বাংলাদেশের নির্বাচন ২০০৮ এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার

আগামী ২৯শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বাংলাদেশ একটি বহুল প্রতিক্ষিত সংসদ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গত নভেম্বরে সমাপ্ত বহুল প্রচারিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল যে প্রার্থীরা সিটিজেন মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা এমনকি নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে অনুদান সংগ্রহ করেছেন। তবে বাংলদেশের নির্বাচনের প্রেক্ষিত ভিন্ন কারন সাড়ে চোদ্দ কোটি লোকের শতকরা ১ ভাগেরও কম ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ পান। যদিও নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে অনেকেই ব্লগ এবং ফেসবুক ব্যবহার করে পরিস্থিতির পরিবর্তনে সচেষ্ট রয়েছেন। সামহোয়্যার ইন, সচলায়তন, আমার ব্লগ, মুক্তাঙ্গন ইত্যাদি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্মে নির্বাচন সংক্রান্ত পোস্টে ভরে গেছে যেখানে যুক্তিপূর্ণ বিতর্কের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্লগাররা একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায়ও লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এসব বিতর্ক আর মতামত কি করে দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে যেখানে নীতিনির্ধারকরা, যেমন রাজনৈতিক নেতারা এবং সরকারী আমলারা ডিজিটাল মিডিয়া এবং এইসব কথোপকথন থেকে আপাত:দৃষ্টিতে দূরে থাকেন। বাংলাদেশে এখনও ঐতিহ্যবাহী মূলধারার প্রচার মাধ্যমেরই প্রভাব বেশী তবে সাম্প্রতিক কালে তাদের কারও কারও একপেশে রিপোর্টিং এর কারনে তাদের প্রতি জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছে [...]

আগামী ২৯শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বাংলাদেশ একটি বহুল প্রতিক্ষিত সংসদ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গত নভেম্বরে সমাপ্ত বহুল প্রচারিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল যে প্রার্থীরা সিটিজেন মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা এমনকি নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে অনুদান সংগ্রহ করেছেন। তবে বাংলদেশের নির্বাচনের প্রেক্ষিত ভিন্ন কারন সাড়ে চোদ্দ কোটি লোকের শতকরা ১ ভাগেরও কম ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ পান। যদিও নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে অনেকেই ব্লগ এবং ফেসবুক ব্যবহার করে পরিস্থিতির পরিবর্তনে সচেষ্ট রয়েছেন। সামহোয়্যার ইন, সচলায়তন, আমার ব্লগ, মুক্তাঙ্গন ইত্যাদি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্মে নির্বাচন সংক্রান্ত পোস্টে ভরে গেছে যেখানে যুক্তিপূর্ণ বিতর্কের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্লগাররা একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায়ও লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এসব বিতর্ক আর মতামত কি করে দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে যেখানে নীতিনির্ধারকরা, যেমন রাজনৈতিক নেতারা এবং সরকারী আমলারা ডিজিটাল মিডিয়া এবং এইসব কথোপকথন থেকে আপাত:দৃষ্টিতে দূরে থাকেন। বাংলাদেশে এখনও ঐতিহ্যবাহী মূলধারার প্রচার মাধ্যমেরই প্রভাব বেশী তবে সাম্প্রতিক কালে তাদের কারও কারও একপেশে রিপোর্টিং এর কারনে তাদের প্রতি জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ওয়েবসাইট ইন্টারঅ্যাক্টিভ নয় ফলে জনগণের মতামতকে তারা আমল দিচ্ছেন কিনা তা বোঝার উপায় নেই। এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী হাজারো প্রার্থীর মাত্র কয়েকজনকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রচারণায় নামতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতি বক্তৃতাসর্বস্ব এবং প্রচারণামূলক, খুবই কম সুযোগ আছে মূল নেতাদের সাথে কথোপকথনের এবং তাদের কাছে জবাবদিহীতা চাওয়ার। তৃণমূল রাজনৈতিক কর্মীরা এবং সাধারণ মানুষদের কিছুই বলার থাকেনা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। তবে জাগরী নামে বাংলাদেশের যুবাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ফেসবুক এবং ব্লগ ব্যবহার করছে যুবাদের জ্ঞাত এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে যাতে তারা রাজনৈতিক এবং নীতি নির্ধারনী প্রক্রিয়ায় আরও বেশী করে অবদান রাখতে পারে।

আমরা কি? ছবি: জাগরীর সৌজন্যে

জাগরী বর্তমানে একটি প্রচারণা চালাচ্ছে ‘আমাদের ভোট, আমাদের কথা নামে’। তাদের ফেসবুক পাতা থেকে এই ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন।


জাগরীর পরিকল্পনা ও সঞ্চালনা সংক্রান্ত মিটিং। ছবি জাগরীর সৌজন্যে

সাম্প্রতিক কালে জাগরীর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে একটি ডকুমেন্টারী তৈরি করে বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্যে ইউটিউবে তা প্রকাশ করা।

৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ডকুমেন্টারীর লক্ষ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশীরা যাতে প্রার্থী সম্পর্কে জেনেশুনে ভোট দেন। এতে স্বাক্ষাৎকার দেয়া যুবারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। তবে এই ডকুমেন্টারী যুবাদের সেই আশাকেও তুলে ধরেছে যে একটি পরিবর্তন আসবে অচিরেই।

এ বারে নির্বাচন এবং অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের উপর অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেটে। এখন প্রয়োজন বাংলাদেশীদের এইসব তথ্য সম্পর্কে জানা যাতে তারা সঠিক ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারেন।

বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যরত বেসরকারী সংস্থা সুজন একটি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাইট পরিচালনা করছে যাতে নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পর্কে বিপুল পরিমান তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই সাইটের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে রয়েছে নির্বাচন সম্পর্কে বিভিন্ন সাধারণ তথ্য, নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী প্রার্থীদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং আরও অনেক কিছু। সুজনের আরও একটি বিশেষ পরিবেশনা রয়েছে। তাদের কাছে বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রায় ৪০০০ সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আর্কাইভ রয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের দুর্নীতির রেকর্ড কিরকম তা নাম অনুযায়ী খোঁজা যাবে ওই আর্কাইভ থেকে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সাইটেও নির্বাচন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে, যেমন ভোটার লিস্ট, পিডিএফ ফরম্যাটে প্রার্থীদের প্রোফাইল এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রতি নির্দেশিকা

ই-বাংলাদেশ বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের লিন্ক প্রতিদিন প্রকাশ করছে এবং বিভিন্ন পর্যালোচনা ও তাজা খবর পরিবেশন করছে নাগরিক সাংবাদিকদের কাছ থেকে তাদের বিশেষ নির্বাচন কাভারেজে (ইংরেজী ভাষায়)। এই সাইটে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য যেমন প্রার্থীদের তালিকা এবং বিভিন্ন দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারের লিন্ক রয়েছে। এর আরেকটি সহপরিবেশনা, বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম আমার ব্লগও তাদের নির্বাচনী বিশেষ পরিবেশনা শুরু করেছে বাংলা ভাষায়। এই সাইটে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ ও নাগরিক সাংবাদিকদের মতামত প্রকাশ করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় ইংরেজী ভাষার গ্রপ ব্লগ আনহার্ড ভয়েসও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে যাচ্ছে।

সর্বাধিক বৃহৎ বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম সামহোয়ার ইন “বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ” ইংরেজী দৈনিক দ্যা নিউ এইজ এর সাথে যৌথভাবে নির্বাচনের উপর একটি গ্রুপ ব্লগ শুরু করেছে। নিউ এইজ সংবাদপত্রও সম্প্রতি একটি নির্বাচন পোর্টাল চালু করেছে যাতে এই গ্রুপ ব্লগ থেকে নির্বাচিত লেখা এবং বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও তাজা খবর প্রকাশ করছে। এটিই এ দেশে প্রথম এমন উদ্যোগ, যেখানে একটি মূলধারার প্রচার মাধ্যম তাদের হাউজের বাইরে কোন ব্লগের সাথে মিলে কিছু করছে। এই সাইটটিতে একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ ম্যাপ রয়েছে যেখানে পূর্ববর্তী নির্বাচনের ফলাফলকে দেখানো হয়েছে।

নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রচারনায় প্রযুক্তির কম ব্যবহারের এই ধারার বিপরীতে আছেন ব্লগার এবং সাংবাদিক মাসকাওয়াথ আহসান, যিনি রাজশাহী -৬ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হয়েছেন এবং ফেসবুক ব্যবহার করে তার নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন।

সবাই এটি এখন দেখার অপেক্ষায় যে বাংলাদেশীরা নির্বাচনের সময় ব্লগ, ভিডিও (যেমন ইউটিউব), ফটোগ্রাফ (যেমন ফ্লিকার), টুইটার ইত্যাদি বিভিন্ন নাগরিক মিডিয়া টুল কিভাবে ব্যবহার করে বিভাবে তাদের মতামত জানায়।

মূল: গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনে ইংরেজীতে প্রকাশিত ও বাংলা লিঙ্গুয়ায় অনুবাদ হিসেবে প্রকাশিত।

রেজওয়ান

আমি তোমাদেরই কোন একজন। সাহিত্যিক নই তবে সাহিত্য পড়তে ভালবাসি। টেকি নই তবে টেকনলজি পছন্দ করি। গাইতে পারিনা তবে সঙ্গীতে ভেসে থাকি। জীবনের এক সন্ধিক্ষনে অবস্থান করছি।

১৫ comments

  1. স্নিগ্ধা - ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮ (৭:১৭ অপরাহ্ণ)

    জাগরী আর সুজন সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো! সত্যিই আমাদের দেশে এতো সীমিত সংখ্যক মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে যে, এই দুটো অন্তর্জাল ভিত্তিক তথ্য আর্কাইভের উপকারিতাও কতজন যে লাভ করবেন, জানি না।

    তারপরও, ভালো উদ্যোগ, নিঃসন্দেহে!

  2. সৈকত আচার্য - ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ (২:০৪ পূর্বাহ্ণ)

    সুজন সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা থাকলে ও জাগরীর কথা শুনলাম, এই পোষ্ট দেখে। সুজনের কথা টেনে আনলাম এই কারনে যে, তাঁরা সুশাসন চান দেশে। সরাসরি কেউ ওখানে রাজনীতি করেন না। গোপনে করেন কিনা তা জানা যায় না। তবে গত দু’বছর যেভাবে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সাহসিকতার সাথে কথা বলেছেন, মতামত প্রকাশ করেছেন বা ভুমিকা রেখেছেন, তাতে করে তারা নিজেরা রাজনীতি না করলেও তাদের চিন্তাভাবনা ও কর্মকান্ড সামরিক সমর্থনপুষ্ট এই সরকারের রাজনীতিকে পুষ্টি যুগিয়েছিল। তাদের বক্তব্য এই সরকারকে আশাবাদী করে তুলেছিল। অন্যান্য অনেক অবদানের পাশাপাশি, একটি রাজনীতিবিহীন কল্পিত সমাজের প্রবক্তা হিসেবে তাদের অবদান ছিল স্মরণ করার মতো, যদিও আমরা এখনো জাতি হিসেবে তাদের এই উর্বর-বিজাতীয় ভাবধারা বুঝতে পারার বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হই নাই।

    জাগরী আমাদের দেশের রাজনীতি সচেতন তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে একটি নির্দলীয় প্লাটফরম হিসেবে কাজ করে যাবার ঘোষনা দিয়েছে। তারা রাজনীতি এবং দেশের নীতি নির্ধারনী বিষয়ে নিজেরা একটি প্লাটফরমে সক্রিয় থাকার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলিকে নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার ঘোষনা দিয়েছে। জাগরী বলছে যে, তারা এমন একটি বাংলাদেশ চায়, যেখানে তরুণরা একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। যেখানে তরুণরা দেশের ভবিষ্যত বিনির্মানে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। জাগরীর ঘোষনার প্রতি শুভকামনা থাকল, সেই সাথে তাদের এই উদ্যোগ এবং ভাবনা বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন মনে জেগেছে, যেমনঃ

    ১। রাজনৈতিক দল ভুক্ত তরুণ তরুণীরা কি এই সংগঠন করতে পারবে না?

    ২। বাংলাদেশে বর্তমানে কোন প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি আছে বলে কি জাগরী মনে করে?

    ৩। জাগরীর ঘোষনায় মনে হয়েছে, বাংলাদেশের তরুণদের নিজেদের কিছু বিশেষ ইস্যু আছে, যা কেউই address করছে না, সেই কমন ইস্যুগুলো কি কি?

    ৪। বাংলাদেশের তরুণরা কি শুধুমাত্র তাদের সমস্যা নিয়েই এই ক্যাম্পেইন গড়ে তুলবে?

    ৫। রাজনীতি সচেতন তরুণ এবং প্রগতিবাদী রাজনীতিতে জড়ানো তরুণ, এই দুই ক্যাটাগরীকে আপনারা কিভাবে পার্থক্য করেন?

    কেউ এই আলোচনায় অংশ নিলে, বিষয়গুলো নিয়ে ধারণা আরো পরিস্কার হতে পারে।

    • রেজওয়ান - ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ (১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ)

      ধন্যবাদ সৈকত আপনার মন্তব্যের জন্যে।

      জাগরীর একজন আমাকে জানিয়েছেন যে তারা নির্দলীয় তবে অবশ্যই একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। এছাড়া অনলাইনে তাদের সম্পর্কে যা তথ্য আছে সেটুকুই আপনার মত আমার জানা এর বেশী নয়। তবে নতুন কোন তথ্য থাকলে আমরা নিশ্চয়ই জানব। তাদের ফেসবুক পাতায় গিয়ে প্রশ্নগুলো করা যেতে পারে।

  3. স্নিগ্ধা - ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ (২:৫৮ অপরাহ্ণ)

    প্রথম মন্তব্যটা লিখতে লিখতেই ভাবছিলাম, তথ্য টথ্য আর্কাইভ করে রাখা ভালো উদ্যোগ নিঃসন্দেহে, কিন্তু সে তথ্য কতখানি নির্ভরযোগ্য সেটা নির্ধারণ করা হবে কিভাবে। সৈকত আচার্যের মন্তব্য পড়ে বুঝলাম, সুজন সুম্পর্কে কিছু না জেনেই আমি খুশী হচ্ছিলাম!

    তবে গত দু’বছর যেভাবে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সাহসিকতার সাথে কথা বলেছেন, মতামত প্রকাশ করেছেন বা ভুমিকা রেখেছেন, তাতে করে তারা নিজেরা রাজনীতি না করলেও তাদের চিন্তাভাবনা ও কর্মকান্ড সামরিক সমর্থনপুষ্ট এই সরকারের রাজনীতিকে পুষ্টি যুগিয়েছিল।

    যেহেতু নিজে পড়িনি, তাই সমালোচনায় যেতে পারছি না, কিন্তু সুজনের কর্মকান্ডের কথা শুনে – খুশীটা আপাতত ফিরিয়ে নিচ্ছি!

    আর জাগরী সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো নিয়ে আমার মতামত হচ্ছে –

    ১) নির্দলীয় হলে – এবং ব্যক্তিগতভাবে হোক সেটাই চাই- রাজনৈতিক দলের সদস্য তরুণ/তরুণীদের অংশগ্রহন না করাটাই ভালো।
    ৫) জাগরীর বক্তব্য কি জানি না, কিন্তু আমার কাছে রাজনীতি সচেতন তরুণী আর প্রগতিবাদী রাজনীতিতে জড়িত তরু্ণীদের মধ্যে পার্থক্য তেমন একটা নেই। যতটুকু আছে তা হলো একজন থিওরিটিশিয়ান আর একজন এক্টিভিস্টের মধ্যে যতটুকু তফাৎ, ততটুকুই। অর্থাৎ একদল হাতে কলমে কাজ শুরু করেছে আর একদল মননে তার ভিত্তি তৈরী করছে।

    এখনকার তরুণী/তরুণদের সমস্যা সময়ের কারণেই হয়তো আগের চাইতে কিছুটা অন্যরকম। কাজেই address হয়তো সত্যিই করা হচ্ছে না, যেমনটা তারা চাচ্ছে, তেমন করে।

    আচ্ছা, জাগরীর কোন প্রভাব/প্রতিক্রিয়া/ফলাফল কিছু কি দেখা যাচ্ছে, তরুণি/তরুণদের মধ্যে বা অন্য কোথাও?

    • রেজওয়ান - ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ (১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ)

      কিন্তু সুজনের কর্মকান্ডের কথা শুনে – খুশীটা আপাতত ফিরিয়ে নিচ্ছি!

      সুজনের কর্মকর্তারা কে কি বলল তা আপাতত আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। তারা একটি অতুলনীয় দুর্ণীতির তথ্য আর্কাইভ করেছে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনের জন্যে অনেক তথ্য উন্মুক্ত করেছে। এগুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তারা তথ্য সার্চেবল করে উপস্থাপন করছে। এটি ব্যবহার করা বা উপেক্ষা করা -সবই পাঠকের নিজস্ব ইচ্ছার উপর। সামরিক সমর্থিত সরকারের মত গলায় ধরে সংস্কারের কথা তো বলছে না।

      আমার মনে হয় না জাগরী খুব একটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে। তাদের ওয়েবসাইটটি ইনকম্প্লিট।

  4. রায়হান রশিদ - ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ (৪:৫৭ অপরাহ্ণ)

    পোস্টটির জন্য রেজওয়ান ভাইকে ধন্যবাদ।

    (১)
    একথা খুবই ঠিক যে বাংলাদেশে মূল ধারার রাজনৈতিক আলাপচারিতায় ইন্টারনেট বা তথ্য প্রযুক্তি তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি এখনো। এটি কিন্তু হবার কথাও না। কয়েকটি বিষয়:

    যে দেশে স্বাক্ষরতার হারই এতো কম সেখানে প্রিন্ট মিডিয়াই তো গণ মানুষের কাছে পৌঁছুতে পারছেনা। আবার ইন্টারনেট, তার যতই সম্ভাবনার দিক থাকুক না কেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তার সীমাবদ্ধতাগুলোও চিহ্নিত। যেখানে সারা দেশে (এমনকি শহর অঞ্চলগুলোতেও) বিদ্যুত সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন নয়, সেখানে খুব কম মানুষেরই কম্পিউটার নামের যন্ত্রটি ব্যবহারের একসেস আছে। এরা মূল জনসংখ্যার খুব নগন্য একটা অংশ। যাদের সে সুবিধে আছে, তাদেরও খুব সীমিত অংশের একসেস আছে মানসম্মত ইন্টারনেটে। যাঁদের এই দু’টো মাধ্যমে একসেস আছে, তারাও সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেনীরই (যথা: উচ্চ মধ্যবিত্ত, শহরকেন্দ্রিক) প্রতিনিধিত্ব করে শুধু। সুতরাং, তাদের আলোচনা কিংবা মতামত বাকী জনগোষ্ঠীর মতামতের বা চেতনার কতটুকু প্রতিফলিত করে, সে প্রশ্নটাও কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায়না।

    এখন একথা যদি ধরে নিই যে নীতি নির্ধারণ, নেতৃত্ব (সমাজের সকল সেক্টরেই) ইত্যাদির সাথে জড়িতরা মূল জনগোষ্ঠীর অগ্রসর অংশের প্রতিনিধিত্ব করে – তাহলে তাদের কাছে অন্তত এটুকু তো আশাই করা যায় যে তাঁরা অগ্রসর প্রচার মাধ্যমগুলো নিয়মিত ব্যবহার করবেন এবং তাতে ভূমিকা রাখবেন। সে অর্থে উপরে উল্লেখিত সীমাবদ্ধতাগুলোর আলোকে আমি কয়েকটি জিনিস লক্ষ্য করেছি।

    এক, আমার পরিচিত যতজন সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত তাদের বেশীর ভাগেরই কম্পিউটার প্রযুক্তি বা ইন্টারনেটের সাথে যোগাযোগ তেমন নেই। দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তবতা যে তাদের বেশীর ভাগেরই নিজের কোন PC নেই।

    দুই, আবার যাঁদের কম্পিউটার বা ইন্টারনেটে একসেস আছে, তাদেরও সিংহভাগই কম্পিউটারে বাংলা লিখতে পারেন না। এমনকি এদের বেশীরভাগেরই কম্পিউটারে বাংলা পড়বার মত প্রয়োজনীয় সেটাপগুলোও করা থাকেনা, ফলে তাঁরা বাংলা পড়তেও পারেন না। উল্লেখ্য, ইন্টারনেটের ফোরামগুলোতে ইংরেজীতে অংশগ্রহণ করার মত ভাষাগত দক্ষতা যাঁদের আছে, তারা সমাজের অত্যন্ত নগন্য একটি শ্রেনীকেই (যথা: এলিট, উচ্চ শিক্ষিত, বিদেশে শিক্ষিত) প্রতিনিধিত্ব করে, সুতরাং তাদের কথা আলোচনায় না আনলেও চলে।

    তিন, সাংবাদিকদের কথা উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছি, তাদের পেশাগত অবস্থানের কারণেই। এটি আবার মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যাঁরা জড়িত, তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমার পরিচিত বেশীর ভাগ রাজনৈতিক কর্মীরই কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। বেশীর ভাগেরই এমনকি একটি নিজস্ব ইমেইল এড্রেসও নেই। আবার যাঁদের আছে, তাদেরও বেশীর ভাগেরই সেই ইমেইল নিয়মিত চেক করার মত সুযোগ সুবিধে বা মানসিকতা নেই।

    মূল কথা, WEB‌-II (সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ব্লগ, ফোরাম ইত্যাদি) তে নিয়মিত হতে হলে যতটুকু অগ্রসরমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হওয়া প্রয়োজন, তা এখনো বেশীর ভাগই হয়ে ওঠেননি। এটাই বাস্তবতা। বলাই বাহুল্য, নেতৃত্বদানকারী মানুষগুলোর জীবনধারায় এসব মাধ্যমগুলো অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠতে আরো কিছুটা সময় লাগবে বৈকী।

    (২)
    মূল ধারার আলোচনায়/তর্ক বিতর্কে ইন্টারনেটের আদৌ (উল্লেখযোগ্য) ভূমিকা থাকা “উচিত” কিনা, অন্তত এ মূহুর্তেই, সে আরেক প্রশ্ন। কিংবা থাকলেও তার পরিমাণ কি হবে, কিংবা সেটা কতখানি মঙ্গলজনক হবে সে অন্য বিতর্ক। কারণ, প্রাইভেট টিভি চ্যানেল ও বিভিন্ন ইন্টারনেট মিডিয়াতে (ব্লগ গ্রুপগুলো, ফেসবুক ইত্যাদি) আমরা যে বাংলাদেশকে পাই, তাকে সত্যিকার বাংলাদেশের প্রতিফলন হিসেবে দেখাটা হয়তো ভূল হবে। উপরে উল্লেখিত সীমাবদ্ধতাগুলোর কারণে, সে সব মতামতের ওপর খুব বেশী জোর দিলে বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কিছুটা তো রয়েই যায়, জনগণকে নিয়ে আলোচনা জনবিচ্ছিন্নতাদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনার কথা যদি বাদও দিই।

  5. রণদীপম বসু - ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ (৬:২৬ অপরাহ্ণ)

    রায়হান রশিদের মন্তব্যের সূত্র ধরেই বলি, হতে পারে আমরা অসংখ্য না-ভিত্তিক একটা সামাজিক আবহে বাস করছি। এখনও অনলাইন ভিত্তিক ফোরামগুলো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে হয়তো পারছে না। কিন্তু এটা তো ঠিক যে আমাদের বর্তমান এবং উঠতি প্রজন্ম যারা এই অগ্রগামী অনলাইন সুবিধার ছোঁয়ায় পৌঁছতে পারছেন, তারা কিন্তু চমৎকার একটা পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার মধ্যে নিজেদেরকে চিনে নেয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন।
    ইন্টারনেট প্রযুক্তি এখনো না এলে কী হতো ? প্রচলিত তথ্য ব্যবস্থায় আমাদের তথ্যজ্ঞান সেই আগের মতোই যথানিয়মে যা পাবার তা-ই পেতো। যেভাবে যা চলছে সেভাবেই চলতো। কিন্তু প্রযুক্তির স্পর্শে এসে আমাদের একটা প্রজন্ম (যত নগন্যই হোক) অনেক বেশি জানার বুঝার যাচাইয়ের সুযোগ পাচ্ছে তো বটেই, নিজেদের একটা বিরাট পরিমন্ডলও তৈরি হয়ে যাচ্ছে। নিজের কথাটা বলে ফেলার, অন্যের কথাটাকে বিশ্লেষণ করে মতামত দেয়ার যোগ্যতা অর্জন এবং সাহসী প্রকাশের অধিকারবোধে উজ্জীবিত হয়ে উঠার এরকম সুযোগ এখন যারা পাচ্ছে তারা যে আমাদের আগামী নেতৃত্ব-প্রজন্ম, এটা বোধ করি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
    এখনই হয়তো দৃশ্যমান কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হবে না। কিন্তু ‘তোমারে বধিবে যে, গোকূলে বাড়িছে সে’ এর মতো একটা প্রক্রিয়ার শুরু যে এটা নয় তাই বা বলি কী করে ? ব্যক্তিগত আমি এই তথ্যপ্রযুক্তিকে বর্তমানের নয়, আগামীর আয়না হিসেবে দেখছি। একটা পরিবর্তন যে অবশ্যম্ভাবী তা বিশ্বাস করতে এবং আশা করতে পেরে আমি আশ্বস্ত হচ্ছি। আমার এই আশা করাটা কি একেবারেই অযৌক্তিক হবে ?

    • রায়হান রশিদ - ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ (৬:৫৯ অপরাহ্ণ)

      একেবারেই অযৌক্তিক হবেনা রণদীপমদা। ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আপনার যে ভাবনা তার সাথে আমাদের মনে হয় কারোই দ্বিমত নেই। ইন্টারনেটের সম্ভাবনাকে ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নেই। আমার দুঃশ্চিন্তাটা অন্য জায়গায়। একটি শ্রেনীর সুযোগ সুবিধাতে বেশী এগিয়ে যাওয়ার কিছু নেতিবাচক দিক আছে। তাতে মূল ধারার অন্য শ্রেনীগুলোর সাথে এক ধরণের অলঙ্ঘনীয় দুরত্বের সৃষ্টি হয়। আর তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা অংশটি যে সব সময় সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে মানুষের সামনে হাজির হবে, তাও তো নয়। তাদের দৃষ্টিভঙ্গীগুলোকে প্রশ্ন করার, বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গীগুলোকে সামনে নিয়ে আসার জন্য আরো ব্যাপক অংশগ্রহণ প্রয়োজন সব শ্রেনীর পক্ষ থেকে। সেটি না ঘটা পর্যন্ত বিপদ একপেশে মতামত প্রাধান্যের এবং সে সব মতামতের প্রতিষ্ঠা লাভের। তাই যে কোন মতামত বিষয়ে সতর্কতার প্রয়োজনের কথাটাই বলতে চেয়েছি আমি।
      সমাধান অবশ্যই ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তিকে আরও সীমাবদ্ধ করে নয়, বরং একে সবার কাছে সমানভাবে ছড়িয়ে দেয়ায়।

      • রণদীপম বসু - ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ (৭:১১ অপরাহ্ণ)

        সমাধান অবশ্যই ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তিকে আরও সীমাবদ্ধ করে নয়, বরং একে সবার কাছে সমানভাবে ছড়িয়ে দেয়ায়।

        সহমত…

  6. অবিশ্রুত - ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ (১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)

    খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট, অন্তত এই সময়ের বিবেচনায়। আর বিভিন্নজন এ বিষয়ে যেসব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন, তাতেও অনেক গভীর ইঙ্গিত রয়েছে। বিষয়টি শিরোনামের দিক থেকে নির্বাচনে ইন্টারনেটের ব্যবহার বিষয়ক হলেও আসলে এতে অগ্রসর প্রযুক্তিনির্ভর একদল অ্যাকটিভিস্ট-এর কথা তুলে ধরা হয়েছে, যারা রাজনীতিতে অরাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গুণগত পরিবর্তন আনার জন্যে কাজ করছেন!
    রেজওয়ানের এই বাক্যগুলি পড়ুন :

    বাংলাদেশের রাজনীতি বক্তৃতাসর্বস্ব এবং প্রচারণামূলক, খুবই কম সুযোগ আছে মূল নেতাদের সাথে কথোপকথনের এবং তাদের কাছে জবাবদিহীতা চাওয়ার। তৃণমূল রাজনৈতিক কর্মীরা এবং সাধারণ মানুষদের কিছুই বলার থাকেনা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। তবে জাগরী নামে বাংলাদেশের যুবাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ফেসবুক এবং ব্লগ ব্যবহার করছে যুবাদের জ্ঞাত এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে যাতে তারা রাজনৈতিক এবং নীতি নির্ধারনী প্রক্রিয়ায় আরও বেশী করে অবদান রাখতে পারে।

    বাক্যবিন্যাস থেকে সন্দেহ করার কোনও অবকাশ নেই, রেজওয়ান নিজেও এদের (জাগরী-র) ওপর আস্থাবান।
    তরুণরা আমাদের জন্যে, আমাদের দেশের জন্যে সত্যিই একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে, এবং দেশবাসী তা প্রত্যাশাও করে। কিন্তু একটি অরাজনৈতিক সংগঠন রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে আসলেই কোনও ভূমিকা রাখতে পারে কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই প্রতিরোধ করতে হয়, এইখানে দূর থেকে সমালোচনা করে নানা সুললিত পরামর্শ দিয়ে কোনও কাজ হয় না। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে অনেক বড় সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে, কিন্তু তারপর তা একসময় স্তিমিতও হয়ে পড়েছে, কেননা এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। রাজনৈতিক আন্দোলনের মূল স্রোতটি শক্তিশালী না হয়ে থাকলে, না হয়ে উঠতে থাকলে সামাজিক আন্দোলন তা এগিয়ে নেয়া দূরে থাক, বরং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়ে থাকে।
    জাগরী-র ইউ টিউবের ডকুমেন্টারীতে তরুণ-তরুণীদের বক্তব্যও এই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু আরও একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও রয়েছে এদের কার্যক্রমে :
    এরা নিজেদের নির্দলীয় বললেও মূলত দুই দলের বিরুদ্ধে (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) এদের অবস্থান প্রায় সুস্পষ্ট। বাদবাকী সব রাজনৈতিক দল এদের কাছে হয় উপেক্ষিত ও না-হয় উপহাসের পাত্র। তাদের এই অবস্থান তুলে ধরার জন্যে একটি গান উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই প্রচার করা হচ্ছে এবং কয়েকটি মিডিয়ায় গুরুত্বও পাচ্ছে। তারা দুই বা ততোধিক দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, এতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়; আপত্তি ওখানেই, ভড়ং দেখিয়ে তারা নিজেদের নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক বলছেন কেন? রাজনীতি না করে রাজনীতি নিয়ে বহু কথা বলা সম্ভব, কিন্তু কাজটি কত কঠিন, তা বোঝার জন্যে এক জনাব মুহম্মদ ইউনূসের দিকে চোখ তুলে চাওয়াই যথেষ্ট।
    এবারের নির্বাচন তরুণদের জন্যে একটি দারুণ সুযোগ নিয়ে এসেছিল, কিন্তু মনে হচ্ছে, তা তারা না- না- করতে করতেই হারাতে বসেছেন। তারা রাজনীতিতে পরিবর্তন চান, কিন্তু কোন ধরণের পরিবর্তন চান, তা সত্যিই অস্পষ্ট। যা মনে হচ্ছে, তারা আসলে চান, এই দুই দলের বাইরে এমন একটি দল, যা এ দু দলের কাগজেকলমে লেখা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আদর্শকেই ব্যবহারিকভাবে অর্থাৎ দুর্নীতিমুক্তভাবে, হরতালমুক্তভাবে, মিছিলমুক্তভাবে, সংসদকে কার্যকর রেখে অর্থাৎ প্রতিটি বৈঠক নিয়মিত করার মাধ্যমে ব্যবহার করবে। সেক্ষেত্রে, বলতে বাধ্য হচ্ছি, এদের কাঙ্খিত রাজনৈতিক দলটি এবং কাঙ্খিত রাজনীতিকে পরিবর্তনের রাজনীতি বলা হবে জনগণকে আবারও মিথ্যা আশা দেয়া।
    এবার তরুণ ভোটার অনেক বেশি। তাই আমাদের আকাঙ্ক্ষাও অনেক বেশি। কিন্তু তাদের আমরা ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছি ‘না’ ভোট দেয়ার কাজে। এটি খুবই আশার কথা, দুষ্ট রাজনীতিকদের প্রতি নিরুৎসাহিত হতে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে; কিন্তু এটি তখনই ইতিবাচক হয়ে উঠবে যখন পাশাপাশি একটি সঠিক ও সুস্থ রাজনৈতিক ধারার নির্দেশনা বা রুপরেখাও প্রচার করা যায়। শুধু সৎ প্রার্থী বিজয়ও একটি রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালনার মূল নিয়ামক নয়। তিনশ জন সৎ সাংসদ হলেই দেশের উন্নতি ঘটবে, এরকম চিন্তা হাস্যকর। দেশশাসনকারী রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক মোর্চা রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা কোন রাজনৈতিক উদ্যম ও সিদ্ধান্তের আলোকে করবেন, সেটি আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আধুনিক রাষ্ট্রতত্ত্ব আধুনিক হয়ে উঠেছে নৈতিকতাকে রাজনীতির অধীনে এনে, অতএব রাজনীতি নিজেই কতটুকু ন্যায়সঙ্গত সেটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। আর হরতাল বন্ধ করার প্রচারণাও কোনও ইতিবাচক রাজনৈতিক চিন্তাজাত প্রচার নয়। গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে কখনও গণতন্ত্রের দেখা মেলে না।
    ব্রিটেনের সাম্প্রতিক একটি নির্বাচনের চালচিত্র ছিল এরকম, পাঁচজন তরুণ ভোটারের চারজনই ভোট দিতে যাননি, যা নিয়ে নীতিনির্ধারকরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমাদের তরুণরা যদি রাজনীতি ও রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার কাজ থেকে দূরে থেকে অরাজনৈতিক উপায়ে রাজনৈতিক বক্তব্য শোনাতে থাকেন, সেটিও হবে আত্মঘাতী ব্যাপার।
    এবং এটি আরও দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, যারা রাজনীতিতে সত্যিকারের পরিবর্তন চান, তাদের বেশির ভাগই এখনও ইন্টারনেটের সুবিধার সঙ্গে তেমন পরিচিত নন। ফলে এই উন্নত প্রযুক্তির প্রায় পুরো সুবিধাটাই ভিন্নমুখী খাতে প্রবাহিত হচ্ছে।

    • রেজওয়ান - ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ (১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ)

      “এবারের নির্বাচন তরুণদের জন্যে একটি দারুণ সুযোগ নিয়ে এসেছিল, কিন্তু মনে হচ্ছে, তা তারা না- না- করতে করতেই হারাতে বসেছেন। তারা রাজনীতিতে পরিবর্তন চান, কিন্তু কোন ধরণের পরিবর্তন চান, তা সত্যিই অস্পষ্ট।”

      – আপনি ঠিক ধরেছেন। আমারও তাই মত।

      গণতন্ত্রের শুরুটা হচ্ছে কথোপকথন। পারস্পরিক মীথস্ক্রিয়া। আমার আপনার দুটি মতামত থাকবে। অন্য মতকে সম্মান করেই আমরা বিতর্ক করে উন্নত মতটি নিয়ে এগুবো, ক্রমেই এই মতটি সবার দ্বারা আলোচিত হবে এবং নীতিতে পরিণত হবে। পরে ভোটের মাধ্যমে তা প্রতিষ।ঠিত হবে। এটিউ গণতন্ত্র। কিন্তু আমাদের দেশে এই ধারাটি অনুপস্থিত।

      এই কথোপকথনের সুবিধার জন্যেই নিউ মিডিয়া টুলগুলো দরকারী। এই যে আপনার সাথে আমার কথা হচ্ছে.. ব্লগ ছাড়া এটি কোথায় সম্ভব হতো?

      জাগরী এটি কথোপকথন শুরু করেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে সংগঠিত হবার চেষ্টা করছে। দেখা যাক তারা কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে কিনা বা অন্যকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে উৎসাহী করে কি না।

  7. শামীম ইফতেখার - ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ (৫:০০ অপরাহ্ণ)

    এক

    জাগরীর ডকুমেন্টারিটা দেখলাম। ভাল লাগেনি। কেমন খাপ ছাড়া এবং অপরিণত চিন্তাভাবনায় ভরা। খুব সরলীকৃত বিচ্ছিন্ন কিছু মতামতকে তুলে ধরা হয়েছে, যেমন:

    “ফর দ্য ফার্স্ট টাইম আমি এবার ভোটার হয়েছি, কিন্তু আমি ভোট দিতে যাব না” (এক তরুণ)

    “ভোট যে দিব, আমি যাকে দেখছি তাকেই খারাপ দেখছি, আমি কাকে ভোট দিব?” (এক তরুণ)

    “দেশের যে কি অবস্থা! কেউই কিন্তু ইয়ের মত না! কারোই ওরকম এবিলিটি নাই টু কনট্রোল!” (এক তরুণীর বক্তব্য)

    “জনগণ এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে তাদের কাছে জিন্মি। আমরা সাধারণ মানুষরা রাজনীতি করতে চাইনা” (এক তরুণ)

    যে জিনিসটি এখানে প্রথমেই চোখে পড়ে তা হল পরিপ্রেক্ষিতের অভাব। যেভাবে বেছে বেছে কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে তাতে মনে হয় প্রামান্য চিত্রটির নির্মাতারা যেন বাংলাদেশে বাস করেন না, কোন এক ইউটোপিয়ায় থাকেন। যেন বাংলাদেশের রাজনীতি আর ইতিহাসের বিশেষ কোন পরিপ্রেক্ষিত কাজ করেনা এসবেরই পেছনে! কোন দিক নির্দেশনাও অনুপস্থিত।

    শেষ করা হয়েছে জন লেননের “ইম্যাজিন” গানটি দিয়ে (বাংলায় কিছু পাওয়া যায়নি?)! কতটা বুঝে আর কতটা না বুঝে নির্মাতারা গানটি জুড়ে দিয়েছে, বলা মুশকিল। কারণ, গানটিতে তো এমন কয়েকটি লাইনও আছে, সে বিষয়ে প্রচারকদের মন্তব্য জানতে পারলে মন্দ হতো না:

    Imagine there’s no countries
    It isn’t hard to do
    Nothing to kill or die for
    And no religion too
    Imagine all the people
    Living life in peace

    Imagine no possessions
    I wonder if you can
    No need for greed or hunger
    A brotherhood of man
    Imagine all the people
    Sharing all the world

    দুই

    অংশগ্রহণকারীদের ভাষার ব্যবহার, পোশাক পরিচ্ছদ দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়না তারা সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেনীর বলয়ের থেকে খুব বেশী দূরে থাকেন। তারা প্রত্যেকেই যাকে বলে “স্মার্ট, ট্রেন্ডি, সফিসটিকেটেড” তরুণ তরুণী! এক ধরণের বিভ্রান্তিকর স্টান্টবাজি মনে হয়েছে পুরো ব্যাপারটাকেই। ফখরুদ্দিন মঈনরাও রাজনীতিকে বঙ্গোপসাগরে জলাঞ্জলী দিতে চেয়েছিল। অরাজনৈতিকভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পুরো বিষয়টিই যে আসলে কি ও কেন আজো তা বুঝে উঠতে পারিনি। সে আমারি ব্যর্থতা হয়তো!

    জাগরী “না” ভোটের প্রচারক কিনা তা জানিনা। তবে এটা জানি, “না” ভোটের পুরো বিষয়টিই বেরিয়েছিল “সুজন” নামের সংগঠনটির মাথা থেকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের “মাইনাস টু” ইত্যদির আমলে সুজনের এই “না” প্রস্তাবকে হালে পানি পেতে দেখেছি। চিহ্নিত সুশীলদের অনেকেই সুজনদের সাথে গলা মিলিয়েছিল। এমনিতেই পানি যথেষ্ট ঘোলা। সেই ঘোলা পানিতে এবার তরুণ সমাজকেও আরো বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয়ার পালা।

    “না” ভোটের মত প্রক্রিয়াগত এমন একটি মৌলিক ইস্যুতে কিনা সিদ্ধান্ত নিলেন একদল সুশীল, আমলা এবং সামরিক জেনারেল। ভাবতেই কেমন লাগে। পেছনের দরজা দিয়ে এমন একটি সিদ্ধান্তকে জায়েজ করার মত এই অধিকার তাদেরকে কে দিয়েছে, সে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে। কবে কোথায় এ নিয়ে সাধারণ মানুষের অথবা মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছিল জানতে ইচ্ছে করে।

    • রেজওয়ান - ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ (১২:০৫ অপরাহ্ণ)

      “‘না’ ভোটের মত প্রক্রিয়াগত এমন একটি মৌলিক ইস্যুতে কিনা সিদ্ধান্ত নিলেন একদল সুশীল, আমলা এবং সামরিক জেনারেল।”

      – এটি কি সত্যি কি না যে ওই না ভোটের সিদ্ধান্ত সুজন বা ওই এক মিটিংয়েই হয়েছিল সে নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। না ভোট নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। আর জরুরী অবস্থার পরিপ্রক্ষিতে অনেক ঘটনাই ঘটেছিল যা স্বাভাবিক নয়। যেমন হাসিনা, খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা এখন বলছেন যে তারা ইচ্ছে করে করে নি। করানো হয়েছিল।

      সব কিছু বিবেচনায়ও সুজনের তথ্যভান্ডারের উদ্যোগ নিশ্চয়ই একটি ভাল উদ্যোগ।

      জাগরীর ব্যাপারটায় বলছি। ছিদ্রান্বেষী দৃষ্টিভঙ্গীতে আমরা অনেকেরই অনেক দোষ খুঁজে পাব। আমাদের দেশের জাতীয় চরিত্র হচ্ছে কেউ কোন নতুন উদ্যোগ নিলে তার সমালোচনায় মুখর হওয়া। কিন্তু আমি গুরুত্ব দেই মানুষের কিছু একটি করার ইচ্ছা। একটু পরিবর্তনের আকাঙ্খা। নিশ্চয়ই কোন একজন বা একটি দলের পক্ষে সম্ভব না পরিবর্তন আনার। কিন্তু কেউ শুরু না করলে কিভাবে হবে?

      আমরা যদি কোন শিশুকে হাটতে শেখার সময় প্রতিবার পড়ে গেলেই সমালোচনা করি তাহলে সে কখনই হাটতে চাইবে না।

  8. রণদীপম বসু - ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ (৬:২০ অপরাহ্ণ)

  9. শামীম ইফতেখার - ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ (১১:৪২ অপরাহ্ণ)

    @ রেজওয়ান

    ছিদ্রান্বেষী দৃষ্টিভঙ্গীতে আমরা অনেকেরই অনেক দোষ খুঁজে পাব। আমাদের দেশের জাতীয় চরিত্র হচ্ছে কেউ কোন নতুন উদ্যোগ নিলে তার সমালোচনায় মুখর হওয়া।
    . . .
    আমরা যদি কোন শিশুকে হাটতে শেখার সময় প্রতিবার পড়ে গেলেই সমালোচনা করি তাহলে সে কখনই হাটতে চাইবে না।

    আমার মন্তব্য ছিদ্রান্বেষণের মত শুনিয়ে থাকলে দুঃখিত। “তারা নির্দলীয় তবে অবশ্যই একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম” – উপরে আপনার মন্তব্য পড়ার আগেই এই ধারণাটা জন্মেছিল আমার মনে। সেজন্যই কিছুটা কৌতুহলী হয়েছি জাগরী’র ব্যাপারে। গত তের বছরে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে প্রায়ই এধরণের অরাজনৈতিক-রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রাধান্য আমরা দেখেছি। এটা যদি প্রচলিতভাবে “ধ্বংসাত্মক” ছাত্র রাজনীতি বলতে যা বোঝায়, তার বিপরীতে একটি গঠনমূলক রাজনৈতিক কর্মকান্ডের স্রোত হতো, তাহলে মনে এত দ্বিধা থাকতো না। বেশীর ভাগ সময়ই এই উদ্যোগগুলোর ফল হয়ে থাকে প্রচলিত রাজনীতিতে বিতশ্রদ্ধ তরুণ সমাজকে আরো বেশী apolitical করে তোলা। সেটা আমার কাছে আরো বেশী সর্বনাশা মনে হয়। জানিনা তা তারা পরিকল্পনা করেই করেন নাকি এটাই অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে যায় শেষ পর্যন্ত। গত এক দশকে বেশ কিছু এনজিও এবং চিহ্নিত সুশীলরা তো সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনগুলোতে এ ধরণের ছাত্র সংগঠন (অবশ্যই অরাজনৈতিক) তৈরীতে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। নামগুলো উল্লেখ করতে পারি কিন্তু করবোনা, পরিচিত মহলে মনান্তর এড়াতে।

    উপরে অবিশ্রুত মনে হয় সায়ানের একটি গানের কথা বলতে চেয়েছেন। কয়েকদিন আগে একটি ব্লগে জাগরী’র কনসার্টের প্রচারণাসহ সায়ানের গানকে ফিচার করতে দেখেছি:

    কি করেছে তোমার বাবা কি করেছে স্বামী
    গল্প সে সব তোমার চেয়ে কম জানিনা আমি
    তোমার যত কীর্তিকলাপ সেও তো আছে জানা
    ইচ্ছে করেই মুখ খুলিনা, বলতে ওসব মানা
    . . .
    আমার মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খাবার দিন তো শেষ।

    গানটাতে বেশ কিছু সত্য কথা আছে। সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাইনাস টু এর পেছনেও নিশ্চয়ই অনেক যুক্তি ছিল যা একেবারেই ফেলে দেয়ার মত নয়। সায়ানের গানকে মনে হয়েছে এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাইনাস টু এর থীম সংগীত হতে পারতো। জাগরী তার কনসার্টের জন্য সেই সায়ানকেই প্রধান শিল্পী হিসেবে বেছে নিল, সেটাই আমাকে আশ্চর্য করেছে। ওদের এবং বিভিন্ন ব্লগের বক্তব্যে মনে হয়েছে তাদের মন এক তানে বাঁধা। সায়ান আর জাগরীর কথায় বাংলাদেশের রাজনীতির যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা অতিমাত্রায় সাদা কালো। তাতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের এ যাবতকালের যত অবদান আর ত্যাগ, তা তো ফুটে উঠতে দেখা যায়না! বাংলাদেশের আজ যে অবস্থা তার সব দায় কি আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর কিংবা নেতৃত্বের? আপাত দৃষ্টিতে বুদ্ধিমান শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের যখন এমন খন্ডিত বিশ্লেষণ নিয়ে মানুষের সামনে উপস্থিত হতে দেখি, তখন হতাশার চেয়েও যেটা বেশী হয়, তা হল সন্দেহ।

    “আমাদের দেশের জাতীয় চরিত্র হচ্ছে কেউ কোন নতুন উদ্যোগ নিলে তার সমালোচনায় মুখর হওয়া।” আমি ঠিক নিশ্চিত নই এটাই আমাদের জাতীয় চরিত্র কিনা। মন্তব্যটি আমার (কেবলই আমার), সুতরাং দেশের সব মানুষকে এখানে জড়ানোর বোধ হয় কোন দরকার নেই।

    আগে ধন্যবাদ দেয়া হয়ে ওঠেনি। আপনার আর সব লেখার মত এই লেখার লিন্কগুলো অনেক কাজে এসেছে। ধন্যবাদ।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.