বাংলাদেশে ভাস্কর্য ভাঙতে শুরু করেছে ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তারা তাদের এই ভাঙনের কাজে সাধারণ মানুষকেও টেনে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে ধর্মীয় বয়ান দিয়ে। ভাস্কর্য ধর্মবিরোধী ব্যাপার,- একবাক্যে বলতে গেলে এটি তাদের মূল যুক্তি এবং নিছক আক্ষরিকভাবে বলতে গেলে, এই যুক্তি সঠিক। কিন্তু মানবজাতিকে যারা যুগে যুগে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁরা ঈশ্বরপ্রেরিতই হন আর সামাজিক সংগঠক, রাজনীতিক, বৈজ্ঞানিক কিংবা শিল্পী-সাহিত্যিক যে-ই হন, তাঁদের অভিজ্ঞতা আমাদের এ কথাই বলে, ইতিহাস ও আদর্শকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে সমাজের বিকাশ সম্ভব নয়। তার জন্যে প্রয়োজন হয় যথোপযুক্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতির [...]

বাংলাদেশে ভাস্কর্য ভাঙতে শুরু করেছে ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তারা তাদের এই ভাঙনের কাজে সাধারণ মানুষকেও টেনে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে ধর্মীয় বয়ান দিয়ে। ভাস্কর্য ধর্মবিরোধী ব্যাপার,- একবাক্যে বলতে গেলে এটি তাদের মূল যুক্তি এবং নিছক আক্ষরিকভাবে বলতে গেলে, এই যুক্তি সঠিক। কিন্তু মানবজাতিকে যারা যুগে যুগে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁরা ঈশ্বরপ্রেরিতই হন আর সামাজিক সংগঠক, রাজনীতিক, বৈজ্ঞানিক কিংবা শিল্পী-সাহিত্যিক যে-ই হন, তাঁদের অভিজ্ঞতা আমাদের এ কথাই বলে,  ইতিহাস ও আদর্শকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে সমাজের বিকাশ সম্ভব নয়। তার জন্যে প্রয়োজন হয় যথোপযুক্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতির। মৌলবাদীদের (তা ধর্মীয়ই হোক আর রাজনৈতিকই নয়) আমরা মৌলবাদী বলি কেন? বলি, এই কারণে যে এরা সব কিছুকেই আক্ষরিক অর্থে বিবেচনা করার পক্ষপাতি। ইতিহাস, ভূগোল ও রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতা থেকে শুরু করে সময়ের পরিবর্তন কোনওটিকেই এরা বিকাশের ধারা ও যুক্তির আওতায় নিতে চায় না। তাই এরা সময়ের সত্যকে হারিয়ে ফেলে, সত্যের উদ্বোধন ঘটাতে ব্যর্থ হয় এবং উটপাখির মতো মুখ গুঁজে থাকে অতীতের বদ্ধ কাঠামোতে। ইসলাম ধর্মের উত্থানপর্বে মূর্তি-বিরোধিতা খুব সুস্পষ্ট। কেননা, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) একটি নিরাবয়ব ও একেশ্বরবাদী ধর্ম প্রচার করেছিলেন। মূর্তি-পূজা এই একেশ্বরবাদিতা ও নিরাকারবাদিতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছিল। কিন্তু কালক্রমে মূর্তি তৈরির বিষয়টি আর ধর্মচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেনি, বরং তা ধর্মসাধনার পরিধিকে অতিক্রম করে শিল্পভাবনা ও শিল্পসৃষ্টির ধারাকেই বড় করে দেখেছে। এইভাবে মূর্তিপূজা থেকে, মূর্তি তৈরির পর্ব থেকে ভাস্কর্য চর্চা এবং ভাস্কর্য তৈরিও প্রক্রিয়াও আলাদা হয়ে পড়েছে। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা এই সহজ ঐতিহাসিক সত্যকে গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের কাছে ভাস্কর্যের ঐতিহ্যিক প্রেরণা ও আবেদন এবং এর সঙ্গে শিল্পের যোগ খুবই তুচ্ছ মনে হয়। তারা মনে করেন, এর মধ্যে দিয়ে আসলে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের প্রতি মমত্ব, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা আর ঈশ্বরের জন্যে নৈবেদ্যর মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। এই প্রসঙ্গে টেনে আনা যায় হযরত মোহাম্মদের প্রথম জীবনীকার আরবের ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাকের বইটির কথা। অনেক আগের লেখা তাঁর বই ‘দ্য লাইফ অব মোহাম্মদ’-এ তিনি কাবা শরীফ থেকে ৩৬০টি মূর্তি সরিয়ে নেয়ার সময়ের একটি বর্ণনাও তুলে ধরেছেন। তাতে লেখা হয়েছে, মূর্তি অপসারণ এমনকি দেয়ালের সব ফ্রেসকো মুছে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.