মাত্র ছ’সপ্তাহ আগে বিডিআর এর সদর দপ্তর পিলখানায় হয়ে গেল এক ব্যতিক্রমধর্মী যৌথ সামরিক মহড়া। কি ছিল এই মহড়ার উদ্দেশ্য? এর সরাসরি উত্তর সাংবিধানিক অস্তিত্বহীন এই সরকার দেবে না। চলুন নিজেরাই এর উত্তর সন্ধান করে ফিরি।
ঘটনাস্থল পিলখানা বিডিআর গলফ গ্রাউন্ড। একটি মহড়া দৃশ্য। ঘটনাস্থলের মহড়াদৃশ্য ধারণ করে তোলা খুব বেশী ছবি কিংবা বিভিন্ন রকম সংবাদ পাওয়া যায় না, দেশের প্রধান প্রধান দৈনিকগুলোতে। হয়তো প্রথম আলো-ডেইলী ষ্টার ওয়ালারা এই খবরকে আড়াল করতে চেয়েছিল কিংবা এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ খবর, তা তাদের কাছে মনে হয়নি।
প্রচারের অর্থে অখ্যাত একটি পত্রিকা একটা জরুরী খবর দিয়েছে। গত ২৩ জুলাই ‘০৮ এই খবরটি এসেছে এইভাবেঃ
‘একদিকে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল। শ্লোগান ভেসে আসছে “জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো।” অন্যদিকে পুলিশ হ্যান্ড মাইকে বলছে শান্ত হোন, আপনারা সরকারের ও জনগণের সম্পদ নষ্ট করবেন না। রাজপথ ছেড়ে চলে যান। উত্তেজিত ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে পুলিশের দিকে। অতপরঃ গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং শটগান থেকে গুলিবর্ষণ।’ ‘দৈনিক নয়া দিগন্ত’ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদকের তোলা এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, কিভাবে একজন কল্পিত আন্দোলনকারীকে পাকড়াও করার বিদ্যা হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে।
সত্যিই অসাধারন!! নিজ দেশের ক্ষুধার্ত ও গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঠেঙ্গানোর জন্য দেশীয় আর্মি, নেভী, বিডিআর এবং পুলিশ সহ আরো অনেক পেটোয়া বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে এই মহড়ার আয়োজন হয়েছিল। মার্কিন মেরিন সেনাদের সশস্ত্র ঊপস্থিতিতে ও তত্ত্বাবধানে এই মহড়া সম্পন্ন হয়। নয়া দিগন্ত পত্রিকায় সেদিনের খবরটি এভাবে ছাপানো হয়।
মহড়ার আয়োজন এবং পরিধি থেকে এর উদ্দেশ্য গোপন থাকেনা। সোজা কথায়ঃ গার্মেন্টসের নারী শ্রমিকরা বকেয়া পাওনার জন্য যদি বাংলাদেশের রাজপথে নামে, পাটকলের চাকুরীচ্যুত শ্রমিক যদি তার বকেয়া আদায়ের দাবিতে অনশন করে, সারের দাবীতে কৃষক যদি ইউএনও’র কার্যালয় ঘেরাও করে ও অসাধু ডিলারদের মুখোশ খুলে দেয় এবং গণতন্ত্র জারী রাখার দাবীতে জ্বালাময়ী আগুনবক্তৃতা যদি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কাঁপিয়ে দেয় সেই আতঙ্কে কাঁপতে থাকা এই জনবিচ্ছিন্ন, জবাবদিহিতাহীন ও সাংবিধানিক অস্তিত্বহীন বর্তমান সরকার ফিকির বের করতে থাকে কিভাবে এই সব গোলমাল (!) গুঁড়িয়ে দেয়া যায়। এই সুযোগে, তাদের আন্তর্জাতিক মোড়ল আমেরিকা অত্যাধুনিক ট্রেনিং এর নামে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলন কিভাবে স্তব্দ করে দেয়া যায় তার ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছে খোদ রাজধানীর বুকে বসে।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সঙ্গত। এই অবৈধ সরকারের আমলে মোল্লাদের দু’একটি সাম্প্রদায়িক আস্ফালন ব্যতিত বাকি সকল বিক্ষোভ আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত ও যথার্থ ছিল। বরং যে মাত্রায় বিক্ষোভ হওয়া দরকার ছিল বিভিন্ন ফ্যাক্টরের অনুপস্থিতি বা উপস্থিতির কারণে তা ঠিক অবয়বে রূপ নিতে পারেনি। কিন্ত বিক্ষোভ আছে এবং তা দানা বাঁধছে।
কোন রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে যে দেশে, সে দেশের সাধারণ মানুষ যখন নিতান্ত বাঁচার সামান্য দাবীটুকু নিয়ে রাস্তায় নামে তাকে সন্ত্রাসবাদ ভাবার দুঃসাহস ও স্পর্ধা জেনারেল শাকিল সাহেবেরা (বর্তমান বিডিআর প্রধান) কিভাবে পান তা জানিনা। তবে এটা ঠিক যে, তারা থাকেন অট্টালিকার পরে, অনেক উঁচু থেকে দেশের মানুষকে দেখেন পিঁপড়ার মত, তারা খেলেন গলফ, খান চিকন চাল, পোড়ান কৃষকের টাকায় কেনা সরকারী পেট্রল এবং উড়েন আকাশে। দেশের বাজারের আগুন-উত্তাপ গায়ে লাগে না এদের। কিন্ত উপদেশ খয়রাত বিতরণ করছেন নির্লজ্জের মত দেদারসে। এই এরাই ঢাকায় ডেকে এনেছে বিশ্বজুড়ে বিতর্কিত মার্কিন মেরিন সেনাদের। নন-লেথাল ওয়েপনস কিভাবে আমাদের উপর (সন্ত্রাসবাদীদের !) রাজপথে ব্যবহার করতে হয় তার কৌশল-কসরৎ শিখাচ্ছেন। যে সরকারের দেশ পরিচালনার অধিকারই নেই , তার এ ধরণের আস্ফালন শুধু পাপ নয়, মহাপাপ। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জরুরী। সোফা চুক্তি ও হানা চুক্তির বিরুদ্বে প্রতিবাদ হয়েছে, কিন্ত কোন চুক্তির বলে এসব হচ্ছে তা জানি না। মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ এদেশের বন্দরে ভিড়লে প্রতিবাদ হয়, কিন্ত সেই যুদ্ধ জাহাজের সেনারা এখানে রীতিমত প্রশিক্ষন দেয়া শুরু করেছে, তার বিরুদ্ধে তেমন কোন উচ্চবাচ্য চোখে পড়ল না। এই জঘন্য সামরিক মহড়ার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা জরুরী।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২ comments
রণদীপম বসু - ১১ অক্টোবর ২০০৮ (৬:৫১ পূর্বাহ্ণ)
এই হচ্ছে আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের মহিমান্বিত চেহারা ! বিডিআর যে আমাদের গরীব অসহায় জনগণের কেমন পরীক্ষিত বন্ধু তার আরেকটি নজির দেখুন দৈনিক সংবাদের 24-09-2008 তারিখের পৃষ্ঠায় : http://www.thedailysangbad.com/index.php?news_id=15721&nature=1&cat_id=1&date=2008-09-24
ইমতিয়ার - ১১ অক্টোবর ২০০৮ (৯:৫৬ অপরাহ্ণ)
এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে আরও দেরি হতো, যদি অলকেশ মিত্র না লিখতেন। ধন্যবাদ তাকে, ঘটনাটি তুলে ধরার জন্যে।
আফসোস, এইভাবে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমিয়ে রাখা যায় না বারবার তার প্রমাণ পাওয়ার পরও শাসক শ্রেণী এইসব করে বেড়ায়।
রক্তের দোষ আর কাকে বলে! আর সেই দোষ তো এখন আমাদের অনেকেরও আবার চোখে পড়ার কথা নয়,_ কেননা বাহ্বা দেয়ার মতো কত যে সুশীল লুম্পেন এখন প্রতিযোগিতায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে, গুণে শেষ করা যাবে না।