বাহাত্তরের ফেব্রুয়ারি ও বঙ্গবন্ধু

শেখ ওঁদের অভ্যর্থনা জানিয়ে বসালেন। এক এক করে পরিচয়ের পালা। সন্তোষদা বললেন, আমার বাড়ি ফরিদপুরের রাজবাড়ি। প্রবোধ সান্যাল বললেন, আমার বাড়ি ফরিদপুরে ছিল। নীরেন চক্রবর্তীও বললেন, আমার বাড়ি ছিল ফরিদপুর। শেখ বললেন, আমার বাড়ি কোথায় জানেন? বাংলাদেশে। [...]

১৯৭২ সাল। স্বাধীন দেশের প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ছাত্রলীগের আমন্ত্রণে ঢাকা এসেছেন কলকাতার সাহিত্যিক-সঙ্গীতশিল্পী-চলচ্চিত্রকার-সাংবাদিকগণ। এই সারস্বত পরিভ্রমণের একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন সাংবাদিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মাসিক উল্টোরথ (বর্ষ ২১, সংখ্যা ১, চৈত্র, ১৮৯৪ শকাব্দ, মার্চ, ১৯৭২) পত্রিকায় ‘ঢাকার ডায়েরি’ (আখ্যাপত্রে অবশ্য ‘ঢাকা ডায়েরি’ মুদ্রিত) শিরোনামে। একই সংখ্যায় চলচ্চিত্রসাংবাদিক বিমল চক্রবর্তীও লিখেছেন ‘ঢাকা থেকে লিখছি’ নামে চিঠির আঙ্গিকে আরেকটি প্রতিবেদন; অসমাপ্ত এই প্রতিবেদনে স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশের চলচ্চিত্রজগতের খানিকটা পরিচয় দিয়ে শেষাংশে তিনি লিখেছেন:

বিকাশদা, আজ একুশে ফেব্রুয়ারী, মনের আবেগে কত কথাই তো এই চিঠিতে লিখে চলেছি। কলম আমার কিছুতেই থামতে চাইছে না।

আজ আবার এই ঢাকায় বসেই স্বনামধন্য সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তাও আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ধানমুণ্ডির বাসভবনে। সত্যজিৎবাবুর সঙ্গে আরো অনেকে এলেন। শহীদ দিবসে ঢাকার ছাত্রলীগ যাঁদের নিয়ন্ত্রিত [নিমন্ত্রিত?] করে এনেছিলেন তাঁরা প্রত্যেকে। নিয়ন্ত্রিতদের মধ্যে শুধু একজন ঢাকায় আসতে পারেন নি। তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। নির্ধারিত এই তারিখে কলকাতায় তার পারিবারিক কাজ ছিল বলে আসতে পারেন নি। আর সবাই এসেছেন। শ্যামল মিত্র, অমল মুখার্জী, সুমিত্রা মুখার্জী, বরুণ বক্সী ও আমাদের টুলু দাস। ওদের সঙ্গে করে নিয়ে এলেন ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সেলিম আবার বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে, এই তথ্য বঙ্গবন্ধুকে সেলিমের সম্বোধন থেকেই বুঝলাম―‘মামা, গান শুনবেন?’

শেখ সাহেবের সরল স্বীকারোক্তি, ‘কেন শুনব না? গানই যদি না শুনতে ইচ্ছে করে তবে তো আমি ইয়াহিয়া খান হয়ে যাব।’

একটুখানি হাসির গুঞ্জরণ। একে একে প্রত্যেকে একটি করে গান শোনালেন বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধু সবার প্রশংসাতেই সমান পঞ্চমুখ। শ্যামল মিত্রকেই দেখলাম সবচেয়ে বেশী কথা বলতে। সত্যজিৎবাবু একরকম চুপচাপই ছিলেন। ফটোগ্রাফার টুলু দাস সত্যজিৎবাবুর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলাদা ছবি তুলতে চাইলেন। শেখসাহেব জবাব দিলেন, ‘আলাদা কেন, সবাই আসুন, গ্রুপ ছবি তুলি।’

তারপর চায়ের পালা। বঙ্গবন্ধু নিজের হাতে সকলকে চা পরিবেশন করলেন। চায়ের আসরে ছাত্রলীগ সদস্য ও বাংলাদেশের নামী কণ্ঠশিল্পী অ্যাপেল মামুদ শেখসাহেবকে বললেন, ‘জানেন, পশ্চিম বাংলার এঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ন’মাস আমাদের জন্যে অনেক করেছেন।’

শেখসাহেব সোজাসুজি জবাব দিলেন, ‘আমি সব জানি। ওরা তোমাদের জন্যে যা করেছে সেই ঋণ তোমরা পিঠের চামড়া দিয়েও শোধ করতে পারবে না।’

শুনে অবাক হলাম। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এই পরিমাণ সরল স্বীকারোক্তি আমরা ভারতীয়রা ভাবতে পারি কি?

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লেখাতেও ফেব্রুয়ারির হিমার্দ্র ঢাকা-পদ্মার বিবরণের পাশাপাশি মূলত কাছ-থেকে-দেখা বঙ্গবন্ধুরই সারল্যময় মুখচ্ছবি ফুটে উঠেছে; আবেগে যা কম্পমান, কখনও-বা পরিহাসরঙিন। পুরো লেখাটিই ‘মুক্তাঙ্গন’-এর পাঠকদের জন্য তুলে দিচ্ছি এখানে। ছবিগুলো পূর্বোক্ত মাসিক উল্টোরথসিনেমা জগৎ (বর্ষ ১৮, সংখ্যা ১২, ফাল্গুন, ১৮৯৩ শকাব্দ, মার্চ, ১৯৭২) পত্রিকা থেকে সংগৃহীত।

ঢাকার ডায়েরি

Image-01

২১শে ফেব্রুয়ারি

আমি আপনাদের সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আপাতত ঢাকায় আছি। এসেছি একুশে ফেব্রুয়ারি। বোয়িং-এ কলকাতা থেকে ঢাকা ২৫ মিনিটের পথ। কিন্তু তার জন্য যে হুজ্জোতি পোহাতে হয় তাতে লণ্ডন চলে যাওয়া যায়। এই ধরুন না, প্লেন প্রতিদিনই লেট। এয়ারপোর্টে বসে বসে হরিমটর জপ করতে হয়। আমাদের আসার দিন প্লেন ৩/৪ ঘণ্টা লেটে ছাড়ল। আমার বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যাচ্ছিলেন শ্রীসত্যজিৎ রায়। এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখি তিনি বসে আছেন বেলা ন’টা থেকে। প্লেন ছাড়ল সাড়ে বারোটায়। সত্যজিৎবাবুকে জিজ্ঞাসা করায় বললেন, না মশায় আমায় তো কেউ বলেনি যে লেট হবে।

১২৫৲ টাকা ভাড়া। তাও আবার মাল ২৫ কেজির একটু বেশি হলেই নগদ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে। দুটো ফর্ম সই করতে হবে। ১৫৲ টাকার স্ট্যাম্প কিনতে হবে। কাস্টমস চেকিংয়ের পর পুলিস দেহ-তল্লাশী করবে। তারপর ছাড়া পাওয়া।

প্লেনে উঠে অখাদ্য এক গেলাস অরেঞ্জ স্কোয়াশ মুখে ঠেকাতে না ঠেকাতেই দেখলাম পদ্মা পার হচ্ছি। সামনের সিটে সত্যজিৎবাবু ঋত্বিকবাবু বসে। ঋত্বিকবাবু বলছেন, মশায় আমার বাড়ি ঢাকায়। আমি সব চিনি।

Image-02

ঋত্বিক ঘটক সত্যজিৎবাবুকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করেন। ওঁদের কথা শুনছিলাম। ঋত্বিকবাবু বলছিলেন, পাবলিকের নগদ বিদায় হাততালি নিয়ে কী হবে সত্যজিৎবাবু। এমন কিছু করুন যা সত্যিকারের সৎ ও মহৎ। সত্যজিৎবাবু অন্যমনস্ক হয়ে মাঝে মাঝে কী সব ভাবছিলেন। পঁচিশ মিনিটের মধ্যেই ঢাকা। সত্যজিৎবাবুর জন্য ফুল নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে। আমার জন্য গাড়ি নিয়ে এসেছেন এক ভদ্রলোক। এয়ারপোর্টে একটা ফর্ম সই করতে হল। সঙ্গে কত টাকা এনেছি তার ঘোষণা।

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, শুনলাম কাল সারা রাত লোকে জেগেছে। শহীদ মিনার লোকে লোকারণ্য হয়েছে। এখন ঘুমোচ্ছে শহর। লোকজন বেশি পথে নেই।

পথে যেতে যেতে কয়েকটি তোরণ চোখে পড়ল। গত যুদ্ধে ঢাকার যে সব মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছে, তাদের সম্মানার্থে তৈরি হয়েছে তোরণ। পথের মোড়ে মোড়ে ভাষা-আন্দোলনের সুন্দর সুন্দর স্মারক।

অফিসে এসে সুখরঞ্জনের সঙ্গে দেখা হল। বিকেলবেলা গেলাম শেখসাহেবের বাড়িতে। আগে যেটি ছিল প্রেসিডেন্ট হাউস এখন সেটি শেখসাহেবের সরকারী বাসভবন। বাংলো প্যাটার্নের একতলা বাড়ি। সুন্দর লন। বাড়িটা হল রমণা গ্রীনে। এ জায়গাটিতে এলে অনেকটা নিউদিল্লীর মত মনে হয়।

শেখসাহেবের ঘরে ঢুকে দেখি সত্যজিৎ রায় বসে আছেন। আর গান গাইছেন দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায় আর শ্যামল মিত্র। গানের পর বেশ মজা হল। একটি মেয়ে গান গাইল। কে একজন পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বলল, শেখসাহেব, এ হল বাংলাদেশের মেয়ে। শেখ হাসতে হাসতে বললেন, তাহলে ওরা কোথাকার? হাসির রোল উঠল। যে বলেছিল সে বেচারা তো লজ্জায় একেবারে চুপ।

গানের পর শেখ চা খেতে ডাকলেন। চা খাওয়ার সময় আমি এগিয়ে গিয়ে পরিচয় দিলাম। বললাম, আমি কিছুদিন এখানে আছি। মাঝে মাঝে দেখা হবে।

শেখ বললেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই হবে।

সন্ধ্যার পর ভাবলাম পল্টন ময়দানের সভায় যাব।

কলকাতার শিল্পী-সাহিত্যিকরা এসেছেন। তাঁদের নিয়ে জনসভা। পরে বিচিত্রানুষ্ঠান। কিন্তু লোকের ভিড়ে এগুতে পারলাম না। প্রায় লাখ খানেক লোকের ভিড় সেখানে। চলে এলাম।

২২শে ফেব্রুয়ারি

আজ বিকেলে আবার শেখ-সন্দর্শন। বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতি শেখের সঙ্গে কলকাতার সাহিত্যিকদের এক সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেছিলেন।

শেখ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সেদিন প্রবোধ সান্যাল, মনোজ বসু, সন্তোষ ঘোষ, নীরেন চক্রবর্তী, দক্ষিণারঞ্জন বসু প্রমুখেরা।

শেখ ওঁদের অভ্যর্থনা জানিয়ে বসালেন। এক এক করে পরিচয়ের পালা। সন্তোষদা বললেন, আমার বাড়ি ফরিদপুরের রাজবাড়ি। প্রবোধ সান্যাল বললেন, আমার বাড়ি ফরিদপুরে ছিল। নীরেন চক্রবর্তীও বললেন, আমার বাড়ি ছিল ফরিদপুর। শেখ বললেন, আমার বাড়ি কোথায় জানেন? বাংলাদেশে।

সবাই অপ্রস্তুত।

Image-03

শেখ বললেন, আমার জীবনের বড় স্বপ্ন ছিল বাঙালীকে জাতি তৈরি করা। আমার সে স্বপ্ন সার্থক হয়েছে, বাঙালী আজ জাতি হয়েছে।

প্রবোধবাবু বললেন, আপনি জেলখানায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর অপেক্ষা করেছেন। শেখ বললেন, আমার কিন্তু তাতে ঘুমের ব্যাঘাত হয় নি। আমি বিছানায় শোবার সঙ্গে সঙ্গে ঘমিয়ে পড়তাম। জানতামই তো মৃত্যু নিকটে। তাই আর চিন্তা করে কী হবে। শেখ একটু থেমে বাংলাদেশের ক’জনের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা বোধহয় ভেবেছিলে আমি আর ফিরব না?

একজন বললেন, না শেখসাহেব, সকলে কিন্তু তা ভাবিনি।

শেখসাহেব বললেন, না, তোমরা ভেবেছিলে। আমি জানি।

শেখ বললেন, আমি দেখেছিলাম, সংগ্রাম করতেই হবে। ২৫শে মার্চ তাই আমি অর্ডার দিয়ে দিয়েছিলাম তোমরা অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়। যখন খবর পেলাম ওরা আমাদের টেলিফোন লাইন কেটে দেবে, তার আগেই আমি মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম চট্টগ্রামে। রাত বারোটার মধ্যে সে খবর গিয়ে পৌঁছল থানায় থানায়।

শেখের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের এই বিবরণ টেলিভিশনে ধরে রাখা হল।

২৬শে ফেব্রুয়ারি

শেখ মুজিবর রহমানকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। আজ গিয়েছিলাম পাবনার নগরবাড়িতে শেখের একটি সভা কভার করতে। রাত চারটের সময় উঠে বেরুতে হল। শেখের ইনফরমেশন অফিসার গাড়ি নিয়ে এসেছেন।

হোটেল থেকে আমি ও স্টেটসম্যানের মানস ঘোষ বার হলাম। প্রেস ক্লাবে এসে হাজির হলাম। সেখানে অত ভোরেও চায়ের ব্যবস্থা ছিল। দেখি আর সব স্থানীয় সাংবাদিকরা এসে গেছেন। পাঁচটা নাগাত আমাদের বাস ছাড়ল।

বেশ শীত শীত করছে। রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। আমরা হাইওয়ে ধরে এগিয়ে চললাম। আড়িচা যেতে গেলে প্রথমে দুটো ছোট ফেরি পার হতে হয়। তারপর পদ্মা। একটি ছোট ফেরি নাম যার তারাঘাট সেখানে এসে খেজুরের রস খেলাম।

এরপর আড়িচা ঘাট। সামনে পদ্মা। এখন আর প্রমত্তা নয়। দেখে মনে হয় এক কাকচক্ষু সরোবর। একদিকে পদ্মা চলে গেছে কুষ্ঠিয়া-রাজশাহী। ভাগীরথীর সঙ্গে মিশেছে সেখানে। আর একদিকে মিশেছে মেঘনার সঙ্গে। গতবারে আসার সময় দেখে এসেছি সেই সঙ্গম। বিশাল পারাপারহীন সমুদ্রের মত।

আমাদের বিশেষ স্টীমার তৈরি ছিল। ব্যবস্থা করেছিলেন ওয়াবদা। বাংলায় যাকে বলা হয় পানি ও বিদ্যুৎ-পর্ষৎ। কারণ তাঁরা একটি প্রজেক্টের কাজ হাতে নিয়েছেন। নাম পাবনা প্রজেক্ট। বন্যা-নিয়ন্ত্রণই এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য। বিশ্ব-ব্যাঙ্ক এই প্রজেক্টের কাজে সাহায্য করবেন ঠিক করেছিলেন। কাজও আরম্ভ হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-যুদ্ধের জন্য কাজ স্থগিত রাখা হয়।

পদ্মার শোভা দেখতে দেখতে চলেছি। অনেক কাল আগে এই পদ্মার বুকের ওপর বজরা ভাসিয়ে দিনের পর দিন ঘুরেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ। এই তো কিছুদূর গেলেই পড়বে শাজাদপুর। আরও এগুলে কুঠিবাড়ি শিলাইদহ।

ঘণ্টা দুয়েক পরে আমরা এসে নামলাম নগরবাড়িতে। সেখান থেকে পদ্মার তীরে বালুর ওপর দিয়ে হাঁটতে হল। রাস্তা তৈরি হচ্ছে। গাড়ি আসতে পারে না ঘাট পর্যন্ত। বেশ গরম লাগছে এখন, বালিতে পা ডুবে যাচ্ছে। মাইলখানেক আসার পর দেখলাম একটি বাস রয়েছে। সেটিতে উঠে আরও মাইল খানেক যেতে হল।

মাইল দুয়েক দূরে সভার স্থান। অন্তত লাখখানেক লোক জড় হয়েছে সেখানে। বেলা এগারোটা বাজে। চড়চড়ে রোদ। তা উপেক্ষা করে জড় হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

আমরা গিয়ে মঞ্চে বসলাম। একটু পরে হেলিকপ্টার এল। সভার মধ্যেই নামল হেলিকপ্টার। আর সঙ্গে সঙ্গে বন্যার জলের মত হাজার হাজার মানুষ ব্যারিকেড ভেঙে শেখসাহেবের কাছে এগিয়ে এল। শেখ তাঁদের ধমক দিলেন। কেউ শুনল না। তারপর শেখ নিজেই ভিড়ের মধ্যে গিয়ে ভিড়-নিয়ন্ত্রণের কাজে লেগে গেলেন। একটু পরে কোদাল দিয়ে মাটি কাটলেন শেখ। বাঁধ তৈরির কাজের শুভ-সূচনা হল।

Image-04

এবার মঞ্চে উঠে শেখ বললেন, আপনারা যদি চুপ করে না শোনেন তাহলে আমি চলে যাব। এতে ফল হল। জনতা চুপ করে গেল। তারপর শেখ বক্তৃতা করতে আরম্ভ করলেন। বললেন সহজ সরল গ্রাম্য মানুষের ভাষায়। মানুষের হৃদয়ে গিয়ে সে ভাষা স্পর্শ করে। কখনও তিনি ক্রুদ্ধ, কখনও অশ্রুসজল, আবার কখনও পরিহাস-তরল।

এমনভাবে সাধারণ মানুষের ভাষায় একজন কথা বলতে পারতেন বলে শুনেছি। তিনি ফজলুল হক।

মুয়িন পারভেজ

জন্ম চট্টগ্রামে। লিখে সময় কাটি, পড়ে জোড়া লাগিয়ে দিই আবার। ভালোবাসি মেঘবৃষ্টিজ্যোৎস্না আর ঝরনাকলম। প্রকাশিত কাব্য : ‘মর্গে ও নিসর্গে’ (ঐতিহ্য, ২০১১)।

৬ comments

  1. মোহাম্মদ মুনিম - ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

    এই দুর্লভ লেখাটি এবং ছবিগুলো প্রকাশ করার জন্য মুয়িন পারভেজকে ধন্যবাদ।

    • মুয়িন পারভেজ - ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (১২:৪২ পূর্বাহ্ণ)

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও, মুনিম ভাই।

  2. মাহতাব - ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (২:০৬ অপরাহ্ণ)

    মন ভরে গেল।শেখ বললেন, আমার বাড়ি কোথায় জানেন? বাংলাদেশে।

  3. রায়হান রশিদ - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ)

    অনেক ধন্যবাদ মুয়িন। দুর্লভ কিছু দলিল আর অজানা কিছু তথ্য পেলাম।

  4. Pingback: বাহাত্তরের ফেব্রুয়ারি ও বঙ্গবন্ধু » বাংলাদেশী শীর্ষ কমিউনিটি নিউজ পোর্টাল

  5. মাসুদ করিম - ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ (৩:২১ অপরাহ্ণ)

    Satyajit Roy’s memorable speech at Dhaka

    I have been hearing about “Shaheed Dibosh” for a long time, about February 21. But if I had not come here and seen it for myself, I couldn’t have understood how much you love the Bangla language. I realised how much you respect those, who laid down their lives to save Bangla when it faced great danger.

    We who live in West Bengal also love the Bangla language. It’s true that the culture of West Bengal has got a mixed form as it has been influenced by a number of other cultures. We haven’t been able to get rid of the English influence as yet. Perhaps one of the reasons for this is that West Bengal is just one province of India. But that doesn’t mean that we don’t love Bangla. Bangla literature songs, Bangla films, theatre — all these are still alive in West Bengal. We still love Rabindranath, Nazrul, Bankim Chandra, and Sarat Chandra.
    Personally, I have been making Bangla films for twenty years now. During this time I got many requests from many places to leave Bangla and make films in other languages in other countries. But I have rejected those offers over and over again. I know that the language which runs in my blood is the Bangla language. I know that if I leave this language and try to do something in any other, then I will have no ground under my feet I will not find any base as an artist; I will lose all my spirit and energy.

    I have heard from my childhood that East Bengal is my home. Perhaps some of you have heard about my grandfather, Upendra Kishore Roy– I did not have the good fortune of meeting him, but I read his children’s story books about “Tun Tuni” and loved them. Songs written by him gave me a taste of eastern Bangla folk songs. I had never been to this country, never been to my home, and never been here permanently: but whenever I heard these songs and fairy tales, I felt a deep connection with this country. I came to Dhaka once when I was five or six years old. I stayed here for only 2-3 days. My uncle lived in Wari, Rankin Street– I don’t know if that house and that street still exists or not. I don’t remember that house. I only remember that there were a lot of monkeys– don’t know if they still exist. I remember travelling on a steamer through the Padma. As I awoke early in the morning, my Ma pointed out the sun rising over the Padma. She also showed me how the two colours of Padma and Jamuna were different and could be seen easily when they mingled. From then on, I had thought many times that it would be great to visit my home. But that hope kept receding particularly after the partition. Suddenly, the wheels of history seemed to turn, the door of my home opened and today, on the “Shaheed Dibosh”, standing in front of you all, my dream is being partly fulfilled. I have come here leaving many important things. That’s why! I cannot stay for long. But I still hope that I will come back here in the future. I will observe this country closely. I want to meet the people not in a public meeting but face-to-face and I still hope for that. I don’t want to say anything more. There will be songs. I already know that you know about my work and want to know more. A few years ago my film Mahanagar was shown here. The interest of the people, their curiosity and the result of these — when I first heard, I did not believe them. But then, many known and unknown friends wrote to me, sent me paper-cuttings about the incidents to make me believe them. Then, I believed them and was stunned by all those happenings. I couldn’t imagine that this could happen. For an artist, a greater honour or a greater pride cannot be imagined.

    In the last twenty years, I have been honoured by many people in many countries. But today, standing in the holy hour of Shaheed Dibosh, I can confidently say that the respect and honour given to me today, has surpassed all the others of the past. I have never received a greater honour and I don’t think that I will ever receive any — Joy Bangla!

    (On February 21, 1972, the first Shaheed Dibosh of Bangladesh, Chhatra League arranged a public meeting at Paltan maidan. Famous singer Shamyal Mitra rendered the opening song. Renowned film maker Satyajit Roy addressed the meeting as the chief guest. I [Tabibul Islam (babu)President, Natyajan Drama Group, Actor & Director] recorded that in my small tape recorder. Later on I presented a copy of the recorded cassette to Satyajit Roy at his Kolkata residence. I am delighted to publish after 43 years English version of that speech for the readers of The Daily Star. It has been translated by Professor Tahmina Ahmed to Dhaka University.)

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.