১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব
(পূর্ব প্রকাশিতের পর . . .)
আগেই উল্লেখ করেছি যে, ৩ নভেম্বর-এর অভ্যুত্থানের পর থেকে অস্বাভাবিক দ্রুততায় ঘটনাবলী ঘটতে থাকে। ইতিপূর্বে ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর মুষ্টিমেয় কয়েকজন অফিসার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা করায়ত্ত করার মতো অসম্ভব কর্মটি সম্পাদন করেছে। ঘটে যাওয়া এসব নাটকীয় দৃশ্যপট হয়তো জাসদ নেতৃবৃন্দকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে থাকবে।
মূল পরিকল্পনায় ছিল অভ্যুত্থান শুরুর পর সৈন্যরা বাধাদানকারী অফিসারদের গ্রেফতার করে টু ফিল্ড আর্টিলারীতে নিয়ে রাখবে। একমাত্র জিয়াকে নিয়ে আসা হবে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে, কর্নেল তাহেরের কাছে। সে অনুযায়ী এলিফ্যান্ট রোডে ইউসুফ ভাইয়ের বাসায় তাহের ও ইনু অপেক্ষা করতে লাগলেন। আমিও ছিলাম সেখানে। রাত দেড়টার দিকে নায়েক সিদ্দিকের নেতৃত্বে এক ট্রাক সৈন্য গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সেখানে এলেন। তাহের প্রথমেই তাদের জিজ্ঞাসা করলেন ‘জিয়া কোথায়’? উত্তরে সিদ্দিক বললো, ‘স্যার আপনাকে এখনি ক্যান্টনমেন্ট যেতে হবে। জিয়াকে মুক্ত করেছি। কিন্তু তিনি আসেন নি। আপনাকে যেতে বলেছেন’। এই বলে সিদ্দিক যা জানালেন তা সংক্ষেপে এরকম – সিপাহীরা জিয়াকে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করার পর জানায়, দেশে সিপাহী-জনতার বিপ্লব শুরু হয়েছে। কর্নেল তাহের হলেন তাদের নেতা এবং তার কাছে জিয়াকে যেতে হবে এখনি। জিয়া সব শুনে সৈন্যদের আবেগে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তাহের শুধু তোমাদের নেতা হবে কেন, সে আমারও নেতা। সে ক্যান্টনমেন্টে এসে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিলেই তো ভাল হয়। তাকে তোমরা এখানে নিয়ে আস’। একথা শুনে সৈন্যরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। একদিকে তারা জানে জাসদ জিয়াকে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসাবেই দেখছে। পাশাপাশি তাহের সম্পর্কে জিয়ার এ বক্তব্যে সৈন্যরা জিয়াকে এলিফেন্ট রোড নিয়ে যাবার নির্দেশ বিস্মৃত হয়। সিপাহীদের এই গ্র“পের নেতৃত্বে একজন অফিসার থাকলে এই ভুল হতো না।
সব শুনে কর্নেল তাহের সে মুহূর্তে তাৎপর্যপূর্ণ একটি মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমরা হেরে গেছি’। তারপর তিনি এবং হাসানুল হক ইনু রওনা হলেন ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে। অভ্যুত্থানী সৈন্য বোঝাই ট্রাকের পেছনে ইউসুফ ভাইয়ের গাড়িতে। আমাকে বলা হলো সিরাজুল আলম খানের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে। ইউসুফ ভাইয়ের বাসার পাশেই সেসময় সাংবাদিক কে বি এম মাহমুদ থাকতেন। তার বাসা থেকে সিরাজুল আলম খানকে ফোন করলাম। তিনি ইতিমধ্যে অভ্যুত্থান সম্পর্কে জেনেছেন। সেনানিবাসের সাথে তার ভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম মারফত। টেলিফোনেই তিনি আমাকে গণকন্ঠের শামসুদ্দিন আহমেদ পিয়ারু সহ বেতার ভবনে যাবার জন্যে বললেন। বেতারে প্রচারের জন্যে একটা বক্তব্যের খসড়াও তিনি ফোনে বললেন।
ওই বক্তব্যের ভাষা ছিল এরকম – বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও গণবাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাবাহিনী এক বিপ্লবী অভ্যুত্থানে সামিল হয়েছে এবং ক্ষমতা দখল করেছে। অভ্যুত্থানে সামিল হবার জন্যে জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বানও জানানো হয় এ বক্তব্যে। কৌতুহল উদ্দীপক বিষয় হল, এ ক্ষেত্রে অভ্যুত্থানের নেতার নামটি বলা হলো না।
যাই হোক বেতারে প্রচারের জন্যে ওই বক্তব্য নিয়ে আমি মটরসাইকেলের পেছনে শামসুদ্দিনকে বসিয়ে রওনা হলাম। ইনু ভাই’র নির্দেশের বাইরে আমি একটি কাজ করেছিলাম। আমার ছোট ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাহার-এর নেতৃত্বাধীন একটি সুইসাইড স্কোয়াডকে তৈরি রেখেছিলাম যে কোনো প্রয়োজনে কাজে লাগাতে।
বেতারে যাওয়ার পূর্বে বাহারকে অভ্যুত্থানের প্রচারণার কাজে এক ট্রাক টহল পুলিশের সাথে উঠিয়ে দিলাম। স্কোয়াডের বাকি সদস্যদের পাঠালাম নীলক্ষেত থেকে মাইক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভ্যুত্থানের খবর প্রচার করার জন্য। প্রচারণার এ কাজগুলো নিজ দায়িত্বে করেছিলাম। পিজি হাসপাতালের কাছে যাবার পরই ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা সৈনিকরা আমাদের থামালো। জানালাম যে, আমরা কর্নেল তাহেরের লোক, বেতার ভবনে যাবো। অমনি স্যালুট দিয়ে পথ ছেড়ে দিল সৈনিকরা। বেতার ভবন কিছুক্ষণ আগেই তাদের দখলে এসেছে। এরপর বেতারে কর্তব্যরত অফিসার ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গিরকে ওই বক্তব্য প্রচারের জন্য দিলাম এবং শামসুদ্দিনের নির্দেশ মত কাজ করতে বললাম। ভোররাতে অনেক বারই তা প্রচারিত হয়েছে। এ ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার পর বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার যে যেখানে ছিল-সবাই বিদ্রোহে সামিল হয়ে যায়। টু ফিল্ড আর্টিলারীতে গিয়ে দেখা গেল কিছু অফিসার ও অনেক জওয়ান পরিবেষ্টিত অবস্থায় বসে আছেন জিয়া। পরিধানে পাজামা-পাঞ্জাবী। দাঁড়ি কাটা হয় নি কয়েক দিন। বিপর্যস্ত চেহারা। তাহেরকে দেখেই এগিয়ে এলেন জিয়া। ইংরেজিতে বললেন, ‘তাহের তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছো, আমি এখন তোমার অধীনস্থ মাত্র। তুমি যা বলবে তাই হবে। আমি তাই পালন করবো’। প্রথম দর্শনেই আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছিলেন জিয়া, ‘সিরাজুল আলম খান কোথায়’? জিয়ার সাথে সিরাজুল আলম খানের একটি স্বতন্ত্র যোগাযোগও ছিল। জাসদ তা অবহিত ছিল। সাঈদুর রহমান নামের এক ভদ্রলোক সে যোগাযোগ রাখতেন। অভ্যুত্থানে জিয়াকে মিত্র ভাবার ভিত্তি হিসাবে ওই যোগাযোগেরও ভূমিকা ছিল।
কর্নেল তাহের ও ইনুর সেনানিবাসে যাবার উদ্দেশ্য ছিল মূলতঃ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যতদূর সম্ভব তা নিজেদের অনুকুলে আনার চেষ্টা করা। মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী জিয়াকে বাইরে এনে তার সাথে রাজনৈতিক বৈঠকের ভিত্তিতে অভ্যুত্থানের পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ যখন সম্ভব হলো না তখন সম্ভাব্য ইতিবাচক কি কি করা যায় তাই দেখতে গিয়েছিলেন তারা। জিয়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অধ্যায় শেষ হতেই তাহের বললেন, ‘চলুন আমারা অলোচনায় বসি’। ঐতিহাসিক সে আলোচনায় তাহের জিয়াকে কয়েকটি প্রস্তাব দেন। প্রথমত, বেতারে জিয়া জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। দ্বিতীয়ত, শহীদ মিনারে জিয়া ও তাহের উভয়েরই জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন। তৃতীয়ত, অবিলম্বে দেশের বিভিন্ন কারাগারে অন্তরীণ বন্দীদের মুক্তি দানের নির্দেশ দেয়া। চতুর্থত, জিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অন্তবর্তীকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন এবং পঞ্চমত, সিপাহিদের ১২ দফা মেনে নেয়া। বৈঠকে জিয়া তাহেরকে বলেন, ‘তুমি একজন বিপ্লবী। কিন্তু আমি তা নই এবং হতেও পারবো না। তুমি সেনাবাহিনীতে নেই, কিন্তু আমি সেনাবাহিনীতেই আছি। শহীদ মিনারে তুমি ভাষণ দিতে পার, আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। সামরিক পোশাকে আমি সেখানে ভাষণ দিলে রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘটবে’। শহীদ মিনারে ভাষণের প্রসঙ্গ ছাড়া আর সব বিষয়েই জিয়া ঐক্যমত পোষণ করেছিলেন।
বন্দী জিয়াকে সেনানিবাসের বাইরে নিয়ে আসতে না পারায় ক্ষতি যা হলো তা এই যে, ক্ষমতার কেন্দ্র সেনানিবাসের ভেতরেই রয়ে গেল। তারপরও তাহের যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলেন শক্তির ভরকেন্দ্র সেনানিবাসের বাইরে নিয়ে আসার জন্যে। জাসদের নেতৃত্বে রাজপথ সংঘটিত জনতার দখলে থাকলে তা সম্ভবও হতো। বাস্তবে তা হয় নি। একটা প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, তাহের নিজে কেন সেনানিবাসের ভেতরে থেকে অভ্যুত্থান পরিচালনা করলেন না? এর সম্ভাব্য জবাব হলো জাসদ ও তার গণসংগঠন সমূহের ওপর তিনি হয়তো বেশিই ভরসা করে থাকবেন। ঘুরিয়ে বললে, জাসদ নেতৃবৃন্দও হয়তো তাকে সেরকমই আশ্বাস দিয়েছিলেন। এছাড়া রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিচ্ছিন্ন কোনো ধরণের সামরিক অভ্যুত্থানে কর্নেল তাহের কখনোই আগ্রহী ছিলেন না। সেকারণে অভ্যুত্থানের হেড কোয়ার্টার ক্যান্টনমেন্টের বাইরে রেখে ছিলেন। নিজেও অবস্থান করছিলেন ক্যান্টমেন্টের বাইরে। অভ্যুত্থানের হেড কোয়াটার্স ক্যান্টমেন্টের বাইরে স্থাপন করা থেকে সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে তাহেরের চিন্তার বৈশিষ্ট্য বোঝা সম্ভব। কিন্তু তার সে চিন্তার অংশীদার কতটা অন্যান্য নেতৃবৃন্দ হতে পেরেছিলেন?
জিয়ার সাথে ওই প্রথম বৈঠককালেই তাহের বুঝতে পারেন যে, তাকে সেনানিবাসের বাইরে নিয়ে আসা আর সম্ভব নয়। সে অবস্থায় বেতারে জিয়াকে ভাষনদানের প্রস্তাব দেয়া হয় এ কারণে যে, তার মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে অভ্যুত্থানের লক্ষ্য সমূহ ও প্রতিশ্র“তি তুলে ধরা যাবে। তাহের ও জিয়ার ওই বৈঠককালে ঢাকা বেতার থেকে কার্যত আমাদের দেয়া ঘোষণাই প্রচারিত হচ্ছিলো। এদিকে তখন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাইকিং চলছে। অভ্যুত্থানের খবরের পাশাপাশি সকাল ৮টায় শহীদ মিনারে যে জনসভা হবে, তাতে যোগদানের জন্যেও ছাত্র-জনতাকে আহবান জানানো হচ্ছে মাইকে। অভ্যুত্থানের সূচনা লগ্নে জাসদের বেসামরিক অংশের অংশগ্রহণ ছিল অভাবনীয় রকমের স্বল্প। সৈনিকরা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলার পর জাসদ নেতারা বুঝতে পারলেন যে, কি বিশাল কর্মযজ্ঞে তারা হাত দিয়েছিলেন এবং কি পাহাড় পরিমাণ তাদের গাফিলতি।
৭ নভেম্বর সকালে শহীদ মিনারে জাসদ ও তার সকল ফ্রন্টের যৌথ সমাবেশ হবার কথা। ভোর রাত থেকেই প্রস্তুতি চলছিল। এদিকে শেষ রাতে অভ্যুত্থানী সৈন্যদের একটি দল পূর্ব সিদ্ধান্ত মত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে যায়। কারারক্ষীরা সিপাহীদের আহ্বানে গেট খুলে দেয়। এরপর জেল কর্তৃপক্ষকে অভ্যুত্থান সম্পর্কে অবহিত করে সৈন্যরা এবং রাজবন্দিদের মুক্ত করে দেবার জন্যে বলে। সে সময় প্রায় ৫ হাজার রাজনৈতিক কর্মী সারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। অভ্যুত্থানের সংবাদ এবং বিপ্লবী সৈনিকদের বক্তব্য শুনে জেলার জাসদ নেতা রাজবন্দী মোঃ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল ও সুলতান রাজাকে বিষয়টি জানালেন। প্রাথমিক ভাবে অভ্যুত্থানের বিষয়ে কিছুই জানতেন না তারা। স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের মুক্তির সুযোগ গ্রহণেও নেতৃবৃন্দ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছিলেন। এমন অবস্থা হয়েছে দেশের অন্যান্য অনেক কারাগারেও। সৈন্যরা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে মুক্ত করতে গিয়েছিল কিন্তু বন্দীরা মুক্তি পেতে নারাজ। কারণ বাইরে জাসদ যে এতসব কিছু করছে তারা তার কিছুই জানেন না। এছাড়া ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ডের পর অন্তরীণ রাজনীতিকরা এমনিতেই বাড়তি আতঙ্কে ছিলেন। সেনা জওয়ানদের মুক্তির আহ্বানে আস্থা রাখতে পারছিলেন না তাঁরা।
অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার পর কারাগারে নিজেদের নেতৃস্থানীয় সংগঠকদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত না করা গাফিলতি বটে। এটা ছিল একটা গুরুতর ভুল। কারণ শুধু ঢাকা কারাগারেই তখন জাসদের কয়েক হাজার রাজনৈতিক কর্মী অন্তরীণ। এর বাইরে আবদুল মতীন, টিপু বিশ্বাসসহ অন্যান্য অনেক বামপন্থী দলের নেতা-কর্মীরা তো ছিলেনই। অভ্যুত্থানের প্রথম সুযোগেই এরা জেল থেকে বেরিয়ে এসে অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ায় সামিল হতে পারতেন। যাই হোক, ঢাকা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে রাজবন্দীদের প্রতি অভ্যুত্থানী সৈনিকদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্যে মোঃ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল ও সুলতান রাজা বাইরে যাবেন। কারাগারের এ ঘটনা থেকে বোঝা সহজ যে, জাসদ একটি অভ্যুত্থান সংগঠনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এবং কর্নেল তাহেরকে সে অভ্যুত্থানের সামরিক পর্যায়টি বাস্তবায়নে এগিয়ে দিলেও দলের অন্যান্য অংশকে এ অভ্যুত্থানে সামিল করতে দারুন সব গাফিলতি করেছেন তারা। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে এবং আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের প্রচুর কর্মী ছিল। কিন্তু মাইকে অভ্যুত্থান সম্পর্কে গণবাহিনীর কর্মীদের ঘোষণা সত্ত্বেও সেসব কর্মীরা মিছিল সমাবেশে খুব একটা ব্যাপক আকারে অংশ নেয় নি। কারণ তারা অভ্যুত্থান সম্পর্কে পূর্ব থেকে কিছুই জানতো না।
এভাবেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সন্দেহ এবং অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে জাসদের ফ্রন্ট সংগঠনগুলো মূল্যবান সময় অপচয় করেছে। এ দোদুল্যমানতা ও সিদ্ধান্তহীনতা যে কি ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনতে পারে তা আমরা দেখেছিলাম ৭ নভেম্বর সকালেই। জাসদের অভ্যুত্থানে তার অঙ্গ-সংগঠনসমূহ নিশ্চল থাকলেও দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলো বিশেষ করে মোশতাক সমর্থক গোষ্ঠি শুরু থেকেই অত্যন্ত সংগঠিত ভাবে প্রতিবিপ্লবী তৎপরতায় নেমে পড়েছিল। ভোর থেকেই দেখা গেছে টুপিধারী কিছু লোক মোশতাকের ছবি নিয়ে মিছিল করছে। বিভিন্ন ডানপন্থী সংগঠনের কর্মী ছিল এরা।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করি। বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার যে দলটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়েছিল, তারা সেখান থেকে ফিরে আসার পরপরই মোশতাক সমর্থক কিছু সৈনিক ওখানে যায় এবং তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ওবায়দুর রহমান ও শাহ মোয়াজ্জেমকে মুক্ত করে নিয়ে আসে। খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থান সংঘটিত হবার পর এরা অন্তরীণ হয়েছিলেন। মোশতাক ক্ষমতায় থাকাকালে ট্যাংক রেজিমেন্টের স্বল্প সংখ্যক সৈন্যের একটি বিশেষ ঘাতক বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তারাই ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। ৭ নভেম্বরের সিপাহী অভ্যুত্থানের পরপরই এরা আবার বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে শহীদ মিনারে জাসদ নির্ধারিত সমাবেশেও তারা হামলা চালায়। ওই সময় সে সমাবেশে সদ্য কারামুক্ত জাসদ নেতা মোঃ শাহজাহান বক্তব্য রাখছিলেন। ঘাতক বাহিনীর হামলার পর কিছুক্ষণের জন্যে হলেও সমাবেশটি পণ্ড হয়ে গিয়েছিল। হামলায় কয়েকজন কর্মী গুলিবিদ্ধ হলেও সৌভাগ্যবশত কেউ মারা যায়নি। ৮ নভেম্বর জাসদের বায়তুল মোকারমের সমাবেশেও ওই ঘাতক চক্র হামলা চালিয়েছিল। আ ফ ম মাহবুবুল হক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন তাতে।
মোশতাক চক্র ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু অভ্যুত্থান সংগঠনের পর থেকেই তারা এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাতে শুরু করে। ৬ নভেম্বর রাতের যে সভায় অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন অপারেশনাল পরিকল্পনা নেয়া হয় তাতে ট্যাংক রেজিমেন্টের সুবেদার সারোয়ারের নেতৃত্বে মুশতাক-ফারুক-রশীদ অনুগত কিছু সৈনিকও উপস্থিত ছিল। ১৫ আগস্টের পর থেকেই এরা ক্যান্টনমেন্টের বাইরে অবস্থান করছিল। খালেদের বেঙ্গল রেজিমেন্টের মূল প্রতিপক্ষ ছিল এরা। ৬ নভেম্বর বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে এদের একাত্মতা কর্নেল তাহেরেরর নজর এড়ায় নি। তিনি জানতেন যে, এরা সৈনিক সংস্থার সদস্য নয় বরং মোশতাকের নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী চক্রের প্রতিই তাদের আনুগত্য। কিন্তু একটি সাধারণ গণঅভ্যুত্থানে সামিল হওয়া থেকে তাদের নিবৃত্ত করার বাস্তবতা এবং যুক্তি কোনোটাই তখন খুব একটা ছিল না। তাছাড়া আমাদের আরেকটা ধারণা ছিল যে, ওই গোষ্ঠীটি অভ্যুত্থানে সামিল থাকলে অভ্যুত্থানের একটি বড় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সামরিক ভাবে নিষ্ক্রিয় রাখা যাবে। এছাড়া ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পর ট্যাংক রেজিমেন্টের ঘাতক চক্রের অধিকাংশ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাকেই খালেদ মোশাররফেরা নির্বিঘেœ দেশের বাইরে চলে যেতে দিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নেয়া হয়েছিল যে, নেতৃত্বহীন এসব সৈন্যরা গণঅভ্যুত্থানের বিরোধী অবস্থানে যেতে পারবে না।
কিন্তু ৭ নভেম্বর ভোরে দক্ষিণপন্থীদের সংগঠিত ও পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা গেল যে এ অভ্যুত্থানকে তারা নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করতে তৎপর। এছাড়া পরবর্তীতে সৈনিক সংস্থার মধ্যে দক্ষিণপন্থী অনেক এজেন্টের সন্ধান পাওয়া গেল। যাদের মধ্যে একজন ছিল বিমান বাহিনীর কর্পোরেল ফখরুল। সে সৈনিক সংস্থার একজন নেতৃস্থানীয় সংগঠক ছিল। ৭ নভেম্বর সকালে শহীদ মিনারের ওই সমাবেশে জিয়া আসেননি। মোশতাক চক্রের ঘাতকদের ওই হামলা জিয়ার হাতকেই শক্তিশালী করেছিল। সকাল ৯ টার দিকে কর্নেল তাহের আবার ক্যান্টনমেন্টে গেলেন। সঙ্গে ইউসূফ ভাইও ছিলেন। জিয়া তখন অনেক বেশি সংগঠিত। মীর শওকত, খলিলুর রহমান ও ওসমানীর পাশাপাশি সিআইএ’র লোক হিসাবে চিহ্নিত মাহবুব আলম চাষীও সেখানে উপস্থিত। জিয়ার পাশে এদের সবাইকে উপস্থিত দেখে কর্নেল তাহের বুঝতে পারলেন যে, পরিস্থিতি আরও বেশি দক্ষিণপন্থীদের কব্জায় চলে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে হঠাৎ করে একটি খবর আসে যে, মোশতাক বেতার ভবনে যেয়ে উপস্থিতি হয়েছেন এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্য ভাষণ দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খবর পাওয়া মাত্রই তাহের সেখানে যান। মোশতাকের সঙ্গে তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও ওবায়দুর রহমান ছিলেন। কর্নেল তাহের খুবই কঠোর ভাষায় মোশতাককে জানিয়ে দেন যে, বেতারে তিনি কিছুই ঘোষণা করতে পারবেন না। এরপর তিনি সৈনিক সংস্থাকে নির্দেশ দেন মোশতাক, ঠাকুর ও ওবায়েদকে একটি কক্ষে আটক রাখার জন্যে। ওই দিন বিকেলেই অবশ্য রাষ্ট্রক্ষমতার ধারাবাহিকতার কপট নাটকের অংশ হিসাবে মোশতাককে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণ দিতে দেয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালের জন্যে রাষ্ট্রপ্রধান হন বিচারপতি এএসএম সায়েম। একই সঙ্গে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকও হলেন তিনি। যদিও কার্যতঃ মূল ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে রইলেন জেনারেল জিয়াই। জিয়া ৭ নভেম্বর সকালে এক ভাষণে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবেও ঘোষণা করেছিলেন।
৭ নভেম্বর সকালে শহীদ মিনারে জিয়ার না আসা এবং বিকেলে রাষ্ট্র ক্ষমতার এই হাত বদলের পর সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়ায় জাসদ ভূমিকাহীন অবস্থানে চলে যায়। জাসদের সামনে তখন দু’টি পথ খোলা ছিল। একটি হল, বাস্তব সে অবস্থায় ক্ষমতার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে পশ্চাদপসরণ করা। এছাড়া দ্বিতীয় পথ ছিল, বিপ্লবী অগ্রাভিযান অব্যাহত রাখা। ৬ নভেস্বর রাতে সিপাহী গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার পরও যেখানে জাসদ নেতৃবৃন্দ ক্যান্টনমেন্টের বাইরে অভ্যুত্থানী শক্তিকে সংগঠিত করতে বিশেষ কোনো উদ্যোগী ভূমিকা নেন নি, সেখানে নেতৃত্ব আশ্চর্যজনক ভাবে এ পর্যায়ে প্রথম করণীয়ের বদলে বিপ্লবী অগ্রাভিযান চালিয়ে যাবারই সিদ্ধান্ত নিলেন।
এ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলে তখনই জাসদের পক্ষ থেকে ব্যাপক ভবে লিফলেট প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হল। আগে যেমনটি শোনা গিয়েছিল, তেমনি কিংবদন্তীর যাদুকরী নায়কের মতো সিরাজুল আলম খান তখন তার সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে কাজে নামলেন। সৈনিক সংস্থার সদস্যদের পাহারায় ঢাকার বড় বড় প্রেসগুলোতে লাখ লাখ লিফলেট ছাপা হয়ে বিলি করা শুরু হলো সারা দেশে। ‘জঙ্গি জনতার ঐক্য গড়ে তুলুন’ এ শিরোনামে কারামুক্ত জলিল-রব স্বাক্ষরিত এ লিফলেট জনগণকে ব্যাপকভাবে জাসদের পতাকাতলে সমবেত হয়ে নতুন করে রাজনৈতিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হয়। তখনকার বাস্তবতায় রাজনৈতিক অগ্রাভিযানের এ আহ্বান ও সিদ্ধান্ত ছিল একটা ভুল। জাসদ ও কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী অভ্যুত্থান সংঘঠিত হলেও বেতার ও টিভির মাধ্যমে জনগণ নায়ক হিসেবে পেলো জিয়াউর রহমানকে। জাসদ বা তাহেরের ভূমিকা তাদের সামনে একেবারেই অজানা। এ অবস্থায় নতুন অগ্রাভিযানে জনতার সমর্থন পাওয়ার তো কথা নয়। জাসদ তা পায় নি। বরং জাসদের এসব তৎপরতাকে ধ্বংসাত্মক অপতৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ পেয়েছে জিয়ার চারপাশে ভীড় করা প্রতিবিপ্লবী শক্তি।
৮ নভেম্বর সিপাহীদের হাতে অল্প কয়েকজন অফিসার নিধনের ঘটনাটি নভেম্বর অভ্যুত্থানের সঙ্গে ভিন্ন আরেক মাত্রা যুক্ত করে। কোনো ভাবেই জাসদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এ ঘটনা ঘটে নি। এ প্রসঙ্গে আবারো উল্লেখ করি যে, কোনো অফিসার এমনকি ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানের নায়ক ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফকে কোনো ভাবে হত্যা না করার জন্য সিপাহীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তাহের। অভ্যুত্থানী সিপাহীরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালনও করেছিল। আজ একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, অভ্যুত্থানী সিপাহীদের হাতে নয় বরং নিজ ইউনিটের দু’জন অফিসারের হাতেই খালেদ মোশাররফ নিহত হন। ৮ নভেম্বরে সম্ভবতঃ মোশতাক অনুগত ঘাতকরাই অফিসার নিধনের পরিকল্পনা কার্যকর করে। এ ঘটনায় জিয়া ও তাহেরের মধ্যে এক বিপদজনক দূরত্বের দেয়াল তৈরি হয়। কারণ প্রতিক্রিয়ার পক্ষের সমস্ত শক্তি একযোগে প্রচার চালাতে শুরু করে যে, তাহের ও জাসদই অফিসার নিধনের জন্যে দায়ী।
তবে পরবর্তীকালে এও শোনা গেছে যে অফিসার হত্যার পরিকল্পনা স্বয়ং জিয়াই করেছিলেন এবং এ ঘটনাকে তিনি অত্যন্ত ফলপ্রসূভাবে নিজের শক্তি সঞ্চয়ের কাজে ব্যবহার করেন। অফিসার নিধন শুরুর পরপরই আতংকিত ধনীক গোষ্ঠীর প্রতিভুরা নিঃশর্তভাবে জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে ছুটে এসেছিলেন সে সময়। এরপরই শুরু হয় জাসদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ। বলা শুরু হয় যে, ভারতের এজেন্ট জাসদ ও তাহের সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করে দিয়ে দেশকে ভারতের কাছে বিক্রির পরিকল্পনা করছে। দৈনিক ইত্তেফাকে আবদুল হামিদ তার ‘স্পষ্টভাষী’ কলামে জাসদ সম্পর্কে লিখলেন, ‘অন্ধকারের গহ্বর হতে বিষাক্ত সার্পেন্টাইনরা বাহির হইয়াছে। গোড়াতেই ইহাদের আন্ডাবাচ্চা সহ নির্মূল করিতে হইবে। মার্ক টাইম করিবার সময় নাই’। সমস্ত বামপন্থী শক্তিও তখন তাদের প্রচারণায় জাসদকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে নির্ধারণ করেন।
সৈনিকদের আক্রোশ ছিল অফিসারদের বিরুদ্ধে। এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু জাসদ তাদের সে আবেগের সুযোগ নেয় নি। যদি অফিসারদের হত্যা করাই জাসদের লক্ষ্য হবে তাহলে তারা জিয়াকেই হত্যা করতো। ৬ নভেম্বর অভ্যুত্থান সংঘঠনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণকালে বিপ্লবী সৈনিকরা বলেছিল যে, ক্যান্টনমেন্টের তারা জিয়া সহ উর্ধ্বতন সকল অফিসারকে শেষ করে দেবে। জাসদ যেন ক্যান্টনমেন্টের বাইরে জনতার শক্রদের শেষ করে। তাদের ভাষায়, ‘আমরা মনে করি এটাই বিপ্লব’। কর্নেল তাহের তাদের সেসময় বেশ কঠোর ভাবেই নিবৃত্ত করেছিলেন বটে কিন্তু বাস্তবে ওটাই বিপ্লব। বল প্রয়োগের মাধ্যমে এক শ্রেণী কর্তৃক আরেক শ্রেণীর প্রতিভূদের উচ্ছেদ। নিপীড়িত মানুষের নেতৃত্বদানকারী তাহের ভুল করলেও তার প্রতিপক্ষ কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ভুল করে নি। জিয়ার প্রাণরক্ষাকারী তাহের, সিপাহী অভ্যুত্থানের নায়ক তাহেরকে হত্যা করতে তাদের এতটুকু দ্বিধা হয় নি, হাত কাঁপে নি। যেমন হাত কাঁপেনি পরবর্তীতে হাজার হাজার অভ্যুত্থানী সৈনিককে গণ ফাঁসী দিয়ে হত্যা করতে। ৭ নভেম্বর-এর বড় শিক্ষা এ থেকে পাওয়া যাবে।
নভেম্বর অভ্যুত্থানের পরই জাসদের সভাপতি এম এ জলিল এবং সাধারণ সম্পাদক আসম আব্দুর রব কারাগার থেকে মুক্তি পান। ৭ নভেম্বর ভোরে জিয়ার সঙ্গে তাহেরের বৈঠকে রাজবন্দীদের মুক্তির বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছিল তারই ফলশ্র“তিতে এ দুই কেন্দ্রীয় নেতার মুক্তি। কিন্তু তখনও দেশের বিভিন্ন কারাগারে জাসদের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী সংগঠক অন্তরীণ। জিয়া সরকার তাদের মুক্তি দিলো না। বলতে গেলে ৮ নভেম্বরের পর থেকেই জিয়া ও তাহেরের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যেতে থাকে। ৯ নভেম্বর থেকে দেখা গেল টেলিফোনে জিয়াকে পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।
আগেই বলেছি জলিল-রবের স্বাক্ষরিত লিফলেটে জনগণকে নতুন করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। জাসদ যে তখন ক্রমশঃ জিয়া বিরোধী অবস্থানে চলে যাচ্ছে ওই লিফলেটের মধ্য দিয়েও তা সুস্পষ্ট। এটাও বোঝা যাচ্ছিল যে, জিয়া শক্তি সঞ্চয় করছে। দক্ষিণপন্থীরা তার চারপাশে জড়ো হচ্ছে এবং জাসদের ওপর বড় রকমের আঘাত আসন্ন। জাসদ নেতৃবৃন্দের অবশ্য ধারণা ছিল পূর্ণগঠিত হতে জিয়ার সময় লাগবে। অতিদ্রুত আঘাত হানা জিয়ার পক্ষে কঠিনই হবে। বলতে গেলে জাসদ সেসময় নিজের শক্তি সম্পর্কে অতি আশাবাদী অবস্থান নিয়েছিল। দেশের ডান ও বাম সকল রাজনৈতিক শক্তি তখন জাসদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে হরহামেশাই হস্তক্ষেপ করে এমন বিদেশী শক্তিগুলোও ওই সময় জাসদের বিরুদ্ধে জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করছিল। এমনি একটি অবস্থায় প্রতিপক্ষের শক্তিকে খাটো করে দেখা এবং নিজেদের শক্তি সম্পর্কে অতি আশাবাদ ছিল জাসদ নেতৃত্বের একটি বড় ভ্রান্তি।
আগেই বলেছি যে, এ পর্যায়ে জাসদ ব্যাপক রাজনৈতিক প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সদ্য কারামুক্ত নেতা জলিল ও রবের আবির্ভাবে যেরূপ রাজনৈতিক গতিশীলতা ও জনসমর্থন জাসদ আশা করেছিল বাস্তবে তা অবশ্য দেখা যায় নি। অভ্যুত্থানের মাত্র দু সপ্তাহ পরই জিয়া জাসদের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানেন। ২৩ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় জলিল, রব, শাহজাহান সিরাজ, আবু ইউসুফ ও হাসানুল হক ইনুকে। এত দ্রুত শক্রপক্ষের পরিকল্পিত এ আঘাত জাসদ নেতৃত্বের কাছে ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। নির্বিঘেœ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের গ্রেফতার থেকে তা বোঝা যায়। সে সময়কার অন্যতম সংগঠক হাসানুল হক ইনুর গ্রেফতার হওয়াটা মোটেই কাঙ্খিত ছিল না। কারণ অভিজ্ঞ এই কেন্দ্রীয় সংগঠক গোপন রাজনীতির কলাকৌশলে বেশ অভ্যস্ত ছিলেন।
২৩ নভেম্বর বিকেলে আমি কর্নেল তাহেরের সঙ্গে দেখা করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার একটি পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে তিনি সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে স্থির হয় যে, ২৪ নভেম্বর সৈনিক সংস্থার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সভা হবে। এসএম হলের আবাসিক শিক্ষক, আমার বন্ধু পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার সারোয়ারের বাসায় ওই সভার স্থান নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনায় রত মুক্তিযোদ্ধা ড. সারোয়ার জাসদ রাজনীতির সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত ছিলেন না। একজন সহানুভূতিশীল হিতৈষী হিসাবেই তিনি তার বাসায় ওই বৈঠক করার সুযোগ দিয়েছিলেন। ২৩ নভেম্বরের বৈঠক শেষে তাহের ভাই ও আমি রিক্সায় ঢাকা শহর ঘুরতে বের হই। হঠাৎ তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরস্থ আমাদের বড় ভাইয়ের বাসায় যাবেন। তার কথায় আমি অবাকই হলাম। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, শক্রপক্ষ এ সময় নিশ্চয়ই তাকে সেখানে আশা করছে না। ওই বাসায় যাবার পর আমাদের দু’জনকে দেখে সবাই বিস্মিত হন। অল্প কিছুক্ষণ অবস্থান শেষেই ও বাসা থেকে আমরা সিদ্ধেশ্বরীর উদ্দেশ্যে রওনা হই। সিদ্ধেশ্বরীতে আমরা যাই ড. হুমায়ুন আবদুল হাইয়ের বাসায়। তাহের ভাই তার পুরনো ও বিশ্বস্ত এ বন্ধুর বাসা থেকে বঙ্গভবনে জিয়ার কাছে একটি ফোন করেন। জিয়ার এডিসি ক্যাপ্টেন জিল্লুর ফোনটি রিসিভ করেছিলেন। জিল্লুরকে তাহের ভাই নিজেও চিনতেন। তাহেরকে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে জিয়াকে খবর দিতে যান তিনি। বেশ কিছুক্ষণ পর জিল্লুর জানান যে, জেনারেল জিয়া একটি কনফারেন্সে আছেন। তিনি এরশাদের সঙ্গে কথা বলার জন্যে তাহেরকে অনুরোধ জানিয়েছেন। জিয়ার নিজস্ব পছন্দে জেনারেল এরশাদকে মাত্র কয়েকদিন পূর্বেই ভারত থেকে এনে ডেপুটি চীফ অফ স্টাফ নিয়োগ করা হয়েছে।
এরশাদের সঙ্গে তাহেরের সেই কথোপকথনের অনেক অংশই এখানো আমার মনে পড়ে। টেলিফোনে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় জিয়াকে তিরস্কার করেছিলেন তাহের। তিনি তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে অভিহিত করে জাসদ নেতৃবৃন্দ এবং ইউসুফ ভাইয়ের গ্রেফতারের পরিণাম সম্পর্কে হুঁশিয়ারী দিতে থাকেন। তিনি এও বলেন যে, ওই বিশ্বাসঘাতককে বলে দেবেন যে আমি কখনোই আপোস করবো না। সৈনিকদের ১২ দফা দাবীর ব্যাপারেও কোনো ছাড় দেবো না। বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম জিয়াকে ভোগ করতে হবে – এ কথা বলে তাহের টেলিফোন রেখে দেন। টেলিফোনে তাহেরের এ কথোপকথনে ড. হাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাহের রিসিভার রাখা মাত্রই তিনি বলেন – নিরাপত্তার কারণে আপনাদের দু’জনের এখনই এ বাসা ত্যাগ করা উচিত। তাহের তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, টেলিফোনে আড়ি পেতে এত দ্রুত তাদের হদিস বের করা এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় শক্রপক্ষের জন্যে সহজসাধ্য হবে না। ওই বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সায় ওঠার পর তাহের ভাই জানান যে, টেলিফোনে এরশাদ বারবারই তাকে বলছিলেন ‘আমি মাত্র ভারত থেকে এসেছি। আমি কিছুই জানি না। আমাকে দয়া করে অভিযুক্ত করবেন না’।
পরদিন ২৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সলিমুল্লাহ হলের হাউস টিউটর আমার বন্ধু সারোয়ারের বাসা থেকে কর্নেল তাহের গ্রেফতার হয়ে যান। বোঝা গেল, ২৩ তারিখের বৈঠকে উপস্থিত কেউ সৈনিক সংস্থার সভার খবরটি ফাঁস করে দিয়েছে। আগে থেকে সব জানা থাকার কারণেই পুলিশের পক্ষে এতটা নির্বিঘেœ তাহের ও অন্যান্য সংগঠকদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছিল। কর্নেল তাহেরকে গ্রেপ্তারের পর থেকে আমাকে পুরোদস্তুর আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। এর মধ্যে ২৬ নভেম্বর ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনকে জিম্মি করার জন্য গণবাহিনীর ছয়জন সদস্য ধানমন্ডি ২নং সড়কে ভারতীয় কনসুলেট অফিসে অভিযান চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রদূতকে জিম্মি করে কর্নেল তাহের ও অন্যান্য জাসদ নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করতে সরকারকে বাধ্য করা। এছাড়া পূর্ব থেকে টেপে ধারণ করা একটি বক্তব্য বেতার ও টেলিভিশনে প্রচার করাও ছিল অভিযানের লক্ষ্য। ঐ বক্তব্যে ৭ নভেম্বর সিপাহী অভ্যুত্থানের লক্ষ্য, সৈনিকদের ১২ দফা দাবী এবং জিয়াউর রহমানের বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি বিষয় ছিল। অভ্যুত্থানটি সফল হয়নি। ভারতীয় রক্ষীদের গুলিতে অভিযানকারী দলের ৪ জন সদস্য প্রাণ হারায়। ২ জন গুরুতর আহত অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এ অভিযানের সাফল্য জাসদের বিপ্লবী অগ্রাভিযানে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারতো। জনগণ জানতে পারতো নভেম্বর অভ্যুত্থানে জাসদের বিপ্লবী লক্ষ্য এবং একই সঙ্গে জিয়াউর রহমানের প্রতিবিপ্লবী ভূমিকা। কিন্তু অভিযানটি ব্যর্থ হওয়ায় চরম দুর্যোগ নেমে আসে জাসদের উপর। সরকার ব্যাপক প্রচারণা চালায় যে এই ঘটনার মধ্যদিয়ে জাসদ বাংলাদেশে ভারতের হস্তক্ষেপের পথ সুগম করতে চেয়েছে।
১৯৭৫-এর ১৫ মার্চ সেনা গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আমি গ্রেপ্তার হয়ে যাই। এর পর প্রায় ৩ মাস আমাকে ক্যান্টমেন্টে ডিএফআই বন্দীশালায় অন্তরীণ রাখা হয়। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমাকে কোর্টে চালান করা হয়। সে সময় থেকে সরকারি ভাবে আমার গ্রেপ্তার সময় দেখানো হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে।
১৮ জুন ১৯৭৫ – আমাদের হাজির করা হয় ডিআইজি প্রিজনের অফিস কক্ষে যাকে ইতোমধ্যে একটি বিচারকক্ষে পরিণত করা হয়েছে। এই প্রথম আমরা জানতে পারি একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আমাদের বিচার হবে। কর্নেল তাহের এবং জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা জলিল-রব-ইনুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ যাদের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন – দেখা হলো অনেক দিন পর।
বিচার কক্ষে কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। যাদের মধ্যে ছিলেন বাংলার এককালীন মূখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, পরে বিএনপি নেতা ও রাষ্ট্রদূত জুলমত আলী খান, প্রয়াত এটর্নী জেনারেল আমিনুল হক, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফ, গাজীউল হক, কে জেড আলম, আলতাফুর রহমান, সিরাজুল হক, মহীউদ্দিন আহমেদ, জিন্নাত আলী, শরীফ চাকলাদার, খাদেমূল ইসলাম প্রমুখ। অভিযুক্তদের পক্ষে আইনী লড়াই চালাবার জন্যে এঁদের কেউ কেউ এসেছিলেন কারাগারের বাইরে থাকা জাসদ নেতৃবৃন্দের অনুরোধ। আবার কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়েই। প্রথমেই আমাদের আইনজীবীদের শপথ নিতে হলো বিচারের সকল তথ্য গোপন রাখতে। এই গোপনীয়তা ভঙ্গ হলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারি পক্ষে আইনজীবী হিসাবে ছিলেন এটর্নী জেনারেল এটিএম আফজাল, যিনি পরে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হন। মামলার সাক্ষ্য পরিচালনা করেন সে সময়কার সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর রাজ্জাক খান। এ মামলা সম্পর্কে কারাগারে আমাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছুই অবহিত করা হয়নি। আমাদের ১৮ জুন আদালত কক্ষে নিয়ে আসার পরই কেবল বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারি আমরা। অর্থাৎ বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অভিযুক্তদের কিছুই জানানো হলো না।
বিচারালয়ে প্রথম দিনটি ছিল খুবই ঘটনাবহুল। প্রথমেই আমাদের হাজিরা নেয়া হলো। নাম ডাকার সাথে আমাদের উঠে দাঁড়াতে হচ্ছিল। কিন্তু নাম ডাকার পরও ইউসুফ ভাই নির্বিকার বসে রইলেন। কেন তিনি উঠে দাঁড়াচ্ছেন না জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমার নামটি সঠিক ভাবে বলতে বলুন। অবাক হয়ে বিচারকরা জানালেন তাঁর সঠিক নামেই তাঁকে ডাকা হয়েছে। ইউসুফ ভাই জানালেন তার পুরো নাম আবু ইউসুফ বীর বিক্রম ডাকা না হলে তিনি উঠে দাঁড়াবেন না। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বিক্রম তিনি অর্জন করেছেন। কেউ দয়া করে এ খেতাব দেন নি। শেষ পর্যন্ত তাকে বীর বিক্রমসহ পুরো নামেই ডাকা হলো। এরপর আমাদের আইনজীবীরা সরকারি অভিযোগনামা ও রাজসাক্ষীদের ভাষ্য চাইলেন। রাজসাক্ষীদের সাক্ষ্য সরবরাহ করতে কোর্ট রাজি হলো না। আমরা অত্যন্ত জোরের সঙ্গেই বললাম যে, আমরা তা মানবো না। এ বিচারও মানবো না আমরা। খোদ বিচার প্রক্রিয়াটির বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করলাম আমরা। কর্নেল তাহের এক পর্যায়ে তাঁর আসন থেকে উঠে দাঁড়ালেন ও হাতের ওয়াকিং স্টিকটি উঁচিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও তাঁর সাথী হলাম। শ্লোগান দিতে দিতে ডিআইজি প্রিজনের অফিস থেকে জেলগেটের দিকে রওনা হলাম আমরা। এটা ছিল এক অভাবনীয় দৃশ্য। আমাদের এ তাৎক্ষণিক দ্রোহে সমস্ত বিচারালয়ই লণ্ডভণ্ড। তথাকথিত বিচারকরা পালিয়ে গেলেন। সে সময় জেলগেট এখনকার মতো লোহারপাতে ঢালাই করে বন্ধ ছিল না। লোহার শিকের সে গেটের বাহির থেকে ভেতরটা দেখা যেত।
আমাদের প্রথম দিনের এ প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে গোপন এই বিচার প্রহসন সম্পর্কে আমরা বাইরের জগৎকে জানাতে চাচ্ছিলাম। কোর্ট বসলো না সেদিন। নিজ নিজ সেলে নিয়ে যাওয়া হলো আমাদের। ২১ জুন যখন পুনরায় বিচার বসলো তখন থেকে আমাদের বিচারালয়ে নিয়ে আসা হতো খালি পায়ে ও হাতকড়া পরিয়ে। আমাদের বসানো হতো যে লোহার খাঁচায় – তাতে তালা দেবারও ব্যবস্থা হয়। উপরন্তু লোহার সে খাঁচাকে কাঁটাতার দিয়ে মুড়িয়ে ফেলা হয়। যাতে করে আমরা লোহার শিকও ধরতে না পারি। গোপন সে মামলার কাগুজে নাম ছিলো রাষ্ট্র বনাম মেজর জলিল গং। সম্ভবত জাসদ সভাপতি হবার কারণেই জলিল ভাই’র নামটি উল্লেখ করা হয়েছিল এখানে। আসলে মামলার প্রধান আসামী ছিলেন তাহেরই। আমাদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল বেআইনী ভাবে বৈধ সরকারকে উৎখাত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিলাম আমরা। এছাড়া সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে নাশকতামূলক রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালানোর দায়েও অভিযুক্ত করা হয় আমাদের। অভিযুক্তদের সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। সিরাজুল আলম খান ও শরীফ নূরুল আম্বিয়াসহ যাদের কয়েকজন আত্মগোপন অবস্থায় ছিলেন।
(চলবে)
১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব
অধ্যাপক, প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অনুজ, শহীদ কর্নেল আবু তাহের (বীর উত্তম)।