বাঙালির কাছে বাংলা এখনো পুরোপুরি ‘শ্রদ্ধেয়’ হয়ে ওঠে নি। আড়াই শতাব্দি আগে তারা শ্রদ্ধা করেছে ফরাসিকে, গত দু-শো বছর ধ’রে শ্রদ্ধা ক’রে আসছে ইংরেজিকে : দুটিই সাম্রাজ্যবাদী রাজভাষা, যা বাঙালির কাছে আভিজাত্যের প্রতীক। বাংলা শুধুই গ্লানি সঞ্চার করে। তাই আমাদেরকে বাংলা বলার সাথে চোস্ত কিছু ইংরেজি না মেশালে বলায় ভাব আসে না। তাই বাংলাদেশ জুড়ে পালে পালে প্রসবিত হয় উপনিবেশিক জন্তুদের উত্তরাধিকার চমৎকার খচ্চরগণ, যারা ভুল বাংলা ও ভুল ইংরেজি মিশিয়ে এক ধরনের বিকট অশ্লীল বমিজাগানো ভাষার জন্ম দিয়েছে। যাদের মুখের মধ্যে এমন একটা কিছু ঢুকে আছে, যে মুখ-জিহবা সহজে নাড়াচাড়া করা যায় না। যারা হেয়ার জেলে আমির খান সেজে ভাষাকেন্দ্রিক আধিপত্য প্রয়োগের সম্পর্ককে জারী রেখে বহুজাতিক কর্পোরেশনের খেদমদগার মিডিয়া প্রভু নির্মিত গোলামির সংস্কৃতিকে বয়ে বেড়ায় রক্তে। চেতনায়। মাতৃভাষায়। আমাদের একুশ আর একাত্তর, আমাদের সমগ্র স্বপ্ন আর বিশ্বাস আজ বেহাত হয়ে গেছে। যে ভাষার স্বপ্নে আর অহংকারে আমরা আমাদের মগজ আর জমিনকে স্বাধীন করেছিলাম, সে ভাষার সর্বত্র আজ বিকৃতির অনপনেয় কালিমা। মিডিয়া দানবদের কর্পোরেট ধান্দাবাজি আর গোলকায়ন মোড়কে পুঁজি-মুনাফার উপনিবেশ আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে এফ এম রেডিও, ডিজুস কালচার। তাই আমাদের শুনতে হয় : ডিয়ার লিইসোনার্স, আপনাড়া শুনছেন ড়েডিও ...ওক্কে, শুরু হলো একটি নতুন দিন। আর এই সঙ্গে তোমাদের যাদেড় হ্যাপি বার্থ ডে তাদেড় উইশ করে নিচ্ছি...ভেরি ভেরি ভেরি হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ। আর টেলিভিশনের পর্দায় একজন নাটক নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী (আলোকিত খচ্চর প্রজন্মের প্রতিভূ) যখন লেখেন, --পুলা না মাইয়া হইছে দেইখা আইতে এ্যাত সময় লাগল? --উস্তাদ আজান তো পরে নাই। --আজান না পড়ুক। পুলা না মাইয়া বাচ্চাডার উপর-নিচে দেইখা আইলেই ত হয়। ...তখন বমি পায় আমাদের। লজ্জায় ঘৃণায় নতমুখ হতে হতে একবিন্দু হয়ে যায় আমাদের শহীদ মিনার ! মানুষকে শিতি করার যে বাহাদুরি বুলি দিয়ে মিডিয়া তার মতাদর্শিক ও বাণিজ্যিক ফিকিরকে প্রতিনিয়ত আগ্রাসী করে তুলেছে, তার ধরণধারণ, যাবতীয় অশ্লীল প্রকল্পসমূহের গোছা ধরে টান মারার সময় এসেছে। তাই আমরাও সচেষ্ট হই প্রতিনিয়ত চালাকবাক্স (সুশোভিত নাম টেলিভিশন) তার পর্দায় ঝুলিয়ে রাখা জগাখিচুড়ি মার্কা কিম্ভুতকিমাকার ভুলে ভরা বিকট এক ভাষা, যাকে ভাষাবোদ্ধাদের কেউ কেউ আদর করে ‘বাংলিশ’ বলে ডাকেন, তার…
বাঙালির কাছে বাংলা এখনো পুরোপুরি ‘শ্রদ্ধেয়’ হয়ে ওঠে নি। আড়াই শতাব্দি আগে তারা শ্রদ্ধা করেছে ফরাসিকে, গত দু-শো বছর ধ’রে শ্রদ্ধা ক’রে আসছে ইংরেজিকে : দুটিই সাম্রাজ্যবাদী রাজভাষা, যা বাঙালির কাছে আভিজাত্যের প্রতীক। বাঙলা শুধুই গ্লানি সঞ্চার করে [..]