|| রোমপরবর্তী ইউরোপ || পশ্চিমে রোমক সাম্রাজ্য কেন অস্ত গেল তা কেউ জানে না। পঞ্চম শতক শুরুর কয়েক দশকের মধ্যেই লাতিনভাষী অঞ্চলটি এক সম্রাটের অধীন একটি সাম্রাজ্য থেকে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে পরিণত হলো, যেসব রাষ্ট্রের বেশিরভাগ-ই চলে গেল জার্মানিক রাজাদের হাতে। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর ২য় পর্ব লাতিন ও ইউরোপ . . . রোমপরবর্তী ইউরোপ পশ্চিমে রোমক সাম্রাজ্য কেন অস্ত গেল তা কেউ জানে না। পঞ্চম শতক শুরুর কয়েক দশকের মধ্যেই লাতিনভাষী অঞ্চলটি এক সম্রাটের অধীন একটি সাম্রাজ্য থেকে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে পরিণত হলো, যেসব রাষ্ট্রের বেশিরভাগ-ই চলে গেল জার্মানিক রাজাদের হাতে। নিঃসন্দেহে, সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তা না হলে নানান জার্মানিক দলের পক্ষে সেটাকে এতো সহজে টুকরো টুকরো করে নিজেদের কব্জায় নেয়া সম্ভব হতো না; তবে সেই দুর্বলতার কারণ নিয়ে ইতিহাসবেত্তারা এখনো বাহাস চালিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক গবেষণা বিশেষ করে এই বিষয়টার দিকে তর্জনী তুলছে যে জার্মানরা এসে পৌঁছবার আগে আগে সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা সম্ভবত কমে গিয়েছিল ঝপ করে, কিন্তু তারপরে-ও এটা কেউ বলতে পারছেন না তা কেন হবে। আগেই যেসব রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল, বা, রোমক সাম্রাজ্যের বাইরে যেসব রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল সেগুলোর চাইতে খুব একটা ভিন্ন ছিল না নতুন রাষ্ট্রগুলো। যতোই সময় যেতে থাকল ততোই প্রাক্তন সাম্রাজ্য আর সনাতনভাবে যেগুলোকে বর্বরদের বাসস্থান বলে ধরে নেয়া হতো এই দুইয়ের মধ্যে তফাত ঘুচে যেতে থাকল সমাজ ও সংস্কৃতির দিক থেকে। এই পরিবর্তনগুলোর কারণ ছিল প্রধানত দুটো। এক, রোমক সমাজকে বিশিষ্টতাদানকারী উপাদানগুলোর অদৃশ্য হয়ে যাওয়া। বিশালায়তন, দক্ষভাবে পরিচালিত সেনাবাহিনী ভেঙে দেয়া হয়েছিল, যেমনটি করা হয়েছিল সেটার ভিত্তিস্বরূপ সিভিল সার্ভেন্ট আর কর সংগ্রাহকদের নিয়ে তৈরি ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও। লোকজনের মাথায় করের বোঝা আর রইল না, কিন্তু তার মানে হলো, সামরিক সুরক্ষাও আর পেলো না তারা। ব্যবসা-বাণিজ্য আর যোগাযোগ কমে এলো পালাক্রমে, লোকজন শহর থেকে বেরিয়ে পড়ল, আর সেসব শহরের কোনো কোনোটি পরিণত হলো নেহাতই ধংসস্তূপে। বেশিরভাগ মানুষ-ই এখন গ্রামাঞ্চলে বাস করতে লাগল, আশেপাশের জগতের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ আর রইল না বললেই চলে। এভাবে অবস্থাটা হয়ে দাঁড়াল ঠিক তেমন যেমনটা ছিল সেই সব অঞ্চলে যেগুলো কখনোই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। দুই, গোটা পশ্চিম এবং উত্তর ইউরোপ ধীরে ধীরে একই ধর্ম গ্রহণ করল। খৃষ্টধর্ম প্রায় ঠিক একই গতিতে শক্তিশালী হতে শুরু করল যে-গতিতে রোমক সাম্রাজ্য শুরু…

|| খৃষ্টধর্ম : বিপজ্জনক সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রধর্ম || ত্যাসিতাস তাঁর ‘Annals’-এ ৬৪ খৃষ্টাব্দে — সম্রাট নিরোর রাজত্বকালে — রোমে সংঘটিত হওয়া এক প্রবল অগ্নিকাণ্ডের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের পর জোরেশোরে গুজব রটল যে কাজটা বিশেষ কোনো এক অগ্নিসংযোগকারীর, এমনকি তা খোদ সম্রাটের-ও হতে পারে। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর খৃষ্টধর্ম : বিপজ্জনক সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রধর্ম ত্যাসিতাস তাঁর ‘Annals’-এ ৬৪ খৃষ্টাব্দে — সম্রাট নিরোর রাজত্বকালে — রোমে সংঘটিত হওয়া এক প্রবল অগ্নিকাণ্ডের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের পর জোরেশোরে গুজব রটল যে কাজটা বিশেষ কোনো এক অগ্নিসংযোগকারীর, এমনকি তা খোদ সম্রাটের-ও হতে পারে। এই গুজবগুলোকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য নিরো এমন একটি দলের ওপর দোষ চাপালেন যারা আগে থেকেই অজনপ্রিয়, এবং যাদেরকে লোকে ‘Christiani’ বলত, কারণ, ত্যাসিতাস বলছেন : Auctor nóminis eius Christus Tiberio imperitante per procuratórem Pontium Pilatum supplício adfectus erat খৃষ্ট — যার কাছ থেকে ওই নামটা (অর্থাৎ, খৃষ্টান) এসেছে, তাঁকে প্রকিউরেটর পন্টিয়াস পাইলেট তাইবেরিয়াসের রাজত্বকালে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন। খৃষ্ট বা খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সম্পর্কে একেবারে গোড়ার দিকের কিছু উল্লেখের অন্যতম এটা। সম্ভবত যিশুখৃষ্টের মৃত্যুর তিরিশ বছর পরেও রোমে খৃষ্টানরা বাস করছিল। ত্যাসিতাসের কোনো সহানুভূতি ছিল না তাদের ধর্মের শিক্ষার ব্যাপারে, যেটাকে তিনি বলছেন ‘exitiábilis superstítio’, বা, ‘এক ক্ষতিকর কুসংস্কার’। ত্যাসিতাস আমাদের জানাচ্ছেন, খৃষ্টানদের ধরে ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠুর সব উপায়ে মেরে ফেলা হতো : যেমন, জীবন্ত মশাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো তাদের। লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যেতে বাধ্য করা হলো তাদের, কিন্তু তারপরেও ঠিক যাকে বলে অদৃশ্য হয়ে গেল না তারা। এ-ঘটনার পঞ্চাশ বছরেরও কম সময় পর কনিষ্ঠ প্লিনি — আধুনিক তুরস্কের বিথিনিয়ার প্রশাসক — সম্রাট ত্রাজান-এর কাছে পত্র লিখে জানতে চাইলেন লোকে খৃষ্টান বলে অভিযুক্ত হলে তাঁর করণীয় কি? মনে হয় এ-ধরনের অনেক ঘটনা অনেকই ঘটতো, আর প্লিনির ইচ্ছেটা ছিল অনেকটা এরকম যে তাদেরকে হুট করে মেরে না ফেলে অনুতাপের সুযোগ দেয়া বরং ভালো। সম্রাট সহমত প্রকাশ করলেন, কিন্তু তাঁর কাছে মনে হলো ব্যাপারগুলোকে এতো খুঁটিয়ে দেখার কিছু নেই, বরং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তা প্রমাণ হয়েছে তাদেরকে সাজা দিয়ে ফেললেই ল্যাঠা চুকে যায়। খৃষ্টধর্মের প্রসার অব্যাহত রইল, এবং রাষ্ট্রের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বহাল থাকলেও তা যে খুব নিয়মিতভাবে ঘটত তা নয়, আর এর অল্প কিছুদিন আগে থেকে খৃষ্টানরা লাতিন লিখতে শুরু করেছিল।…

|| দৈনন্দিন জীবনের ভাষা || আবহাওয়া নিয়ে কথা বলতে গেলে, কর নিয়ে অভিযোগ করার সময়, বা, পড়শীর বৌকে নিয়ে গালগপ্পো করার সময় লোকে লাতিনে কি বলত? আজ যে-ভাষায় কথা বলা হয় সে ভাষার ক্ষেত্রে এটা স্রেফ শুনেই বলে দেয়া যায়। কিন্তু লাতিন আমরা কেবল পড়তেই পারি, শুনতে পারি না, কাজেই রোজকার ভাষা কেমন ছিল তা বলা বেশ কঠিন। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর দৈনন্দিন জীবনের ভাষা আবহাওয়া নিয়ে কথা বলতে গেলে, কর নিয়ে অভিযোগ করার সময়, বা, পড়শীর বৌকে নিয়ে গালগপ্পো করার সময় লোকে লাতিনে কি বলত? আজ যে-ভাষায় কথা বলা হয় সে ভাষার ক্ষেত্রে এটা স্রেফ শুনেই বলে দেয়া যায়। কিন্তু লাতিন আমরা কেবল পড়তেই পারি, শুনতে পারি না, কাজেই রোজকার ভাষা কেমন ছিল তা বলা বেশ কঠিন। যে সমস্ত বই-পত্তর আমাদের কাছে আছে তা থেকে অনেকটাই কুড়িয়ে-কাছিয়ে নেয়া যায় অবশ্য। কিন্তু বেশিরভাগ লেখক-ই কথ্য ঢং-এ লেখেন না, বরং ইচ্ছে করেই একটি শিল্পসম্মত উপায়ে লেখেন (তার মানে কি কথ্য ঢংটি শিল্পসম্মত নয়? – অনুবাদক), ব্যবহার করেন ব্যপক বিস্তৃত শব্দসম্ভার ও প্রায়ই, দীর্ঘ বাক্য; সেই সঙ্গে, ব্যাকরণের নিয়ম-কানুনের প্রতি সব সময়ই প্রদর্শন করেন পরম সম্মান। লোকে আজকাল এভাবে কথা বলে না, এবং অবশ্যই রোমেও তারা তা করত না। তাছাড়া, আমরা দেখেছি, বেশিরভাগ লেখকই এসেছিলেন সমাজের উঁচুতলা থেকে। এবং তাঁদের কথা বলার ধরন সম্ভবত অধিকাংশ রোমকদের কথা বলার ধরনের চাইতে ভিন্ন ছিল। আর তাই, সিসেরো বা তাঁর বন্ধুস্থানীয়দের মধ্যে কথ্য ভাষার যেসব উপাদান পাওয়া যায় তা প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। সাধারণ মানুষ কিভাবে কথা বলতেন তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে প্লতাসের কমেডি থেকে, যার কথা আগে বলেছি আমরা। এখানে পরস্পরের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হওয়া দুই গৃহবধূ ক্লেওস্ত্রাতা আর মিরিনা-র একটা ছোট সংলাপ তুলে দেয়া হলো : Cleostrata: Myrrhina, salve.
 Myrrhina: Salve, mecastor: sed quid tu's tristis, amábo?
 Cleostrata: Ita solent omnes quae sunt male nuptae: Domi et foris aegre quod sit, satis semper est. Nam ego ibam ad te. 
Myrrhina: Et pol ego istuc as te. Sed quid est, quod tuo nunc ánimo aegre'st? Nam quod tibi'st aegre, idem mihi'st dividiae. ক্লেওস্ত্রাতা: কি খবর, মিরিনা? 
মিরিনা: এই তো। কিন্তু তোমাকে এতো মনমরা দেখাচ্ছে কেন, গো? 
ক্লেওস্ত্রাতা: সবার-ই এমন হয় যদি সংসার জীবনে সুখ না থাকে; ঘরে বাইরে, কোথাও কোনো শান্তি থাকে না। আমি স্রেফ তোমার সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়েছি। 
মিরিনা: ভাবো দেখি! আমি-ও তো তোমার…

|| দর্শন : লুক্রিশাস, সিসেরো আর সেনেকা || ‘Philosophy’ শব্দটা গ্রীক; মানে অনেকটা, 'প্রজ্ঞাপ্রেম'। গ্রীকদের কাছে কথাটার অর্থ ছিল যা কিছু সত্য আর সঠিক তার জন্য সর্বোচ্চ রকমের পদ্ধতিগত অনুসন্ধান। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর দর্শন : লুক্রিশাস, সিসেরো আর সেনেকা ‘Philosophy’ শব্দটা গ্রীক; মানে অনেকটা, 'প্রজ্ঞাপ্রেম'। গ্রীকদের কাছে কথাটার অর্থ ছিল যা কিছু সত্য আর সঠিক তার জন্য সর্বোচ্চ রকমের পদ্ধতিগত অনুসন্ধান। আমাদের সবারই জানা আছে দর্শনের জগতে তারা পরম উৎকর্ষ লাভ করেছিল, আর তাদের সেরা দার্শনিকেরা, যেমন প্লেটো এবং এরিস্টটল, যা লিখে গেছেন তার অনেকটাই এমনকি আজও তার তাৎপর্য ও গুরুত্ব এতটুকু হারায়নি। রোমক দর্শন গড়ে উঠেছিল পুরোপুরি এই অসামান্য গ্রীক দার্শনিক ঐতিহ্যের ওপর ভর করে, যেখানে আমরা দেখতে পাই এই জগৎকে জানার, ব্যাখ্যা করার এবং কিভাবে জীবন যাপন করা উচিত তার দস্তুর ঠিক করার বিচিত্র প্রচেষ্টা। নতুন দার্শনিক ধ্যান-ধারণা রোমকরা বেশি কিছু প্রবর্তন করেননি, তবে তাঁরা গ্রীকদের চিন্তা-চেতনা লাতিনে স্থানান্তর করেছেন, আর তা করতে গিয়ে সেসবে অল্প-বিস্তর পরিবর্তন এনেছেন। সে যাই হোক, রোমক দার্শনিকেরা দুটো কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, তাঁরা গ্রীক দর্শনের সার কথাটি লাতিন-জানা সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, যা ইউরোপীয় চিন্তার পরবর্তী ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আর দ্বিতীয়ত, তৎকালীন দর্শনগত যুক্তিবিচার পদ্ধতির (philosophiical reasoning) প্রতিশব্দ তৈরি করেছিলেন তাঁরা যা অসংখ্য তাৎপর্যপূর্ণ মৌলিক চিন্তাবিদেরা ব্যবহার করেছেন এবং লাতিনে তাঁদের ধ্যান-ধারণার কথা লিপিবদ্ধ করেছেন, প্রাচীন কালের শেষাংশের অগাস্টিন এবং নানান খৃষ্টীয় আচার্য থেকে শুরু করে ১৭শ শতকে দেকার্তে এবং স্পিনোযা পর্যন্ত। লাতিনে লেখা প্রথম গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক রচনাটি পরবর্তীকালেও বেশ প্রভাবসঞ্চার করেছিল। সেটার নাম, ‘De rerum natura’, বা, ‘বস্তুর প্রকৃতি প্রসঙ্গে’, রচয়িতা লুক্রিশাস (Lucretius) যিনি ৫৫ খৃষ্ট পূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। এই রচনাটি কাব্যিক ধারা বা ঐতিহ্যেরও অন্তর্ভুক্ত, কারণ এটি একটি দীর্ঘ ষটপদী উপদেশাত্মক কবিতা; ভার্জিল তাঁর ‘ঈনীড’ মহাকাব্যেও একই মাত্রা ব্যবহার করেছিলেন। গ্রীক দার্শনিক এপিকিউরাসের (Epicurus) প্রবল অনুরাগী ছিলেন লুক্রিশাস। আজ মানুষ এপিকিউরাস বলতেই আনন্দই পরম মঙ্গল বা শুভ, এই নীতির প্রবক্তাকে বোঝে; আর তাই আনন্দপ্রেমী মানুষকে কখনো কখনো এপিকিউরীয় বলেও অভিহিত করা হয়। কিন্তু তাঁর দর্শনের এই দিকটি নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না লুক্রিশাসের। তাঁর দৃষ্টিতে এপিকিউরাস ছিলেন সেই মানুষ যাঁর তাকদ ছিল পরমাণুবাদী তত্ত্বের সাহায্যে যুক্তিসিদ্ধভাবে —…

|| কাব্য এবং কবিকুল || প্রেমের কবিতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ আর লোকজনের পছন্দের হলেও রোমক লেখকরা সেটাকে সর্বোচ্চ আসনে বসাননি, যা আসলে নির্দিষ্ট ছিল মহাকাব্যের জন্য। এবং সম্রাট অগাস্টাসের আমলেই রচিত হয়েছিল সবচেয়ে বিখ্যাত লাতিন কাব্য। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর কাব্য এবং কবিকুল লাতিন সাহিত্যের এক অসাধারণ বিকাশ ঘটে ১০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ১০০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে, যেটাকে সাধারণত সে-সাহিত্যের ধ্রুপদী যুগ বলা হয়। এ-হচ্ছে সেই সময় যখন রোমক সাম্রাজ্য সবচাইতে দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে, অর্জন করছে তার সেরা সব সাফল্য। কিন্তু কি লিখেছিল রোমকরা, জানতেই চাইতে পারেন অনেকে। তার উত্তর হলো, তারা খুব মন দিয়ে গ্রীক সাহিত্যের সেরা কীর্তিগুলো অধ্যয়ন করেছিল, আর তারপর এক-ই ধরনের গ্রন্থ রচনা করেছিল। প্রথমে তারা গ্রীক রচনাগুলোর অনুবাদ-অনুকরণ আর ছায়াবলম্বন করেছিল অনেক, কিন্তু ধীরে ধীরে তারা আরো উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠে, এবং নিজেদের ‘মৌলিক’ রচনায় হাত দেয়, যদিও অনেক দিক থেকেই সেগুলো গ্রীকদের প্রবর্তন করা লক্ষণগণ্ডির ভেতরেই রচিত হয়েছিল। এভাবে বললে কথাটা কেমন কেমন শোনালেও লাতিন সাহিত্য কিন্তু আসলেই যথেষ্ট সফলতার পরিচয় দিয়েছিল। রোমকরা যে গ্রীকদের উদাহরণ অনুসরণ করেছিল তাতে কোনো বিতর্ক নেই; এবং তাতে করে অসাধারণ কিছু নমুনা পেয়েছিল তারা তাদের সামনে, আর তারপরে তারা চেষ্টা করেছিল লাতিন ভাষায় একইরম, চাইকি তার চাইতে ভালো কিছু সৃষ্টি করতে। এই পদ্ধতিকে তারা বলত ‘aemulátio’, যার মানে কোনো কিছু অনুকরণ বা তার চাইতে ভালো কিছু তৈরি করা। এবং অনেক ক্ষেত্রেই লাতিন রচনাগুলো তাদের নমুনার সমকক্ষতা অর্জন করেছিল, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে ছাড়িয়েও গিয়েছিল সেগুলোকে। গ্রীক আর রোমকরা যে সাহিত্য রচনা করেছিল সেরকমের সাহিত্য আজকালকার বইয়ের দোকানে দেখা যায় না। আজ যা লেখা হয় তার বেশিরভাগই উপন্যাস, অর্থাৎ গদ্যে রচিত আখ্যানমূলক লেখা। উপন্যাস কিছু রোমকরাও লিখেছিল, কিন্তু সেগুলো প্রাচীনকালে বা তার পরেও কখনো জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। অষ্টাদশ শতকের আগে উপন্যাস তুমুলভাবে জনপ্রিয় হয়নি, এবং তখন ইংরেজি ও ফরাসির মতো আধুনিক ভাষায় তা লেখা হতে থাকে। অথচ প্রাচীনকালে সৃজনশীল বেশিরভাগ লেখাই রচিত হতো পদ্যে। সাদামাটা গদ্যে লিখিত হতো বক্তৃতা, ইতিহাস, আর বিভিন্ন ধরনের নন-ফিকশন; সেসবের কথা পরে আসবে। যা কিছু আখ্যান বা কাহিনীমূলক বা বিনোদনমূলক তা লেখা হতো পদ্যে বা কাব্যে, যেখানে টেক্সটকে কঠোরভাবে ছন্দোবদ্ধ হতে হতো; তার কিছু উদাহরণ নিচে দেয়া হলো। লেখকেরাও খুব সতর্ক তাঁদের শব্দের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.