রোম যখন পুড়ছিল, তখন নীরো বাঁশী বাজাচ্ছিলেন না, কারণ তখন বাঁশী আবিস্কারই (খ্রীস্টীয় প্রথম শতকে) হয়নি। তবে তিনি কি বাজাচ্ছিলেন, গীটার? তাও না। গীটার তো আধুনিক ব্যাপার, গীটারের পুর্বশুরি লাইয়ার? না তাও না। তবে, একটা কিছু তো বাজাচ্ছিলেন? না, তিনি কিছুই বাজাচ্ছিলেন না। বস্তুত তিনি তখন রোমেই ছিলেন না। তিনি ছিলেন আনযিওতে, রোম থেকে ষাট মাইল দূরে। আগুনের খবর শুনে তিনি কি করলেন? ছুটে এলেন রোমে। রোমে এসে তিনি শুরু করলেন ত্রানকার্য, নিজের পয়সায়। নিজের প্রাসাদ খুলে দিলেন জনসাধারণের জন্য। লোকে যেন না খেয়ে মারা না যায়, নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করলেন। পূড়ে যাওয়া রোম নতুন করে তৈরি করলেন, প্রশস্ত রাস্তা আর দুধারে ইটের তৈরি বাড়ি, যেন আবার আগুন লাগলে নিভিয়ে ফেলা যায়। আগুন লাগালো কে? নীরো নিজে? না তিনি তো তখন রোমেই ছিলেন না। তবে কে? রোমের সংখ্যালঘু খ্রিস্টানরা? ও বেচারারা লাগাবে কেন? তবে কে? কোন এক অসাবধানী দোকানদার। রোমের দক্ষিণের স্টেডিয়াম লাগোয়া ‘বঙ্গবাজারের’ এক দোকানদার। সেই ব্যাটা কোথায়? কোথায় আবার, নিজেই পুড়ে শেষ। এতবড়ো আগুন? শুধু এক দোকানদার, হতেই পারে না। নীরো ব্যাটাই লাগিয়েছে। কেন লাগাবে? নিজের বাড়িতে সে আগুন লাগাবে কেন? লাগাবে যেন আবার এক বড় বাড়ি বানাতে পারে, জনগণের পয়সায়। শোন, বই বিক্রি করাটাই বড় কথা। নীরোর রিলিফ টিলিফের কথা লেখার দরকার নেই। লেখ “অত্যাচারী সম্রাট নীরো নিজের স্ত্রী কতৃক প্ররোচিত হইয়া নিজের মাতাকে হত্যা করেন। শুধু তাহাই নন, নিজের রোম শহরে আগুন লাগাইয়া মনের সুখে বাঁশী বাজাইতে থাকেন। পাঁচদিন ধরিয়া সে আগুন জ্বলে। রোম পুড়িয়া ছাই হইয়া যায়। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সেই ধ্বংসস্তুপের উপরে নীরো পছন্দমত শহর তৈরি করেন। এত অত্যাচার জনগণের সহে নাই। তাঁহারা বিদ্রোহে ফাটিয়া পড়ে। কাপুরুষ নীরো পালাইয়া গিয়া আত্নহত্যা করেন। তাঁহার মৃতুর খবর শুনিয়া জনগণ আনন্দে উৎসবে মাতিয়া উঠে। রোমে শান্তি ফিরিয়া আসে।” নীরো সম্পর্কে আলাপ এখানেই শেষ, আলাপ বেশি করাটা ঠিক নয়, নীরোর ‘কাল্ট’ দাঁড়িয়ে যেতে পারে। তবে একটা কথা না বললেই নয়, বঙ্গবন্ধুকে দেখে ওরিয়ানা ফালাচীর প্রথম প্রতিক্রিয়া “একজন ঋজু রোমান সম্রাট”।
রোম যখন পুড়ছিল, তখন নীরো বাঁশী বাজাচ্ছিলেন না, কারণ তখন বাঁশী আবিস্কারই (খ্রীস্টীয় প্রথম শতকে) হয়নি [..]