সুপারিশকৃত লিন্ক: ডিসেম্বর ২০১৮

মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিন্ক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে।
ধন্যবাদ।

আজকের লিন্ক

এখানে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই সুপারিশ করুন এখানে। ধন্যবাদ।

২৭ comments

  1. মাসুদ করিম - ১ ডিসেম্বর ২০১৮ (১২:৩১ অপরাহ্ণ)

    বীরপ্রতীক তারামন বিবির চিরবিদায়

    বিজয় মাসের প্রথম দিনই চিরবিদায় নিলেন একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবি।

    শনিবার প্রথম প্রহরে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয় বলে তার ছেলে আবু তাহের জানান।

    বীর প্রতীক তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট আর ডায়েবেটিসে ভুগছিলেন। গত মাসেও তাকে ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।

    আবু তাহের জানান, শুক্রবার রাতে তার মায়ের অবস্থা খারাপের দিকে যায়। রাত ১টা ২৭মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এই মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।

    কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, শনিবার দুপুরে রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে বীরপ্রতীক তারামন বিবিকে।

    তার আগে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

    কুড়িগ্রামের শংকর মাধবপুরে ১১ নম্বর সেক্টরে কমান্ডার আবু তাহেরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তারামন বিবি। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকিস্তানিদের খবর সংগ্রহের পাশাপাশি অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছেন তিনি।

    মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা কিশোরী তারামন বিবিকে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন রান্নার কাজে সহযোগিতার জন্য। পরে সেখানে তিনি অস্ত্র চালনা শেখেন।

    একদিন দুপুরে খাওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনী একটি গানবোট নিয়ে সেখানে হানা দেয়। তারামন বিবিও সেদিন সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন এবং শত্রুদের পরাস্ত করেন। এরপর বেশ কয়েকটি যুদ্ধে পুরুষ সহযোদ্ধাদের পাশাপাশি অস্ত্র হাতে লড়াই করেন এই বীর নারী।

    মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে তারামনকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

    ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক প্রথম তাকে খুঁজে বের করেন। নারী সংগঠনগুলো তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ওই বছর ১৯ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে তারামন বিবির হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।

    তারামন বিবির স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।

  2. মাসুদ করিম - ১ ডিসেম্বর ২০১৮ (৩:২৫ অপরাহ্ণ)

    হোটেল কক্ষ থেকে চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনের মৃতদেহ উদ্ধার

    জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী চিত্রগ্রাহক-আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনের মৃত দেহ পাওয়া গেছে রাজধানীর একটি হোটেলে। আজ (১ ডিসেম্বের) সকাল সাড়ে ১০টায় পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হেভেনের একটি কক্ষ থেকে পুলিশ মরদেহটিেউদ্ধার করে।

    ফ্রান্স প্রবাসী এই চিত্রগ্রাহক পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। একটি ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে তিনি দেশে ফেরেন সম্প্রতি।
    ঘটনাস্থলে পুলিশের উর্ধ্বতনরা উপস্থিত আছেন। শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশের এএসআই তপন ঘটনাস্থল থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালে হোটেলটির ব্যবস্থাপক ফোন দিয়ে জানায়, আনোয়ার হোসেনের কক্ষটি ভেতর থেকে বন্ধ। ফোন বা ডাকাডাকি করেও তার কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমরা এসে দরজা ভেঙ্গে মৃতদেহটি পাই। সুরহতাল করার পর তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’
    হোটেল ওলিও ড্রিম হেভেন থেকে জানা যায়, গত ২৮ নভেম্বর এ হোটেলের ৮০৯ নম্বর কক্ষে তিনি ওঠেন। ফিনিক্স ফটোগ্রাফি সোসাইটি নামের একটি আলোকচিত্রী প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে কাজ করছিলেন আনোয়ার হোসেন। সপরিবারের ফ্রান্সে থাকলেও এই প্রতিযোগিতার জন্য তিনি দেশে এসেছিলেন।
    তার দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার আয়োজকরা। তারাই প্রতিদিন তাকে নিয়ে যেতেন এবং পৌঁছে দিতেন।
    প্রতিযোগিতাটির সঙ্গে যুক্ত আসাদুজ্জামান সবুজ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আয়োজনের ছবি নির্বাচনের জন্য কাজ করছিলেন আনোয়ার হোসেন। গত কয়েকদিনের মতো আজ রবিবার সকালে সাড়ে ৭টার দিকে তার (আনোয়ার) সঙ্গে দেখা করে ছবি বাছাইয়ের কাজ করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আনোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সেটা রিসিভ হচ্ছিল না। এরপর প্রতিযোগিতার দুজন ব্যক্তি হোটেলে এসে ফোন দিয়ে ও দরজায় নাড়া দিয়েও কোনও সাড়াশব্দ পাননি। এরপর পুলিশকে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে দরজা ভাঙলে ভেতরে আনোয়ার হোসেনের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
    ছোটবেলায় আঁকাআঁকির মাধ্যমেই রঙের দুনিয়ার সাথে পরিচয় ঘটে এই বরেণ্য আলোকচিত্রীর। ভর্তি হয়েছিলেন বুয়েটের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে, কিন্তু স্থপতি হওয়ার পাঠ না চুকিয়েই সিনেমাটোগ্রাফি পড়তে চলে যান ভারতের পুনেতে। ক্যামেরা হাতে কাজ করেছেন ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ এর মতো বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রে। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা।
    চিত্রগ্রাহক পরিচয়ের চেয়েও তিনি খ্যাতিমান ছিলেন আলোকচিত্রী হিসেবে। দেশের বাইরেও তার সে খ্যাতি আছে। তার হাত ধরেই এদেশের তৈরি হয়েছেন অসংখ্য আলোকচিত্রী। আনোয়ার হোসেনের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলো হলো- সূর্যদীঘল বাড়ী (১৯৭৯), এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০), পুরস্কার (১৯৮৩), অন্য জীবন (১৯৯৫), লালসালু (২০০১) প্রভৃতি।

    • মাসুদ করিম - ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ (১১:০৫ অপরাহ্ণ)

      আনোয়ার হোসেনের শিল্পবৈভব

      বর্ষাকাল। বিকেল। ভেজা চারদিক। সেদিনও বৃষ্টি হচ্ছে মৃদু মন্থর। একতলার বারান্দা দিয়ে তিনি তাকিয়ে আছেন পাশে ছোট্ট ডোবার দিকে। ডোবার চারপাশে কলাগাছের সারি। তীক্ষষ্ট দৃষ্টিতে তিনি দেখছেন গভীর মনোযোগে। হঠাৎ মুখে স্মিত হাসি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘একরত্তি ব্যাঙটা লাফিয়ে পানিতে পড়ার দৃশ্যটা দেখো, ঠিক লাফ দেওয়ার মুহূর্তে ওর চোখে যেন খুশি খেলে যায়!’

      বলেছিলেন সদ্যপ্রয়াত বিশ্ববরেণ্য আলোকচিত্রশিল্পী আনোয়ার হোসেন। ডোবার পাড়ে বসে থাকা ‘একরত্তি ব্যাঙ’ ডোবার জলে লাফিয়ে পড়ার মুহূর্তে ব্যাঙের ছানার চোখে খুশি আমি দেখিনি। হয়তো আমার দেখার কথাও নয়। আমি বরং তখন দেখছিলাম আনোয়ার হোসেনকে। তাঁর মনোযোগ, তাঁর দরদ, তাঁর মুগ্ধ চোখ-মুখ!

      এই বিকেলের ঘটনাটি যখন ঘটছে তখন আমরা শরীয়তপুরের একটি গ্রামে। আনোয়ার ভাইয়ের ওপর আমার প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণযাত্রায়। গত বছর তিনেক ধরে আনোয়ার ভাই ফ্রান্স থেকে এসে থাকতেন শরীয়তপুরের পালং গ্রামে। সেখানে আনোয়ার ভাই থাকেন তাঁর ‘কলাপাতার বন্ধুরা’ সিরিজের ছবি তোলার আশায়। ‘কলাপাতার বন্ধুরা’ সিরিজ শুরু হয়েছে ৫০ বছর আগে। সেই সাদাকালো যুগে। প্রতি দশ বছর পরপর আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের কোনো গ্রামে গিয়ে কলাপাতার ছবি তোলেন। জীবনের শেষ সময়ে তিনি বেছে নিয়েছিলেন শরীয়তপুরকে।

      গত ১ ডিসেম্বর ঢাকার পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলে যখন তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তখন আনোয়ার হোসেন জীবনের ৭০ বছর এক মাস বয়স পাড়ি দিয়েছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি স্থায়ী হয়েছিলেন শিল্পের তীর্থভূমি প্যারিসে। ‘৯৫ সালের পর থেকে চেষ্টা করতেন প্রতি বছর কমপক্ষে একটা মাস দেশে এসে থাকার। শিল্পীর জীবনের অনেক সংগ্রামের মতো নিজ মাতৃভূমিতে আসাও আনোয়ার হোসেনের জন্য সংগ্রামই ছিল। ডিসেম্বরের ১ তারিখ সেই সংগ্রামের সমাপ্তি হয়েছে। ডিসেম্বরের ৩ তারিখ তিনি তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিতে রোপিত হয়েছেন।

      ক্লিক ২

      বাংলাদেশের কিংবদন্তি আলোকচিত্রশিল্পী তিনি। সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফার তিনি। বাংলাদেশের আলোকচিত্রশিল্প আধুনিকতার যুগে প্রবেশ করেছে আনোয়ার হোসেনের হাত ধরে। বাংলাদেশের প্রায় নাবালক আলোকচিত্রশিল্পকে তিনি একটানে শুধু সাবালকত্ব দান করেননি, করে তুলেছেন ভুবনের অপরাপর শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রশিল্পের সমগোত্রীয়। বাংলাদেশের আধুনিক আলোকচিত্রশিল্পের জনক আনোয়ার হোসেন সবচেয়ে অবহেলিত হয়েছেন নিজ দেশের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নীতিনির্ধারকদের অন্তরশূন্যতায়। এ এক গভীর মনস্তাপ।

      ক্লিক ৩

      গত ১৪ বা ১৫ বছরের জমানায় আনোয়ার হোসেনকে কতটুকুই বা জানি। তিনি তো ছিলেন স্পষ্টতায়, সরলতায় বর্ণাঢ্য এক আলোকশিল্পী। এমন প্রাণবান ‘তরুণ’ বয়সে তরুণদের মধ্যে দুর্লভ। আর বয়সে প্রবীণদের মাঝে আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, মূর্তিমান ব্যতিক্রম। আনোয়ার হোসেনের সদ্য তরুণের মতো ছুটন্ত সেই সৃষ্টিশীল গতি সম্ভবত তাঁর জীবনের ভাঁড়ারগুলোকে শূন্য করে দেওয়ার অফুরান প্রয়াস। কাশফুলের মতো শুভ্র দাড়ি-গোঁফ-চুলের এই তরুণ তাঁর সৃষ্টিশীলতার মতোই প্রাণবান ছিলেন সর্বক্ষণ। কেউ তাঁকে কখনও দেখেনি হতাশাগ্রস্ত হতোদ্যম এক প্রবীণ বৃদ্ধের ন্যুব্জতায়।

      ক্লিক ৪

      আনোয়ার হোসেন মোট পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এটা একটি তথ্য। এই তথ্য গড়পড়তা মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় হয়তো। কিন্তু এই তথ্য আনোয়ার হোসেনের জন্য কোনো বাড়তি কিছু ছিল না। তিনি সৃষ্টিশীলতার পথে এসব অর্জনকে পেছনে ফেলে কেবল এগিয়ে গেছেন আরও সৃষ্টির পথে। সৃষ্টিশীলতায় অতৃপ্তি তাঁর চালিকাশক্তির মতো তাঁকে ছুটিয়েছে জীবনভর। হয়তো প্রত্যেক মহান শিল্পীর জীবনই এই গল্পের বিস্তৃত বিবরণমাত্র। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র স্পষ্টতই দুটি পৃথক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। একটি হলো আনোয়ার হোসেনের আগের চলচ্চিত্র আর অন্যটি আনোয়ার হোসেনের পরের চলচ্চিত্র। আনোয়ার হোসেন যে চলচ্চিত্র সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করলেন তা হলো শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহ্‌উদ্দিন শাকের নির্মিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’। ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’র সিনেমাটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর সূর্য দীঘলে কতটা তা নিরূপণ করতে হলে আপনাদের দেখতে হবে আনোয়ার হোসেনের ক্যামেরায় চিত্রায়িত তাঁর অপর চলচ্চিত্রগুলোকে। ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘দহন’, ‘পুরস্কার’, ‘হুলিয়া’, ‘চাকা’, ‘চিত্রা নদীর পারে’, ‘অন্য জীবন’, ‘লালন’, ‘লালসালু’, ‘শ্যামল ছায়া’।

      এই চলচ্চিত্রগুলোর নির্মাতা একই ব্যক্তি নন। কিন্তু সিনেমাটোগ্রাফার একজন। আনোয়ার হোসেন। এই চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে সৃষ্টিশীল একটি উপাদান প্রবলভাবে উপস্থিত। আর তা হলো আনোয়ার হোসেনের দেখবার ও দেখাবার গভীর অন্তরদৃষ্টি। যদিও চলচ্চিত্র ভীষণভাবে চলচ্চিত্রকারের একান্ত ইশতেহার। সেই ‘একান্ত ইশতেহারে’ যখন নির্মাতা ছাড়াও আর কারও সৃষ্টির নিজস্ব স্বাক্ষর চলচ্চিত্র ধারণ করে, তখন প্রকারান্তরে চলচ্চিত্র বিপদসীমায় উপস্থিত হয়। হতে পারে তা নির্মাতা-সিনেমাটোগ্রাফার দ্বন্দ্বে ‘শিব গড়তে বাঁদর’ গড়া অথবা হতে পারে নির্মাতা-সিনেমাটোগ্রাফার যুগলবন্দিতে অপূর্ব কোনো মহৎ সৃষ্টি; যা কালোৎকীর্ণ হয়ে সমগ্র মানুষের অন্তরের সুর বাজিয়ে যাবে অনন্তকাল।

      বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আনোয়ার হোসেনের অতৃপ্তি ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, তিনি তাঁর সক্ষমতার সামান্যও দেখাতে পারেননি। তিনি মনে করতেন এবং বলতেন বাংলাদেশে তিনি তাঁর ‘শ্রেষ্ঠ’ কাজটি করার সুযোগই পাননি। বাংলাদেশে তাঁর ক্যামেরায় চিত্রায়িত প্রাতঃস্মরণীয় চলচ্চিত্রগুলোকে তিনি বলতেন ‘মন্দের ভালো’। বলতেন, ‘এগুলো তাঁর ভালো কাজের সংগ্রাম।’

      ক্লিক ৫

      আনোয়ার হোসেন হলেন আমাদের ‘আনোয়ার ভাই’। অনেক তর্ক হতো, সেই তর্কে প্রশ্ন থাকত, থাকত জানার ইচ্ছে। আর আনোয়ার ভাইয়ের যদি ‘মুড’ ভালো থাকত তবে বলতেন অবিরাম। আবার কখনও কখনও যখন ‘মুড’ ভালো থাকত না তখন একদম চুপচাপ। তখন কথা বলতেন না। একা থাকতে চাইতেন।

      আনোয়ার ভাইয়ের এই ‘মুড’ খুব অদ্ভুত এক বিষণ্ণতার দৃষ্টি তৈরি করত। কেমন যেন মন খারাপ করে চেয়ে থাকতেন। চেয়ে থাকতেন, তবুও মনে হতো কিছু দেখছেন না।

      তাঁর এই বিষণ্ণতার রূপ খুব বিরল ছিল। অধিকাংশ মানুষ এই রূপ দেখেননি। কারণ বিষণ্ণতা আনোয়ার ভাইয়ের ভাষায় আনোয়ার ভাইকে ‘স্ট্রাইক’ করত। আর অন্য সময়ে শিশু-কিশোরদের সরল উচ্ছলতায় তিনি ভেসে বেড়াতেন, হাসতেন প্রাণখোলা উজ্জ্বলতায়।

      ক্লিক ৬

      আনোয়ার ভাই বাংলাদেশের আলোকচিত্রকে কতটা দিয়েছেন- যতটা দিয়েছেন চিত্রকলায় এসএম সুলতান। আমাদের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন যেমন করে চিত্রকলাকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারায় রূপ দিয়েছেন, ঠিক তেমনটা আনোয়ার ভাই করেননি। হয়তো আলোকচিত্রে তা মনজুর আলম বেগ করেছেন। এসএম সুলতান যেমন করে আমাদের চিত্রকলাকে ‘আমাদের’ স্বাক্ষরে-দর্শনে পরিপূর্ণ করেছেন, ঠিক তেমনটি আনোয়ার হোসেন করেছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রে। বাংলাদেশের আজকে আলোকচিত্রশিল্পী হওয়ার যে প্রণোদনা, তা শিল্পীত রূপে প্রথম জনমানুষে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আনোয়ার হোসেন। শিল্পী সুলতানের মতোই আনোয়ার হোসেন এক প্রবল বাউলাঙ্গের জীবনযাপন করেছেন। ছুটে বেড়িয়েছেন সারাটা জীবন। বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্পদশালী শিল্পী হিসেবে ফ্রান্সে বসবাস করতে পারতেন যদি হতেন একটু স্থির আর বৈষয়িক। কিন্তু বাউলদের মতো কোনো এক গভীর টানে তিনি মাটির আর মানুষের খুব কাছাকাছি থেকে তিনি ধরতে চেয়েছেন মানুষের যাপনের অলৌকিক মুহূর্তগুলোকে। যে একটি মুহূর্তের একটি দৃশ্য হয়ে ওঠে সমগ্রের সম্পূর্ণরূপ।

      ক্লিক ৭

      আনোয়ার হোসেন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়, আমার ধারণকৃত সাক্ষাৎকারের জানি, তিনি ২৬ মার্চ সকালে ধারণ করেছেন ঢাকার ২৫ মার্চের গণহত্যার আলোকচিত্র। ১৯৭১ সালের সেই ভয়াল কারফিউয়ের মাঝে ক্যামেরা হাতে আলোকচিত্র ধরে রাখা বন্দুক হাতে যুদ্ধের চেয়ে কতটা কম?

      ২৫ মার্চের পর থেকে যুদ্ধের পরবর্তী নয় মাস তিনি তুলে গেছেন পুরান ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, দোহার, নবাবগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর যুদ্ধদিনের চিত্র। সেই সব আজ বাংলাদেশের জন্মক্ষণের দলিল। অথচ মৃত্যুর পর এই মহান শিল্পীকে জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য খুঁজতে হয়েছে তাঁর মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধসনদ আছে কি-না?

      ক্লিক ৮

      আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের এমন একজন আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রশিল্পী, যাঁর পরিচয়ের জন্য আর কোনো অভিধার প্রয়োজন ছিল না। অথচ আনোয়ার হোসেন কেবলমাত্র আলোকচিত্রশিল্পী নন। তিনি সিনেমাটোগ্রাফার, তিনি স্থপতি, তিনি লেখক এবং তিনি শিক্ষকও।

      আনোয়ার হোসেন অসাধারণ শিক্ষক ছিলেন। তিনি শিক্ষাকে শিক্ষা প্রদানের দার্শনিকতাসহ বুঝতেন বলে আমি বিশ্বাস করি। আনোয়ার হোসেন আমারও শিক্ষক ছিলেন। চলচ্চিত্রের নন্দনতত্ত্ব তিনি আমাকে যেমন করে অনুভব করাতে পেরেছিলেন, তা আমার দৃষ্টিকে চিরকালের মতো উন্মোচন করিয়ে ছিল। অথচ আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে এই আলোকপ্রাপ্তির আগে এই ‘জ্ঞান’ প্রাপ্তির জন্য কত চেষ্টাই না করেছি!

      যা বুঝতে অনেক বই, অনেকের অনেক লেকচার কেবল আচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করেছে তা দূর করতে আনোয়ার হোসেনের লেগেছিল মাত্র কয়েক মুহূর্ত! বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিক্ষায় আনোয়ার হোসেনের অবদান অশেষ। এ নিয়ে আমাদের আক্ষেপও পাহাড়সম। আনোয়ার হোসেনের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আমরা আমাদের বিকাশে খুব সামান্য কাজে লাগাতে পেরেছি। আনোয়ার হোসেন দিতে পারতেন, কারণ তিনি জন্মস্বভাবা দাতা। দিতে দান করার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর দান গ্রহণ করার মতো আমাদের মন তৈরি ছিল না।

      আনোয়ার হোসেন গত ৩ ডিসেম্বর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত হয়েছেন। কেবল তাঁর দেহখানা সেই ছোট্ট কবরের মাটিতে রোপিত হয়েছে। আনোয়ার হোসেনের সমগ্র জীবনকর্ম ছড়িয়ে আছে সমগ্র বাংলায়, সমগ্র দুনিয়ায়। যে রাষ্ট্র তাঁর জীবনকালে তাঁকে সম্মান করতে ব্যর্থ হলো, যে মানুষরা তাঁকে সম্মান দিতে বাধা হলো, তাঁরা কেউই ততদিন বেঁচে থাকবেন না, যতকাল আনোয়ার হোসেন এই দুনিয়ায় বেঁচে রইবেন। আনোয়ার হোসেন হলেন সেই সব অমর মানুষের মতো আলোকশিখা, যাঁরা প্রজ্ব্বলিত হন আরও গভীরভাবে যখন তাদের দেহ সমাহিত হয়।

      আনোয়ার ভাইয়ের পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশে আমার ভালোবাসা, আমার শ্রদ্ধা!

  3. মাসুদ করিম - ৮ ডিসেম্বর ২০১৮ (১০:০২ পূর্বাহ্ণ)

    চলে গেলেন গণসঙ্গীত শিল্পী অশোক সেনগুপ্ত

    গণসঙ্গীত শিল্পী অশোক সেনগুপ্ত ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

    পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার ভোরে পশ্চিমবঙ্গের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ”

    অশোক সেনগুপ্তর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তার স্ত্রী নৃত্যশিল্পী রত্মা সেনগুপ্তা, কন্যা নৃত্যশিল্পী তিলোত্তমা সেনগুপ্তা এবং জামাতা নাট্যজন অসীম দাশ।

    সুনীল ধর বলেন, “বৃহস্পতিবার ভোরে তার স্ত্রী ও জামাতা মরদেহ নিয়ে চট্টগ্রামের পথে রওনা হবেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য রাখা হবে। পরে বলুয়ার দিঘী মহাশশ্মানে শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।”

    গণসঙ্গীত শিল্পী অশোক সেনগুপ্ত ১৯৪৯ সালের ১১ ‍ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী জেলার খিতাপচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

    ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে তার হাতিয়ার ছিল গান। স্বাধীন দেশে গড়ে তোলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বঙ্গশ্রী’।

    পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’য় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন মাস কারাভোগ করেন।

    স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হলে অশোক সেনগুপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।

    অশোক সেনগুপ্ত বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম শ্রেণির তালিকাভুক্ত শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন প্রায় দুই দশক ধরে।

    তার রচিত গণসঙ্গীতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে চারশ। রচনা করেছেন গীতিআলেখ্য- বিক্ষুব্ধ বাংলা, দিন বদলের পালা ও সর্বনাশী রাঙ্গাবলী। সুরারোপ করেন সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘অভিযান’ নৃত্যনাট্যের।

    রাজাকারদের নিয়ে তার গান ‘তোরা যুদ্ধ অপরাধী/ তোরা মানবতাবিরোধী/ তোদের হবে না দেশে ঠাঁই/ তাই তো জেগেছে বিপ্লবী জনতা/ তোদের বিচার চাই’ সহ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘যেখানে পাখির গানে সকাল আসে/ রাঙ্গা সূর্য হাসে সবুজ ঘাসে’, ‘জেগে ওঠো বাংলা ৭১ এর চেতনায়’, ‘বাংলা মাগো সবুজ ঘাসের চাদর দিও জাতির পিতার গায়’।

  4. মাসুদ করিম - ৮ ডিসেম্বর ২০১৮ (৩:৪৭ অপরাহ্ণ)

    কোমা থেকে তরুণীকে জীবনে ফেরাল দরবারি কানাড়া

    রোজ একটু একটু করে সঙ্গীত ঢুকছিল তাঁর কানে। তিনি ছিলেন গভীর কোমায়। শুয়েছিলেন প্রায় গানের ও-পারে। একদিন, দু’দিন তিন দিন…। তাঁর শিরা-উপশিরা-ধমনিতে কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছিল দরবারি কানাড়া। কী আশ্চর্য! সুরের ছোঁয়ায় এক মাস পরে চোখ মেললেন নৈহাটির সঙ্গীতা দাস।

    চিকিৎসকেরা অবাক। যে রোগীকে তাঁরা প্রায় জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন, সুরের মূর্ছনায় তাঁর মধ্যেই যেন ফিরে আসছে নবজীবনের আভাস। আক্ষরিক অর্থেই অচেতন থেকে সংজ্ঞায় ফেরা। ক্ষীণ হতে বসেছিল প্রাণের স্পন্দন। এসএসকেএমের হিমশীতল আইটিইউ-এর ঘেরাটোপ থেকে সেই সঙ্গীতাই ফিরছেন জীবনের উষ্ণ আবর্তে।

    দিনটা ছিল শনিবার, ৬ নভেম্বর। চোখ উল্টে সেদিন সংজ্ঞাহীন পড়েন তরুণী। হাতে স্যালাইনের চ্যানেল, আঙুলে-নাকে-গলায় সর্বত্র লাগানো নল। মাথার গোড়ায় রাখা বেডসাইড মনিটরেরর নিরন্তর বিপ-বিপ শব্দ তাঁর কানে ঢোকে না। মস্তিষ্কে ঘোরালো সংক্রমণ আর রক্তক্ষরণের জেরে গভীর কোমা। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছেন না তেমন। হতাশ চিকিৎসকরাও।

    ঠিক ৩১ দিনের ফারাক। শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর। আইটিইউয়ের পাঁচ নম্বর বেডে আধশোয়া সঙ্গীতা। কোমা থেকে বেরিয়ে এখন চোখ মেলে দেখছেন চার দিক। সামান্য নাড়াতে পারছেন হাত-পা। ঘোরাতে পারছেন ঘাড়। খুলে দেওয়া হয়েছে ট্র্যাকিয়োস্টোমির টিউব, এমনকী রাইলস টিউবও। বাবার হাতে এ দিনই প্রথম খাবার খেলেন আর পাঁচ জনের মতো মুখ দিয়ে। তরল খাবার গিলতে গিয়ে চোখ ভিজছে তরুণীর। আনন্দধারা তাঁর বাবার চোখেও।

    চিকিৎসকরাও অবাক। বলছেন, এ কামাল দরবারি কানাড়ার। জীবনদায়ী ওষুধের সঙ্গেই চলেছে মিউজিক থেরাপি। আধ ঘণ্টা করে দিনে তিন বার সেই দাওয়াইয়েই গভীর কোমা থেকে ফিরে এসে ফের জীবনের দরবারে কড়া নাড়তে শুরু করেছেন সঙ্গীতা। এমনটা হবে ভাবেননি সঙ্গীতার বাবা শিবপ্রসাদ। তিনি বলছেন, ‘আমি নৈহাটি পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স চালাই। রোগী ঘাঁটা আমার অভ্যেস। আমি জানি, কোন অতল খাদ থেকে সঙ্গীতাকে তুলে এনেছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। ডাক্তারবাবুরা সত্যিই ভগবান!’

    মাত্র আড়াই সপ্তাহ আগেও মৃত্যু হাঁ করে বসে ছিল বছর একুশের তরুণীর মাথার গোড়ায়। ডেঙ্গির ছোবলে এমন জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখেননি চিকিৎসকরা। সংক্রমণ আর রক্তক্ষরণের ধাক্কায় মস্তিষ্কের এত কোষ মরে গিয়েছে যে থ্যালামাস আর সাড়া দিতে পারছিল না। সে সময়েই শুরু হয় মিউজিক থেরাপি।

    পণ্ডিত এন রাজনের বেহালায় বাজানো দরবারি কানাড়ায় ভর করে সাড় ফিরতে শুরু করে ধীরে ধীরে। এসএসকেএমের আইটিইউ ইনচার্জ রজত চৌধুরীর আশা, ‘এ বার মনে হচ্ছে দ্রুত সেরে উঠবেন সঙ্গীতা। মস্তিষ্ক চাঙ্গা করে, এমন গুচ্ছ খাবারের তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন ডায়েটিশিয়ান।’ গত দেড় দশক ধরে রোগীদের উপর মিউজিক থেরাপি প্রয়োগ করে সন্তুষ্ট অস্থিশল্য বিশেষজ্ঞ সুমন্ত ঠাকুরও বলছেন, ‘আমি নিশ্চিত, ওষুধের সঙ্গে সঙ্গীতের যুগলবন্দিতেই এমন অভাবনীয় সাফল্য।’

    অক্টোবরের ২৭ তারিখে ধুম জ্বর এসেছিল তরুণীর। ৩০ তারিখ ধরা পড়ে ডেঙ্গি। রজতবাবু বলেন, ‘এমআরআই আর সুষুম্নারস পরীক্ষা করে চমকে উঠি। দেখি, শুধু মেনিঙ্গো-এনসেফালাইটিসই নয়। ওঁর মস্তিষ্কের দু’ দিকেই রক্তক্ষরণ হয়েছে, মরে গিয়েছে বহু কোষ। এ রোগীকে ফেরাব কী করে, ভেবে কূল পাই না। কারণ, এর আগে পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে এমন জটিলতার নজির এ পর্যন্ত এ দেশে আর একটিই। ২০১২-তে সে রোগীকে বাঁচাতে পারেনি এইমসও।’

    তা হলে?

    রজত জানান, তখনই তাঁর বন্ধু এসএসকেএমেরই কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেশিয়ার শিক্ষক-চিকিৎসক সন্দীপ কর তাঁকে মিউজিক থেরাপির পরামর্শ দেন। তিনিই বেছে দেন, ঠিক কী শোনাতে হবে। সন্দীপের কথায়, ‘মস্তিষ্কে দরবারি কানাড়ার সুফল প্রমাণিত। যেহেতু সঙ্গীতার পছন্দ-অপছন্দ জানতে পারিনি, তাই ভরসা রেখেছিলাম দরবারি কানাড়াতেই। এত ভালো ফল মিলবে, সত্যি ভাবিনি।’

  5. মাসুদ করিম - ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ (৭:৪৩ অপরাহ্ণ)

    Mushirul Hasan, Eminent Historian, Dies; Tributes Pour On Twitter

    Mushirul Hasan had been a professor of history at Delhi’s Jamia Millia Islamia. He later became the vice chancellor of the central university.

    Eminent historian and academic Mushirul Hasan died today. He was 71. An alumnus of the prestigious Aligarh Muslim University, Mr Hasan had been a professor of history at Delhi’s Jamia Millia Islamia. He later became the vice chancellor of the central university.

    Mr Hasan has done extensive work on the Partition of India and on the history of Islam in South-Asia.

    In 2002, Mushirul Hasan was elected as the President of Indian History Congress. He also served as the Director-General of the National Archives of India.

    Mr Hasan was admitted to the hospital last night. He breathed his last at 4 am.”He met with a road accident about two years ago and was mostly bed-ridden after that. He was also undergoing dialysis for kidney problems,” former secretary to Jamia Vice chancellor, Zafar Nawaz Hashmi, said.

    Tributes poured on social media for the historian. His contemporary, Professor Irfan Habib described him as one of the most prolific historians of the country.

    “Extremely sad news. One of the most prolific historians of modern Indian history. Saw him decline gradually over the past few years after the terrible accident. RIP Mushir bhai,” he wrote on Twitter.

    Several politicians also took to Twitter to condole his death.

    “A Historian, A Teacher, A Vice-Chancellor, An Archivist: Mushir ul Hasan blended all fine qualities of our syncretic culture and scholarship. His work and his books continue to shape our consciousness. Condolences to Prof Zoya Hasan & others in his family,” CPIM leader Sitaram Yechury wrote.

    Eminent historian and academic Mushirul Hasan died today. He was 71. An alumnus of the prestigious Aligarh Muslim University, Mr Hasan had been a professor of history at Delhi’s Jamia Millia Islamia. He later became the vice chancellor of the central university.

    Mr Hasan has done extensive work on the Partition of India and on the history of Islam in South-Asia.

    In 2002, Mushirul Hasan was elected as the President of Indian History Congress. He also served as the Director-General of the National Archives of India.

    Mr Hasan was admitted to the hospital last night. He breathed his last at 4 am.”He met with a road accident about two years ago and was mostly bed-ridden after that. He was also undergoing dialysis for kidney problems,” former secretary to Jamia Vice chancellor, Zafar Nawaz Hashmi, said.

    Tributes poured on social media for the historian. His contemporary, Professor Irfan Habib described him as one of the most prolific historians of the country.

    “Extremely sad news. One of the most prolific historians of modern Indian history. Saw him decline gradually over the past few years after the terrible accident. RIP Mushir bhai,” he wrote on Twitter.

    Several politicians also took to Twitter to condole his death.

    “A Historian, A Teacher, A Vice-Chancellor, An Archivist: Mushir ul Hasan blended all fine qualities of our syncretic culture and scholarship. His work and his books continue to shape our consciousness. Condolences to Prof Zoya Hasan & others in his family,” CPIM leader Sitaram Yechury wrote.

    “He will be buried at the campus cemetery meant for vice chancellors,” a spokesperson of the university said.

    Remembering Mushirul Hasan: Historian, Patron, Patriot

    During his tenure as Jamia VC, several scholars from across the world, who visited Delhi, loved to have a stop at Jamia and often agreed to hold a talk only if Professor Hasan would chair it.

    Professor Mushirul Hasan, without doubt, is the most distinguished historian of Modern India. Given the vast breadth of his work, it will be appropriate to call him a historian of historians. His works on Modern India stood out compared to other historians because of his extensive access to Urdu sources. On Monday, after a prolonged illness, he died at a hospital in Delhi.

    Professor Hasan met with a road accident on his way to Mewat in November 2014, and was under care at his home. He studied at Aligarh Muslim University (AMU) and was a prominent student activist during his college years. He earned his doctorate at the University of Cambridge, UK. After teaching at Delhi University’s Ramjas College for some time, he joined the Department of History and Culture at Jamia Millia Islamia as one of its youngest professors and rose to become its Vice-Chancellor, a position he served from 2004 -2009.

    He also served in many prominent departments in several countries as a visiting scholar during his long and distinguished career as a historian. Towards the end of his tenure as the Vice-Chancellor, there were reports that he was being considered as a candidate for the post of India’s Vice President. Subsequently, he also served as the Director of National Archive, New Delhi. He was elected as the President of Indian History Congress in 2002. His father, Mohibbul Hasan, was also a historian at Jamia and the current Department of History is in the building named after his father. His brother was a journalist who died in an accident while covering a war. Professor Hasan dedicated one of his books to his brother.

    Subsequently, he joined Nehru Memorial as a fellow and during this time he wrote one of his most prominent books titled, Legacy of a Divided Nation: Indian Muslims Since Independence. His other works include India’s Partition: Process, Strategy and Mobilization; Nationalist Conscience: M A Ansari, The Congress and Raj; Islam in the Subcontinent: Muslims in a Plural Society; From Pluralism to Separatism : Qasbas in Colonial Awadh; A Moral Reckoning: Muslim Intellectuals in 19th Century Delhi; The Nehrus: The Personal Histories; Moderate or Militants: Images of Indian Muslims ; Faith and Freedom: Gandhi in History and many others.

    Hasan’s other works such as Wit and Wisdom: Pickings from Parsee Punch show how he applied innovative ways to look at Indian history. He also co-authored a book titled Partners in Freedom: Jamia Millia Islamia with Rakshanda Jalil. This sample should give one an evidence of a vast range of scholarship on Indian history he researched and wrote, and some of his works have a direct bearing on contemporary political developments. He often invited emerging scholars and mentored them by giving them space in his edited volumes. Unlike other Left-leaning historians, he created a platform for healthy intellectual debate and invited scholars from non- Left traditions as well. For instance, Pratap Mehta is a contributor to one of his volumes.

    As a Vice Chancellor of Jamia Millia Islamia, he transformed the University in a significant way by opening new centres of research and teaching. Perhaps, no other University in modern India has expanded as rapidly as Jamia did during Hasan’s tenure as the Vice Chancellor. He outsmarted the UGC by opening new centres because he realised a dramatic expansion cannot take place by following conventional UGC rules. He established India’s first teaching and research Centre on North- Eastern Studies and invited Sanjoy Hazarika to head it. He also set up separate centres on Indo- Arab Culture, West Asia etc. Likewise, he set up Nelson Mandela Centre and invited Radha Kumar to head it. What helped him perhaps is his close friendship with then HRD minister late Arjun Singh.

    One of Professor Hasan’s unfulfilled dreams was to set up a partition museum in the Jamia premises, for which he even held an inaugural event towards the end of his tenure. In addition, he set up an art gallery and named it after MF Hussain. He also named a building called Chomsky Building, named after noted American dissenting intellectual and also a café called Castro Café for students. He changed the DNA of Jamia and the University became a hub for scholars of various disciplines. During his tenure, several scholars from across the world, who visited Delhi, loved to have a stop at Jamia and often agreed to hold a talk only if Professor Hasan would chair it. I remember such a request was made to me by noted French scholar Christophe Jaffrelot.

    At a time when Ayodhya controversy is raging again, it is worth remembering that Hasan wrote a very influential essay on this question in a volume by Sarvepelli Gopal titled Anatomy of A Confrontation: Ayodhya and the Rise of Communal Politics in India. Similarly, it would be worth recalling his work titled ‘Will Secular India Survive?’ at a time when secularism is seen to be the most discredited and unwarranted ideology.

    Hasan was a warm, friendly person with a great sense of humour. While working hard to transform Jamia, he also published four books. During the Batla House encounter, he argued forcefully to not malign the University and took a stand to provide legal support to the accused students. With his passing away, almost an era is over.

  6. মাসুদ করিম - ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ (৬:১৩ অপরাহ্ণ)

    Scientists identify vast underground ecosystem containing billions of micro-organisms

    Global team of scientists find ecosystem below earth that is twice the size of world’s oceans

    The Earth is far more alive than previously thought, according to “deep life” studies that reveal a rich ecosystem beneath our feet that is almost twice the size of all the world’s oceans.

    Despite extreme heat, no light, minuscule nutrition and intense pressure, scientists estimate this subterranean biosphere is teeming with between 15bn and 23bn tonnes of micro-organisms, hundreds of times the combined weight of every human on the planet.

    Researchers at the Deep Carbon Observatory say the diversity of underworld species bears comparison to the Amazon or the Galápagos Islands, but unlike those places the environment is still largely pristine because people have yet to probe most of the subsurface.

    “It’s like finding a whole new reservoir of life on Earth,” said Karen Lloyd, an associate professor at the University of Tennessee in Knoxville. “We are discovering new types of life all the time. So much of life is within the Earth rather than on top of it.”

    The team combines 1,200 scientists from 52 countries in disciplines ranging from geology and microbiology to chemistry and physics. A year before the conclusion of their 10-year study, they will present an amalgamation of findings to date before the American Geophysical Union’s annual meeting opens this week.

    Samples were taken from boreholes more than 5km deep and undersea drilling sites to construct models of the ecosystem and estimate how much living carbon it might contain.

    The results suggest 70% of Earth’s bacteria and archaea exist in the subsurface, including barbed Altiarchaeales that live in sulphuric springs and Geogemma barossii, a single-celled organism found at 121C hydrothermal vents at the bottom of the sea.

    One organism found 2.5km below the surface has been buried for millions of years and may not rely at all on energy from the sun. Instead, the methanogen has found a way to create methane in this low energy environment, which it may not use to reproduce or divide, but to replace or repair broken parts.

    Lloyd said: “The strangest thing for me is that some organisms can exist for millennia. They are metabolically active but in stasis, with less energy than we thought possible of supporting life.”

    Rick Colwell, a microbial ecologist at Oregon State University, said the timescales of subterranean life were completely different. Some microorganisms have been alive for thousands of years, barely moving except with shifts in the tectonic plates, earthquakes or eruptions.

    “We humans orientate towards relatively rapid processes – diurnal cycles based on the sun, or lunar cycles based on the moon – but these organisms are part of slow, persistent cycles on geological timescales.”

    Underworld biospheres vary depending on geology and geography. Their combined size is estimated to be more than 2bn cubic kilometres, but this could be expanded further in the future.

    The researchers said their discoveries were made possible by two technical advances: drills that can penetrate far deeper below the Earth’s crust, and improvements in microscopes that allow life to be detected at increasingly minute levels.

    The scientists have been trying to find a lower limit beyond which life cannot exist, but the deeper they dig the more life they find. There is a temperature maximum – currently 122C – but the researchers believe this record will be broken if they keep exploring and developing more sophisticated instruments.

    Mysteries remain, including whether life colonises up from the depths or down from the surface, how the microbes interact with chemical processes, and what this might reveal about how life and the Earth co-evolved.

    The scientists say some findings enter the realm of philosophy and exobiology – the study of extraterrestrial life.

    Robert Hazen, a mineralogist at the Carnegie Institution for Science, said: “We must ask ourselves: if life on Earth can be this different from what experience has led us to expect, then what strangeness might await as we probe for life on other worlds?”

  7. মাসুদ করিম - ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ (৫:৩৪ অপরাহ্ণ)

    খ্যাতনামা আলোকচিত্রী মোর্তজা তৌফিকুল ইসলামের ইন্তেকাল

    আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা আলোকচিত্রী এবং আলোকচিত্র বিচারক, স্টুডিও মালিক কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোর্তজা তৌফিকুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র, ৪ কন্যাসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গতকাল বাদ যোহর চান্দঁগাও আবাসিক এলাকা বি ব্লক জামে মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত
    হয়। ২য় জানাজা শেষে বাদ মাগরিব তাঁকে নিজ বাড়ি ফটিকছড়ির দৌলতপুরে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, মোর্তজা তৌফিকুল ইসলাম ছিলেন চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি, চট্টগ্রাম রাইফেলস ক্লাবের প্রাক্তন যুগ্ম সম্পাদক, চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রাক্তন ইউটিসি ক্যাডেট, বাংলাদেশ এঙ ক্যাডেট এসোসিয়েশন-বেকা চট্টগ্রামের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এবং বিপনি বিতান ফটোরমার পরিচালক। এছাড়া লায়নিজমের সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ে, বৌভাত অনুষ্ঠানেরও আলোকচিত্র ধারণ করেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ২০১৩ সালে ‘আলোকচিত্র যশস্বী’ খেতাবে ভূষিত করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

  8. মাসুদ করিম - ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ (৫:৩৯ অপরাহ্ণ)

    কীর্তিমানের মৃত্যু নেই
    ববিতা

    পরিচালনা ও লেখালেখি অনেকেই ভালো করেন-কিন্তু গণমানুষের প্রাণের স্পন্দনের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন, এমন পরিচালক একটি দেশে খুব বেশি থাকে না। আমাদের দেশে আমজাদ হোসেন ঠিক তেমনই একজন পরিচালক- যিনি গণমানুষের প্রাণের স্পন্দনে মিশে গেছেন। সেই ষাটের দশকে এ দেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। অল্প সময়েই হয়ে উঠেছিলেন সবার শ্রদ্ধেয় ও প্রিয়। বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল বা সেরা মহীরুহদের একজন আমজাদ হোসেন- যিনি একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, সংলাপকার, গীতিকার, নাট্যকার, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তাকে ভালোবাসেন না, এমন একজন মানুষও কি এই দেশে পাওয়া যাবে? এটি এক বিরল ঘটনা। তার এই অর্জন সম্ভব হয়েছে কাজের প্রতি তার অসামান্য নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও ভালোবাসার কারণেই। তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে আরও নিখুঁতভাবে গড়ে তুলতে চাইতেন। একজন প্রকৃত ও গুণী শিল্পী হিসেবে এই নিষ্ঠা তার ছিল।

    আমজাদ ভাই নেই- বড় আঘাত পাওয়ার মতো খবর। অবিশ্বাস্য।

    আমি কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারছি না। খুবই কষ্ট হচ্ছে আমার। এতদিন ধরে কাজ করেছি, যা স্মৃতিকোষে আজও জমা হয়ে আছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই দিনগুলোর দৃশ্যপট; আর অশ্রুসিক্ত করছে আমাকে।

    কতদিনের পরিচয় আমাদের- তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। দিন, তারিখ, মাস, বছর কোনোটাই মনে নেই। তার অনেক চলচ্চিত্রে আমি অভিনয় করেছি। ভীষণ প্রিয় একজন মানুষ আমার। তার মতো আবেগী মানুষ আমার অভিনয় জীবনে খুব কমই দেখেছি। তার নির্দেশনায় প্রথম ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করি, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘অভিনয় করে দেখুন, আপনার ভালো লাগবে আশা করি।’ সত্যিই ‘নয়নমণি’ দর্শকের কাছে একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমাকে অন্যরকম এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। ‘নয়নমণি’র পর ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘বড় বাড়ির মেয়ে’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। যারা সত্যিকার অর্থে বড় মাপের নির্মাতা তাদের মধ্যে বিশেষ কিছু গুণ থাকে, যা সহজেই অন্য অনেকের চেয়ে তাকে আলাদা করে দেয়। আমজাদ ভাই ঠিক তেমনি একজন গুণী মানুষ, নির্মাতা। আমজাদ ভাইয়ের মতো গুণী মানুষ তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন।

    ষাট দশকের পাকিস্তানি ছবির দাপটের মধ্যে এ দেশে কম বাজেটের বাংলা ছবি নির্মাণ করা রীতিমতো যুদ্ধ ছিল। আমজাদ হোসেন ছিলেন এ দেশের সিনেমার পক্ষে সেই লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান যোদ্ধা। তিনি নিরলস পরিশ্রমে বাংলা চলচ্চিত্রকে দৃঢ় ভিত্তিমূলে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি ইতিহাসের অনিবার্য অংশ।

    এই তো সেদিন শেষবার তাকে দেখতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। দূর থেকে তার মুখখানা দেখে হাজারো স্মৃতি ভেসে উঠেছিল মানসপটে।

    বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে একটা মাইলফলক ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছে ছবিটি। কী অসাধারণ এর নির্মাণশৈলী। ছবিটিতে ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের গল্প। ছবির প্রতিটি সংলাপ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। সে সময় তো অফিস-আদালত, হাটে-বাজারে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবির সংলাপ সবার মুখে ফিরত। বিশেষ করে ওই কথাটা তো ছড়িয়ে গিয়েছিল-গোলাপীকে প্রশ্ন করা হচ্ছে ‘তোমরা যে ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসে এসে ঢুকলা, তোমরা টিকেট কেটেছো?’ উত্তরে সে বলছে, ‘বাংলাদেশে কোনো কেলাস [ক্লাস] নাইক্যা, আমরা হগলেই এক কেলাসের [ক্লাস] মানুষ।’ এই সংলাপটি কী অসাধারণ ভাবেই না আমজাদ ভাই সেলুলয়েডের পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এখনও পর্দায় দেখলে হারিয়ে যাই অন্য ভুবনে। আমজাদ হোসেন সমকালীন মেধাবী নির্মাতাদের একজন। মনে আছে যখন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র কাজ করছি, সেই সময় ট্রেনে বসেই আমজাদ ভাই লিখলেন ‘হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ’ গানটি। গানটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এখনও গানটি মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

    দীর্ঘ সময় ধরে চলচ্চিত্র অঙ্গনে আমাদের পদচারণা ছিল। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে জেনেছি, পরিচালনা, অভিনয় আর লেখালেখির প্রতি তার আছে অকৃত্রিম ভালোবাসা। শিল্পীসত্তাকে সমৃদ্ধ করতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। চলচ্চিত্রকার-লেখক পরিচয়ের বাইরেও একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন তিনি। সবার বিপদে-আপদে এগিয়ে আসতেন। এ জন্য আমজাদ হোসেনের তুলনা চলে কেবল তার সঙ্গেই। সময়কে অতিক্রম করে যাওয়ার সব রকম প্রচেষ্টা ছিল তার। খ্যাতির মোহ কখনও পেয়ে বসেনি। কাজের বিষয়ে আপস করতেন না। সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল নিজের কাজটিকে ভালো করে তুলে ধরার। এমন একজন যখন আমাদের ছেড়ে চলে যান, তখন কত বড় শূন্যতা তৈরি হয়, তা বলাই বাহুল্য।

    যখন খবর এলো আমজাদ হোসেন আর নেই, তখন বাঁধভাঙা অশ্রু ধরে রাখতে পারিনি। অবশ্য আমি মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিই যে, মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মে। তিনি এই দেশের মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তার মৃত্যু নেই। বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন আছে, আমজাদ হোসেনের অবস্থান চির অমলিন হয়ে রইবে। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের দুঃখ, আমরা আর মানুষটিকে চোখে দেখব না। এই তো নিয়তি। বিদায় প্রিয় ভাই। প্রিয় বন্ধু, বিদায়।


    অভিনেতাদের আপন করে নিতেন আমজাদ হোসেন: ফারুক

    অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের নির্মাতা আমজাদ হোসেনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক বলেছেন, এই ধরনের গুণী মানুষের কখনো মুত্যু হয় না, তারা মৃত্যুঞ্জয়ী।

    সম্প্রতি স্ট্রোক করে গুরুতর অসুস্থ হওয়া আমজাদ হোসেন শুক্রবার থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

    চিত্রনায়ক ফারুককে নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন তার অন্যতম সেরা দুই চলচ্চিত্র ‘নয়নমনি’ ও ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’।

    তার মৃত্যুর খবরে দুঃখ-ভারাক্রান্ত ফারুক স্মরণ করেন সঙ্গে কাজের দিনগুলোর কথা।

    তিনি বলেন, “আমরা একে অপরের সংসারের মানুষ ছিলাম। আমজাদ সাহেব তার জীবনে অনেক ছবি বানিয়েছেন কিন্তু ‘নয়নমনি’ এবং ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র মতো ছবি আর বানাতে পারেননি। এটা টিমওয়ার্কের জন্য পারেননি হয়ত। তার সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, এটা আমি মানতে পারি না যে, তিনি মারা গেছেন। তিনি আছেন-এ সম্পর্ক ঐশ্বরিক। এটা আমরা কাজ যখন করতাম তখন আমজাদ সাহেব শীতের দিনে হাসতে হাসতে লেপের নিচে শুয়ে পড়ত, বলত- আমার একটা জায়গায় সিকোয়েন্স লিখতে প্রবলেম হচ্ছে। বলেন তো, ওই জায়গাটা কেমন হলে ভালো হয়?

    “সে সময় আমি, টেলিসামাদ, কখনো এ টি এম শামসুজ্জামানকে পাওয়া যেত। আমরা কাজ করেছি না খেয়ে, খেয়ে-এত আপনতা এত সুন্দর সম্পর্ক আমার মনে হয় ফিল্মে আট দশজন ডিরেক্টর ছিলেন, প্রডিউসার ছিলেন তাদের সাথে যে সম্পর্ক ছিল আর্টিস্টদের বলাই যেত না এটা আর্টিস্ট ও ডিরেক্টরের সম্পর্ক। তাদের মধ্যে একজন আমজাদ হোসেন। মনে হত আমরা একই পরিবারের লোক। সেখান থেকে এত সুন্দর করে কথা বলছি, এত সুন্দর করে নতুন সিনেমার কথা ভাবছিলেন-কী থেকে কী হয়ে গেল!”

    আমজাদ হোসেন সর্বশেষ যে কাহিনী নিয়ে সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন, তা তার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন বলে জানান ফারুক।

    “সেই লাল মটরসাইকেলটা, বুঝলা না? ছেলেটি তার প্রেমিকাকে আর সরাতে পারল না। সকাল বেলায় সে দেখে, রাস্তার মধ্যে কে বা কারা তাকে মেরে ফেলে রেখে গেছে।”

    আমজাদ হোসেন এভাবে চলে যাবেন, তা ভাবনায় আসেনি জানিয়ে ফারুক বলেন, “এই যে আমরা দুঃখ প্রকাশ করি, দুঃখ প্রকাশ কী আর করব, আমজাদ চলে গেছেন আমার কতো আদরের লোক, কতো আদরের বড় ভাই, তিনি যে এভাবে চলে যাবেন বলে কয়ে, আমি ভাবতেও পারি না। তিনি চিরতরে চলে গেলেন।

    “আমি মনে করি না এ ধরনের গুণী মানুষেরা কখনো মরে। তারা মৃত্যুঞ্জয়ী হয়। তারা মৃত্যুকে জয় করে ফেলে। চিরকাল বেঁচে থাকে। আমজাদ চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। আমজাদ আমার মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবে। তার সৃষ্টির কিছু অংশ তিনি আমাকে নিয়ে করেছিলেন। দুটো ছবি। তারপরও আমরা অনেক সুন্দর করে কথা বলতাম, বসতাম, আড্ডা মারতাম এবং ডিজিটাল সিস্টেমের ছবি নিয়ে কথা বলতাম।

    “তিনি বলতেন, ডিজিটাল সিস্টেমকে আমরা ভয় করি না। এ সিস্টেমেই ছবি বানাতে হবে।”

    হতাশা প্রকাশ করে ফারুক বলেন, “তুমিতো আমাকে বলেছিলে, আমরা আবার সংসার পাতব। সংসারটা পেতে তারপর যেতে…।”

  9. মাসুদ করিম - ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ (১:৫৩ অপরাহ্ণ)

    This Kolkata boat museum is the only one of its kind in the country

    Gitanjali, Tagore’s collection of poems that brought India its first Nobel in 1913, has a backstory not many would know. The poet began translating the Bengali verses of Gitanjali into English on his favourite luxury houseboat, ‘Padma’. The original boat doesn’t survive: but its memory is preserved in the form of a replica in Kolkata’s ‘boat museum’.

    Padma is among the 46 models of boat on display at The Heritage Boats of Bengal gallery in the Cultural Research Institute (CRI) in Kankurgachhi. The nondescript Ambedkar Bhawan which houses the museum is easy to miss, all the more because the building hardly looks like a museum from the outside. Add to this our general indifference towards history and it is easy to guess why, according to CRI figures, the country’s only boat museum receives just 40 visitors per month on an average although it has been around for the past four years. Not many, even Kolkatans, are aware of its existence.

    “The history and heritage of Bengal is connected to its naval power, trade and commerce. The gallery is an attempt to archive the cultural heritage of West Bengal and to document the skills of the indigenous, and now marginalised, sections of people who helped maintain Bengal’s dominance over riverine trade by building and using boats,” says Upendranath Biswas, the former State Minister for Backward Classes Welfare Department, who conceptualised the project in 2012.

    An original boat brought from Bongaon is the first thing to greet you as you enter the museum. Long and narrow in shape, with a chhoi (cover) to provide shade, these boats are chiefly used as water taxis. Called Bachharis, they are typically from Bangladesh. After taking the beauty of this Bachhari in, you examine the wooden boat models crafted by artisans from Dinajpur district that line the gallery walls. From the ancient boats of Harappa to the still-in-use dinghies, the museum has boats currently in service along with those lost in time.

    “We know very little of Bengal’s riverine ecosystem and its culture. Historical texts use the term ‘nousadhon’, indicating how boats were used for various different purposes — commerce, travel, commute — making our culture chiefly riverine rather than landlocked. Unfortunately, we hardly know the details,” says Biswas, who also specialises in cultural anthropology. Till he set up this museum, there were no archival displays of this aspect of Bengal’s past whereas the Bangladesh National Museum in Dhaka has at least 175 typological boat models.

    The museum official who gave me a tour of the boats on display did not seem to have much information either. Biswas acknowledges the shortcoming and says that gathering in-depth knowledge of the boats needs a certain level of dedication.

    Swarup Bhattacharyya, the curator of Maulana Azad Museum in Kolkata’s Ballygunge area and a boat-enthusiast brought in by Biswas to help set up the Kankurgachhi museum, evidently has the dedication Biswas talks of. He addresses my queries about boats, explaining how the variety of waterbodies across Bengal, like khal (canal), pukur (pond), and doba (marsh land), necessitates the use of different kinds of boats. “Boat-building techniques are handed down orally from guru to shishya. They are tailor-made to the specific requirements of the area in which the boat functions,” he says.

    For instance, the flat-bottomed Kosa boats, used in Bengal for fishing and transportation of cargo, cannot function on the Hooghly river. “They are suited to North Bengal since the current in the hilly rivers there is strong and the water is shallow,” Bhattacharyya says.

    Bhattacharya points out that at least 25-30 types of boats are still in use in West Bengal. “In low-lying areas like Ghatal, Mondi, and Koyna, houses are surrounded by water even after the rainy season. There, a bicycle is of no use. People need boats to commute,” Bhattacharya tells me.

    Apart from having intricate structures, the miniature boats at the museum also have interesting stories behind their names. The Trawler boat, for instance, has its origins in Bangladesh. Despite its name, it doesn’t have trawl nets. So why the name?

    “During the 1990s, some fishing merchants of Kakdwip (a place on the mouth of the Hooghly river in West Bengal) fancied a kind of big boat in use in Bangladesh: they found it to be better equipped for coastal or maritime fishing. So one of these merchants sent his boatmakers to Cox’s Bazar in Bangladesh to learn the technique. On coming back, they replicated the same boat in Kakdwip. Locals of Kakdwip found the model unfamiliar and gave it an appropriately ‘foreign’ name: trawler,” says Bhattacharya, adding that the boats, which go up to 50-60 feet, are still functional in the Sundarbans area, Diamond Harbour and Kakdwip.

    “Bengal boats are shell-built, which means that the planks making up the hull are put first and the skeleton or the frame is added later. But these trawlers are built frame first. The boat has a projected plank at the bottom called keel which can cut through wave and current.” The replica at the boat museum has miniature wooden planks joined closely together for its deck and a small cabin with a single entry point.

    Another boat built frame first is the Sultani. This deep-bottomed boat propelled by sails can carry up to 2,000-3,000 maunds and is used mainly in Midnapore district. Although it is unclear how the Sultani got its name, it bears a striking resemblance to Mediterranean boats which are also skeleton-built, Bhattacharyya points out. The Sultani is the first boat model on the right when you enter the gallery; you can’t miss its remarkable white sail.

    Before leaving the museum, I go through the visitors’ notebook and notice that it asks for your caste. I ask Biswas about this and he explains why caste is an important part of the conversation around boats in Bengal. “Brahmins do not build boats. It is the marginalised section that builds and rows boats,” he says. The intention is to document how many people from the marginalised classes visit the museum.

    According to Biswas, indigenous people belonging to different tribes and clans of Bengal have been building ships and boats of unique designs over the ages. But many of them have now been marginalised for political, economic and historical reasons. “The museum is an attempt to highlight their skills and document their contribution,” says Biswas.

  10. মাসুদ করিম - ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ (২:১২ অপরাহ্ণ)

    যুদ্ধে নিপীড়িত নারীর ক্ষতিপূরণের দাবি দুই বীরাঙ্গনার

    যুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের ক্ষতিপূরণের নীতি গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের দুই বীরাঙ্গনা জাবেদা খাতুন ও আনোয়ারা বেগম।

    নোবেলজয়ী ড. মুকওয়েগে ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে সম্প্রতি বাংলাদেশের এই দুই নারী নেদারল্যান্ডস গিয়েছিলেন। লন্ডনভিত্তিক নারীবাদী সাংস্কৃতিক দল কমলা কালেক্টিভসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় তারা সেখানে একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেন।

    বীরাঙ্গনা আনোয়ারা বেগম (৬৮) পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের গেরাখালী গ্রামের আনসার হাওলাদারের স্ত্রী। জাবেদা খাতুন (৭৭) থাকেন শেরপুরের সোহাগপুর বিধবা পল্লিতে।

    কমলা কালেক্টিভের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুদ্ধকালীন যৌন নিপীড়নের শিকার বিশ্বের আরও ১৫টি দেশের অন্তত ২৫ জন নারীর সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠিত ওই সম্মলনে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের এই দুই বীরাঙ্গনা।

    এই সম্মেলনে জাবেদা খাতুন ও আনোয়ারা বেগম জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্বীকৃতির দাবি করেছেন। তারা যুদ্ধে নিপীড়িত নারীদের জন্য ক্ষতিপূরণের নীতি গ্রহণেরও আহ্বান জানান।

    উচ্চ পর্যায়ের এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যুদ্ধে নিপীড়িত নারীরা নিজ নিজ দেশে স্বীকৃতি পেয়েছেন উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয় সম্পর্কে জানতে চান বলেও কমলার বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

    সম্মেলনে উপস্থিত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধিসহ উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের কাছে জাবেদা খাতুন বলেন, “আমরা বাংলাদেশে স্বীকৃতি পেয়েছি। এখন আমরা ক্ষতিপূরণ চাই; আমরা বিশ্ববাসীরও স্বীকৃতি চাই। আপনারা আমাদের জন্য কী করবেন?

    বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে কথা বলা হয় আনোয়ারা বেগম এবং জাবেদা খাতুনের ছেলের সঙ্গে।

    আনোয়ারা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্মেলনে তারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। তাদের ক্ষতির কথা বলেছেন।

    জাবেদা খাতুনকে ফোন করলে তার ছেলে ইউসুফ আলী ধরেন। তার মা অসুস্থ উল্লেখ করে তিনি তার পক্ষে কথা বলেন।

    তার মা যুদ্ধকালীন নির্যাতনের বিবরণ নেদারল্যান্ডসের সম্মেলনে তুলে ধরেছেন বলে জানান ইউসুফ।

  11. মাসুদ করিম - ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ (১০:৫২ পূর্বাহ্ণ)

    একজন রেদকিনের আত্মদান ও বন্দর উদ্ধারের গল্প

    সাগরের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সিমেন্টের ব্লকগুলোর ওপর আর পাড়ের প্রাচীরগাত্রে। দূরে চলাচল করছে কিছু লাইটার ভেসেল। আরও দূরে কয়েকটি কার্গো জাহাজ। হয়তো পণ্য নিয়ে আসছে, অথবা নিয়ে যাচ্ছে দূর কোনো দেশে। দুপুরের কড়া রোদে ঝিলিক দিচ্ছে রুপালি ঢেউ। আমরা দাঁড়িয়ে আছি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়, বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির রেদকিন প্রান্তে।

    বঙ্গোপসাগরে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় এ জায়গাটির একটা ইতিহাস আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশমুখ এটি। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে এ দেশের বড় বড় অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল। বিশেষ করে তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল সেতু, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলো।

    চট্টগ্রাম ও চালনা/মোংলা বন্দর প্রায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল তারা। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশমুখে মাইন পুঁতে রেখেছিল বন্দর অচল করে দেয়ার উদ্দেশ্যে। এ ছাড়া বাংলাদেশের নৌ-কমান্ডো যোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত অপারেশন জ্যাকপট নামে গেরিলা অভিযানে এবং ভারতীয় যুদ্ধবিমানের গোলার আঘাতে বন্দর ও বহির্নোঙর এলাকায় ছোট-বড় অন্তত ৪০টি নৌযান ডুবে গিয়েছিল।

    এসব নৌযানের মধ্যে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদবাহী জাহাজও। ফলে বন্দরে কোনো জাহাজ ভেড়ার উপায় ছিল না। অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পড়েছিল পুরোপুরি অচল। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছিল না, যা ছিল সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিশেষজ্ঞ দল আনিয়ে বন্দর দ্রুত সচল করার সামর্থ্য ছিল না আমাদের। এ পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু সরকার জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মিত্ররাষ্ট্রগুলোর কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের মাইন অপসারণে সহায়তা চায়।

    জাতিসংঘ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ইতিবাচক সাড়া দেয়। তবে জাতিসংঘ জানায়, এ জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পরিবহনে এবং দক্ষ প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে কিছু সময় লাগবে। শেষে এগিয়ে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে গেলে মস্কো দ্রুততম সময়ে ও নিঃশর্তভাবে মাইন অপসারণে সহায়তার প্রস্তাব দেয়। এ নিয়ে আলোচনার জন্য সে বছরের ২১ মার্চ ৯ সদস্যের একটি সোভিয়েত প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। পরদিনই উভয় পক্ষ এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

    চুক্তি অনুযায়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে ও স্বল্পতম সময়ে চট্টগ্রাম ও চালনা/মোংলা বন্দরের মাইন অপসারণে সম্মত হয়। ওই বছরেরই ২ এপ্রিল রিয়ার এডমিরাল সের্গেই পাভলোভিচের নেতৃত্বে ১০০ নাবিকের সমন্বয়ে গঠিত একটি অগ্রবর্তী দল চট্টগ্রাম আসে। তারা দ্রুত তাদের সরঞ্জাম স্থাপন করে কাজ শুরু করে। মে মাসের ৪ তারিখের মধ্যে ভ্লাদিভস্তক থেকে সোভিয়েত ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের’ ২২টি জাহাজ ও আরও ৭০০ নাবিক চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে।

    শুরু হয় দুঃসাহসী এক অভিযান। রিয়ার এডমিরাল জুয়েনকোর নেতৃত্বে মোট ৮০০ সদস্যের সোভিয়েত মাইন অপসারণ দল শুরুতেই খুব কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মারাত্মকভাবে। তাছাড়া মাইন অপসারণ অত্যন্ত জটিল ও বিপজ্জনক কাজ।

    ‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতিতেই ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের কাজটি বেশ কঠিন। আর চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষেত্রে তা ছিল আরও বেশি কঠিন ও বিপজ্জনক। কর্ণফুলী নদীর ময়লা ও কর্দমাক্ত পানির নিচে প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তীব্র স্রোতের কারণে নাবিকরা দিনে চারবারের বেশি পানির নিচে যেতে পারছিল না। এবং তারা একটানা ৪০-৪৫ মিনিটের বেশি সেখানে থাকতে পারছিল না।

    সোভিয়েত নাবিকদের মোকাবেলা করতে হচ্ছিল অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি। কর্ণফুলী নদী সরু হওয়ায় ডুবে থাকা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে দক্ষ ও কার্যকর পদ্ধতি- যা পানির তলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে করা হয়- প্রয়োগ করা যাচ্ছিল না, কারণ তা আরও বিপজ্জনক হতে পারত।

    তাছাড়া এর ফলে মাছসহ অনেক সামুদ্রিক সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই তাদেরকে সেকেলে ‘ডুবন্ত পন্টুন’ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হচ্ছিল। জাহাজের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে পন্টুনকে যুক্ত করে তা সংকুচিত বাতাসের চাপ দিয়ে উপরে ওঠানো হচ্ছিল। এ পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও কঠিন।

    মাইন অপসারণের কাজটি সম্পন্ন করতে সোভিয়েত মাইন অপসারণ দলের প্রায় দুই বছর সময় লাগে। দলের সদস্যরা চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করার পাশাপাশি ডুবে যাওয়া জাহাজগুলোও উদ্ধার করেন। সেই দলের এক অসীম সাহসী তরুণ সদস্য ডুবে থাকা জাহাজের গায়ে আংটা বাঁধার সময় প্রবল বিপরীত স্রোতের তোড়ে প্রাণ হারান। নাম তার ইউরি ভিক্তরোভিচ রেদকিন।

    বাংলাদেশ ও সোভিয়েত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেদকিনকে বন্দরের মোহনার কাছেই সমাহিত করা হয়। পরে সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ। সমাধিস্থলটি তখন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও ১৯৭৬ সালে এ স্থানে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর তা সংরক্ষিত এলাকায় পরিণত হয়।

    নেভাল একাডেমির এ প্রান্তটি রেদকিন পয়েন্ট নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মাইনমুক্ত ও ব্যবহার উপযোগী হওয়ার ফলে চট্টগ্রাম বন্দর দ্রুত আগের অবস্থা ফিরে পায় এবং ১৯৭৩ সালে এর ধারণক্ষমতা যুদ্ধপূর্ব ধারণক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায়।

    আমরা জানি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ছিল অনন্য। তারা একদিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সৈন্যদের সামরিকভাবে সহায়তা করে, অন্যদিকে কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন জোগায়। যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের তিন-তিনবার ভেটো প্রয়োগ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম নিশ্চিত করে তোলে।

    স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশের পুনর্গঠনে এগিয়ে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে এ দেশের জন্য একজন সোভিয়েত নাবিকের, একজন বিদেশির আত্মত্যাগের কথা জানে খুব কম মানুষই। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম এ সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানে না। কেননা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখাগুলোতে রেদকিন প্রসঙ্গের তেমন উল্লেখ নেই। অথচ এ আত্মত্যাগের ঘটনা শুধু ইতিহাস গ্রন্থে নয়, পাঠ্যবইয়েও স্থান পাওয়া উচিত বলে মনে করি।

    ২.

    দেরিতে হলেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুদের স্মরণ করার জন্য তাদের সম্মাননা জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। ২০১৬ সালে বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন উৎসবে সরকারের আমন্ত্রণে চট্টগ্রাম বন্দরে মাইন অপসারণ কার্যক্রমে অংশ নেয়া সোভিয়েত উদ্ধারকারী দলের চার সদস্য সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

    তারা স্মৃতিচারণ করেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানির নিচে মাইন অপসারণের সেই দুঃসাহসী ঘটনার। নেভাল একাডেমিতে গিয়ে রেদকিনের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনও করেন তারা। ৮০০ সদস্যের উদ্ধারকারী দলটির অনেকেই আজ আর বেঁচে নেই। এ দলের প্রয়াত সদস্য ভ্লাদিমির মলচানভ এবং ভিক্তর কঝুরিন চট্টগ্রাম বন্দরের মাইন অপসারণ কার্যক্রমের ওপর ‘The Fairway is Clean Again’ নামে একটি বই লিখেছেন। বাংলাদেশ সফরকারী দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে এর কপি উপহার দেন এবং বইটি বাংলায় অনুবাদ করানোর অনুরোধ রাখেন।

    ৩.

    ছাত্রজীবনে সোভিয়েত কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের মাইন অপসারণের ঘটনা এবং এ দেশের জন্য এক রুশ তরুণের আত্মত্যাগের কথা শুনেছিলাম বটে, তবে তার সমাধিটি কোথায় তা জানা ছিল না। সত্যি বলতে কী, তাকে যে এ দেশেই সমাহিত করা হয়েছে তাও ছিল অজানা। সম্প্রতি এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে চট্টগ্রাম গেলে সুযোগ হয় নেভাল একাডেমিতে যাওয়ার। সেখানে আকস্মিকভাবেই রেদকিনের সমাধিটি নজরে পড়ে, মোজাইক করা একটি স্মৃতিস্তম্ভসহ।

    মনে পড়ে যায় এ দেশের জন্য তার সর্বোচ্চ ত্যাগের ঘটনাটি। তার সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে কিছু সময় কাটাই। স্মৃতিস্তম্ভ ও সমাধির বেদিতে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা রয়েছে : ‘বাংলাদেশ সরকার এবং সোভিয়েত সরকারের মধ্যে ১৯৭২ সালের ২২ মার্চ তারিখের চুক্তি অনুযায়ী সোভিয়েত উদ্ধারকারী দল চট্টগ্রাম বন্দরে মাইন ও নিমজ্জিত জাহাজ অপসারণের কাজে লিপ্ত হন এবং বিপুল ত্যাগ ও নিঃস্বার্থভাবে উক্ত কাজ সম্পন্ন করেন।

    সোভিয়েত নাবিক ইউ. ভি. রেদকিন উক্ত উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন।’ সমাধিগাত্রে রুশ ভাষায় রেদকিনের জন্ম ও মৃত্যু সাল উল্লেখ রয়েছে যথাক্রমে ১৯৫১ ও ১৯৭৩। অর্থাৎ তার যখন মৃত্যু হয় তখন তিনি মাত্র ২২ বছরের টগবগে তরুণ। বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো ৬৭।

    পেছন ফিরে তাকাই। সামনে সুবিশাল বঙ্গোপসাগর। নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানালেন, এ স্থানেই চালানো হয়েছিল মাইন অপসারণ অভিযান। আশ্চর্য, তার পাশেই ঘুমিয়ে আছেন রেদকিন। কিছুক্ষণ পরপর পাড়ে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে জায়গাটি।

    সাগরের পানি ছুঁয়ে দিচ্ছে তার কবরটিও। যেন বুলিয়ে দিচ্ছে ভালোবাসার পরশ। শান্তিতে ঘুমাক মানুষটি! এ দেশের ‘লাইফলাইন’ বাঁচাতে নিজের লাইফটাই দিয়ে গেছেন তিনি। এই বিজয়ের মাসে, ১৮ ডিসেম্বর রেদকিনের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। দেশের ৩০ লাখ শহীদের পাশাপাশি আমরা কি তাকেও স্মরণ করব না শ্রদ্ধার সঙ্গে?

  12. মাসুদ করিম - ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ (৮:০৯ অপরাহ্ণ)

    চলচ্চিত্রকার সাইদুল আনাম টুটুল আর নেই

    হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের এজিএম কর্পোরেট (কমিউনিকেশন) সাঈফুর রহমান লেনিন নিশ্চিত করেছেন।

    বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তার। তিনি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমানের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ বিকাল সোয়া তিনটার দিকে তিনি মারা যান।”

    ৬৮ বছর বয়সী সাইদুল আনাম টুটুল স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।

    টুটুল ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ও আজীবন সদস্য।

    ডিরেক্টরস গিল্ড জানিয়েছে, টুটুলের ছোট মেয়ে অমৃতা আনাম এখন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। বড় মেয়ে ঐশী আনাম দেশে ফিরেছেন।

    বুধবার ছোট মেয়ে অমৃতা আনাম দেশে ফেরার পর তার দাফন সম্পন্ন হবে।

    এর আগে গত শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে সাইদুল আনাম টুটুলকে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিসিইউতে নিয়ে গিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

    ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘কালবেলা’ নামের একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করছিলেন সাইদুল আনাম টুটুল। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘আকার’।

    সরকারি অনুদানে নির্মিত সাইদুল আনাম টুটুলের প্রথম ছবি ‘আধিয়ার’ মুক্তি পায় ২০০৩ সালে।

    ১৯৭৯ সালে ‘সূর্য দিঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রে কাজ করে শ্রেষ্ঠ চিত্র সম্পাদক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

    ‘ঘুড্ডি’, ‘দহন’, ‘দীপু নাম্বার টু’ ও ‘দুখাই’র মতো চলচ্চিত্র সম্পাদনা করেছেন তিনি।

    • মাসুদ করিম - ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ (১০:১৯ পূর্বাহ্ণ)

      ‘প্রিয়বরেষু টুটুল ভাই’

      জনপ্রিয় নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল আর নেই। সদ্য প্রয়াত এ নির্মাতার আকস্মিক প্রয়াণে তাকে নিয়ে লিখেছেন টুটুলের সহকর্মী ও নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী। আবেগঘন এ স্মৃতিচারণে ফুটে উঠেছে নির্মাতা টুটুলের কর্মময় জীবন। গ্লিটজ পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো লেখাটি-

      প্রিয় টুটুল ভাই,

      আপনার মৃত্যু সংবাদ যখন এলো, তখন আমি এডিটিং এ ব্যস্ত। প্রথমেই মনে এলো, আপনার নিজের ফিল্মটা তো এডিট করা বাকী রয়ে গেল! অথচ, কি তুখোড় এডিটরই না ছিলেন আপনি! সেসময়ে পুনে থেকে ফিল্ম এডিটিং এ পড়াশুনো করে আসা মানুষ আপনি। ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’র মত ছবির সম্পাদক আপনি। এরপর তো রয়ে গেছে লম্বা কাজের তালিকা। ৮০-৯০ এর দশকে অন্যতম সূক্ষ এবং সংবেদনশীল একজন সম্পাদক এবং নির্মাতা। আমার সৌভাগ্য যে ক্যামেরার জগতের সঙ্গে হাতেখড়ি আপনার উপলক্ষে।

      আপনি নির্মাতা, আমি মডেল অভিনয় শিল্পী। আপনি ক্যামেরার ওপাশে, আমি এপাশে। এখন এই মুহূর্তে যেমন আপনি আপনার দেহের বাইরে, আমি আমার দেহে অবস্থান করছি। আপনি এবারে আমায় আর দেখতে পাচ্ছেন না, আমি পাচ্ছি।

      ১৯৯৫ এর কথা। এশিয়াটিক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় গিয়েছি আমার মনোগ্রাফের কাজে। আমি অপেক্ষা করছিলাম যাকের ভাইয়ের একটা ইন্টারভিউ নেবার জন্যে নওরতন কলোনীর অফিসে। একটু পর আপনি ঢুকলেন। সেই হাসিমাখা স্মিত মুখ। একটু পর ভেতর থেকে অফার। স্বয়ং আসাদুজ্জামান নূর এসে বললেন। তাদেরকে আমার খোঁজ দিয়েছেন আপনি এই বলে, “দেখো তো বাইরে একজন বসে আছে, একে দিয়ে হয় কিনা।“ ব্যাস, শুরু হয়ে গেল তোড়জোড়। আপনি নির্মাণ করবেন আর মাকসুদুল বারী ভাই ক্যামেরা। আমার চারপাশে সব জাঁদরেল মানুষেরা তখন, আলী যাকের, সারা যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, শঙ্কর সাঁওজাল আর আপনাকে দেখেছি টিভির নাটকে, কেমন মিষ্টি একজন মানুষ, বাবা বাবা ভাব।
      মনে আছে বিটিভির বিখ্যাত সেই ‘রক্ত করবী’তে আপনার অভিনয়। ‘কিশোর’ চরিত্র করেছিলেন আপনি। আর জানা ছিল ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’র ইতিহাস। আমার তখন ২৩ চলে। ফিল্মে বরাবর আগ্রহ। তাই শুটিংয়ে অন্যতম উপাদেয় বিষয় ছিলো আপনার, বারী ভাইএর পুনে’র গল্প, থিয়েটারের আলাপ, তানভীর মোকাম্মেল ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব আর মজার সব ঘটনা। আমার সব নমস্য লোকজন আপনার বন্ধু-বান্ধব।

      এবং সেই শুটিংয়ে আমার জীবনের ম্যাজিকটা ঘটিয়ে দিলেন আপনিই– ছোটখাটো, শুচিস্মিত, রসবোধ সম্পন্ন এবং পারফেকশনিস্ট একজন নির্মাতা। বেঙ্গল স্টুডিওতে ইয়া বড় সেট, এত এত আয়োজন, ইউনিলিভারের বিদেশী ক্লায়েন্ট, নূর ভাইয়ের মত মানুষের সদা উপস্থিতি, শঙ্কর’দার জিঙ্গেলের সুর, শাকিলা জাফরের কন্ঠে গান, বোম্বেতে পোস্টের কাজ—৯৫’ সালে এসব বিরাট ঘটনা। আর সেই ঘটনার হোতা আপনি। সকল ছাপিয়ে আপনি আমার চোখে মধ্যমনি হয়ে উঠলেন। এই যে, আমি মেকাপ নিয়ে পটের বিবি হয়ে বসে আছি। আমার সঙ্গে সঙ্গে ৪/৫ জন মানুষের সেবা-শ্রম, এই আমিটা আসলে কে?
      আপনার নির্দেশের একজন পুতুল মাত্র। আপনি না বললে একটি লাইটও জ্বলবে না, ক্যামেরার চোখ পাতা মেলবে না, লেন্সের ডালা বন্ধ পড়ে রইবে। একজন নির্মাতা যে কতটা ক্ষমতা ধারন করে তা আপনি আমার ২৩ বছরের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন। প্রথম দিনেই আমার মনের অবস্থান পালটে গেল। অভিনেতা ঠেকে আমি নির্মাতা হয়ে গেলাম। ক্যামেরার সামনে নয়, ক্যামেরার নেপথ্যের আশ্চর্য জাদু আমাকে গ্রাস করে ফেলল। শৈশব থেকে লালন করে আসা অভিনেত্রী হবার স্বপ্ন মুহূর্তেই গেল পালটে। আমার জীবনের প্রথম শটটি ওকে হবার পরমুহূর্তে।

      এরপর আরো দু’টি কাজ করা আপনার সঙ্গে। পরপর তিনটি। পারফেকশনিস্ট বলতে যা বোঝায় তা আপনি। যতক্ষন না সব কিছু এক তালে মিলছে ততক্ষন থাকো বসে। সব রেডি হলে, রিহার্স-এর পর টেক হবে। লাইটের ব্যাপারে এত খুঁতখুঁতে আমি আর দেখিনি কাউকে। খুব আফসোস আজ, সেসব কাজ আমার কাছে নেই। ওগুলো তো শুধু কাজ নয়, এক একটি মূহূর্ত।
      কেমন বাবা বাবা মানুষ আপনি! সরল ও সহজ। নো হামবড়া ভাব, নো ডাটগিরি। কিন্তু, আপনার টিম মানেই পরিপাটি, গোছানো। শান্ত, নির্ভার। কোন চাপ নেই। মনের আনন্দে কাজ করা আর মার্গীয় আড্ডা। আমার জানা নেই অমন আড্ডা আর হয় কিনা বিজ্ঞাপন পাড়ায়।

      ৯৬’এ এসে জানলাম আপনি মুক্তিযোদ্ধাও। ‘মুক্তির গানের’ একজন সহযোদ্ধা। সেই দলের সাথে পাপেট শো করতেন। আমার চোখে এখনো ভেসে উঠছে, আপনার সদ্য কৈশোরোত্তীর্ন জ্বলজ্বলে চোখ। কি অখন্ড মগ্নতায় পাপেট নাচিয়ে যাচ্ছেন মঞ্চের পেছন থেকে। লেয়ার লেভিন দেখে ফেললেন সেই চোখ। যেন এক যোদ্ধা তার রাইফেল তাক করে আছে, এইমাত্র গুলি ঠুকবে পাকিস্তানী বাহিনীর দিকে। কি আশ্চর্য! সেই ডিসেম্বরে, বিজয়ের ৪৭ বছর পরে আপনি মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন।

      আপনার হৃদয়ে দেশের প্রতি যে ভালোবাসা জমা ছিলো আজন্ম তা বুঝি বিলিয়ে গেলেন আসছে প্রজন্মকে!

  13. মাসুদ করিম - ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ (১০:২৭ পূর্বাহ্ণ)

    The rise and rise of Bangladesh
    The economy is booming. Does Sheikh Hasina deserve the credit?

    Bangladesh defies economic and political gravity. Since its 1971 war of independence with Pakistan, the country has been known for its tragedies: wrenching poverty, natural disasters and now one of the world’s biggest refugee crises, after the influx of 750,000 Rohingya Muslims fleeing persecution in neighboring Myanmar.

    Yet, with remarkably little international attention, Bangladesh has also become one of the world’s economic success stories. Aided by a fast-growing manufacturing sector — its garment industry is second only to China’s — Bangladesh’s economy has averaged above 6% annual growth for nearly a decade, reaching 7.86% in the year through June.

    From mass starvation in 1974, the country has achieved near self-sufficiency in food production for its 166 million-plus population. Per capita income has risen nearly threefold since 2009, reaching $1,750 this year. And the number of people living in extreme poverty — classified as under $1.25 per day — has shrunk from about 19% of the population to less than 9% over the same period, according to the World Bank.

    Earlier this year, Bangladesh celebrated a pivotal moment when it met United Nations criteria for graduating from “least developed country” status by 2024. To Prime Minister Sheikh Hasina, the elevation to “developing economy” means a significant boost to the nation’s self-image.

    “Exiting LDC status gives us some kind of strength and confidence, which is very important, not only for political leaders but also for the people,” she told the Nikkei Asian Review in an exclusive interview in December. “When you are in a low category, naturally when you discuss terms of projects and programs, you must depend on others’ mercy. But once you have graduated, you don’t have to depend on anyone because you have your own rights.”

    Hasina says Bangladesh’s strong economic growth will not just continue, but accelerate. “In the next five years, we expect annual growth to exceed 9% and, we hope, get us to 10% by 2021,” she said.

    “I always shoot for a higher rate,” she laughs. “Why should I predict lower?”

    On many fronts, Bangladesh’s economic performance has indeed exceeded even government targets. With a national strategy focused on manufacturing — dominated by the garment industry — the country has seen exports soar by an average annual rate of 15-17% in recent years to reach a record $36.7 billion in the year through June. They are on track to meet the government’s goal of $39 billion in 2019, and Hasina has urged industry to hit $50 billion worth by 2021 to mark the 50th anniversary of what Bangladeshis call their Liberation War.

    A vast community of about 2.5 million Bangladeshi overseas workers further buoys the economy with remittances that jumped an annual 18% to top $15 billion in 2018. But Hasina also knows the country needs to move up the industrial value chain. Political and business leaders echo her ambitions to shift from the old model of operating as a low-cost manufacturing hub partly dependent on remittances and international aid.

    To that end, Hasina launched a “Digital Bangladesh” strategy in 2009 backed by generous incentives. Now Dhaka, the nation’s capital, is home to a small but growing technology sector led by CEOs who talk boldly about “leapfrogging” neighboring India in IT. Pharmaceutical manufacturing — another Indian staple — is also on the rise.

    The government is now implementing an ambitious scheme to build a network of 100 special economic zones around the country, 11 of which have been completed while 79 are under construction.

    The concept neatly capitalizes on Bangladesh’s record population density, leveraging what Faisal Ahmed, chief economist at Bangladesh Bank, calls the “density dividend. “The proximity of our population also helped us design and spread social and economic ideas such as microfinance and low-cost health care. But we need to better manage our scarce land resources, and part of the answer is to develop well-functioning industrial parks and SEZs,” he said.

    Behind the impressive numbers and bold ambitions, however, are daunting hurdles ranging from structural problems to deep political divisions, which have come to the fore ahead of national elections on Dec. 30.

    Bangladeshi politics have been dominated for years by the bitter rivalry between Hasina and former Prime Minister Khaleda Zia, whose family histories go back to opposing sides of the liberation struggle, when Bangladesh was known as East Pakistan. Both women have been in and out of power — and prison — over the past three decades. Khaleda Zia, who chairs the opposition Bangladesh Nationalist Party, is in jail on corruption charges that she says are false.

    Since 1981, Hasina has led the ruling Awami League, founded by her father, Sheikh Mujibur Rahman, the country’s first president, who was killed by army personnel along with most of his family in 1975. The party enjoyed strong support in some past elections. But opposition activists and human rights groups have voiced concern about potential polling fraud and intimidation tactics. After two consecutive five-year terms for the ruling party, analysts point to a palpable “anti-incumbency” sentiment among some voters. Yet from an economic standpoint, many agree that a ruling party victory would support further development.

    “If the polling passes without too much strife and the status quo is maintained, then [Bangladesh] would seem an attractive long-term story,” said Christopher Wood, managing director and chief strategist at Hong Kong-based brokerage CLSA.

    Speaking at her official residence in central Dhaka, the prime minister rejected local and international criticism of creeping authoritarianism. Her party, she insisted, is “committed to protecting democracy in Bangladesh.”

    Business seems largely on the ruling party’s side — if only for stability’s sake. In recent interviews in Dhaka, executives and political analysts dismissed suggestions that political turbulence could derail the country’s growth trajectory.

    “We feel relieved that all political parties are participating in the elections,” said Faruque Hassan, managing director of Giant Group, a leading garment manufacturer, and senior vice president of the Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association. “We feel positive that despite political differences we can continue to keep economic issues separate — although we know that without political stability you can’t grow, and you could scare international customers.”

    Tailoring its industrial policy

    The ready-made garment industry is a key factor in the country’s phenomenal success story. The industry is the country’s largest employer, providing about 4.5 million jobs, and accounted for nearly 80% of Bangladesh’s total merchandise exports in 2018.

    It has undergone seismic changes since the watershed Rana Plaza disaster in 2013, when a multi-story garment factory complex collapsed, killing more than 1,130 workers. In the aftermath, the industry was forced by international apparel brands to implement sweeping reforms, including factory upgrades, inspections and improved worker conditions.

    A visit to one of Giant Group’s gleaming factories brings home the industry’s rapidly changing dynamics. In a vast room a handful of workers oversees a fully automated operation that feeds fabric and thread into a huge machine that cuts, stitches and turns out finished garments. In another space nearby, about 300 workers, mostly women, operate machines that embroider and add applique to garments.

    “Our entire industry changed in just 90 seconds in April 2013, generally for the better,” said Hassan of Giant. “We don’t actually want 100% automation — hopefully we can offset the impact by shifting more workers into value-added fields, applique, embroidery and so on.”

    Further investment is needed if Bangladesh’s garment industry is to remain competitive.

    “Bangladesh is still dominated by more basic products and cotton, whereas growth worldwide has been in man-made fibers. We need more investment in these areas, not to produce more cotton shirts,” he said.

    Bangladesh’s textile industry could gain if China’s garment exports are hit by a prolonged U.S.-China trade war. But other garment centers are also taking aim at a vulnerable China, including Vietnam, Turkey, Myanmar and Ethiopia.

    Intensifying international competition has already sparked consolidation in Bangladesh’s garment industry, reducing the number of factories by 22% in the last five years to 4,560, according to the BGMEA.

    CLSA’s Wood believes that Bangladesh’s reliance on the garment sector is a potential obstacle to future growth. “This sector on a 10-year view faces the risk of cheap wage alternatives such as Africa, automation and the loss of duty-free market access if Bangladesh transitions from LDC status [as scheduled for 2024],” he said.

    “For now the challenge is to develop other sectors, with pharmaceuticals and business process outsourcing being two areas of promise. But this will require much more foreign investment,” he said.

    FDI is not Bangladesh’s strong point. While it nearly tripled during Hasina’s nine years in office, from $961 million in fiscal 2008 to nearly $3 billion in the year to June 30, this compares poorly with other Asian countries, including Vietnam and Myanmar.

    Government officials partly blame the country’s consistently low rankings in the World Bank’s annual “Ease of Doing Business” survey, which they fear deters foreign investors. The latest survey, issued in December, put Bangladesh at 176th of 190 countries, citing excessive red tape, poor infrastructure and transport.

    The government has moved to streamline the investment process with the creation of a “one-stop” investor service intended to replicate similar services in Singapore and Vietnam. But this has yet to gain momentum.

    More successful is Hasina’s digital push. With her son, a U.S.-educated tech expert, as a key adviser, the program has introduced generous tax breaks for the information and communications technology sector and a sweeping scheme to build 12 high-tech parks across the country.

    In Dhaka, a new generation of IT entrepreneurs talks about beating India — which leapt onto the global map with its basic outsourcing industry — by focusing on AI, robotics and disruptive technologies.

    Bangladesh’s exports of software and IT services reached nearly $800 million in the year to June 30 and are on track to exceed $1 billion this fiscal year. The government’s target of reaching $5 billion in ICT-related exports by 2021 is “very, very challenging but achievable,” said Habibullah Karim, CEO of software company Technohaven and a co-founder of the Bangladesh Association of Software & Information Services, an industry body.

    “From $800 million to $5 billion is a sixfold increase in three years. That’s tough in itself. The second challenge is that the global outsourcing market is actually shrinking,” Karim said. “Many tasks, such as airline and hotel reservations and insurance claims … are now fully automated.”

    There have been outstanding homegrown tech successes, such as ride-sharing service Pathao, which received a $2 million investment from Indonesian unicorn Go-Jek, and mobile financial services group bKash, in which Alipay, an arm of China’s Alibaba Group Holding, took a 20% stake in April.

    But go-ahead industries badly need more financing, said Khalid Quadir, CEO and co-founder of Brummer & Partners (Bangladesh), which manages Frontier Fund, the country’s only private equity fund. He argues that innovation thrives on a strong private equity industry that can channel funds to promising companies and help them list.

    “We have invested nearly $200 million over the years in areas including communications infrastructure, garments and pharmaceuticals. It’s a drop in the ocean compared to the growth opportunities on offer. But to attract more capital of this kind, regulation could be more investor-friendly,” he said, citing three-year lockup provisions on investments in newly listed companies.

    Shameem Ahsan, chairman of IT company eGeneration and a former head of BASIS, sees Bangladesh’s tech niche at the cutting edge of IT. “Forty years ago, the garment industry started with a few companies. Now Bangladesh is exporting $30 billion-plus worth and is second only to China. We want to do the same thing in the IT industry,” he said.

    Bangladesh is hoping to challenge India in pharmaceuticals, too. With its “least developed country” status, the country has enjoyed a waiver on drug patents. This has fueled intensifying competition between India and Bangladesh in the field of generic and bulk drugs. Among local star performers is Incepta Pharmaceuticals, Bangladesh’s second-largest generics maker, which exports to about 60 countries, and Popular Pharmaceuticals, which is eyeing an eventual listing.

    “When you look at U.S. and Europe … their manufacturing plants are closing and they are coming to Asia. Why? Because of quality, affordable drugs,” said Syed Billah, senior general manager at Incepta. “We have the quality and recognition from international regulatory bodies, and are very good at finished products. But in [bulk drugs], we are far behind, and seeking technology for that from China.”

    One of Bangladesh’s competitive disadvantages is its poor infrastructure, and the country has turned to China for help. Under its Belt and Road Initiative, China has financed various megaprojects in Bangladesh, including most of the nearly $4 billion Padma Bridge rail link, which will connect the country’s southwest with the northern and eastern regions. In all, China has committed $38 billion in loans, aid and other assistance for Bangladesh.

    China’s heavy infrastructure investment has drawn criticism of its “debt diplomacy” in other countries, including Pakistan and Sri Lanka. But local economists dismiss such concerns.

    “I don’t think Bangladesh is being pulled too far into China’s orbit like Pakistan or even Sri Lanka,” said Faiz Sobhan, senior director of research at the Bangladesh Enterprise Institute, an independent think tank, noting that the country is also reliant on Japanese infrastructure investment.

    Hasina said the government is taking a more proactive role in the financing alongside international partners such as China, Japan and international financial institutions. “We have undertaken to establish our own sovereign wealth fund, worth $10 billion, to bankroll long-term physical infrastructure development. This is possible because our foreign exchange reserves stand at more than $32 billion now, from $7.5 billion 10 years ago.”

    Chinese investors also bought 25% of the Dhaka Stock Exchange in 2018, and Bangladesh is now the second-largest importer of Chinese military hardware after Pakistan.

    While some may question so much investment from Beijing, Hasina said it is simply a fact that China is set to play a bigger role in the region.

    “Our foreign policy is very clear: friendly relations with everyone,” she said. “What China and U.S. are doing, it is between them.”

  14. মাসুদ করিম - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ (৯:২৬ পূর্বাহ্ণ)

    চলে গেলেন প্রথম ডাক খামের নকশাকার ইদ্রিস

    চলে গেলেন দেশের প্রথম ডাক বিভাগের খামের নকশাকার মোহাম্মদ ইদ্রিস। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর শ্যামলীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি স্ত্রী আখতার বানু, দুই ছেলে ইমরুল আখতার ও ইমরান আখতার এবং মেয়ে আরিফা ইয়াসমিনকে রেখে গেছেন।

    সকালে মৃত্যুর পর মোহাম্মদ ইদ্রিসের মরদেহ নিয়ে আসা হয় উত্তর বাসাবোর বাসভবনে। সেখানে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার জন্মভূমি রংপুরে। সেখানে মুন্সীপাড়া কবরস্থানে সমাহিত করা হয় এই নকশাবিদকে।

    মোহাম্মদ ইদ্রিস ১৯৩১ সালের ১০ মে রংপুরের মুন্সীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন প্রতিষ্ঠিত আর্ট কলেজ থেকে পাস করে তিনি যোগ দেন তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভারে। একই সময় তিনি যুক্ত ছিলেন ‘রূপায়ণ’ নামের একটি হস্তজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান। তারই আহ্বানে ১৯৬০ সালে মোহাম্মদ ইদ্রিস যোগ দেন তখনকার ডিজাইন সেন্টারে। এই সংস্থা পরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থার (বিসিক) সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে সেখান থেকে উপপ্রধান ডিজাইনার হিসেবে তিনি অবসর নেন।

    ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর মুদ্রা, চিঠির খাম, ডাকটিকিট, জাতীয় প্রতীক, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রামসহ নানা কিছুর পরিবর্তনে কামরুল হাসানের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন মোহাম্মদ ইদ্রিস। তার করা শাপলা ফুলের নকশার সেই প্রথম চিঠির খাম এখনও ব্যবহার করতে দেখা যায়।

  15. মাসুদ করিম - ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ (১০:২০ অপরাহ্ণ)

    সংগীত জগতে নক্ষত্রপতন, প্রয়াত দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়

    প্রয়াত হলেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সোমবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

    বেশ কয়েক মাস ধরে কিডনির রোগে ভুগছিলেন বাংলা গানের প্রবাদপ্রতীম শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। এদিন তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে তাঁর প্রয়াণ হয়। গত সেপ্টেম্বরেও ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। তার পর থেকে নিয়মিত ডাক্তারদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। এদিন বেলা পৌনে দুটো নাগাদ তিনি প্রয়াত হন। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা বাংলায়।

    আধুনিক ও জনপ্রিয় বাংলা গানের কিংবদন্তী নাম তিনি। শুধু বাংলাতেই নয়, হিন্দিতেও বহু গান গেয়েছেন। তাঁর সমান কদর এপার বাংলা ও ওপার বাংলায়। সলিল চৌধুরির সুরে শিল্পীর কালজয়ী কিছু গান চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর মহালয়া অনুষ্ঠান ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-তে তাঁর কন্ঠের বিখ্যাত গান ‘জাগো দুর্গা’ ভোলার নয়।

    সারা জীবনে ১৫০০-এরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন। তার মধ্যে প্রায় ৮০০ গানই রবীন্দ্রসঙ্গীত। ২০১০ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন। ২০১১ সালে তাঁকে দেওয়া হয় বঙ্গবিভূষণ সম্মান। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা রইল আমাদের তরফেও।

    দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের কিছু কালজয়ী গান শুনুন gaana.com-এ

  16. মাসুদ করিম - ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ (১০:২৭ অপরাহ্ণ)

    প্রয়াত অভিনেতা গৌতম দে

    সোমবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রখ্যাত অভিনেতা গৌতম দে।এদিন সকাল ৭টা নাগাদ শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই বিভিন্ন সিরিয়ালের শ্যুটিং করছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ে বর্তমান।

    শুধুমাত্র বাংলা টেলিভিশনই নয়, তিনি বহুদিন ধরে ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে ছিলেন বাংলা থিয়েটারের সঙ্গেও। সম্প্রতি তাঁকে দেখা যাচ্ছিল জনপ্রিয় ধারাবাহিক রানি রাসমণি এবং হৃদয়হরণ বি এ পাস-এ। তাঁর মৃত্যুতের শোকের ছায়া টলি পাড়ায়।

    জন্মভূমি দিয়েই সিরিয়ালে যাত্রা শুরু গৌতম দে-র। তাঁকে দেখা গিয়েছে বহু জনপ্রিয় সিরিয়ালে। তালিকায় রয়েছে তিথির অতিথি, কুসুম দোলা, ইষ্টি কুটুম-এর মতো বেশ কিছু ধারাবাহিক।

    তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সমবেদনা জানিয়েছেন তাঁর পরিবার পরিজনকে।

  17. মাসুদ করিম - ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ (২:৩৪ অপরাহ্ণ)

    চিরঘুমে ‘কলকাতার যিশু’, প্রয়াত সাহিত্যিক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

    সারা বাংলা যখন বড়দিনের উৎসবে সামিল, তখনই বড় ক্ষতি হয়ে গেল বাংলা সাহিত্যে। চলে গেলেন সাহিত্যিক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। স্বনামধন্য কবির প্রয়াণে যেন বড়দিনের ছন্দ কাটল৷ ‘অমলাকান্তি’-র চলে যাওয়ায় শোকের ছায়া সাহিত্য জগতে।

    দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। সম্প্রতি স্ত্রী’কেও হারান, ফলে একাকীত্বও হয়তো গ্রাস করেছিল তাঁকে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও েসভাবে সাড়া দিচ্ছিলেন না চিকিৎসায়।

    তাঁর কলমে বারবার গর্জে উঠেছে প্রতিবাদ। ‘উলঙ্গ রাজা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৭৪ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও উল্টোরথ,তারাশঙ্কর স্মৃতি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি৷ ২০০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট সম্মানে ভূষিত করে৷

    • মাসুদ করিম - ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ (৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ)

      ‘ছন্দ ও শব্দ ছিল তাঁর ক্রীতদাস’

      শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

      শুধু দেহের দীর্ঘ আয়ুষ্কাল কোন স্রষ্টারই বা কাঙ্ক্ষিত? তিনি চান তাঁর সৃষ্টির দীর্ঘ আয়ু, আর তার ভিতর দিয়েই তিনি অন্য এক বেঁচে থাকাকে খুঁজে নেন। নীরেন্দ্রনাথ চুরানব্বই বছর বয়সে প্রয়াত হওয়ার অব্যবহিত আগেও সৃষ্টিশীল ছিলেন। মাত্রই কিছু দিন আগে তাঁর দীর্ঘ এক অনবদ্য কবিতা প্রকাশ পেয়েছে, যা পাঠ করে বিস্ময় জেগেছিল বয়স এখনও তাঁকে ছুঁতে পারেনি দেখে।

      আমি বরাবর নীরেনদার কবিতার ভক্ত। কোনও দিনই তিনি এলায়িত কাব্যভাষার আমদানি করেননি। ছন্দ ও শব্দ ছিল তাঁর ক্রীতদাস। ছোটদের ছড়ায়, বড়দের কবিতায় তিনি দু’রকম নীরেন্দ্রনাথ। দুই ধারার মাঝখানে তিনি আগল তুলতে পারতেন, যা মাত্র কেউ কেউ পারে। মনে আছে শিবরাম চক্রবর্তীর একটি কার্টুন ছবি— একটা লোকের নাকের ডগায় এক পাখি বসে আছে। এই ছবিকে কেন্দ্র করে কয়েক জনকে ছড়া লিখতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ডাকসাইটেরাই লিখেছিলেন। কিন্তু নীরেনদার ছড়াটা আজও ভুলতে পারি না, ছন্দের অবাক চালের জন্য। ক’টা লাইন এখনও মনে আছে৷ ‘‘রাম কি কিরিয়া বাবা/ এ কৌন চিড়িয়া বাবা/ আজই/ দুখিয়া দিনে কি রেতে/ মুলুকমে চলে যেতে রাজি।’’

      যখন নীরেনদাকে প্রথম দেখি তখনই ভারী সম্ভ্রম হয়েছিল। গড়পড়তা বাঙালির চেয়ে একমাথা উঁচু। ছিপছিপে, ক্ষুরধার মুখশ্রী আর ভাবাশ্রয়ী চোখের জন্য সব সময়েই দৃষ্টিগোচর হতেন। হাঁটতেন দ্রুত, চটি পরা পায়ে। পরনে সর্বদাই ধুতি পাঞ্জাবি। অলস সময় কাটাতে তাঁকে কখনও দেখা যেত না। তখন তিনি ‘আনন্দমেলা’র সম্পাদক। আর কে না জানে, তাঁর সম্পাদনাকালে পত্রিকাটির বড় সুসময় গেছে!

      আমাদের মতো কয়েক জন অর্বাচীন তখন লেখালেখির চেষ্টা করছি। নীরেনদা পরম স্নেহে আমাদের লালন করেছেন। আমি তো কখনও কিশোরদের জন্য লেখার কথা ভাবিইনি। নীরেনদাই এক দিন জোর করে আমাকে দিয়ে লেখালেন। সুনীল আর শক্তিকে আকণ্ঠ ভালবাসতেন। বিস্তর কবি আর সাহিত্যিক তাঁর অজচ্ছল প্রশ্রয় পেয়েছেন। বাংলা বানানের ব্যাপারেও তাঁর জুড়ি ছিল না।

      নীরেনদা এত কর্মব্যস্ততা, বিস্তর ঘোরাঘুরি সামাল দিয়েও কিন্তু খুব পরিবারমুখী মানুষ ছিলেন। তাঁর নানা কথায় সুগভীর বাৎসল্য আর পত্নীপ্রেমের প্রকাশ ঘটত। এই সে দিনও দেখেছি, তাঁর ছেলে-মেয়ে-জামাই ও বৌমা একজোট হয়ে তাঁকে সাহচর্য দিচ্ছেন। অথচ তাঁর দুটি মেয়ে, দুই জামাই, ছেলে-বৌমা সকলেই বিশেষ কৃতবিদ্য এবং খ্যাতনামা। পরিবারকে এ ভাবে এককাট্টা করে রাখাটা এই ভাগাভাগির যুগে এক বিরল দৃষ্টান্ত।

      এক বার ‘দেশ’ পত্রিকার ঘরে বসে কাজ করছি। নীরেনদা সটান এসে আমাকে নড়া ধরে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘‘আয় তো আমার সঙ্গে, দরকার আছে।’’ সবাই অবাক হয়ে দেখছে, নীরেনদা শীর্ষেন্দুকে পাকড়াও করে নিয়ে যাচ্ছেন। নীরেনদা আমাকে সোজা তাঁর ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। বলে গেলেন, ‘‘আনন্দমেলার জন্য একটা গল্প লিখে শেষ করলে ছুটি পাবি।’’ ‘আনন্দমেলা’র ছেলেদের অবশ্য চা আর সিগারেটের কথা বলে গিয়েছিলেন। ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আমি ‘ডবল পশুপতি’ নামে একটা গল্প লিখি। এর মধ্যে যে নিগূঢ় ভালবাসা আর আস্থা আছে, সেটা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কয়েক মাস আগে সাহিত্য আকাদেমি নীরেনদাকে জীবনকৃতি সম্মান দিল। আমি তাঁকে নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলাম, ‘‘নীরেনদাকে আমি বড় ভালবাসি।’’ রাতে নীরেনদা ফোন করে বললেন, ‘‘ওরে আমিও যে তোকে কতটা ভালবাসি, জানিস?’’

      অনেকে হয়তো জানেন না, ‘ফ্যান্টম হু ওয়াকস’ নামে কমিক স্ট্রিপটির বঙ্গানুবাদ করেন নীরেনদা। ফ্যান্টমের নাম তিনিই দেন ‘অরণ্যদেব’। তা এতই জনপ্রিয় যে, মূল নামটি অনেকে ভুলেই গেছেন। অ্যাস্টেরিক্স এবং টিনটিনের অনুবাদ পড়লে মনে হয়, বুঝি বাংলাতেই মূলটি লেখা। এ শুধু ভাষান্তর বা ভাবানুবাদ নয়, বোধহয় মর্মান্তর বললে কাছাকাছি যাওয়া যায়। এক বেলজিয়ান কবির কিছু কবিতা তিনি বাংলায় অনুবাদ করেন। সেই অনুবাদ এত হৃদয়গ্রাহী যে, বেলজিয়াম সরকার তাঁকে গবেষণার জন্য বেলজিয়ামে আমন্ত্রণ জানান। বেশ কিছু দিন ছিলেনও সেখানে। হঠাৎ একদিন পাশের বাড়িতে আগুন লেগে দু’টি অরক্ষিত শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বিপর্যস্ত বোধ করে ফিরে আসেন। কোমলহৃদয়, আদ্যন্ত পরিবারমনস্ক নীরেনদার পক্ষে এই ঘটনার অভিঘাত সহনীয় ছিল না। তাঁকে বলতে শুনেছি, ‘‘আমি কল্পনাপ্রবণ মানুষ নই। চারদিকে যা দেখি আর শুনি তাই নিয়েই আমি লিখি।’’ তাই যদি হবে, তা হলে কি ‘কলকাতার যিশু’ বা ‘অমলকান্তি’ লিখতে পারতেন? আমি জানি ওটা বিনয়মাত্র। যে জিনিসটার বড় অভাব আজ দেখতে পাই চারদিকে।

      অকালপ্রয়াণ তো নয়, তবু সব প্রয়াণকেই আমার অকালপ্রয়াণ বলেই যে কেন মনে হয়। মনে হয় বেশ তো ছিলেন। এক কবিতায় মৃত্যুর উদ্দেশে বলেওছিলেন, আমার যাওয়ার কোনও তাড়া নেই।

      ‘পিতৃস্নেহে আগলে রেখেছিলেন, সেই আশ্রয়টাই আমার চলে গেল’

      নবনীতা দেব সেন

      শরীর-স্বাস্থ্য এমনিতেই আর ভাল যায় না আজকাল। মনটা যে ভাল রাখব, সে উপায়ও আর থাকছে না। মাথার উপর থেকে স্নেহের হাতগুলো একটার পর একটা সরে যাচ্ছে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর চলে যাওয়াটা কী ভাবে মেনে নেব, বুঝতে পারছি না।

      আমার এখন আশি বছর বয়স। এই বয়সে এসেও মাথার উপরে গুরুজনরা থাকবেন, স্নেহের হাত রাখবেন, এটা আশা করাই কঠিন। তবু তো ছিলেন, এই বয়স পর্যন্তও আমার গুরুজন হিসেবে তাঁকে তো পাচ্ছিলাম। আর তো পাব না— কষ্টটা কী রকম, কী ভাবে আর বলি।

      নীরেনদার সঙ্গে আমার পরিচয় যখন হয়েছিল, তখন আমি খুব ছোট, কৈশোরে। আমার বাবা-মায়ের সূত্রে আলাপ। কিন্তু প্রথম আলাপেই তাঁকে খুব ভাল লেগে গিয়েছিল। সেই থেকেই নীরেনদার বৃত্তে পাকাপাকি ভাবে থেকে গিয়েছিলাম। সেই বৃত্তটাই আজ আর রইল না। নীরেনদা আমার বাবার বয়সী ছিলেন না, আমার থেকে ১৪-১৫ বছরের বড় ছিলেন। কিন্তু নীরেনদা আমার বাবার আমলের মানুষ ছিলেন। সত্যি বলতে কি, নীরেনদার কাছ থেকে পিতৃস্নেহটাই পেতাম। তাই যখন শুনলাম, নীরেনদা আর নেই, আমি নিতে পারিনি। নীরেনদার যে অনেক বয়স হয়েছে, শরীর যে ভাল যাচ্ছে না, সে সবই তো জানতাম। কিন্তু স্নেহের আশ্রয়টার চলে যাওয়া মানতে পারছি না কিছুতেই।

      নিজের অসুস্থতার কারণে শেষ কিছু দিন নীরেনদার কাছে আমি যেতে পারিনি। কিন্তু ফোনে কথা হত। নীরেনদার সাম্প্রতিক লেখালিখিও সব পড়তাম। ক’সপ্তাহ আগেই ওঁর একটা লেখা পড়লাম একটা লিটল ম্যাগাজিনে। সে লেখায় কোথাও বয়সের ছাপ নেই। আসলে উনি নিজেই নিজের বয়স হতে দেননি।

      দেশ পত্রিকার জন্য প্রথম বার যখন আমার লেখা নির্বাচিত হল, তখন আমার কাছে যে চিঠিটা এসেছিল, তাতে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর স্বাক্ষর। উনি চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, আমার লেখা দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হবে। সে দিনের অনুভূতি তো আজও টাটকা। আমাকে ছোটদের জন্য লেখার উৎসাহ নীরেনদাই জুগিয়েছিলেন। এই বয়সে এসেও আমার লেখা কোথাও বেরোলেই নীরেনদা পড়তেন। পড়ে তাঁর মতামত জানাতেন, বলতেন ভাল লেগেছে, উৎসাহ দিতেন। যে প্রশ্রয় নীরেনদার কাছ থেকে সারা জীবন পেয়েছি, তার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই।

      আমার জীবনের একটা পর্বে খুব মন খারাপের মধ্যে পড়েছিলাম। অনেক দিন আগের কথা। পাশে বসে নীরেনদা বলেছিলেন, ‘সত্যেরে লও সহজে’। পুরো কবিতাটা শুনিয়েছিলেন সে দিন। এ ভাবেই ভাল সময়, খারাপ সময়, সব সময়েই নীরেনদা আগলে আগলে রেখেছিলেন যেন। এখন আর কে আগলাবেন!

      চিরদিন তো কেউই থাকবেন না। যেতে তো সকলকেই হবে। তবু মন মানে না। আমার জীবনের এত কিছু নীরেনদার সঙ্গে জড়িয়ে যে, এই সত্যটাকে সহজে নেওয়া খুব কঠিন। তবে কবি নীরেন্দনাথ চক্রবর্তীর তো আর মৃত্যু নেই। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আমাদের কাছে চিরকালই থাকবেন, তাঁকে নিয়েই আমরা থাকব।

    • মাসুদ করিম - ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ (৪:২৮ অপরাহ্ণ)

      নীরেন্দ্রনাথের প্রয়াণে

      কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পরিণত বয়সেই (১৯২৪—২০১৮) চলে গেলেন। রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ যুগ-উত্তর সময়ের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় কবি ছিলেন তিনি। বাংলা কবিতা যে নতুন আদল, প্রকরণ ও আধুনিকতা নিয়ে হিরের দ্যুতির মতো ঝলমল ও ছন্দের নবীন নিরীক্ষায় সিদ্ধি অর্জন করেছে, তাতে তাঁর কৃতিত্ব কম নয়। ছন্দ ছিল তাঁর কবিতার প্রাণ। তিনি কতভাবে যে ছন্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন তা বলে শেষ করা যায় না। যেকোনো নবীন কবির জন্য তাঁর রচিত কবিতার ক্লাশ গ্রন্থটি হয়ে উঠেছিল অবশ্যপাঠ্য। ছন্দে তিনি যত্ন ও মনোযোগের জন্য বহু তরুণকে দীপিত করেছেন। তিরিশ, চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশক থেকে বাংলা কবিতা নানাজনের প্রতিভার স্পর্শে শিখরস্পর্শী, লোকপ্রিয় ও জীবনের নানা দিক উন্মোচনে আশ্চর্য দক্ষতা অর্জন করলেও এই কবির এ ক্ষেত্রে ভিন্ন দায় বহন করেছিল তাঁর সাহিত্যবোধ। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কথায়, ‘কবির কাজ তাঁর নিজস্ব হৃদয়কে উন্মোচিত করে দেখানো। কিন্তু তার মানে কি এই যে শুধু ব্যক্তিগত কিছু দুঃখ-সুখের কথাই তিনি বলবেন? আমার তা মনে হয় না।…সন্ন্যাসী তিনি নন। তিনিও সামাজিক মানুষই। উপরন্তু, ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক তাঁকেও একটি রাজনৈতিক বিন্যাসের মধ্যেই নিশ্বাস নিতে হয়। ফলত, তাঁর চতুষ্পার্শ্বের সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলি, প্রায় অনিবার্যভাবেই তাঁর ওপর ছায়া ফেলতে থাকে।’

      এই দায়কে তিনি কোনোদিন উপেক্ষা করেননি। সরল, নিরাভরণ ছিল তাঁর কবিতা। কোনো রহস্য ও দুর্বোধ্যতার আড়াল ছিল না তাঁর সৃজনে। তাঁর কথায়, কবিতায় ‘গদ্যই আমার মাতৃভাষা’। এই প্রকরণকেই নিজস্ব এক নির্মিতির সৌজন্যে প্রসারিত করেছেন। টানটান গদ্যে বলতে চেয়েছেন তাঁর অন্তরের বয়ান। ছন্দবাহিত এই বয়ান হয়ে উঠেছে ভিন্ন স্বর ও ভিন্নমুখীন। কবিতার গঠন কারুকার্যে তাঁর কবিতা স্পন্দ নিজস্ব চরিত্র নির্মাণ করেছে।

      তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ নীলনির্জন সত্যজিৎ রায়ের প্রচ্ছদে যখন বেরোল ১৩৬১ সালে, অনেক তরুণ পাঠক এই কাব্যগ্রন্থের হৃদয়গ্রাহী আবেগে উদ্দীপিত বোধ করেছেন। কোরক সাহিত্যপত্র ১৯৯৮ সালে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে নিয়ে একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত করেছিল। তাতে অনেকের মূল্যায়ন ও স্মৃতিচারণে এ প্রসঙ্গটি খুবই প্রণিধানযোগ্য হয়ে উঠেছে।

      এরপর ছয় বছরের ব্যবধানে প্রকাশিত হয়েছিল দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ অন্ধকার বারান্দা। পঞ্চম গ্রন্থ কলকাতার যিশু ও ষষ্ঠ গ্রন্থ উলঙ্গ রাজা প্রকাশের পর তাঁর কাব্যকীর্তি নবীন মাত্রা অর্জন করেছিল। সরলতা, অভিব্যক্তি ও কাব্যিক গুণে তাঁর কবিতা হয়ে উঠেছিল বাংলা কবিতায় বিশিষ্ট।

      তাঁর জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা অঞ্চলে। ঠাকুরদার কাছে হাতেখড়ি হয়েছিল শিশুশিক্ষায়। ঠাকুরদার কাছেই অল্পবয়সে জীবনের পাঠ নিয়েছেন। এই অঞ্চলের নিসর্গ বাল্যকালেই তাঁকে মুগ্ধ করছিল। ঠাকুরদার স্নেহছায়ায় মানুষ হয়েছেন তিনি। ভোলেননি ঠাকুরদাকে।

      জন্মভিটে, পরিপার্শ্বের উদার প্রকৃতি পরিণত বয়সেও তাঁকে স্মৃতিকাতর করে তুলত। তাঁকে যখন অল্পবয়সে কলকাতায় তাঁর ভাষায় পাঠানো হলো স্কুলে পড়াশোনার জন্য, একদিনের জন্য ফরিদপুরের চান্দ্রা তাঁর হৃদয় থেকে ছেড়ে যায়নি।

      ফরিদপুরের চান্দ্রা তাঁর মানস গঠনে প্রবলভাবে ছাপ ফেলে। পরিণত বয়সে যখন লিখছেন আত্মজৈবনিক নানা রচনা, তাতে এই অঞ্চল এবং ছেলেবেলার স্মৃতি বিশ্বস্ততার সঙ্গে উঠে এসেছিল। বাবার কাছে পেয়েছিলেন সাহিত্যের রুচি। আত্মজীবনীতে তাঁর সাহিত্যমানস গড়ে ওঠার পেছনে বাবার অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন। অধ্যাপক বাবা জিতেন্দ্রনাথ শেকস্‌পিয়র পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাষাতত্ত্বও পড়াতেন। শেকস্‌পিয়র-বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। তিনি শিক্ষকতা করতেন। শিক্ষকতার এই ধারাকেই বহন করে নীরেন্দ্রনাথের পুত্র ও কন্যারা আজ কলকাতায় শিক্ষা পরিমণ্ডলে খ্যাতিমান। এক কন্যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

      নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ভাষা, বানান ও ব্যাকরণ নিয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে এ ক্ষেত্রে তিনি বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন।

      বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে যখন আমাদের অনেক তরুণের কাব্যরুচি একটু একটু করে নানা আলোড়ন ও অভিজ্ঞতার মধ্যে গড়ে উঠছে, সেই সময়ে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন আমাদের কাছে সমীহ-জাগানিয়া এক কবি। নানা বাধা পেরিয়ে যখন তাঁর বই আসত নিউমার্কেট এবং স্টেডিয়ামের বইয়ের দোকানে, আমাদের মনের ভেতরে আলো সঞ্চারিত করত তাঁর বই। তাঁর কবিতার ঘোর আমাদের ভিন্ন এক জগৎসংসারে নিয়ে গিয়েছিল। ‘অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল’, ‘শীতাংশু’ ও ‘কলকাতার যিশু’র লালবাতি আমাদের মানস-চৈতন্যের দিগন্তকে প্রসারিত করেছিল। অমলকান্তি তাঁর স্কুলজীবনের বন্ধু ছিল। এ কবিতাটি কীভাবে রচিত হয়েছিল নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তা সবিস্তারে বর্ণনা করেছিলেন। অজিত দত্তের ‘মালতী তোমার মন’, অমিয় চক্রবর্তীর ‘কেঁদেও পাবে না বৃষ্টির অজস্র জলধারে’ ও জগন্নাথ চক্রবর্তীর ‘প্রেম অপ্রেম সমৃদ্ধ ইজেল ও বুনো পারাবাত’ আমাদের জীবনের বিষাদ ও হর্ষে অঙ্গীভূত হয়ে গিয়েছিল। জীবন ও মননধর্মে কবিতা কী করতে পারে—এ জিজ্ঞাসায় আলোড়িত হয়ে আমরা বলতেই পারি, সুন্দরের অভিপ্রায়ে এ গভীর ছাপ রেখে যায়। কবিতা কখনো-সখনো হৃদয় যন্ত্রণার আলোড়নে জীবনকে দেখার ধরনে কিংবা প্রেয়সীর সুষমাকে মুগ্ধ বিস্ময়ে অবলোকন শেখায়।

      নীরবিন্দু আত্মজীবনী, সমকালীন সমাজজীবনের জলছবিও। এই গ্রন্থে আছে পারিবারিক সমাজজীবন ও কলকাতা বসবাসের অভিজ্ঞতা। তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের উতলা করে এবং পাঠকও স্মৃতিকাতরতায় উন্মনা হয়। এ ছাড়া সত্যযুগ সংবাদপত্রের বার্তা বিভাগে কাজ এবং পরবর্তীকালে সংবাদপত্রে সম্পাদনাকর্মে দীর্ঘযাত্রার বিবরণ আছে নীরবিন্দুতে।

      আমরা অবশ্য জানি যে কত আন্তরিকতায় এবং পরম যত্নে তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দমেলা। বহু প্রতিষ্ঠিত লেখককে প্রেরণা সঞ্চার করেছিলেন শিশু ও কিশোরদের জন্য লিখতে।

      ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বহু সংগীতশিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী যখন উদ্বাস্তু ও নিরাশ্রিত জীবনযাপন করছেন, তখন কলকাতার ১৪৪ লেনিন সরণিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সহায়ক সমিতি। এই সমিতির তিনজন সম্পাদকের মধ্যে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন অন্যতম সম্পাদক, সভাপতি ছিলেন চিকিৎসক মনি বিশ্বাস।

      মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সত্যিকার অর্থেই তিনি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হয়েছিলেন। বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কবিতায় সে সময়ের মর্মযাতনা প্রতিফলিত হলেও সর্বাধিক আলোচিত ও পঠিত ছিল অবরুদ্ধ দেশে শামসুর রাহমানকে নিয়ে তাঁর উৎকণ্ঠাবিষয়ক একটি কবিতা। তাঁর ভাষায়, ‘সত্যিই সে এক দুঃসময়। বাঙালি জীবনে এত বড় দুঃসময় আগে কখনো আসেনি। ভিটেমাটি ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে এপারে চলে এসেছিল। আমাদের প্রতিবেশী দেশের মানুষেরা যখন বিপন্ন, তখন আমরা কি আর চুপ করে বসে থাকতে পারি? তখনই আমরা তৈরি করেছিলাম বাংলাদেশ শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী সমিতি।

      সেখানে বাংলাদেশ থেকে আগত লেখক-শিল্পীদের একত্র করে নানারকম অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও তালিম দেওয়ার কাজ হতো। অনুষ্ঠান করে শুধু অর্থসংগ্রহ করা নয়, মানুষকে এই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবহিত করাও হতো। যাঁরা কলকাতায় এসেছিলেন, তাঁদের জন্য সাধ্যমতো থাকার ব্যবস্থাও আমরা করেছিলাম। অনেকেরই ছোটখাটো কর্মসংস্থানের কাজ আমরা করতে পেরেছিলাম। মোটকথা, বিপদের দিনে বিপন্ন মানুষের পাশে যেমন সম্পন্ন মানুষেরা এসে দাঁড়ায়, আমরাও তেমনি যতটা পেরেছি করেছি।

      যুদ্ধের শেষদিকে আমাদের জন্য বাংলাদেশের সাতক্ষীরা যাবার ব্যবস্থা হয়। আমি গিয়েছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গাড়িতে। ওই গাড়িতে আরো ছিলেন তারাপদ রায় ও সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। আমরা সবাই মিলে প্রথমে বসিরহাটে যাই। বসিরহাটের ভোমরায় গাড়ি রেখে আমরা নৌকাযোগে ইছামতী নদী পার হয়ে সাতক্ষীরায় যাই। সেখানে তখন লোকে লোকারণ্য। সে ছিল ’৭১-এর ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধের একদিন। ওখানেই প্রথম বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ তোলা হয়। গাওয়া হয় ও দেশের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’

      কলকাতার বারতা পাবলিকেশন্স যখন কালি ও কলম প্রকাশ করেছিল ২০১৫ সালে, তিনি হন এই পত্রিকার সম্পাদক। তখন থেকে বাংলাদেশের লেখক ও কবিদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও এ দেশের লেখালেখি সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তাঁর সঙ্গে সে সময় থেকে এক অচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়ে পড়ি। তাঁকে হারিয়ে কত স্মৃতিই না আজ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

      নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার
      ‘যদ্দিন লিখতে পারি, তদ্দিনই যেন বাঁচি’

      প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়ে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ২০১৪ সালে বলেছিলেন তাঁর জীবনের নানা অধ্যায় সম্পর্কে। সেই অন্তরঙ্গ আলাপের বড় অংশ ইতিমধ্যেই ছাপা হয়েছে। এখানে পত্রস্থ হলো ওই কথোপকথনের সর্বশেষ অংশ। সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আলতাফ শাহনেওয়াজ

      আলতাফ শাহনেওয়াজ: কথা বলতে চাই আপনার খুব জনপ্রিয় কবিতা ‘অমলকান্তি’ নিয়ে। ‘অমলকান্তি আমার বন্ধু…সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।’ অমলকান্তি কি আদতেই রোদ্দুর হতে চেয়েছিল?

      নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী: এই কবিতায় যে ঘটনাগুলোর উল্লেখ আছে, এর সবই আমার জীবন থেকে নেওয়া, এক বিন্দুও মিথ্যা নয়। অমলকান্তি আমার বন্ধু। নামটাও পাল্টাইনি। অমলকান্তিই তার নাম। গরিব ঘরের ছেলে ছিল। থাকত বস্তিতে। তখন এইট কি নাইনে পড়ি। একদিন আমরা খেলাধুলা শেষে কলকাতার গড়ের ময়দানে বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম, কে কী হবে? কেউ বলল, ডাক্তার; কেউ উকিল; কেউবা বলল, মাস্টার হবে। অমলকান্তিকে বললাম, তুই কী হবি? অমলকান্তি বলল, আমি রোদ্দুর হব। ওটা মাথায় ছিল। পরে লিখেছি কবিতাটা। আমার দ্বিতীয় কবিতার বইয়ে আছে। অমলকান্তি কেন রোদ্দুর হতে চায়, জানো? কারণ, একটা ঘিঞ্জি বস্তিবাড়ির মধ্যে সে রোদ্দুর পায় না। ফলে সে রোদ্দুর চাইতে নিজেই রোদ্দুর হয়ে যেতে চেয়েছে। মোদ্দা কথা হলো, অমলকান্তির রোদ্দুর হওয়ার দরকার ছিল।

      আলতাফ: কবিতার সঙ্গে কল্পনার যোগ সহজাত। কিন্তু প্রায়ই আপনি বলেন যে কল্পনা করে আপনি লিখতে পারেন না। তাহলে কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় আপনার মধ্যে জন্ম নেয় কবিতা?

      নীরেন্দ্রনাথ: একটু আগে আমাকে এই প্রশ্নটা করা হয়েছিল। আমি হাটে-মাঠে ঘুরে বেড়ানো লোক। লোকের মুখের কথা শুনি। লোক যেভাবে কথা বলে সেটাই আমার কবিতার উপকরণ।

      আলতাফ: নিখুঁত ছন্দের ভেতর দিয়ে গদ্যের একটা চলন পাওয়া যায় আপনার কবিতায়, এবং সেটি প্রথম বই নীলনির্জন থেকেই। ছন্দময় কাব্যভাষার মধ্যে গদ্যকে প্রতিস্থাপন করা—এই কাজটি কি সচেতনভাবে করেছেন আপনি?

      নীরেন্দ্রনাথ: না, এটা সচেতন প্রয়াস নয়, এমনভাবে আমার হয়ে গেছে। খুব খোলাখুলি একটা কথা বলি। যাকে আমরা ছন্দ বলি, সেই ছন্দ সবকিছুতেই আছে। মেয়েটি বসে আছে, এতে একটি ছন্দ আছে, পাশের বাড়ির বউটি স্নান করে এসে ভেজা কাপড় নেড়ে দিচ্ছে, তারও একটা ছন্দ আছে। যা কিছু আমরা বলি না কেন—সবই ছন্দের মাধ্যমে হয়। কিন্তু যেটা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ছন্দ—যে ছন্দে রামায়ণ, মহাভারত লেখা হয়েছে—আমাদের গদ্য ভাষার ছন্দ। মীর মশাররফ হোসেনের গদ্য ভাষাতে একটা ছন্দ আছে। অসম্ভব ভালো গদ্য লিখেছেন তিনি। এমন গদ্য তিনি লিখেছেন যে মনে হয় এখানে এই শব্দটা তুলে অন্য শব্দ বসাবার কোনো উপায় নেই। তাঁর গদ্যের মধ্যে কোনো শব্দকেই নতমুখ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখিনি। প্রতিটি শব্দই অনিবার্য। কবিতার মধ্যেও তো সেই ভাষাটি রয়েছে।

      গদ্য ভাষার নিজস্ব যেটা ছন্দ, সেই ছন্দ যদি কবিতায় চলে আসে ক্ষতি কী। প্রসঙ্গত, দুটি ভাষা পরস্পরের কাছ থেকে শব্দ ধার করে। গদ্য আর পদ্য পরস্পরের কাছ থেকে যদ্দিন না নিতে শিখছে, তদ্দিন গদ্যেরও মুক্তি নেই, পদ্যেরও মুক্তি নেই।

      আলতাফ: কবিতার সঙ্গে গদ্যের সম্পর্কটি কেমন হওয়া উচিত?

      নীরেন্দ্রনাথ: ওই যে বললাম, দুজনেরই দুজনের কাছ থেকে নেবার রয়েছে। তুমি লক্ষ করে দেখো, কারা ভালো গদ্য লেখেন, প্রধানত কবিরাই কিন্তু ভালো গদ্য লেখেন। একটা উদাহরণ দিই, টিএস এলিয়ট বড় কবি, খুব বড় গদ্যলেখকও তিনি। একটু আগে যে কথটি বলেছি, ভাষার যেমন দরকার আছে অন্য ভাষা থেকে নেবার, তেমনি পদ্যেরও দরকার আছে গদ্যের কাছ থেকে নেবার।

      আলতাফ:দীর্ঘদিন আপনি যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সঙ্গে। আনন্দবাজার দিয়ে শুরু এবং এখানেই কাটিয়েছেন গোটা সাংবাদিকতা জীবন। সাংবাদিকতায় এসেছিলেন কেন?

      নীরেন্দ্রনাথ: কিছু পয়সা রোজগার করবার জন্য। যখনকার কথা বলছি, সে সময় আমার নিজের হাতখরচ দরকার। তখন আমি কলেজে পড়ি। আমাকে কখনোই মাইনাকড়ি দিয়ে পড়তে হয়নি। তবু হাতখরচ বলে একটা কথা আছে তো। আরে, সিগারেট খাব, তা-ও মায়ের কাছে পয়সা চাইতে হয়। বাজার করতে যাই, সেখান থেকে দুটো পয়সা মারি। তাতেও হয় না। চেষ্টা করলাম দুটো পয়সা রোজগারের। গৃহশিক্ষকতা শুরু করলাম। একটা ছেলেকে যুক্তিবিদ্যা পড়াতাম। এত অবিবেচক ছেলে আমি জীবনে আর দেখিনি। আমি তাকে যুক্তিবিদ্যা পড়াবার ভার নিলাম, আর সেই বজ্জাত সব বিষয়ে পাস করে কিনা যুক্তিবিদ্যাতেই ফেল করল! তখনই বুঝে গেলাম, এ রাস্তা আমার নয়। আমাদের বাড়িতে সবাই পড়াতেন, সবাই ছিলেন অধ্যাপক। সবাই পড়ান, আর একমাত্র আমিই পড়ি। যা হোক, তখনই আমি বুঝে গেলাম শিক্ষক হিসেবে আমার রেকর্ড ভালো না। ফলে অন্য লাইনে গেলাম, মানে সংবাদপত্রে।

      আলতাফ: গত শতকের পঞ্চাশের দশকে, যখন আপনি সাংবাদিক হিসেবে নাম লেখালেন, সংবাদপত্রে সেই সময়ের পরিবেশ কেমন ছিল?

      নীরেন্দ্রনাথ: একে অপরের সঙ্গে খুব সদ্ভাব ছিল। আমি যখন আনন্দবাজার–এ যোগ দিই তখন সম্পাদক ছিলেন সন্তোষ কুমার ঘোষ। দু-এক দিন কাজ করার পর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন লাগছে, পরিবেশটা কী রকম। আমি বললাম, ভালো লাগছে। তখন তো উত্তর আফ্রিকায় যুদ্ধ চলছে। খবরের কাগজে সে সময় এখনকার মতো পয়সাকড়ি ছিল না। প্রতিমাসে ৩০ টাকা দিত। কিন্তু তবু সংবাদপত্রজগৎ আমার সেই যে ভালো লাগল, এককথায় চমকপ্রদ পরিবেশ ছিল, আন্তরিকতা ছিল। আর পরে তো সংবাদপত্রই হয়ে গেল আমার ভবিতব্য।

      আলতাফ:কবি ও সাংবাদিক—দুই পরিচয়েই আপনি দীর্ঘদিন সক্রিয়। সাহিত্য ও সাংবাদিকতা—এই দুইয়ের মধ্যে কি কোনো বিভেদ আছে? কখনো কি আপনার এমন মনে হয়েছে যে সাংবাদিকতায় না থাকলে আমি আরও বেশি লিখতে পারতাম?

      নীরেন্দ্রনাথ: তিরিশের কবি বিষ্ণু দে, তাঁর একটা কাব্যগ্রন্থের নাম সংবাদ মূলত কাব্য। তাহলে এই বিরোধের কথাটা কোত্থেকে এল? আর লেখার কথা বলছ, আমার যা লেখার তা আমি লিখেছি—বেশি-কম নিয়ে ভাবিনি।

      আলতাফ: জন্মেছিলেন বাংলাদেশের ফরিদপুরের চান্দ্রা গ্রামে। তারপর পাড়ি দিলেন দীর্ঘ জীবন। এখন আপনার প্রার্থনা কী?

      নীরেন্দ্রনাথ: প্রার্থনা এই যে যদ্দিন লিখতে পারি, তদ্দিনই যেন বাঁচি। লিখতে না পারলে বেঁচে থাকা অর্থহীন। ঈশ্বরকে আমরা ‘দত্তাপহারী’ নামে ডাকি। এই শব্দের অর্থ হলো, তিনি যা দেন তা আবার কেড়ে নেন। দেখার ও শোনার ক্ষমতা, ঘ্রাণের ক্ষমতা, কাউকে ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি—এগুলো আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাই। একসময় তিনি আমাদের কাছ থেকে এসব ফিরিয়েও নেন। আমি এখন চোখে কম দেখি, কানে কম শুনি। মানে ঈশ্বর ফিরিয়ে নিচ্ছেন এখন। লেখার ক্ষমতাটা এখনো তিনি ফিরিয়ে নেননি। এটা যদ্দিন ফিরিয়ে না নিচ্ছেন, তদ্দিন যেন বাঁচি। তারপর আর বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই।

    • মাসুদ করিম - ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ (৪:৩০ অপরাহ্ণ)

      নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী: বাংলাদেশের কবিতা

      সীমান্তের ওইদিকে আমার জন্মভূমি, এইদিকে আমার স্বদেশ। ভেবেছিলুম কত অসংখ্য মানুষ তো তাদের জন্মভূমিকে একটু একটু করে ভুলে যায়, আমিও ভুলতে পারব। কিন্তু তা আর হলো কই! স্বদেশকে আমি ষোলোআনা আনুগত্য ও ভালোবাসা দিয়েছি, তার গৌরবকে আমারই আনন্দ এবং গ্লানিকে আমারই যন্ত্রণা বলে চিনেছি; তবু স্বীকার করতে কুণ্ঠা নেই, পুব বাংলার কথা আজও নিয়ত আমার মনে পড়ে, আমার রক্ত থেকে তার স্মৃতিকে এই এতগুলো বছরেও আমি মুছে ফেলতে পারিনি। পুব বাংলাকে আমি ভুলে যেতে, ভুলে থাকতে চেয়েছিলুম। কিন্তু ভোলা গেল না। তার শ্যামল মুখশ্রী আমার চেতনায় আজও স্পষ্ট হয়ে জ্বলছে। আজও রাত ১২টায় যখন আলো নিভিয়ে শুতে যাই তখন ফরিদপুর জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম তার সূর্যোদয়ের নম্র আলো ও সূর্যাস্তের কোমল অন্ধকার নিয়ে আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দৃশ্যের এক দীর্ঘ মিছিল, যেন-বা চলচ্ছবির মতো আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যায়। আমি দেখতে পাই সেই দোতলা কাঠের বাড়িটিকে, যার উত্তরে জনবসতি, পুবে ও পশ্চিমে পুকুর, দক্ষিণে ধু-ধু ধানক্ষেত। দেখতে পাই ভেতরের উঠোনের এক পাশে কার্তিক পুজোর দিনটিকে এগিয়ে আনবার জন্য ঠাকুমার দেয়া ‘হালা’র ভেতর থেকে চক্রাকারে ধানের চারা মাথা তুলছে। দেখতে পাই বাইরের উঠোনে তেহারদ্দি তার আলু-বেগুন-বরবটির ঝাঁকা নামিয়ে রাখল। দেখতে পাই উনুন থেকে ফেনাভাত নামিয়ে বড় কাকিমা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। দেখতে পাই পুকুরে জাল পড়েছে, চিনিটোরা আমগাছের বেয়াড়া ডালটা ঢেউ তোলা টিনের চালে গা ঘষছে, কামলারা বসে ছ্যাচা বাঁশের বেড়া বাঁধছে, টিউবওয়েল থেকে জল নিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমপাড়ার মেয়ে-বউরা। পাঁচ-ছয় বছর বয়সের সেই ম্যালেরিয়ায় ভোগা রোগা শিশুটিকেও আমি দেখতে পাই, রাত ফুরোনোর আগেই যার ঘুম ভেঙেছিল; শেষ রাত্তিরের অন্ধকারে যে ঠাকুমার পাশে শুয়ে শুনেছিল— ‘যখন কৃষ্ণ জন্ম নিল দৈবকীর উদরে/ স্বর্গ হতে দেবগণ পুষ্পবৃষ্টি করে।’ এই মাত্র সে পুকুর থেকে মুখ ধুয়ে ফিরল; একখানা প্রমাণ-ধুতিকে চার ভাঁজ করে গলার পেছনে গিঁট লাগানো, হাতে খেজুররসের মস্ত গেলাস, ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোন পেরিয়ে সে এখন খড়ের গাদার সিংহাসনের দিকে চলেছে। ওই সিংহাসনের উপরে বসে খেজুররসে চুমুক দিতে দিতে সে রোদ পোহাবে। শীতের সকাল। শিশির এখনো শুকিয়ে যায়নি। টিনের চাল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় হিম ঝরছে উঠোনের উপরে। মাঠ থেকে হালকা ধোঁয়ার মতো কুয়াশা উঠছে। এই সবই আমি দেখতে পাই। ৪০ বছর দূর থেকে দেখা। তবু অতি দীর্ঘ এ দূরত্ব সত্ত্বেও, এমনকি সেই শিশুটিকেও আমি চিনতে পারি। কিছুই আমি ভুলিনি। কিছুই না। গোবিন্দপুর স্টেশন থেকে যে পথটা হঠাৎ ঢালু হয়ে খালের দিকে নেমে গিয়েছিল, সেই পথটা আজও আমার চোখের সামনে ভাসছে। খাল থেকে নৌকো কেরায়া করলুম, কাকার সঙ্গে গঞ্জ থেকে চিঁড়ে, মুড়ি, রসগোল্লা কিনে আনলুম, চলন্ত নৌকোর পাটাতনে উনুন সাজিয়ে মা খুব চটপট ভাত আর রায়েক মাছের ঝোল রাঁধলেন, মাঝিরা দাঁড় টানছে, দুদিকের জল মোচড় খেয়ে পেছনে চলে যাচ্ছে, ভ্যাসাল থেকে ছোঁ মেরে একটা মাছ তুলে নেবে— এ আশায় মাথার উপরে চক্রাকারে ঘুরছে একটা বাদামি রঙের চিল, খাল ছাড়িয়ে তিন মাল্লাই নৌকো গিয়ে ধানক্ষেতের দারার মধ্যে ঢুকল, অল্প জল, এখানে দাঁড় চলবে না, পেছনে উঁচু গলুইয়ে হাল ধরে বসে আছে বুড়ো মাঝি, সামনে দাঁড়িয়ে দুই জোয়ানে লগি ঠেলছে, ছইয়ের ফুটো দিয়ে হাত বাড়িয়ে জল ছুঁতে গিয়েছিলুম, ধানের ধারালো পাতায় আমার আঙুল ছড়ে গেল, কুমার নদে পৌঁছুতে পৌঁছুতে সন্ধে, খাল-বিলের সীমানা ছাড়িয়ে নদীতে পড়বামাত্র স্রোতের টানে নৌকো হঠাৎ ঘুরে যায়, নৌকোর পেটে ঢেউয়ের ধাক্কা লেগে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ওঠে, সেই শব্দটাই-বা এখনো আমি ভুলতে পারলুম কই? মাঝি কখন ছইয়ের সামনে ঝোলানো লণ্ঠনটা জ্বেলে দিয়েছিল, জানি না; আকাশ আর নদী কখন কালো হয়ে গিয়েছিল, জানি না; নৌকোর দুলুনিতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলুম, মাঝরাত্তিরে দিদি হঠাৎ ঠ্যালা মেরে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিল। ‘ওঠ খোকা, আমরা বাড়ি পৌঁছে গেছি।’ কলকাতায় আমাদের বাসা ছিল, পুব বাংলায় আমাদের বাড়ি। সেই বাড়ির কথা যখন মনে পড়ে তখন খাল-বিল, নদী-নালা, শর্ষেক্ষেত, হলুদ ফুল, বাঁশের সাঁকো, কাঠের ‘থল’, গঞ্জ, খামার, ধানের ‘মলন’, জলে ডোবানো পাটের গন্ধ, হাটের পাশে ডিঙির সারি, হিজলের ছায়া, বাঁশবনের মটমট শব্দ, ভোরের আলো আর সন্ধ্যার ম্লানতা আমাকে নিমেষে অধিকার করে নেয়। স্মৃতি বড় বেদনাবহ। কিন্তু আমাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই, ‘কে হায় হূদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে।’ আমি বাসি। কেননা আমি জেনে গেছি যে, স্মৃতিচারণের এ বেদনাও বড় আনন্দময়। আজ তাকে নানা কারণে ভালোবাসি; কিন্তু প্রথম যৌবনে যে জীবনানন্দকে ভালোবেসেছিলুম, তার একটা মস্ত কারণ নিশ্চয় এই যে, পুব বাংলার এই শান্ত, শ্যামল হয়তোবা ঈষৎ করুণ মুখশ্রী তার ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’র নানা কবিতায় বড় সুন্দর ফুটেছে। মনে পড়ে ‘মেঠো চাঁদ রয়েছে তাকায়ে। আমার মুখের দিকে, ডাইনে আর বাঁয়ে/ পোড়ো জমি খড়-নাড়া-মাঠের ফাটল,/ শিশিরের জল’ কিংবা ‘অঘ্রাণের নদীটির শ্বাসে/ হিম হয়ে আসে/ বাঁশপাতা— মরা ঘাস— আকাশের তারা’ কিংবা ‘অন্ধকারে আকন্দ ধুন্দুল/ জোনাকিতে ভরে গেছে; যে-মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে/ চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ…’ ইত্যাদি লাইন পড়তে পড়তে চোখ জ্বালা করত, বুকের মধ্যে ধক করে উঠত, গলার মধ্যে কিছু একটা আটকে যেত। মনে হতো যেন মন্ত্রবলে তিনি আমাকে সেই হারানো জগতের মধ্যে টেনে নিয়েছেন। এই চাঁদ, এই খড়-নাড়া মাঠের ফাটল, এই হিম হয়ে আসা বাঁশপাতা আর মরা ঘাস, এগুলোর কিছুই তো আমার অচেনা নয়, এসবই তো আমার জন্মভূমির, আমার পুরনো পরিচিত পৃথিবীর অনিবার্য অনুষঙ্গ, কিন্তু ঠিক এমন করে যে এদের ছবিকে কেউ ফোটাতে পারেন, তা আমি কখনো ভাবিনি।

      ছবি, ছবি আর ছবি। আজ আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমরা যারা আর কখনো পুব বাংলায় ফিরে যাব না, এ ছবিগুলোই এখন তাদের একমাত্র সম্বল। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, এখন যারা পুব বাংলার প্রতিষ্ঠিত কবি, তাদের রচনার দিকেও মূলত এই একই প্রত্যাশায়— ছবির প্রত্যাশায়— প্রথম আমি চোখ ফিরিয়েছিলুম।

      প্রত্যাশা ব্যর্থ হয়নি। আল মাহমুদের কবিতায় ‘কিছুই থাকে না কেন? করোগেট ছন্ কিংবা মাটির দেওয়াল/ গাঁয়ের অক্ষয় বট উপড়ে যায় চাটগাঁর দারুণ তুফানে…’ কিংবা ‘কুয়াশায় ঢাকা পথ, ভোরের আজান আর নাড়ার দহন/ পিঠার পেটের ভাগে ফুলে ওঠা তিলের সৌরভ,/ মাছের আঁশটে গন্ধ, উঠোনে ছড়ানো জাল আর/ বাঁশঝাড়ে ঘাসে ঢাকা দাদার কবর’ ইত্যাদি লাইন যখন পড়েছি কিংবা শামসুর রাহমানকে যখন বলতে শুনেছি, ‘কাঁঠাল গাছের ডালে হলদে পাখি লেজটি নাচায়/ ঘন ঘন, বেলা বাড়ে…/ অনেক পেছনে রইল পড়ে/ লাউয়ের সবুজ মাচা, নদী, মাঠ,/ কলাইয়ের খেত আর পুকুরের ঘাট’ কিংবা হাসান হাফিজুর রহমান যখন গাঢ় কণ্ঠে জানিয়েছেন, ‘যাবে নদী দূরে দূরে সমন্বিত/ ভাঙা মাস্তুলের নৌকা ঠোঁটে নিয়ে’ কিংবা সৈয়দ আলি আহসান যখন প্রায় প্রার্থনার মতো অথবা— বলতে পারি— শ্রদ্ধাবিনম্র প্রণয় সম্ভাষণের মতো উচ্চারণ করেছেন, ‘আমার পৃথিবীর বৃষ্টি— মাটির/ গন্ধ, ধানখেত ভেসে যাওয়া/ আমগাছের ডাল ভেঙে পড়া/ হঠাৎ গরুর ডাক, ভিজে যাওয়া/ পাখির ডানা ঝাপটানো/ আবার পুকুরে নদীতে/ ডোবায় লাবণ্যের সাড়া/ আমার পুব বাংলার অনেক রাত্রে/ গাছের পাতায় বৃষ্টির শব্দের মতো’, তখন সন্দেহ নেই, মূলত এ কারণেই আমি অভিভূত হয়েছিলুম যে, শব্দ দিয়ে রচিত চিত্রাবলির এক আশ্চর্য অ্যালবাম এসব কবিতার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সেই চিত্র পুব বাংলার চিত্র। আমার জন্মভূমির মুখচ্ছবি। পুব বাংলার কবিদের কবিতা পড়তে পড়তে মূলত এ কারণেই তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ বোধ করেছিলুম যে, যে জন্মভূমিকে আমি ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছি এবং যার কোলে আর কখনো আমার স্থায়ীভাবে ফিরে যাওয়া হবে না, আর কিছু না হোক, অন্তত তার শ্যামল মুখশ্রীকে এসব কবিতার মধ্যে বারবার আমি দেখতে পাব।

      আমি জানি যে, শুধুই নদীনালা-গাছপালা-ক্ষেতখামার কি জ্যোত্স্না-রৌদ্র-মেঘ-কুয়াশার বর্ণনা দিয়ে একটা ভূখণ্ডের সার্বিক চিত্র তৈরি করা যায় না; উপরন্তু সেই ছবির মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটাও খুব জরুরি। জানি যে, চিত্রটাকে সপ্রাণ ও— অন্তত আধুনিক মানুষের কাছে— গ্রাহ্য করে তোলার জন্য মানুষের মুখশ্রীকেও তার মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তোলা চাই; ঈশ্বরের সৃষ্টির পাশাপাশি স্থাপন করা চাই মানবসমাজের আপন হাতের সৃষ্টিকে। পুব বাংলার তরুণ কবিরা এই দ্বিতীয় দায়িত্বের প্রতিও যে প্রথম থেকেই নজর রেখেছেন, তাদের কবিতাই তার প্রমাণ। হরেক রকমের মানুষের মুখ তারা তাদের লেখার মধ্যে এঁকে যাচ্ছেন; শহরের মাস্টার-কেরানি-ছাত্র-মজুরের মুখের পাশাপাশি ছোটখাটো গঞ্জ আর গ্রামাঞ্চলের জেলে, মাঝি, বেপারি, পাইকার, চাষী-গেরস্তের মুখও সেখানে এতই অবিরল ফুটছে যে, মানুষ সম্পর্কে তাদের মৌলিক আগ্রহের একটা সন্দেহাতীত সাক্ষ্য তার মধ্যে পাওয়া যায়। বলা বাহুল্য, একই কবি সব রকমের মানুষের কিংবা সব রকমের মানবিক পরিশ্রমের ছবি আঁকছেন না, সেটা সম্ভবও নয়, কিন্তু তাদের সামগ্রিক রচনাকর্মের ভেতর থেকে যে এ সবকিছুর একটা সার্বিক চিত্রই প্রবলভাবে ফুটে উঠছে, এটাই সুখের কথা।

      উপরন্তু লক্ষণীয়, এই নবীন ও তেজি কবিসমাজের আপনাপন বিশ্বাসের ছবিও তাদের লেখার মধ্যেই ফুটছে। কী তাদের প্রতিজ্ঞা ও কিসে তাদের প্রত্যয়, তা জানার জন্য আলাদা করে কোনো ফতোয়া কিংবা ইশতেহার তাদের লিখতে হয়নি। তাদের কবিতা পড়েই আমরা জানতে পারছি যে, একদিকে যেমন পুব বাংলার ভৌগোলিক প্রকৃতি, তার জল হাওয়া আলো ও মাটির নিজস্ব চরিত্রকে তারা নিবিড়ভাবে ভালোবাসেন, অন্যদিকে তেমনি বুদ্ধিজীবী মানুষ হিসেবেও তাদের কর্তব্য সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ সচেতন। নিছক প্রকৃতি বর্ণনা কিংবা নিতান্ত ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের উচ্চারণ কি কোনো সৎ কবিকে একালে আর তৃপ্তি দিতে পারছে? তিনি জেনে গেছেন যে, তার সমকালীন জনসমাজের আশা ও আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ ও যন্ত্রণাকে একটা বাঙ্ময় রূপ না দেয়া পর্যন্ত তার শান্তি নেই। তিনি বুঝে গেছেন, যা তার একান্ত নিজস্ব, সেই অনুভূতিগুলোর কথা লিখবেন ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে আপন সময় ও আপন সমাজের একটা ব্যাখ্যাও তাকে দিয়ে যেতে হবে— তার কবিতার মধ্যে। পুব বাংলার কবিদের লেখা পড়ে নিঃসংশয় হওয়া যায় যে, কবির এ বিশেষ দায়িত্বকে তারা কেউই অস্বীকার করছেন না। আজকের পুব বাংলায় তরুণ বয়সী এমন একজন কবিরও সম্ভবত সাক্ষাৎ মিলবে না, ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে যিনি নীরব; এমন কবিরও না, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণা ঝরিয়ে অন্তত কয়েক লাইন যিনি লেখেননি। লক্ষ্য যখন স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা, অত্যন্ত সংযত-বাক কবির কণ্ঠও তখন আবেগে কাঁপতে থাকে; উদ্দেশ্য যখন অত্যাচারীর সমালোচনা, অত্যন্ত নম্র স্বভাবের কবির কণ্ঠও তখন বিদ্রূপে বেঁকে যায়। জন-আন্দোলনের ওষ্ঠে অব্যর্থ শব্দ যোজনা করে শহিদ কাদরি তখন বলেন, ‘সব কিছু আজ চিত্কার করে চাইতে হয়— স্বাস্থ্য, স্বস্তি এবং আয়ু।’ রাজপথে রক্ত ঝরতে দেখে হুমায়ুন আজাদ তখন বলেন, ‘প্রতিটি পথিক কিছু রক্ত রেখে যায় ব্লাড ব্যাংকে বাংলার মাটিতে।’ অত্যাচারীর মত্ত অবাধ হত্যালীলা দেখে এনামুল হক তখন বলেন, ‘আবার হত্যার ঢেউ বুড়িগঙ্গা-বন্দরে উঠেছে’ এবং জনতার অনিবার্য জয়যাত্রা প্রত্যক্ষ করে পলায়মান দুঃশাসকদের প্রতি ঘৃণা ঝরিয়ে গোলাম সারওয়ার তখন বলেন, ‘…ফুসমন্তর ফুসমন্তর ঝড় উঠেছে ওই, কোথায় জাঁহাপনা তাহার খয়ের খাঁরা কই?’

      আগেই আমি বলেছি যে, কিছু ছবিই ছিল আমার প্রাথমিক ও প্রধান প্রত্যাশা। আমি আমার জন্ম-মৃত্তিকার মুখচ্ছবিকে আবার নতুন করে দেখতে চেয়েছিলুম এবং তারই জন্য হাত বাড়িয়েছিলুম পুব বাংলার এ কবিসমাজের দিকে। কিন্তু এখন দেখছি নিতান্ত কিছু ছবিই আমার হাতে তারা তুলে দেননি, তাদের বিশ্বাস ও আদর্শের একটি নির্ভরযোগ্য পরিচয়পত্রও ওই কবিতাবলির মাধ্যমে তারা আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের কবিকর্মই প্রমাণ দিচ্ছে যে, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও মানবধর্মে আস্থাশীল। হিন্দু মানুষ, মুসলিম মানুষ ইত্যাদি সংকীর্ণ পরিচয়ে কোনো আস্থাই তারা রাখেন না। মানবপরিচয়কেই তারা তাবৎ মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় বলে জেনেছেন।

      অন্যদিকে বাঙালি হিসেবেও তাদের গৌরববোধের অন্ত নেই। প্রশ্ন উঠবে, বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানার এ গৌরব কি মানবিকতার বৃহত্তর আদর্শের বিরোধী? না, তা নয়। একটা ছোট্ট ঘটনার কথা বলি। আয়ুব খাঁর সফরের বিবরণ পাঠানোর জন্য ১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে দেশী-বিদেশী আরো অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে পুব বাংলার জেলায় জেলায় কয়েকটা দিন আমাকে খুব ঘুরতে হয়েছিল। আয়ুব যেদিন পদ্মায় তার স্টিমারে আমাদের সঙ্গে মিলিত হন, সেদিন ছিল ২৬ জানুয়ারি। ঠিক করলাম, আমরা ভারতীয়রা আমাদের আনুষ্ঠানিক ভারতীয় পোশাক পরে নিমন্ত্রণ রক্ষা করব। সেই অনুযায়ী পাতলুনের উপরে গলাবন্ধ কোট পরে নিচ্ছি, এমন সময়ে ঢাকার এক তরুণ কবি-সাংবাদিক সবিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন, ‘ব্যাপার কী দাদা? পোশাক পাল্টাচ্ছেন কেন?’

      বললুম, ‘বা! আজ যে আমাদের প্রজাতন্ত্র দিবস। তোমাদের প্রেসিডেন্টের পার্টিতে তো আজ পুরোদস্তুর ভারতীয় পোশাকেই আমাদের যাওয়া উচিত।’

      তরুণ কবিবন্ধু এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। তারপর নিঃশ্বাস ফেলে, বিষণ্ন গলায় বললেন, ‘দাদা, আপনি ভাগ্যবান, নিজেকে আপনি ভারতীয় বলে ভাবতে পারেন। আমরা কিন্তু নিজেদের আর পাকিস্তানি বলে ভাবতে পারি না। আমরা বাঙালি।’

      জিজ্ঞেস করেছিলুম, নিজেকে পাকিস্তানি ভাবতে তার অসুবিধে হয় কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, হয়, তার কারণ কোনো রকমের গোঁড়ামিতে তাদের বিশ্বাস নেই এবং পাকিস্তান ভাবনার ভিত্তি যে একটা প্রচণ্ড গোঁড়ামি, তা তারা জেনে গেছেন। সেই গোঁড়ামিকে যদি একবার মেনে নেন, তাহলে উদার মানবিকতার ক্ষেত্রে গিয়ে পৌঁছুনো তাদের পক্ষে শক্ত হবে।

      আমার পরবর্তী প্রশ্ন: ‘কিন্তু বাঙালি পরিচয়টাও তো মানব পরিচয়ের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছোট পরিচয় কি বড় পরিচয়কে আড়াল করে দেবে না?’

      জ্বলজ্বলে গলায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘না। হোক ছোট, তবু এ পরিচয়ের মধ্যে কোনো গোঁড়ামি নেই। আর তাই সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের এ পরিচয় কাউকে দূরে ঠেলে না, কাউকে পর বলে ভাবতে শেখায় না। দেখবেন, আপনারা যেমন ষোলোআনা বাঙালি থেকেও ষোলোআনা ভারতীয় হতে পেরেছেন, আমরাও তেমনি ষোলোআনা বাঙালি থেকেও ষোলোআনা মানুষ হতে পারব।’

      তিনি ঠিকই বলেছিলেন। বাংলাদেশের সব কবির সব রচনা আমি পড়িনি। কিন্তু যে কয়জনের যা কিছু পড়েছি, তাতে বলতে পারি যে, ষোলোআনা মনুষ্যত্বের পরিচয়ই তাদের সেই লেখার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে ফুটেছে।

      [নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর গদ্য সমগ্র থেকে সংকলিত]

  18. মাসুদ করিম - ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ (৪:২৩ অপরাহ্ণ)

    Sister Wendy Beckett, TV art historian, dies at 88

    TV art historian and nun Sister Wendy Beckett has died at the age of 88, it has been announced.

    In the 1990s she became one of the most unlikely television stars.

    Emerging from her hermit-like existence in a caravan at a Carmelite monastery in Norfolk, she hosted unscripted BBC shows from galleries across the world.

    Born in South Africa, Sister Wendy moved as a child to Edinburgh, where her father studied medicine, joining a convent when she was 16.

    She died at 14:30 GMT at the Carmelite monastery in Quidenham.

    BBC director of arts Jonty Claypole paid tribute, saying Sister Wendy had “a unique presentation style, a deep knowledge of and passion for the arts”.

    He added: “She was a hugely popular BBC presenter and will be fondly remembered by us all.”

    In 1950 Sister Wendy’s order sent her to Oxford University, where she lodged in a convent, and was awarded a Congratulatory First Class degree in English literature.

    She returned to South Africa in 1954 to teach, but in 1970, with her health deteriorating, the Vatican gave permission for her to pursue a life of solitude and prayer.

    After obtaining permission to study art in the 1980s – largely through books and postcard reproductions of the great works obtained from galleries – Sister Wendy decided to write a book to earn money for her convent.

    Contemporary Women Artists, published in 1988, was followed by more books and articles.

    In 1991 the BBC commissioned her to present a television documentary on the National Gallery in London.

    Dressed in black nun’s habit, Sister Wendy stood in front of paintings, and without script or autocue discussed them to the camera.

    Her programmes included Odyssey, Sister Wendy’s Grand Tour and Sister Wendy’s Story of Painting.

  19. মাসুদ করিম - ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ (৪:৪২ অপরাহ্ণ)

    Perot Museum unveils a world first VR app that explores a cave few have ever visited

    Ever wondered what it’s like to delve deep within a South African cave to discover and recover some of the most famous ancient human fossils in scientific history? The opportunity is now at your fingertips – and it’s free via the Apple App Store and Google Play!

    Internationally renowned paleoanthropologist Professor Lee Berger and Perot Museum of Nature and Science leaders, in partnership with South Africa’s University of the Witwatersrand (Wits University), recently announced a world-first virtual reality (VR) app to view “bones that are shaking up our family tree.”

    Berger – who recently dominated world science headlines with his discovery of Homo naledi, a new species of human relative – was joined by Perot Museum CEO Dr. Linda Silver and Perot Museum research scientist and Director of the Center for the Exploration of the Human Journey Dr. Becca Peixotto for a Facebook Live news conference watched by journalists and academics from across the world.

    The free app, which is optimized for Google cardboard but compatible with any headset, allows people all over the globe to virtually tour the cave that very few people – including “underground astronaut” Dr. Peixotto – have visited in person (due to the extremely narrow, 8-inch “chute” through which it is accessed).

    “As I would never be able to actually get into the Dinaledi Chamber, one of the most exciting things for me, personally, is that through the Dinaledi app I can actually see and experience what it is like to be in the Chamber where these wonderful discoveries were made,” says Berger. “And, even more exciting, I can share this first-time experience with young fossil hunters from all over the world.”

    The Museum collaborated with Wits University to initially create this experience, which was brought to fruition by Dallas creative-technology company Groove Jones, for the Museum’s newly transformed Being Human Hall. However, they also wanted to extend the VR journey beyond the walls of the Museum. Thanks to an app with narration in six languages from some of the actual explorers and scientists from Berger’s Rising Star expedition, viewers can explore and even “virtually” hold fossils from the remote cave. The translated experiences are available on the app in English, American and European Spanish, and the African languages of isiZulu, Setswana and Sesotho.

    “It’s important for young people, from the U.S., South Africa and around the world, to see themselves as the next generation of scientists through innovative, multilingual experiences like this,” said Peixotto. “I hope that allowing fellow researchers to virtually examine this important fossil site in a different way may lead to exciting, new insights.”

    Today’s unveiling comes just six months after the Perot Museum announced its new Center for the Exploration of the Human Journey. In April 2018, the Museum named Peixotto as director and formed a partnership with Berger to serve as the Center’s Distinguished Science Advisor. Weeks later, the Museum’s Being Human Hall reopened to rave reviews, featuring the popular VR experience of the Dinaledi Chamber (which has since been translated into Spanish by one of the Dinaledi team scientists). In August, the Museum and Wits University, a widely respected public university known for its research achievements, signed a Memorandum of Understanding that launched a dynamic relationship for future international collaborations.

    To further expand learning opportunities, the Perot Museum is planning numerous outreach programs for students in North Texas and beyond as well as collaborating with National Geographic Explorer Classroom programs for and with students across the U.S., Canada and parts of Europe.

    The Museum will also collaborate with Berger and Wits University on a major traveling exhibition for fall 2019 that explores the study of human origins and the dynamic research of Berger’s and Peixotto’s team on H. naledi. The exhibition will invite visitors to celebrate emerging scientific discoveries, experience the thrill of discovering, understand the possibility within scientific analysis, and imagine the future of technology’s impact on science.

    “This virtual reality app and our partnership with Wits University is just the beginning. It demonstrates our desire to communicate in an innovative, engaging way that reduces barriers and makes science exploration universally accessible and exciting,” said Silver. “It also represents our commitment to work with international colleagues to advance our collective understanding of the world.”

    The free-to-download app for Android and iOS devices can be found by searching for Dinaledi in the Google Play and Apple App Store. Learn more about the cave exploration experience at perotmuseum.org/DinalediVR.

  20. মাসুদ করিম - ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ (৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ)

    India’s start-ups fear extinction from ‘angel tax’

    Government sends notices demanding payments for funds pumped in by individual investors

    Indian entrepreneurs and the so-called angel investors who back them have warned that hefty tax bills levied on start-ups pose a threat to New Delhi’s efforts to remake India as an innovation hub.

    Over the past few weeks, India’s tax department has sent a flurry of notices to start-ups demanding an “angel tax” on funds pumped in by individual investors.

    India introduced its angel tax provision in 2012, amid concerns that wealthy individuals could invest in bogus start-ups as a way to launder money. But entrepreneurs say the tax code provision is being misused and could stifle their companies.

    The notices have sparked an uproar from big-name Indian industrialists such as Mohandas Pai, the former Infosys executive-turned-tech investor, and Anand Mahindra, chairman of the Mahindra Group.

    “It needs immediate attention or else all chances of building a rival to Silicon Valley in India will be lost,” Mr Mahindra wrote on Twitter.

    India’s commerce ministry, which has been tasked with promoting the country’s start-up ecosystem, has asked the revenue department to stop “harassment” of start-ups and angel investors.

    Amid the furore, the tax department announced on last week that it would take “no coercive action” against start-ups while the government sets up a committee to examine the issue.

    Indian start-ups raised $13.5bn in 2017, according to industry publication Inc42, buoyed by success stories such as ecommerce platform Flipkart, which Walmart acquired for $16bn last year.

    But entrepreneurs say the tax department is on course to make quick work of all that. Sreejith Moolayil, who launched online health food company True Elements in 2016, said he has been asked to pay Rs4m ($57,000) in tax on the Rs10m he raised from angel investors in 2015.

    “If we have to pay, there will be a lot of start-ups shutting down in India,” said Mr Moolayil. “This government is talking about start-ups; that’s good. But at the bureaucracy level, we are getting stuck.”

    Indian tax officers do not recognise the discounted cash flow method that many angel investors use to value start-ups. Instead of valuing the company by what it is worth at the time — which is often very little — investors appraise the business based on estimated future value.

    For revenue officers going by the stricter 2012 rules, those investments look to be suspiciously inflated. They therefore label the excess sum as income for the company, and levy a tax.

    A survey of start-ups by pressure group LocalCircles found that 39 per cent of the groups received tax notices in 2017, with most of those getting more than one.

    Sachin Taparia, founder of LocalCircles, met Suresh Prabhu, the commerce minister, and other officials last week to seek a truce, and a rule change recognising the discounted cash flow method. Start-up founders have also asked for India to allow US-style accredited investors, who are vetted and afforded certain privileges.

    Padmaja Ruparel, co-founder of the Indian Angel Network, a consortium of 500 angel investors investing in about 120 Indian companies, said the government’s otherwise good work was undermined by the “demon” angel tax.

    “Investors from India are saying, ‘listen, I’d rather just invest overseas’,” said Ms Ruparel. “That means there’s a flight of capital, flight of talent, flight of intellectual property.”

  21. মাসুদ করিম - ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ (৩:২১ অপরাহ্ণ)

    স্তব্ধ ভুবন সোম! চিরবিশ্রামে মৃণাল সেন

    প্রয়াত হলেন প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন। রবিবার সকালে তাঁর ভবানীপুরের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।

    দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। রবিবার সকাল ১০.৩০টা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী শেষযাত্রার আয়োজন করা হবে না বলে জানিয়েছেন তাঁর পারিবারিক চিকিত্‍‌সক। তিনি জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর ফুল, মালা বা কোথাও দেহ শায়িত রেখে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের বিরোধী ছিলেন মৃণাল সেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী, তাঁর দেহ আপাতত পিস হাভেনে নিয়ে যাওয়া হবে। শিকাগো থেকে তাঁর ছেলে ফিরলে শেষকৃত্য হবে তাঁর।

    মৃণাল সেনের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা বাংলায়। শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। সত্যজিত্ রায়, ঋত্বিক ঘটকের সমসাময়িক এই প্রবাদপ্রতীম পরিচালকের সৃষ্টি মুগ্ধ করেছে সিনেপ্রেমীদের। ভুবন সোম, কোরাস, মৃগয়া ও অকালের সন্ধানে-সহ ১৬টি ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর অন্যান্য অসামান্য সৃষ্টি, খারিজ, কলকাতা ৭১, পুনশ্চ, বাইশে শ্রাবণ, একদিন প্রতিদিন, পদাতিক।

    ‘আকাশ কুসুম’ ভাবনা ছিল তাঁর, এবার বেরোলেন ‘অকালের সন্ধানে’

    সিনেমার গল্পে হোক বা বাস্তবে- বারবার মানুষটা বলেছেন, একাকীত্ব ভালোবাসি না। অথচ সেই তাঁরই চলে যাওয়াটা যেন ভীষণরকম একা। ৯৫ বছর বয়সে প্রয়াত মৃণাল সেন যেন অস্ফুটেই বলে গেলেন, ‘নীল আকাশের নীচে’ প্রতিটা মানুষই শুধু নিজের। স্ত্রী’র চলে যাওয়া আরও একলা করে দিয়েছিল তাঁকে। অবশেষে রবিবারের সকালে নিঃশব্দ ইন্দ্রপতন!

    ‘আপনি বিভিন্ন ভাষায় এত ছবি করেন কেন?’ তাঁর কাছে এমন প্রশ্ন ধেয়ে এসেছে বারেবারে। একটাই উত্তর ছিল, ‘আমি দারিদ্র নিয়ে ছবি করি। আফ্রিকাতে গিয়ে সোয়াহিলি ভাষায় ছবি করতেও আমার কোনও অসুবিধে হবে না।’ ভাষা তাই তাঁর কাছে বাধা হয়নি কখনও। বরং তিনি ছুটেছেন বিষয়ের কাছে। বারবার বেছে নিয়েছেন গ্রাম্যতাকে, ক্যামেরা তাক করেছেন গরীবগুর্বো মানুষগুলোর চোখে-মুখে। ‘মাটির মনিষ’ করার জন্যে ছুটেছেন ওড়িশার গ্রামে, ‘ভুবন সোম’ করতে গুজরাতের প্রত্যন্ত প্রান্তে, ‘ওকা উড়ি কথা’ বা ‘কফন’-এর সময় তেলেঙ্গানার অজ গাঁয়েও পৌঁছেছিলেন মৃণাল সেন।

    আসলে বেড়ে ওঠাটাও তো ছিল সেই মেঠো পথ ধরেই। অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরে ১৯২৩ সালে জন্ম তাঁর। ছাত্রাবস্থায় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত হন। যদিও তিনি কখনও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন নি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পর তিনি কখনো একজন সাংবাদিক, কখনো বা ওষুধ বিপননকারী, আবার কখনো চলচ্চিত্রে শব্দকুশলী হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে ‘রাত ভোর’ পরিচালনা করার আগেও ১৯৫০ সালে একটি সিনেমা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সিনেমাটির নাম ‘দুধারা’। যদিও চলচ্চিত্রটির ক্রেডিটে পরিচালক হিসেবে নাম রয়েছে ‘অনামী’।

    ‘রাত ভোর’-এর পর তাঁর ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’। ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি মেলে। তবে ১৯৬৯-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভুবন সোম’-এর মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি আসে। ২০০২ সালে আশি বছরের কোঠায় তাঁর নির্মিত শেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আমার ভুবন’। সর্বমোট ২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৪টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৬টি চলচ্চিত্রবিষয়ক মৌলিক গ্রন্থও লিখেছেন মৃণাল সেন। তাঁর সিনেমায় তিনি নিজের বক্তব্যের কাঠামোকে শান দিয়েছেন মার্ক্সবাদ, অস্তিত্ববাদের সারাত্সার দিয়ে।

    মৃণাল সেন আসলে সেই পরিচালক যিনি সর্বদাই কৃত্রিম কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছেন। বিষয়ের ভিন্নতার কারণে ছবির আঙ্গিকে এনেছেন তুমুল পরিবর্তন বদলেছেন। টুকরো টুকরো বাস্তব দৃশ্য ও শব্দ দিয়েই তিনি নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন। পুরস্কার-সম্মান যেন তাঁর জীবনে এসেছে স্বাভাবিক নিয়মেই। দেশে বিদেশে অজস্র পুরস্কারে লেখা এই বাঙালি পরিচালকের নাম। জাতীয় পুরস্কার পাওয়াটা তাঁর কাছে যেন অভ্যাসের মতো। ১৯৮১ সালে পান পদ্মভূষণ সম্মান। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত সংসদের সাম্মানিক সদস্যও ছিলেন। ফরাসি সরকার তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান কম্যান্ডার অফ দি অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস সম্মানে সম্মানিত করেন। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন।

    এত সম্মান, এত পুরস্কার, তা সত্বেও ছবির খিটে মেটেনি ছবিওয়ালার। শেষ দিকেও বলতেন, ‘প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভাবি ছবি করার কথা।’ ছবির কথা মাথায় নিয়েই ‘অকালের সন্ধানে’ বেরিয়ে পড়লেন ‘পদাতিক’।

    https://mknewsmedia.tumblr.com/post/181643254019/ন-ল-আক-শ-র-ম-ঝ-ম-ণ-ল

    https://mknewsmedia.tumblr.com/post/181643274159/ত-র-ছব

    https://mknewsmedia.tumblr.com/post/181643325044/পত-রয-দ-ধ-স-ময়-ক-দ-জন-আড-ড-দ-ত-ন-ব-স-তর

    https://mknewsmedia.tumblr.com/post/181643376374/ন-ড়-ত-গণন-ট-য-মঞ-চ-র-সঙ-গ-ছ-ল-আত-ম-ক-য-গ

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.