সারাদেশে বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা সত্যিই এক নারকীয় তান্ডব ছিল। সেদিন আমি মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাশে এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম। দুপুরের দিকে আমার এক বন্ধু মোবাইল করে বলে যে, 'ঝিগাতলার দিকে গন্ডগোল হচ্ছে'। তখনও আমরা স্পষ্ট কিছু বুঝিনি (আমি এবং আমার বন্ধু যার বাসায় আমি ছিলাম) এবং প্রায় রওনা দেবো এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকজন ছুটাছুটি করতে শুরু করল। একে একে সবাই বলাবলি শুরু করল 'বিডিআর আর আর্মিতে মারামারি লাগছে'। তারপর বাসায় ফিরলাম। ফিরে এসে টিভি ছাড়লাম। দেখলাম সত্যিই এক যুদ্ধক্ষেত্র..!! বিকেলে মা ফোন করে আমাকে যা জানালো তার একটি গুছালো বিবরণ নিচে দিলাম: ১৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে অবস্থানরত। এই ব্যাটালিয়ন বা বিডিআর ক্যাম্পের ভিতরে দুটি স্কুল। একটি প্রাইমারি, নাম 'শহীদ নূর মোহাম্মদ প্রাথমিক বিদ্যালয়'। অপরটি উচ্চ বিদ্যালয়, নাম 'রাইফেলস উচ্চ বিদ্যালয়'। দুটি স্কুলই প্রতিষ্ঠিত হয় ১২ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন এর হাতে। তারপর সেখানে ব্যাটালিয়ন পরিবর্তিত হতে হতে বর্তমানে ১৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন। এতোসব বলছি কারণ- সেদিন বুধবার বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর জওয়ানরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাইফেলস্ স্কুলসহ প্রাইমারি স্কুলটি ছুটি দেয়া হয়। বাচ্চারা ছুটোছুটি করে ফেরার সময় এক আদিবাসী মনিপুরি শিক্ষার্থী যে রাইফেলস স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে তার ফ্রক (স্কুল ড্রেস) ফুটো করে এক বুলেট বেরিয়ে যায়। ভাগ্যিস তার কিছু হয়নি। যদি হতো..? শিক্ষার্থীর নাম 'লাইতোঞ্জম ফেন্ডো'। এটি তার ডাকনাম, স্কুলে ব্যবহৃত সঠিক নামটি এখনো জানা হয়নি। সে শিক্ষার্থী বাসায় ফেরার পর নাকি সারারাত জ্বর ছিলো গায়ে। সাথে উদ্বেগ উৎকন্ঠাসহ মা-বাবার চোখে ঘুম হারাম হওয়া এক রাত.. এখন সুপ্রিয় পাঠক বলেন তো, জওয়ানদের এমন বিদ্রোহের ফলে এই যে কোমলমতি শিশুরা যারা স্কুলে লেখাপড়া শিখতে যায়, যারা নিষ্পাপ, যারা কোনদিন কারো কোনো ক্ষতি করেনি তারা কেনো এমন বিদ্রোহের শিকার হবে..? :: স্কুলে ব্যবহৃত সঠিক নামটি জানামাত্র লেখাটিকে আপগ্রেড করা হবে ::