উল্টোরথ পত্রিকার একটি নিয়মিত বিভাগ ছিল অমিতাভ বসুর ‘দৈনন্দিন জীবনে’; প্রতি সংখ্যায় একজন সাহিত্যিকের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাজানো হতো এই বিভাগ। প্রশ্নগুলো পরিকল্পিত বা ছকবাঁধা থাকলেও উত্তরগুলো উপভোগ্য হয়ে উঠত ব্যক্তিবৈচিত্র্যের কারণেই। ১৮৯৩ শকাব্দের মাঘ সংখ্যায় (বর্ষ ২০, সংখ্যা ১১, জানুয়ারি, ১৯৭২) ছাপা হয় শিবরাম চক্রবর্তীর (১৯০৩–১৯৮০) সাক্ষাৎকার। অল্প কথার উত্তরেও চাপা থাকেনি সুরসিক শিবরামের আত্মপরিহাসপ্রিয়তা, যাঁর আহারনিদ্রার ধরনও পাঁচজন লেখকের চেয়ে আলাদা :
রিকসাওয়ালা যেমন রিক্সা না টানলে খেতে পাবে না, আমারও প্রায় সেই দশা। লেখকদের ভেতর আমি এক মজুর, মেহনতি মানুষদের একজন। মোট নামিয়ে পয়সা কুড়নো, মোটের উপর আমার উপায়, মোটামোটি বলতে গেলে। লিখি আমি পরের দিন, কেননা আমি ভালই জানি, পরের দিন কোন লেখাই আমার টিকবে না।
লেখকের প্রয়াণদিবস (২৮ আগস্ট) উপলক্ষে সাক্ষাৎকারটি এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো। শুনুন হর্ষবর্ধন-স্রষ্টা শিবরামের ‘অশ্বভাবিক’ কথাবার্তা।
দৈনন্দিন জীবনে সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী
সেটা ছিল অঙ্কের ক্লাস। আর এই অঙ্ক সাবজেক্টটা আমার কোনদিনই ভাল লাগতো না―সেই ছোটবেলা থেকে। তাই অঙ্কের ক্লাস এলেই আমি আমার ক্লেশ দূর করতে অন্য কিছুতে মনোনিবেশের চেষ্টা করতাম। আর সেদিনও সেই অঙ্কের ক্লাসেই সোজা ব্যাক-বেঞ্চে আত্মগোপন করে কিছু করছিলাম। আমার সামনের লম্বা ছেলেটা কখন যেন উঠে গিয়েছিল। তাতে পরিষ্কার আমি মাস্টারমশয়ের নজরে পড়ে গেলাম। তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন―ইউ বয়।
আমি চমকে সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম―‘ইয়েস স্যার।’
মাস্টারমশয় তেমনি রাগত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন―‘হাতে কি?’
বললাম―‘মালাই বরফ স্যার।’
আমার কথা শুনে তিনি আরো চটে গেলেন―রসিকতা হচ্ছে? হাতে দেখছি একটা বই আর বলছো কিনা মালাই বরফ। মিথ্যে কথা বলা! এদিকে এস।
সোজা চলে এলাম। মাস্টারমশয় আমার হাত থেকে বইখানা সজোরে টেনে নিলেন। আর দেখলেন সত্যিই মালাই বরফ। বইখানার নাম। এবারে হয়তো তিনি একটু অপ্রস্তুত হলেন। কারণ দেখলেন আমি মিথ্যে কিছু বলিনি। অন্যদিক দিয়ে তাই আক্রমণ করলেন―ক্লাসে বসে গল্পের বই পড়া! যাও, পেছনে গিয়ে ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাক।
আমি চলে এলাম। তিনি বইখানা রেখে দিলেন। অবশ্য সেদিন আমাকে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হয়নি। একটু বাদেই মাস্টারমশয় বললেন―‘বোস। বসে ক্লাসের কাজ কর।’
তাহলে মালাই বরফেই বুঝি মাস্টারমশয় গলে গিয়েছিলেন। কারণ, দেখেছিলাম তিনি নিজেই তখন বইটার অনেকটা পড়ে ফেলেছেন। আর এই হল আমার শিবরাম-পাঠের প্রথম অভিজ্ঞতা। তখন কিন্তু আমি ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। এবং সেই থেকে শিবরাম আমার প্রিয়। তাঁর শুঁড়ওলা বাবা, পঞ্চাননের অশ্বমেধ, বা আমার ভালুক শিকার সেই কবে আমার কাকার (রবি বসু) আলমারী থেকে চুপি চুপি নিয়ে পড়ার ফাঁকে পড়েছি। সে সব গল্প এখনও কত পরিষ্কার মনে আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এর কোন বইখানাই এখন বাজারে পাওয়া যায় না। এমনি আরো অনেক বই শিবরামের আজ বাজারে নেই।
আমরা বাঙালী। আমাদের একটা সুনাম আছে রসিক বলে। এবং কেবল মাত্র রসিক নয়, হাস্যরসিক। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসের লেখকের সংখ্যা নিশ্চয়ই বেশি নয়। অবশ্য দু-একটি হাসির গল্প সব লেখকই হয়তো লেখেন। কিন্তু যথার্থভাবে হাস্যরসের লেখক বাংলা সাহিত্যে রীতিমত কম। কবিদের কথা বাদ দিলে―বীরবল, রবীন্দ্রনাথ (তিনি একাধারে সব ছিলেন, আছেন ও থাকবেন), কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পরশুরাম, দীপ্তেন সান্যাল, পরিমল গোস্বামী―তারপরে শিবরাম ছাড়া আর নাম কোথায়? অবশ্য হ্যাঁ, অজিতকৃষ্ণ বসু, হিমানীশ গোস্বামীর নামও এখানে উল্লেখ করতে হয়। তাহলেও একক বৈশিষ্ট্যে রসসাহিত্য সৃষ্টিতে শিবরাম আজ অদ্বিতীয়। এবং বীরবলের সময় থেকে আজ পর্যন্তের বিচারেও শিবরাম রীতিমত বৈচিত্র্যময়। স্বরাজ্যে তিনি যেন সম্রাট।
অনেকে বলেন, বাংলার মার্কটোয়েন শিবরাম। কিন্তু আমি বলব, বাংলার শিবরামে ইংরেজ মার্কটোয়েন অনেকখানি উপস্থিত থেকেও শিবরাম কিছু বেশি। তা বলে আমি বলছি না―মার্কটোয়েন ঘরে আলমারি থাকতেও বইগুলো সব বিছানায় ছড়িয়ে রাখতেন, আর শিবরামের ঘরে একটা ভাঙা আলমারি থাকলেও বইয়ের কোন গন্ধও নেই। তার নিজের বইয়ের খোঁজে তাকে কোন সাহিত্যিক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে সে বই পেতে হয়। আর সেই জন্যেই শিবরাম মার্কটোয়েন থেকে আলাদা। তা নয়। মার্কটোয়েন থেকে শিবরাম নিজস্ব রচনার প্রসাদগুণে আলাদা। জেলে মার্কটোয়েন আগে এসেছেন তাই শিবরামকে তার পেছনে থাকতে হচ্ছে। এ হয়তো সানুজের প্রতি অনুজের শ্রদ্ধাজনিত বিনয় মাত্র। নয়তো হাস্যরসিক শিবরামের রচনার পরিচিতি বোধ সে এক আশ্চর্য বস্তু। সে যেন রবীন্দ্রনাথের সেই কথা―মাস্টারমশয় চেয়ার নিয়ে রসিকতা করা হয়তো চলে, কিন্তু তিনি যদি চেয়ার ভেঙে সত্যিকার পড়ে যান―তা হলে তখন কিন্তু আর হাস্যরস থাকে না। আর শিবরামের কোন মাস্টারমশয় তেমন কোন করুণ রসে যান নি, যেখানে শিবরাম বিরাট সচেতন। বরং শিবরাম চক্রবর্তীর কোন কোন লেখায় জীবন দর্শন (ঈশ্বর, পৃথিবী, ভালবাস) এবং অনায়াস উদার বুদ্ধিদীপ্ত বিষয়বস্তুর উদ্ভাবন রীতিমত বিস্ময়য়কর। তাই হয়তো শিবনারায়ণ রায় রূপদর্শীকে লেখা তাঁর খোলা চিঠির এক জায়গায় বলছেন―বাংলা দেশের যে সব ভাবকে এবং সাহিত্যিককে আমরা দুজনে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা করেছি―উনিশ শতকে বিদ্যাসাগর, অক্ষয় দত্ত, মাইকেল, তার পরে রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, নজরুল এবং আমাদের অগ্রজদের মধ্যে ‘তারুণ্য’, ‘প্রকৃতির পরিহাস’ এবং ‘পুতুল নিয়ে খেলার’ অন্নদাশঙ্কর, ‘মস্কো বনাম পণ্ডিচেরী’র শিবরাম, রাজশেখর বসু, সুধীন্দ্রনাথ এবং মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়―তাঁদের চরিত্রে ও চিন্তায় র্যাডিক্যালিজ্ম্-এর লক্ষণ স্পষ্ট।
এই শিবরাম চক্রবর্তীর কাছে সেদিন সকালে উপস্থিত হলাম―দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ রচনার প্রশ্নগুলি নিয়ে উল্টোরথের পক্ষ থেকে। যথারীতি আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল―সকালে আপনি কখন ওঠেন? শিবরামবাবু হেসে বললেন―সেটা সময়-সাপেক্ষ। ঘুম ভাঙলেই ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু রাতভোর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এমন ক্লান্ত হয়ে পড়ি যে সেই ক্লান্তি দূর করতেই আবার একটুখানি ঘুমিয়ে নিতে হয়। এমনি করে করে যখন না উঠে পারা যায় না, খুব খারাপ দেখায়, তখন বাধ্য হয়েই বিছানা ছাড়তে হয়।
সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করলাম―সারাদিনে লেখেন কখন? বললেন―লিখতে ইচ্ছে করে না আমার একেবারেই―রাতেই কি আর দিনেই কি। নেহাত না লিখলে নয়, অন্ন জুটবে না, তাই প্রাণের দায়ে, হ্যাঁ, লিখে নাও (কোন মহৎ প্রেরণার বশে নয়) লিখতে হয়। রিকসাওয়ালা যেমন রিক্সা না টানলে খেতে পাবে না, আমারও প্রায় সেই দশা। লেখকদের ভেতর আমি এক মজুর, মেহনতি মানুষদের একজন। মোট নামিয়ে পয়সা কুড়নো, মোটের উপর আমার উপায়, মোটামোটি বলতে গেলে। লিখি আমি পরের দিন, কেননা আমি ভালই জানি, পরের দিন কোন লেখাই আমার টিকবে না।
বললাম, কোন মন্তব্য করব না। কারণ আপনার সব কথাই কি মেনে নিতে পারছি? বরং বলুন আমার আর একটি প্রশ্নের উত্তর―লেখার জন্যে সামনে খোলা জানালা, মাঠ, ফুল, নীরবতা বা শোরগোল এর কোনটার কি আপনার প্রয়োজন হয়?
শিবরাম জবাব দিলেন―এর কোনটারই খুব একটা প্রয়োজন নয়, তবে শান্তির দরকার। সে তো সর্বদাই―কী লেখার সময়, কী ঘুমোনোর কালে। তাছাড়া কাগজ-কলমেরও দরকার বইকি। বিশেষ করে নীলাভ (নাকি, সবুজাভ?) কঙ্কোয়েস্ট্ কাগজ না হলে আমার চলে না―যেহেতু প্রথম বয়স থেকেই দেখে আসছি লেখা ছাপানো এক মারামারি ব্যাপার। সম্পাদককে সহজে কাবু করা যায় না। রীতিমত কঙ্কোয়েস্ট করতে হয়।
এবারে আমি প্রশ্ন করলাম―লেখার কি কোন নির্দিষ্ট আসন আছে?
―হ্যাঁ, আমার বিছানা। শুয়ে, বসে, গড়িয়ে আয়েস করে লিখতে হলে বিছানার মতন আর হয় না।
বললাম, বেশ ভাল বলেছেন। আচ্ছা, দৈনিক কি কিছু পড়াশুনো করেন? এবং পড়লে কি ধরনের বই পড়েন―গল্প, উপন্যাস কবিতা বা প্রবন্ধের বই। দেশী বই বেশি পড়েন না বিদেশী বই? দেশী বা বিদেশী কোন লেখকের বই বেশি পড়েন?
সাহিত্যিক বললেন―পড়াশোনার কোন পাট নেই আমার। সেই ছেলেবেলার থেকেই লেখাপড়ায় অনীহা। পড়ে কি হয়? লিখতে গেলে পড়া হয় না। পড়তে গেলে লেখা মাথায় ওঠে। আমি আশা করি, যাঁরা বদ্ধপরিকর লেখক হতে চান অবশ্যই তাঁরা পড়বেন। বিদ্যার্জনের বেলায় যেমন আগে লেখা (যদিও স্লেট-পেনসিলে) পরে পড়া, সত্যিকারের লেখক হতে হলে তেমনি আগে পড়া, দস্তুরমত পড়া, তার পরেই ওই কলম ধরা। কিন্তু আমার কথা আলাদা। আমি তো সত্যিকারের লেখক নই। হতেও চাইনি। এবং হতেও চাই না কোনদিন।
এবারে জিজ্ঞাসা করলাম―আচ্ছা যেদিন কোন পত্র-পত্রিকাতে আপনার কোন লেখা বেরোয় সেদিনটা কি অন্য দিন থেকে একটু আলাদা মনে হয়―অন্ততঃ মানসিক দিক থেকে? যদি হয়, তাহলে কি ধরনের অনুভূতি মনের মধ্যে কাজ করে একটু বলবেন কি?
―একটু আনন্দ হয় বইকি! আশা হয় যে এবার দক্ষিণাটা পাওয়া যাবে―যে কারণেই আমার লেখাটা। অবিশ্যি আনন্দটা পুরো হয় দক্ষিণার টাকাটা হাতে এলেই।
এর পর আমার প্রশ্ন ছিল, লেখার বাইরে সারাদিন আর কি কাজ করেন? ছবি আঁকা, গানবাজনা, বাগান করা―এর কিছু?
সোজা বললেন―সময় পেলে (এবং পয়সা থাকলে) সিনেমা দেখি। কেননা সুন্দরী মেয়ে ঐ ছায়াছবিতেই যা দেখা যায়। অবশ্যি রাস্তায় ঘুরলেও চোখে পড়ে, কিন্তু প্রথম বয়সের মত এখন আর ঘোরাঘুরিতে উৎসাহ হয় না। গানের ধারে-কাছে যাই না। বাগানে যাওয়ার বাধা নেই; কিন্তু কলকাতায় বাগান কোথায়? না, নিজে বাগান করি না।
প্রশ্ন করলাম―দৈনন্দিন জীবনে কি ধরনের লোকের সঙ্গে মেলা-মেশা করেন?
―সবার সঙ্গে। যাকে পাই তারই সঙ্গে মিশি।
―বাড়ির কোন কাজ আপনি করেন কি? যেমন ধরুন রেশন, দোকান হাট-বাজার, বা বাড়ির ছেলে-মেয়েদের পড়ানো বা ঘর সাজানো?
হেসে বললেন―বাড়িই নেই আমার তো বাড়ির কাজ। তাছাড়া ছেলেদের (যদিও পরের ছেলে) লিখিয়ে-পড়িয়ে মানুষ করার চেষ্টা করে দেখেছি যে তারা মানুষ হতে চায় না, কিছুতেই হবার নয়। তখন এই ভেবে সান্ত্বনা পেয়েছি যে ভাগ্যিস আমার নিজের ছেলেপিলে নেই, তাহলে এই সাময়িক ভোগান্তি সারা জীবন ধরে পোহাতে হত। যে সব ছেলে মানুষ হয় তারা নিজগুণেই হয়ে থাকে, আর যারা খারাপ হয়ে যায় তারা সঙ্গী আর বন্ধুদের দৌলতেই হয়ে থাকে। আর মেয়েদের মানুষ করতে হয় না। তারাই মানুষ করে। ছেলে মানুষ করাই তাদের স্বাভাবিক কাজ। যে সব ছেলে ছোটবেলার থেকেই মেয়ের সঙ্গ পায় তারা ঠিক মানুষ হয়ে যায়। অন্ততঃ পুরুষ মানুষ তো বটেই। মেয়েলী ছেলেদের মতন গায়ে-পড়া হয়ে কখনো কারো যন্ত্রণার কারণ হয় না।
এর পর আমার প্রশ্ন ছিল―প্রতিদিনই আপনার কাছে কেউ না কেউ কিছু নিতে আসেন―যেমন লেখা, বাণী, সার্টিফিকেট বা সভাপতিত্বের প্রতিশ্রুতি। অথচ আপনি এদের কাছ থেকে কি কিচ্ছু নেন না? যেমন ধরুন আপনার কোন কাহিনীর চরিত্র বা কোন চরিত্রের পরিণতি, উপাদান?
শিবরাম বললেন, এর উত্তরে বলব কোন দিনই কেউ আমার কাছে আসে না। আসবে কেন? সভা-টভায় যাই না কখনো―যেতে ভাল লাগে না। ওর জন্যে যোগ্যতা চাই। অন্ততঃ বাক্শক্তি আর কর্ণপটাহের―যা আমার নেই। যে-সব অবশ্যকর্তব্য কাজ, যেখানে লৌকিকতা রক্ষার দায়, না গেলে নিতান্তই অশোভন দেখায়, ইচ্ছা সত্ত্বেও সময়াভাবে এবং শারীরিক অসুস্থতার দরুণ (উচ্চ রক্তচাপের হেতু) ডাক্তারের মানার জন্যে যাওয়া হয়ে ওঠে না। বিড়ম্বিত হতে হয়।
শিবরাম চক্রবর্তী থামলেন। আমি আবার প্রশ্ন করি―মনে করুন, কাজের পথে রাস্তায় আপনি কোন প্রসেশানের জন্যে জ্যামে পড়ে আপনার গাড়িতে বসে, বা বাসে-ট্রামে বসে কেবল ঘামছেন আর ছটফট করছেন। অথচ এই প্রসেশান যারা বের করেছেন তাদের আপনি চাঁদা দেন। কিন্তু এই সময় আপনার মানসিক প্রতিক্রিয়া কেমন হয় একটু বলবেন?
―বেশ মজা লাগে। কারণ আমার কোন কাজই প্রায় থাকে না। গাড়ি তো নেই। বরং একবার টিকিট কেটে বাসে-ট্রামে অনেকক্ষণ জায়গা দখল করে বসা যায়।
―এবারে বলুন তো, রাত্রে আপনি কখন শোন?
―ঘুম পেলেই। শোবার আবার সময় আছে? রাত্রেই যে শুতে হবে তার কি মানে? সেটাই যদিও দস্তুর। তা হলেও সকালে, দুপুরে, বিকেলে ঘুমোবার বাধা কী?
―আচ্ছা, আর একটি মাত্র প্রশ্ন। দৈনন্দিন জীবনে সাক্ষাৎকারের এই পরিকল্পনা ও প্রশ্নগুলো আপনার কেমন লাগল? আর এই আমাকে কেমন লাগল?
―দারুণ! দারুণ! প্রচণ্ড ভাল!
মুয়িন পারভেজ
জন্ম চট্টগ্রামে। লিখে সময় কাটি, পড়ে জোড়া লাগিয়ে দিই আবার। ভালোবাসি মেঘবৃষ্টিজ্যোৎস্না আর ঝরনাকলম। প্রকাশিত কাব্য : ‘মর্গে ও নিসর্গে’ (ঐতিহ্য, ২০১১)।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১২ comments
মাসুদ করিম - ২৯ আগস্ট ২০১৪ (১২:২৫ অপরাহ্ণ)
শিবরাম চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি আপনার সাক্ষাৎও যে পাওয়া গেল! নিয়মিত সাক্ষাৎ আশা করছি আপনার।
মুয়িন পারভেজ - ৩০ আগস্ট ২০১৪ (৩:০৯ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ, মাসুদ ভাই।
রায়হান রশিদ - ৩১ আগস্ট ২০১৪ (৫:৪৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ ভাইয়ের প্রতিধ্বনি করছি।
মুয়িন পারভেজ - ৩০ আগস্ট ২০১৪ (৩:০৪ অপরাহ্ণ)
বনফুল, মনোজ বসু, সন্তোষকুমার ঘোষেরও সাক্ষাৎকার পেয়েছি। এই সাক্ষাৎকারগুলো নিয়ে অমিতাভ বসু পরে বই বের করেছিলেন কি না জানি না, কেউ জানালে খুশি হব।
mahtab - ৩১ আগস্ট ২০১৪ (৪:৫৫ অপরাহ্ণ)
আর মেয়েদের মানুষ করতে হয় না। তারাই মানুষ করে।দারুন একটা লেখা।লেখককে ধন্যবাদ।
নীড় সন্ধানী - ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (২:৩৮ অপরাহ্ণ)
শিবরামের লেখা কৈশোর থেকে প্রিয় ছিল। বুড়ো হবার পর সেদিন আবার সমগ্রটা কিনলাম। কিন্তু সাক্ষাতকার পড়লাম এই প্রথম। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আরাফ - ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ (৩:৩৬ অপরাহ্ণ)
এই প্রথম শিবরাম চক্রবর্তীর সাক্ষাতকার পড়লাম। খুব রসিক মানুষ ছিলেন। লেখাগুলোর মতোই সাক্ষাতকারো সরস।
নবারুণ ঘোষাল - ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ (১১:২৪ পূর্বাহ্ণ)
মনে হল আকাশের ইন্টারভিউ পড়ছি। নির্মল আকাশ। বিরাট। অনন্ত। তাকে প্রশ্ন করলে এরকমই উত্তর পাওয়া যাবে। আমাদের মতন গন্ডীবদ্ধ মানুষের উত্তরের থেকে যা আলাদা। অকপট উত্তর। কোনও রাখঢাক নেই। কোনও প্রত্যাশাও নেই, কোনও উপদেশও নেই। আছে শুধু নির্মল আনন্দ। সাহিত্যের এই মহাকাশকে প্রণাম জানাই।
তপন কুমার পালিত - ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ (৪:১০ অপরাহ্ণ)
দারুণ।্ধন্যবাদ দাদা। অনেক দিন পরে আজ……।
দেবাশীষ দাশগুপ্ত - ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ (১২:১৪ পূর্বাহ্ণ)
ভাল লাগল। এই রকম আরো চাই। ধন্যবাদ।
মুয়িন পারভেজ - ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ (৮:৫৪ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ সবাইকে পাঠােত্তর মন্তব্যের জন্য। শিবরামের অন্য কােনও সাক্ষাৎকার অামারও পড়া হয়নি।
কৌশিক ব্যানার্জী - ৩১ মে ২০১৫ (১:৩৪ অপরাহ্ণ)
আমি শিবরাম চক্রবর্তী মহাশয়ের সম্বন্ধে খুঁজতে গিয়ে আপনার এই মূল্যবান লেখাটি পেলাম । আমি ওনার সম্বন্ধে একটি গ্রুপ খুলেছি । সেখানে এই ব্লগের লিঙ্ক দিতে পারি কি ?