১ম ও ২য় পর্বের পর দুই দলে ভাগ হয়ে গেছি আমরা। পাঁচ-পাঁচ করে। টিম এ আর টিম বি। প্রথম দলে আমি, সাগর ভাই, তন্ময়, বসন্তদা আর বিশ্বদা। টিম বি আমাদের ব্যাকআপ টিম হিসেবে কাজ করবে। তাই আজ আমাদের সাথে তারা আসলেও লোড রেখে আবার ফিরে যাবে বেস-ক্যাম্পে। আমরা থেকে যাব। বেশ পরিষ্কার আবহাওয়ার মধ্যে ক্যাম্প ১-এর তাঁবুগুলো দেখতে পেলাম কিছুটা আগে থেকেই। [...]

১ম ও ২য় পর্বের পর ক্যাম্প ১ (৪৪৮৫) দুই দলে ভাগ হয়ে গেছি আমরা। পাঁচ-পাঁচ করে। টিম এ আর টিম বি। প্রথম দলে আমি, সাগর ভাই, তন্ময়, বসন্তদা আর বিশ্বদা। টিম বি আমাদের ব্যাকআপ টিম হিসেবে কাজ করবে। তাই আজ আমাদের সাথে তারা আসলেও লোড রেখে আবার ফিরে যাবে বেস-ক্যাম্পে। আমরা থেকে যাব। বেশ পরিষ্কার আবহাওয়ার মধ্যে ক্যাম্প ১-এর তাঁবুগুলো দেখতে পেলাম কিছুটা আগে থেকেই। শেরপারা আমাদের আগেই রওনা হয়েছিল আমাদের এই বাড়তি সুবিধাটুকু দেয়ার জন্য। কারণ যদি তুষারপাত শুরু হয়ে যেত তবে তার মধ্যে তাঁবু খাটানোটা বেশ কঠিনই হয়ে পড়ত। মালপত্র গুছিয়ে রাখার পর আর হাতে কোনো কাজ নেই। রান্নার কাজে সাহায্য করার নামে কিচেন শেডের বাড়তি গরমটুকু পাওয়ার জন্য খুব বেশি হলে মাটি থেকে চার ফুট উঁচু শেডের নীচে গাদাগাদি করে বসে থাকা। খাওয়ার পর তাঁবুতে। তুষারপাত শুরু হয়ে গেছে। চাইলেও আর বাইরে থাকার জো নাই। দেখতে দেখতে কালচে হলুদ রঙের পাথরগুলোর উপর শুভ্র বরফের কুচি পুরো পরিবেশটাকে পাল্টে দিল নিমিষেই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। যেন থামতেই চায় না। স্লিপিং ব্যাগে গুটিশুটি মেরে বসে থাকা আর ডায়েরির পাতা ভরানোই যেন জগতের একমাত্র কাজ। সাগর ভাই তার বিখ্যাত লাল রঙের ট্রাউজারটা মেরামতে ব্যস্ত। সুঁইয়ে সুতা পরাতে গিয়েই ঘাম ঝরার উপক্রম। উচ্চতার সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্যই এখানে থাকা । ধীরে ধীরে উচ্চতা অতিক্রম করা পর্বতারোহণে বাধ্যতামূলক। মাত্র তিনটা টেন্ট। তাই প্রথমবারের মতো বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগল। কেননা এখন পর্যন্ত সবাই একসাথেই ছিলাম। এখানেই প্রথম। রাত নামার পর একটু করে বের হলাম সবাই। চাঁদের ঈষৎ নীলাভ আলোয় পরিবেশটা কেমন ভূতুড়ে মনে হলো। দিনের চেনা আলোয় দেখা আর এখনকার পরিবেশ যেন খুব অচেনা। হাড় কামড়ানো ঠাণ্ডা! বেশিক্ষণ বাইরে টিকতে পারলাম না কেউ। খাবার নিয়ে তাঁবুতে ঢুকে গেলাম। গরম জলের বোতলটাকে ভালো করে মুছে স্লিপিং ব্যাগের উষ্ণতা বাড়ানোর জন্য ভিতরে ঢুকিয়ে দিলাম। প্রতিদিনের নিয়ম এটা। অন্তত কিছুক্ষণ তো এর উষ্ণতা উপভোগ করা যাবে। এতে অবশ্য আরেকটা উপকার হয়; সকালে সাধারণ তাপমাত্রার এক বোতল পানি পাওয়া যায়। কারণ তাঁবুর ভিতরের রাখলেও সেই পানি সকালবেলায় পানের উপযোগী থাকে না। ক্যাম্প ১ (৪৪৮৫) ২য় দিন রাতে ঘুম…

(পূর্ব প্রকাশিতের পর. . .) আজকের পথ গত দু'দিনের পথের চেয়েও খানিকটা দীর্ঘ এবং সময়ও লাগলো বেশি। মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি রেখেছিলাম। সকালের খাবারটাও একটু ভারী হলো। আগের দিনের রাস্তার মতোই পরিবেশ। তবে নদীটা পার হবার পর থেকে বেশ চড়াই শুরু হলো। আর প্রথম চড়াইটা বেশ বড়। ওঠার গতি মন্থর সবার। শেষ মাথার কাছাকাছি এসে দেখতে পেলাম আমাদের ঘোড়ার বহর হেলে-দুলে এগিয়ে আসছে ব্রিজের দিকে। চারদিকে সবুজ রঙের ছড়াছড়ি, ঈষৎ ধূসর রঙের নদী, মেটে ট্রেইলের উপর বহরটা দেখতে সারিবাঁধা পিঁপড়ের দলের মতোই মনে হবে। পিছন থেকে এগিয়ে যাওয়ার গুঁতো খেয়ে সংবিৎ ফিরল। সময় কম [...]

প্রথম পর্ব / দ্বিতীয় পর্ব / তৃতীয় পর্ব -------------------- (পূর্ব প্রকাশিতের পর. . .) ঠাকুরকুয়া : ৩৫৩৫ মিটার আজকের পথ গত দু'দিনের পথের চেয়েও খানিকটা দীর্ঘ এবং সময়ও লাগলো বেশি। মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি রেখেছিলাম। সকালের খাবারটাও একটু ভারী হলো। আগের দিনের রাস্তার মতোই পরিবেশ। তবে নদীটা পার হবার পর থেকে বেশ চড়াই শুরু হলো। আর প্রথম চড়াইটা বেশ বড়। ওঠার গতি মন্থর সবার। শেষ মাথার কাছাকাছি এসে দেখতে পেলাম আমাদের ঘোড়ার বহর হেলে-দুলে এগিয়ে আসছে ব্রিজের দিকে। চারদিকে সবুজ রঙের ছড়াছড়ি, ঈষৎ ধূসর রঙের নদী, মেটে ট্রেইলের উপর বহরটা দেখতে সারিবাঁধা পিঁপড়ের দলের মতোই মনে হবে। পিছন থেকে এগিয়ে যাওয়ার গুঁতো খেয়ে সংবিৎ ফিরল। সময় কম। রওনা হয়েছিলাম আটটার দিকে। এখানে দুপুর গড়াবার আগেই সন্ধ্যা নামে এবং শুরু হয়ে যায় ঝড়-বৃষ্টি। সে আশঙ্কা মাথায় রেখে প্রত্যেকেই নিজের সর্বোচ্চ গতিতে এগিয়ে চলেছে। চড়াইটা ধরে উঠে এলে দারুণ একটা সমতল ভূমি। পুরোটাই ঘাসে ঢাকা। গাছের উচ্চতা কমে যেতে শুরু করেছে; কেননা আমরা প্রায় তিন হাজার মিটার বা ১২ হাজার ফুট উচ্চতা অতিক্রম করতে চলেছি। জুনিপারের ঘন ঝোপ আর পাথরের পাতার মতো শক্ত ঘাস। গাছগুলোকে যখন ছাড়িয়ে এলাম তার খানিক বাদেই আবহাওয়ার পরিবর্তনটা প্রকাশ পেল। বুঝতে পারলাম আমরা ট্রি লাইন অতিক্রম করেছি। পায়ের তলায় মাটি শক্ত হতে হতে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে প্রথমে মোরেইন এলাকায় প্রবেশ করলাম। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পথের মধ্য দিয়ে কখনো একা আবার কখনো দলের সাথে এগিয়ে যেতে থাকলাম। এই জায়গাটা আমাকে নেপালে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প যাওয়ার পথে লেবুচের পরের এমনই এক সমতল বিশাল ভূখণ্ডের কথা মনে করিয়ে দেয়। দুপুরের কড়া রোদে অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। এ পথে খুব বেশি চড়াই ছিল না। তবে আজকের রোদের ঝাঁঝটা একটু বেশি। সাড়ে দশটার দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম। ক্যাম্প স্পট খানিকটা নীচের দিকে। উপর থেকে পার্বত্য নদীপাড়ের সবুজ ঘাসে মোড়া অদ্ভুত সুন্দর একটা মালভূমি। মাঝে মাঝে ছোপ ছোপ হয়ে ফুটে আছে ফুল। কতকগুলো হলুদ, কতকগুলো বেগুনি। মাদার ইন ম্যানভিল-এ পড়া রডোডেনড্রনের বাহার দেখলাম। কতই-না শোনা এই ফুলের নাম। আবেশে জড়িয়ে রেখেছে সারা পথ। এগিয়ে যেতে যেতে মন-ভোলানো রূপে কাছে টানে গাছের ছায়া, ক্লান্ত শরীর যেন…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.