‘সুজন’-সভাপতি দুর্জনের ভূমিকায় : এত নৈতিকতা কোথায় রাখি?

prof-m-ahmed-photoঅনেক ত্যাগ, সংগ্রামের পর গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ বাংলাদেশের নাগরিকরা নির্বিঘ্নে নির্ভয়ে তাদের অন্যতম নাগরিক অধিকার অর্থাৎ নিজেদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার অধিকার ফিরে পেয়েছে। সুযোগ নয়, দেশি-বিদেশি অধিকাংশ সংগঠন ও মানুষের কাছে নির্বাচনটি হয়েছে নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট তিন-চতুর্থাংশের চেয়ে বেশি আসন পেয়ে জয়ী হয়েছে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এর মধ্যে প্রধান দুই জোট-নেত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারেক-কোকো’র মা বেগম খালেদা জিয়ার নামেও মামলা রয়েছে। মামলাগুলো উচ্চতর আদালতে বিচারাধীন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যাঁরা মামলা দায়ের করেছিলেন এই দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে, সেসব বাদীপক্ষ মামলা প্রত্যাহারের আবেদনও করেছেন ইতোমধ্যে। রাজনীতি করলে মামলা-হামলা থাকবেই, এতেই আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা অভ্যস্ত। কিন্তু প্রসঙ্গ অন্যত্র। [...]

prof-m-ahmed-photoঅনেক ত্যাগ, সংগ্রামের পর গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ বাংলাদেশের নাগরিকরা নির্বিঘ্নে নির্ভয়ে তাদের অন্যতম নাগরিক অধিকার অর্থাৎ নিজেদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার অধিকার ফিরে পেয়েছে। সুযোগ নয়, দেশি-বিদেশি অধিকাংশ সংগঠন ও মানুষের কাছে নির্বাচনটি হয়েছে নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট তিন-চতুর্থাংশের চেয়ে বেশি আসন পেয়ে জয়ী হয়েছে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এর মধ্যে প্রধান দুই জোট-নেত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারেক-কোকো’র মা বেগম খালেদা জিয়ার নামেও মামলা রয়েছে। মামলাগুলো উচ্চতর আদালতে বিচারাধীন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যাঁরা মামলা দায়ের করেছিলেন এই দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে, সেসব বাদীপক্ষ মামলা প্রত্যাহারের আবেদনও করেছেন ইতোমধ্যে। রাজনীতি করলে মামলা-হামলা থাকবেই, এতেই আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা অভ্যস্ত। কিন্তু প্রসঙ্গ অন্যত্র।

গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন গণ্যমান্য বুদ্ধিদীপ্ত সম্মানিত ব্যক্তির বেশ কয়েকটি ফোরাম কাজ করছে। আমরা অতি ক্ষুদ্র, সাধারণ অল্পশিক্ষিত নাগরিকরা তাঁদেরকে ‘সুশীল সমাজ’ বা ‘সিভিল সোসাইটি’ বলেই জানি। এই সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের মধ্যে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাবেক আমলা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, নারী নেত্রী, এনজিও কর্মকর্তা, পুলিশ, বিডিআর ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন — অর্থাৎ এককথায় এখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। দেশ ও জাতির বিভিন্ন সংকটে এই ‘সুশীল সমাজ’ নানা সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করেন, বিবৃতি ও উপদেশ দিয়ে থাকেন। দেশ-জাতি তাতে উপকৃত কতটুকু হয়েছে তা এদেশের সাধারণ মানুষই ভালো বলতে পারবেন।

দেশে সুশাসন কে না চায়? সবাই চায় দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অশিক্ষা-মুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। সেই সাথে অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ ও রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ — অল্প কিছু জনগোষ্ঠী ছাড়া। এই সুশাসনকে নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে ‘সুজন’ অর্থাৎ ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ নামে একটি খ্যাতনামা সামাজিক সংগঠন। সাংগঠনিকভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই এদের কমিটি রয়েছে। সচেতনতামূলক কাজের জন্য সংগঠনটি বেশ কিছু কাজ করছে। সমাজের বিশিষ্ট বিজ্ঞজনেরা রয়েছেন এই ‘সুজন’-এর সাথে। এর প্রধান নেতৃত্বে রয়েছেন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, পরিবেশবাদী সংগঠক, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠন টিআইবি’র (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) প্রধান শ্রদ্ধাভাজন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। এই বয়সেও তিনি সমাজের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে সোচ্চার কণ্ঠ হয়ে আমাদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। ভাবতেই ভালো লাগে বিষয়টি। সংসদ, রাজনীতি, দুর্নীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ, হেন কোনো বিষয় নেই যে বিষয়ে তাঁর পাণ্ডিত্য নেই।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ‘সুজন’ দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপী, যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে এদেশের সাধারণ নাগরিকদের সোচ্চার ও সজাগ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। নির্বাচনের পরেও ‘সুজন’-নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের কাছে বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন; যেমন: নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কার কার বিরুদ্ধে মামলা আছে, যুদ্ধাপরাধী কয়জন আছে ইত্যাদি। সম্ভবত নির্বাচনের ২/৩ দিন পরেই অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক ‘টক শো’তে বললেন, “যিনি আসামী তিনি কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন?”, “সর্বোচ্চ আদালত থেকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি নিয়ে শপথ নিন” ইত্যাদি। তিনি যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে এসব মন্তব্য করেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও এতে আইনের কোনো বাধা নেই, অধ্যাপক মোজাফফর এক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছেন। আমার শ্রবণেন্দ্রিয় যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করে থাকে তাহলে বোধহয় এ ধরনের তির্যক মন্তব্যই শুনেছিলাম আমি। সম্ভবত আমার মতো আরো অনেক দর্শক-শ্রোতাই এর সাক্ষী।

অপরদিকে ‘সুজন’ গত ১১ জানুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে ‘গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিল। এ ব্যাপারে সেদিন বেশ সুন্দর ও মূল্যবান বক্তব্য দিয়েছেন সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত সজ্জন বিজ্ঞ নাগরিকবৃন্দ। সেই বৈঠকেই ‘সুজন’-এর সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বললেন, “একটি দল তিন-চতুর্থাংশ মেজরিটি পেলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। তাই গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য এবং মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে নতুন ক্ষেত্র হিসেবে ‘জনতার সংসদ’ গড়ে তুলতে হবে।” (ভোরের কাগজ, ১২ জানুয়ারি ২০০৯)। গত ১২ জানুয়ারিতে বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকাতেই বা মিডিয়াতে প্রফেসর মোজাফফর আহমদের বক্তব্যটি প্রচারিত হয়েছে।

বেসরকারি চ্যানেলটিতে প্রথম যেদিন আমাদের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের বক্তব্য শুনছিলাম তখন ঠিক বুঝিনি যে আমি কী শুনেছি। আর গত ১২ জানুয়ারি পত্রিকাতে তাঁর বক্তব্য পড়েও বিষয়টি বোঝার ক্ষমতা হয়নি আমার মত এক নগণ্য সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি পারবেন না বা তাতে সত্যিকার অর্থে আইনগত বাধা আছে কিনা — তার জবাব সেদিনই খ্যাতনামা আইনজীবী আনিসুল হক ঐ বেসরকারি টেলিভিশনকে জানিয়েছেন। পরে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বিচারপতি গোলাম রব্বানী অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে আমাদের পবিত্র সংবিধানের বাখ্যা দিয়ে একটি সুলিখিত অভিমত দিয়েছেন। তবে তিনি অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। কোনো সংগঠনের প্রধানের নামোল্লেখ করেননি তাতে। এমনকী সেদিন টিভি টক শো-তে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শক-শ্রোতারা তাঁদের কঠিন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন ‘সুজন’-সভাপতির মন্তব্যের ব্যাপারে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে একজন নগণ্য নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করি। অন্য অনেকের মতো কথায় ও কাজে ‘কৌশলী’ হতে পারিনি। যা প্রকাশ করতে চাই তা সরাসরিই বলার ও লেখার চেষ্টা করি আমার নগণ্য সামর্থ্যে। তাতে অনেক বিপদও আছে। থাকি তো চট্টগ্রামে। যার নামের সাথেই ‘গ্রাম’ আছে। অর্থাৎ কিনা গ্রাম্য। গ্রামের সাধারণ মানুষ যেভাবে সরাসরি কথা বলে থাকেন কথিত ‘শহুরে’দের মতো অত না-ভেবেচিন্তে ঠিক তেমনি। এজন্য যদি ‘বেয়াদপি’ বা অসভ্য আচরণ হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমাপ্রার্থী। সম্ভবত ৪ দলীয় জোটনেত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নবম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হচ্ছেন (লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে তখন হয়তো তিনি তা-ই হয়ে যাবেন)। অর্থাৎ পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা তো বটেই, সংসদীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী আরো অনেক মর্যাদার অধিকারী হবেন তিনি। গত ২ বার তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শ্রদ্ধেয় ‘সুজন’-সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের যুক্তিগত ও নৈতিক কারণে যদি মামলা থাকার জন্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ‘যোগ্য’ না হন, তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কি সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হওয়ার ‘নৈতিক’ (অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের ভাষায়) অধিকার রাখেন?

যতটুকু শুনেছি বন্দুকের নলের মুখে সামরিক উর্দি-পরা জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের আমলে ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন)-এর প্রধান কর্তাব্যক্তি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সম্ভবত তিনি অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন। রাতের অন্ধকারে অস্ত্রের জোরে সামরিক পোশাক গায়ে দিয়ে যিনি ক্ষমতা দখল করেন অবৈধভাবে, সেই জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার অংশীদার হওয়া অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সেদিন কি ‘নৈতিক’ কাজটি সম্পন্ন করার জন্যই সামরিক সরকারের উপদেষ্টার পদটি অলংকৃত করেছিলেন? সত্যিই জানতে বড় ইচ্ছে হয়। এদেশের জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি যে, ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে যুগান্তকারী রায় দেয়া হয়েছিল। রায়ে ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক শাসনকালে জারিকৃত সকল সামরিক ফরমান অবৈধ ও সংবিধান-পরিপন্থী বলে ঘোষণা করা হয়। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে যে-সরকার ব্যবস্থাকে ও সরকারি শাসককে অবৈধ ও সংবিধান-পরিপন্থী হিসেবে রায় দেয়া হয়েছে সেই সরকারের প্রধান ব্যক্তি লে. জেনারেল জিয়াউর রহমানের সরকারের উপদেষ্টার পদ ‘অলংকৃত’ করা বর্তমান বাংলাদেশের ‘সুশীল সমাজ’-এর অন্যতম প্রতিনিধি ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ তথা ‘সুজন’-এর সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ কোন্ অবস্থানে রয়েছেন তা আমার মতো নগণ্য ব্যক্তির মস্তিষ্কে না ঢুকলেও সাধারণ জনগণ বুঝবেন নিশ্চয়ই।

শ্রদ্ধেয় প্রবীণ অভিজ্ঞ প্রফেসর অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের বক্তব্য ও অবস্থান অনুধাবন ও নির্ণয় করতে গিয়ে ‘নৈতিকতা’র মানদণ্ড কী তা নতুন করে জানতে খুব ইচ্ছে হয়। বাংলাদেশের কোটি কোটি ভোটার সহ সাধারণ জনগণ জানেন যে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া নির্বাচনী ব্যয়সীমা অধিকাংশ প্রার্থীই মানেননি। অনেক যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হননি, আবার যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তাঁরা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। নিশ্চয়ই জনগণ সেসবের মূল্যায়ন করবেন।

“একটি দল তিন-চতুর্থাংশ মেজরিটি পেলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়” — গত ১১ জানুয়ারি তারিখে অধ্যাপক আহমদের এই বক্তব্যের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার বুদ্ধি-ক্ষমতা আমার নেই। শুধু বলতে চাই, ভোট দিয়েছে জনগণ তথা দেশের সচেতন ভোটার। এসব নাগরিক ও ভোটারদের সচেতন করার জন্যই তো অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বে ‘সুজন’ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করেছেন, প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। নিশ্চয়ই সেই প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়েই ভোটাররা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একটি দলকে তিন-চতুর্থাংশ আসনে নির্বাচিত করেছেন। তাহলে ভোটাররা কি ভুল করলেন তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে গত ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে? তাহলে তো বলতে হয়, ‘সুজন’ যে-প্রচারণা চালিয়েছিল নির্বাচনের আগে ভোটারদের উদ্দেশ্যে তা ভোটাররা ঠিকমতো বোঝেননি। আর না বোঝার কারণেই একটি দলকে তিন-চতুর্থাংশ আসনে জিতিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। আহ্, অবুঝ ভোটাররা কেন যে এমন একটি কাজ করলো! আমাদের সমাজের ‘চিন্তাপতি’দের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। খুবই দুঃখজনক! সত্যিই তো যত দোষ ঐসব নাদান ভোটারদের। তাঁরা যে এমন করে দাবার দানটি উল্টে দেবেন তা হয়তো স্বপ্নেও কল্পনা করেননি জিয়াউর রহমানের সাবেক উপদেষ্টা মহোদয়।

বিগত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোটও দুই তৃতীয়াংশ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। আর সে-নির্বাচনের আগে ও পরে সেই জোট ও তাদের সরকার সারা দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু আর নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগের উপর কি অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল তা তো এদেশবাসী ভুলে যায়নি। দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি পেলে গণতন্ত্রের জন্য ঝুঁকি হয় না; ঝুঁকি হয় সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে কোনো দল তিন-চতুর্থাংশ মেজরিটি পেলে? হ্যাঁ, অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এদেশের জনগণ, বর্তমান সরকার, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদেরকে যাতে সরকার জনগণের স্বার্থেই পরিচালিত হয়। কিন্তু সন্দেহ জাগে যখন ‘গণতন্ত্রের জন্য ঝুঁকি’ কথাটা শুনি অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা টিআইবি, সুজন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা বিজ্ঞ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের কাছ থেকে।

দুর্মুখেরা বলেন, এই প্রবীণ বিজ্ঞ অধ্যাপক হয়তো মনে খুব কষ্ট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ তিন-চতুর্থাংশ আসন পাওয়াতে। আরো বেশি কষ্ট হয়তো তাঁর এই যে, তিনি যেই অবৈধ সামরিক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন (জিয়াউর রহমানের ) তাঁর সুযোগ্য পুত্র তারেক-কোকো’র গর্বিত মা বেগম জিয়াউর রহমান অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট গো-হারা হেরেছে । আমরা দুঃখী বাংলাদেশের ব্রাত্যজনেরা কায়মনোবাক্যে কামনা করি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে ঝুঁকিপূর্ণ না হয়। পাশাপাশি অত্যন্ত বিনীতভাবে এও আশা করব যে, ‘সুজন’-এর শ্রদ্ধাভাজন সভাপতির কাছ থেকে ‘দুর্জন’ সুলভ বক্তব্য আর শুনতে হবে না আমাদেরকে। আমার দুর্বিনীত লেখায় হয়তো বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অনেকেই অখুশি হবেন। করজোড়ে মিনতি, অভিনন্দন ভোটারদের — যাঁরা গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্যে তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়ী করেছেন একটি দলকে।

১৪ জানুয়ারি ২০০৯, চট্টগ্রাম

সাবস্ক্রাইব করুন
অবগত করুন
guest

7 মন্তব্যসমূহ
সবচেয়ে পুরোনো
সাম্প্রতিকতম সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
7
0
আপনার ভাবনাগুলোও শেয়ার করুনx
  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.