মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিন্ক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে।
ধন্যবাদ।
আজকের লিন্ক
এখানে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই সুপারিশ করুন এখানে। ধন্যবাদ।
৭ comments
মাসুদ করিম - ১ মার্চ ২০২৩ (৫:৪৫ অপরাহ্ণ)
পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করে গেজেট
https://www.banglatribune.com/others/787760/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%98%E0%A7%8B%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%9F
পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। পরে প্রজ্ঞাপনের গেজেট জারি করে সরকার। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বুধবার (১ মার্চ) কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনের গেজেট জারি করা হয়।
গেজেটে বলা হয়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সোনালি আঁশ পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাটকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছিলেন।
ওইদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বর্তমানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পাটের আঁশের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন থেকে পাট হবে কৃষিজাত পণ্য। এত দিন এটা কৃষিপণ্য ছিল না।
https://twitter.com/urumurum/status/1630987359889293314
মাসুদ করিম - ৮ মার্চ ২০২৩ (৩:১২ পূর্বাহ্ণ)
দশককালের আলোচনা শেষে হল ঐতিহাসিক সমুদ্র চুক্তি
https://bangla.bdnews24.com/world/6o2vmm47ui
এই হাই সী’স ট্রিটিতে সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে সাগর-মহাসাগরের ৩০ শতাংশকে ২০৩০ সালের মধ্যে সংরক্ষিত এলাকায় পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
দশ বছরের আলোচনা, দরকষাকষির পর সাগর-মহাসাগর রক্ষায় ঐতিহাসিক এক চুক্তিতে পৌঁছাল বিশ্বের দেশগুলো।
এই হাই সী’স ট্রিটিতে সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে সাগর-মহাসাগরের ৩০ শতাংশকে ২০৩০ সালের মধ্যে সংরক্ষিত এলাকায় পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
টানা ৩৮ ঘণ্টা আলোচনার পর শনিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে চুক্তিটির ব্যাপারে সবার সম্মতি মেলে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
তহবিল ও মাছ ধরার অধিকার নিয়ে মতানৈক্যের কারণে চুক্তির আলোচনা এতদিন ধরে ঝুলে ছিল।
সমুদ্র রক্ষায় সর্বশেষ যে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল, সেই ইউএন কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সী স্বাক্ষরিত হয়েছিল ৪০ বছর আগে, ১৯৮২ সালে।
ওই চুক্তি হাই সী ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করলেও, তার মাত্র এক দশমিক ২ শতাংশ সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। হাই সী হচ্ছে আন্তর্জাতিক জলসীমা, যেখানে সব দেশের অধিকার, জাহাজ চালানো ও গবেষণার অধিকার রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, অত্যধিক মাছ ধরা ও জাহাজ চলাচলের কারণে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে থাকা সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আছে।
এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে বলে বৈশ্বিক সামুদ্রিক প্রজাতি নিয়ে হওয়া সর্বশেষ পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)।
নতুন চুক্তিতে যেসব সমুদ্রের যেসব এলাকা সংরক্ষিত হিসেবে বিবেচিত হবে সেখানে মাছ ধরা, নৌযান চলাচলের রুট এবং খনন কাজের সীমা, ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার বা তার নিচের সমুদ্র তলদেশ থেকে কখন খনিজ পদার্থ নেওয়া যাবে, তা ঠিক করে দেওয়া হবে।
সমুদ্রে খনন কাজ সেখানকার প্রাণীদের প্রজননে ব্যাঘাত, শব্দ দূষণ সৃষ্টি এবং সামুদ্রিক জীবনকে বিষিয়ে তুলতে পারে জানিয়ে পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সমুদ্রে খনন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল।
চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনে সদস্য দেশগুলোকে ফের বসতে হবে; কার্যকর হওয়ার আগে চুক্তিটি নিয়ে এখনও অনেক কাজ বাকি বলেও জানিয়েছে বিবিসি।
“চুক্তিটি কার্যকর হতে এখনও বেশ খানিকটা সময় লাগবে। বলবৎ হওয়ার আগে দেশগুলোকে চুক্তিটিতে অনুসমর্থন দিতে হবে। এরপর বিজ্ঞান ও কারিগরি কমিটির মতো অনেকগুলো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ঠিক করতে হবে,” বলেছেন পিউস ট্রাস্ট ওশান গভর্নেন্স টিমের পরিচালক লিজ কারান।
মাসুদ করিম - ৮ মার্চ ২০২৩ (৭:০৮ পূর্বাহ্ণ)
‘71 killing ground turned into martyrs memorial park in Sylhet
https://www.tbsnews.net/bangladesh/71-killing-ground-turned-martyrs-memorial-park-sylhet-595818
The Salutikor killing ground in Sylhet, where over 200 freedom fighters were killed in 1971 and which remained inaccessible to people until recently, has been turned into a memorial park for people to come and show respect to the martyrs.
After a wait of 52 years, now relatives and others can come to Shadhinotar Shaheed Smriti Udyan near Sylhet Cadet College and commemorate the martyred freedom fighters.
All this has been possible thanks to the initiative of two freedom fighters – Col (retd) Mohammad Abdus Salam, Bir Protik and Professor Ziauddin Ahmed – who raised funds to develop the abandoned place and erect memorials for the martyrs.
“My father was killed before I was born. We did not even know where his grave was. Now, I am happy that at least we know where my father’s body was buried. When I touched the plaque, I felt the touch of my father, for the first time in my life,” Rina told The Business Standard in an emotion-choked voice.
These mass graves were lying abandoned for a long time as the location is in the reserved area of the cantonment, not accessible to the general public. There was no list of who were killed here.
Freedom fighters Abdus Salam and Ziauddin Ahmed found out the names and addresses of the martyrs lying here. So far 66 people have been identified.
The memorial park was inaugurated on Saturday.
Shahrin Rahman Lubna is the daughter of martyr Col Dr Abu Fazal Ziaur Rahman who was the principal of Sylhet Medical College in 1971. Her family only knew that he was killed by the Pakistani army but nobody knew where he was buried.
“We have been looking for my father’s grave. Today, I found it. I thank from the bottom of my heart those who took this initiative. They have returned my father to us,” said Lubna.
Major Dr (retd) Syed Jamil Abdal, whose father was also killed by the Pakistan army, told TBS, “My father used to work in a tea garden in Sylhet in 1971. We only knew that the army took him to the camp here. We are happy that today we found his memorial and it seems my father was given recognition for his sacrifice.”
Ziauddin and Abdus Salam said that a library, museum, coffee shop and separate seating area will be constructed in this memorial park.
Pakistanis killed freedom fighter Ziauddin Ahmad’s father Dr Shamsuddin Ahmad who was working at Sylhet Medical College. Young Ziauddin was in the war.
“There is no complete list of martyrs in the liberation war. No one knows how many were killed and where they were buried. We are trying to find out. In 2017, we took the initiative to make the killing ground a memorial park,” said Ziauddin.
https://twitter.com/icsforum/status/1633153501764407297
মাসুদ করিম - ১১ মার্চ ২০২৩ (৫:১২ অপরাহ্ণ)
Renewable energy investors squeezed by higher interest rates, costs
https://www.tbsnews.net/analysis/renewable-energy-investors-squeezed-higher-interest-rates-costs-597918
Corporations and investors have been pouring money into renewable energy projects, seeing an opportunity to grasp the Holy Grail of socially conscious investing: do good while doing well.
But sharply higher interest rates have further stressed a model strained by soaring prices for steel and silicon, vital for wind turbines and solar panels.
Higher costs have buyers and sellers of renewable power projects recalculating potential returns, hampering fundraising and mergers and acquisitions (M&A).
For years, the cleantech revolution has attracted big bucks, echoing investment booms that benefited from the zeitgeist around organic food, shale oil and gas, and sustainable fishing ventures.
“I think of the most recent years in the power space and renewables specifically a bit like the shale boom in 2008-2010,” said Bernadette Johnson, head of power and renewables at analytics firm Enverus.
A decade of low interest rates meant borrowers could raise cheap debt to build projects and juice returns. But an era of plentiful materials and financing has given way to constraints.
With the US Federal Reserve projected to raise headline rates to around 5.5% this year and European hawks starting to posit peak rates above 4%, returns are squeezed.
“Some people are starting to lose money. Others are definitely making money but it’s evolving,” Johnson said.
RECUT THE ECONOMICS
Even with President Joe Biden’s Inflation Reduction Act (IRA) and potential state support in Europe, private equity investment in alternative energy including battery and energy conservation technology is heading for the slowest quarter since 2020, according to Refinitiv data.
Refinitiv also projects the value of M&A this quarter will total $5.6 billion, from $17.7 billion last and almost in line with the depths of COVID total between April and June 2020.
RECUT THE ECONOMICS
Even with President Joe Biden’s Inflation Reduction Act (IRA) and potential state support in Europe, private equity investment in alternative energy including battery and energy conservation technology is heading for the slowest quarter since 2020, according to Refinitiv data.
Refinitiv also projects the value of M&A this quarter will total $5.6 billion, from $17.7 billion last and almost in line with the depths of COVID total between April and June 2020.
মাসুদ করিম - ২২ মার্চ ২০২৩ (৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ)
ভাস্কর চলে গেলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ রক্ষণাবেক্ষণে কি অর্থ মিলবে?
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/hhn2a98mqa
শামীম সিকদারের তৈরি ১১৬টি ভাস্কর্যের বেশিরভাগে নামফলক বা পরিচিতি না থাকায় সেগুলো বুঝতে এখনই অসুবিধা হচ্ছে দর্শনার্থীদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ফুলার রোডের শেষ প্রান্তে গেলেই চোখে পড়বে ত্রিভুজ আকৃতির একটি সড়ক দ্বীপ, যেখানে শ্বেতবর্ণের সারি সারি আবক্ষ ভাস্কর্য ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ ভাস্কর্য।
পরিসরের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য হিসেবে পরিচিত এই ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করছে। তার চারপাশে দেশ-বিদেশের শতাধিক ব্যক্তির ভাস্কর্য প্রতিনিধিত্ব করছে বিশ্বের মুক্তিকামীদের।
অযত্ন অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে বেহাল পড়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য। সম্প্রতি ভাস্কর শামীম সিকদার দেশে এসে সেগুলোর মেরামত ও রং করায় নতুনত্ব ফিরে পেয়েছে ভাস্কর্যগুলো, যিনি গত হয়েছেন মঙ্গলবারই।
সবুজ-শ্যামল দৃষ্টিনন্দন চত্বরটির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে যে কাউকে তা কৌতূহলী করে তোলে, অনেককে ছবি তুলতে দেখা যায়। তবে ভাস্কর্যটি সম্পর্কে জানেন না অনেকেই।
স্ত্রীকে নিয়ে সাভার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে এসেছেন শাহরিয়ার আলম। স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য চত্বরের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের ছবি তুলতে দেখা গেল।
আলাপচারিতায় তারা জানালেন, বঙ্গবন্ধু, শেরে বাংলাসহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাধারণ মানুষদের ভাস্কর্য তাদের নজর কেড়েছে।
শাহরিয়ার বললেন, “এত বিশাল ভাস্কর্যের মহত্ব বা বিশেষত্ব কী- আমাদের জানা নেই। তবে এখানে একটা বিষয় আমাদের নজড় কেড়েছে। সেটা হলো- এখানে প্রাকৃতজন থেকে শুরু করে বিশ্ব বিখ্যাতদের ভাস্কর্য স্থান পেয়েছে। এ যেন অনেক গুণী মানুষদের মহামিলন মেলা।”
দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ ভাস্কর্য চত্বরটি খোলা থাকে। দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে ভাস্কর্য চত্বরে প্রবেশ করতে পারেন, ফলে প্রতিদিনিই দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
বান্ধবীদের নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য চত্বরে ঘুরে দেখছিলেন ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী ফারহানা তাবাচ্ছুম।
তিনি বললেন, “আমরা মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে এসেছি। এই দিক দিয়ে যাওয়ার পথে ভাস্কর্যগুলোতে চোখ আটকে গেল। এক সাথে এতগুলো ভাস্কর্য কোথাও দেখি নাই। তাই অনেকগুলো ছবি তুলে নিলাম।
“এখানে দেশ-বিদেশের অনেক মহান ব্যক্তিদের ভাস্কর্য দেখতে পেয়েছি। তবে অধিকাংশ ভাস্কর্যে নামফলক বা পরিচিতি না থাকায় সেগুলো বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল।”
হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে এসেছে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য ঘুরে দেখার পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলছিল, একসাথে অনেকগুলো ভাস্কর্য দেখলাম। অনেক গুণীজন সম্পর্কে জানতে পারলাম।
“স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের গুলিবিদ্ধ ভাস্কর্যটা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে। এভাবে একজন নূর হোসেনকে জীবন্ত রাখা যায়, তা না দেখলে বুঝতে পারতাম না।”
স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের যাত্রা
ভাস্কর শামীম সিকদার ১৯৮৮ সালে ফুলার রোডে অবস্থিত সেকেলে বাংলো স্টাইলের বাড়ির (বর্তমানে প্রোভিসির ভবন) সামনের পরিত্যক্ত জায়গায় ‘অমর একুশে’ নামে একটি বিশাল ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করেন। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রয়াত অধ্যাপক আহমদ শরীফ এটি উদ্বোধন করেন। ১৯৯৮ সালে ওই স্থানে উদয়ন স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হলে ভাস্কর্যটি স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়। ভাস্কর্যটি সড়কদ্বীপে এনে রাখা হয়।
পরে ভাস্কর শামীম সিকদার ওই ভাস্কর্যটির অবয়ব পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ নাম দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোকে নতুনভাবে নির্মাণ করেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন ভাস্কর্য দিয়ে সড়ক দ্বীপটিকেও তিনি নিজের মনের মতো গড়ে তোলেন। ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন।
ভাস্কর্য চত্বরটি মূলত স্বাধীনতা সংগ্রাম মনুমেন্ট ঘিরে, যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ভাষা অন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদের মুখাবয়ব স্থান পেয়েছে। মনুমেন্টটির নিচে ভাষা শহীদের ভাস্কর্য এবং সবার উপরে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় নেতৃত্বের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর তার মাথার উপর দিয়ে লাল সবুজ পতাকা উড়ছে সগৌরবে।
শ্বেতবর্ণের এ মনুমেন্টের উচ্চতা ৬০ ফুট এবং পরিসীমা ৮৫.৭৫ ফুট, যা একটি গোলাকার ফোয়ারার মাঝখানে স্থাপিত। এতে ঝর্ণা, লাইট ও সাউন্ড সিস্টেম রয়েছে। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে লাইট ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।
মূল ভাস্কর্য স্বাধীনতা সংগ্রামকে ঘিরে সড়ক দ্বীপের চত্বরটিতে মোট ১১৬টি ভাস্কর্য রয়েছে। সেগুলো দেশ-বিদেশের শতাধিক কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, বিপ্লবী, রাজনীতিক, বিজ্ঞানীর আবক্ষ ভাস্কর্য। এসব ভাস্কর্যের কোনোটি একক, কোনোটি যুক্ত।
এখানে রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জগদীশ চন্দ্র বসু, মাইকেল মধুসুদন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত, ড. মো. শহীদুল্লাহ, শিল্পী সুলতান, জিসি দেব, সুভাস বোস, কামাল আতাতুর্ক, মহাত্মা গান্ধী, রাজা রামমোহন রায়, মাও সে তুং, ইয়াসির আরাফাত, কর্নেল ওসমানী, তাজউদ্দীন আহমদ, সিরাজ সিকদারের প্রতিকৃতি। ভাস্কর শামীম সিকদারেরও দুটি প্রতিকৃতি রয়েছে। আরও রয়েছে একটি হাতির চিত্তাকর্ষক ভাস্কর্য।
শামীম সিকদার নিয়োজিত কিউরেটর মো. ইমরান হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্বর্যটি মূলত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে রিপ্রেজেন্টের একটা জায়গা। এই জায়গাটাতে শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের স্বাধীনতাকামী, যারা মেহনতি মানুষের কথা বলেছেন, মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন তাদেরকে একটা রিপ্রেজেন্ট করা হয়েছে।
“স্বাধীনতা সংগ্রাম চত্বরের মূল বিশেষত্ব হলো এখানে শুধু মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নয়, স্বাধীনতার সাথে যারা রিলেটেড, স্বাধীন দেশের জন্য মূল যে চালিকা শক্তি শিল্প-সংস্কৃতির স্বাধীনতাকেও এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে কিন্তু শিল্পের ধারক-বাহকদেরও ভাস্কর্য আছে। সকল ধরনের মানুষদের নিয়েই কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম চত্বর গড়ে উঠেছে।”
রক্ষণাবেক্ষণে অর্থের অভাব
স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য চত্বরের নির্মাতা শামীম সিকদার হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন নিরাপত্তা প্রহরী ও একজন মালী এখানে নিয়োজিত করা হয়েছে।
তবে তা রক্ষণাবেক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো বাজেট নেই বলে জানান কিউরেটর মো. ইমরান হোসেন।
তিনি বলেন, “শিল্পকর্ম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিন্তু ভালো বাজেটের দরকার। বাজেট না থাকায় দীর্ঘদিন বেহাল ছিল এই ভাস্কর্য চত্বর। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে বটগাছ জন্মেছিল। ভাস্কর শিল্পী শামীম সিকদার ব্রিটেন থেকে দেশে ফিরে ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে এটা মেরামত করেছেন, রঙ করিয়েছেন।
“বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি প্রতি বছর ভাস্কর্যগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখত, তাহলে তা সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যের জন্য কাজ করা যেত।”
অর্থের অভাবে সব ভাস্কর্যে নামফলক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে ইমরান বলেন, “প্রত্যেকটা ভাস্কর্যে যদি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা যেত, তাহলে তরুণ প্রজন্ম এই শিল্পকর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারত। সংস্কৃতি বিকাশে এটা অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে। এগুলো করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। মানসম্পন্নভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের অনেক কিছুই নেই।
“গুণগত ও মানসম্পন্ন কোনো কিছু করতে হলে ভালো ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট থাকতে হয়। আর্থিক সাপোর্টের জন্য আমরা বিষয়টি ইউজিসির কাছে উপস্থাপন করব।”
================================================
ভাস্কর শামীম সিকদার আর নেই
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/dvovbjhspj
স্বোপার্জিত স্বাধীনতাসহ অনেক ভাস্কর্যের শিল্পী শামীম সিকদার আর নেই।
একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম সিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক অধ্যাপক।
ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন শামীম সিকদারের ভাস্কর্যগুলোর কিউরেটর মো. ইমরান হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিজের শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করতে কয়েক মাস আগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন শামীম সিকদার। দেশে ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তিনি প্রায় এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
সিরাজ সিকদারের বোন শামীম সিকদারের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তারা দুজনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুধবার বেলা ১১টায় শামীম সিকদারের লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে জানান ইমরান হোসেন।
তিনি বলেন, চারুকলা অনুষদে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ শহীদ মিনার কিংবা তার যে কোনো একটি ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তার পরিবারের সদস্য ও শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহাম্মদপুরে শামীম সিকদারের বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ইমরান।
শামীম সিকদারের জন্ম ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর। তিনি গত শতকের আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা শুরু করেন। অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেওয়ার পর ৮ বছর আগে তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান।
১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যটি তৈরি করেন শামীম সিকদার। জগন্নাথ হলের সামনে স্বাধীনতার সংগ্রাম ভাস্কর্যটিও তারই করা।
২০০০ সালে একুশে পদক পান শামীম সিকদার।
মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০২৩ (২:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
Raccoon dog data sparks new debate about Covid origins
https://today.thefinancialexpress.com.bd/last-page/raccoon-dog-data-sparks-new-debate-about-covid-origins-1679678767
New evidence that raccoon dogs were at the Chinese market where Covid is suspected to have first infected humans has reignited debate over the origin of the pandemic.
The researchers who unexpectedly stumbled over the genetic data say that it supports-but cannot definitively prove-the theory that the virus originated in animals, possibly first jumping over to humans at the market in the city of Wuhan.
The issue has proved divisive for the scientific community and even different US government agencies, with some maintaining that the virus likely leaked from a Wuhan lab-a claim that China has angrily denied.
Maria Van Kerkhove, the World Health Organization’s technical lead on Covid, said the new data “doesn’t give us the answer of how the pandemic began, but it does provide more clues”.
The data comes from swabs collected by a Chinese team in January and February 2020 at the Huanan Seafood Market, the site of one of the earliest Covid clusters, before it was shut down and cleared of animals.
International researchers including Florence Debarre, an evolutionary biologist at France’s CNRS research agency, were surprised to come across the data on the GISAID global science database earlier this month.
They managed to download the data before it was removed from GISAID at the request of the Chinese researchers who first posted it.
Debarre and colleagues informed the WHO about their discovery last week, when some media outlets started reporting on the data’s existence.
This week the researchers published a report, which has not been peer-reviewed, saying that DNA from the samples shows that raccoon dogs, palm civets, Amur hedgehogs and bamboo rats were present at the market.
Raccoon dogs, whose closest relatives are foxes, are in particular known to be able to carry and transmit viruses similar to SARS-CoV-2, which causes the Covid disease.
That means they could have acted as an intermediary host between humans and bats, in which Covid is suspected to have originated.
Some of the samples containing raccoon dog DNA were also positive for SARS-CoV-2.
However because the samples were taken from sites at the market and not directly from the animals, it was not possible to prove the raccoon dogs had Covid.
Notably, there was very little human DNA in one of the positive samples, raising the likelihood that it was the raccoon dog that had the virus.
“We cannot rigorously demonstrate that the animal was infected, but it is a plausible explanation,” Debarre told AFP.
Even if it could be proved that the raccoon dogs were infected, it would be difficult to show they gave Covid to humans-and not the other way around.
The data is “one additional piece of the puzzle that supports an origin of the pandemic linked to Wuhan’s animal trade,” said virologist Connor Bamford of Queen’s University Belfast.
But “it is unlikely to provide irrefutable evidence,” he said on The Conversation website.
There have been increasing calls for all information on the origins of Covid to be publicly released.
US President Joe Biden signed a law earlier this week declassifying intelligence material on the subject, after his energy department concluded with “low confidence” that the virus probably came from a lab.
That assessment contradicted the conclusion of several other US agencies-but not the FBI.
After being informed of the new Huanan samples, the WHO again called on China to release all its data from the early days of the pandemic.
“These data could have-and should have-been shared three years ago,” WHO chief Tedros Adhanom Ghebreyesus said late last week.
Alice Hughes, an expert in biodiversity analytics at the University of Hong Kong, said that some researchers in China had known about the existence of the samples since April 2020.
Hughes told AFP this “critically important” information should have been made public earlier, adding that she believed it was “very likely that this is the source of spillover of SARS-CoV-2”.
The authors of the new report said that more data was still missing.
There is “absolutely crucial data which sheds light on the start of the pandemic” that the researchers “cannot share because it’s not ours,” Debarre said.
“The more people who look into it, the more we will be able to extract information,” she added.
মাসুদ করিম - ৩০ মার্চ ২০২৩ (৩:৪৫ অপরাহ্ণ)
ঢাবি অধ্যাপকের বাঙালি, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর উপর অমার্জনীয় লেখনী
https://bangla.bdnews24.com/opinion/xhe8u4e9xy
গণহত্যা, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইত্যাদি বিষয়ে যিনি নিজেই অজ্ঞতা এবং ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত, তিনি তার ছাত্রছাত্রীদের কী শেখাবেন? তিনি নিশ্চয়ই জেনোসাইড সেন্টারে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং গণহত্যা নিয়ে ভ্রান্তিকর, উদ্ভট এবং মনগড়া কথাই শেখাবেন।
কয়েক সপ্তাহ আগে বিলেতের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে গণহত্যার ওপর গবেষণারত কয়েকজন আমার কাছে যে বইটি পাঠিয়েছিলেন, সেটি পড়ে আমার ভিমরি খাওয়ার দশা। বইটির লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন অধ্যাপক, নাম ইমতিয়াজ আহমেদ, যিনি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ’-এর প্রধান। যে কটি বিষয় আমার ভিমরি খাওয়ার কারণ ঘটিয়েছিল, তার একটি হলো তার লেখা এই যে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ বলার পর ‘জয় পাকিস্তান’ বলে তার ভাষণ শেষ করেছিলেন। ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ নামক বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত অধ্যাপক ইমতিয়াজ লিখেছেন তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজে হাজির হয়ে বঙ্গবন্ধুকে ‘জয় পাকিস্তান’ বলতে শুনেছেন। অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের ইংরেজি ভাষায় লেখা বইয়ের উল্লিখিত অংশ বাংলায় তরজমা করলে যা দাঁড়ায়, তা নিম্নরূপ:
“পাকিস্তান শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের জন্য তার ওপর দোষ চাপাতে পারত না, যেটি ছিল একজন রাজনৈতিক প্রতিভাবানের মাস্টার স্ট্রোক কেন না তিনি ঘোষণা করেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। কিন্তু একই সাথে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’ বলে তাঁর ভাষণ শেষ করেছিলেন। এটা উল্লেখযোগ্য যে ‘ইনডেপেন্ডেন্স’-এর বাংলা শব্দ স্বাধীনতা হলেও, এই শব্দটির একাধিক অর্থ হতে পারে, যথা ফ্রিডম। তাই ওই ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল, যেটি আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ, সেটি ভাবা ঠিক নয়।” তিনি আরও লিখেছেন, “এই বইয়ের লেখক সে সময়ের রেসকোর্স, বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ উপস্থিত ছিলেন বিধায় পুরো ভাষণটি শুনতে পেরেছিলেন। এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে কিছু লোক, যারা রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলেন, তারা মুজিব জয় পাকিস্তান কথাটি বলেননি বলে দাবি করেন। আমি মনে করি তারা সম্ভবত শ্রবণ সমস্যার জন্য এমনটি বলেন। যারা মঞ্চের কাছে ছিলেন, অথবা মাইক্রোফোন থেকে দূরে ছিলেন তারা সম্ভবত শেষ কথাটি শুনতে পাননি, কেননা তখন হাজার হাজার লোক উত্তেজনাপ্রসূত হলে সেখানে প্রচুর চিৎকার ধ্বনিতে পরিবেশ এমন হয়ে গিয়েছিল যে তারা শেষ শব্দ অর্থাৎ জয় পাকিস্তান কথাটি শুনতে পাননি। এমনকি পাকিস্তান সরকার বা জুলফিকার আলি ভুট্টোও ওই ভাষণের পর মুজিবের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগ আনেননি।” (পৃষ্ঠা ৪০)। অধ্যাপক ইমতিয়াজ বোঝাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি।
বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এই তত্ত্বের উদ্ভাবক। সাবেক বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানও একথা বলে নিন্দিত হয়েছিলেন। এমন কথা সাবেক এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারও তার বইয়ে লিখেছিলেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ হলে তিনি অবশেষে তার সে কথা ভুল ছিল বলে স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। জানা যায়, জনাব খন্দকার তখন বার্ধক্য অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের এবং অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী লোকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই লিখেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলে তার ভাষণে ইতি টেনেছিলেন। সেদিন লন্ডনে ছাত্র হিসাবে অবস্থানরত হলেও বিবিসি বাংলা বিভাগের সিরাজুর রহমান, কমল বোস, শ্যামল লোধ প্রমুখের সহায়তায় আমাদের কজনার সুযোগ হয়েছিল বুশ হাউজে বিবিসি বাংলা বিভাগের স্টুডিওতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পুরোটাই শোনার। তাই নিশ্চিত করে বলতে পারি বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান শব্দ উচ্চারণ করেননি। এমন বহু লোক যারা সেদিন রেসকোর্সে উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের অগ্রজ এবং দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলাম সাহেবেরও অনুজ, মাইনুল ইসলাম (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল) উপস্থিত ছিলেন তারাও নিশ্চিত করেছেন যে বঙ্গবন্ধু কখনো জয় পাকিস্তান বলেননি। গত ১৮ মার্চ বাংলা একাডেমিতে গণহত্যা জাদুঘরের অনুষ্ঠিত এক সভাকালে একাডেমির প্রধান কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেছেন, তিনিও সেদিন রেসকোর্সে উপস্থিত ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু নিশ্চিতভাবে একথা বলেননি।
কিছু লোক বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার উদ্দেশ্যে এই অপপ্রচারটি চালাচ্ছে, নিশ্চিতভাবে অধ্যাপক ইমতিয়াজও তাদের গোত্রভুক্ত। এখানেই শেষ নয়। অধ্যাপক ইমতিয়াজ তার উল্লেখিত পুস্তকে এমন কথাও লিখেছেন যার অর্থ দাঁড়ায় এই যে ১৯৭১-এ বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা ১৯৪৮ সালের ‘জেনোসাইড কনভেনশনের’ আওতায় পড়ে না। জেনোসাইড কনভেনশনের সংজ্ঞাভুক্ত হতে হলে একটি মানবগোষ্ঠী কর্তৃক অন্য এক মানবগোষ্ঠীকে আক্রমণ করতে হয়। এই পার্থক্য হতে পারে (১) জাতীয়, (২) নৃতত্ত্বগত, (৩) বর্ণগত, (৪) ধর্মগত। অর্থাৎ আক্রমণকারী এবং আক্রান্তগণ উপরে উল্লেখিত কোনো পার্থক্যভুক্ত না হলে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত হয় না।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ লিখেছেন পাকিস্তানি এবং বাঙালিরা অভিন্ন। তার কথায় প্রাক্তন পাকিস্তানের দুই অংশের লোকই ধর্মগতভাবে এক। এ ব্যাপারে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু তিনি এও লিখেছেন যে উভয় প্রদেশের লোকই এক ভাষাভাষী কেননা বাংলাও গোটা পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্র ভাষা। তার এই যুক্তি শুধু অবান্তরই নয়, হাস্যকরও বটে। এ কথা বলা সত্যিই উদ্ভট যে, বাংলা এবং উর্দু দুটিই পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা ছিল বৈ ভাষাগতভাবে দুই প্রদেশের মানুষ অভিন্ন ছিল। তার কথায় মনে হয় যে পূর্ব বাংলার সব মানুষই উর্দুতে কথা বলত এবং পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরাও বাংলায় কথা বলত। এই যুক্তি ঠিক হলে ভারতের পাঞ্জাবি, গুজরাটি, বাংলাসহ সব ভাষাভাষী লোকদের অভিন্ন ভাষার লোক বলতে হয়, কেননা হিন্দি ভারতের রাষ্ট্র ভাষা। তিনি আরও লিখেছেন যে, দুই প্রদেশের মানুষকে আলাদা বর্ণ বা গোত্র (এথনিসিটি) ভুক্ত বলা যায় না, কেননা দুই প্রদেশের মানুষের মধ্যে বিবাহের ঘটনা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগও বহুল আকারে ছিল। তার যুক্তি ঠিক হলে পৃথিবীর কোনো অঞ্চলের মানুষকেই অভিন্ন বলা যায় না, কেননা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে প্রতিনিয়ত বৈবাহিক বন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের এ ধরনের যুক্তিকে অর্বাচীনই বলতে হচ্ছে।
সম্প্রদায় হিসাবে বাঙালি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবি, পাঠান, বালুচ ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য যে আকাশ-পাতালসম সে কথা অস্বীকার করে দুই প্রদেশের মানুষকে এক নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বলে অধ্যাপক ইমতিয়াজ যা বলেছেন তা জ্ঞানের মাপকাঠিতে শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, তা হাসির উদ্রেক ঘটাতে বাধ্য। যে সব লোক পাকিস্তানের অভিন্নতার পক্ষে ছিলেন বা আছেন তারাও বলেন না যে বাঙালি এবং পাকিস্তানিরা নৃতাত্ত্বিক অর্থে এক। দুই প্রদেশের কিছু মানুষের মধ্যে বিয়ে হয়েছে বলেই তাদের এক গোত্রভুক্ত বলা মানে পৃথিবীর সবাইকেই এক গোত্রভুক্ত বলা, কেননা গোটা বিশ্বের সকল অঞ্চলের মানুষের সাথে অন্য অঞ্চলের লোকদের বিয়ে হয়েছে এবং হচ্ছে। এমনকি আইয়ুব খানও তার বই ‘ফ্রেন্ডস নট মাস্টারস’-এ পরিষ্কারভাবে বাঙালি এবং পাকিস্তানিদের গোত্রগত পার্থক্যের কথা নোংরা ভাষাতেই বলেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়দের সাথে শারীরিক এবং চেহারাগত সাদৃশ্যপূর্ণ, দ্রাবিড়, অস্ট্রো এশিয়াটিক এবং তিব্বত-বার্মিজ মোঙ্গল রক্তে সৃষ্ট একজন বাঙালিকে ইরান-তুর্কি বৈশিষ্ট্যের এক পাকিস্তানির পাশে দাঁড় করালে, এমনকি ভিন্ন গ্রহ থেকে আগত কেউ তাদের পার্থক্য নিশ্চিত করতে ভুল করবে না। ড. ইমতিয়াজ দুই প্রদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের যে দাবি করেছেন, সেটি খণ্ডন করা জলবৎ তরলং।
তার দাবি ঠিক হলে ভাষা আন্দোলন হতো না, ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দিত না, বাঙালি রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করত না, পাকিস্তানে ব্যবহৃত জিন্দাবাদ শব্দের পরিবর্তে ‘জয়’ শব্দ ব্যবহার করত না, শরৎ, বঙ্কিম, বিদ্যাসাগর, সৈয়দ মুজতবা আলী, নজরুল, লালন, জীবনানন্দ, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, সুনীল, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্মের সাথে উর্দু, পাঞ্জাবি, পস্তু ভাষার লেখকদের সাহিত্যকর্ম অনুসরণ করতেন, যাদের খুব কম জনই পূর্ব বাংলায় পরিচিত এবং যাদের কাব্য-উপন্যাস পড়ার সক্ষমতা পূর্ব বাংলার কম মানুষেরই ছিল বা আছে।
অধ্যাপক ইমতিয়াজের ভৌতিক দাবি ঠিক হলে পূর্ব বাংলার মানুষ উত্তম-সুচিত্রা, জহির রায়হান, সৌমিত্র, শর্মিলা, সাবিত্রী, ছবি বিশ্বাস, ববিতা, রাজ্জাক, সুচন্দা, রহমানের ছবি না দেখে পাকিস্তানের উর্দু ছবির প্রতি আকৃষ্ট হতো। হেমন্ত, সন্ধ্যা, সলিল চৌধুরী, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, গীতা, প্রতিমা, সতীনাথ, শ্যামল, মানবেন্দ্র, ভূপেন হাজারিকা, কণিকা, সুচিত্রা মিত্র, রুনা, বন্যা, সাবিনা, পাপিয়া, কলিম শরাফী, ফাহমিদা প্রমুখের গান না শুনে পাকিস্তানি শিল্পীদের গান শুনতেন, যাদের খুব কম জনকেই পূর্ব বাংলার মানুষ চেনেন। যদি তাই হতো তাহলে পূর্ব বাংলার মানুষ আকাশ বাণী থেকে প্রচারিত গান না শুনে করাচি বা লাহোর বেতার শুনতেন। ড. ইমতিয়াজের মনে রাখা উচিত শুরুতেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল দুই প্রদেশের মানুষের ভাষা এবং সাংস্কৃতিক ভিন্নতার জন্য এবং পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর উর্দু ভাষা এবং তাদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টার জন্য, বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর ছুরি চালানোর চেষ্টা করার জন্য, আরবি হরফে বাংলা লেখার আদেশ দেয়ার জন্য।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা করে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে লিখেছেন, “একটি মৌলিক প্রশ্ন হলো, আসলেই কি ত্রিশ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছিল, নাকি মৃতের সংখ্যা কম ছিল?” লিখেছেন, “ত্রিশ লক্ষ সংখ্যাটির প্রবক্তা ছিলেন বাংলাদেশী এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। …..অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার গঠিত হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায় ২৬ হাজার। উঁচু এবং নিচু সংখ্যাতত্ত্বের মধ্যে আরও কিছু সংখ্যার হিসাব পাওয়া যায় যার মধ্যে কে, চৌধুরীর অনুমান দশ লক্ষ থেকে ত্রিশ লক্ষ, রিচার্ড সিসন এবং লিও রোজের হিসাবে তিন লক্ষ, …… আর রাও ফরমান আলীর হিসাবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার” (পৃষ্ঠা ১৫)। প্রথমত, বাংলাদেশ বা ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নয়, মস্কো থেকে প্রকাশিত প্রাভদা সংবাদপত্রে প্রথম বলা হয় ত্রিশ লক্ষের কথা। তারপর তা বলেন বঙ্গবন্ধু। এ ধরনের কথা অতীতে খালেদা জিয়াও বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। বাংলাদেশে হলকাস্ট ডিনায়েল আইন থাকলে এই অধ্যাপককে অবশ্যই সাজা পেতে হতো।
তার লেখায় রয়েছে যে ১৯৭০-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১-এর মার্চ পর্যন্ত ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার বিহারিকে হত্যা করা হয়েছিল। আরও লিখেছেন এটি সত্যি হলে তা তদন্তের দাবি রাখে এবং এ ধরনের মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সে সব বাঙালির অবশ্য বিচার করতে হবে যারা বিহারিদের হত্যা করেছে। (পৃষ্ঠা ৩৯)
সত্যকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে ড. ইমতিয়াজ লিখেছেন যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরও গণহত্যার বিচারের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, বরং ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই প্রক্রিয়া শুরু করে। তার ভুলে যাওয়ার কথা নয় যে ২০০৮-এর নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছিল যে ক্ষমতায় গেলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে এবং নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর ওই প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়িত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে, যে প্রক্রিয়ায় আপিল শুনানির একজন বিচারক হিসাবে এই লেখকের অংশগ্রহণ ছিল। ১৯৭৩-এর আইনটি পুনরায় প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে ইমতিয়াজ সাহেব আইন সম্পর্কে তার জ্ঞানশূন্যতারই জানান দিয়েছেন। ওই আইনটি সীমিত সময়ের জন্য ছিল না বিধায় একে আবার নতুন করে প্রণয়নের প্রশ্নই উঠতে পারে না, তা যে কোনো মোটামুটি শিক্ষিত মানুষেরই জানার কথা।
তার অজ্ঞতা আরও প্রকাশ পেয়েছে এই কথা থেকে যে সে আইনটি নাকি কম্বোডিয়া বা রুয়ান্ডা ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। উক্ত উক্তি তার অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। উনার জানা উচিত যে নিরাপত্তা পরিষদ বাংলাদেশের গণহত্যার বিচারের জন্য কোনো অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেনি বলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে করার জন্যই স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর উদ্দীপনায় ১৯৭৩-এ আইনটি প্রণয়ন করেছিল বাংলাদেশের সংসদ, যে কথাটি ১৯৭৩ সালের আইনে স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য জটিলতা রোধ করার জন্য সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যেটি ছিল সংবিধানের প্রথম পরিবর্তন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের সদস্যগণ বাংলাদেশে এসেছিলেন আমাদের ১৯৭৩-এর আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এবং তারা আমাদের ১৯৭৩-এর আইন বহুলাংশে অনুসরণ করেই ‘রোম স্ট্যাচুট’-এর খসড়া তৈরি করেছিলেন, যার ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত সৃষ্টি হয়েছে ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে। মনে রাখা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে সম্ভব ছিল না এই জন্য যে অতীতে ঘটে যাওয়া অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা ওই আদালতের নেই। আরও উল্লেখযোগ্য যে যুগোস্লাভিয়া, রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশসমূহে গণহত্যার বিচারের জন্য নিরাপত্তা পরিষদ যে সব অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে, মৃত্যুদণ্ড প্রদান করার ক্ষমতা সেসব ট্রাইব্যুনালের নেই, আর সে কারণে বাংলাদেশে ঘটানো গণহত্যাকারীদের বিচার বাংলার মাটিতে হওয়াই অপরিহার্য ছিল।
প্রশ্ন হলো যে ব্যক্তি লিখেছেন বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ ‘জয় পাকিস্তান’ বলে বক্তব্য শেষ করেছেন, এই মর্মে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ১৯৭১-এর হত্যা-ধর্ষণ ইত্যাদি, জেনোসাইড কনভেনশনের আওতাভুক্ত হতে পারে না, কেননা বাঙালি এবং পশ্চিম পাকিস্তানিরা নৃতাত্ত্বিক, ভাষা এবং সংস্কৃতিগতভাবে অভিন্ন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন আসলে কত বাঙালি ১৯৭১-এ শহীদ হয়েছিলেন, বলেছেন বাঙালিরা ১৫ থেকে ৫০ হাজার বিহারি হত্যা করেছে, যিনি ১৯৭৩-এর আইনকে বুঝতে পারেন না, তিনি অধ্যাপক হিসেবে ছাত্রদের যা বোঝাবেন তা তো বিভ্রান্তিকর হতে বাধ্য। যে ব্যক্তি এ ধরনের বিভ্রান্তিকর কথা তার বইয়ে লিখেছেন, তিনি কি করে জেনোসাইড সেন্টারের মতো একটি সেন্টারের প্রধান থাকেন? গণহত্যা, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইত্যাদি বিষয়ে যিনি নিজেই অজ্ঞতা এবং ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত, তিনি তার ছাত্রছাত্রীদের কি শেখাবেন?
তিনি নিশ্চয়ই জেনোসাইড সেন্টারে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং গণহত্যা নিয়ে ভ্রান্তিকর, উদ্ভট এবং মনগড়া কথাই শেখাবেন, যার ফলে ওই সমস্ত ছাত্রছাত্রীরাও ভ্রান্ত, ত্রুটিপূর্ণ এবং অবান্তর তথ্য নিয়েই কু-শিক্ষিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যা সম্পর্কে আসল তথ্য-উপাত্ত জানা থেকে বঞ্চিত হয়ে ইতিহাস বিকৃতির ধারা অব্যাহত রাখবেন। যিনি বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য বিকৃত করেন, গণহত্যা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর কথা বলেন, তিনি কীভাবে এখনও সরকারের ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুজন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন, কীভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিদেশে বাংলাদেশের গণহত্যার ওপরে বক্তৃতা দেয়ার জন্য নির্বাচিত হচ্ছেন? এর চেয়েও লঘুতর কারণে সিন্ডিকেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের শাস্তি দিয়েছে। তার নেতৃত্বে কি সেন্টার ফর জেনোসাইড চলা উচিত? ইউপিএলের মতো নামী সংস্থাইবা কীভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো বই প্রকাশ করে? এদের সবাইকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা উচিত। উল্লিখিত বইটির একটি জায়গায়ও ইমতিয়াজ সাহেব ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি লিপিবদ্ধ না করে সব জায়গায় ‘শেখ মুজিব’ লিখে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার শ্রদ্ধাহীনতাই প্রকাশ করেছেন।