শীতের সন্ধ্যা। হিম-হিম হাওয়া। টিএসসি পেরিয়ে হাঁটছি বইমেলার পথ ধরে। ফেব্রুয়ারি এলে সব পথ যে পথে গিয়ে মেলে, তা হলো বইমেলা প্রাঙ্গণ। হাঁটছি আর ভাবছি। আমাদের বইমেলার মতো এতো প্রাণময় বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও কি আছে? পৃথিবীর আর কেউ কি আমাদের মতো এতো আবেগ নিয়ে বইমেলায় আসে! এতো ভালবাসা বুকে নিয়ে পৃথিবীতে আর কেউ কি নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেয়? এইসব ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছি বইমেলার প্রবেশ তোরণের কাছে। একা। চারপাশে প্রচুর মানুষের ভিড়। কেউ প্রিয় মানুষটির হাত ধরে, কেউ দল বেঁধে এগুচ্ছে বইমেলার দিকে। এদের কাউকেই আমি চিনি না। কিন্তু কেন জানি তাদের সাথে এক ধরনের নৈকট্য অনুভব করছি। কেন? কারণ এই মুহূর্তে আমাদের সবার প্রাণে বাজছে বইমেলার সুর। আমরা সবাই একই নিমন্ত্রণে যাচ্ছি। বইয়ের নিমন্ত্রণে। একা হাঁটছি। তবু একাকিত্ব অনুভূত হচ্ছে না এক ফোঁটাও! বাংলা একাডেমির গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই কয়েক ফুলশিশু এগিয়ে আসে। তাদের হাতে নানা রঙের ফুল। মন ভরে যায়! এক তাড়া ফুল এগিয়ে দিয়ে একটি শিশু বলে, ফুল কিনবেন? আমি বললাম, ফুল তো লাগবে না। — কিনলেই লাগবে। — কীভাবে লাগবে? — কিনেন আফা, কিনেন। পাশের শিশুটি বলে ওঠে। আমি ফুলগুলোর দিকে না তাকিয়ে শিশুদের দিকে তাকিয়ে থাকি। ভাবি, ফাল্গুন আসতে আর কয়দিন বাকি? কেন জানি, ফাল্গুনের জন্য অপেক্ষাটা হঠাৎ তীব্র হয়ে ওঠে! মিষ্টি এই শিশুরা সবাই রঙিন পোশাক পরেছে আজ। তাদের চোখেমুখে আমি ফাগুনের ছোঁয়া দেখি। এতো সুন্দর! ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করি। ক্লিক করতেই মহা খুশি ওরা। আনন্দে বিভিন্ন পোজ দেয়। আমিও একের পর এক ক্লিক করতে থাকি। ওরাও বুঝে গেছে, ওরা মডেল। ছবি তোলা শেষে সপ্রতিভ আবদার, এইবার টাকা দেন, নাইলে ফুল কিনেন। ফুল বেইচে ভাত খামু। ব্যাগ থেকে দশ টাকার একটি নোট বের করে দিলাম। বললাম, এটা নাও, ফুল লাগবে না। শিশুটি মলিন মুখে আমার হাতে ফুলের একটি তোড়া দিল। আমি বললাম, এই ফুলের দাম কি দশ টাকা? সে বললো, না, আরো বেশি, তবু দিলাম। আমি এবার আরো দুটি দশ টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে বললাম, এবার হয়েছে? ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, খুব হইসে! দশ টাকার তিনটি নোট হাতে নিয়ে এমনভাবে ছুট…
শীতের সন্ধ্যা। হিম-হিম হাওয়া। টিএসসি পেরিয়ে হাঁটছি বইমেলার পথ ধরে। ফেব্রুয়ারি এলে সব পথ যে পথে গিয়ে মেলে, তা হলো বইমেলা প্রাঙ্গণ। হাঁটছি আর ভাবছি। আমাদের বইমেলার মতো এতো প্রাণময় বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও কি আছে? [...]