‘বিদেশী আইনজীবী নিয়োগ’ প্রসঙ্গ: ২য় দফা প্রশ্নোত্তর

শিরোনামে যা লেখা হয়েছে, পোস্টটির বিষয়বস্তুও তাই [...]

তামাশার প্রথম ধাপ উম্মোচন করে তার অতি সংক্ষিপ্ত কিন্তু যুতসই জবাব দেয়া হয়েছে নিচের এই ছোটো পোস্টারটিতে। পোস্টারটি আইসিএসএফ-এর ফেসবুক পাতা থেকে নেয়া।

 

এবার শুরু হয়েছে তামাশার দ্বিতীয় পর্ব। সেটা উম্মোচন করতে এবং তার প্রত্যুত্তর দেয়ার উদ্দেশ্য থেকেই অতি সংক্ষিপ্ত এই অণুব্লগ লেখা।

বিডিনিউজ ২৪-এর রিপোর্ট (এখানে দেখুন) পড়ে এখন আরও স্পষ্ট হচ্ছে যে, জামায়াতের আইনজীবীরা ট্রাইবুনালের কার্যবিধি-৪২-এর ওপর নির্ভর করার চেষ্টা করবেন, যেখানে বলা রয়েছে যে বার কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে যদি কোনো বিদেশী আইনজীবী আসেন তবে সেক্ষেত্রে ট্রাইবুনাল নাকি সেই বিদেশী আইনজীবীকে মক্কেলের পক্ষ নিয়ে দাঁড়াতে দিতে পারে! মিলিয়ন ডলারেরও বেশী খরচ করা হয় আসামী পক্ষের যে লিগ্যাল টিমের পেছনে, তারা এতো মাথা খাটিয়ে এর চেয়ে আরও ভালো কিছু খুঁজে পেল না! আসুন এবার এই নতুন যুক্তিকে ব্যবচ্ছেদ করে দেখা যাক এর ভেতর আসলে কী সারবস্তু রয়েছে।

বার কাউন্সিলের সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রগতিশীলদের ভরাডুবি হয়েছে এবং প্যানেলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিএনপি-জামায়াত। সুতরাং, আসামী পক্ষের আইনজীবীদের এই হঠাৎ আত্মবিশ্বাস, এবং একরকম ধরেই নেয়া যে বার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে স্রেফ দরখাস্ত করলেই তারা অনুমোদন পেয়ে যাবেন — সেটা আসলে কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। যদি কমিটি অনুমোদন দেয়ও, তাহলে এই সম্ভাবনাটুকু একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না যে এই ‘অনুমোদন’ হতে পারে রাজনৈতিক এবং দলীয় বিবেচনাপ্রসূত। সুতরাং এই বিষয়টির দিকেও দেশবাসীর সজাগ দৃষ্টি রাখবার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।

এবার আসি ট্রাইবুনালের কার্যবিধি-৪২-এর প্রসঙ্গে। ট্রাইবুনালের কার্যবিধির ৪২ নং বিধিতে যা বলা হয়েছে তা হল:

The Tribunal may allow appearance of any foreign counsel for either party provided that the Bangladesh Bar Council permits such counsel to appear.

এখন প্রশ্ন হল — বার কাউন্সিলের অনুমোদন প্রদানের যে-ক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে তার প্রকৃতি আসলে কী? কতটুকুই বা বিস্তৃত সেই ক্ষমতা? এখানে যে বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে তা হল — আইনের সব বিধানের মতোই ট্রাইবুনালের কার্যবিধি-৪২-এরও অন্তর্নিহিত কথাটা হল — এ জাতীয় যে-কোন অনুমোদন‍ কেবল তখনই আইনগ্রাহ্য অনুমোদন বলে গণ্য হবে যদি তা আইনের পরিধির মধ্যে থেকে দেয়া হয়ে থাকে। এর অন্যথা হলে — সে অনুমোদন কোনো অনুমোদনই না। ঠিক কেন এই সীমাবদ্ধতা? কারণটা কিন্তু খুবই সোজা সাপ্টা। বিচারালয় হিসেবে ট্রাইবুনালের কাজ হল আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখা। সুতরাং, অন্য কোনো সংস্থার (তা এমনকি বার কাউন্সিল হলেও) ক্ষমতা বহির্ভুত এবং আইন বহির্ভুত কোনো সিদ্ধান্ত ট্রাইবুনালের সামনে এসে বৈধতা পাবে তা নিশ্চয়ই আমরা কেউই আশা করি না! কেবলমাত্র ট্রাইবুনালের বিধি পরিবর্তন করে দেশের সংসদের তৈরী সুষ্পষ্ট আইনের নির্দেশকে অতিক্রম করার ক্ষমতা খোদ ট্রাইবুনালেরও নেই, সেটাই সবচেয়ে মৌলিক কথা। এখানে ট্রাইবুনাল একটি “বিশেষ ট্রাইবুনাল” কিনা (যা ডিফেন্স টিমের আইনজীবিরা বলার চেষ্টা করছে) সেটা বিচার্য বিষয় না, কারণ, সেই ট্রাইবুনালেও কে আইনজীবি হিসেবে দাঁড়াতে পারবে আর কে পারবে না সেটা নির্ধারণ করার এখতিয়ার সংসদে তৈরী করা আইনজীবিদের জন্য প্রযোজ্য আইনটিরই। আর শুধু নিজেদের সুবিধার ক্ষেত্রে ট্রাইবুনালের অবস্থানকে “বিশেষ ট্রাইবুনাল” লেবেল এঁটে উঁচুতে তোলা, আবার অন্যদিকে সমালোচনার বেলায় ট্রাইবুনালকে তুলনা করতে গিয়ে দেশের প্রচলিত আইনের মানদন্ডে বিচার করাটা আর যাই হোক কোনো সৎ পন্থা না। (দ্রষ্টব্য: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সভায় টোবি ক্যাডম্যান সরকারকে মনস্থির করতে বলেছেন ট্রাইবুনালটি ডমেস্টিক নাকি আন্তর্জাতিক – একই পরামর্শ ডিফেন্স টিমকেও দেয়া যায়)।

কোন্ আইনজীবী বাংলাদেশের আদালতে দাঁড়াতে পারবেন, আর কোন্ আইনজীবী পারবেন না, তা আইনে একেবারেই স্পষ্টভাবে বলে দেয়া রয়েছে। বার কাউন্সিল কমিটি কেন কারোই আসলে এখতিয়ার নেই এই আইনের সুস্পষ্ট শর্তের বাইরে যাবার যতক্ষণ না সংসদের হস্তক্ষেপে আইনটিতেই পরিবর্তন করে বাধাগুলো অপসারণ করা হচ্ছে। সুতরাং তথাকথিত অনুমোদনের এক টুকরো কাগজ নিয়ে ট্রাইবুনালের সামনে দাঁড়িয়ে “আমি ইহাকে পাইলাম” বলে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের এই যে চেঁচিয়ে উঠবার যে মহা পরিকল্পনা, তা হাস্যকর বলেই মনে হচ্ছে।

দেশের বিচার, আইনব্যবস্থা নিয়ে এরা তামাশা শুরু করেছে। ১৯৭১ সালে পুরো দেশটির অস্তিত্ব এবং স্বাধীনতা নিয়েও এরা নির্মম তামাশায় মেতে উঠেছিল, সুতরাং অবাক হওয়ার কিছু নেই। এদের প্রতিহত করতে হবে। আর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে সবার আগে বিষয়গুলো জানতে হবে, মস্তিষ্ক সশস্ত্র করে তুলতে হবে।

আরও জানতে পড়ুন:  (আইসিএসএফ-এর ফেসবুক পেজের ফটো-স্টেটাস পোস্ট)
আরও জানতে পড়ুন:  (আইসিএসএফ সদস্য নিঝুম মজুমদারের প্রাসঙ্গিক একটা লেখা)

রায়হান রশিদ

জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.