একেবারে গোড়ার দিককার রোমকরা — যারা ইতালি জয় করেছিল, কার্থেজকে পরাস্ত করেছিল — তারা বেশ কয়েক শতাব্দী পর তাদের উত্তরসূরীদের কাছে আদর্শ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। ধ্রুপদী রোমক লেখকেরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের নৈতিক শ্রেষ্ঠতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ একেবারে, আর সেই থেকে বার বারই এসেছে বিষয়টা আমদের সামনে। [. . .]

Tore Janson-এর, সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket  গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা অনুবাদ   কতোটা খারাপ ছিল রোমকরা? একেবারে গোড়ার দিককার রোমকরা — যারা ইতালি জয় করেছিল, কার্থেজকে পরাস্ত করেছিল — তারা বেশ কয়েক শতাব্দী পর তাদের উত্তরসূরীদের কাছে আদর্শ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। ধ্রুপদী রোমক লেখকেরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের নৈতিক শ্রেষ্ঠতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ একেবারে, আর সেই থেকে বার বারই এসেছে বিষয়টা আমদের সামনে। এমনকি আজও আমরা 'রোমক গুণাবলী', 'সারগর্ভ রোমক প্রবাদ', এসবের কথা শুনি। প্রাচীন রোমকদের সম্পর্কে উত্তরকাল যে-চিত্রটি তুলে ধরেছে তার মধ্যে নিশ্চিতভাবেই সত্য আর মিথ্যা বা নানান শোনাকথা-অতিকথা মিলে মিশে আছে। তো, সেটা মোটামুটি এরকম : প্রথমত, রোমকরা ছিল খুব সাদাসিধে মানুষ, নিজেদের জমি চাষ করত, তবে দরকারমতো রোমে গিয়ে সরকারের কাজে সাহায্য করতো, প্রতিবেশী উপজাতিদের শায়েস্তা করতে হলে লড়াইয়ে যোগ দিত। আর এসবের সর্বোতকৃষ্ট উদাহরণ হলো চিনচিনাতাস, তিনি একবার তাঁর নিজের ছোট্ট জমি চাষ করছিলেন, এমন সময় খবর এলো তাঁকে 'dictator' নির্বাচিত করা হয়েছে, যার মানে হলো কারো কাছে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই তিনি শাসন করতে পারবেন, কিন্তু সেটা মাত্র ছয় মাসের জন্য। কারণ আর কিছুই না, একটা যুদ্ধ। শত্রুপক্ষের দ্বারা ঘেরাও হয়ে পড়া রোমক সেনাবাহিনীর একটি দলকেকে উদ্ধার করতে হবে তাঁর। নিমরাজি ভঙ্গীতে বেরিয়ে পড়লেন তিনি বাড়ি থেকে, জিতলেন যুদ্ধে, দু'হপ্তার মধ্যেই নিজের ডিক্টেটরশীপ ত্যাগ করে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে লেগে পড়লেন ফের হাল চষতে। এই সাধাসিধে জীবনের ধারণার একটা অংশ ছিল এই যে, প্রাচীন রোমকরা অর্থ-কড়ি আর বিলাস-ব্যাসন অপছন্দ করত, ঘুষ নিত না। আবার অন্যদিকে ক্ষমতা ভালবাসত। এরকম একটা গল্প প্রচলিত আছে যে, কনসাল দেনাতাস একবার তাঁর তাঁবুতে বসে মাটির একটা পাত্রে পরিজ বা 'puls' খাচ্ছিলেন, এমন সময় অস্কানভাষী সামনাইটদের একটি প্রতিনিধি দল আসে তাঁর কাছে। তিনি তাঁর জন্য আনা সোনার থালা আর অন্যান্য উপহার ফিরিয়ে দিয়ে বললেন যে সোনার বাসন-কোসন ব্যবহারকারী জাতির শাসক হিসেবে তাঁর কাছে তাঁর নিজের হাতে বানানো মাটির বাটিই বেশি পছন্দের। এছাড়া, তারা ছিল ভয়ানক সাহসী আর শারীরিক যন্ত্রণা সহিষ্ণু। মাকিয়াস নামের এক রোমক একবার পরসেন্না নামক এট্রুস্কান রাজাকে হত্যার চেষ্টা…

নিজস্ব এক ছোট্ট ভাষার অধিকারী ছোট্ট রাষ্ট্র রোমের বেশ কিছু প্রতিবেশী ছিল, আর, খৃষ্টের জন্মের পাঁচশত বছর আগে ইতালীয় উপদ্বীপে ছিল ছোট ছোট অনেক রাষ্ট্র। রোমের উত্তরে ছিল এট্রুস্কানেরা, যাদের কথা আগেই বলা হয়েছে; তবে তারা কিন্তু একটি রাষ্ট্রে ছিল না, ছিল বেশ কিছু আলাদা নগর রাষ্ট্রে। [. . .]

Tore Janson-এর, সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket  গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা অনুবাদ   ছোট্ট এক নগর থেকে এক বিশাল ক্ষমতার দিকে নিজস্ব এক ছোট্ট ভাষার অধিকারী ছোট্ট রাষ্ট্র রোমের বেশ কিছু প্রতিবেশী ছিল, আর, খৃষ্টের জন্মের পাঁচশত বছর আগে ইতালীয় উপদ্বীপে ছিল ছোট ছোট অনেক রাষ্ট্র। রোমের উত্তরে ছিল এট্রুস্কানেরা, যাদের কথা আগেই বলা হয়েছে; তবে তারা কিন্তু একটি রাষ্ট্রে ছিল না, ছিল বেশ কিছু আলাদা নগর রাষ্ট্রে। তাদের ছিল নিজস্ব ভাষা, তবে সেটা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়, এমনকি সংরক্ষিত হয়েছে এমন কোনো ভাষার সঙ্গেই সম্পর্কিত নয় সেটি। নিজস্ব বর্ণমালা ছিল তাদের; এট্রুস্কান ভাষায় লেখা প্রচুর উতকীর্ণ লিপি পাওয়া গেছে। বেশ কয়েক শতাব্দী এট্রুস্কানদের ওপর নির্ভরশীল ছিল রোমকরা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুভাবেই, এবং অনেক কিছুই তারা গ্রহণ করেছিল এট্রুস্কানদের কাছ থেকে, এমনকি তাদের বর্ণমালা পর্যন্ত। রোমক বর্ণমালার হরফগুলো এট্রুস্কানদের ব্যবহৃত প্রতীক বা চিহ্নগূলোর সামান্য অদল-বদল মাত্র। আবার, এট্রুস্কানেরা লেখার ধারণা ও তাদের হরফগুলো নিয়েছিল গ্রীকদের কাছ থেকে। লাতিনের ব্যাপক প্রভাবের ফলে পশ্চিম ইউরোপের সব ভাষাই রোমক বর্ণমালা পেয়ে যায় উত্তরাধিকারসূত্রে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু কিছু জিনিস জুড়ে নিয়ে; যেমন ইংরেজি ও জার্মানের বেলায় 'w',  ফরাসিদের বেলায় 'ç' (যেটিকে 'ccedilla' বলা হয়), সুইডিশ আর জার্মানের বেলায় 'ä' আর 'ö', ডেনিশের বেলায় 'ø', ইত্যাদি। ইউরোপীয় বর্ণমালায় যে-দুটো হরফ বহুল ব্যবহৃত — 'v' আর 'j' — তাদের রয়েছে এক ভিন্ন ইতিহাস। সে প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। এসব অক্ষর ছাড়াও এট্রুস্কানদের কাছ থেকে আরো মেলা জিনিস নিয়েছিল রোমকরা, তার মধ্যে রয়েছে এমন কিছু শব্দ যেগুলো অন্য কিছু  ভাষাও কর্জ করেছে; যেমন, 'caerimónia' (ceremony, উৎসব উপলক্ষ) আর 'fenestra' (window, জানালা) যেখান থেকে এসেছে ফরাসি 'fenêtre' আর জার্মান ‘fenester’)। উত্তরের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে রোমানরা কি শিখেছিল তা আমরা এসব শব্দের মানে থেকে জানতে পারি। নানান ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব তাদের কাছ থেকে নিয়েছিল রোমকরা, সেই সঙ্গে নিয়েছিল এই আপাত অদ্ভুত বিশ্বাসটি যে, পাখিদের উড়ালের মধ্যে অথবা তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত প্রাণীদের অন্ত্রের ভেতর দেবতারা তাদের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং মানুষেরা তা পড়তে পারে। থিয়েটারের…

আদি রোমকরা কি করে নিজেদের একটি ভাষার অধিকারী হলো? অন্যান্য ভাষার সঙ্গে সম্পর্কটা কেমন ছিল এই ভাষার? একুশ শতকের মানুষের কাছে এটা খুব আশ্চর্যের বিষয় বলে মনে হতে পারে যে ছোট্ট একটি স্থানের মাত্র হাজার কয়েক লোক একটি আলাদা ভাষায় কথা বলছে। [. . .]

Tore Janson-এর, সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket  গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা অনুবাদ   লাতিন কি করে লাতিন হলো আদি রোমকরা কি করে নিজেদের একটি ভাষার অধিকারী হলো? অন্যান্য ভাষার সঙ্গে সম্পর্কটা কেমন ছিল এই ভাষার? একুশ শতকের মানুষের কাছে এটা খুব আশ্চর্যের বিষয় বলে মনে হতে পারে যে ছোট্ট একটি স্থানের মাত্র হাজার কয়েক লোক একটি আলাদা ভাষায় কথা বলছে। বাংলা, ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি, হিস্পানি, ইতালীয় ভাষায় কোটি কোটি মানুষ কথা বলে এবং বিশাল এলাকা জুড়ে তাদের বাস। অবশ্য সারা দুনিয়া জুড়েই যে এই চিত্র তা নয়। ইউরোপে যতোগুলো ভাষা আছে তার অন্তত দশ গুণ বেশি আছে আফ্রিকায়, যদিও দুই মহাদেশে জনসংখ্যা প্রায় সমান। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, ভাষা আর রাষ্ট্র বা স্বাধীন রাজনৈতিক সত্তার সংখ্যার মধ্যে শেষমেষ একটা জোরালো সম্পর্ক থাকে। অনেক আগে — যখন কোনো বড় রাষ্ট্র ছিল না, ছিল বেশিরভাগই কেবল ছোট ছোট উপজাতি বা গোত্র — তখন বড় কোনো ভাষাও ছিল না। তার কারণ হলো, মানুষের ভাষা ক্রমাগত বদলে যেতে থাকে। যে-জনগোষ্ঠীর অন্য জনগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ থাকে না, তাদের এক নিজস্ব ভাষা গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে, যে-ভাষা অন্য সব জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলো থেকে আলাদা, যদিও হয়ত একসময় তারা সবাই পাশপাশি বসবাসকারী লোকজনের মতোই একই ভাষায় কথা বলতো। বলতে গেলে সেভাবেই রোম নামের ছোট্ট নগরের ভাষাও স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছিল। তবে আশেপাশের ভাষা থেকে তা একেবারে ভিন্ন ছিল না। বেশ কয়েকটি ভাষার সঙ্গে মিল ছিল লাতিনের। তাদের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ওস্কান (Oscan) ও আম্ব্রিয়ান (Umbrian)। ইতালির যে এলাকাটি এখনো আম্ব্রিয়া নামে পরিচিত— ল্যাটিয়ামের উত্তর ও পুব দিকে — সেখানেই প্রচলিত ছিল আম্ব্রিয়ান ভাষাটি। আর ওস্কান ছিল মূলত দক্ষিণ ইতালির এক বিরাট এলাকার ভাষা। দুই ভাষারই ছিল লেখ্য রূপ আর, এই দুই ভাষায় লেখা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উতকীর্ণ লিপি এখনও বর্তমান, যার বেশিরভাগেরই পাঠোদ্ধার করা গেছে। দেখা গেছে ওস্কান, আম্ব্রিয়ান আর লাতিন ভাষা ব্যাকরণ ও শব্দভাণ্ডারের দিক থেকে যথেষ্ট এক, যদিও এতোটা নয় যে সেই মিলের ভিত্তিতে তাদেরকে এক-ই ভাষা বলা যায়। ফারাকটা…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.