পিশাচের মৃত্যু

১৯৯৮ সাল। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস উত্তাল। জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জসীমুদ্দিন মানিক ওরফে রেপিস্ট মানিক আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিকৃষ্টতম অপরাধের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের চলছে প্রতিবাদ, অবরোধ, সিট-ইন [...]

১৯৯৮ সাল। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস উত্তাল। জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জসীমুদ্দিন মানিক ওরফে রেপিস্ট মানিক আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিকৃষ্টতম অপরাধের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের চলছে প্রতিবাদ, অবরোধ, সিট-ইন। সেই প্রতিবাদ কাছে থেকে দেখিনি, তার আগের বছর ঢাবির পড়াশোনার পাট চুকিয়ে মাত্র কাজে নেমেছি। তবে প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে দেখতাম, পত্রিকার শিরোনামে কিম্ভূত কিছু নাম। রেপিস্ট গ্রুপ বনাম কিলার গ্রুপ। শিক্ষার মহোত্তম কেন্দ্র, একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও যে এমন নাম-সম্বলিত হেডলাইন কাগজে বেরুতে পারে, তা সেবার স্পষ্ট হয়েছিল।

দৃক-প্রধাণ শ্রদ্ধেয় ডঃ শহীদুল হক প্রায়শঃ shahidulnews শিরোনামে তাঁর ব্লগ, তাঁর ফটোগ্রাফি, এবং অন্যান্য বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পর্কে ইমেইল আপডেট দিয়ে পাঠান। আজকে এমনই একটা ইমেইলে সাইদিয়া গুলরুখ নামে একজনের লেখার লিংক পেলাম। লেখা পড়তে গিয়ে বুঝলাম তিনি বর্তমানে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে অবস্থান করছেন, পাশাপাশি জাবির প্রাক্তন ছাত্রী। তাঁর লেখার মাঝেই ভেসে উঠলো নীচের এই কয়টি লাইন, নিমেষে নিয়ে গেল এক যুগ আগে।

“An email from Jashim Uddin Manik’s friend finally arrived in my mail box. It expressed shock and grief at the untimely death of a close friend. It contained routine details which follow such news. Jashim Uddin Manik died in Padova, Milano at around 10.30pm local time (which I guess, on the basis of email exchanges, would be January 5, 2010). His body lies in a morgue while his Italian friends are making arrangements to send his body back to Bangladesh. Manik’s wife took the news very badly, she’s still not herself. In the email, Manik’s friend writes how hard it is for him to stop his tears, he urges everyone (the recipients of his email) to pray for the departed soul.”

কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে ছাত্রলীগের ক্যাডার রেপিস্ট মানিক মারা গেছে। মাসখানেক আগে ইতালীতে। কি কারণে মারা গেল, কিভাবে মারা গেল, সেই সম্পর্কে আর কোন ডিটেইলস নেই। আছে তার বৌ আর বন্ধুদের শোকের কথা। এতটুকু পরিষ্কার যে সুদূর পরবাসে সে ছিল গত এক যুগ ধরে, নির্ঝঞ্ঝাটে, আইনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ১০০তম মেয়েটিকে ধর্ষণ করার পরে যেই ছেলে ক্যাম্পাসে মিষ্টি বিতরণ করেছিল, আজ সে এমন জায়গায় চলে গেছে যেখানে বিচার তাকে আর কোনদিন স্পর্শ করতে পারবে না।

পত্রপত্রিকা বা ব্লগোমন্ডলে এই নিয়ে তেমন কোন উচ্চবাচ্য চোখে পড়েছে বলে মনে পড়ছে না। এতো বড় বিষয়টা তাহলে আমাদের চোখের আড়ালেই, নীরবে নির্জনে শেষ হয়ে গেল? এই অসম্পূর্ণ গল্প, এই অবিচার – এর দায়ভার শেষমেষ কার উপর বর্তাবে? সেই সরকার, সেই প্রশাসন, সেই প্রধাণমন্ত্রী – যারা কিনা আজকের সরকার, আজকের প্রশাসন, আজকের প্রধাণমন্ত্রী। এই নির্লজ্জ রাষ্ট্রকে নিয়েও বলার কিছু নেই – বলার মত ভাষা এরা অবশিষ্ট রাখেনি। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির বর্ণাঢ্য ইতিহাসে মানিক নামের দানবের মত ভয়ংকর কলংকজনক অধ্যায় আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

***

– সেই সময়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ যারা কাছে থেকে দেখেছেন, সরাসরি আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, তাদের অনেকেই লেখালেখিতে সক্রিয় আছেন। তাদের মূল্যবান মন্তব্য বিশেষ করে কামনা করছি।

– সংবাদের সত্যতা নিয়েও ১০০ ভাগ নিশ্চিত হতে পারছিনা। এই বিষয়ে কোন কনফার্মেশন পাওয়া কি সম্ভব কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র ধরে?

সাবস্ক্রাইব করুন
অবগত করুন
guest

16 মন্তব্যসমূহ
সবচেয়ে পুরোনো
সাম্প্রতিকতম সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
16
0
আপনার ভাবনাগুলোও শেয়ার করুনx
  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.