বছরের প্রথম মাসটা শেষ হয়ে নতুন মাস সবে শুরু হলো। গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডারে দ্বিতীয় এই মাসটির নাম February এবং আমাদের ইতিহাসে মাসটি বিশেষ গুরুত্ববহ। এই মাস জুড়ে নানাবিধ অনুষ্ঠান এবং আয়োজনে আমরা অংশগ্রহণ করবো মহান সেই শহিদদের (যেহেতু বানানানুগ উচ্চারণ করি না, অতএব ‘শহীদ’ নয়) স্মরণে যাঁরা ১৯৫২ সালে সংঘটিত ভাষা-আন্দোলনে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গ করেছেন। দীর্ঘকাল ধরেই বাংলায় এই মাসটির নাম লেখার প্রচলিত রূপ ফেব্রুয়ারি এবং এককালে তা ফেব্রুয়ারীও লেখা হতো, পরে বানানটি সংস্কার করা হয়েছে।
বাংলা ভাষার উচ্চারণরীতি অনুযায়ী শব্দের অন্ত বা মধ্যবর্তী অক্ষরে যুক্ত রেফ এবং র-ফলা যুক্তবর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ নির্দেশ করে। আম্র, তাম্রলিপি, অভ্র, শুভ্র, খর্ব, গর্ব প্রভৃতি শব্দ উচ্চারণকালে আত্মোচ্চারণ শ্রবণের কিঞ্চিৎ সনিষ্ঠ চেষ্টা করলেই ব্যাপারটা উপলব্ধি করা সম্ভব। আর তখন এটাও উপলব্ধি করা সম্ভব যে আমাদের লিখিত ফেব্রুয়ারি বা ফেব্রুয়ারী শব্দটির উচ্চারণ February-এর অনুরূপ নয়, অথচ বাংলা বানানানুযায়ী যে উচ্চারণটি করার কথা তাও আমরা করি না। অর্থাৎ বলার ক্ষেত্রে আমরা ইংরেজি বানানের যে উচ্চারণ তাই করি। ফলে বাংলায় প্রচলিত লেখ্যরূপটির বর্তমান অস্তিত্ব মাতৃভাষার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের নিবিড়তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই সঙ্গতিহীন বিধায় বানানটি সংস্কারের প্রয়োজন উপলব্ধি করা যায়।
মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও নিষ্ঠা প্রকাশের ক্ষেত্রে এটা তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে যদি মহান এই মাসটির সূচনাকালেই উচ্চারণানুগ বানানে মাসটির নাম বাংলায় লেখার যৌক্তিক চর্চার প্রসার ঘটানো যায়। সেক্ষেত্রে February-এর উচ্চারণানুগ লেখ্যরূপটি হতে পারে ফেবরুআরি অথবা ফেবরুয়ারি। আর এই প্রয়াসের মাধ্যমে মহান এ মাসটি থেকে আমরা আত্মোপলব্ধি ও শুদ্ধির পথে চলারও সূচনা করতে পারি।
কোনোকালেই না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভালো — আপ্ত এই বাক্যটির আশ্রয়ে এমন আশা করা অমূলক নয় নিশ্চয় যে আজ যদি আমরা আত্মোপলব্ধি ও শুদ্ধির এই যাত্রা শুরু করে অব্যাহত রাখতে পারি, তবে হয়তো সে চর্চাই একদিন সনিষ্ঠ মানুষে গড়া জাতি হিসাবে আমাদের সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম করবে। আশায় বাঁচা চাষার উত্তরপুরুষ সেই আশাতেই থাকি!
ঢাকা, ফেবরুআরি ১, ২০১১
ফরহাদ জামান পলাশ
কবি; নাট্য পরিকল্পক; সহকারী অধ্যাপক, এস.এম.ইউ.সি.টি.। বিতাড়িত প্রভাষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। জন্মস্থান রাজশাহী।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১১ comments
মাসুদ করিম - ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৩:০৮ অপরাহ্ণ)
এপ্রিল কি ঠিক আছে? বা সেপ্টেম্বর অক্টোবর নভেম্বর ডিসেম্বর?
ফরহাদ জামান পলাশ - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৪:২৪ অপরাহ্ণ)
মাসুদ ভাই, অম্বল কম্বল যেভাবে বলা যায় নভেম্বর ডিসেম্বর সেভাবেই বলা হয় ধারণা করি। আর অক্ট্রয় মোড়ে পাটিসাপ্টা খাওয়ার ফাঁকে সেপ্টেম্বর অক্টোবর সয়ে যায়। তবে এপ্রিল হসন্ত যুক্ত প দিয়ে ভেঙে লিখলেই অধিকতর উচ্চারণানুগ হয়। আন্তরিক ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)
এপ্রিলের প্রস্তাবিত বানানে পএ হসন্ত থাকলে ফেবরুআরির বএ থাকছে না কেন?
জি এইচ হাবীব - ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৯:৩০ অপরাহ্ণ)
‘স্মরণ’, ‘আত্মোৎসর্গ’ – তার বেলা?
ফরহাদ জামান পলাশ - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১২:১৩ অপরাহ্ণ)
হাবীব ভাই,ধন্যবাদ।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালে শরণ নিতে হয়েছিল পাশের দেশে স্মরণ আছে কী?
আত্মার কাছে পাত্তা পাওয়া সহজ তো নয়!
বাক্য দুটি বলার সময় নিজের উচ্চারণ নিজেই একটু শোনার ও উপলব্ধি করার চেষ্টা করে দেখুন তো তফাৎগুলো ধরা যায় কিনা।
মাসুদ করিম - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৫:৫৩ অপরাহ্ণ)
স্মরণ ও শরণের উচ্চারণ এক নয় এবং আত্ম ও আত্তর উচ্চারণ এক নয়। ইটালিকে লেখা শব্দ দুটির উচ্চারণে স্পষ্ট আনুনাসিক ধ্বনি আছে।
ফরহাদ জামান পলাশ - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ ভাই, আপনার অভিমত যথার্থ; ওষ্ঠ্য বর্গীয় নাসিক্য ধ্বনি ম স্মরণ ও আত্ম শব্দ দুটিতে যুক্ত থাকায় উচ্চারণেও অনু উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। শব্দের মধ্যবর্তী ব্যঞ্জন বর্ণের অ-স্বর ও-স্বরে রূপান্তরের যে প্রবণতা আমাদের বলায় আছে সংযুক্ত উ-স্বরের ক্ষেত্রে মিলনে সে হসন্ত দাবি করে না। ধন্যবাদ।
মাহমুদ হাসান - ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১২:১০ পূর্বাহ্ণ)
আরো স্পষ্ট করে বলুন।অনেক কিছুই বুঝতে পারিনি। যেটুকু বুঝলাম তার উপর আমার মতামত জানালাম।
আমরা যখন আব্রু উচ্চারণ করি, তখন আপনার কথামতো র-ফলা যুক্ত বর্ণ, অর্থাৎ ব এর দ্বিত উচ্চারণ করতে হবে।এই দ্বিত উচ্চারণ কী করে হচ্ছে- আববুরু? নাকি আববরু?
যদি প্রথমটা হয় তবে প্রচলিত বানানে সমস্যা কী?
আর যদি দ্বিতীয়টা হয় তাহলেও তো আমার কাছে কোন সমস্যা মনে হচ্ছে না। কারণ শব্দের বানান কি এর উচ্চারণ অনুযায়ী হয়? তাহলে নিঃসঙ্কোচে বলা যায় একই শব্দের হাজারো রূপ লিখতে হবে আমাদের।
আমি লিখব ‘পানি’, আমার নোয়াখালির বন্ধু লিখবে ‘হানি’, ময়মনসিংহের বন্ধু লিখবে ‘ফানি’। উচ্চারণানুগ বানান লিখার নিয়ম কোথায় আছে সেটা জানতে চাই।
ফরহাদ জামান পলাশ - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৯:১৯ পূর্বাহ্ণ)
মাহমুদ ভাই, মার্জনা করবেন; সময় ও সুবিধা সঙ্কটে উত্তর লিখতে দেরি হলো। না বুঝতে পারাটা বুঝতে পারা একটা দুর্লভ গুণ বর্তমানকালে। আব্রু বিষয়ে আপনার বলা ও লেখায় কোনো সমস্যা তো দেখি না। আর আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন স্থানের বন্ধুরা কোনো শব্দের যা উচ্চারণ করবেন তার আঞ্চলিক লেখ্যরূপটি তো তেমনই হবে। অনেক ধন্যবাদ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার জন্যে।
রেজাউল করিম সুমন - ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (২:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
দব্রলিউবভ্, সুপ্রিম, কাপ্রি, আফ্রিকা, পেদ্রো পারামো — এসবের পাশাপাশি যদি সুব্রত, অভ্র, সুপ্রিয়, রুদ্র উচ্চারণ করি, তাহলেই ধরা পড়বে যে ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিল ব্যতিক্রম নয়, উপরের বিদেশি শব্দগুলোর কোনোটার ক্ষেত্রেই র-ফলার কারণে প, ফ, ব, দ-এর দ্বিত্ব উচ্চারণ করছি না আমরা।
পোর্তুগিজ পাদ্রি-কে পাদরি-ও লিখি, একইভাবে ফারসি আব্রু-কেও আবরু লেখাই হয়তো অধিকতর সংগত। তাই বলে প্রস্তাবিত সুপ্রিম (সুপরিম), আফ্রিকা (আফরিকা), ফেব্রুআরি (ফেবরুআরি) ইত্যাদির পরিবর্তে এসব শব্দের ‘বাংলায় প্রচলিত লেখ্যরূপটির বর্তমান অস্তিত্ব মাতৃভাষার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের নিবিড়তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে’ — এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পক্ষে কোনো জোরালো যুক্তি আছে কি?
Desi Barta - ২৫ এপ্রিল ২০১৫ (১:৩৫ অপরাহ্ণ)
আশায় বাঁচে যে চাষা:
মাসুদ ভাই, আপনার অভিমত যথার্থ; ওষ্ঠ্য বর্গীয় নাসিক্য ধ্বনি ম স্মরণ ও আত্ম শব্দ দুটিতে যুক্ত থাকায় উচ্চারণেও অনু উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। শব্দের মধ্যবর্তী ব্যঞ্জন বর্ণের অ-স্বর ও-স্বরে রূপান্তরের যে প্রবণতা আমাদের বলায় আছে সংযুক্ত উ-স্বরের ক্ষেত্রে মিলনে সে হসন্ত দাবি করে না। ধন্যবাদ। আবােরা ধন্যবাদ।