এ মুহুর্তে আমার কোন সহানুভূতি নেই। এ যুক্তিগুলি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল মূল্যবোধগুলোরও অংশ ছিল, আছে। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনায় যে “equality, human dignity and social justice” এর কথা বলা হয়েছে, তা শুধু ‘পেটে ভাত’ জোগানোর স্বপ্ন কিংবা কেবল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সংবিধানের প্রস্তাবনা আর প্রথম ভাগে যে সব বলা আছে, সিঙ্গাপুরকে অনুসরণ করতে গেলে আমাদের তাহলে সবার আগে সংবিধানটা (এবং এর পূর্বাপর ইতিহাসটাকেও) মুছে ফেলতে হবে। বিষয় সিঙ্গাপুর ভাল কি মন্দ তা নয়। বিষয় আমরা সিঙ্গাপুরের মত হতে চাই কিনা। ২০০ বছরেও আমরা তাদের কাছে যেতে পারবো কি পারবো না তা এখানে গৌণ। প্রশ্ন হল, এমনকি যদি যাই-ও আমরা, সেভাবে (সিঙ্গাপুরের মত করে) সেখানে যেতে চাই কিনা আদৌ। এ বিষয়ে তিনি যত খুশী হীণমন্যতাবোধে ভুগতে পারেন; কেবল আমাদেরও একই হীণমন্যতায় ভোগার উপদেশ বিতরণ না করলেই খুশী হই। বুঝি, এসব তার একান্তই ব্যক্তিগত ওরিয়েন্টেশন যা আমাদের মানতে হবে এমন কোন কথা নেই। এখানে মনে পড়ছে, “আমারব্লগে” সাম্প্রতিক আরেক বিতর্কে সামরিক বাহিনীর গুণকীর্তণ এবং সমর্থন করতে গিয়ে এই ব্যক্তিই লিখেছিলেন রাজনৈতিক ‘নেতাদের ক্রসফায়ারে দিলেই নাকি সব ল্যাঠা চুকে যায়'(এখানে দেখুন) । বিস্তারিত এখানে। এসব বিষয়ে নিজের দেশের সাধারণ মানুষের অর্জন, আত্মত্যাগ (মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের কথাও ভুলবেননা) নীড় সন্ধানী’র মত মানুষদের কাছে আজ অর্থহীন মনে হতেই পারে; কিন্তু আমরা ব্যপারগুলো ভিন্নভাবে (এবং সভ্যভাবে) দেখার স্বাধীনতা পোষণ করি এবং করে যাবো। নীড়সন্ধানীর কাছে ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এই বিষয়গুলো ‘কুযুক্তি’ মনে হলেও তাকে খুব একটা পাত্তা দেয়ার কিছু আছে বলে মনে হয়না।

    সৈকত আচার্য ঠিকই বলেছেন। এখানে দু’টি বিপরীত আইডিয়ার বিতর্ক চলছে। আমি বলবো, দু’টি বিপরীত বিশ্বদৃষ্টির বিরোধ। যাই হোক, নীড় সন্ধানীর স্বরূপ উদঘাটন আমার কাজ না, তার মনে হয় আর দরকারও নেই। কিন্তু কিছু বিষয় উল্লেখ জরুরী, তাই লিখছি:

    ১.
    নীড় সন্ধানী তার কিছু সিঙ্গাপুরী বন্ধুবান্ধবদের সুখে ভরভরন্ত জীবনের যুক্তি দেখালেন। “আমার বন্ধুরা মনে করেন” – এজাতীয় বক্তব্য যে কোন সিরিয়াস আলোচনায় নির্ভরযোগ্য উপাত্ত হিসেবে ধর্তব্য নয়, তা বোধ করি তাকে কেউ কোনদিন বলে দেয়নি। তবে সিঙ্গাপুরের মানুষের জীবনে “সুখ এবং পরিপূর্ণতা” নিয়ে যদি কোন স্বাধীন গবেষণা হয়ে থাকে, তবে বিনীতভাবে তা তাকে উদ্ধৃত করতে অনুরোধ করবো। আমরা সে ধরণের উপাত্তে আগ্রহী।

    ২.
    ‘সুখী সিঙ্গাপুরী’ – নীড় সন্ধানীর এই হাইপোথিসিসের সমালোচনায় আমি আমার জানা অন্তত কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা উদ্ধৃত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

    (ক) ইন্টারন্যাশনাল বার এসেসিয়েশনের Prosperity versus individual rights? Human rights, democracy and the rule of law in Singapore শীর্ষক এবছরের জুলাই মাসের রিপোর্টটি দেখুন (পিডিএফ কপি এখানে)। উল্লেখ করা প্রয়োজন, রিপোর্টটি লেখার সময় সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের মতামত নেয়া হয়েছিল। সেখানে উপসংহারে বলা হয়েছে:

    Despite debates between many nations as to the exact spectrum of human rights, fundamental and universal human rights cannot be considered culturally specific, but derive from the cultures of all countries. . . . Singapore cannot continue to claim that civil and political rights must take a back seat to economic rights, as its economic development is now of the highest order. In the modern era of globalisation, isolationist policies and attitudes are no longer tenable.

    (খ) এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের Singapore: Government misusing the law to muzzle critics শীর্ষক আপীলটিও দেখুন। (ASA 36/005/2006)

    (গ) প্রাচ্যদেশীয় মানবাধিকার বিতর্কে ‘কালচারাল রিলেটিভিসম’ এর যুক্তিটি প্রায়ই দেখানো হয়ে থাকে জবরদস্তিমূলক উন্নয়নের সমর্থনে। এসবের পাশে ‘কনফুসিয়ানিজম’ ইত্যাদি নানা অজুহাত দেখিয়ে দমনমূলক authoritarian শাসনকে জায়েজ করার চেষ্টা হয় প্রায়ই। নীড় সন্ধানী এবং তার সিঙ্গাপুরীয় বন্ধুরা হয়তো সে ধারার অনুসারী। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এসবের ভিত্তিতে দাঁড় করানো trade off hypothesis (যেটি সিঙ্গাপুরের মত দেশগুলো অনুসরণ করে) এর এমনকি (টেকসই, দীর্ঘমেয়াদী অর্থে) অর্থনৈতিক তত্ত্বগত ভিত্তিও সমালোচনার উর্ধে নয়। এ বিষয়ে আমি কোন বিশেষজ্ঞ নই; বিশেষজ্ঞরা লিখলে কৃতজ্ঞ হব। মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের: Human Rights in Singapore – Transgressions of the Dominant Western Concept of Human Rights শীর্ষক এই গবেষণা নিবন্ধটি আপাতত পড়ে নেয়া যেতে পারে। (কাতিয়া ফুনকেন এর লেখাটির পিডিএফ কপি এখানে)।

    ৩.
    সুবিধাভোগীরা সব দেশে সব কালেই উপস্থিত। বাংলাদেশেও একসময় তারেক-ফালুরা ছিল (এখনো আছে), দাপটের সাথে। এঁদের তো কখনোই অসুখী হওয়ার কথা না। এমন সুখী মানুষ সিঙ্গাপুরের মধ্যবিত্ত আর উচ্চ মধ্যবিত্ত এলিটদের মধ্যেও থাকবেন, তাতে আর বিচিত্র কি। আর স্যাম্পল সাইজের কথাটাও আগেই উল্লেখ করেছি, তাই পূনরাবৃত্তি করতে চাইনা। প্রশ্ন হল:

    (ক) যে দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতাই অনুপস্থিত, সে দেশের মানুষ যে ভালো আছে, সেই অসাধারণ সত্যটা কিভাবে জানা গেল?
    (খ) সিঙ্গাপুরের সরকারের যদি লুকোনোর মত কিছু নাই থাকবে, সে দেশের মানুষেরা সত্যিই যদি এত ভালো থেকে থাকে, তাহলে সেখানে মতপ্রকাশের এবং সংগঠনের স্বাধীনতা দিতে এত আপত্তি কেন? ঠিক কি লুকোনোর চেষ্টা সে দেশের সরকারের?

    স্বচ্ছতা, মিডিয়ার স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলোর সাথে প্রকৃত মানব উন্নয়ন, টেকসই সমৃদ্ধি আর ‘গণমানুষের সুখ/পরিপূর্ণতা’ নিয়ে অমর্ত্য সেন, জাঁ দ্রে, এবং জোসেফ স্টিগলিট্জরা গবেষণা সমর্থিত হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখে গেছেন। আমার তাতে কিছু যোগ করার নেই। সুতরাং, নীড় সন্ধানীর মত মানুষরা যতই চেষ্টা করুক বাকী দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার, তাতে লাভ খুব একটা হবেনা। নিজের ভাষায় উনি নিজে “বো**দা” হতে পারেন, দেশের আর সব মানুষ “বো**দা” নয়।

    ৪.

    আলোচনাটি অবশ্য শুরু হয়েছিল সিঙ্গাপুর নিয়ে নয়। ১/১১ পরবর্তী আশা এবং আশাভঙ্গের কারণ নিয়ে। তাই তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে পেটেভাতই সব কিছুর মূল কথা (যা নীড় সন্ধানীর মত মানুষের সিঙ্গাপুর ইত্যাদি প্রীতির মূল ভিত্তি), তখন একটি সাধারণ প্রশ্ন করবো। আমি জানতে চাইবো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সামরিক চরিত্রের রাজনীতিহীন সরকার কি পেরেছে সেই ন্যূনতম পেটে ভাতও নিশ্চিত করতে? গত দেড় দু’বছরে আমরা ইতোমধ্যে যে সব নমুনা দেখেছি, তাতে সামরিকতন্ত্রের (authoritarian regime এর) তত্ত্বাবধানে সরকার যে ভবিষ্যতেও সেই তথাকথিত “পেটেভাত” সেক্টরে কি performance দেখাবে, তা জানতে স্ফটিক গোলক ব্যবহার করতে হয়না। কেউ বলেছেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকলে আমরা নাকি লালু-ফালু-তারেকদের দূর্নীতির কথা জানতে পারতাম না। আজ যখন সেই লালু ফালু তারেকরা গলায় ফুলের মালা নিয়ে জেল থেকে বীরবেশে বেরিয়ে আসে, তখন নীড় সন্ধানীদের কেমন লাগে? এই ক্ষেত্রে নীড় সন্ধানীর স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বলে সমবেদনা জানাই। কিন্তু সেই সাথে এও প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে: কিসের ভিত্তিতে এদের (তত্ত্বাবধায়কের) ওপর এত আশা করেছিলেন? দূর্নীতি দমন করা কি সেনাবাহিনীর কাজ? দেশের মানুষের পেটে ভাত জোগানো কি সেনাবাহিনীর কাজ? অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়ন কি সেনাবাহিনীর কাজ? পৃথিবীর কোন্ দেশে কোন্ কালে অনির্বাচিত সরকার দিয়ে রাতারাতি দূর্নীতি নির্মূল হয়ে গেছে সমাজ থেকে? ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে রাজনৈতিক সরকাররা যে কাজগুলো করতে হিমশিম খায়, কোন্ যুক্তিতে একদল মানুষ ভেবেছিল যে জনৈক মঈন-ফখরু এসে সেখানে ম্যাজিক দেখিয়ে দেবে?

    ৫.

    নিজের দেশ আর দেশের মানুষকে ছোট করতে ইনটিগ্রিটি লাগেনা, আশাবাদ লাগেনা। দায়িত্ববোধ কিংবা আত্মসন্ম্মানও লাগেনা। কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হতাশাবাদ এবং আদর্শিক দৈউলিয়াত্ব, কারণ সেসব অনেক সহজ। আর যদি উল্টো অবস্থান নিতে হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বটা একটু বেশীই নিতে হয়। কারণ, দায়িত্বশীলের সব কিছু এক কথায় উড়িয়ে দেয়ার বিলাসিতা নেই; পরস্ত্রীর সুশ্রীতা নিয়ে কাতর হবার সুযোগ নেই। যখন কেউ বলেন যে বাংলাদেশের সিঙ্গাপুরের ধারে কাছে যেতে ২০০ বছর লাগবে, তখন তারা বহু চড়াই উৎরাই পেরুনো আমাদের এই গরীব দেশটির অর্জনগুলোর কথা ভুলে যান। জন্মেছে অবধি অর্ধেকেরও বেশী সময় যে দেশ ছিল সামরিক সরকারের অধীন, যে দেশটি তাদের প্রধান সমস্ত রাজনৈতিক নেতাকে হারিয়েছে অবিবেকী হত্যাযজ্ঞে – সে দেশটি অন্তত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিল স্বাক্ষরের স্পর্ধায় আর স্বচ্ছতায় সিঙ্গাপুর থেকে তো অন্তত এগিয়ে, অনেক এগিয়ে। নিচের এই দু’টি স্ক্রীন শট দেখলেই তা স্পষ্ট হবে:

    সিঙ্গাপুরের স্বাক্ষরিত মানবাধিকার দলিলসমূহ: এখানে দেখুন

    বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত মাববাধিকার দলিলসমূহ: এখানে দেখুন

    স্পর্ধা একেই বলে নীড় সন্ধানী। ‘৯০ পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক সরকার এবং গণতন্ত্র ছিল বলেই এই স্পর্ধাটুকু আমাদের সরকারগুলো দেখাতে পেরেছে, বা দেখাতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের গণতন্ত্রে যত খুঁতই থাকুক না কেন, আমাদের মুক্তিকামী জনগণ এর চেয়ে কমে সন্তুষ্ট হোতোনা। দলিলে স্বাক্ষর করেছে বলেই কি বাংলাদেশ মানবাধিকারে রাতারাতি আদর্শ অবস্থানে পৌঁছে গেছে? যায়নি। কিন্তু, যে দেশের মানুষ এতটা সংগ্রামী এবং মুক্তিকামী, সে দেশের সরকার যে ন্যুনতম এতটুকু করতে বাধ্য হবেই, তাতে কি অবাক হবার কিছু আছে? সুতরাং, নীড় সন্ধানীর মত মানুষদের অনুরোধ করবো, অমূকের কথায় নেচে তমূককে ‘আদর্শ’ মেনে এদেশের মানুষগুলোকে এবং তাদের অর্জনকে অন্তত অপমান করবেন না।

    ৬.
    সবশেষে আরো একটি বিষয় যোগ করতে চাই। স্বাধীনতাহীন দমনমূলক পরিবেশে বড় হলে মানুষের কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। এক পর্যায়ে তারা ‘স্বাধীনতা’ আর ‘মৌলিক অধিকার’ শব্দগুলোর মানেও ভুলে যেতে বসে, সেসবের অন্তর্নিহিত বোধ হৃদয়ে ধারণ তো অনেক দূরের কথা। অরওয়েল, ব্র্যাডবারীর সাহিত্যে আমরা এর ভুরিভুরি উদাহরণ দেখেছি। শুনেছি, সোভিয়েত শাসনের মাঝামাঝি পর্যায়ে সেখানকার স্কুলের শিশুদের “শোষণ” এবং “দারিদ্র” এই শব্দগুলো/ধারণাগুলো বোঝাতে খুব বেগ পেতে হোতো শিক্ষকদের। কারণ, জন্মেছে অবধি সেই শিশুরা কখনো দারিদ্র কিংবা শ্রেনীগত শোষণ চোখে দেখেনি। সেক্ষেত্রে বদ্ধ পরিবেশে বেড়ে ওঠা “বাঘ্র সমাজের” (Asian Tigers) অনেক এশীয় – ‘স্বাধীনতা’, ‘গণ আন্দোলন’ ইত্যাদির মর্ম সেভাবে বুঝতে পারবেন, তা হয়তো আশা করিনা। তবে চিন্তিত হব, যদি আমাদের দেশের মুক্তিকামী মানুষকে (যারা এই দেশটি শুরুই করেছে মুক্তির বাণী বুকে ধরে) কেউ যদি তেমন zombie হিসেবে রূপান্তর করার সপক্ষে যুক্তি দেখান নিজেদের ব্যক্তিগত রাগ ক্ষোভ হীণমন্যতা থেকে।

    এখানেই শেষ করছি। মুখের ভেতরটা তেতো লাগছে। কতখানি অভাগা হলে আজ আমাদের এসব (‘কেন সিঙ্গাপুর অনুসরণীয় নয়?’) নিয়েও বিতর্ক করতে হয়! ধিক্ আমাদের ভাগ্য।

  12. নীড় সন্ধানী - ১৯ অক্টোবর ২০০৮ (৭:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    @ ইনসিডেন্টাল ব্লগারঃ

    সিঙ্গাপুর নিয়ে তর্ক করতে হচ্ছে বলে আমিও দুঃখিত। না করেও উপায় ছিল না। কারন আমাদের দুজনের দেখার কৌনিক ব্যবধান অনেক বেশী। আপনি দেখেছেন উচ্চমার্গীয় তাত্ত্বিক মানবাধিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে আর আমি দেখেছি আম জনতার দৃষ্টিতে। আপনি যা দেখেন আমি তা দেখি না। কারন আমি যাদের সাথে কথা বলি, আলোচনা করি, সবাই সাধারন মানুষ। সাধারনভাবে সাধারন চোখে যা দেখেছি তার ভিত্তিতেই বলেছি। সাধারন মানুষের কাছ থেকে উল্লেখ করার মতো খারাপ কোন রিপোর্ট পাইনি। পৃথিবীর কোন দেশই বেহেশত না। চাইলে সুইজারল্যান্ডেরও খুটিনাটি দোষ বের করতে পাবেন। কিন্তু দেখতে হবে দেশটি জীবন মরনের কোন সমস্যায় আছে কী না।

    তাছাড়া সিঙ্গাপুরের সমস্যার সাথে বাংলাদেশের সমস্যার মিলানোর কোন যুক্তি নেই। কারন সিঙ্গাপুরের সমস্যা হলো ড্রইংরুমের সমস্যা (ওদের টিভি চ্যানেলে আমাদের মতো মুক্ত রাজনৈতিক আলোচনা হয় না), আর আমাদের সমস্যা হলো রান্নাঘরের (আমাদের রান্নাঘরে চাল-ডাল-নুন-তেলের যোগানের ঠিক নেই)। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে যতলোক মারা যায়, ওখানে পুরো বছরেও তা যায় না। কার সাথে কী তুলনা। তুলনা করেছি শুনলেও দুনিয়ার লোক হাসবে। এটা নিজের দেশের ইমেজকে ছোট করা নয়। কিন্তু তিক্ত সত্যকে স্বীকার করা। এটা স্বীকার করার মধ্যে কোন লজ্জা নেই। ন্যাংটোর আবার বাটপারে ভয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে এই অজুহাতে গত জোট সরকার অনেক বর্বর ঘটনাকে অস্বীকার করেছিল। সাইফুর রহমান বলেছিল বাংলাদেশ এখন আর দরিদ্র দেশের মধ্যে পড়ে না, উন্নয়নের প্লাবনের ধাক্কায় ৩য় বিশ্ব থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার কোন লক্ষন নেই।

    সুতরাং সিঙ্গাপুর বাদ দেন। আসুন বরং কাছাকাছি দেশগুলোর সাথে তুলনা করি। ভিয়েতনাম কিংবা ভুটান।

    মাথাপিছু জিডিপি আয় (পিপিপি)-
    বাংলাদেশঃ ১৩০০ ডলার
    ভুটানঃ ৫২০০ ডলার
    ভিয়েতনামঃ ২৬০০ ডলার

    জাতীয় আয় প্রবৃদ্ধির হার-
    বাংলাদেশঃ ৫.৬%
    ভুটানঃ ২২%
    ভিয়েতনামঃ ৮.৫%

    মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচক-
    বাংলাদেশঃ ১৪০ তম
    ভুটানঃ ১৩৩ তম
    ভিয়েতনামঃ ১০৫ তম

    শিক্ষার হার-
    বাংলাদেশঃ ৪৩%
    ভুটানঃ ৪৭%
    ভিয়েতনামঃ ৯০%

    দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেঃ
    বাংলাদেশঃ ৪৫%
    ভুটানঃ ৩১%
    ভিয়েতনামঃ ১৪%

    এই দেশগুলো ১০ বছর আগেও আমাদের অনেক পেছনে ছিল উপরের সূচকে। কোন যাদুর বলে এদের হেন পরিবর্তন? আপনি বলবেন উন্নতি আমরাও করেছি। আমিও বলি করেছি। কিন্তু আমাদের বার্ষিক উন্নয়নের গতি কত আর ওদের কত? গনতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা, মানবাধিকার এসব সুন্দর সুন্দর শব্দের চেয়ে মানুষের জীবন কতটা নিরাপদ, কতটা স্বচ্ছন্দ, কতটুকু স্বাস্থ্য, শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পেরেছি আমরা সেটা ভাবা অনেক জরুরী।

    এখানে সিঙ্গাপুরের মতো ভুটানকেও তুলনা করার জন্য আনার দরকার ছিলনা। বাংলাদেশ আর ভিয়েতনামের অর্থনীতি তুলনা করলেই হতো। কিন্তু ভুটানকে আনতে হয়েছে তাদের সাম্প্রতিকতম উন্নতির কারনে। একসময়কার পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশটি কীভাবে উঠে দাড়াচ্ছে সেটা অনেকে জানে না। ভুটানের রাস্তায় আমাদের মতো পাজেরো বা ল্যান্ডক্রুজার যেমন নেই, আবার কমলাপুর বস্তির মতো জায়গাও নেই। পৃথিবীর ভিক্ষুকবিহীন দেশগুলোর একটি। আইন-শৃংখলার হিসেবে সার্কের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ দেশ। শিক্ষা-চিকিৎসা ফ্রী। সুখী মানুষের দেশ। খোড়াখুড়ি করলে এখানেও মানবাধিকার সমস্যা পাওয়া যাবে, কিন্তু সেরকম ফ্রান্স-আমেরিকায়ও পাওয়া যাবে।

    ২০ বছরের যুদ্ধে জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হওয়া ভিয়েতনামকে ১৯৭৬ সালে দেখে মনে হয়েছিল এ দেশ ৫০ বছরেও দাঁড়াতে পারবে না। নব্বই দশকের শুরুতে ভিয়েতনাম যখন বিশ্বের রপ্তানী বাজারে তার অবস্থান জানান দিচ্ছিল তখন ওরা মাত্র পেরিয়েছে আমাদের স্কোর। কিন্তু তারপর? একটু নীচের হিসেবটা দেখিঃ

    রপ্তানী বানিজ্য- ভিয়েতনাম
    ১৯৯২ ২.৪ বিলিয়ন
    ২০০১ ১৫ বিলিয়ন
    ২০০৭ ৪৮.৩ বিলিয়ন

    রপ্তানী বানিজ্য- বাংলাদেশ
    ১৯৯২ ১.৯ বিলিয়ন
    ২০০১ ৬.৪ বিলিয়ন
    ২০০৭ ১১.৭৫ বিলিয়ন

    ২০০৭-এ এসে যখন ভিয়েতমান ৪৮বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায় আর আমাদের ১২ বিলিয়নও পুরো হয় না তখন ভাবতে বাধ্য হই আমরা মানবাধিকার গনতন্ত্রের নামে রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নকে পুষবো নাকি আত্মতৃপ্তির মিথ্যে ঢেকুর থামিয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখবো বিকল্প কোন রাস্তা আছে কি না। গনতান্ত্রিক রাজনীতিবিহীন ভিয়েতনামী জনগনকে সিঙ্গাপুরের চেয়েও কাছ থেকে দীর্ঘকাল দেখার সৌভাগ্য হয়েছে বলে বলতে পারি ওরা এগিয়েছে একতা ও শৃংখলার জোরে। যে একতা আর শৃংখলা গনতন্ত্রে কখনোই সম্ভব ছিল না। পুর্ন গনতন্ত্র দিয়ে উন্নয়নের স্বাদ পেয়েছে ৩য় বিশ্বে এমন নজীর একটিও নেই। উন্নয়ন চাইলে গনতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠাতে হয়, এটা পরীক্ষিত সত্য। কোরিয়াতে এটা দেখেছি, তাইওয়ানে দেখেছি, হংকংয়ে দেখেছি, মালয়েশিয়ায় দেখেছি, সিঙ্গাপুরের কথাতো বললামই।

    এইযে গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে এত কথা বললাম তার প্রধান কারন গনতন্ত্র এদেশে দুষ্টলোকের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়ে এসেছে। এদেশের গনতন্ত্র কখনো ফ্রান্স, বৃটেন, আমেরিকার গনতন্ত্র হবে না। এমনকি ভারতের মতোও না। আর বাংলাদেশ নিজস্ব মডেলের গনতন্ত্রে উত্তরনের জন্য এখনো প্রস্তুত না। কারন বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি বা নেতৃত্বের আচরন আমাদের তেমন কোন ইঙ্গিত দেয় না। তাই আশাবাদী হওয়ার মতো দুঃসাহস দেখাতে ভরসা পাই না। বর্তমানে যারা রাজনীতির পরিচালক তারা বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন চায়না। গনতান্ত্রিক অরাজকতা তাদের জন্য সুবিধাজনক। ১০০ টাকা খরচ করলে যেখানে একটা ভোটের গতিপথ বদলানো যায়, সেখানে যতই সুষ্টু ভোটের আয়োজন করা হোক না কেন, দেশে সাকা চৌধুরী বা জয়নাল হাজারীদের উত্থান ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। আমি বাংলাদেশে সাকা-হাজারীদের গনতন্ত্র চাই নি। কিন্তু এখন আবার সেই গনতন্ত্রই ফিরে আসছে বোধহয়। সে কারনেই বলি আমার পরিবর্তনের স্বপ্ন মাঠে মারা গেছে।

  13. ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২০ অক্টোবর ২০০৮ (১০:১৫ অপরাহ্ণ)

    @ নীড় সন্ধানী

    আপনাকে ধন্যবাদ আলোচনাটিতে কিছু তথ্য উপাত্ত নিয়ে আসার জন্য। আপনার অনেকগুলো কথার সাথেই আমি একমত; বিশেষত যেখানে আপনি ১০০ টাকায় ভোট বদলে যাওয়ার বাস্তবতাটি উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়েও কোন দ্বিমত নেই যে এদেশের রাজনৈতিক নেতারা যখন বেগতিক অবস্থায় পড়েছেন অতীতে তখন তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন ‘গণতন্ত্র’, ‘মানবাধিকার’ এই ধারণাগুলোকে; আবার দূরবস্থা থেকে উত্তরণের পর খুব conveniently সেসব ভুলেও গেছেন। আপনি যে দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধারণাগুলোর ব্যাপারে আপনার ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করছেন, তা যে একেবারেই বুঝতে পারছিনা তা কিন্তু নয়। আপনার মূল আবেগটির কিছু অংশ আমিও ধারণ করি এই দেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে। এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, রুগ্ন গণতন্ত্রের এই দেশে আপনি রোগের যে সব লক্ষণ চিহ্নিত করেছেন, তার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত; কিন্তু রোগের প্রতিকার হিসেবে আপনি যে পথ সুপারিশ করেছেন, তার সাথে একমত নই। কারণগুলি আগেই ব্যাখ্যা করেছি; তার সাথে নিচের কিছু বিষয় যোগ করতে চাই।

    ১.

    ‘গনতন্ত্র, রাজনীতি, সংবিধান’ এই শব্দগুলো দুর্দিনে দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদরা ব্যবহার করে আসলেও এই ধারণাগুলোর মালিকানা কিন্তু তাদের নয়। এই ধারণাগুলো পৃত্থিবীর দেশে দেশে সাধারণ মানুষের শত বছরের সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের ফসল। আজ কোন রাজনৈতিক নেতা এসবের অসদ্ব্যবহার করেছে বলেই এধারণাগুলো ভ্রান্ত বা অর্থহীন হয়ে যায়না। কারণ, দিনের শেষে, এই ধারণাগুলোই সাধারণ মানুষকে রক্ষা করে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাত থেকে, শক্তিশালী কর্পোরেশনের হাত থেকে, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতার হাত থেকে। এই সুরক্ষাগুলোও যদি কেড়ে নেয়া হয় – দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদদের শায়েস্তা করার নামে, তাহলে সাধারণ মানুষের বুঝি আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা।

    ২.
    রাজনীতির দুর্বৃত্তরা যে ‘শুধু’ গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের ছায়ায়ই বাড়তে পারে, তা কিন্তু ঠিক নয়। ষাটের দশকের শেষাংশে ছাত্র রাজনীতিতে যখন পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারের চক্রান্তে সন্ত্রাস প্রবেশ করানো হয়, তা কি গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের ছায়ায় করা হয়েছিল? ‘৭৫ এ যে দেশের প্রধান সব রাজনৈতিক নেতাকে (বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা) হত্যার মাধ্যমে দেশে রক্তপাতের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তা কি ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে’ সমুন্নত করতে? নাকি উল্টোটা নিশ্চিত করতে? সত্তরের দশকের শেষাংশে যখন জামায়াতী ইসলামীর মত দলকে পূনর্বাসিত করা হয়েছিল, তা কি কোন সাংবিধানিক ধারাকে সমূন্নত করতে? সবশেষে জেনারেল এরশাদের আমলে যখন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দূর্বৃত্তায়নের ষোল কলা পূর্ণ করা হল, তা কি কোন ‘গণতন্ত্রের ঢাল’ ব্যবহার করে করা হয়েছিল? নাকি উল্টোটা? এসব বলার উদ্দেশ্য একটাই। তা হল, দূষণটা রোধ করতে গিয়ে আমরা যেন মুক্ত বাতাসের পথও বন্ধ করে না দিই। তাতে জনগণের কোন লাভ হয়না, বরং লাভ হয় সেই সব দুর্বৃত্তদেরই। কারণ, গণতন্ত্র আর মানবাধিকার না থাকলেই যে তারা নির্মূল হয়ে যাবে, সেরকম আশাবাদের কোন কারণ দেখিনা। যে শ্রেণীটির কথা বলছি আমরা, এরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও ঠিকই বহাল তবিয়তে টিকে থাকে, সেটাই বাস্তবতা। বদ্ধ স্যাঁতস্যঁতে অন্ধকারে কারা বাড়ে তা কি আমরা দেখিনি পৃথিবীর ইতিহাসে? এভাবে যদি সত্যিই রাজনীতি দুর্বৃত্তমুক্ত করা যেত, তাহলে আমারও পূর্ণ সমর্থন থাকতো আপনার যুক্তিতে। সমস্যা হল, এই একপেশে দূর্বৃত্ত দমনযজ্ঞে মাঝখান থেকে ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার আর সাংবিধানিক নিরাপত্তা’র মত জনগণের শেষ আশ্রয়টিও কার্যত সরিয়ে নেয়া হয়। এবং এর পরবর্তী ধাপ হিসেবে নতুন দুর্বৃত্তের আবির্ভাব ঘটে, অথবা পুরনোদেরই ঘসে মেজে নতুন পোশাকে হাজির করা হয়, যেমনটি এখন আমরা দেখছি আমাদের দেশে। আমাদের আপত্তি সেখানেই।

    ৩.
    তৃতীয় যুক্তিটি বোধ করি সমাজতত্ত্ব এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের। যে সমাধান দূর প্রাচ্যে কার্যকর হয়েছে, তা যে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশেও কার্যকর হবে, তার কোন তথ্যগত বা empirical ভিত্তি দেখিনা। ব্যপারটা অনেকটাই speculation হয়ে যায়। আরো একটি কারণে far eastern solution আমাদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবার সম্ভাবনা কম বলে মনে করি। সেটি হল – বাংলাদেশ নামের ক্ষুদ্র এ বদ্বীপটির মানুষের মন মানসিকতা এবং টেমপারামেন্ট যা এশিয়ার বহু দেশের মানুষ থেকেই আলাদা। এ তল্লাটের মানুষ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে তার প্রতিরোধ আর প্রতিবাদ দিয়ে সেটি ভালভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে মনে করি। এরা একদিক থেকে যেমন সরল সাধারণ সাদামাটা, অন্য দিক থেকে তেমনই unpredictable; এরা একদিক থেকে যেমন শান্তিপ্রিয় শান্তিকামী নির্বিরোধী, অন্য দিকে তেমনই প্রতিবাদে আগুনঝরা। চরিত্রের এই সব বৈপরিত্য বাংলাদেশের মানুষের অস্থি মজ্জায়, যা ইতিহাসের সময়ে সময়ে এঁদের একতাবদ্ধ করেছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে, আধিপত্যবাদী নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে। এমনকি নিজের চাইতে বহুগুণ শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরোধিতা করতেও এ তল্লাটের মানুষের কখনো বুক কাঁপেনি। আমি এর কোন মূল্যায়নে যাবোনা; সে কাজ ইতিহাসের। ঠিক হোক ভুল হোক, জ্ঞানী হোক হঠকারী হোক, এই সব নিয়েই আমার দেশের মানুষ, আমি আপনিও তার অংশ। অথরিটেরিয়ান ডান্ডাবাজদের নিয়ন্ত্রণ মেনে নিয়ে স্যালুট ঠোকা মনে হয়না আমাদের ধাতে আছে। গত কয়েক’শ বছরে বহু শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী/প্রভু সে চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে কি? হয়নি সম্ভবত এ কারণেই।

    ৪.
    কত কিছুই তো হল এই ছোট্ট দেশটিতে। একের পর এক ঝড় এসে কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। আমাদের হারের সংখ্যাই বেশী। কিন্তু ততখানিই বেশী সম্ভবত আমাদের রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস। ‘৫২ তে এদেশের মানুষ পথে নেমেছিল ভাষার জন্য। রুখে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান নামের সেই মহাপরাক্রমশালী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। স্বাধীন দেশে রুখে দাঁড়িয়েছে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে; ‘৭১ এর স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে। কোন বিচারেই এগুলো শুধু পেটে ভাতের লড়াই ছিলনা। এদেশের অনাহারী কিন্তু স্বাধীনচেতা আত্মমর্যাদাবান মানুষেরা তাদের হৃদয় এবং বিবেক দিয়ে রায় দিয়েছে বারবার। অতীতে উঠে দাঁড়িয়েছে, ভবিষ্যতেও উঠে দাঁড়াবে। আমাদের ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই দেয়। তাই ছোট ছোট বিজয়গুলো যখন দেখি, তখন অনেক পরাজয়ের মধ্যেও আশার আলো দেখতে পাই। পরাজয়গুলোকে তখন আর তেমন অনতিক্রম্য বাধা বলে মনে হয়না। কি আশ্চর্য এই দেশের মানুষ, তাইনা?

    আজ যখন স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের দেখি রাষ্ট্রীয় (এমনকি এ সরকারের আমলেও) সমর্থনপুষ্ট হয়ে সদম্ভে ঘুরে বেড়াতে; দেখি মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত হতে – তখন হৃদয়ে প্রতিনিয়ত রক্তক্ষরণ হয়। তার মধ্যেও যখন দেখি বিজয় দিবসে ঝলমলে তরুণ তরুণীরা আলো হাতে যাচ্ছে স্মৃতি সৌধে – যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে ইউনিফর্মধারীদের দৌরাত্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠছেন – যখন বঙ্গবন্ধুর সেই বিখ্যাত ভাষণটি শুনি – যখন গ্রামের হতদরিদ্র কোন শিক্ষকের কথা শুনি যিনি নিজের শেষ সম্বলটি ব্যয় করে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার দায়িত্বটি হাতে তুলে নিয়েছেন – যখন ক্রিকেটের মাঠে বারবার হেরে গিয়েও কোন এক ছোট্ট বিজয়ে রাস্তার ধারের অভূক্ত টোকাইদেরও লাল সবুজ পতাকা হাতে ছুটে যেতে দেখি – তখন হেমিংওয়ের বুড়ো মাঝি সান্তিয়াগোর কথাই আমাদের মনে আসে, শত প্রতিকূলতার মাঝেও যে হারেনা‌ – নতুন দিনের স্বপ্ন দেখে। আর অন্য সব কিছু বাদ দিলেও এটিই মনে হয় শেষ বিচারে বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের জাতিসত্ত্বার নির্যাস, শত প্রতিকুলতার মাঝেও যে জাতি স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন ছাড়া বোধ হয় আমাদের হারানোর আর কিছু নেই। স্বপ্নদেখা এই দেশের মানুষের প্রতি তাই আমি আস্থা হারাতে রাজী নই।

    নীড় সন্ধানীকে আবারো ধন্যবাদ তার মতামতগুলি তুলে ধরার জন্য। আমি জানি এখানকার সব আলোচনার সাথে সকলে একমত হবেন না। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোর কাছে আমাদের কি প্রত্যাশা তা খতিয়ে দেখার জন্য এই আলোচনাটির বোধ করি দরকার ছিল। সেইসাথে আন্তরিক ধন্যবাদ ফকির ইলিয়াসকে, এই আলোচনাটির সূত্রপাত করার জন্য। ধন্যবাদ সৈকত আচার্য এবং অলকেশ মিত্রকেও।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.