কয়েক দিন আগে একটি বিভাগীয় সরকারি কলেজে কিছু ছাত্রের আমন্ত্রণে এক সান্ধ্য কবিতাপাঠের আসরে গিয়েছিলাম। কবিসংখ্যা ১০-১২, শ্রোতা একা আমি। পাঠ শুরু হতেই বিদ্যুৎ চলে গেল। অদম্য তরুণেরা মোবাইল ফোনসেটের আলোয় কবিতা পড়তে লাগল। [..]

জাতীয় শিক্ষানীতিতে সরকারি বিদ্যালয় ও কলেজ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ নেই। শুধু এরকম কথা লেখা আছে ‘ব্যবস্থাপনা কমিটিকে প্রয়োজনে অধিকতর ক্ষমতা দিয়ে আরও জোরদার করা হবে। অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী...সমন্বয়ে জন-তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করা হবে।’ অর্থাৎ বাকিটা সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন আগে একটি বিভাগীয় সরকারি কলেজে কিছু ছাত্রের আমন্ত্রণে এক সান্ধ্য কবিতাপাঠের আসরে গিয়েছিলাম। কবিসংখ্যা ১০-১২, শ্রোতা একা আমি। পাঠ শুরু হতেই বিদ্যুৎ চলে গেল। অদম্য তরুণেরা মোবাইল ফোনসেটের আলোয় কবিতা পড়তে লাগল। কিন্তু ভ্যাপসা গরম আর মশার জন্য তিষ্টানো গেল না। আমরা বাইরে এসে হাঁটতে ও কথা বলতে লাগলাম। বিশাল চত্বর, বড় বড় পুকুর, গাছগাছালির বন, দুটি ফুটবল মাঠ। একসময় এখানে শিক্ষকতা করেছি, দেখলাম, আমার লাগানো গাছেরও কয়েকটি আছে। কিন্তু দুঃখ হলো, আমাদের টেনিস কোর্টগুলো আর নেই, সেখানে সবজিক্ষেত। বোটানিক গার্ডেন আগাছাভরা, ফুটবল মাঠে হাঁটুসমান ঘাস। ‘তোমরা খেলাধুলা করো না?’ জানতে চাই। মিহি সুরে উত্তর আসে, ‘না’। ‘বার্ষিকী বের হয়? সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক হয়?’ একই উত্তর,- না। মনে পড়ে, পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকের কথা। শীতে টেনিসের সমারোহ আয়োজন, নিয়মিত ক্রিকেট ম্যাচ, গোটা বর্ষাজুড়ে ফুটবল। কলেজ বার্ষিকী ছাড়াও ছিল একটি বিজ্ঞানবার্ষিকী। ১৯৫৯ সালে আমরাই প্রথম উদ্ভিদবিদ্যার স্নাতক কোর্স খুলি। অধ্যক্ষ ও বিজ্ঞান শিক্ষকদের ঐকান্তিক এবং অনুক্ষণ সহায়তায় দুই বছরের মধ্যেই গড়ে ওঠে চমৎকার ল্যাবরেটরি, হার্বোরিয়াম, মিউজিয়াম, বিভাগীয় গ্রন্থসংগ্রহ, বোটানিক গার্ডেন, কোনোটা ন্যূনতম খরচায়, কোনোটা নিখরচায়। ১৯৬২ সালে সরকারিকরণের পর যত দিন পুরোনো শিক্ষকেরা ছিলেন, তত দিন এ রেওয়াজ তেমন বদলায়নি। হাঁটতে হাঁটতে ছাত্রদের এসব কথা শোনাই এবং জিজ্ঞেস করি, ‘তোমাদের আজ এ হাল কেন?’ জবাব আসে, ‘মোবাইল ফোন স্যার, ওটিই খেলাধুলা, সংস্কৃতি সব গিলে ফেলেছে।’ ভেবেছিলাম, দলীয় ছাত্ররাজনীতির কথা শুনব, কিন্তু খবরটি সম্পূর্ণ নতুন। সত্যিই মোবাইল ফোন কি? আংশিক সত্য হলেও সিংহভাগ সমাধা করেছে সরকারি আমলাতন্ত্র। শিক্ষকেরা আজ কলেজের সঙ্গে একাত্মবোধ হারিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের কাছে পরকীয় হয়ে গেছে। অন্যান্য আমলাতন্ত্রের মতো শিক্ষা-আমলাতন্ত্র একটি নির্মুখ সত্তা। এই শহরে এলে অন্তত একবার কলেজে যাই, চত্বরে হাঁটি, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগেও গিয়ে বসি। আমার কাছে পড়েছে, এমন শিক্ষকও আগে পেতাম, এখন সবাই অচেনা। একবার দেখলাম ফুটবল মাঠের পাশে একসার গগনশিরীষ কে যেন লাগিয়েছেন,…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.