২০০৭-২০০৮ এই দু’বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকার তথা জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের সরকার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়েছিলেন — “ভাতের উপর চাপ কমান, নিয়মিত আলু খান”। খুব সুন্দর সুন্দর বিজ্ঞাপন স্পট তৈরী করে খাদ্য হিসাবে আলুর বহুবিধ ব্যবহার আমাদের অভাগা বাঙালীকে শিখিয়েছেন। একজন জনপ্রিয় শিল্পীর ভিডিও এলব্যামের মাধ্যমে আলুর বিভিন্ন প্রকার রন্ধন প্রণালী আমাদের শিখিয়ে আলুর প্রতি এক ধরনের আসক্তি তৈরী করে দিয়েছেন। আমরা এখন আলুর ডাল, আলু দিয়ে বিভিন্ন প্রকার নাস্তা, আলুর তৈরী বিভিন্ন প্রকার শিশু, যুবক ও বয়োবৃদ্ধ খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। তখনকারের সরকারের দেশ বাঁচাতে, আলুকে বিকল্প খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার কাকুতি আমাদের বাংলাদেশের আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা সকলের মনে জাগরণ সৃষ্টি করেছে। এখন আমাদের আলু ছাড়া আর কিছু ভাল লাগে না…।
কিন্তু বিধি বাম !
গ্রামের রহিমুদ্দিন চাচা, আপসোস করে বলছেন —
…ও বাবারা, বহুত কষ্ট কইরা বউ, পোলাপান, নাতি-পুতিগোরে ভাত ছাড়াইয়া আলুতে অভ্যাস করাইলাম । এহন দেহি আলুর বাজারে আগুন লাগছে। ৩২ থাইকা ৩৫ টাকা কেজি দরে আলু বেচতাছে। কেমনে কিনি বাজান। সবডিরে আলু খাইতে অভ্যাস করাইয়া এহন আমি পড়ছি বিপদে। এহন হ্যাগোরে আলু খাওনের অভাস ছাড়াই কেমনে ? মমতাজ বিবি গানে গানে আমগোরে আলু খাওনের লাইগা যে অভ্যাস কইরা দিয়া গ্যাছে… হেই আলু এহন কেমনে খাওয়ামু, একটু কইয়া যান বাজান।
… এহন আমরা কি খামু, কিসের উপর চাপ কমামু…?
রহিমুদ্দিন চাচার এই কথার উত্তর কি আপনারা কেউ দিতে পারবেন ?
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৯ comments
ডাঃ আতিকুল হক - ৭ ডিসেম্বর ২০০৯ (৬:২২ অপরাহ্ণ)
এখন আমরা মরিচ খামু, আলুর উপর চাপ কমামু……কারন, মরিচের কেজি এখন ১০ টাকা……
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৮ ডিসেম্বর ২০০৯ (১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
কবি রফিক আজাদকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। তিনি তো একসময় উচ্চারণ করেছিলেন-
ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।
নুর নবী দুলাল - ১১ ডিসেম্বর ২০০৯ (২:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
মানচিত্র নিয়ে ভাই টানাটানি চলছে । মনে হয়, ওটাও কয়দিন পর আর আমাদের হাতে থাকবেনা। মানচিত্রটা লিজ নেওয়ার জন্য দর কষাকষির অস্তিত্ব কি টের পাচ্ছেন না ? ধন্যবাদ জাহাঙ্গীর ভাই আপনাকে………..
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ১১ ডিসেম্বর ২০০৯ (৯:২৬ পূর্বাহ্ণ)
আপনার ভাবনার ধরন এবং প্রয়োজনীয়তাটা আমি বোধ হয় ধরতে পেরেছি। তবে আমার কথা কিন্তু মানচিত্রের মৌলিক প্রসঙ্গ নিয়ে নয়। মানচিত্র আপনি কেমন চান, বিশ্বমানবের কন্সেপ্ট থেকে পার্সপোর্টহীন জীবন চান কিনা, প্রচলিত মানচিত্র উৎপন্নে বড়ো পুজির ভূমিকা, এমনকি বাংলাদেশের মানচিত্র অর্জনের ব্যাপারেও এস্টাব্লিস্ট পুজির সাথে বিকাশমান পুজির দ্বন্দ্বের ফল কিনা, তা কিন্তু ভিন্ন বিতর্ক। মানুষের মৌলিক চাহিদা ক্ষুধানিবৃত্তির যে প্রসঙ্গটা আপনি এনেছেন তাতে আমি একটা সাংস্কৃতিক শ্লোগান নিতান্তই প্রাসঙ্গিকভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি মাত্র।
নুর নবী দুলাল - ১১ ডিসেম্বর ২০০৯ (২:১০ পূর্বাহ্ণ)
মুক্তবাজার অর্থনীতি নামের ঘোড়াটার লাগাম টেনে ধরার মত ক্ষমতা আমাদের নেই ডাঃ আতিক । এই কাঁচা মরিচ আবার কয়দিন পর আমরা ১০০ টাকা দিয়ে কিনে খাব। তাই, আমাদের কোন কিছুরই অভ্যাসে পরিনত হওয়া উচিত হবে না ।
মোহাম্মদ মুনিম - ৮ ডিসেম্বর ২০০৯ (৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
গতবার মঈন ইউ আহমেদ দেশবাসীকে আলু খাওয়া শেখালেন, দেশবাসী আলু খাওয়া শিখতে শিখতে প্রচুর আলু নষ্ট হয়ে যায়, কৃষকেরা আলুর উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি, ফলে তাঁরা এ বছর আলুর চাষ সেভাবে করেননি। দেশবাসী আলু খাওয়া শিখলেন বটে, তবে আলুর দাম অনেক বেড়ে গেলো। এ বছর কিসের ফলন ভালো হয়েছে জানিনা, তবে পত্রিকায় দেখলাম, চালের দাম অনেক কমে এসেছে। গত বছর চালের অগ্নিমূল্য ছিলো, তবে প্রান্তিক কৃষকেরা সেটার সুফল পাননি বলাই বাহুল্য, মধ্যসত্ত্বভোগি ব্যবসায়ীরা এর থেকে মুনাফা করেছে। ১৯৪৩ সালের মহা দুর্ভিক্ষের সময় কিন্তু চালের উৎপাদন কম হয়নি, ব্রিটিশরা সমস্ত নৌকা বাজেয়াপ্ত করাতে বাজারে সময়মত চাল পৌঁছেনি, তাই প্রায় বিশ লক্ষ লোক (নাকি পঞ্চাশ লক্ষ, কেউ কেউ বলে দেড় কোটি, এই নিয়ে এই বিষয়ক ‘পন্ডিত’দের মতভেদ আছে) মারা যান। গতবছরও চালের দাম এতো বাড়ার কারণ উৎপাদন ঘাটতি নয়, তেলের দাম অত্যধিক বাড়ার কারণে চালের বিতরণ খরচ বেড়ে গিয়েছিল, এর সাথে কিছু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চালের দাম বেড়ে গিয়েছিল। রহিমুদ্দিন চাচা, এতো সহজ ব্যাপারগুলো আপনি কেন বুঝতে পারছেন না?
নুর নবী দুলাল - ১১ ডিসেম্বর ২০০৯ (২:১৪ পূর্বাহ্ণ)
সবই ভাই সামন্ত প্রভুদের চাপিয়ে দেওয়া কর্মকান্ডের খেসারত । ধন্যবাদ মুনিম, আপনাকে……….
মোহাম্মদ মুনিম - ৯ ডিসেম্বর ২০০৯ (৫:০৪ পূর্বাহ্ণ)
রহিমুদ্দিন চাচা, আপনাকে আরেকটু বোঝাই, গেল বছর আপনি যখন চাল কিনতে পারছিলেন না; বার্মা, ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া আপনার পরিবারের জন্য চাল পাঠায়নি, তারা চাল পাঠিয়েছে আমেরিকাতে, আগের দামেই। কারণ আপনি না খেয়ে মরলে কারো কিছু যায় আসে না, আমেরিকাতে চালের চালান এক বছর কমে গেলে আমেরিকা পরের বছর অন্য জায়গা থেকে চাল কিনবে, এই ভয়ে সবাই আমেরিকাতে ঠিকই চালের চালান পাঠিয়েছে। আপনাকে এক বছর আলু খাওয়া শিখতে হবে, পরের বছর কচু, আবার তার পরের বছর মিষ্টি আলু, মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকাও শিখতে হতে পারে।
নুর নবী দুলাল - ১১ ডিসেম্বর ২০০৯ (২:২৮ পূর্বাহ্ণ)
আমরাতো ভাই সব কিছুতেই অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি। কিন্তু মাঝখানে আবার দু’বছর আমাদের রাজনীতিতে নতুন কারিগরের উথ্থান প্রচেষ্টা ও আমাদেরকে নতুনভাবে জীবনযাত্রায় অব্যস্থ করার প্রয়াশে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে এই হতভাগা বাঙালীর নাকে রশি লাগিয়ে দূর্নীতির ধোঁয়ার আড়ালে দূর্নীতির গনতান্ত্রিক মুখোশে স্বৈরচারী থাবা আমাদের সব অভ্যস্থতার ভিত নাড়িয়ে দিয়ে……সব লন্ডভন্ড করে, লাভটা কি হলো ?……………