প্রথম পর্ব / দ্বিতীয় পর্ব / পূর্ব প্রকাশিতের পর . . .
১০.
উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, সেক্স ট্যুরিজম বা যৌনপর্যটন হলো অর্থের বিনিময়ে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে কোনো বিশেষ স্থানে ভ্রমণ করা। জাতিসংঘের বিশেষ অ্যাজেন্সি বিশ্ব পর্যটন সংস্থার মতে, পর্যটন খাত কর্তৃক আয়োজিত অথবা এই খাতের বাইরের কারো আয়োজনে পর্যটন খাতের কাঠামো ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গন্তব্যস্থানের বসবাসস্থলে পর্যটক কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে যৌনসম্পর্ক স্থাপনকেই সেক্স ট্যুরিজম বা যৌনপর্যটন বলে। জাতিসংঘ যৌনপর্যটনকে সমর্থন করে না এ কারণে যে, এর মাধ্যমে পর্যটকের নিজের দেশ ও গন্তব্য দেশ উভয়েরই স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে পর্যটকের নিজের দেশের চেয়ে গন্তব্যদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং পর্যটকের নিজের সাথে ওখানকার মানুষের লৈঙ্গিক-বায়সিক অবস্থার বৈভিন্ন্যই এর জন্য দায়ী। যৌনপর্যটকদের জন্য কখনো কখনো গন্তব্যদেশে স্বল্পমূল্যে যৌনপরিষেবা পাবার আকর্ষণ থাকে। এমনকি সেসব দেশের থাকে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আইনগত শৈথিল্য এবং শিশু যৌনকর্মী পাবার আকর্ষণও। ((http://en.wikipedia.org/wiki/Sex_tourism))
যৌনপর্যটনের জন্য পর্যটকদের প্রথম বাছাই দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, ডমিনিকান রিপাবলিক, কোস্টারিকা, কিউবা, জার্মানি, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস এবং কম্বোডিয়া। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে যাবার পর রাশিয়া, হাঙ্গেরি, ইউক্রেন, পোলান্ড এবং চেক রিপাবলিকের নামও ওই তালিকায় সংযুক্ত হয়েছে। অবশ্য এসব গন্তব্যের খুব কমসংখ্যক যৌনকর্মীই কেবল যৌনপর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকে। ওসব দেশের মোট যৌনকর্মীর সিংগভাগই স্থানীয় পুরুষকুলের চাহিদা মেটায়। নির্দিষ্ট কোনো দেশের কেবল এক বা একাধিক নির্দিষ্ট স্থানই কেবল যৌনপর্যটকদের গন্তব্য হয়। যেমন নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, পাট্টায়া ও পুকেট। আমেরিকায় যেহেতু নেভাদা ছাড়া অন্য সব এলাকায় পতিতাবৃত্তি অবৈধ, তাই ওখানকার স্থানীয়রা নেভাদায় যৌনপর্যটনে যায়। এছাড়া অন্যান্য কিছু শহরে স্থানীয় পর্যটকরা বিশেষ আইনগত অনুমোদন নিয়ে যৌনপর্যটনে বেরোয়। জানা মতে, আমেরিকা ছাড়া তালিকার অন্যান্য দেশগুলির বেশির ভাগেই পতিতাবৃত্তি একটি আইনসম্মত কার্যক্রম। ((http://en.wikipedia.org/wiki/Sex_tourism))
এসব পর্যটকের অধিকাংশেরই ঝোঁক থাকে শিশুর প্রতি, যদিও অধিকাংশ দেশেই শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহার করা আইনসম্মত নয়। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা যৌনপর্যটন ও শিশু যৌনপর্যটনকে আলাদা করে দেখে। সংস্থার মতে, যেসব পর্যটক শিশুদেরকে যৌনকাজে ব্যবহার করে তাঁরা কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড এবং অপশনাল প্রটোকল অন দ্য সেল অব চিলড্রেন, চাইল্ড প্রস্টিটিউশন অ্যান্ড চাইল্ড পর্নোগ্রাফি লংঘন করে। অনেক দেশই ওরস্ট ফর্ম অব চাইল্ড লেবর কনভেনশন, ১৯৯৯-এ স্বাক্ষর করেছে এবং নিজেদের দেশে সেটা বাস্তবায়ন করছে। সিঙ্গাপুরের এরকম কোনো আইন নেই বলে তারা ইতোমধ্যে অনেক নিন্দা অর্জন করেছে। ইন্দোনেশিয়ার বাটামও ওরকম একটি গন্তব্য, যেখানে প্রচুর পরিমাণে কমবয়েসি শিশুকে যৌনকাজে ব্যবহারের জন্যে পাওয়া যায়।
১১.
ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, ১৯৯৮ ইস্যুতে মুদ্রিত একটি প্রবন্ধে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডের যৌনবাণিজ্যে কী পরিমাণ অর্থাগম ঘটে তার কিছু পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। ওই প্রবন্ধে স্বীকার করা হয় যে, যৌনখাত একটি অর্থনৈতিক খাত হিসেবে অফিসিয়াল পরিসংখ্যান, উন্নয়ন পরিকল্পনা বা সরকারের বাজেটে এখনো স্বীকৃত নয়। কিন্তু এ খাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন ঘটে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌনখাতে এই চারটি দেশে প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ নারী যুক্ত আছেন তা পেশাটি অনৈতিক ও গোপন হওয়ার কারণে বলা একেবারেই মুশকিল। তবে ধরে নেয়া যায়, দেশসমূহের মোট নারী জনগোষ্ঠীর ০.২৫ থেকে ১.৫ শতাংশ এ পেশায় যুক্ত। ১৯৯৩-’৯৪ এ তৈরি একটি হিসেব অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় যৌনকর্মীর সংখ্যা দেখানো হয় ১৪০,০০০ থেকে ২৩০,০০০ জন। মালয়েশিয়ায় এই সংখ্যা ৪৩,০০০ থেকে ১৪২,০০০ জন, তবে আইএলওর মতে সে সংখ্যা আরো বেশি। ফিলিপাইনে যৌনকর্মীর সংখ্যা জানানো হয় ১০০,০০০ থেকে ৬০০,০০০ জন, তবে ৫০০,০০০ হওয়ার ব্যাপারে অনেকেই একমত বলে জানানো হয়। থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৭-এ করা জরিপ অনুযায়ী যৌনকর্মীর সংখ্যা দেখানো হয় ৬৫,০০০, কিন্তু আনঅফিসিয়াল সূত্র দাবি করে এ সংখ্যা ২০০,০০০ থেকে ৩০০,০০০ জন। এর বাইরে থাই এবং ফিলিপিনো আরো ১০ হাজার নারী, শিশু এবং হিজড়া যৌনকর্মী বিদেশে কর্মরত আছে।
বলা হয়, যৌনতাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিনোদনমূলক স্থাপনা এবং যৌনপর্যটনের সঙ্গে যুক্ত মালিক, ব্যবস্থাপক, দালাল, সহযোগী, ক্যাশিয়ার, নিরাপত্তারক্ষী এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে আরো কয়েক মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবনধারণ করে থাকে। প্রতিবেদনটি বলছে, এই চারটি দেশের জিডিপির ২ থেকে ১৪ শতাংশই আসে যৌনখাত থেকে। সরকারি কর্তৃপক্ষ বৈধ-অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ করও আদায় করে থাকে সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো থেকে। থাইল্যান্ডের শহরে যৌনকর্মে রত গ্রামীণ নারীরা বছরে তাঁদের উপার্জন থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গ্রামে তাঁদের পরিবারের কাছে পাঠান। ১৯৯৩-’৯৪ মেয়াদে দেশগুলো যৌনকর্ম বাবদ বছরে ২২.৫ থেকে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে।
এই চারটি দেশে পরিচালিত জরিপ তথ্য সাক্ষ্য দেয় যে, নিরক্ষর ও অদক্ষ মেয়েদের পক্ষে যেসব কাজ করা সম্ভব তার মধ্যে যৌনকর্মই সবচেয়ে বেশি অর্থাগম ঘটায়। যেমন মালয়েশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে কাজ করে ১৯৯০-এ একজন দক্ষশ্রমিক বছরে উপার্জন করত ২৮৫২ আমেরিকান ডলার এবং অদক্ষ করত ১৭১১ ডলার। বিপরীতে সে সময়ের হিসেবে কোনো নিম্নমানের হোটেলে যৌনপরিষেবা দিয়ে একজন যৌনকর্মী সপ্তাহে মাত্র একদিন বারো ঘণ্টা কাজ করেই বছরে আয় করতে পারত ২০৮০ ডলার। ((Sex as a sector: Economic incentives and hardships fuel growth, The Sex Sector: The economic and social bases of prostitution in Southeast Asia edited by Lin Lean Lim, International Labour Office, Geneva, 1998.))
১২.
ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে হওয়া সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় আফ্রিকার দরিদ্র দেশ কেনিয়ায় শিশু পতিতাবৃত্তির এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশটির উপকূলীয় এলাকায় যৌনপর্যটন চালু থাকায় সেখানকার অজস্র শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মেয়েশিশু দেশটির মালিন্দি, মোম্বাসা, কালিফি এবং দিয়ানি উপকূলীয় এলাকায় বাস করে, যারা মাঝে মাঝেই অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্ম করে। এছাড়াও ২ থেকে ৩ হাজার শিশু ছেলেমেয়ে অর্থের বিনিময়ে সার্বক্ষণিক যৌনপরিষেবা দিয়ে থাকে। উপকূলীয় যৌনপেশায় কর্মরতদের ৪৫ শতাংশই আসে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে, যারা পূর্বেই এ কাজে হাতেখড়ি নিয়ে নেয়। অধিকাংশই আগে নিজেদের এলাকার বারে এ কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ও প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়, সাজুগুজু করার জিনিসপাতি ও চুলের স্টাইল আধুনিকায়ন করবার জন্য অর্থ উপার্জন করে তারপর পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য আসে। এখানে শিশুদের মধ্যে যৌনকর্মের প্রাদুর্ভাব এমনই বেড়ে গেছে যে, প্রতি দশজন শিশুর একজন এ কাজে যুক্ত হয় তাদের বয়স বারোয় পৌঁছার আগেই। চরম দারিদ্র্যের কারণে কেনিয়ায় এখন এটি সামাজিকভাবেও অনেকাংশে স্বীকৃতি পাচ্ছে। শিশুদের একটা অংশ সাধারণত সেসব পরিবার থেকে আসে যেসব পরিবারে উপাজনক্ষম কেউ নেই, অথবা কম উপার্জন করে কিংবা সেসব শিশু যাদের বাবা মা উভয়েই প্রয়াত হয়েছেন। তবে আগতদের ৫০ শতাংশের মা-বাবাই কর্মজীবী এবং তারা স্কুলেও যায়, তবে তারা চায় হাতখরচের জন্য বাড়তি কিছু টাকা। অবশ্য এরা সতর্ক থাকে যাতে সমাজের বয়েসি কেউ বিষয়টি টের না-পেয়ে যায়। সূত্র জানায়, কেনিয়ার সৈকতে শিশু যৌনপর্যটনে আগতদের ১৮ শতাংশ ইতালিয়ান, ১৪ শতাংশ জার্মান এবং ১২ শতাংশ সুইস। এরপরেই আছেন উগান্ডান, তাঞ্জানিয়ান, ব্রিটিশ এবং সৌদি আরবীয়রা। তবে দেশের ভিতরেও এই শিশুদের গ্রাহক প্রচুর। পর্যটকদের আগমন যে সময়ে কম হয় বা একেবারেই হয় না, তখনো এই শিশুরা একেবারে কর্মহীন থাকে না। ((Extent and Effect of Sex Tourism and Sexual Exploitation of Children on the Kenyan Coast, UNICEF, EMBARGOED, 19 DEC.2006, KENYA))
১৩.
যৌনপর্যটন ও শিশু যৌনপর্যটনের এই ভয়াবহতার পাশাপাশি নারী ও শিশুদেহের বাণিজ্যিক ব্যবহারের আরেক ভয়াবহ রূপ পর্নোগ্রাফি। এর চর্চা আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে গোটা পৃথিবীব্যাপী মহামারীর রূপ পরিগ্রহ করেছে। এ খাতটিরও অর্থনৈতিক বাজার অনেক বড়ো, অর্থাৎ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। বিশ্বখ্যাত নারীবাদী নেত্রী ও আইনজীবী ক্যাথরিন ম্যাককিননের মতে, পর্নোগ্রাফি শিল্প হিসেবে হলিউডের চেয়ে অনেক বড়ো। স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যার দ্রুত বিস্তার ঘটেছে।
বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফির উৎপাদন হার ব্যাপক নয়, তবে এর ভোক্তার পরিমাণ অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে কম নয়। প্রতিদিনই চোরাইপথে হাজার হাজার পর্নো সিডি-ডিভিডি, পত্রিকা দেশের ভিতরে ঢুকছে এবং পৌঁছবার পরে সেগুলো থেকে পুনরুৎপাদন হচ্ছে হাজার হাজার কপি। পুনরুৎপাদিত এসব সিডি-ডিভিডি প্রতিনিই পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন বয়েসি মানুষের কাছে ঘরে ঘরে। পর্নো সিডি-ডিভিডির দর্শকদের মধ্যে নারীরাও আছেন, তবে তার হার খুবই কম। এসবের প্রধান সমঝদার মূলত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-যুবক ও কর্মজীবী পৌঢ়রা। সরকার চাইলে এর আমদানি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। কিন্তু দেশের ভেতরে ইতোমধ্যেই যে পরিমাণ পর্নো পৌঁছে গেছে, তা দিয়ে আরো পঞ্চাশ বছর রীতিমতো ব্যবসা করে যেতে পারবে এর সঙ্গে যুক্তরা। তাছাড়া বাইরে থেকে আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেও দেশের ভেতরে পর্নোগ্রাফির প্রবেশ আর কিছুতেই রোধ করা যাবে না। কারণ এখন ঘরে ঘরেই স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেট কানেকশন। সুতরাং পর্নোগ্রাফির স্বাদ নিতে চাইলে যে গ্রাহকদের সবসময় বাইরে থেকে পর্নো সিডি-ডিভিডি-পত্রিকা কিনতেই হবে, তার কোনো মানেই আর অবশিষ্ট নেই। উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরে ঘরে ইন্টারনেট কানেকশন এখন আর বিস্ময়কর কিছু না। চাইলেই তারা সেক্স সাইট ব্রাউজ করতে পারছে, ডাউনলোড করে নিতে পারছে যেকোনো পরিমাণ পর্নো ফুটেজ। যাদের ঘরে সে সুবিধে নেই তাদের জন্য রয়েছে অলিতেগলিতে গজিয়ে ওঠা সাইবার ক্যাফে। এক ঘণ্টা ব্রাউজ করবার জন্য ক্যাফেগুলোতে চার্জ নেয়া হয় মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং এর বিনিময়ে একটিমাত্র ক্লিকেই পৌঁছে যাওয়া যায় যৌনতার নরকে। কেউ তা দেখবার-বলবার নেই সেখানে। ব্রাউজারদের জন্য সবরকম আড়ালেরই সেখানে বন্দোবস্ত করা আছে। সুতরাং এ নিয়ে আমাদের বিশেষভাবে ভাবিত হবার আছে। কারণ এটা একটা প্রমাণিত সত্য যে পর্নোগ্রাফি ধর্ষণকে ইন্ধন দেয়। কীভাবে ? তার জবাব ম্যাককিনন দিয়েছেন এভাবে যে, পর্নোগ্রাফি সাধারণ মানুষকে ধর্ষণের মিথকে বিশ্বাস করতে সাহায্য করে। যদি কোনো নারী বলেন, তিনি যৌনসম্পর্কের সময় সম্মতি দেন নি তাহলে মানুষের কল্পলোকে পর্নোগ্রাফি ধর্ষণের মিথ হিসেবে কাজ করে। তারা মনে করে মুখে যাই বলুক না কেন মেয়েটি আসলে সম্মত ছিল। এ বিবেচনায় মেয়েটি ‘না’ বললেও ধরে নেয়া হয় সে ‘হ্যাঁ’ বলেছে। এ ধরনের মিথ নারীর বিরুদ্ধে পুরুষকে আরো আগ্রাসী হতে সাহায্য করে। পুরুষকে পর্নোগ্রাফির গ্রাহক হয়ে উঠতে সাহায্য করে। ((‘আর উওমেন হিউম্যান ?’, ফাহমিদা আখতার, রোকেয়া কবীর সম্পাদিত নারী ও প্রগতি, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, জুলাই-ডিসেম্বর ২০০৫।))
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২ comments
রায়হান রশিদ - ৭ মে ২০০৯ (২:৩১ অপরাহ্ণ)
অত্যন্ত পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার সাথে দাঁড় করানো এই লেখাটির জন্য মুজিব মেহদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা। সেই সাথে কিছুটা বিস্ময় এবং অপরাধবোধ – এটি নিয়ে মুক্তাঙ্গনে কারো কিছু বলবার নেই দেখে। অপরাধবোধ নিজেরও, বিভিন্ন ব্যস্ততার অজুহাতে এই আলোচনা থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য। এই লেখাটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে যে বিষয়গুলো, দেখা যাক সেগুলোর কয়েকটাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায় কিনা:
১) যৌনতা, অবদমনের সংস্কৃতি এবং আমাদের সমাজ;
২) যৌন শ্রমের সাথে জড়ানো নৈতিক রায়প্রদানের সংস্কৃতি। আমাদের প্রচলিত নৈতিকতার মাঝে আজম্ম গড়ে ওঠা মাপকাঠির সাথে একে জড়ানো কতটা উচিত?
৩) যৌন শ্রমের সাথে আর সব শ্রমের মিল এবং অমিল কোথায়? জীবিকার অধিকার এবং আর দশ ধরণের পেশার সাথে একে তুলনা করার সুবিধে অসুবিধেগুলো কি?
৪) যৌন সেবার সাথে অন্য সেবা সেক্টরের পার্থক্য কি? আছি কি কিছু?
৫) নারীবাদীরা কি বলেন?
৬) যৌনতা নিয়ে আমাদের সমাজে নৈতিক-পুলিশী কিছুটা বেশীই হচ্ছে কি?
৭) রাষ্ট্রের কি ভূমিকা হওয়া উচিত নীতি নির্ধারণে? আদৌ কি কোন ভূমিকা থাকা উচিত?
৮) যৌনতাকে এবং যৌনশ্রমকে আলাদাভাবে দেখার প্রবণতার সাথে পূঁজি থেকে উদ্ভুত মালিকানার ধারণা (বা অন্য কোন গোঁড়ামীর) কোন যোগাযোগ রয়েছে?
সবাইকে এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
মোহাম্মদ মুনিম - ৩০ আগস্ট ২০০৯ (৭:২৭ পূর্বাহ্ণ)
মুজিব মেহদীকে অনেক ধন্যবাদ এই পরিশ্রমী লেখাটির জন্য। বিশ্বায়নের ফলে পশ্চিমা বিশ্ব সফলভাবে যৌনবৃত্তিকে এশিয়া এবং আফ্রিকাতে ‘outsource’ করেছে। Wikipedia তে দেখলাম পশ্চিমা বিশ্বের পুরুষ পর্যটকদের (যারা আফ্রিকা এবং এশিয়াতে ভ্রমন করেছেন) ৭৫ ভাগই প্রকৃতপক্ষে যৌন পর্যটক। কিছুদিন আগে একটি রেডিও প্রোগ্রামে শুনেছিলাম, থাইল্যান্ডের শিশু যৌনশিল্পে বার্মা এবুং কম্বোডিয়ার দরিদ্র অঞ্চল হতে ব্যাপক হারে শিশুদের আগমন ঘটছে। এদের অধিকাংশ খদ্দেরই উন্নত বিশ্ব হতে আগত যৌন পর্যটক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো তাঁদের দেশের নাগরিকদের অন্য দেশে গিয়ে শিশুদের যৌনকার্যে ব্যবহার করার বিষয়ে আইন জারী করলেও আইনগূলোর তেমন প্রয়োগ হচ্ছে না।
যৌনবৃত্তির বৈধ এবং অবৈধকরন নিয়েও বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ন নিষিদ্ধ (নেভাদা বাদে) আর নিউজ়িল্যান্ডে সম্পূর্ন বৈধ। এর মাঝখানে আবার কিছু মধ্যপন্থা আছে, যুক্তরাজ্যে যেমন বেশ্যাবৃত্তি বৈধ, কিন্তু বেশ্যালয় চালানো অবৈধ। নরওয়েতে বেশ্যাবৃত্তি অবৈধ হলেও যৌনকর্মীদের শাস্তির বিধান নেই, শাস্তির বিধান আছে খদ্দের এবং দালালদের। যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ন নিষিদ্ধ হলেও কালোবাজারে বেশ্যাবৃত্তি প্রচলিত। এর ফলে কোন যৌনকর্মী খদ্দের দ্বারা প্রহার বা লুন্ঠনের শিকার হলে তাঁর আইনের আশ্র্য় নেবার কোন উপায় থাকে না। এই বিষয়ে একটি গবেষনা প্রবন্ধের লিঙ্ক এখানে।
কয়েক বছর আগে “Or” একটি ইসরায়েলী চলচ্চিত্র দেখেছিলাম। চলচ্চিত্রটির মুখ্য চরিত্র একজন যৌনকর্মী এবং তাঁর কিশোরী কন্যা। ডকুমেণ্টারি ধাঁচের এই ছবিটি এই বিষয়ে যারা ভাবেন, তাঁদের দেখতে অনুরোধ করছি।