গ্যাটকো মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী হওয়ার পরও তাকে দেখা গেছে বাংলাদেশ থেকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যুহ পেরিয়ে বিমানে চড়ে তুরস্কে উড়ে যেতে। সাবেক খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দলের লোকজন দেখা করতে পারেন না, কিন্তু তার সঙ্গে সাবজেলে আরাম করে বসে তিনঘন্টা ধরে দেনদরবার করেছেন ক্ষমতাধর সেই ব্যক্তি। তারপর তারেক রহমান যখন জেল থেকে বের হয়ে হাসপাতালে গেলেন, তখন দলের নেতাকর্মীরা তার মুখটা শুধুমাত্র একবার দেখার জন্যে একজন আরেকজনের সঙ্গে ঠেলাঠেলি শুরু করেও কোনও কূল পায়নি, কিন্তু এই ব্যক্তি ধীরেসুস্থে হাঁটতে হাঁটতে তার কেবিনে গিয়ে ঢুকেছেন এবং টানা একঘন্টা দরবার করেছেন। এরকম একজন বিশেষ লোককে পুলিশের মতো সাধারণ বাহিনীর সদস্যদের খুঁজে না পাওয়ারই কথা। ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ আদালতে ১২ অক্টোবর ঠিকই বলেছে পুলিশ; বলেছে, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও ঠিক ওইদিনই তিনি উচ্চকণ্ঠে ভাষণ দিয়েছেন চারদলের এক সভাতে।
তবে ব্যাপার হলো কী জানেন, বক্তৃতা শোনা এক কথা, চেহারা দেখা এক কথা, সামনাসামনি পড়ে যাওয়া এক কথা আর খুঁজে পাওয়া হলো একেবারেই আরেক কথা। এত কিছু ঘটার পরও তার ক্ষমতার পরিধি নিয়ে বোধকরি কারও কারও সংশয় ও সন্দেহ ছিল। তাই তিনি মহাসমারোহে একদিন পর ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে এলেন। তার যাত্রাপথে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। এমনকি বের হয়ে আসার পরও কোনও বাধা পাননি তিনি। বরং এই ব্যক্তি যাতে বিব্রত না হন, এই ব্যক্তিকে যাতে বিব্রত করা না হয় সেজন্যে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়েই বাণিজ্য উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান ঘোষণা দেন, একটির বেশি প্রশ্ন করা যাবে না। আর মতিউর রহমান নিজামী বলেন, আমাদের নামাজ পড়তে হবে। নিজামীর একপাশে বসেছিলেন ক্ষমতাধর সেই সুসন্তান, আরেকপাশে বসেছিলেন বাংলাদেশের আরেক সুসন্তান হোসেন জিল্লুর রহমান, যার ওপর এখন ড. কামাল হোসেন কেন জানি খাপ্পা ভীষণ। কিন্তু কে জানত, আলোচনার সংক্ষিপ্তসার বলার সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ওই একটি প্রশ্নই হবে ক্ষমতাধর ওই সুসন্তানটিকে নিয়ে! কে জানতো, বেরসিক সাংবাদিকরা প্রথম চোটেই জানতে চাইবে, পুলিশ যাকে খুঁজে পায় না, তার সঙ্গে আপনাদের বৈঠক হয় কেমন করে! প্রশ্ন শুনে বাক্যবাগীশ হোসেন জিল্লুর রহমানও অসহায়ের মতো মাইক ঠেলে দিয়েছিলেন নিজামীর দিকে আর নিজামী আবার সেটি ঠেলে দিয়েছিলেন সেই লোকটির দিকে।
এই লোকটি কে, সবাই জানেন। তিনি আলী আহসান মুজাহিদ। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল।
এই নিয়ে বাংলাদেশে হইচই চলছে। বলাবলি হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এরকম একজন আসামী বৈঠক করে কীভাবে! বলাবলি হচ্ছে, পুলিশ তাকে খুঁজে পায় না, সেটাও কি সম্ভব? সবাই বিস্মিত এই ঘটনাতে, বিস্মিত এমনকি সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোরতর সমর্থক সকলেও।
প্রশ্ন জাগে, কী করে বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষদের, মধ্যবিত্ত মানুষদের এত প্রচণ্ড আস্থা তৈরি হয়েছিল এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর? অথচ বাংলাদেশের গ্রামের অশিক্ষিত মানুষরাও তাদের দীর্ঘদিনের আশা-নিরাশার অভিজ্ঞতা থেকে ১১ জানুয়ারির পর বুঝতে পেরেছিল, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নতুন সেনানিয়ন্ত্রিত সরকার জোট সরকারের ‘সি-টিম’ ছাড়া আর কিছু নয়,- এরা ক্ষমতায় এসেছে খালেদা-তারেক-নিজামী-মুজাহিদদের মতো প্রিয় আদুরে বেড়ালগুলিকে পানিতে চুবিয়ে তাদের গায়ের গন্ধ দূর করতে। তাই অন্তত গ্রামবাংলার মানুষ উল্লসিত হয়নি তাদের সব কর্মকাণ্ড দেখে, বরং হাটবাজার ভাঙতে দেখে নিশ্চিত হয়েছিল তাদের পূর্বধারণা সম্পর্কে। তবে বেড়াল কি আর চায় সহজে স্নান করতে? অতএব ১১ জানুয়ারির পর থেকে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন পর্যন্ত তাদের প্রতি যত ধরণের কথিত নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে, সেসবের সবই এই জন্যে-যে, বিড়াল নিজে থেকে পানিতে নেমে নিজেকে সাফ করে না, পরিস্কার সুন্দর জায়গায় পায়খানা-প্রস্রাব করে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পরও এমন সাবলীলভঙ্গিতে ঘুরে বেড়াতে থাকে যে মনে হয় তারা আসলে আতরগোলাপ প্রসব করেছে। অতএব বেগম আলাম্পনা এবং শাহজাদা আলাম্পনাদের প্রতি তাদের একটু নিষ্ঠুর হতে হয়েছে, কিন্তু সেই নিষ্ঠুরতা তাদের ভবিষ্যত মঙ্গলকামনা থেকেই করা হয়েছে। পাশাপাশি তারা শেখ হাসিনাকেও খানিকটা দৌড়ের ওপর রেখেছেন। তিনি যে তাদের বৈধতা দিতে চেয়েছিলেন, সেটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সময় থাকতেই তারা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ওনার বৈধতার আশায় বসে নেই এই সরকার। সত্যি কথা বলতে গেলে, বৈধতা স্পষ্টভাবে বুঝেসুঝে নিয়েই উদয় হয়েছেন তারা সবাই। বৈধতা কাদের কাছ থেকে নিতে হয়, কারা সেই অদৃশ্য বৈধতা প্রদানকারী শক্তি তা খুব ভালো করেই জানা আছে তাদের।
এ-হেন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ কর্মীদের আস্থাও অর্জন করতে পেরেছিলেন। কেননা ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর যে-নির্যাতন নেমে এসেছিল, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব বারবার যে-সব ব্যর্থতার নজির তৈরি করে চলছিল, সেসব নির্যাতন ও ব্যর্থতার ইতিহাসের তুলনায় ২০০৬ সালের জানুয়ারিপরবর্তী সময়ের চমক এতই চোখধাঁধানো ছিল যে তাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছিল, এদের যারা জেলে পুরছেন, নিশ্চয়ই তারা দেবতা ও বীরপুরুষ। তা ছাড়া ফখরুদ্দিন সরকারের গায়ে গোলাপজল ছিটানোর জন্যে তখন বাংলাদেশের বহুলপ্রচারিত মিডিয়াগুলি থেকে শুরু করে ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্রে আবাসিকতা নেয়া জনপ্রিয় কলামিস্টরাও কম ভূমিকা রাখেননি। সেনাপ্রধান মইন উদ্দিন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে যথাযোগ্য আসনে বসাতে চান,- এই ঘোষণা দিয়ে এইসব কলামিস্টদের বিনামূল্যে কিনে নিতে পেরেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মাঝেমধ্যে এরা আহাজারি করতেন, জামাতের কোনও নেতাকে কেন ধরা হচ্ছে না… ব্যাস, ওই পর্যন্তই। এরকম একটি প্রশ্ন জাগবার পরও তারা বিভোর ছিলেন সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বঙ্গবন্ধু-প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে।
যে-দেশের অবস্থা এমন, যে-দেশের রাজনীতিকরা এত বেশি ক্ষীণদর্শী, যে-দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণী এমন পরনির্ভরশীল, সে-দেশে যে মুজাহিদই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বুক চিতিয়ে বৈঠক করবেন, এতে অবাক হওয়ার কী আছে? আলী আহসান মুজাহিদ একাত্তরের পাকদোসর, পরীক্ষিত খুনী; আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিল এই মুজাহিদ, যে-আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে ঠাণ্ডা মাথায়। একাত্তরের পর এই মুজাহিদরা আবারও ক্ষমতার স্বাদ পায় ২০০১ সালে। ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান’ রাখার জন্যে অর্থাৎ একাত্তরে সফলতার সঙ্গে বুদ্ধিজীবী হত্যা চালানোর জন্যে তাকে উত্তরাতে রাজউক থেকে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন এবং সেই সুযোগে আবারও একটি রাষ্ট্রীয় খুনী বাহিনী গড়ে তোলে এই রাজনীতিকরা। র্যাব নামের এই রাষ্ট্রীয় খুনী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর সপক্ষে সামাজিক মনস্তত্ব প্রতিষ্ঠার কাজও শুরু করা হয় সুপরিকল্পিতভাবে। তারপর আপাতদৃষ্টিতে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা থেকে সরে গেছে, কিন্তু তাদের উত্তরসূরি বাংলাদেশের সেনানিয়ন্ত্রিত সরকার সেই খুনী বাহিনীকে শুধু লালন করছেন না, আরও খুনী তৈরির পথ তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন, এসব খুনের সপক্ষে সামাজিক মনস্তত্ব সম্প্রসারণের পথও সম্প্রসারণ করে চলেছেন। আর বিস্ময়কর হলেও সত্যি, সমাজের বিভিন্ন অংশের পথিকৃৎ বলে যাদের দাবি করা হয়, তারা এতে বাহ্বা জোগাচ্ছে, ইন্ধন দিচ্ছে।
অনেকে বলতে পারেন, এ-সব কথার যৌক্তিকতা কোথায়। সেটিই চিন্তা করার বিষয়। কেননা সব কিছু এতই ঘোলা জলে করা হচ্ছে যে, একটু স্বচ্ছভাবে যৌক্তিকতাগুলো খুঁজে পেতে কষ্টই হয় বইকি। কিন্তু তারপরও তা বুঝে নেয়া সম্ভব, যদি ধৈর্য ধরে, স্থির হয়ে বিষয়গুলির মধ্যে যে-পরম্পরা রয়েছে তা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা যায়। তখন খুব স্পষ্টই বোঝা যায়, একাত্তরে ধর্মব্যবসায়ী রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা পাকিস্তানি সেনাদের হাতে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের অগ্রচিন্তার মানুষ ও জনগণকে হত্যা করেছিল; আর ৩৭ বছর পর সেই ধর্মব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কথিত আলোকিত বা এনলাইটেড দাবিদার এক শ্রেণির মানুষ।
এরই দুটি সামান্য কিন্তু সুদূরপ্রসারী উদাহরণ ঘটতে দেখা গেছে সম্প্রতি ঢাকার পিলখানাতে আর লন্ডনের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। বাংলাদেশে আলোকিত খুনী তৈরির যে-মহড়া চলছে, তারই চালচিত্র খুঁজে পাওয়া গেছে এ দুটি স্থানের ঘটনা ও কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে।
অনেকেরই জানা নেই, সপ্তাহ সাতেক আগে ঢাকার বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিডিআর, পুলিশের সদস্যরা যৌথভাবে দেশটির জনগণের আন্দোলন ঠেকানোর মহড়া দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান সারির কোনও সংবাদপত্রে এ খবর ছাপা হয়নি, কেননা তারা কর্পোরেটতন্ত্রের পুজারী, এইসব খবর তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। মহড়ার সময় পিলখানার গলফ গ্রাউন্ডে একদল সেনাসদস্য সেজেছিল গার্মেন্টস শ্রমিক, আর এক দল সেনা সেজেছিল দমনকারী। বিক্ষুব্ধ জনতার বেশে সৈনিকরা শ্লোগান দিচ্ছিল ‘জ্বালো, জ্বালো, আগুন জ্বালো’। আর অন্যদিকে হ্যান্ডমাইক হাতে পুলিশ তাদের উদ্দেশে বলছিল, ‘আপনারা শান্ত হোন। ভাইয়েরা শান্ত হোন। আপনারা সরকারের ও জনগণের সম্পদ নষ্ট করবেন না। আপনারা রাজপথ ছেড়ে দিন। ’ কিন্তু মহড়ার নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী রাজপথ ছেড়ে না দিয়ে বিক্ষুব্ধ জনগণের বেশধারী সৈনিকরা তাদের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। আর অন্যদিক থেকে সৈনিকরা গুলি ছুড়তে থাকে শটগান দিয়ে, নিক্ষেপ করতে থাকে গ্রেনেড।
আন্দোলন দমন করার এবং প্রয়োজনে বিক্ষুব্ধ মানুষ হত্যা করার এই ভয়াবহ ট্রেনিংটি পরিচালনা করা হয়েছে মার্কিন মেরিন সেনাদের সশস্ত্র তত্ত্বাবধানে। সেখানে হাতেকলমে শিক্ষা দেয়া হয়েছে কী করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন দমন করতে হবে, ছাত্রদের আন্দোলন দমন করতে হবে। এতদিন এরকম আন্দোলন দমন করার ব্যাপারগুলিতে লুকোচুরি ছিল; কিন্তু এখন আর কোনও লুকোচুরি নেই। সোজা কথা, পেটে পাথর বেধে কাজ করতে হবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের। না পোষালে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু ন্যায্য মজুরির কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা যাবে না। যদি কেউ ন্যায্য মজুরির কথা উচ্চারণ করে, অথবা সমাজের অগ্রসর ও বন্ধনহীন অংশ হিসেবে বিবেচিত ছাত্রসমাজ তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসে, তা হলে সেই শ্রমিক ও ছাত্রদের দমন করার জন্যে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে জনগণেরই করের পয়সায় বেঁচে থাকা সামরিক বাহিনীকে, বিভিন্ন আইনশৃক্সক্ষলা প্রয়োগকারী সংস্থাকে। এক র্যাবকে দিয়ে কাজ হচ্ছে না, অতএব গড়ে তোলা হচ্ছে বৃহৎ এক হত্যাকারীর দল। র্যাব হত্যা করে রাতের অন্ধকারে ‘ক্রসফায়ার’-এর অজুহাত দিয়ে, আর এরা হত্যা করবে খোলা রাজপথে, অজুহাত থাকবে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করার, জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার।
এবার আসুন, লন্ডনের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। গত সেপ্টেম্বরে লন্ডনে এসেছিলেন বাংলাদেশের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্ণধার ও বাংলাদেশ দূরদর্শনের অন্যতম উপস্থাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি এসেছিলেন ব্রিটেন ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে,- যে-সম্মেলন নিয়ে অনেক আপত্তি রয়েছে বাংলাদেশের প্রাগ্রসর মানুষদের। এরকম একটি নীতিনির্ধারণী বিষয়ে নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে অনির্বাচিত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অহেতুক এই আগ্রহ অনেককেই কৌতূহলী ও বিস্মিত করেছে। জোর আপত্তি ও প্রতিবাদ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকেও। কিন্তু আবদুল্লাহ আবু সায়ীদদের গায়ের চামড়া ভারি মোটা, সেসব প্রতিবাদ ও আপত্তি তাদের ওই চামড়ায় কোনও তরঙ্গ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর কোনও স্বৈরশাসকেরই ভাঁড় খুঁজে পেতে দেরি বা কষ্ট হয় না, এই ড. ফখরুদ্দীন সরকারেরও খুঁজে পেতে কষ্ট হয়নি। তারা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে খুঁজে পেয়েছেন, যিনি জোটসরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছেও খুবই প্রিয় ছিলেন এবং প্রিয় কর্পোরেট মিডিয়াগুলোর কাছেও।
সন্দেহ নেই, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একটি প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়, তাঁর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শ্লোগান হলো ‘আলোকিত মানুষ চাই’। কিন্তু এই শ্লোগানটিকে এখন একটু বদলে নিতে হবে, বলতে হবে ‘আলোকিত খুনী চাই’। বস্তুত লন্ডনের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে গত সেপ্টেম্বর মাসে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যা বলেছেন, তাতে এ কথা বলা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ওই মতবিনিময় সভায় যা বলেছেন, তা ছাপা হয়েছে সাপ্তাহিক জনমত-এ, সাপ্তাহিক পত্রিকাতে, এবং বোধকরি সাপ্তাহিক সুরমাতেও। তা ছাড়া জানা গেছে, এ-খবর বাংলাদেশের কিছু কাগজেও ছাপা হয়েছে। এগুলি ছাপা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি হিসেবে।
এবার আসুন, শোনা যাক, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সেদিন কী বলেছেন। তিনি সেদিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র পরিচালনায় সংসদীয় গণতন্ত্র যে মোটেই কার্যকর নয়, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।’ এরপর তিনি প্রস্তাব করেছেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে। খুবই ভালো কথা। কিন্তু এই নতুন ব্যবস্থাটি আসলে কী? এটি কি সংসদীয় পদ্ধতি হিসেবেই বিবেচিত হবে? নাকি রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হবে? না কি এটিকে খচ্চরশাসিত পদ্ধতি বলা হবে? তিনি তা বলে যাননি।
রাষ্ট্র নিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের চিন্তা, এর আগেও বিভিন্ন আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, বেশ অস্বচ্ছ; এর আগে সাপ্তাহিক ২০০০-এর গোলাম মোর্তাজার সঙ্গে তিনি ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়ে যে-সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, তাতে সংক্ষেপে বলতে গেলে, দেশের তখনকার (চারদলীয় সরকারের শাসনাধীন) অরাজক পরিস্থিতির সাফাই গেয়েছিলেন। তিনি যা বলেছিলেন, তা অনেকটা এরকম,- ‘একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রাথমিক অবস্থায় এরকম পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখন লুটপাট হয়, দুর্নীতি হয়।’ বোধকরি তিনি অর্থনীতির পুঁজি সঞ্চয়নকালের সঙ্গে জোট সরকারের সেই সময়টিকে তুলনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এরকম একটি পরিস্থিতি যদি ন্যায্যই হয়, তা হলে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৭৫ অবধি অথবা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অবধি শাসনকাল আবদুল্লাহ আবু সায়ীদদের গায়ে এত জ্বালা ধরায় কেন? কেন তাদের মনে হয় না যে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পাণ্ডারা তখন লুটপাটের মাধ্যমে পুঁজি জমাচ্ছিল? সেটাও তো তা হলে এই সংজ্ঞা অনুযায়ী পুঁজি সঞ্চয়নের কাল!
না, এ কথার কোনও জবাব নেই। কেননা, বিএনপি-র ভাগ্য ক্রমশ সুপ্রসন্ন হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও এখন সাফাই গাওয়ার মতো বুদ্ধিজীবী গজাচ্ছে। এমনকি এখনও যে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ চারদলীয় জোট সরকারের নীরব অনুরাগী সেটা বোঝা যায়, যখন তিনি ওই মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। জনজীবনের নিরাপত্তা বলতে কিছু ছিল না। আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে সেনাবাহিনীকে বিনাবিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স প্রদান করা হয়। তারপর সংসদে আইন করে এই সব হত্যার দায় থেকে সেনাবাহিনীকে দায়মুক্তি প্রদান করা হয়।’
চারদলীয় জোট সরকারের হয়ে এত সুন্দর করে ক্লিন হার্ট খুনপর্বের সাফাই আর কোনও বুদ্ধিজীবী কি গাইতে পেরেছে বাংলাদেশে?
তারপর তিনি আরও বলেছেন, ‘তারপর সে ধারাবাহিকতায় ক্রসফায়ারের নামে মানুষ হত্যার মহড়া প্রায় প্রতিদিন চলছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় জনগণ যেমন এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে মেনে নিচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশের সুশীল সমাজ তথা বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকেও কোন প্রকার বিরূপ সমালোচনা হচ্ছে না।’ সেইসব বুদ্ধিজীবী কারা, সেই সব সুশীল কারা তাদের নাম আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলে যাননি। যদিও এদের নাম-চেহারা অনুমান করে নেয়া যায়, তারপরও সায়ীদ যদি বলে যেতেন, তা হলে বাংলাদেশের মানুষ এ-সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারত।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এরপর লেখা হয়েছে, ‘তিনি কোনপ্রকার রাখঢাক না করেই ক্রসফায়ারের নামে র্যাবের নির্বিচার মানুষ হত্যার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।’ জানি না, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ কেন র্যাবের মানুষ খুন করাকে এত পছন্দ করেন। তিনি অনেক কিছু লেখেন। এরকম বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করাকে তিনি কেন পছন্দ করেন, এর কারণগুলিও যদি তিনি লিখে জানাতেন, তা হলে বিষয়টি অনেকের কাছে পরিস্কার হতো, তাঁর অবস্থান কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না হোক, অন্তত তাঁর দিক থেকে এর একটি লিখিত ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। যা কালের সাক্ষীও হয়ে থাকতো। কিন্তু তিনি ব্যাখ্যা দিন বা না-দিন, একটি ব্যাপার পরিষ্কার, তিনি আসলে আলোকিত খুনী তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। বিনা বিচারে খুন করা মানুষদের প্রতি তার মানসিক যোগ তো সেরকমই প্রমাণ করে, আর যা থেকে এও বোঝা যায়, তাঁর সাহচর্য থেকে কোনও আলোকিত মানুষ আসলে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। হয় সে মানুষটি চিন্তার দিক থেকে বিকলাঙ্গ হবে, না হয় অধঃপতিত হবে। একটি দেশ বা সমাজে যখন ক্রান্তিকাল আসে তখন অনেক ক্ষেত্রে আন্দোলনে হত্যার প্রবণতা যুক্ত হতে পারে। কিন্তু সেই প্রবণতার জন্ম হয় অনন্যোপায় আন্দোলনকারীদেরই তরফ থেকে। কেননা রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা সমাজের মধ্যে স্থায়ীভাবে শিকড় গেড়ে বসা রাষ্ট্র ও সমাজের অনুকুল বিভিন্ন পক্ষ ও প্রতিষ্ঠান নতুন শক্তির উত্থানকে সর্বতোভাবে দমন করতে চায়। আর তার প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীরাও বাকস্বাধীনতা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয় অস্ত্রের ভাষায় কথা বলতে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি দেখা দিলেও এবং আন্দোলনকারীরা অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করলেও তাদের ইতিবাচক শক্তি বলেই বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্রধারার সমর্থনে যে হত্যা-খুন করা হয়, তা সবসময়েই নিষ্ঠুরতা হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। এটিই ইতিহাসের নিয়ম। এখন, একবার চিন্তা করে দেখুন,- র্যাব যে-হত্যা করছে তা তারা কেন করছে। র্যাব তাদের প্রতিটি হত্যাই করছে প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্রধারার সমর্থনে। এই প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র রক্ষার জন্যে তারা একটি বিচারকাঠামো গড়ে তুলেছে, এমনকি সেই বিচারকাঠামোকেও তারা এখন আমলে নিচ্ছে না। এমনটি করা হচ্ছে পাতি সন্ত্রাসীদের হত্যা করে মূল সন্ত্রাসীদের রক্ষা করবার জন্যে, গডফাদারদের বাঁচানোর জন্যে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের জন্যে হুমকিস্বরূপ অপ্রচলিত ও বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিগুলি দমনের জন্যেও এই শক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে ধোঁকা দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এইসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখতে দেখতে যদি কোনও নাগরিকের মনে এই প্রত্যয় জন্ম নেয় যে, আইনের কাছে গিয়ে কোনও প্রতিফল পাওয়া যাবে না, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েই কেবল সম্ভব সুবিচার পাওয়া,- তা হলে কি সে-প্রত্যয় একেবারেই অন্যায্য হবে? র্যাবের এরকম সব হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করার মধ্যে দিয়ে যে-উল্লাস আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রকাশ করেছেন, তা আসলে বিকৃতি; এই হত্যাকাণ্ডের সাফাই গাওয়ার মধ্যে দিয়ে তিনি যে-পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন, তা আসলে অসুস্থতা। ইতিহাস খুঁজলে এরকম বিকৃত ও অসুস্থ জ্ঞানী মানুষ আরও অনেক পাওয়া যাবে। জীবদ্দশায় তারা অনেক পুঁজা পেয়েছেন, ফুল পেয়েছেন, কিন্তু মৃত্যুর পর ইতিহাসে ঠাঁই পেলেও ঘৃণা ছাড়া আর কিছু পাননি।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মিশন এখানেই শেষ হয়নি। এরপর উনি নিউইয়র্কে গিয়ে বলেছেন, ‘সংখ্যালঘুদের জাতীয়তাবাদ হয় না। যেমন বাংলাদেশে হিন্দুরা, ভারতে মুসলমানরা, আমেরিকায় অন্যান্য সংখ্যালঘুরা।’ আসলে উনি কী বোঝাতে চান? জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা? সেটি কী কেবল সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? নাকি উনি জাতীয়তাবাদ অর্থে দেশপ্রেম বুঝাতে চাইছেন? মূলধারা বুঝাতে চাইছেন? তার মানে কি এই যে, বাংলাদেশের হিন্দুদের কোনও দেশপ্রেম নেই? বাংলাদেশের হিন্দুরা কিংবা ভারতের মুসলমানরা ওইসব দেশের মূলধারার অংশ হতে পারে না? ভারতের মুসলমানরা দেশপ্রেমিক হতে পারে না?
বিস্মিত হতে হয়, ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এসে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদরা এসব ধারণা প্রচার করে যাচ্ছেন আর অনেকে তা মুগ্ধ হয়ে শুনছে! সুশীলতন্ত্রের ময়ুরপুচ্ছ লাগানো যে-সব বাঙালি এ দেশে গার্ডিয়ান-জাতীয় পত্রিকায় ইংরেজিতে নিবন্ধ লেখার আত্মরতিতে ভোগেন, তারা কি তাদের ইংরেজি নিবন্ধে লিখতে পারবেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশ আবহাওয়া পরিবর্তন বিষয়ক যে-সেমিনার হয়েছে সেখানে এমন একজন এসেছিলেন, যিনি বিনা বিচারে মানুষ হত্যাকে সমর্থন করেন? যিনি মনে করেন, সংখ্যালঘুদের দেশপ্রেম বা জাতীয়তার বোধ থাকে না? গার্ডিয়ান বা অন্যসব ইংরেজি পত্রিকার বাঙালি বংশোদ্ভূত লেখকরা কি এই প্রশ্ন তুলতে পারবেন, বাংলাদেশ নামের যে-দেশটি জনগণের রক্তের মধ্যে দিয়ে জন্ম নিয়েছিল, জনগণের শরীর থেকে সেই রক্ত টেনে বের করার সময় যারা পাকসেনাদের পাশে দাঁড়িয়ে হাত লাগিয়েছে, তাদের কাছে এই পরিবেশব্যবসায়ী সুশীল লুম্পেনদের সরকারটি অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে? সেইসব খুনিরা কখনও দুর্নীতিবাজ হয় না, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান’ রাখার জন্যে তাদের নামমূল্যে সরকারি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়? তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে এ-সরকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে থেকে অবয়বাকৃতির একটি প্রায়-শেষ ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে এবং অচিরেই ভেঙে ফেলা হবে দেশটির সকল অবয়বাকৃতির ভাস্কর্য? এরা বলছে বটে, দেশটি পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে অদূর ভবিষ্যতে শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু পরিবেশের প্রতিকুলতায় মৃত্যু ঘটার আগেই দেশটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে মরতে বসেছে এবং এই রাজনীতি ও সংস্কৃতিহীনতার মনস্তত্ব প্রসারে ভূমিকা রাখছে বিনাবিচারে মানুষ হত্যার সাফাইকারী গুটি কয়েক মানুষ, যারা আবার নিজেদের পরিবেশবাদী বলে দাবি করে? এরা যখন বৃক্ষ হত্যার কথা বলে, তখন কি তা হাস্যকর মনে হয় না?
না, তারা এসব লিখবেন না। কেননা তারা জানেন, এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট না হলেও তাদের মতো সুশীল লুম্পেনদের মুখোশ খুলে পড়বে। তারা এসব কখনও লিখবেন না; কেননা রসুন কোয়া কোয়া, কিন্তু তাদের গোঁড়া একই জায়গায়। তারা সবাই মানুষ গড়ার নামে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নামে আলোকিত খুনী তৈরির কাজে নেমেছেন। এখন আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন, বাংলাদেশ জলে কি ডুবে যাচ্ছে? নাকি বঙ্গোপসাগরের জলে ডোবার আগেই দেশটিকে কথিত পরিবেশবাদীরা রাজনীতি-সংস্কৃতিহীনতার জলে চুবিয়ে মারছে?
অবিশ্রুত
সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৭ comments
সৈকত আচার্য - ২২ অক্টোবর ২০০৮ (১২:০৬ পূর্বাহ্ণ)
দিন তারিখ মনে নাই আমার। গত জোট সরকারের শাসনামলের মাঝামাঝি দিকে, আবু সাইয়িদ সাহেব একদিন ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিটিউশনে পেশাজীবিদের ডাকা এক সভায় বক্তৃতা করতে উঠে দাঁড়ানোর কিছুক্ষন পরেই, ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ইনিয়ে বিনিয়ে বক্তৃতা করা শুরু করেন। ইনিয়ে বিনিয়ে বলছি এই কারনে যে, তিনি প্রথমে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে বলার ভাণ করে বক্তৃতা শুরু করেছিলেন। এই কারনে প্রথমে অনেকেই ব্যাপারটি ধরতে পারেননি। যখন তিনিও মনে করা শুরু করলেন যে কেউ তো প্রতিবাদ করছে না, একেবারে সরাসরিই বলা শুরু করলেন। উপস্থিত পেশাজীবিদের মধ্যে সমস্বরে দালাল দালাল বলে রব উঠে গেল। তিনি হেসে বললেন, ঠিক আছে, আপনারা যখন পছন্দ করেছেন না আমি ও বিষয়ে আর বলতে চাই না। আসলে মানে… আমি ঠিক ওভাবে বিষয়টি বলতে চাইনি…।
অতপরঃ প্রতিবাদের মুখে বসে পড়তে হল তাকে। তার মুখের হাসিটি মঞ্চের চেয়ারে বসার পরেও গেল না।
রায়হান রশিদ - ২২ অক্টোবর ২০০৮ (১০:৪০ পূর্বাহ্ণ)
ইংরেজীতে oxymoron বলে একটা কথা আছে, যেখানে তেল জলের মত দু’টো পরস্পরবিরোধী শব্দ/ধারণা জুড়ে দিয়ে তৃতীয় কোন কিছু বোঝানো হয়। যেমন: open secret, living dead, act naturally, working holiday, original copies, alone together, deafening silence ইত্যাদি। নিন্দুকেরা সে তালিকায় army intelligence, Microsoft Works-ও সুযোগ পেলেই জুড়ে দেয়। আমাদের এক বান্ধবী অবশ্য রেগে গেলেই “বাঙ্গালী পুরুষ”-কেও এ তালিকায় জুড়ে দিতে চায়। “আলোকিত খুনী” যেন তেমনই এক oxymoron।
‘আলোকিত মানুষদের’ নিয়ে তো অনেক হৈ চৈ হয়েছে, এবং প্রতিনিয়ত হয়। এবার একটু আলোকিত খুনী, বদমাশ, জোচ্চোর, চোর, বিচারপতি, উপাচার্য, জেনারেলদের দিকে নজর দেয়া দরকার। বড় অবহেলা হচ্ছে তাদের নিয়ে, কেউ কিছু লেখেনা!
ভাল বলেছেন। “আদুরে বাঁদর” উপমাটিও ব্যবহার করা যেতে পারে (স্ত্রীর প্রতি আরেক বন্ধুর প্রেমময় সম্বোধন থেকে ধার নেয়া)।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২২ অক্টোবর ২০০৮ (১:৪৫ অপরাহ্ণ)
‘M’ for murder, ‘M’ for mayhem.
‘M’ for Mujahid, the visibly invisible man of Bangladesh politics!
ডোবার ব্যাং - ২৪ অক্টোবর ২০০৮ (৪:৪৪ অপরাহ্ণ)
১।আব্দুল্লা আবু সায়ীদ যথেষ্ট সুযোগসন্ধানী ও পিচ্ছিল অসততাসম্পন্ন লুক…
২।তিনি সেন্ট্রাল রোডে ফ্লাট কেনার পর, তার সামনের রাস্তাটা আরেকটু প্রশস্ত করার জন্য, মেয়র খোকা’র কাছে ধর্ণা দিয়ে তদবির করেন…
৩।(তদবির করাটা দোষের কি না, তার চেয়ে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো তিনি ব্যাপারটাকে উপস্থাপন করেন ঢাকা শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা জ্যাম কমানো দুষণ প্রতিকার ইত্যাদি নানান ধুনফুনের মোড়কে) ৪।সাধারণ ধান্দাবাজদের সাথে সায়ীদ সাবদের মুতো ঘ্যানী-গু নি পরিষ্কার ভদ্রলোকদের ফারাক এখানেই…
mahtab - ২৪ অক্টোবর ২০০৮ (৯:৫৪ অপরাহ্ণ)
আওয়ামী লীগ আমলে আবু সাঈদ সাহেবকে অনুদান না দিয়ে তখনকার পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয় করতে চেয়েছিলেন। ঐ কারনে কি উনি ঐ সরকারের উপর রেগে আছেন কিনা আমার জানা নাই।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২৪ অক্টোবর ২০০৮ (১০:০৯ অপরাহ্ণ)
‘আলোকিত’ সুশীলদের নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে, এবং তা বলাটাও জরুরী। কিন্তু সব কিছুরই একটা সময় আছে; মনে হয়না এখন সেই সময়। কারণ, এমুহুর্তে প্রগতির শিবিরের গৃহবিবাদ প্রতিক্রিয়াশীলদেরই লাভবান করছে। মনে হয়না আমরা কেউ তা হতে দিতে চাই। “আলোকিত খুনী”-দের দিকেই হয়তো মনযোগ ফেরানো উচিত এখন, পোস্টটির বিষয়বস্তুও তা-ই সম্ভবত দাবী করে।
অবিশ্রুত - ২৬ অক্টোবর ২০০৮ (১১:০৯ অপরাহ্ণ)
ইনসিডেনটাল ব্লগার ঠিকই বলেছেন; আমার এ নিবন্ধের মূল বিষয় কোনও বিশেষ ব্যক্তিকে ঘিরে নয়। তিনি এখানে উল্লেখিত হয়েছেন প্রাসঙ্গিক বিবেচনায়। সকলেরই চোখ ফেরানো উচিত সেইসব ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠান, কাঠামো ও আইনসমূহের দিকে,- যা দুর্বিসহ সব প্রবণতার জন্ম দিচ্ছে। তবে এটিও সকলকে মনে রাখতে হবে ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা রয়েছে, যা কখনো কখনো প্রতিষ্ঠানের চেয়েও গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। তাই ব্যক্তিও কখনো কখনো সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। লেখাটি পড়ার জন্যে ধন্যবাদ সবাইকে।