স্পেস-বার

প্প্রতি অক্ষর টাইপ করি। স্পেস-বার চাপি। একবার করে মনে পড়ে। একবার করে মনে পড়ুক আমাদের সবার। স্পেস-বার। [. . .]

৩৬৫ – অভিজিৎ চলে যাওয়ার পর ৩৬৫ বার নিজের অক্ষে আবর্তিত হয়েছে পৃথিবী। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে একবার। এর মধ্যে বিজ্ঞানের নানান শাখায় দারুণ সব দুনিয়া-কাঁপানো আবিষ্কার হয়েছে। অভিজিৎ বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই লিখতো। বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীতেই ভয়ংকর জঙ্গিবাদ তার নখদাঁত আরও বিস্তার করেছে। অভিজিৎ নিশ্চয়ই লিখতো। একে একে চলে গেল অনন্ত, ওয়াশিকুর, নিলয়, দীপন। প্রত্যেককে নিয়ে সবার আগে হয়তো অভিজিৎই লিখতো প্রথম প্রতিবাদী লেখাটা। রাজীবকে নিয়ে লিখেছিল। বইমেলা নিয়ে লিখতো।

শার্লি হেবদো নিয়ে লিখেছিল। কিন্তু সমকামীদের অধিকার রক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুগান্তকারী রায় নিয়ে লিখতে পারেনি অভিজিৎ। প্যারিসের ভয়ংকর ম্যাসাকার নিয়ে লিখতে পারেনি। সুযোগ ছিল না। আয়লান কুর্দিদের নিয়ে লিখতে পারেনি। বাকিদের সে সুযোগ ছিল। কেউ কেউ লিখছে। হয়তো অভিজিৎরাই এখন লিখছে, বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।

কেউ নিজের কাছেও স্বীকার করে না আজকাল। কিন্তু এই মৃত্যুগুলো সবাইকে বদলে দিয়েছে। সেটা ভাল না মন্দ সে বিচার সময়ই করবে। কি-বোর্ডে প্রতিটি শব্দ প্রতিটি অক্ষর টাইপ করে ‘স্পেস-বার’ চাপি। চাপতে গিয়ে অভ্যাসবশে প্রতিবার দু’হাতের বুড়ো আঙুল ব্যবহার করি।

যে চাপাতি অভিজিতের জীবন কেড়ে নিয়েছিল, সেই একই চাপাতি বন্যার মাথাতেও আঘাত হানে। উড়িয়ে দেয় হাতের বুড়ো আঙুল। তবুও মৌলবাদের বিরুদ্ধে, গোঁড়ামি অন্ধত্বের বিরুদ্ধে বন্যার বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনে এতটুকু ছেদ পড়েনি কোথাও, স্পেস-বার ছাড়াই।

প্রতি অক্ষর টাইপ করি। স্পেস-বার চাপি। একবার করে মনে পড়ে। একবার করে মনে পড়ুক আমাদের সবার। স্পেস-বার।

রায়হান রশিদ

জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.