যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াকে বহু পেছনে ফেলে সদর্পে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ – বিশ্বের ‘অন্যতম নিরাপদ দেশ’ হিসেবে। ওয়াশিংটনভিত্তিক জনমত জরিপ সংস্থা গ্যালাপ এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই দুর্দান্ত ফলাফল। যে তথ্য আমরা দেশবাসীরা বহু কাল ধরেই আন্দাজ করেছিলাম, তাই এবার রীতিমতো অংক কষে প্রমাণ করে দিল বিদেশী সংস্থা। বিদেশীরা তো আর মিথ্যা কথা বলবে না! জানি জানি, নিন্দুকেরা কূট প্রশ্ন করে বসবেন – এখানে ঠিক ‘কার নিরাপত্তার’ কথা বোঝানো হয়েছে? সেই সব প্রশ্নকারীদের প্রতি আগাম নিন্দা জানিয়ে বলছি – গোটা দেশ নিরাপত্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে! কিছু উদাহরণ দিয়ে খোলাসা করছি।
মন্দির-প্যাগোডা ভাঙ্গা যাচ্ছে, নিরাপদে। মসজিদও এতোই নিরাপদ যে ব্যাঙের ছাতার মতো সেসবের বিস্তার নিয়ে এমনকি টুঁ শব্দ করারও উপায় নেই। জঙ্গী হুজুরের দল মানুষ কতলের ফতোয়া দিতে পারছে, নিরাপদে। সেই পবিত্র হুকুম মেনে একে একে ব্লগার-লেখক-প্রকাশকদের নিরাপদে কতল করে দেশকে আরও নিরাপদ করা সম্ভব হচ্ছে, নিরাপদেই। অন্যদিকে জীবিত ব্লগাররাও বিদেশ-বিভূইয়ে পাড়ি জমাতে পারছেন, নিরাপদে। কেউ আটকাচ্ছে না তাদের। সবার মঙ্গলের জন্য চিন্তার স্বাধীনতার উপর যে সুচিন্তিত নিরাপদ সীমারেখা টেনে দেয়া হয়েছে, মূলত এসব তারই সুফল। এখানেই শেষ না। নিরাপদে পহেলা বৈশাখ ইত্যাদিতে “দুষ্টুমী” করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে যুদ্ধাপরাধী দাদুভাইরা শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের গ্যারান্টি পাচ্ছেন। আবার নুলা মুসাদের মতো বাকি যুদ্ধাপরাধীরাও পরম মমতাভরা নিরাপত্তা পাচ্ছেন, বিচারের হাত থেকে। আর এমন অমোঘ নিরাপত্তা আরও পোক্ত করতে বিচারের ট্রাইব্যুনাল দু’টোর একটা আবার বন্ধও করে দেয়া হয়েছে। ন্যায়বিচার আর নিরাপত্তার স্বার্থে কমিয়ে দেয়া হয়েছে অবশিষ্টটির বাজেটও। লুটেরা লুট করছে নিরাপদে, ব্যবসায়ী ঋণের খেলাপ করছে নিরাপদে, মন্ত্রী-আমলা-বিচারকরা তাদের এক্সট্রাকারিকুলার কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারছেন নিরাপদে। জামাতি-আমাতি-বামাতি বুদ্ধিজীবি সকলে নিরাপদে নিজ নিজ দলবাজি চালিয়ে যেতে পারছেন। সবশেষে, ফেসবুক ইত্যাদিতে বিভ্রান্ত হতে আর বিভ্রান্ত করতে পারছি আমরা বাকি সবাই। নিরাপদেই।
উপসংহার – এই নিরাপদ প্রজাতন্ত্রে নিরাপত্তার আদর থেকে ভাগীদারদের কাউকেই বঞ্চিত করা হচ্ছে না। এই সত্যগুলো উচ্চারণ না করলে নিজেকে অনিরাপদ মনে হতো। তাই এইবেলা লিখে রাখলুম।
ওঁম নিরাপত্তা!
— প্রসঙ্গ: খবরের
লিন্ক
— ফেসবুক পোস্ট লিন্ক
রায়হান রশিদ
জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।