মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিন্ক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে।
ধন্যবাদ।
আজকের লিন্ক
এখানে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই সুপারিশ করুন এখানে। ধন্যবাদ।
৮ comments
মাসুদ করিম - ২ ডিসেম্বর ২০২১ (৪:২৬ পূর্বাহ্ণ)
Shadow banking booms amid lax monitoring
https://today.thefinancialexpress.com.bd/first-page/shadow-banking-booms-amid-lax-monitoring-1638383165
Shadow banking is fast growing in Bangladesh partly because of new normal created by the pandemic but its monitoring needs to be tightened to avert any chaos on the financial market, BIBM rings the alarm bells.
Bangladesh Institute of Bank Management or BIBM makes the observations based on a study the findings of which were unveiled Wednesday at a seminar on shadow banking in Bangladesh with special reference to new-normal scenarios.
Its research paper says these types of banking in the economy are less or not regulated. However, these are not illegal and unethical. The growth of such banking has been expanding across the globe due to the coronavirus pandemic and the fastest growth of the financial technology called fintech.
Some instruments of mobile financial services like bKash, Nagad, Upay are shadow products as they are controlled or operated by separate managements outside of banks. bKash is a separate company.
Similarly, agent banking is another example of shadow banking in Bangladesh as one part of the transaction is operated by people who are not banking people. Some vendors or local people operate it.
The postal department of the government and the cooperatives of the country have long been engaged in some forms of financing activities also recognised as shadow banking.
Capital market-related activities like services by the brokerage houses, merchant banks, and alternative investment funds are shadow- banking activities throughout the globe, the banking academics at the BIBM say in the research report-evidently in the wake of mind-boggling financial scams in the country and also across the globe that prompted some major countries to press the brake on upstart fintech operators.
However, the operations of banks, non-bank financial institutions, microcredit-finance institutions and insurance companies are regulated and supervised.
BIBM professor Dr Shah Md. Ahsan Habib led the research team. Professor and Director (Dhaka School of Bank Management) Md. Nehal Ahmed, assistant professors of the BIBM Rexona Yesmin and Tofayel Ahmed, General Managers of department of offsite supervision and forex reserves and treasury management of Bangladesh Bank Md. Anwarul Islam and Saiful Islam respectively worked.
The institute, however, suggests measures to strengthen financial-stability efforts. Bangladesh needs to map payment, deposit, and credit services by adopting a set of suitable definitions.
It recommends that all innovations for financial inclusion should have similar regulatory and business incentives for fair competition and efficient monitoring.
“MFS providers should be brought under uniform but soft regulatory control (mainly to follow certain procedures and furnishing certain information) or monitoring management for ensuring transparency and customer protections,” the report says about booming mobile financial services.
Agent-banking activities and linkage arrangements should be under monitoring scanner by the regulated banks/NBFIs to handle reputation and crime risks under a given ‘guidance framework’ adopted by stakeholders’ consultations, the study advocates.
It also suggests management of banks and financial institutions should set up their monitoring, capacity development, disclosure, and customer-protection arrangement to handle risks associated with their shadow-banking activities and elements like mobile banking, agent banking, and linkage programmes.
https://twitter.com/urumurum/status/1466249249402720262
মাসুদ করিম - ৪ ডিসেম্বর ২০২১ (৯:০৯ পূর্বাহ্ণ)
পাহাড়ে পানি রাখতে ‘লাউয়ের খোল’
https://bangla.bdnews24.com/samagrabangladesh/article1979130.bdnews
লাউয়ের খোলের এ পাত্রকে ম্রো ভাষায় ‘তুইয়া’ বলা হয়। সাধারণত পাহাড়ি দুর্গম এলাকার ঝর্ণা-ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করে রাখা হয় এতে। এই পাত্র একদিকে যেমন পরিবেশবন্ধব, অন্যদিকে গরমের সময় পানিকে ঠাণ্ডা রেখে প্রশান্তি আনে শরীর-মনে।
ম্রো ও খুমীরা বলছেন, লাউয়ের খোলে অন্তত এক সপ্তাহ পানি রাখা যায়; গরমকালে এতে পানি বেশ ঠাণ্ডাই থাকে। ঝিরি-ঝরণার পানি অপরিষ্কার থাকলে পাত্রের একটা নরম অংশ আপনা-আপনিই তা ‘পরিশুদ্ধ’ করে।
গরমকালে জুমক্ষেতে কাজ করার সময় পানিভর্তি লাউয়ের খোল অনেকে কলা গাছের গোড়ায় গর্ত করে পুঁতে রাখেন। ঘণ্টা দুয়েক পরে এর পানি ফ্রিজে রাখা পানির মত ঠাণ্ডা হয়ে যায়। অভ্যস্ততা না থাকলে শিশুরা হঠাৎ খেলে অনেক সময় সর্দি-কাশিও লেগে যায়।
ম্রো ও খুমীদের গ্রামে গেলে প্রত্যেকের ঘরে অন্তত ত্রিশ থেকে চল্লিশটা ‘তুইয়া’ বা লাউয়ের খোলের দেখা মিলবে। ত্রিপুরা এবং বম জনগোষ্ঠীর মধ্যে লাউয়ের খোল ব্যবহার থাকলেও তা শুধুমাত্র দুর্গম এলাকায় দেখা যায়।
লাউয়ের খোল কিভাবে তৈরি হয় ‘পানির পাত্র’
সাধারণরত জুমক্ষেতে কিংবা ঘরের চালে ফলন হয়ে থাকে এই লাউ। তবে এই জাতের লাউ খাওয়া যায় না। প্রথমে সুন্দর ও ভাল আকারের পরিপক্ক লাউ দেখে সংগ্রহ করা হয়। এরপর ছিদ্র করে ভেতরে পানি জমিয়ে রেখে পঁচানো হয় ভেতরের অংশ। পনের-বিশ দিন পর পঁচা অংশ ফেলে দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। তারপর ভাল করে শুকানো হয় রোদে।
শুকনো লাউকে ঘরে চুলার উপর ঝুলিয়ে রাখা হয় কয়েক মাসের মত। এক সময় লাউয়ের বাইরে অংশ কালো হয়ে ওঠে। তারপর ভাল করে ধুয়ে ব্যবহার করা হয় পানির পাত্র হিসেবে।
তবে যেগুলো পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয় সেগুলোতে জুমের বিভিন্ন বীজ রেখে দেওয়া হয়। জুমবীজ ছাড়াও ঘরে হলুদ এবং লবনের পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এ লাউয়ের খোল। ফেটে না গেলে কিংবা না ভাঙলে এই খোল অনেক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
ম্রো জনগোষ্ঠীর ব্যবহার
বান্দরবান সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ে গিয়ে দেখা যায়, রামরি পাড়ায় জুমিয়ারা জুমক্ষেতে কাজ করার সময় সঙ্গে লাউয়ের খোলের পানির পাত্র রাখেন। ক্লান্ত হয়ে পিপাসা লাগলে লাউয়ের খোলের পানি পান করেন তারা।
কথা সেই দলের ষাটোর্ধ্ব বয়সী চিংতুই ম্রো ও রুইতন ম্রোর সঙ্গে। তিনি বলেন, “লাউয়ের খোলকে আমরা ঘরে এবং ঘরের বাইরে পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। ঘরে অনেকগুলো লাউয়ের খোলে পানি জমা করে রাখা হয়। আবার ক্ষেতখামারে গেলে খোলে পানি ভরে নিয়ে যাই খাওয়ার জন্য।
“এক সময় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় জগ পর্যন্ত ছিল না। পানি রাখার জন্য তখনকার সময় প্লাস্টিকের কোন কিছুই বের হয়নি। জগের বিকল্প হিসেবে লাউয়ের খোল ব্যবহার করে আসছি। বলা যায় এটি এক ধরণের পাহাড়ি জগ।”
তাইলেং নামে এক ম্রো নারী জানান, প্লাস্টিক বোতলে পানি রাখলে খাওয়ার সময় গন্ধ আসে। বরং লাউ খোলের পানি খেতে ভাল লাগে। দীর্ঘদিন ব্যবহার করে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। গরমকালে এই পাত্রের পানি ঠান্ডা হয়ে থাকে। তার ঘরে কমপক্ষে ৪০টি লাউয়ের খোল রয়েছে।
মেলকন ম্রো নামে আরেক নারী বলেন, ঝিরি থেকে প্রতিদিন লাউয়ের খোলে পানি সংগ্রহ করতে হয়। এক থুরুংয়ে (ঝুড়িতে) কমপক্ষে ১০-১২টি লাউয়ের খোল বহন করা যায়। ঘরে ফিরে খোলগুলোর মুখ কলাপাতা মুরিয়ে আটকে রাখা হয়, যাতে ময়লা না পড়ে।
এ বিষয়ে ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পানি সংরক্ষণের পাত্র লাউয়ের খোলকে ম্রো ভাষায় ‘তুইয়া’ বলা হয়। প্রত্যেক ম্রোর ঘরে কমবেশি এই লাউয়ের খোল রয়েছে। জুমক্ষেতে এবং বাগানে যারা কাজ করেন তারা পানি ভরে সঙ্গে করে নিয়ে যায় খাওয়ার জন্য।
কখন থেকে এই লাউয়ের খোলকে পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে-এই গবেষক বলেন, “নয়শ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানে ম্রো এবং খুমিদের মধ্যে একবার যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে ম্রোরা হেরে যায়। তখন আরাকান থেকে পালিয়ে বনজঙ্গলে আশ্রয় নেন তারা। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি নানা পদ্ধতি বের করেন ম্রোরা। তখন কোনো এক সময় লাউয়ের খোলকে পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে জানা যায়।”
খুমীদের ব্যবহার
বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ও খুমী সোস্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সিঅং খুমী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, খুমীদের এখনও দুর্গম এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা ঝিরি-ঝরণা এবং খালের পানির উপর নির্ভরশীল। তারা এসব পানি লাউয়ের খোলে সংরক্ষণ করে রাখে। আর লাউয়ের খোলের পানিই খায়।’’
এক সময় দুর্গম অঞ্চলে ঘরে পানি সংরক্ষণ করে রাখার কোন উপায় ছিল না। ব্যবহারের জন্য এক সময় কোন কলস ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পর্যন্ত ছিল না। ফলে তাদের আগের প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠরা লাউয়ের খোলকে বিশেষ কায়দায় করে পানি সংরক্ষণ করে রাখত বলে জানান তিনি।
অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ব্যবহার
পাহাড়ে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে ত্রিপুরা ও বম সম্প্রদায়রা লাউয়ের খোল ব্যবহার করে থাকে। তবে তাদের মধ্যেও দুর্গম এলাকার জুমচাষি ছাড়া আর ব্যবহার করতে দেখা যায় না।
এ প্রসঙ্গে রুমা উপজেলার ইডেন পাড়ার বাসিন্দা ভাননুন সিয়াম বম বলেন, ৮০ দশক পর্যন্ত বমদের ঘরে ঘরে লাউয়ের খোল ব্যবহার প্রচলন ছিল। কিন্তু বমরা জুম চাষাবাদ থেকে বিভিন্ন ফলদ বাগান চাষে পরিবর্তিত হওয়ার পর এর ব্যবহার দিন দিন কমতে থাকে।
‘‘এখন বম পাড়ার কোথাও কারও ঘরে লাউয়ের খোল ব্যবহার চোখে পড়বে না। তবে কেওক্রাডং পাহাড়ে পাদদেশে কয়েকটি পাড়া এবং আরও কিছু দুর্গম এলাকার পাড়ায় গেলে হয়তো কিছু জুমচাষিরা ব্যবহার করে থাকবে।’’
তবে বান্দরবান জেলার দুর্গম পাড়া ত্রিপুরাদের মধ্যে এখনও লাউয়ের খোল ব্যবহার রয়েছে জানান রুমা উপজেলার রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের জনেরাং পাড়ার বাসিন্দা রামবাদু ত্রিপুরা স্টিভ।
https://twitter.com/urumurum/status/1467057139831042048
মাসুদ করিম - ৯ ডিসেম্বর ২০২১ (৩:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
RMG workers’ database
https://today.thefinancialexpress.com.bd/editorial/rmg-workers-database-1638968778
That Readymade Garment (RMG), the country’s largest foreign currency-earning sector, has so far been running without a precise and dependable set of data on its workforce and other relevant information is most unfortunate. Happily, a belated attempt has been made to get over the inadequacy. A project titled Mapped in Bangladesh (MiB) initiated by the Brac University and supported and backed by development partners and trade bodies in the sector respectively has sought to present a ‘real-time’ set of data that will give an authentic and clear picture of the sector. The first phase of the survey started in December 2017 to be completed next month has estimated under its digital mapping programme the number of workers at 2.7 million while it is 4.3 million according to the Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA). Similarly, the survey finds 3,485 RMG units as against the BGMEA’s 4,500 (approximately).
The discrepancies in both the numbers of workers and factories are glaring, particularly when those concern the figures of employees. However, the BGMEA agrees on the number of RMG manufacturing units because many of them set up earlier are no longer in operation now. Also, there are unregistered units and others engaged in sub-contracting. These are reasons behind the discrepancies in figures on both counts. But the margin of gap between the numbers of workers estimated by the Brac survey and those by the BGMEA still maintains is outrageously wide. It is because neither the government agencies nor the BGMEA has updated the data. Workers who left their job for good are still retained as employees with factories. Clearly, such botched-up figures or data are of no help to form a clear idea or picture of the country’s highest revenue-earning sector. Under pressure from foreign buyers, RMG units had to bring their infrastructure in order, including retrofitting where required. But if their driving engine—workers to be precise —is not placed at the centre of all activities, they are sure to suffer.
An imprecise database of workers and units can be of no help to develop future planning with the RMG industry. Even the backward linkage units and sub-units require to be planned according to the demand. For example, if the knitwear apparels find a larger market than before, it calls for expansion of the units of this particular type and therefore the backward linkage units also need to be developed commensurate with the demand. This is exactly how industrial development takes place.
Then the saga of workers’ exploitation can as well be perpetuated on the basis of imperfect data. What is needed here is an open book from which no party can take an undue advantage. There is no arguing that the pandemic has further eroded the bargaining power of the RMG workers—in fact, most of the workers in the informal sector. Now that the RMG is making a turnaround, workers should be allowed to enjoy what they deserve in a volatile market. The low-paid workers and employees are keeping their mere existence by the skin of their teeth. In a situation like this, they cannot be expected to give their best. They must be given their due in order to maximise their productivity which is at the core of sustainability in a competitive world.
https://twitter.com/febdonline/status/1468752254404423683
মাসুদ করিম - ১১ ডিসেম্বর ২০২১ (২:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
রাজনীতিতে ধপাস পতনের আগে যেভাবে বেড়েছে মুরাদের সম্পদ
https://bangla.bdnews24.com/politics/article1982410.bdnews
মুরাদ হাসান যখন প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে দাঁড়ালেন, চিকিৎসা পেশা থেকে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন তিন লাখ টাকার সামান্য বেশি। দশ বছর পরে সেটা বেড়ে হয় ১৪ লাখ, যার বেশিরভাগটা আসে ব্যবসা থেকে।
অডিও কেলেঙ্কারিতে প্রতিমন্ত্রিত্ব আর দলীয় পদ হারানো সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানের অনেক কিছুই এখন আলোচনা আসছে। ২০০৮ ও ২০১৮ সালে দুই দফা নির্বাচন করার সময় ইসিতে জমা দেওয়া তার হলফনামা থেতে দেখা যাচ্ছে, দশ বছরের ব্যবধানে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। তবে তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে আরও বেশি।
৪৭ বছর বয়সী মুরাদ জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদারের ছেলে। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা, পরে জামালপুরে আওয়ামী লীগের পদে বসেন।
আওয়ামী লীগের টিকেটে নবম সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ আসন থেকে প্রথমবার এমপি হন মুরাদ। পরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকার মনোনয়ন পান মুরাদ। ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে জিতে প্রথমে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং পরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু আড়াই বছরের মাথায় তাকে পদ হারাতে হয় নারীর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যের অডিও ফাঁস হওয়ার জেরে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দেশও ত্যাগ করেছেন মুরাদ, গেছেন কানাডায়; সেখানে তার কোনো সম্পদ আছে কি না, তার কোনো উল্লেখ কোনো নথিতে নেই।
আয় বেড়ে ৩ গুন
দুই নির্বাচনের হলফনামাতেই মুরাদ নিজের পেশার ঘরে লিখেছেন ‘চিকিৎসা’। ২০০৮ সালে তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ৩,০৯,৬০০ টাকা, যার পুরোটাই ‘চাকরি থেকে’ থেকে আসত। আর কোনো খাত থেকে কোনো আয় তার ছিল না।
২০০৮ সালের হলফনামায় মুরাদের বার্ষিক আয় বেড়ে হয় ১৩ লাখা ৮৩ হাজার ২৯৩ টাকা। পেশার ঘরে কোনো পরিবর্তন না এলেও চাকরি থেকে আয়ের ঘর দেখা যায় ফাঁকা।
তার বদলে ব্যবসা থেকে বছরে ১২ লাখ টাকা, বাড়ি/এপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৯৩ টাকা এবং কৃষি থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় দেখানো হয় সেখানে।
বেড়েছে টাকা, গয়না
২০০৮ সালের হলফনামা বলছে, সে সময় মুরাদ হাসানের হাতে নগদ ২ লাখ ২২ হাজার ২১৩ টাকা ছিল। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগে ছিল ৫৪ হাজার ৯২১ টাকা।
দশ বছর পর তিনি যখন আবার নির্বাচন করতে গেলেন, তখন তার হাতে নগদ টাকার কোনো হিসাব তিনি দেননি। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২১ লাখ ২৭ হাজার ৩৫ টাকা সঞ্চয়, শেয়ারে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৩১ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন।
আগেরবার মুরাদ কোনো গয়নার মালিক ছিলেন না। তবে ২০১৮ সালের হলফনামায় তার নামে ২৫ ভরি সোনা থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে, এর দাম দেখানো হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।
পুরনো গাড়ির সঙ্গে দামী আরেকটি
হলফনামার তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে মুরাদের ৮ লাখ টাকা দামের একটি টয়োটা মাইক্রোবাস ছিল। ১০ বছর পর সেই গাড়ির সঙ্গে যোগ হয় ৭০ লাখ টাকার একটি নতুন কার।
প্রথমবার এমপি হওয়ার আগে তার বাসায় ছিল ৪০ হাজার টাকার টিভি ও ফ্রিজ। কম্পিউটার ও ওভেন ছিল আরও ৪০ হাজার টাকার। খাট, সোফা, ডাইনিং সেট, চেয়াল টেবিল যা বাসায় ছিল, তার দাম দেখানো হয়েছিল ১ লাখ টাকা।
আর দশ বছর পর প্রতিমন্ত্রী হওয়ার সময় তার বাসায় ৮০ হাজার টাকা দামের টিভি ও ফ্রিজ এবং লাখ টাকা দামের ল্যাপটপ ছিল। আসবাবপত্র ছিল আড়াই লাখ টাকার।
এর বাইরে ৩ লাখ টাকার পিস্তল ও শটগানেরও মালিক তিনি তখন, যা দশ বছর আগে ছিল না।
এছাড়া জমি বিক্রি থেকে ২০ লাখ টাকা; পুঁজি হিসেবে ৬ লাখ টাকা এবং ঋণ হিসেবে দেওয়া ১৫ লাখ টাকার হিসাবও তিনি ২০১৮ সালের হলফনামায় দিয়েছেন।
জমি, বাড়ি বাড়-বাড়ন্ত
মুরাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের নির্বাচন করার সময় তিনি ছিলেন ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৭.৩০ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক। কোনো কৃষিজমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট বা প্লট তার সে সময় ছিল না।
২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি নিজের নামে সরিষাবাড়ির দৌলতপুরে ১০ বিঘা কৃষি জমি এবং ২ কাঠা ও ১.২ বিঘা অকৃষি জমি দেখিয়েছেন, যা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। এছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে ৫ কাঠা জমি থাকার তথ্যও দিয়েছেন, যার দাম ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০ টাকা।
স্ত্রীর সম্পদ আরও বেশি
২০০৮ সালের নির্বাচনে মুরাদের হলফনামায় স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদের ঘটগুলো ছিল শূন্য। স্ত্রীর নামে সে সময় কেবল ‘বিয়েতে উপহার’ হিসেবে পাওয়া ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের কথা লেখা হয়েছিল, দাম লেখা হয়েছিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
পরের দশ বছরে মুরাদ হাসানের নিজের সম্পদ যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানের সম্পদের পরিমাণ।
২০১৮ সালের হলফনামায় মুরাদ তার স্ত্রীর নামে ১৫০ ভরি গয়নার তথ্য দিয়েছেন, এবার উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন ‘পৈত্রিক ও বিয়ে সূত্রে’।
২০০৮ সালে জাহানারা এহসানের কোনো সঞ্চয় বা বিনিয়োগ ছিল না। ২০১৮ সালে হলফনামার ওই ঘরে ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থাকার তথ্য।
প্রথম দফায় পাঁচ বছর এমপি থেকে এবং পরের পাঁচ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য করে একটি বাড়ির মালিকও হতে পারেননি মুরাদ।
তবে এই সময়ে তার স্ত্রীর নামে পুরানা পল্টনে ছয় তলা একটি বাড়ি হয়েছে। বেইলী হাইটসে (নওশান হাইটস কলোনী) একটি ফ্ল্যাটও হয়েছে তার। এছাড়া মুরাদের ওপর ‘নির্ভরশীলদের’ একজন শান্তিনগরের কনকর্ড টুইন টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। এর সবগুলোই দান থেকে পাওয়া বলে মুরাদের ভাষ্য।
মাসুদ করিম - ২১ ডিসেম্বর ২০২১ (৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
শহীদজায়া মুশতারী শফীর জীবনাবসান
https://bangla.bdnews24.com/ctg/article1987228.bdnews
মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনের অন্যতম নেতা শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী আর নেই।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকালে তার মৃত্যু হয়।
মুশতারী শফীর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি সাত ছেলে-মেয়ে রেখে গেছেন।
তার স্বামী ডা. মোহাম্মদ শফীকে একাত্তরে বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
মুশতারী শফী বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকা সিএমএইচে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন জানিয়ে ছেলে মেহরাজ তাহসীন শফী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“আজ বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে চিকিৎসকরা তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেন।”
মুশতারী শফী দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
তাকে অসুস্থ অবস্থায় গত ২ ডিসেম্বর ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ঢাকার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৪ ডিসেম্বর সিএমএইচে ভর্তি করে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাকে।
মুশতারী শফীর লাশ মঙ্গলবার চট্টগ্রামে নিয়ে সেখানেই দাফন করা হবে বলে তাহসীন শফী জানিয়েছেন।
মুশতারী শফীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন।
১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া মুশতারী শফী ছিলেন চট্টগ্রামসহ সারাদেশের প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। চট্টগ্রামের প্রায় সব নাগরিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয়।
১৯৬৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে নারীদের জন্য মাসিক ‘বান্ধবী’ সাময়িকীর প্রকাশনা শুরু করেন এবং ‘বান্ধবী সংঘ’র প্রতিষ্ঠা করেন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রাম মহানগরীর এনায়েত বাজারে মুশতারী শফীর বাড়িতেই কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল। শব্দসৈনিক বেলাল মোহাম্মদের সঙ্গে বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন ডা. মোহাম্মদ শফী ও তার স্ত্রী মুশতারী।
একাত্তরের শুরুর সময় থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, সেবা ও অর্থায়নসহ নানা কাজে যুক্ত ছিলেন তারা।
মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র বাসায় রাখায় ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল ডা. মোহাম্মদ শফী এবং মুশতারীর ভাই এহসানুল হক আনসারীকে স্থানীয় রাজাকাররা ধরে নিয়ে যার। পরে তাদের হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
এরপর ভারতে গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দ সৈনিক হিসেবে কাজ করেন মুশতারী শফী। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি দেশে ফেরেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০১৬ সালে মুশতারী শফীকে ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। ২০২০ সালে তিনি বেগম রোকেয়া পদক পান।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গত শতকের ৯০ এর দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করলে তাতে সক্রিয় হন মুশতারী শফী। জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পরও আন্দোলন এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রায় এক দশক আগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেও অনুপ্রেরণাদানকারী হিসেবে ছিলেন মুশতারী শফী।
মুশতারী শফী মহিলা পরিষদে যুক্ত ছিলেন এবং সর্বশেষ উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি ছিলেন।
মুশতারী শফী লেখালেখিতেও ছিলেন সমান সক্রিয়। ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’, ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’, ‘চিঠি জাহানারা ইমামকে’, ‘একুশের গল্প’, ‘দুটি নারী ও একটি যুদ্ধ’, একদিন এবং অনেকগুলো দিন’, ‘আমি সুদূরের পিয়াসি’সহ বেশ কিছু কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।
https://twitter.com/urumurum/status/1473134605251141632
মুশতারী শফীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এক বার্তায় বলেছেন, “তার মৃত্যুতে আমরা একজন প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনার এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে হারিয়েছি।”
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অনুপম সেন ও সদস্য সচিব ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবী ও সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি আবু হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক শরিফ চৌহান, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সভাপতি অ্যানি সেন ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
মাসুদ করিম - ২২ ডিসেম্বর ২০২১ (১০:১৯ পূর্বাহ্ণ)
(আজ থেকে প্রায় বছর পনেরো আগে আমার নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে অন্তিম শ্রদ্ধা ও অভিবাদন জানাচ্ছি, এই মুহূর্তে মহাকাল ও মহাবিশ্বের পথে যাত্রা করা, আমাদের সবার প্রিয় ও প্রণম্য শহিদজায়া, নারীমুক্তির অন্যতম অগ্রদূত, নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধা ও শব্দসৈনিক বেগম মুশতারী শফীকে।)
আলম খোরশেদ: আপনার শৈশব-কৈশোরের কথা দিয়ে শুরু করা যাক।
মুশতারী শফী: আমার জন্ম বর্তমান ভারতের মালদহ জেলার কালিয়াচক থানায়, ১৯৩৮ সালে। আমার জন্মের তিন মাস পরেই আমার মা মারা যান। আমার বাবার বাড়ি ফরিদপুর, নানাবাড়ি খুলনায়। আমার ভাইও অল্প বয়সে মারা যায়। তিন বোন এক ভাই ছিলাম আমরা। আমার দাদি একরকম জোর করেই আমার আব্বাকে দ্বিতীয় বিয়ে করান। আমার এই মায়ের বাড়ি বরিশাল। আমার আব্বার শেষ কর্মস্থল ছিল ঢাকায়। উনার অবসরগ্রহণের পর আমরা ফরিদপুরে ফিরে যাই। আমার বড় ও মেজো দুই বোনকেই তখন বিয়ে দেন বাবা। আমাকে ঢাকায় এনে ভর্তি করিয়ে দেন পুরনো ঢাকার নারীশিক্ষা মন্দিরে। কামরুন্নেসা স্কুলে টেনে ওঠার পরপরই আমার বিয়ে হয়। ১৯৫৩ সালের শেষের দিকে।
আ খো: এরপরই তো আপনি চট্টগ্রামে চলে এলেন, তাই না?
মু শ: হ্যাঁ। বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে আছি। আমার স্বামী ডা. শফী অত্যন্ত উদার ও প্রগতিশীল মানুষ ছিলেন। বিয়ের পর আমার স্বামীর উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় আমার পড়াশোনা ও সংস্কৃতিচর্চা চলতে থাকে। চট্টগ্রামের প্রগতিশীল মানুষদের প্রায় সবাই ছিলেন ডা. শফীর বন্ধুস্থানীয়। তাঁরা এ-বাড়িতে নিয়মিত আসতেন।
আ খো: সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলেন কখন, কীভাবে?
মু শ: চট্টগ্রামে এসে আমি দেখলাম, যে-চট্টগ্রাম অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, যে-চট্টগ্রামের মেয়েরা সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, সেই চট্টগ্রামের মেয়েরা, বিশেষত রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়েরা খুবই পশ্চাৎপদ। মেয়েদের একমাত্র সংগঠন ছিল আপওয়া- ‘অল পাকিস্তােন উইমেন্স অ্যাসোসিয়েশন’। তো, আমি ওখানকার সদস্য হলাম। চট্টগ্রামে তখন একটা বিরাট সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গড়ে উঠেছিল রেলওয়েকে কেন্দ্র করে। সেই সময় রেলওয়ের চেয়ারম্যান ছিলেন আর. এন. বাগচি। তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে শিল্পী সংঘ প্রতিষ্ঠিত হল। মাহবুবুল আলম চৌধুরী, সুচরিত চৌধুরী এঁরা ডাক্তার শফীর বন্ধু হয়েছিলেন। তো আপওয়াতে বাঙালিদের কথার তেমন কোনো গুরুত্ব ছিল না। পহেলা বৈশাখও পালিত হত না। আমরা ধীরে ধীরে কৌশলে পহেলা বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তী এসব দিবস পালন করতে লাগলাম। একসময় ওদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ এতটাই বেড়ে গেল যে, আমরা আপওয়া থেকে বেরিয়ে আসলাম। বেরিয়ে এসে আমরা ‘বান্ধবী সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করলাম।
আ খো: এটা কত সালের ঘটনা?
মু শ: ৬৩ সালের। প্রথমে প্রতি রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আসর হত। এই আড্ডায় পুরুষদেরও আসতে বাধা ছিল না। কখনো মাহবুবুল আলম এসে বসতেন, কখনো সবিহ্উল আলম। পরে একসময় বান্ধবী নামে পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিলাম। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশ, সুকান্ত ভট্টাচার্য এ-চারজনের জন্মবার্ষিকী আমরা নিয়মিত পালন করতাম। ৬৩ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর আমরা ’বান্ধবী সংঘের’ পক্ষ থেকে ‘ভিক্ষা মিছিল’ করে সমস্ত শহর ঘুরে ঘুরে সাহায্য সংগ্রহ করি। ’বান্ধবী পুরস্কারও’ প্রবর্তন করেছিলাম। পর পর তিন বছর আমরা এ-পুরস্কার দিয়েছি। দর্শনীর বিনিময়ে নাটকের আয়োজনও প্রথম ’বান্ধবী’ই করে।
আ খো: পত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনাটা কীভাবে আসে? কারা কারা যুক্ত হলেন এর সঙ্গে?
মু শ: ছোটবেলা থেকে আমাদের বাড়িতে নিয়মিত বেগম পত্রিকা আসত, শিশু সওগাত আসত। ওগুলো পড়তে পড়তেই সেই ছোটবেলাতেই আমারও ইচ্ছে হয় আমি একটা পত্রিকা বের করব। সম্ভবত ৬১ সালে ঢাকায় বেগম ক্লাবে একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাই। সেখানে নুরজাহান বেগম, নাসিরউদ্দিন সাহেব সহ আরো অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমাদের সাহিত্য আড্ডায় যে লেখাগুলো আসতো সেগুলো দিয়েই পত্রিকা করার কথা আমার মাথায় আসে। পূর্ণেন্দু দস্তিদার, বেলাল মোহাম্মদ এদেরকে আমার পরিকল্পনা জানাই। ওঁরা খুব উৎসাহের সঙ্গে রাজি হলেন। সবাই মিলে আমাকে পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব দিলেন। আবুল ফজল সাহেবও আমাদেরকে খুব সহযোগিতা করলেন।
আ খো: অর্থায়নের ব্যাপারটা কীভাবে হল?
মু শ: আমরা হিসাব করে দেখলাম পাঁচ হাজার টাকা হলে আমরা শুরু করতে পারি। ডা. শফী আমাদেরকে দশ হাজার টাকা দিলেন। সিগনেট প্রেস বাকিতে পত্রিকা ছেপে দিতে সানন্দে রাজি হলো। বিজ্ঞাপনের জন্য আমরা কলেজের ছাত্রীদেরকে কমিশনের ভিত্তিতে কাজে লাগালাম। এ. কে. খান, নাসিরউদ্দিন সাহেব আর ইস্পাহানিসহ অনেকেই আমাদেরকে মোটা অঙ্কের টাকা সাহায্য করলেন।
আ খো: এটাই তো একসময় ‘মেয়েদের প্রেস’-এ রূপ লাভ করলো, তাই না?
মু শ: হ্যাঁ, এভাবে পত্রিকা চালাতে চালাতে একসময় আমার মনে হল, মেয়েরাই যদি পত্রিকা ছাপানোর কাজ নিজের হাতে করতে পারে, তা হলে ভালো হয়। খাতুনগঞ্জ থেকে খুব বুড়ো একজন কম্পোজিটর নিয়ে আসলাম, ওনার নামটা ভুলে গেছি। ওনাকে বললাম, শুধু কম্পোজ করে দিলেই হবে না, আমাদের মেয়েদেরকে শিখিয়েও দিতে হবে। উনি আমাদের মেয়েদেরকে তিন মাস ট্রেনিং দিলেন। কম্পোজ করা থেকে শুরু করে, মেশিন চালানো, বাঁধাই সব কাজই একসময় ’বান্ধবী’রাই করতে লাগল।
আ খো: প্রেসটার কাজ শুরু হল কখন? কতদিন চলল?
মু শ: ১৯৬৭ সালের শেষের দিকে। ৬৮, ৬৯-এ রাজনৈতিক ঘনঘটার সময় পোস্টার, লিফলেট এসব ছাপানোর হিড়িক। এদিকে প্রেস চালাচ্ছি, ওদিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছি। ৭১ সালের মার্চ সংখ্যা পর্যন্ত আমরা ছেপেছি। এরপর তো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। তখন আমার বাড়ি, বান্ধবীর অফিস সহ সবকিছু লুট হয়ে গেল।
আ খো: আমরা জানি, একাত্তর আপনার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই পর্বটা সম্পর্কে বলুন।
মু শ: একাত্তরে বান্ধবী সংঘের পক্ষ থেকে আমরা বড় বড় তিনটা নারী সম্মেলন করেছি। সেই সময় গ্রাম থেকে পর্যন্ত বোরখা পরে মহিলারা এসে যোগ দেন সমাবেশে। ২৫ শে মার্চ বিকেলে আমরা খবর পেলাম যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। দুপুরের দিকে বেলাল মোহাম্মদ বলল, “এসময় রেডিয়োটাকে যদি কাজে লাগানো যায়।” শুনে আমি তো চিৎকার করে উঠলাম। বললাম, “কিন্তু তা কী করে সম্ভব?” বেলাল মোহাম্মদ তখন রেডিয়োর স্ক্রিপ্ট রাইটার। আমিও ৬৪ সাল থেকেই রেডিয়োর সঙ্গে যুক্ত। বিকেল পাঁচটায় বেলাল মোহাম্মদের ফোন পেলাম। ও শুধু বলল রেডিও অন রাখতে। আমি যথারীতি রেডিও অন করে অপেক্ষা করছি।সাতটা চল্লিশে ’জয় বাংলা, বাংলার জয়’ রেডিও টিউন হিসেবে বাজতে লাগল। তারপরেই থেমে গিয়ে আবুল কাশেম সন্দ্বীপের কণ্ঠস্বরে পরপর দুইবার শুনতে পাই ’স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি’। এর পরেই আবদুল্লাহ ফারুকের কণ্ঠে প্রথমে বাংলা ও পরে ইংরেজী বুলেটিন শুনতে পাই। আরেকজন কবিতা আবৃত্তি করে শোনালো। এরপরেই কোন নাম প্রচার না করেই ’স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ পাঠ করা হয়। এইভাবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে যায়।
আ খো: আপনার স্বামী ডা. শফী কীভাবে নিহত হলেন?
মু শ: ২৭ মার্চের রাতের বেলায় ন্যাপ-এর চৌধুরী হারুনুর রশিদ আমাদের বাসায় এক ট্রাক অস্ত্র নিয়ে আসলেন। আমার ইতস্তত ভাব দেখে ডা. শফী বললেন, “আরে এত ভয় কললে চলে? দেশের জন্য কাজ করতে গেলে সাহস লাগে।” এই বলে সবাই মিলে অস্ত্রের ট্রাঙ্কগুলো দোতলায় তোলে। যাই হোক, এইভাবে ২৭ মার্চ চলে গেলো, ২৮ মার্চ আসলো। আমি পালিয়ে যাওয়ার কথা বললে ডা. শফী রাজী হলেন না। ৩০ মার্চ দুইটা-আড়াইটার দিকে পাকিস্তানি আর্মি রেডিয়ো স্টেশনে হামলা চালায়, আর বাড়িঘর সব পুড়িয়ে দেয়। এপ্রিলের ৭ তারিখ সকাল ১০ টায় দুটো আর্মি ট্রাক আমার বাসার সামনে এসে দাঁড়াল। পুরো বাড়ি তল্লাশি করে কিছুই পেল না। যাবার সময় ডা. শফীকে তাদের সাথে নিয়ে গেল। আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে সেইদিন দুপুর ১২ টা নাগাদ ডা. শফীকে তারা সসম্মানে বাসায় পৌঁছে দিল। কিন্তু আড়াইটার দিকে আরেক ট্রাক আর্মি আসল। তারা ওপরের ঘর সার্চ করবার জন্যে দরজা ভাঙল। এক পর্যায়ে তারা অস্ত্রের ট্রাঙ্কগুলো খুঁজে পেল। ওগুলোতে লাল মার্কার দিয়ে লেখা ছিল ২৭-৩-১৯৭১। তারিখ দেখে ওরা যা বোঝার বুঝে গেল। ওরা ডা. শফীকে আর আমার ছোটভাই এহসানকে ধরে নিয়ে গেল। শেষরাতের দিকে বৃষ্টি নামলে আর্মিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে আমি বাচ্চাদেরকে নিয়ে বেরিয়ে যাই। তারপর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আগরতলায় গিয়ে নার্সিংয়ের ট্রেনিং নিলাম, যাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারি। আমি বেলাল ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ শুরু করলাম। দেশ স্বাধীন হবার পরে ১৯৭২ সালে জানুয়ারি মাসের বিশ তারিখে আমি দেশে ফিরে আসি।
আ খো: এরপর তো আপনার জীবনে শুরু হল আরেক লড়াই, এক অন্যরকম ব্যক্তিগত মুক্তিযুদ্ধ।
মু শ: হ্যাঁ, আমাদের বাড়িটা ওরা এমনভাবে নষ্ট করেছিল যে বলতে গেলে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। আমি আমার বোনের বাসায় টানা তিন মাস থেকে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাড়িটা ঠিকঠাক করলাম। আবুল ফজল সাহেব আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। তখন ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। আমি আমার ভাগ্নেকে নিয়ে অয়েল ট্যাঙ্কারে চড়ে বঙ্গোপসাগর ঘুরে অবশেষে ঢাকায় পৌঁছলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে আগে থেকে চিনতেন, আমাকে ‘চট্টলার বান্ধবী’ বলে সম্বোধন করতেন। ৩২ নম্বর রোডের বাড়ির সামনের সেই প্রচণ্ড ভীড়ের মধ্যে উনি আমাকে চিনতে পারলেন। আমি তাঁকে চিঠিটা দিলাম। তিনি আমাকে সেক্রেটারিয়েটে জনৈকা মাহমুদার কাছে পাঠালেন। তিনি আমাকে একটা ফরম পূরণ করতে দিলেন। একটু পর আমাকে দুই হাজার টাকার একটা চেক দিলেন। আমি খুব অপমানিত বোধ করলাম। সেই ফরম ও চেক ছিঁড়ে সেই মুহূর্তে আমি চলে আসি। বেলাল মোহাম্মদ আমাকে রেডিয়োতে ঢুকতে বললেন। মূলত স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসাবে ওখানে আমার চাকরি হয়। এভাবে আমার নতুন জীবন শুরু হল।
আ: খো: এরই মধ্যে আপনি লেখালেখিটা চালিয়ে গেলেন, লেখক হয়ে উঠলেন- সেই পর্বের কাহিনীটা আমাদের একটু বলবেন?
মু: শ: হ্যাঁ, জীবনধারণের পাশাপাশি লেখালেখিটাও চালিয়ে গেছি। সবচেয়ে বেশি লিখতে ভালো লাগতো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। কেননা মুক্তিযুদ্ধকে আমি একবারে ভেতর থেকে দেখেছি, আর এটা আমার জীবনকেই তো একেবারে পাল্টে দিয়েছিল। আমি আমার সেইসব রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখলাম মুক্তিযুদ্ধর স্মৃতিচারণ, ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’। বইটি প্রকাশিত হয় অনুপম প্রকাশনী থেকে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়টায় আমি কিছু ছোটগল্প লিখেছিলাম আকাশবাণী বেতারকেন্দ্রের জন্য। সেগুলোও এক পর্যায়ে ’দুটি নারী ও একটি মুক্তিযুদ্ধ’ নামে বই হয়ে বেরোয়। এছাড়া ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ ও ‘একুশের গল্প’ নামে আমার আরও দুটো ছোটগল্পের সংকলন রয়েছে। ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র আন্দোলনের সঙ্গে আমার ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে একসময় ’চিঠি, জাহানারা ইমামকে’ নামে দীর্ঘ একটি গ্রন্থও রচনা করি যা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সব মিলিয়ে আমার বইয়ের সংখ্যা একেবারে কম নয়, গোটা বিশেক তো হবেই।
আ খো: আপনি মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সব কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করলেন, স্বামী ও ভাইকে হারালেন। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের অবস্থান সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
মু শ: মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যতক্ষণ না শেষ হবে ততক্ষণ আমরা মানুষ হিসাবে আমাদের নৈতিক দায় থেকে মুক্ত হতে পারব না। আর মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনার সার্বিক পুনরুজ্জীবন ও প্রতিষ্ঠা ঘটাতে না পারলে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম জাতি হিসাবেও আমরা বেশিদূর এগোতে পারব না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এটাই আমার শেষ কথা।
https://www.facebook.com/alam.khorshed.94/posts/10159336682352295
মাসুদ করিম - ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ (৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
‘শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা আর মানুষের আকাঙ্ক্ষা লিখছে উন্নয়নের গল্প’
https://bangla.bdnews24.com/economy/article1988983.bdnews
শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব আর সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা এ দুইয়ের সম্মিলনে উন্নয়নের গল্প লিখছে বাংলাদেশ, এমন কথা বলেছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ২০২০’ গ্রহণ করে বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই মূল্যায়ন তুলে ধরেন অর্থনীতির এই অধ্যাপক।
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রথম নেওয়ার পর শেখ হাসিনা কীভাবে অর্থনীতির জটিল বিষয়ও বুঝে পরিকল্পনা সাজাতে চেয়েছিলেন, তা তুলে ধরেন ওয়াহিদউদ্দিন।
“১৯৯০ দশকের শেষ ভাগের কথা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রথম টার্মে তখন উন্নয়ন বাজেটের আকার কী হবে, তা নিয়ে তখনকার ভারপ্রাপ্ত পরিকল্পনামন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী এই দুজন দুই ধরনের মতামত দিয়েছিলেন। তা ছিল লিখিত আকারে যুক্তি সহকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদন।”
“পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যাখ্যাটা ছিল কিছুটা সাপ্লাই সাইড ইকোনমিকসের তত্ত্বের মতো, বেশি খরচ করলে আয় বাড়বে, চাহিদা বাড়বে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। আর অর্থমন্ত্রীর বাজেটের বক্তব্য ছিল যে বাজেটে বড় ধরনের ঘাটতি হলে বড় ঘাটতির অর্থায়ন হলে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি হবে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উভয় ব্যাখ্যা মনোযোগ সহকারে পড়ে আমার পরামর্শ চেয়েছিলেন।”
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের আগে যে তত্ত্বাধায়ক সরকার ছিল, সেই সরকারে অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, “কী পরামর্শ আমরা দিয়েছিলাম, সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু আমি তখন খুব চমকিত হয়েছিলাম এই ভেবে যে এই ধরনের অর্থনীতির তাত্ত্বিক বিতর্ক নিয়ে একজন সরকার প্রধান নিজে পুঙ্খনাপুঙ্খ পর্যালোচনা করেন।
“ওই দিন খুব সকালে নাকি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) উঠেছিলেন। উঠে তিনি (দুই মন্ত্রীর) প্রতিবেদন পড়ে আত্মস্থ করতে চেয়েছিলেন। এরপর আমার কাছ থেকে আবার নিরপেক্ষ একটা মতামতও চাইলেন। আমার তখন মনে হয়েছিল, আমরা সুশাসন যেটা বলি, এটা সেটার একটা আদর্শ দৃষ্টান্ত।”
আর বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তা অন্য অনেক দেশে নেই বলে মনে করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
“আমাদের দেশের খুব গরিব মানুষরাও মনে করেন যে দারিদ্র্য তাদের ভাগ্য নয়। এটি উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা, এটা একটা বড় শক্তি। মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা বোধহয় মুক্তিযুদ্ধ থেকেই এসেছে এবং এখন পর্যন্ত আছে।”
তার ভাষ্যে, “এত দিন আমরা যে উন্নয়নের সাফল্য পেয়েছি, সেখানে সাধারণ মানুষ, কৃষক, ক্ষুদ্র মাঝারি, বড় শিল্প উদ্যোক্তাদের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, যখন যেই সুযোগ এসেছে তার পূর্ণ ব্যবহার করেছেন। যতটুকু তাদের সাধ্যের মধ্যে ছিল, এমনকি ক্ষুদ্র কৃষক। আর সরকার সেখানে প্রয়োজনীয় নীতি সমর্থন দিয়েছেন এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এটাই হলো বাংলাদেশের সাফল্যের মূল কথা।”
গত এক দশকে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক দূর; স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটানোর শর্তগুলোও পূরণ করে ফেলেছে।
নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে মানব সম্পদ তৈরি এবং প্রশাসনের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।
“আমরা এখন উন্নয়নের নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছি। বিশ্ব অর্থনীতিও বদলে যাচ্ছে। উন্নয়নের পর্যায়ে আমাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ অনেক আছে।”
তিনি একইসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন কাউকে অনুকরণ করে হয়নি, হয়েছে ‘নিজস্ব মডেলে’।
“কী করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়, প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়, সে বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা এতদিন পরে এখন প্রায় একমত যে উন্নয়নের কোনো ধরাবাঁধা ফর্মুলা নেই। এমনকি বিশ্ব ব্যাংক ২০০৬ সালের একটি প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে, একই নীতি ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ফল দেয়। এর অর্থ হল, অন্য দেশের মডেল অনুকরণ করে আসলে লাভ হবে না। নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেদের উন্নয়ন কৌশল নিজেদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে।”
“উন্নয়নের মডেল হিসেবে বহুদিন ধরেই পূর্ব এশিয়ার ব্যাঘ্র অর্থনীতিগুলোর কথা বলা হত। বিশ্ব ব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা সবসময় উপদেশ দিয়েছে, তাদেরকে অনুকরণ কর। কিন্তু আসলে কাউকে অনুকরণ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায় না।”
এতদিন ধরে বাংলাদেশ যে নিজের মতো চলেছে, সেই পথই ধরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
“সুতরাং পূর্ব এশিয়ার টাইগার নয়, আমাদেরকে টাইগার হতে হলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারই হতে হবে।”
বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের জন্য অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার-২০২০’ দেওয়া হয়।
ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের গলায় স্বর্ণ পদক পরিয়ে দেন। গভর্নর ফজলে কবীর নগদ ৫ লাখ টাকা তার হাতে তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ফজলে কবীর বাংলাদেশ ব্যাংক, পাঁচটি পাঁচশালা পরিকল্পনা এবং দুটি ব্যাংক রিফর্মসহ অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ওয়াহিদউদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
https://twitter.com/urumurum/status/1474226835093295106
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যে অর্থাৎ জুন মাসের মধ্যে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে। লক্ষ্য অনুযায়ী ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হবে।
মাসুদ করিম - ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ (৭:১৩ পূর্বাহ্ণ)
Harsh Mander: How I (barely) survived Covid-19 in a general ward of a public hospital
As we enter the third year of the pandemic, there is sobering admission by scientists that humankind will have to learn to continue to live with Covid-19 for the foreseeable future. I write here at this milestone an account about my own personal experience in a general ward of a leading public hospital with the coronavirus infection that was one of the most difficult periods of my life.
I write with some hesitation and this is something that I have struggled to do for this past year. The monumental scale of suffering of literally millions of my countrywomen and men makes my own experience inconsequential by comparison. But I still do so write, only as a direct witness to the disgraceful collapse of even elementary care and everyday humanism that I encountered in the general ward of what is widely considered the finest public hospital in the country.
I had expected to catch the Covid-19 contagion much earlier. The eruption of mass hunger into which homeless people and urban poor people, in general, had been thrust overnight compelled me to descent to the streets of the city I live in, Delhi, from the second day of the first lockdown.
I knew, from two decades of work among them that there are two tenuously fragile strings that alone lift homeless people from hunger every day of their rough lives. One of these is the lowest-end, most casual, most exploitatively reimbursed, most uncertain and most unsafe employment that is unreliably available to them to help fill their bellies each day.
Food solidarity
If this employment at dirt wages does not come their way, their other social security is from religious food charities, in gurudwaras, dargahs, temples and in some cities (not in Delhi, we found) in churches. The punishing lockdown announced in March 2020 with four hours’ notice by Prime Minister Narendra Modi peremptorily and mercilessly snapped both these feeble but still life-saving strings overnight. As I have described at length in my book Locking Down the Poor this unleashed a flood of mass hunger in cities on a scale that I have not witnessed in my lifetime.
There was, therefore, no question: I had to be on the streets, trying to organise food (with dignity and care) to homeless persons and the survivors of the Delhi riots of a few months earlier. So there I was, on the streets, from the second day of the lockdown, helping in a small way in distributing cooked food and ration kits to homeless people who had become like sisters and brothers over the decades of our work together. I caution my reader – this was not a particularly heroic decision: it was an imperative of the heart. I could not do anything else. It was not food charity, it was food solidarity.
And I was not alone in this resolve: many of my young colleagues made the same choice and spent the next months of their lives immersed tirelessly and feverishly in organising food for those thrown by their governments and their employers so thoughtlessly and casually, indeed cruelly into mass hunger.
They were answering distress calls, managing donations that poured in from every corner, making food purchases, assembling thousands of ration kits, organising buses for migrants to return to their homes in safety, protecting homeless people in the shelters we manage, petitioning the courts and reporting the stories.
My young colleagues were aware of the risks they were taking, but for them too there was no choice. Embedded in my heart are the words of one young colleague when I asked him – are you not frightened? He replied, “Yes, I am frightened. But much greater than my fear is their hunger. So I have to be on the streets”. Each made arrangements to try to protect their families. Some moved into the office, some into the homeless shelters for the entire duration of the lockdown.
I moved into a separate bedroom of my house and stopped seeing in person my ageing father and mother-in-law. My colleagues who worked with lynching survivors and homeless people around the country pitched in heroically – in Jharkhand, Bihar, Assam, coastal Karnataka, Mewat, Western Uttar Pradesh, Madhya Pradesh, Bengal and the cities of Jaipur, Patna and Hyderabad. Together my friends distributed ten million meals.
Contracting Covid-19
I had quietly bargained with myself to catch the contagion early. But the virus did not come to me. My epidemiologist friends later explained that we were ironically interacting with the safest populations in these early months because the virus was carried into India mainly by the rich and middle classes who could afford international air tickets.
The destitute homeless were safe because they had no occasion to interact or mingle with the middle classes. It was only after the lockdown ceased, and the classes began to mix again, that the virus spread to the bodies of the poorest denizens of the city.
Dismayed by how total was the denial of testing, quarantine, isolation and treatment of the homeless and the labouring poor, we decided to open our own Covid centre for the homeless, in our homeless shelter on the banks of the Yamuna river in Delhi, and then on the streets in homeless habitations elsewhere. It is in the course of this work that, during the second wave, we lost one of the most selfless and devoted doctors that I have had the privilege of knowing, Dr Pradeep Bijalwan, to who I paid tearful tribute in an article on The India Forum.
It is in this clinic, weeks after we first opened it with Medical Sans Frontiers in our homeless shelter that I caught the Covid-19 virus, along with many of my colleagues.
This was sometime during the month of October 2020. Everyone in our household also tested positive – my wife, my mother-in-law and our domestic helpers. As a precaution, we employed a live-in home nurse for my mother-in-law. Our symptoms were not worrying.
But I have a congenital heart valve defect, and there was a worry that this might render me more vulnerable to complications. I was anxious not to become a problem to my family if my health declined, so I accepted the advice of doctor friends to check into a hospital.
I need to explain why I chose the general ward of a public hospital. I do have health insurance – in fact, we bought health (and life) insurance paid from the office for all staff, as they were putting their health and lives at risk.
I could have easily checked into a private hospital – beds were available at that time. And it is not as though I have in the past not used the services of private hospitals: I had on two recent occasions checked into one of the less ostentatious of private hospitals for some minor surgeries. But this moment was different.
I was reading, alternating between anguish and wrath, of Union ministers, chief ministers and health ministers of states, all almost without exception admitting themselves after testing positive for Covid-19 into the most expensive private hospitals of their cities. The rage was because they clearly had no faith in the public services they were responsible for building and managing. The anguish was that they had no qualms in abandoning the poor who could not afford to enter the gates of a private hospital to these services.
Public hospital
I, therefore, decided that when Covid-19 got to me, I would only go to a public hospital. But then the question arose: where within a public hospital? I had friends in the Union health ministry from my years in the Indian Administrative Service, including my trainees. A phone call would have been enough at that time to get a single private room in the All India Institute of Medical Sciences or Safdarjang Hospital. However, that seemed to be a cop-out, because I would use my privilege to simply escape the fate of lakhs of my countrywomen and men in this time of the greatest health emergency of the century. So I made my decision: I would check myself into the general Covid-19 ward of a public hospital.
My daughter, who had recovered from Covid-19 a month earlier drove me to the hospital. The formalities took some time. I was then asked to walk into an ambulance with some other patients. My daughter was not allowed to travel with me beyond this point. We hugged, and from the ambulance, I waved. From here on, I was on my own.
Another patient and I were driven through the traffic for some minutes to the designated Covid centre of the hospital, lodged in an entirely separate building on the opposite side of the highway. We were shown to the lift. I had carried with me a book to read, a toothbrush and paste, and my phone. The lift took us to the top floor. I walked into a general ward with around 50 beds. Most of them were occupied.
I was uncertain about what I was expected to do. I looked around for a nurse. She said, find an empty bed and lie down there. I was confused: “will you not give me some hospital clothes to wear?” I asked her. “We do not have any,” she replied brusquely. “Find a bed, and lie down in the clothes that you are wearing.”
A little bemused, I did as I was told. I then began to size up my situation. What hit me first was the high-decibel piercing noise levels that incessantly pervaded the ward 24×7, never relenting, which became one dominant memory of the days and nights that followed. Even past midnight, the noise would not cease.
Hopeless grief
One part of the clamour was of the voices of the nurses and ward boys who seemed always to shout at each other, at any time of the day or night. The second was the screams of the monitors. The monitor attached to my bed was also gutsy in its wailing. The only catch was that it was not connected to me. This meant that no one was checking my vitals.
At home, at least we had an oximeter that helped monitor our oxygen levels. Here in the hospital, it was apparent that even if my oxygen levels plummeted, no one would be the wiser. And then, there was the piteous wailing of patients. At any point of time, I counted at least half a dozen patients who were convinced that they were about to die. But no family was allowed at their bedside, and none of the ward staff tried to counsel or comfort them in any way.
Between the bedlam and the hopeless grief of the wails, I tried to sleep, but this became difficult even late into the night. I thought I would chat with the ward boys, whose faces of course I could not see. They all looked like spacemen, but it was apparent that they were young men.
As one spoke to me, I learnt to my shock that most of them were untrained. “The regular ward boys of the hospital refused to work in the Covid ward”, he said. “Before the lockdown, I was a room boy in a hotel. The hotel retrenched us. My family was starving. The hospital offered work to anyone willing to work in a Covid ward. I was terrified. But when you see hunger in your home, tell me what choice do you have?”
No doctor came once to see us even once in the days that I spent in the ward. And I was trapped: I now did not have the option to leave.
Some days passed, maybe two, I cannot remember clearly. I begged the staff: you do not have clothes for me, but I am feeling sweaty and dirty. Can I at least have a bath? After some confabulations and some more pleading, they agreed. They led me to a bathroom. This much I remember. After this, I lost my memory entirely for around ten days.
I picked up the details of some of what followed from my wife and daughter later. My wife worried because I stopped answering my phone. She called by phone the nurses: they said I was okay, but maybe I had slipped into a depression.
My wife was very sceptical: even if I had just slipped into depression, she said, which was unlikely, I would not just suddenly just switch off, stop speaking altogether. I had after all spoken to her at length just a couple of hours earlier. But the nurses were insistent: I was okay, my Covid was under control, I may be in depression but there was nothing to worry about.
After another day, my wife put her foot down. She decided to insist on my discharge. It was a decision that probably saved my life. The hospital staff said it was unorthodox to let someone go who is still testing positive for Covid, but they were willing to let me go. My discharge slip reported nothing untoward.
Loss of memory
I am told that back at home, I could not recognise my wife and daughter. When asked, I apparently said that they were nurses. I would not speak or eat, complaining all the time of a headache and nausea. A couple of more days passed when blue marks appeared on my forehead. My family and friends conferred and decided that this was possibly something serious. They took me to another hospital, where they conducted many tests. They then grimly spoke to my wife and daughter. It is not Covid.
They did not know how, but I had developed very serious brain injuries, and there was heavy bleeding in the cranium. The public hospital earlier had recommended that I take Aspirin, which had further stimulated bleeding in my brain. All of this was imminently life-threatening. I would probably need immediate surgery if my life was to be saved. But that hospital did not have the expertise for this. I needed to be taken to yet another hospital.
Family and friends zeroed in on a hospital in Gurugram that was covered with my Central Government Health Scheme card (as I am a retired civil servant). The young neurologist took me in, and after another battery of tests, said he would like to try a few days with medicines, not surgery. I went into another Covid-19 intensive care unit, even larger than the Covid ward in the public hospital.
It took a few more days for my memory to, bit by bit, return. I recall the first vivid hallucinations. I imagined that I was cured of Covid and that people who loved me were happy and wanted me with them.
In my hallucinations, I chose to first visit the people who had been released from the detention centres in Assam after our intervention in the Supreme Court. I still can recall vividly the faces of the people, the children prancing around, and my conversations with them, as if all of this was real. Slowly a part of my mind recognised that I was still in a Covid ward. I was not even permitted to go to the bathroom. How could I have travelled all the way to Assam? I struggled to take a hold of myself, and from then my memory was slowly restored.
More tragedy
More tragedy was in store after I returned home. My father, nearly 95 years old, was intensely, inextricably tied to me. Every day, wherever I was, I must speak to him. After Covid, he had got used to meeting me on Skype. For many years, our mutual routine had been that a day would not pass without my speaking to him. And now, ten days had passed and I had not talked to him. He was convinced that some great harm had fallen on me. In his worry, he got a stroke, and in hours passed away. Heartbroken with the news, I pulled myself out of bed and organised his funeral, difficult in Covid times.
In the coming months, friends insisted that I meet a succession of leading neurologists. They all looked at my scans and said that how my brain was so severely injured was a mystery, more so because the hospital insisted that nothing at all had happened to me, and I had no external injuries. The doctors also all agreed that my survival, and eventual healing without changes in my personality, were nothing less than a miracle. A little longer in the public hospital, and the bleeding in my brain would surely have led to my death.
The story did not end there. My health improved a little, and I insisted on returning to the people I worked with. The crisis in their lives was too acute for me to stay away. I was back on the streets, in the shelters, and travelled to Assam, Mewat, Western Uttar Pradesh, Hyderabad and Bangalore. But I took sick again, this time with raging undiagnosed fevers.
I was in hospital once more, and in some time my entire body broke out in red rashes. The doctors diagnosed one of my fevers to be adult measles. Again after my discharge, I returned once more to my work and travels.
One more time, I suddenly started losing weight with alarming rapidity – 8 kg in two weeks. I could also barely breathe or swallow. Again hospital, another battery of tests to rule out cancer and tuberculosis. The diagnosis this time was that a fungus had almost completely colonised my lungs, probably from steroids when I was being treated for my brain injury.
Strong medicines and some hill air in our cottage near Bhimtaal, with my family including my three-year-old grandson, again restored me slowly back to health. At the time I write this, I realise that my body is still ravaged, I am still to regain the fitness I had taken for granted all my adult life.
Through all of this, I am also battling wild charges against me by the government, including insurrection, hate-mongering and high financial crime. I remained determined to continue to speak out against the savaging of the Constitution and of freedoms, justice and fraternity. My body will take time to be restored, I realise that. But I am determined that I will not allow my voice, my spirit, my solidarity and my love – for whatever these are worth – to be vanquished by the virus, and far more dangerously by an uncaring, malign state.
As I said, I have struggled to write this dire eye-witness account for over a year. Its troubling reminders continue to haunt my memory and my conscience, of what the public good of healthcare had been reduced to in India, of the hell into which people who could not afford the extortions of for-private healthcare had been thrown into. And of the wages of electing a state led by people who are singularly, pathologically bereft of compassion. I still felt that, however difficult, I must create this personal record for one reason, for the hope that we will not allow this to ever happen to our people again.
https://twitter.com/scroll_in/status/1474065500149731369