|| পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং অন্যান্যরা || মধ্যযুগের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল পাটিগণিত, জ্যামিতি আর জ্যোতির্বিদ্যা, এই তিন artes libereles। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং অন্যান্যরা মধ্যযুগের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল পাটিগণিত, জ্যামিতি আর জ্যোতির্বিদ্যা, এই তিন artes libereles। ধ্রুপদী যুগে যে-জ্ঞান অর্জিত হয়েছিল সেই জ্ঞানের একটি অংশ হস্তান্তরের বেশি আর কিছুই ছিল না এটা একটা দীর্ঘ সময় ধরে। সত্যি কথা বলতে কি, ত্রয়োদশ শতকের আগ পর্যন্ত উন্নততর গণিতশাস্ত্র ও পদার্থবিদ্যার প্রতি নতুন করে আর কোনো আগ্রহ জন্মেনি কারো, এবং সেই অর্থে প্রকৃত উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয় কেবল-ই এই সপ্তদশ শতকে। এবং সবচাইতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে। গ্রীক এবং রোমকগণ মহাজাগতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতো, এবং তাঁদের পর্যবেক্ষণলব্ধ নানান কিছুর নাম-ও দিয়েছিল। রোমানরা ‘Mercury’, ‘Venus’, ‘Mars’, ‘Jupiter’ এসব গ্রহের যে নাম দিয়েছিল ঠিক সেই নামগুলোই এখনো ব্যবহার করি আমরা, যেগুলো কিনা সব-ই রোমক দেবতাদের নাম। আধুনিককালে যে তিনটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোর নাম-ও একইভাবে অন্য তিন রোমক দেবতা ‘Uranus’, ‘Neptun’ ও ‘Pluto’-র নামে রাখা হয়েছে। প্রাচীন কালের মানুষজন নক্ষত্রগুলোকে নানান নক্ষত্রপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত করে সেগুলোর নামকরণ-ও করে গেছেন, এবং সেসব নামের অনেকগুলো এখনো ব্যবহার করি আমরা, যেমন ‘Leo’ (সিংহ), ‘Gemini’ (যমজ), ইত্যাদি। প্রাচীনকালে বিশ্বাস করা হতো পৃথিবী হচ্ছে মহাবিশ্বের কেন্দ্র, এবং সূর্য, চন্দ্র, এবং অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র তার পাশে আবর্তিত হয়। সতর্ক পর্যবেক্ষণ ও যথার্থ গাণিতিক হিসেব-নিকেশের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই সিদ্ধান্তে আসা হয় যে আসলে পৃথিবী-ই সূর্যের চারদিকে ঘোরে, এর উল্টোটা নয়। ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে কোপার্নিকাসের জন্ম দেয়া এই ধারণাটিকে জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি তথাকথিত ‘ভূকেন্দ্রিক তত্ত্বের’ বিরুদ্ধে দাঁড় করান ১৬৩২ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর “Dialogue Concerning the Two Chief World Systems” বইটিতে। আমাদের জানা আছে, প্রবল উত্তেজনা ও তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল বইটি। গির্জা গ্যালিলিওকে ধর্মদ্বেষী বলে ঘোষণা করে, এবং জীবনের বাকিটা সময়কে বিজ্ঞানী মহাশয়কে গৃহবন্দী হয়েই থাকতে হয়। গির্জার কাছে গ্যালিলিও গ্যালিলি যেসব কারণে বিপজ্জনক ছিলেন তার একটির সঙ্গে কিন্তু ভাষার সম্পর্ক রয়েছে। সে-সময়কার অন্য পণ্ডিতজনেরা যা করতেন, গ্যালিলিও কিন্তু সেরকম সব সময় লাতিন ভাষায় লিখতেন না। তাঁর “Dialogue” ইতালীয় ভাষায় লেখা, আর তাছাড়া, অপেক্ষাকৃত সহজ-সরলভাবে…

|| এবেলার্ড ও ইলোইযা (শেষার্ধ) || যে ঘটনাগুলোর কথা আমরা এই মাত্র বললাম সেগুলো ঘটেছিল ১১১৭ থেকে ১১১৯ খৃষ্টাব্দের মধ্যে, যখন এবেলার্ডের বয়স আটত্রিশ, ইলোইযার আঠারো কি উনিশ। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর এবেলার্ড ও ইলোইযা (শেষার্ধ) যে ঘটনাগুলোর কথা আমরা এই মাত্র বললাম সেগুলো ঘটেছিল ১১১৭ থেকে ১১১৯ খৃষ্টাব্দের মধ্যে, যখন এবেলার্ডের বয়স আটত্রিশ, ইলোইযার আঠারো কি উনিশ। এর প্রায় পনেরো বছর পর, খুব সম্ভব ১১৩৪ খৃষ্টাব্দে এবেলার্ড তাঁর ‘Historia calamitamum’ রচনা করেন, যখন তাঁর বয়স পঞ্চান্ন। এই বইতে তিনি বিগত পনেরো বছরে তাঁর জীবনের ঘটনাবলীর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যা কিনা তাঁর সারা জীবনের মতোই ছিল দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পরিপূর্ণ। সেসময় তিনি একটি মঠের মোহান্ত বা মহাধ্যক্ষ ছিলেন, আর ইলোইযা একটি কনভেন্টের মঠাধ্যক্ষা। তাঁদের জীবনের সেই সময়ের লেখা বেশ কিছু পত্র আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। সেগুলোর প্রথমটি এবেলার্ডকে লেখা ইলোইযার চিঠি, আর তাতে তিনি বলছেন যে ঘটনাক্রমে তাঁর হাতে এবালার্ডের ‘Historia calamitamum’ এসে পড়ে এবং সেটা পাঠান্তে তিনি তাঁকে চিঠি না লিখে পারেননি। এরপর এবেলার্ড ইলোইযাকে চিঠিটার জবাব দেন, তারপর ইলোইযা এবেলার্ডকে, এইভাবে চলতে থাকে। পৃথিবীর সাহিত্যের ইতিহাসে এই ইলোইযা-এবেলার্ড পত্রাবলী সবচাইতে বহুল পঠিত ও আলোচিতগুলোর অন্যতম, বিশেষ করে প্রথম চিঠি দুটো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিস্মিত ও মুগ্ধ করে রেখেছে পাঠকদের। এই পত্র দুটোর শুরুতে তিনি এবেলার্ডের প্রতি তাঁর প্রেমকে ব্যাখ্যা করেছেন: ‘te semper, ut ómnibus patet, immoderato amóre complexa sum’ – ‘সব সময়ই আমি তোমাকে নিঃসঙ্কোচ প্রেমের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে চেয়েছি, যা সবাই জানে।’ বেশিরভাগ সময়েই তিনি এবেলার্ডকে ‘unice’ বা ‘ আমার একমাত্র’ বলে সম্বোধন করেছেন। এবেলার্ড যা কিছু করেন, যা কিছু ভাবেন তা অন্য সব কিছুর চাইতে ভালো; তাঁর প্রতিভা আর জ্ঞান রাজা-বাদশা বা সম্রাটদের চাইতেও ঢের বেশি; তিনি সবার চাইতে সুন্দর, অন্য যে কারো চাইতে ভালো গাইতে আর লিখতে পারেন, বিবাহিত-অবিবাহিত সব নারী তাঁকে পছন্দ করেন। ইলোইযা যা কিছু করেছেন সব এবেলার্ডের প্রতি ভালোবাসার কারণেই করেছেন, অন্য কোনো কারণে নয়। আর সেটা বিশেষ করে প্রযোজ্য কনভেন্টে তাঁর যোগ দেবার ক্ষেত্রে। ‘Tua me ad religiónis hábitum iússio, non divina traxit diléctio’ – ‘তোমার আদেশ ছিল তাই আমি কনভেন্টে যোগ দিয়েছিলাম, ঈশ্বরকে ভালোবেসে যোগ দিইনি।’ ফলে, তিনি আরো…

|| সন্তগণ ও ধর্মদ্রোহীবৃন্দ (শেষার্ধ) || অনেক বছর পর, দ্বাদশ শতকের মধ্যভাগে গোটা খৃষ্ট সম্প্রদায়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন ক্লেয়ারভয়ের বার্নার্ড নামের একজন আয়োজক এবং মরমীবাদী। তিনি-ই ছিলেন সিস্টার্সীয় সম্প্রদায়ের ব্যাপক সম্প্রসারণের পেছনের চালিকা শক্তি [ . . . ]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   সন্তগণ ও ধর্মদ্রোহীবৃন্দ (শেষার্ধ) অনেক বছর পর, দ্বাদশ শতকের মধ্যভাগে গোটা খৃষ্ট সম্প্রদায়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন ক্লেয়ারভয়ের বার্নার্ড নামের একজন আয়োজক এবং মরমীবাদী। তিনি-ই ছিলেন সিস্টার্সীয় সম্প্রদায়ের ব্যাপক সম্প্রসারণের পেছনের চালিকা শক্তি; বেশ কিছু মঠ স্থাপিত হয়েছিল, এমনকি সেই দূর সুইডেনেও। এছাড়াও, তিনি ছিলেন একজন বহুপ্রজ লেখক। তাঁর রচনা সংগ্রহের সংস্করণ — যার মধ্যে রয়েছে হিতোপদেশ, ধর্মতাত্ত্বিক প্রবন্ধ, চিঠি-পত্র, এবং আরো অনেক কিছু, এবং তার প্রতিটি শব্দ লাতিন ভাষায় রচিত — নয় খণ্ডে সমাপ্ত। সবচাইতে বিখ্যাত ব্রিটিশ সন্ত টমাস বেকেট জীবনের প্রথম ভাগে তাঁর সন্তসুলভ স্বভাবচরিত্রের জন্য পরিচিত ছিলেন না মোটেই। বিদ্বান এবং অত্যন্ত প্রাণচঞ্চল এই যাজক রাজা দ্বিতীয় হেনরীর সময়ে চ্যান্সেলর পদে সমাসীন হয়েছিলেন। সে যাই হোক, তাঁর বন্ধু রাজা যখন তাঁকে ক্যান্টারবেরির আর্চ বিশপ নিযুক্ত করলেন তিনি অত্যন্ত নাটোকীয়ভাবে তাঁর জীবনযাপন পদ্ধতি বদলে ফেলেন এবং খৃষ্ট সম্প্রদায়ের স্বার্থ কি করে আরো ভালো ভাবে রক্ষা করা যায় সে-কাজে নিজেকে উৎসর্গ করলেন। এতে করে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তাঁর ওপর এবং তাদের পরবর্তী দীর্ঘ দ্বন্দ্বের পরিণতিতে টমাস বেকেট তাঁর নিজের ক্যাথিড্রালে আততায়ীদের হাতে খুন হন। শিগগিরই তাঁকে সন্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়, এবং গোটা মধ্য যুগ ধরেই অসংখ্য মানুষ তাঁর সমাধিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যেতো। এরকমই এক যাত্রার পটভূমিতেই রচিত হয়েছে চসারের ‘ক্যান্টারবেরি টেলস’। এই তিন সন্ত স্রেফ অসংখ্য সেই সব লেখকের কিছু উদাহরণ যাঁরা মধ্যযুগে খৃষ্ট সম্প্রদায় সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখালেখি করেছেন। এসবের বেশিরভাগই আসলে খুব একটা তরল লেখা নয়, বরং এসবের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সেই সব বিদ্বজ্জনের জন্য অমূল্য উৎস যাঁরা এমন এক সময়ের ইতিহাস, নানান ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-ভাবনার পদ্ধতি সম্পর্কে উৎসাহী যে সময় আমাদের সময়ের চাইতে খুবই অন্যরকম। স্পষ্টতই, ঠিক একই কথা ধর্মীয় বিন্যাসের অপর প্রান্তের মানুষজনের বেলাতেও খাটে, সেই সব মানুষের বেলায় যাঁরা ধর্মদ্রোহী বলে নিন্দিত। ইতিহাসের অসংখ্য পর্যায়ে খৃষ্ট ধর্ম বা গির্জার সংস্কার সাধন বা তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য নানান আন্দোলন বিকাশ লাভ করেছে। এদের মধ্যে সব চাইতে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.