বাংলাদেশের পথিকৃৎ ভাস্কর নভেরা আহমেদের মূল্যায়ন করা হয় মূলত তাঁর ১৯৫৭–১৯৬০ সালের ভাস্কর্য দিয়ে। এই লেখায় তুলে ধরা হয়েছে তাঁর ১৯৬০–১৯৭০ কালপর্বের ভাস্কর্যসৃষ্টির পরিচয়। [...]

[প্যারিসে নভেরা আহমেদের প্রায় একশো দিন ব্যাপী (১৬ জানুয়ারি—২৬ এপ্রিল ২০১৪) পূর্বাপর প্রদর্শনীর আজ শেষদিন। এতে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর ১৯৬৯–২০১৪ কালপর্বের ৫১টি শিল্পকর্ম (৯টি ভাস্কর্য ও ৪২টি চিত্রকর্ম)। নীচের প্রবন্ধটির উপজীব্য নভেরার এই কালপর্বের অব্যবহিত আগের এক দশক অর্থাৎ ১৯৬০–১৯৭০ সালের ভাস্কর্যসৃষ্টির পটভূমি ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এই লেখার আদিপাঠ মুদ্রিত হয়েছিল ঢাকা থেকে প্রকাশিত শিল্প ও শিল্পী  ত্রৈমাসিকের তৃতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যায় (কার্তিক ১৪২০, নভেম্বর ২০১৩)। মুক্তাঙ্গনে প্রকাশের সময়ে দু-এক জায়গায় সামান্য পরিমার্জনা করা হয়েছে।] . ১৯৬০ সালে ঢাকায় নভেরা আহমেদের প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনীর দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ পরে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে সে-প্রদর্শনীর প্রায় চল্লিশটি ভাস্কর্য সংগৃহীত হয় এবং ১৯৯৮ সালে একত্রে মাসাধিককালব্যাপী প্রদর্শিত হয়। পরে শিল্পপতি এম আর খানের বাড়ির উদ্যানে নির্মিত মুক্তাঙ্গন ভাস্কর্য ‘পরিবার’ও (১৯৫৮) ফোয়ারা-সহ জাতীয় জাদুঘরের সামনে পুনঃস্থাপিত হয়। বাংলাদেশে ভাস্কর হিসেবে নভেরার মূল্যায়ন মূলত তাঁর ১৯৫৭–৬০ কালপর্বের শিল্পকর্মগুলির আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। পরবর্তীকালে যথাক্রমে ব্যাংককে ও প্যারিসে আয়োজিত শিল্পীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় একক প্রদর্শনী সম্পর্কে তথ্যের অপ্রতুলতার কারণে তাঁর পরিণত পর্যায়ের শিল্পকৃতি নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয়নি। বিগত প্রায় পাঁচ দশক তাঁর নিভৃত প্রবাস-যাপনের ফলে এই দীর্ঘ সময়জুড়ে বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ নেই, তাঁর শিল্পচর্চার ধারাবাহিকতা সম্পর্কেও আমরা অনবহিত। শিল্পীজীবনের উন্মেষপর্বে, ১৯৬১ সালে, ভাস্কর হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি; পরে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে জীবনী উপন্যাস রচিত হয়েছে (নভেরা, হাসনাত আবদুল হাই, ১৯৯৪, গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৯৫), নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র (নহন্যতে, এন রাশেদ চৌধুরী, ১৯৯৯)। বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাসে ভাস্কর ও নারীশিল্পীদের পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি, কিন্তু তা সত্ত্বেও নভেরা আহমেদের যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন এখনো পর্যন্ত হয়নি। ১৯৫০ দশকের প্রথমার্ধে লন্ডনের ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসে চেক ভাস্কর কারেল ফোগেলের (১৮৯৭–১৯৬১) তত্ত্বাবধানে নভেরার শিল্পশিক্ষা-পর্ব মেহবুব আহমেদের একাধিক প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে। আমিনুল ইসলামের স্মৃতিকথার (বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর : প্রথম পর্ব ১৯৪৭–১৯৫৬, ২০০৩) কল্যাণে বিখ্যাত ইতালীয় ভাস্কর ভেন্তুরিনো ভেন্তুরির (১৯১৮–২০০২) ফ্লোরেন্সের স্টুডিওতে নভেরার প্রশিক্ষণ গ্রহণের কথাও আমাদের অবিদিত নয়। তাঁর ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে নির্মিত ভাস্কর্যের আঙ্গিক, করণকৌশল ইত্যাদি নিয়ে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.