মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিন্ক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে।
ধন্যবাদ।
আজকের লিন্ক
এখানে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই সুপারিশ করুন এখানে। ধন্যবাদ।
৮ comments
মাসুদ করিম - ২ এপ্রিল ২০২২ (৫:১৩ পূর্বাহ্ণ)
President issues Gazette declaring Public emergency in Sri Lanka
https://www.newswire.lk/2022/04/01/president-issues-gazetteing-public-emergency-in-sri-lanka/
Sri Lankan President Gotabaya Rajapaksa has issued a Gazette Extraordinary declaring a public Emergency in Sri Lanka with effect from 01 April 2022.
Center for Policy Alternatives had posted the following summary explaining what is State of Emergency.
https://twitter.com/NewsWireLK/status/1509959466174672899
মাসুদ করিম - ৪ এপ্রিল ২০২২ (৫:৪০ অপরাহ্ণ)
Shahbaz Sharif Accuses Imran Khan Of Imposing Civil Martial Law In Pak
https://www.ndtv.com/world-news/shahbaz-sharif-accuses-imran-khan-of-imposing-civil-martial-law-in-pakistan-2861547
Addressing a press conference today the PML-N chief Shahbaz Sharif said that Imran Khan along with his party members has blatantly challenged the Constitution of Pakistan.
Refering to Imran Khan’s claim of threat by the US, Pakistan Muslim League (N) leader Shahbaz Sharif on Monday said that a no-confidence motion was submitted on March 8 and if there was a threat why wasn’t it raised before March 24.
Addressing a press conference today the PML-N chief said that Imran Khan along with his party members has blatantly challenged the Constitution of Pakistan.
“Constitution was violated yesterday by Imran Khan Niazi and his group. Motion (No-Confidence) was submitted on March 8, if some message had come from the US while they claim that it was received on March 7, why did they not raise it on March 24?” he said.
Reacting to the dissolution of the National Assembly and rejection of the no-confidence motion, he said that Khan has imposed a “civil martial law” in the country.
He was accompanied by Pakistan Peoples Party (PPP) Chairperson Bilawal Bhutto-Zardari and Jamiat Ulema-i-Islam-Fazl (JUI-F) leader Asad Mehmood, Muttahida Qaumi Movement Pakistan MQM-(P) convener Khalid Maqbool Siddiqui, Balochistan National Party, Mengal (BNP-M) chief Akhtar Mengal and others in Islamabad.
“In violation of the court’s orders, the (then) Prime Minister and the President have taken extra-Constitutional steps,” he said during the presser.
The PML-N leader also said that it is true that no one could challenge the proceedings of the House but if the Constitution is violated there then will it not be protected?
Referring to the dramatic turn of events in the Lower House yesterday, plunging the country into a Constitutional crisis, he said Fawad Chaudhry and the Speaker read out the written letters.
The National Assembly of Pakistan was dissolved on Sunday. In a development that is likely to worsen the political crisis in the country, Pakistan President Arif Alvi has said that Imran Khan will continue as Prime Minister till the appointment of a caretaker PM under Article 224 A of the Pakistan Constitution.
“Mr. Imran Ahmad Khan Niazi, shall continue as Prime Minister till the appointment of caretaker Prime Minister under Article 224 A (4) of the Constitution of the Islamic Republic of Pakistan,” Alvi said in a tweet.
This comes after Pakistan Tehreek-e-Insaf (PTI) Chairman Imran Khan was de-notified as the Prime Minister of Pakistan. A statement was issued in this regard from the country’s Cabinet Division after the dissolution of the National Assembly, Geo News reported.
The de-notification comes after the Deputy Speaker of the National Assembly (NA) Qasim Suri dismissed the no-confidence motion against the PTI chairman and termed it “unconstitutional”.
Pakistan’s Opposition parties have been contemplating their actions going forward after the no-confidence motion against Imran Khan was rejected and the National Assembly was dissolved.
মাসুদ করিম - ৯ এপ্রিল ২০২২ (৫:৩৯ অপরাহ্ণ)
বান্দরবানে ‘প্রথম’ মারমা-বাংলা অভিধানের মোড়ক উন্মোচন
https://bangla.bdnews24.com/samagrabangladesh/article2044016.bdnews
বান্দরবানে ‘প্রথম’ মারমা-বাংলা অভিধান বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বইয়ের লেখক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর জুয়েল বড়ুয়া।
জেলা শহরে মধ্যমপাড়ায় মাস্টার গেস্ট হাউস মিলনায়তনে শুক্রবার সকালে এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন বান্দরবান ডনবস্কো উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও মারমা ভাষার লেখক-গবেষক ক্য শৈ প্রু খোকা।
মোড়ক উন্মোচনকালে তিনি বলেন, “মারমা সমাজের কেউ এখনও নিজেদের মারমা ভাষায় অভিধান রচনা করতে পারেনি। কিন্তু নিজের মাতৃভাষা মারমা না হয়েও এমন একজন প্রথম মারমা-বাংলা ভাষায় অভিধান রচনা করেছেন, যেটি দৃষ্টান্তমূলক একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।
“মারমা সমাজে যারা বাংলা ভাষায় শিক্ষিত কিন্তু নিজের মাতৃষাভায় পড়তে জানে না, তাদের জন্য বইটি ভালো সহায়ক হবে। অভিধানটি মারমাভাষী ছাড়াও অনেকর উপকারে আসবে।”
অভিধানটি রচয়িতা জুয়েল বড়ুয়া চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় আব্দুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে জুয়েল বড়ুয়া নিজ উদ্যোগে মারমা ভাষার বর্ণমালা ও ভাষাশিক্ষা চর্চা করে আসছেন বলে তিনি জানান।
জুয়েল বলেন, মারমা ভাষায় বিভিন্ন লেখা ও বইপত্র থাকলেও এটিই প্রথম মারমা সম্প্রদায়ের মারমা থেকে বাংলা উভয় ভাষায় লেখা প্রকাশিত প্রথম অভিধান। এ অভিধানটির মোট সংখ্যা ৩৭০ পৃষ্ঠা।
মোড়ক উন্মোচন আলোচনা সভায় জুয়েল বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে দুই বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সময় তিনি এর পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। সম্পাদনার কাজে মারমা ভাষা ও বর্ণমালা জানেন এমন পাঁচজনের সহযোগিতা নেন। গত মাসে বইটি প্রকাশ করা হয়।
“প্রকাশিত অভিধান বইয়ে শব্দগত অর্থ ও বাংলা অনুবাদে কিছু ভুলক্রুটি থাকতে পারে। মারমা, রাখাইন ও বার্মিজ বর্ণমালা একই রকম হওয়ায় উচ্চারণ দিক দিয়ে কিছু মিশ্রণ হতে পারে। এগুলো মারমা ভাষার বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করা হবে।”
জুয়েল বলেন, ২০১৭ সালে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় সেখানখার বৌদ্ধবিহার পরিচালিত ‘উসারা পাঠাগারে’ মারমা ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রায় দেড় বছর মারমা বর্ণমালা, ভাষা ও উচ্চারণ আয়ত্ত করেন তিনি।
“এরপর মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে অভিধান বই সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, সব উচ্চারণ বার্মিজদেরই আদলে। পরবর্তীতে আরাকান থেকে আরাকান-ফালৌং অভিধান বই সংগ্রহ করে দেখি, সেখানে মারমাদের উচ্চারণ প্রায় পাওয়া যায়। তখন এ বইয়ের ওপর ভিত্তি করে অভিধান রচনার কাজে হাত দিই। এর বাইরে তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারের কিছু এলাকা ঘুরে মারমাদের শব্দ ও উচ্চারণ সংগ্রহ করি।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রথম মারমা ভাষার চলচ্চিত্র ‘গিরিকন্যা-তংস্মাসে’র প্রযোজক মং উষাথোয়াই মারমা বলেন, বাংলাদেশে তিন পার্বত্য জেলা, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বসবাসরত মারমা জনগোষ্ঠীর সবাই মারমা ভাষা বললেও এলাকা ও অঞ্চলভেদে উচ্চারণ আলাদা। কিন্তু কোন এলাকার মারমা ভাষা প্রমিত ভাষা হবে সেটা এখনও ঠিক করা যায়নি। তবে প্রথম মারমা-বাংলা ভাষার অভিধান হিসেবে এ বইটি সবারই কাজে লাগবে।
বান্দরবান জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান থোয়াইংচপ্রু, জেলা দুনীর্তি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা, অনন্যা কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডনাইপ্রু নেলী, জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা উচিংমং মারমা, শিক্ষক শৈটিংপ্রু মারমা ও উথোয়াই য়াইং রাখাইন অনুষ্ঠানে ছিলেন।
https://twitter.com/urumurum/status/1512831373157224455
মাসুদ করিম - ১০ এপ্রিল ২০২২ (৫:৪২ পূর্বাহ্ণ)
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তার: ঘটনার পূর্বাপর
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2043915.bdnews
শতবর্ষী ওই বিদ্যালয়ে কখনও যা ঘটেনি, তাই ঘটল মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের এক সকালে। শ্রেণিকক্ষে বিজ্ঞানের আলোচনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে স্কুল চত্বরে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে জড়ো হলেন ছাত্র ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি; হেনস্তা থেকে বাঁচাতে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হল ওই শিক্ষককে, দেওয়া হল মামলা।
ওই মামলায় গ্রেপ্তারের পর হাকিম আদালতে এবং দায়রা জজ আদালতে জামিন মিলল না মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের।
জানাজানি হলে ক্রমে ওই খবর উঠে আসে সংবাদ মাধ্যমে; ক্লাসে পাঠদানের আলোচনাকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার ও জামিন না পাওয়া নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা।
আর স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে করা অভিযোগের দুদিন পর হঠাৎ আন্দোলন, গ্রেপ্তার আর জামিন না পাওয়ার বিষয়গুলো মানতেই পারছে না ঘটনার আকস্মিকতা সামলে ওঠা পরিবার ও বন্ধুরা। ঘটনাপ্রবাহ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সাংসদ। ‘জামিন অযোগ্য ধারায়’ মামলা দায়ের ও ঘটনার পেছনে ইন্ধন দেখছেন স্থানীয় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।
গত ২২ মার্চ বিক্ষোভের মুখে ওই বিদ্যালয়ের দেয়ালঘেঁষা বাসা থেকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে; যিনি তখন স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরপর থেকে তিনি কারাবন্দি।
এখন থেকে প্রায় ১০৩ বছর আগে ১৯১৯ সালে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে প্রতিষ্ঠিত বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়। এ স্কুলেই ২১ বছর ধরে বিজ্ঞান ও গণিত পড়িয়ে আসছেন হৃদয় মণ্ডল। বিদ্যালয়ের সীমানা দেওয়ালের পাশেই শিক্ষক কোয়ার্টারে গত ১০ বছর ধরে থাকছেন তিনি।
শুক্রবার দুপুরে একতলা ভবনটির বাইরে গিয়ে দেখা যায় লোহার ফটক আটকানো। কড়া নাড়ানোর পর সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে খুললেন হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদারের ভাই বাদল হাওলাদার।
বোনকে অভয় দিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বাদল গত ২২ মার্চ থেকে শতাব্দী প্রাচীন এ বিদ্যালয়ের গ্রেপ্তার শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বাসায় থাকছেন। ভেতরে নিয়ে গেলেন তিনি। হৃদয়ের পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আর পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে সামনে এলেন ববিতা হাওলাদার।
একতলা ভবনটিতে তিনটি ঘর। মাঝের ঘরে হৃদয় নিজে পড়তেন, প্রতিদিন তিন ব্যাচ করে ছাত্রদেরও পড়াতেন। সেই ঘরে তিন জোড়া বেঞ্চ-টেবিল। ঘরের দরজাজুড়ে গণিতের সূত্র হাতে লিখে রেখেছেন। নিজের পড়ার টেবিলের এক পাশে নেলসন ম্যান্ডেলা ও এপিজে আবদুল কালামের মৃত্যুর খবরের পেপার কাটিং সাঁটা।
হাতে লেখা গণিত ও জ্যামিতির নানা সূত্র বিভিন্ন জায়গায় সাঁটানো রয়েছে। পর্যায় সারণী থেকে শুরু করে মানবদেহের কঙ্কালের ছবিসহ বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের পোস্টার ঝুলছে দেওয়ালে। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাতাল, গ্লুগান, কাঁচিসহ বৈদ্যুতিক ও দৈনন্দিন কাজের বিভিন্ন যন্ত্র।
ববিতা হাওলাদার জানালেন, শুধু বিজ্ঞান যে পড়াতেন তা নয়, হৃদয় মণ্ডল দৈনন্দিন জীবনেও বিজ্ঞানের চর্চা করতেন। বাড়ির সব ধরনের মেরামতের কাজ নিজের হাতেই করতেন। কাঠের আসবাবপত্রের কাজ বা ইলেকট্রিকের যন্ত্র নষ্ট হলে তিনি নিজেই তা সারিয়ে ফেলতে পারতেন। এজন্য অনেক ধরনের যন্ত্রপাতিও কিনেছিলেন তিনি।
‘আমরা সবাই ঘরবন্দি’
পেশায় নার্স ববিতা কাজ করেন ঢাকার ওয়ারির বারডেম হাসপাতালে। মুন্সীগঞ্জ থেকেই যাতায়াত করেন। ঘটনার পর তাকে অনেকেই এমনকি ‘পুলিশও ঢাকায় চলে’ যেতে পরামর্শ দিলেও তিনি রয়ে গেছেন স্কুল লাগায়ো বাসাতেই।
তিনি বলেন, “কিন্তু আমি যাবটা কোথায়। আমার ছেলেটা এ স্কুলেই ক্লাস ফাইভে পড়ে; স্কুলে গেলেই পোলাপানে বলে ‘আসামির পোলা’। পরে স্যারেরা আমারে বলছে, ছেলেরে কয়েকদিন স্কুলে পাঠাইয়েন না। এখন আমরা সবাই ঘরবন্দি। আমার ভাই বাজার-টাজার করে।”
ঘটনার পর থেকে হৃদয় মণ্ডলের কোনো সহকর্মী বা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি বলে জানান তিনি। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামী কী করছে বলেন তো” সবাই এমন আচরণ করছে যেন ও খুনের আসামি। মামলায় যে কথা লেখা হয়েছে এমন কোন কথা হৃদয় স্যার বলেননি। আমি জেলে গিয়ে দেখা করে আসছি। উনি আমারে অভয় দিয়া বলছে, ‘কিছু হবে না, আমি তো কিছু করিনি।’ ও (হৃদয়) ষড়যন্ত্রের শিকার।”
যা ঘটেছে
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ মার্চ বিরতির পরে দশম শ্রেণির একটি অনির্ধারিত ক্লাসে গিয়ে বিজ্ঞান নিয়ে কিছু আলোচনা করেন হৃদয় মণ্ডল। একজন ছাত্র বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করে। তিনি সেগুলোর জবাব দেন।
পরে প্রশ্ন ও উত্তরের এ আলোচনা গোপনে রেকর্ড করা হয়; কিছু ছাত্র তা ছড়িয়ে দেয়। ওই পাঠদানের দুদিন পর কিছু ছাত্র ও স্থানীয় ব্যক্তি হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে শুরু করে আন্দোলন। পরে পুলিশ বিক্ষোভের মুখে তাকে থানায় নিয়ে যায় এবং পরে গ্রেপ্তার দেখায়।
ওই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, সেদিন বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে ক্লাসে এসে হৃদয় মণ্ডল বিজ্ঞান বিষয়ে বক্তব্য দেন। এসময় আলোচনার এক পর্যায়ে ধর্মের প্রসঙ্গ আসে। একজন ছাত্র জানায় যে ধর্ম থেকে বিজ্ঞানের উৎপত্তি। হৃদয় মণ্ডল ওই যুক্তি খণ্ডন করে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন।
এসময় ক্লাসের আরেকজন ছাত্রের মনে হয় শিক্ষক আলোচনার মধ্যে ‘ধর্ম নিয়ে কটু কথা বলছেন’। সে তার ফোন এগিয়ে দিয়ে আরেক ছাত্রকে (রেকর্ড করেছিল যে) রেকর্ড করতে বলে। রেকর্ড ধারণকারী ছাত্রটির সঙ্গে কথা হলে সে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, শিক্ষকের সামনে থেকেই সে রেকর্ড করছিল।
ক্লাসের আলোচনার অডিও ধারণ করার কথা কেন মনে হল- জানতে চাইলে ছাত্রটি দাবি করে, হেড স্যারের কাছে অভিযোগ দেওয়ার জন্যই তারা তা করেছিল।
‘আর কোনো কারণ ছিল না’ দাবি করে সহপাঠীর ফোনে রেকর্ড ধারণ করা ছাত্রটি বলে, “হেডস্যার যদি আমাদের কথা বিশ্বাস না করে, এইজন্যে (সহপাঠী বন্ধুটি) আমাকে বলল স্যারের কথা রেকর্ড কর। আমরা হেডস্যারকে কমপ্লেন করব।”
পরের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ছাত্রটি জানায়, পরদিন ২১ মার্চ (সোমবার) সে স্কুলে যায়নি। তবে ছাত্ররা এদিন একটি লিখিত অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের কাছে দেয় বলে সে শুনেছে।
এর পরেরদিনের (মঙ্গলবার) ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ছাত্রটি জানায়, পরদিন তাদের যথারীতি ক্লাস চলছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রটি জানালা দিয়ে দেখতে পায় স্কুল চত্বরে ঢুকে কিছু লোকজন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। তাদের মধ্যে স্কুলের ছাত্রদের কাউকে দেখতে পায়নি জানিয়ে ছাত্রটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “যারা আন্দোলন করতেছিল তাদের চিনি না। বাইরের লোকজন সব।”
এর মধ্যেই ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া হলে সে তার বন্ধুদের নিয়ে বাইরে চলে আসে। পরে কিছু ছাত্র ওই মিছিলে যোগ দেয়। ওই লোকজন কী করে স্কুল চত্বরে এসে স্লোগান দিচ্ছিলেন, সে বিষয়ে ওই ছাত্রের কোনো ধারণা নেই বলে জানায়।
স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান শরীফ বলেন, “২০ তারিখ ছেলেরা স্কুলে কী করেছে সে বিষয়ে তাদের জানাননি প্রধান শিক্ষক। ২২ মার্চ যখন স্কুলের মধ্যে স্লোগান চলছিল তখন প্রধান শিক্ষক তাকে ফোন করে দ্রুত স্কুলে আসতে বলেন।
“এসেই দেখি কিছু শিক্ষার্থী ও বাইরের লোকজন মিলে হইচই করছে, স্লোগান হচ্ছে। একজন ছাত্রের হাতে জুতার মালাও ছিল। তারা শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে খুঁজছে লাঞ্ছিত করার জন্য।“
নবম ও দশম শ্রেণির অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী ওই আন্দোলনে ‘বড় ভূমিকা’ পালন করে বলে জেনেছেন তিনি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল জানিয়ে শরীফ বলেন, “তখন শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিও তোলে। স্কুলের কয়েকজন ছাত্র আবার স্কুলের মাইকে বলে ইউনিফরম ছাড়া যারা আছে তারা যেন বাইরে চলে যায়।”
পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও স্কুলের সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটির কমিটির সদস্য মামুন মিয়ার চালের আড়ত ওই স্কুলের ফটকের পাশেই।
২২ মার্চের ঘটনা নিয়ে মামুন মিয়া বলেন, “সেদিন স্কুলের কিছু ছেলে আর তাদেরই কিছু বন্ধুবান্ধব হবে- বয়সে সবাই তরুণ, তারা জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। আমি স্কুলের গেটে দোকানদারি করতেছিলাম। ঘটনা দেখে আমি দোকান থেকে বের হয়ে গেলাম, তাদের দাবি কী জানলাম। চেষ্টা করেও তাদের থামানো গেল না।
“পরে হেডস্যারকে বললাম পুলিশকে ফোন করতে। পুলিশ এসে হৃদয় স্যারকে নিয়ে গেলে আন্দোলন ঠাণ্ডা হয়।”
পরিবারে তখন কী চলছিল
২২ মার্চ ঘটনার বিবরণ দিয়ে হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হওলাদার বলেন, “এ ঘটনা যেদিন ঘটে আমি তো রেগুলার ডিউটিতে ছিলাম। আমি তো এ ঘটনা জানিই না। আমার ছেলে ফোন করে বলে স্কুলের অনেক লোক এসে আমাদের দরজায় জোরে জোরে লাত্থি মারছে, বড় বড় লাঠি নিয়ে বাড়ি দিচ্ছে।
“শুনছি যে, ঘটনা ঘটার পরে পোলাপান মিছিল বের করছে। ওর বাবা বাজারে গেছিল। বাজার থেকে স্নান করে এসে এখানে বসছে স্কুলে যাবে। তার মধ্যে এ ঘটনা ঘটছে।”
ববিতা বলেন, “২১ মার্চ বিকাল বেলা হেড স্যারকে একটা অভিযোগ দিছে ছাত্ররা। স্যার বলল, ‘তোমরা এটা দিছো, ঠিক আছে। আমরা হৃদয় স্যারকে তিন দিনের একটা নোটিস দিব। তিন দিনে যদি জবাব না দেয়, তাহলে আমরা কী করা লাগবে, ব্যবস্থা নিব।‘
“ওরা এটা মেনে নেয় নাই। ওরা এটা এলাকার বড় ভাই, মসজিদে মসজিদে এটা ছাইড়া দিছে। ২২ তারিখে ওরা লোকজনকে জড়ো করে। ওরা নিজেরা ঘণ্টা পিটাইছে। ছুটি হইছে ভেবে সব পোলাপান বের হয়ে চলে আসছে। পরে মিছিল হচ্ছিল দেখে পুলিশ ডাকছে। পুলিশ এসে বাসা থেকে হৃদয় স্যারকে নিয়ে গেছে। হৃদয় স্যার তখন বাজার থেকে এসে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল।”
ইন্ধন ছিল কারও?
হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা ধারণা করছেন, এ ঘটনায় কোনও পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে।
তার মতে, হৃদয় মণ্ডল এমন কোনও কথা বলেননি যার কারণে তাকে এতবড় অভিযোগের সম্মুখীন হতে হবে।
এর আগে কখনও এরকম বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে বিতর্ক পর্যন্ত হয়নি জানিয়ে ববিতা বলেন, এর আগে ছেলেরা বাসার দরজায় লাথি মেরে গেছে। জানালা দিয়ে ঢিলও মেরেছে। তবে এগুলোকে তিনি দুষ্ট ছাত্রদের কাজ হিসেবেই দেখেন।
মুন্সিগঞ্জ- ৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসও মনে করেন হৃদয় মণ্ডল ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে কারা এ ষড়যন্ত্র করছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি তিনি।
গ্রেপ্তার ও মামলা যেভাবে, যে কারণে
স্থানীয় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, তখন কিছু লোকজন খুব ক্ষুব্ধ আচরণ করছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। উত্তেজিত জনতা যেন শিক্ষকের ওপর চড়াও হতে না পারে তারা প্রশাসনকে সেই অনুরোধটাই করেছিলেন। পরে তাকে ভালোভাবেই উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়।
উত্তেজিত মানুষকে থামাতে মামলার বিষয়টিও আসে। তখন তারা পুলিশকে বলেছিলেন, এমন একটা মামলা দিতে যাতে পরে জামিন পেতে পারেন হৃদয় মণ্ডল। কিন্তু পুলিশ মামলায় একটি অজামিনযোগ্য ধারাও যুক্ত করে দেয়।
হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি অজয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, “বিষয়টা যখন ঘটল, তখন এটা বাইরে ছড়ায় দিয়ে একটা গোলযোগের সৃষ্টি করল। হয়ত তাদের যে ইন্ধনদাতারা ছিল, তারা বাকি কাজগুলো করছে। পরে খবর দেওয়া হলে প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসছে। হেনস্তা হতে দেয়নি।“
পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সাংসদ
স্থানীয় সাংসদ মৃণাল কান্তি দাস মনে করেন পুলিশের ভূমিকার কারণে এ ঘটনা এতটা ছড়িয়েছে। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মনে করি পুলিশের উস্কানিতে জনগণ উত্তেজিত হয়েছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও উস্কানিমূলক আচরণের কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে।”
পুলিশ ওই মামলার এজাহার লিখেছে দাবি করে তিনি বলেন, “একজন শিক্ষক যদি কোনো অপকর্ম করেই থাকেন তাহলে স্কুলে কি হেড মাস্টার নাই? উনি বাদী হতেন। স্কুলের একটা ইলেকট্রিশিয়ান যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না, সে কী করে এ মামলার বাদী হয়। পুলিশ কীভাবে মামলার এফআইআর লিখে দেয়, পুলিশ কীভাবে তাকে গ্রেপ্তার করল?
“ওই ইলেকিট্রিশিয়ান জানেও না ওই মামলার মধ্যে কী লেখা আছে। পুলিশ কি করে মামলা লিখে তার স্বাক্ষর নেয়? এর জবাব কে দিবে?“
মৃণাল কান্তি বলেন, “আমাকে পুলিশ বা পরিবারটির কেউ কিছু জানায়নি। ওই এলাকায় আমার যে লোকেরা আছেন, যারা প্রত্যক্ষদর্শী- তাদের কাছ থেকে ঘটনা জেনেছি। তাতে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বা পুলিশ যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে আমি মর্মাহত, লজ্জিত, ব্যথিত, ক্ষুব্ধ বা আরও যদি কিছু থাকে তা।”
ঘটনার শিকার পরিবারটির পাশে আছেন কি না- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মৃণাল বলেন, “পরিবারের পাশে সহস্র মানুষ দাঁড়াবে। আমার মত নগন্য একজন মানুষ, একজন কাপুরুষ ও পলায়নপর মনোবৃত্তির এমপি যদি তাদের পাশে দাঁড়াতে নাও পারে দেশের লক্ষ-কোটি মানুষ যারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাস করেন তারা পরিবারটির পাশে দাঁড়াবে।
“আমি তো সবটাই জানি, সে একটা ষড়যন্ত্রের শিকার। এর চাইতে বেশি কিছু আমি আর না বলি।”
ঘটনা যাতে না বাড়ে সেজন্য সব করেছি: এসপি
এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন মনে করেন, পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পুলিশ ওই জায়গায় তাৎক্ষণিক না গেলে ওই লোকটার অবস্থা কী হতো, আপনারা ভেবে দেখছেন একবার?
“ওখান থেকে তাকে রেসকিউ করা টাফ ছিল। তাকে পারলে পুলিশের কাছ থেকেও নিয়ে যায়, এই রকম একটা সিনারিও তারা ওখানে করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে পুলিশের ফল্টটা কী, আমার তো বোধগম্য না বিষয়টা।”
তিনি বলেন, “ঘটনার দুই সপ্তাহ পর আপনি এসে একটা ঠাণ্ডা এলাকা দেখতে পাচ্ছেন। তখন তো আমাদের প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছিল।
“এখানে মানুষ যেরকম উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল তাতে যে কোনো রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারত, মৃত্যু ঘটতে পারতো কারও। এরকম যাতে না হয়, এই ঘটনার রেশ যেন সারা দেশে না ছড়াই সেই চেষ্টাই করেছে পুলিশ।“
মামলার বাদী নিয়ে সাংসদের আপত্তির বিষয়ে এসপি বলেন, “তাকে রেসকিউ করার পর বাকি বিষয় আসে। এখন মামলার বাদী কি হেডমাস্টার হবে, না সহকারী মাস্টার হবে, না দপ্তরি হবে, না কি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হবে… এটা কি পুলিশ ডিসাইড করবে? কে এটা ডিসাইড করবে, আপনি বলেন?”
এ ঘটনা যেন আর বাড়তে না পারে সেজন্য যথাসাধ্য চেষ্টা পুলিশ করেছে দাবি করে এসপি বলেন, “ঘটনা শোনার পর আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে ঘটনা আর বাড়তে না পারে। আমার দিক থেকে যা করা দরকার, তাতে বিন্দুমাত্র ডিলে করি নাই। শুনতে যতক্ষণ লেগেছে, এরপরই পুলিশ তৎপরতা শুরু করেছে।”
পুলিশের এখনকার তৎপরতা
ওই ঘটনার পরের দুই শুক্রবার জেলা পুলিশের সদস্যরা ছিলেন অনেক তৎপর। পুলিশ কর্মকর্তারা মসজিদে মসজিদে গিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, কথা বলেছেন।
হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদারও বলছেন, ঘটনার পর তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলেও এখন পর্যন্ত কেউ বাসায় এসে চড়াও হয়নি। বাসার আশপাশে পুলিশ ছিল। মসজিদে মসজিদে গিয়েও পুলিশ কথা বলেছে বলে তিনি শুনেছেন।
শুক্রবার দুপুরে ববিতা হাওলাদারের সঙ্গে কথা বলার সময়ই তাদের বাসায় আসেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান। ওই পুলিশ কর্মকর্তাও কোনো প্রকার সমস্যা বা নিরাপত্তাহীনাতা বোধ করলে তাকে ফোন করতে বলেন।
মিজানুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তদন্ত করছি। পাশাপাশি ওই ঘটনাকে নিয়ে কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্যও পুলিশ তৎপর রয়েছে। ইউনিফরমড পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে যাচ্ছে। মসজিদে, বাজারে কী কথা হচ্ছে, সে খোঁজও আমরা রাখছি।“
এরকম ঘটনা আগে ঘটেনি
মুন্সীগঞ্জের মানুষ এর আগে কখনও এরকম দেখেনি। রামকুমার বিদ্যালয়ের ১০৩ বছরের ইতিহাসেও এমনটি ঘটেনি। মুন্সীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মীর নাসিরউদ্দীন উজ্জ্বল বলেন, মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুর হচ্ছে প্রাচীন একটা জনপদ। অতীশ দীপঙ্কর থেকে শুরু করে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, রাজনীতিক সরোজিনী নাইডু, বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, লেখক হুমায়ুন আজাদ, সাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারের মত ব্যক্তিত্বরা এ জেলায় জন্ম নিয়েছেন। এ অঞ্চলের মানুষ অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞান মনস্ক। এখানকার স্কুলগুলো অনেক পুরনো।
এখানে ১০০ বছরের বেশি বয়স অনেকগুলো স্কুল রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। এখানে এরকম ঘটনা একেবারে অগ্রহণযোগ্য।
হৃদয় মণ্ডলের এ ঘটনা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তিনি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
হৃদয় মণ্ডলের ছোট বেলার বন্ধু তপন সরকার বলেন, তারা একসঙ্গে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কুচিয়ামোড়া হাইস্কুলে পড়েছেন। ১৯৮২ সালে হৃদয় এসএসসি এবং পরে জগন্নাথ কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
তপন বলেন, হৃদয় পড়তে পছন্দ করতেন। বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে তর্কও করতেন। তবে এর আগে কেউ তাকে কখনও ধর্মকে কটূক্তি করা নিয়ে অভিযুক্ত করেনি। হৃদয় মণ্ডলও সযত্নে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতেন।
হৃদয় মণ্ডলের পড়ার ঘরের মধ্যে সাঁটানো পোস্টারগুলোর একটিতে লেখা রয়েছে- ‘ধর্ম, রাজনীতি ও বিবাহের আলাপ আমার রুমে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ’।
তবে সেই ‘আলাপেই’ শেষ পর্যন্ত জেলে গেলেন হৃদয়; বিষয়টি এখনও মানতেই পারছে না পরিবার ও বন্ধুরা।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি ফারহানা মির্জা]
https://twitter.com/urumurum/status/1513013290762649603
মাসুদ করিম - ১৩ এপ্রিল ২০২২ (১:৩৭ অপরাহ্ণ)
হুমায়ুন আজাদ হত্যা: ৪ জঙ্গির ফাঁসির রায়
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2045822.bdnews
দেড় যুগ আগে একুশে বইমেলার বাইরে বহুমাত্রিক লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার ঘটনায় চার জঙ্গির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন বুধবার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তিনি।
দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা দুই আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা সদস্য মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বাকি দুই আসামি নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ পলাতক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, “রায়ের পযবেক্ষণে বলা হয়েছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যে সারাদেশের সিরিজ বোমা হামলা চলে। দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নষ্ট করার জন্যে এবং ধর্মান্ধতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আসামিরা নৃশংসভাবে হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়েছিল।
ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন বুধবার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তিনি।
দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা দুই আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা সদস্য মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বাকি দুই আসামি নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ পলাতক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, “রায়ের পযবেক্ষণে বলা হয়েছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যে সারাদেশের সিরিজ বোমা হামলা চলে। দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নষ্ট করার জন্যে এবং ধর্মান্ধতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আসামিরা নৃশংসভাবে হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়েছিল।”
নিয়ম অনুযায়ী এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে সাত দিন সময় পাবেন আসামিরা। তবে আপিল করতে হলে পলাতক আসামিদের আত্মসমর্পণ করতে হবে।
বিজ্ঞানমনস্কতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের পক্ষে লেখা হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হয়েছিলেন একুশে বইমেলা চলাকালে। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে টিএসসির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হন তিনি।
দেশে লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, মুক্তমনা মানুষের ওপর বিগত বছরগুলোতে যে ধারাবাহিক জঙ্গিবাদি হামলার ঘটনা বাংলাদেশ দেখেছে, তার সূচনা হয়েছিল হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে।
কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছর অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ১২ অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
হামলার পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। সেই মামলার রায় হল বুধবার।
প্রেক্ষাপট
ভাষা বিজ্ঞানী, বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ তার লেখার কারণেই প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। ২০০৪ সালে তার ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে মৌলবাদীরা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায়। আর বইটির প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে জামায়াতে ইসলাম এ দেশে ব্যাপক যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হয়েছিল।
সে সময় জামায়াতের এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যিনি পরে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে হুমায়ুন আজাদের বইটি নিষিদ্ধেরও দাবি তুলেছিলেন।
হুমায়ুন আজাদ সে সময় নানাভাবে সাম্প্রদায়িক হুমকি পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু একুশে বইমেলার বাইরে এভাবে তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হবে, সেটা কেউ ভাবেনি।
ওই হামলার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ইসলামি জঙ্গিরা হুমায়ুন আজাদের ওপর ওই হামলা চালিয়েছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, “জার্মানি থেকে পাঠানো হুমায়ুন আজাদের মৃত্যু সনদ এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, অ্যানাটমিক্যালি মৃত্যুর যথেষ্ট কারণ পাওয়া না গেলেও টর্চারের (নির্যাতনের ফলে) ফলে তার মৃত্যু ঘটেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে এবং হাইপার টেনশনে তিনি মারা যান।
“জার্মানির মিউনিখ হাসপাতালের অটোপসি রির্পোট পর্যালোচানায় দেখা যায়, ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারির ওই তারিখে ঘটনার দিন মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তিনি অসুস্থ ও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার পরও আরোগ্যপ্রাপ্ত না হয়ে বরং তিনি ধীরে ধীরে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০০৪ সালের ১২ অগাস্ট জার্মানির মিউনিখের বাসস্থানে যাওয়ার চারদিন পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।”
বিচারের দীর্ঘ অপেক্ষা
প্রথমে দায়ের করা হত্যা চেষ্টা মামলায় পুলিশ ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়ে বাদী মঞ্জুর কবির ২০০৯ সালের অক্টোবরে অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন।
সেই আবেদনে তিনি বলেছিলেন, “পাক সার জমিন সাদ বাদ বইটি প্রকাশের পর ২০০৩ সালের ২৩ নভেম্বর জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সংসদে বইটির সমালোচনা করেন, কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তার বিষয়ে তদন্ত করেননি। অপরাধী চক্র একটি বৃত্তি দিয়ে হুমায়ুন আজাদকে জার্মানিতে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি হত্যার শিকার হন।”
হুমায়ুন আজাদ নিজেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় হামলার পেছনে মৌলবাদী সংগঠন এবং যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর জড়িত থাকার ইংগিত করেছিলেন সাংবাদিকদের কাছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান মামলাটি তদন্তের পর ২০১২ সালের ১৪ মে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে হত্যার অভিযোগ যুক্ত করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
মো. মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন ওরফে হামিম ওরফে হাসিম, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু, সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ এবং হাফিজ মাহমুদ ওরফে রাকিব ওরফে রাসেলকে সেখানে আসামি করা হয়।
তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় আসামির তালিকা থেকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী, ছাত্রলীগ নেতা আবু আব্বাস ভূঁইয়া, গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তফা মাহমুদ, আবদুল খালেক গবা ওরফে টাইগার, শফিক উল্লাহ ওরফে সাদ এবং ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, আতাউর রহমান সানি, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই ও খালেদ সাইফুল্লাহর নাম সম্পূরক অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূইয়া জিন্নাহ ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সম্পূরক অভিযোগেপত্রের পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচার শুরুর আদেশ দেন।
আসামিরা নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তাদের মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আটক রয়েছেন। নূর মোহাম্মদ শুরু থেকেই পলাতক।
সালাহউদ্দিন সালেহীন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেপ্তার হলেও ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা। সালেহীন পালিয়ে যেতে পারলেও হাফিজ মাহমুদ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
গত ২৭ মার্চ দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে এ মামলা রায়ের পর্যায়ে আসে। বুধবার সেই রায়ে জীবিত চার আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত।
মাসুদ করিম - ১৩ এপ্রিল ২০২২ (১:৩৯ অপরাহ্ণ)
‘গৎবাঁধা’ রায়, বললেন হুমায়ুন আজাদের ভাই
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2045920.bdnews
দেড় যুগ আগে একুশে বইমেলার বাইরে বহুমাত্রিক লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার ঘটনায় চার জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দিয়ে আদালতের রায়কে ‘গৎবাঁধা’ বলেছেন মামলার বাদী মঞ্জুর কবির।
হুমায়ুন আজাদের ছোটো ভাই মঞ্জুর কবির বুধবার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফাঁসির রায় হয়েছে? ওই গৎবাঁধা। যাদের ফাঁসি হল তারা আদৌ ছিল না কিনা কে জানে? যে মূল আসামি তাকেইতো মামলায় রাখা হয়নি। প্রতিক্রিয়া দিয়ে কী হবে, ভাইতো ফিরবে না।
“যিনি নিহত হয়েছেন, তিনি (হুমায়ুন আজাদ) হামলায় আহত হওয়ার পর দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে দায়ী করেছিলেন। তাকেই যখন বাদ দেওয়া হল, তারপর তো আর কিছু থাকে না।”
ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন বুধবার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তিনি।
দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা দুই আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা সদস্য মিজানুর রহমান মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বাকি দুই আসামি নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ পলাতক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হয়েছিলেন একুশে বইমেলা চলাকালে। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে টিএসসির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হন তিনি।
কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছর অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ১২ অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
ভাষা বিজ্ঞানী, বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ তার লেখার কারণেই প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। ২০০৪ সালে তার ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে মৌলবাদীরা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায়। আর বইটির প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে জামায়াতে ইসলাম এ দেশে ব্যাপক যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হয়েছিল।
সে সময় জামায়াতের এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যিনি পরে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে হুমায়ুন আজাদের বইটি নিষিদ্ধেরও দাবি তুলেছিলেন।
হুমায়ুন আজাদ সে সময় নানাভাবে সাম্প্রদায়িক হুমকি পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু একুশে বইমেলার বাইরে এভাবে তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হবে, সেটা কেউ ভাবেনি।
ওই হামলার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ইসলামি জঙ্গিরা হুমায়ুন আজাদের ওপর ওই হামলা চালিয়েছিল।
হামলার পরদিন মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে এ মামলার আসামি করা হলেও পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে তার নাম বাদ দেওয়া হয়, যা নিয়ে পরিবারের অসন্তোষ রয়েছে।
মাসুদ করিম - ১৩ এপ্রিল ২০২২ (১:৪২ অপরাহ্ণ)
হুমায়ুন আজাদ হত্যা: বিলম্বিত রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2045968.bdnews
বহুমাত্রিক লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তা দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন লেখক, শিক্ষক, সহকর্মী, প্রকাশক ও শিক্ষাবিদরা।
দেড় যুগ আগে একুশে বইমেলার বাইরে বহুমাত্রিক লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার ঘটনায় চার জঙ্গির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
বুধবার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন। সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তিনি।
দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা দুই আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা সদস্য মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বাকি দুই আসামি নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ পলাতক।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়টা অনেক দেরিতে হল। এটা আরও আগে হওয়া উচিৎ ছিল। তদন্তটা আরও দ্রুত হতে পারত।
“এখন যে রায় হয়েছে, এই শাস্তি তাদের প্রাপ্য। যারাই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে, এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছ। যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের সহকর্মী অধ্যাপক রফিকুল্লাহ খান বলেন, “এ রায়ে যারা ধর্মান্ধ, জঙ্গিবাদী, তাদের যদি শিক্ষা হয়, তবেই এ রায় ঘোষণার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
তবে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী এ মামলার বিচারে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধী হয়েও কীভাবে এতটা সেইফ থেকে গেল, কীভাবে- এটা বুঝতে পারলাম না।
“যার নাম হুমায়ুন আজাদ স্বয়ং বলে গেছেন…তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েই কিন্তু আঘাতটা করে। …এখন রায় দ্রুত কার্যকর করাই হবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।”
হুমায়ুন আজাদের এক সময়ের ছাত্র রফিকুল্লাহ পরে হয়েছেন সহকর্মী। একসঙ্গে অনেক সময় কেটেছে তাদের।
আবেগাপ্লুত এ অধ্যাপক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাশাপাশি ভবনে থাকতেন তারা। হুমায়ুন আজাদের সন্তানেরাও ছিলেন খুবই আদরের; সন্তানের মত।
“দীর্ঘ ১৮ বছর পর রায় হল, গতকাল থেকে একটু ইমোশনাল হয়ে গিয়েছি। এত দেরি হয়ে গেছে! একটা ঘটনার পর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময় চলে গেলে আমাদের দেশে তো অনেক ঘটনা ঘটে, অনেক খারাপ ঘটনাও ঘটেছে। সবকিছু বিলম্ব হয়ে যায়।
“এর পরও এ রায় পাওয়া। এ রায় থেকে ধর্মান্ধ, জঙ্গিবাদীদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।”
রফিকুল্লাহ খান বলেন, “ধর্মান্ধ হয়ে নিজের হাতে ছুরি তুলে নিয়ে একজনকে হত্যা করার অধিকার তো কেউ দেয়নি; ধর্মের নামে তারা এটা কিভাবে করে!”
দেরিতে হলেও মামলার রায়ে খুশি আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি। তিনি বলেন, “আশা করি, অবিলম্বে সরকার সেই রায় কার্যকরে পদক্ষেপ নেবে।”
“এর মাধ্যমে মুক্তচিন্তার, মুক্তবুদ্ধি চর্চার যে ধারা অব্যাহত ছিল, হুমায়ুন আজাদ যে জন্য কাজ করে যাচ্ছিল- আমি মনে করি এ ধারার পক্ষে রায়টি হয়েছে। বাংলাদেশ যে মূলনীতির উপরে স্বাধীন হয়েছিল, এর বাস্তবায়ন এ রায়ের মাধ্যমে আমি দেখতে পাচ্ছি।”
লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হক এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালে সন্ত্রাসী হামলায় একমাত্র ছেলে ফয়সল আরেফিন দীপনকে হারান এ শিক্ষক। শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের অফিসে খুন হন জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার দীপন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, “জঙ্গিবাদী তৎপরতায় এ দেশে প্রথম পর্যায়ে লেখক হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হন। … মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন যখন শুরু হল, তখন দেখা গেল একরকম গুপ্তহত্যার কর্মকাণ্ড আরম্ভ হয়ে গেল। এসব দমন করতে হবে আইন-কানুন, ফাঁসি দিয়ে।
“রায় হয়েছে- এটা ভালো। বিচারহীনতার দেশ বলে বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে গিয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে- বিচার হচ্ছে, রায়ও হচ্ছে। তবে নিম্ন আদালতের রায়ের পরে হাই কোর্টের রায় হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা অপ্রতুল। এজন্য নিম্ন আদালতের পর হাইকোর্টে ফাইনালাইজ হতে অনেক দিন সময় লাগে।“
যথাসময়ে রায় হলে অনেক হত্যাকাণ্ড ‘ঠেকানো যেত’ মন্তব্য করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেরিতে হলেও রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, আমাদের দেশে সুবিচার আছে। এজন্য আমরা বিজ্ঞ আদালত বা বিচারব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানাই।”
মাসুদ করিম - ২৯ এপ্রিল ২০২২ (৫:০৮ পূর্বাহ্ণ)
‘World may lose 4.0pc GDP by 2050 due to climate change’
https://thefinancialexpress.com.bd/economy/global/world-may-lose-40pc-gdp-by-2050-due-to-climate-change-1651067777
Climate change could see 4.0 per cent of global annual economic output lost by 2050 and hit many poorer parts of the world disproportionately hard, a new study of 135 countries has estimated.
Rating firm S&P Global, which gives countries credit scores based on the health of their economies, published a report on Tuesday looking at the likely impact of rising sea levels, and more regular heatwaves, droughts and storms, reports Reuters.
In a baseline scenario where governments largely shy away from major new climate change policies – known as ‘RCP 4.5’ by scientists – lower- and lower-middle-income countries are likely to see 3.6 times greater gross domestic product losses on average than richer ones.
Bangladesh, India, Pakistan and Sri Lanka’s exposure to wildfires, floods, major storms and also water shortages mean South Asia has 10 per cent-18 per cent of GDP at risk, roughly treble that of North America and 10 times more than the least-affected region, Europe.
Central Asia, the Middle East and North Africa and Sub-Saharan Africa regions all face sizable losses too. East Asia and Pacific countries face similar levels of exposure as Sub-Saharan Africa, but mainly because of storms and floods rather than heatwaves and drought.
“To different degrees, this is an issue for the world,” said S&P’s top government credit analyst, Roberto Sifon-Arevalo. “One thing that really jumps out is the need for international support for many of these (poorer) parts of the world”.
Countries around the equator or small islands tend to be more at risk, while economies more reliant on sectors such as agriculture are likely to be more affected than those with large services sectors.
For most countries, exposure to, and costs from climate change are already increasing. Over the past 10 years, storms, wildfires, and floods alone have caused losses of around 0.3 per cent of GDP per year globally, according to insurance firm Swiss Re.
The World Meteorological Organisation (WMO) also calculates that, on average, weather, climate, or water-related disaster has occurred somewhere in the world every day for the last 50 years, causing 115 daily deaths and over $202 million in daily losses.
S&P’s Sifon-Arevalo said that some countries have already suffered credit rating downgrades due to extreme weather, such as some Caribbean Islands after major hurricanes.
But he said the new data was not about to be plugged into the firm’s sovereign rating models, as there were still too many uncertainties such as how countries might adapt to the changes.
A study last year by a group of UK universities looking at a more extreme rise in global temperatures, predicted that over 60 countries could see their ratings cut because of global warming by 2030.
Some experts have also suggested a sliding scale for ratings, where highly-exposed countries would have one credit score for the next 10 years or so and another one for further in the future when problems are likely to be biting.
“We strive to tell what is relevant and where,” Sifon-Arevalo said. “But we don’t rate to a worst-case scenario, we rate to a base-case scenario.”
https://twitter.com/urumurum/status/1519890733159022592