‘বিদেশী আইনজীবি নিয়োগ’ প্রসঙ্গ: ৩য় দফা প্রশ্নোত্তর

হাতে গোণা কয়েকজন বিদেশীকে হাতে গোণা কয়েকটা মামলার আসামীর পক্ষে বাংলাদেশের আদালতে দাঁড় করানোর জন্য আমাদের সংসদের এখন হন্তদন্ত হয়ে আইন পরিবর্তন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই [..]

❖❖ প্রশ্ন: ট্রাইবুনালের রুলস অব প্রসিডিউর এর বিধি-৪২ এ তো বলা আছে উভয় পক্ষই চাইলে বিদেশী আইন জীবি আনতে পারবে। তাহলে সরকার চাইলে তারাও তাদের পক্ষে বিদেশী আইনজীবি আনতে পারে। ‘ফরেন’ আইনজীবি আনলে সরকারের সমস্যা কোথায়?

❖ উত্তর: রুলস অব প্রসিডিউর এর এই বিধি-৪২ নিয়েই আসলে জামায়াতের আইনজীবিদের এবং তাদের সমর্থকদের পক্ষ থেকে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে; তাদের উদ্দেশ্য আর যাই হোক সৎ নয়। অথচ বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। আইসিএসএফ এর সদস্যের এই পোস্টে বিষয়টি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা রয়েছে। এখানে দেখুন। সুতরাং, এখানে ‘বিদেশী আইনজীবি আনলে অসুবিধা কি’ – এ জাতীয় প্রশ্ন একেবারেই অবান্তর। যে অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতাই বার কাউন্সিলের নেই, সেই অনুমোদনকে ট্রাইবুনাল গ্রহণ করে কিভাবে? ট্রাইবুনালেরও কি সে ক্ষমতা আছে? এখানে মূল প্রশ্ন হল আইনের বিধানকে সমুন্নত রাখা। হ্যাঁ, বার কাউন্সিল রুলস কে সংসদে নিয়ে পরিবর্তন করা হোক, তখন ট্রাইবুনাল নিশ্চয়ই রুলস অব প্রসিডিউর এর বিধি-৪২ অনুযায়ী এগোতে পারবে! তার আগে নিশ্চয়ই নয়। এখানে সরকারের কি সুবিধা-অসুবিধা, কিংবা ট্রাইবুনাল কি চাইলো বা না চাইলো সেটা – সে সব একেবারেই কোনো মূখ্য বিষয়ই না। আমরা দেখতে চাই আইন সমুন্নত থাকুক, তা সে যার পক্ষে বা বিপক্ষেই যাক না কেন। প্রশ্ন এখানে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ, প্রশ্ন এখানে আইনের শাসনের। এর কোনো ব্যত্যয় আমরা দেখতে চাই না। আর এর বাইরে গিয়ে কেউ যদি কোনো অবুঝ আবদার করতে চায়, তাহলে সেটাকেও প্রশ্রয় দেয়ার কোনো মানে হয় না।

❖❖ প্রশ্ন: আমার মনে হয় – হয় বার কাউন্সিলের রুল পরিবর্তন করা হোক অথবা ICT’র Rules of Procedure পরিবর্তন করা হোক।

❖ উত্তর: ICT Rules of Procedure এ পরিবর্তন করার কিছু নেই। নিতান্ত যদি পরিবর্তন করতেই হয় তাহলে বিধি-৪২ একেবারেই বাদ দিয়ে দেয়া যেতে পারে, যেহেতু সেটা নিয়ে এতো বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইন অনুযায়ী – ট্রাইবুনালের বিচারকদের সেই ক্ষমতা আছে রুলস অব প্রসিডিউর এর যে কোনো বিধি প্রণয়নের কিংবা প্রয়োজনে সংশোধন বা বাতিল করবার। বিচারকরা নিজেরাই রুলস অব প্রসিডিউর পরিবর্তন করতে পারেন এবং তার জন্য সংসদেরও হস্তক্ষেপ দরকার নেই। আর বার কাউন্সিলের রুলস পরিবর্তন করা‍্যেতেই পারে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় যদি নিতান্তই প্রয়োজন হয়। তবে, হাতে গোণা কয়েকজন বিদেশীকে হাতে গোণা কয়েকটা মামলার আসামীর পক্ষে বাংলাদেশের আদালতে দাঁড় করানোর জন্য আমাদের সংসদের এখন হন্তদন্ত হয়ে আইন পরিবর্তন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ইংল্যান্ডের বার কাউন্সিল কি বাংলাদেশী এডভোকেটদের ঐ দেশে কোনো ধরণের পরীক্ষা না দিয়ে ইংল্যান্ডের আদালতে সরাসরি প্র্যাকটিস করতে দেয়? নাকি প্র্যাকটিস করতে দেয়ার জন্য বৃটিশ পার্লামেন্টকে কোনোদিন ব্যস্ত হতে শুনেছি? বাংলাদেশের হাজার হাজার মামলায় হাজার হাজার আইনজীবি তো এতদিন বেশ ভালোই ছিল প্রচলিত আইন নিয়ে! ১৯৭১ সালের এই সব অভিযুক্ত অপরাধী (গোলাম আযম, নিজামী, সাঈদী) নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ বিবেচনা দাবী করে না, যে তাদের জন্য এখন দেশের আইনও পাল্টাতে হবে, তাও তাদের কথায় এবং তাদের প্রয়োজনে! বরং, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাংলাদেশের আর যে কোনো অপরাধীর চেয়েও গুরুতর। বরং, অভিযোগের তুলনায় তাদের রাজার হালে ট্রিটমেন্ট দেয়া হচ্ছে গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ এবং মামলা চলাকালীন সময়ে, যা নিয়ে দেশবাসী একেবারেই সন্তুষ্ট না, কারণ দেশবাসী ১৯৭১ সালে এদের কৃতকর্মের ইতিহাস জানে।

রায়হান রশিদ

জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.