কবিবন্ধু ফুয়াদ হাসানের ফোন পেলাম রবিবার (৫ জুলাই ২০০৯) দুপুরে, যদিও আগের দিনই খবরটা পেয়েছিলাম সুমন ভাইয়ের (রেজাউল করিম সুমন) কাছে। পত্রিকায় জানলাম, আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২–২০০৯) মারা গেলেন শুক্রবার রাতে। কিন্তু দেরিতে হলেও ফুয়াদের ফোনালাপে প্রচ্ছন্ন ছিল এক স্মৃতিপ্রাসঙ্গিকতা। বহুদিন আগে, যখন আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একসঙ্গে পড়েছিলাম ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ। এ-বইয়ের ‘দুই আফসোস’ কবিতাটি আমাদের দুজনকেই আক্রান্ত করেছিল শরব্যঞ্জনায়। পরে অনেকবার চিরকুট দিয়েও বইটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আজাদের লেখার সঙ্গে আমি আকৈশোর পরিচিত, বলা যায়, তিনি ছিলেন আমার প্রথম সাহিত্যনায়ক। নবম শ্রেণিতে, ১৯৯২-এ, পাঠ্যবাংলার কবিতাসঙ্কলনে ‘আমার মা’কে যখন’ নামের একটি সম্মোহক দীর্ঘকবিতা ছিল তাঁর। দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য এই : কবিতাটি পরীক্ষার পাঠ্যসূচির বাইরেই পড়ে ছিল সারাবছর। আমার এতই প্রিয় ছিল যে পাঠোচ্ছ্বাসে মুখস্থ হতে দেরি হয়নি। প্রথম স্তবক মনে আছে এখনও :
আমার মা’কে যখন মনে পড়ে চলতি বাসের ভিড়ে জানালায়
তাকাই করুণ আমি, রডধরা সহযাত্রীর হাতের যত ঘাম
লাগে গালে ঝাঁকুনির তালে তালে এবং যদিও খুব নিরুপায়
গরম নিঃশ্বাসে চাপে দেখি দূরে হলুদ-সবুজ বন, কালোজাম
থোকা থোকা ধরে আছে আলগোছে ঠোকর মারে কাকেরা, উড়ে যায়
ডাল থেকে ডালে, বসে কি যে খুশি দুপুররোদেও ডাকে অবিশ্রাম।
আমি মুগ্ধ শিশু, চোখে এক হ্রদ বিস্ময়ের ঝিকিমিকি, মহাকায়
বটগাছ খেলা করে বাতাসের স্রোতে―হাতে পাখি নীলকণ্ঠ নাম
তখন ছন্দের কোনও ধারণাই ছিল না; পরে বুঝলাম, কবিতাটির গায়ে বোলানো হয়েছে অক্ষরবৃত্তের সোনারুপোর কাঠি, যা উতল গাঙের বুকেও এনে দিতে পারে নিঝুম অরণ্যের ঘুম। এ-ও দেখলাম, অষ্টাক্ষর পর্বকে মাঝেমধ্যেই ৩+২+৩ মাত্রার বিরলকর্ষিত বিলে চালিয়ে নিয়েছেন কবি অবলীলায়। অন্তর্মিলে ও অন্ত্যমিলে বহমান এক স্মৃতিকাতরতা মুগ্ধ করে রেখেছিল আমার কিশোরহৃদয় এবং এখনও ভিড়েলা বাসে কোথাও যেতে যেতে যেন ‘গালে লাগে’ ‘রডধরা সহযাত্রীর হাতের যত ঘাম’।
২
কিন্তু কবিতা নয়, উপন্যাসের সূত্রেই আজাদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়, আমার এক খালাতো ভাই দুটি বই নিয়ে এসেছিলেন বাসায়। একটি পারস্য উপন্যাস, অন্যটি আজাদের শীতের শেষ রাত বসন্তের প্রথম দিন। বইদুটি ছিল মায়ের দখলে―দূর থেকে দেখতাম বিড়ালের কারুণ্য নিয়ে। আমার অভিশাপে মায়ের চোখে ঘুম নেমে আসত দুপুরে, তখন একটু-একটু পড়ার সুযোগ পেতাম। ছাপাবাঁধাই চমৎকার দুই বইয়েরই, তবে আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল আজাদের উপন্যাসটি। এক মহিলা অনুপম ভঙ্গিতে হাত তুলে বসে আছেন নীলাভ শূন্যতায়। কাইয়ুম চৌধুরীর প্রচ্ছদ। বইটির পরবর্তী সংস্করণে পরিত্যক্ত হয়েছে এই মায়াবী প্রচ্ছদ, কাগজের মানও অক্ষত থাকেনি। নবসংস্করণ যে সর্বদা উত্তরণের সিঁড়ি নয়, এটিই তার প্রমাণ।
মনস্তাত্ত্বিক এই উপন্যাসে, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি-হওয়া বিলকিস ধীরে ধীরে বোনের ছেলে কামালের প্রতি কামাসক্ত হয়ে ওঠেন―এটুকু বললে মোটাদাগে অবিচার করা হবে। অনেক ছায়ারোদ্দুরের সূক্ষ্ম আলপনা এঁকেছেন লেখক বিশ্বস্ত রঙে-রেখায়। প্রথম ছোট বাক্যটিতেই উপ্ত রয়েছে যেন সমস্ত গল্পের বীজ :
কুয়াশা জমে না; কিন্তু পশ্চিম আকাশে কুয়াশার মতো একটা ধোঁয়াটে আবরণ ফ্যাকাশে করে তোলে গোধূলির রং।
বিলকিসের মনোবেদনায় সিক্ত হতে হতে আমি খুঁজতাম অনেক পরিচিত মহিলার মুখে বিলকিসেরই প্রতিবিম্ব―তবে কি এই, এত প্রাচুর্য বা আপাতফুল্লতার পাপড়িতেও থাকে লুকিয়ে নিঃসঙ্গতার কীট?
আজাদের যে-উপন্যাসটি আমি প্রথম স্বাধীনভাবে, এমনকী বাবার হাতে কিনিয়ে নিয়ে পড়েছিলাম, সেটি কর্ণফুলী, সঙ্গে শহীদুল্লা কায়সারের সারেং বৌ। কায়সারের উপন্যাসটির সম্পূর্ণপাঠে আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছিল, কিন্তু কর্ণফুলী পড়েছিলাম একবার, দু-বার―বিচ্ছিন্নভাবে বহুবার। বিশেষত এর পরিবেশবর্ণনা এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ও চাকমা ভাষা শ্রুতিশ্রীতে ব্যবহার করার অনন্য কৌশল মুগ্ধ করেছিল আমাকে।
ইস্কুলে পড়ার সময়েই, আমাদের বাংলার শিক্ষক প্রয়াত সাহিত্যিক-গবেষক চৌধুরী আহমদ ছফার প্রণোদনায় আজাদ সম্পর্কে আরও আগ্রহী হয়ে উঠি। তাঁর ছেলে প্রাবন্ধিক শাকিল আহমদ তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ছেন, আজাদের কথাসাহিত্য নিয়ে শাকিল ভাইয়ের প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল দৈনিক পূর্বকোণ-এ। স্যার নিজেও আজাদের ছোটগল্প ‘হেড মিসট্রেস’-এর নাট্যরূপ দিয়ে বেতারে প্রচারের জন্য গল্পকারের অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন। আজাদ সানন্দে সম্মতি জানিয়ে পাঠিয়েছিলেন একটি শুভেচ্ছাপত্র। আমার এ-কথাটুকুই শুধু মনে আছে, আজাদ লিখেছিলেন : ‘সংস্কৃতি মানুষের দ্বিতীয় প্রকৃতি’। একদিন, অষ্টম শ্রেণির ভূগোলের পরীক্ষা দিচ্ছি, আমার চোখ বারবার চলে যাচ্ছে বারান্দায় পায়চারিরত স্যারের তর্জনীবন্দি বইয়ের মলাটের দিকে―আজাদেরই একটি উপন্যাস!
১৯৯৩-এ বিচিত্রা-র ইদ সংখ্যায় আবৃত্তিবিষয়ক একটি প্রবন্ধ মুদ্রিত হয়েছিল আজাদের, ‘আবৃত্তির শিল্পতত্ত্ব’ নামে। লেখাটি শুরু হচ্ছে এভাবে : ‘আবৃত্তির শিল্পতত্ত্ব, আমার ব্যক্তিত বিবেচনায়, এক অনাগত সম্ভাবনা’… শিল্পতত্ত্বই যার ‘অনাগত’, তার বায়বীয় কাঠামোকে আজাদ ধরতে চেয়েছেন কিছু ভাষ্যদীপ্র রেখাচিত্রের সাহায্যে―ব্যাপারটি অভিনব মনে হয়েছিল আমার, বক্তব্যের চেয়ে বাগ্বিন্যাসই ছিল বেশি আকর্ষক। বহুচর্চিত বিশেষণ ‘ব্যক্তিগত’-এর পরিবর্তে যে ‘ব্যক্তিত’ও লেখা যায়, প্রথম শিখলাম। এ-প্রবন্ধ আমাকে প্রলুব্ধ করেছিল দেশাত্মবোধক গান নিয়ে একটি অক্ষম গদ্যচেষ্টায়।
৩
ওই বছরেই (১৯৯৩) আজাদকে প্রথম সশরীরে দেখার সুযোগ ঘটেছিল। এসএসসি-উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে গিয়েছিলাম ভর্তিসংক্রান্ত কাজে। অক্টোবরের বৃষ্টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ঢুকতেই দেখলাম ‘র্যাগ ডে’ নামের মহোৎসব চলছে। তরুণ-তরুণীরা বর্ণাঢ্য বেশে মেতে আছে গানে, বাদ্যে, আড্ডায়, যেন পুষ্পকরথে হঠাৎ উড়ে এসে পৌঁছেছি এলডোরাডোয়―কস্মিনকালেও এখানে ছাত্রসংঘর্ষ ছিল না, ঘটেনি কোনও রক্তপাত। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। অর্থনীতির অধ্যাপক মইনুল ইসলামের বিশ্লেষণময় বক্তৃতার শেষে আজাদ উঠে দাঁড়ালেন। হালকা গড়নের ঋজু শরীর, মাথাভর্তি বাহারি চুল, চোখে দীঘল নীলিমা; সহাস্যে হাত নেড়ে প্রথমেই বললেন, ‘তিনি (মইনুল ইসলাম) আমার সব বক্তব্য লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছেন!’ আজাদের বক্তৃতা ছিল সংক্ষিপ্ত কিন্তু সরস, সমাপ্তি প্রায় এরকম : ‘এত অপ্রাপ্তি-অসন্তোষের মধ্যেও তরুণদের হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই, তারুণ্যের শক্তিই পারে সব বাধা জয় করতে।’ এমন অভয়বাণী বোধহয় সেই চিরকালের ‘মুগ্ধ শিশু’র পক্ষেই উচ্চারণ করা সম্ভব, যাঁর চোখে ‘এক হ্রদ বিস্ময়ের ঝিকিমিকি’…
মুয়িন পারভেজ
জন্ম চট্টগ্রামে। লিখে সময় কাটি, পড়ে জোড়া লাগিয়ে দিই আবার। ভালোবাসি মেঘবৃষ্টিজ্যোৎস্না আর ঝরনাকলম। প্রকাশিত কাব্য : ‘মর্গে ও নিসর্গে’ (ঐতিহ্য, ২০১১)।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৩ comments
সাইদুল ইসলাম - ২৫ আগস্ট ২০০৯ (৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
“আমার মাকে যখন” হ্যাঁ, মুয়িন, মনে পড়ছে সব, সিলেবাসে না থাকলেও এ কবিতাটি উচ্চস্বরে পাঠ করতাম, মায়ের ক্লান্ত মুখখানা শব্দগুলোর ফাঁক দিয়ে উঁকি দিত। তখনো তোর সাথে পরিচয় হয়নি, আজাদের কবিতা সঙ্গে ছিল। তারপর “তেইশ নম্বর তৈলিচত্র”, ছোটগল্প ‘বৃষ্টি’ পড়ে মনে সে কী তোলপাড় তখন!একটা পর্যায়ে এসে সেভাবে অার টানল না। তাতে কী!। অামাদের কৈশোর তো কেটেছে তাদের হাত ধরেই!
মাহতাব - ২৫ আগস্ট ২০০৯ (৭:৩৫ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ মুয়িন।উনার তেইশ নম্বর তৈল চিত্র ,কর্ণফুলী ,কিছু ছোটগল্প এবং দু চারটি কবিতা পড়েছি ।উনার লেখা আমারও ভাল লাগে।
আহমাদ মাযহার - ২৭ আগস্ট ২০০৯ (৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
ভালো লাগল লেখাটা। আন্তরিক উপলব্ধির ছবি ফুটে উঠেছে। আলাউদ্দিন আল আজাদ রাজনৈতিক ক্ষমতার সংলগ্নতার কারণে প্রকৃত মূল্য পান নি। এতটা উপেক্ষা পাবার মতো লেখক তিনি মোটেও নন।
মোঃ সাহাবুদ্দীন এ,এম (রিপন) হাওলাদার - ২৭ আগস্ট ২০০৯ (১০:০৬ পূর্বাহ্ণ)
অনেক ভাল লাগল আপনার লেখাটি পড়ে। আপনার উদ্দেশ্য সফল হোক। ভাল থাকবেন।
রেজাউল করিম সুমন - ২৮ আগস্ট ২০০৯ (২:০৩ অপরাহ্ণ)
যাঁর একটা সনেট-সংকলনের জন্য একদিন হন্যে হয়ে খুঁজেছিলাম প্রকাশকের আস্তানা, সেই কবিকেই পরে একা একা হেঁটে যেতে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে, দিনের পর দিন, কিন্তু কখনোই কথা বলার ইচ্ছে হয়নি!
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই জেনেছিলাম আমাদের পাশেই বাংলা বিভাগে পড়ান ‘স্মৃতির মিনার’ ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’-র লেখক অধ্যাপক আলাউদ্দিন আল আজাদ। পঞ্চাশ-ষাট দশকের প্রগতিশীল এই লেখক তাঁর অবস্থান থেকে ক্রমেই সরে এসেছিলেন বোধহয়। তাঁর নতুন কোনো লেখাকে ঘিরে আলোচনা হতেও শুনিনি। আর বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের শুরুতেই আমরা শুনেছিলাম, এরশাদের সময়ে তাঁর না কি ইচ্ছে হয়েছিল উপাচার্য হবেন! কথাটা সত্যি না রটনা, তলিয়ে দেখিনি।
কেবল একবারই কথা হয়েছিল আলাউদ্দিন আল আজাদের সঙ্গে, তাঁর অগ্রজ বন্ধু ও আমাদের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের পাঠানো কোনো একটা খবর পৌঁছে দিতে গিয়ে। তাঁর কোনো কোনো লেখার ব্যাপারে আমাদের মুগ্ধতার কথা তাঁকে জানানো হয়নি সেদিন। … এখন ভাবলে একটু আফসোসই হয়।
২
শামসুর রাহমানের স্মৃতিকথা ‘কালের ধুলোয় লেখা’ (২০০৪) থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ (পৃ ৯৩-৯৫) :
৩
এই স্মৃতিজাগানিয়া শোকলেখনটির জন্য মুয়িন পার্ভেজকে ধন্যবাদ জানাই।
মোহাম্মদ মুনিম - ২৮ আগস্ট ২০০৯ (৫:২২ অপরাহ্ণ)
@সুমন
তোমার মন্তব্যটিতে আলাউদ্দিন আল আজাদ সম্পর্কে অনেক ভালো তথ্য আছে। অনেকে মুল লেখাটা পড়লেও মন্তব্যগুলো হয়তো সেভাবে পড়েন না। তোমার মন্তব্যটি পোস্ট হিসাবে দিলে ভালো হতো। মূয়ীন পার্ভেজকে ধন্যবাদ এই চমৎকার লেখাটির জন্য। ‘আমার মাকে যখন’ এই কবিতাটি আমারও প্রিয় ছিল। পুরো কবিতাটি কি পোস্ট করা যায়?
রেজাউল করিম সুমন - ৩০ আগস্ট ২০০৯ (১২:৩৯ অপরাহ্ণ)
মূল লেখা আর মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া — সব মিলিয়েই তো ব্লগ। কেবল মূল পোস্ট যিনি পড়বেন তিনি নিজেকেই বঞ্চিত করবেন।
শামসুর রাহমানের লেখা উদ্ধৃত করাই হতো না মুয়িন এ পোস্টটি না লিখলে। আমার নিজের বক্তব্য তো সামান্যই। তা দিয়ে আলাদা পোস্ট হয় না।
‘আমার মা’কে যখন’ কবিতাটি সংগ্রহে নেই। মুয়িন বা আমি শিগগিরই তুলে দেয়ার চেষ্টা করব।
মুয়িন পারভেজ - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১:০৫ অপরাহ্ণ)
‘মুক্তাঙ্গন’ যদিও কবিতাচত্বর নয়, তবু কবিতার প্রতি ভালোবাসার জন্য মোহাম্মদ মুনিমকে ধন্যবাদ জানাই। ‘আমার মা’কে যখন’ কবিতাটি হাতের কাছে নেই। পাঠ্য কবিতাসঙ্কলনটি আছে গ্রামের বাড়িতে। বন্ধুদের সংগ্রহে আলাউদ্দিন আল আজাদের এ-কবিতাটি না পেয়ে দু-একটি অভিজাত বইদোকানে খোঁজ করি; কিন্তু আজাদের কিছু উপন্যাস থাকলেও কোনও কাব্যগ্রন্থ নেই (সম্ভবত চট্টগ্রামের গণগ্রন্থাগারে পাওয়া যাবে, সময় নিয়ে যাব একদিন)। কৌতূহলবশত নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য মাধ্যমিক বাংলা সংকলন কবিতা বইটি কিনে এনে হতভম্ব হয়ে যাই : আজাদের কোনও লেখাই এখন কিশোর-কিশোরীদের জন্য পাঠ্য নয়―না কবিতা, না গল্প, না প্রবন্ধ!
আমাদের সময়ে (১৯৯২-১৯৯৩) বইটির (কবিতাসঙ্কলন) সম্পাদক ছিলেন ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, বর্তমান সম্পাদকও তিনি। আজাদের কবিতাটি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও অন্তত আনন্দপাঠের সুযোগ ছিল তখন এবং শুধু কবিতাই নয়, তাঁর একটি দীর্ঘ প্রবন্ধও (‘বীরশ্রেষ্ঠদের কথা’) ছিল গদ্যাংশে। কিন্তু এ-প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক স্তরে জানতেই পারছে না যে আলাউদ্দিন আল আজাদ নামের একজন বহুমাত্রিক লেখক ছিলেন এদেশে।
কারও-কারও জানার আগ্রহ হতে পারে―এই ভেবে বর্তমান পাঠ্য কবিতাসঙ্কলনের (পুনর্মুদ্রণ, মার্চ ২০০৯) সূচিপত্রে উল্লেখিত নজরুল-পরবর্তী কবিদের তালিকা তুলে দিচ্ছি এখানে : জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীন, আবদুল কাদির, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, সুফিয়া কামাল, আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, সুকান্ত ভট্টাচার্য, শামসুর রাহমান, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। এঁদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা নতুন সংযোজন। সংকলন ও রচনা : মাহবুবুল আলম, ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী ও শামসুল কবীর।
মুয়িন পারভেজ - ১৪ অক্টোবর ২০০৯ (১২:২৮ পূর্বাহ্ণ)
ইদ উপলক্ষে বাড়ি গিয়ে, পুরোনো বাকশো থেকে ১৯৮৩-র (পুনর্মুদ্রণ : ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫) মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য (কবিতা) সঙ্কলনে মুদ্রিত আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘আমার মা’কে যখন’ কবিতাটি অবশেষে উদ্ধার করা গেল। সম্পূর্ণ তুলে দিলাম :
‘উৎস ও কবিতা পরিচিতি’ অংশে লেখা আছে : ‘‘আমার মা’কে যখন’ কবিতাটি ‘সচিত্র বাংলাদেশ’ পত্রিকার একটি সাধারণ সংখ্যা (১লা জুলাই ১৯৮০) থেকে সংকলিত।” বলেছিলাম, ১৯৮৩-র মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য (কবিতা) সঙ্কলনটির সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শুধু কবিতাই নয়, গদ্যাংশেরও সম্পাদক ছিলেন দুজন : ড. কাজী দীন মুহম্মদ ও ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ (মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান অন্যতম রচয়িতা ও সঙ্কলক)। এই তথ্যপ্রমাদের জন্য আমি দুঃখিত। প্রসঙ্গত একটি প্রশ্নও এল মনে : আজাদ সম্পাদক হিশেবে ছিলেন বলেই কি তাঁর দুটি লেখা সঙ্কলিত হয়েছিল? অবশ্য দুক্ষেত্রেই তো আজাদের স্বাচ্ছন্দ্য ও সাফল্য অনস্বীকার্য।
মোহাম্মদ মুনিম - ২২ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
কবিতাটা তুলে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মাহতাব - ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:২৫ পূর্বাহ্ণ)
সুমন ধন্যবাদ
কন্থৌজম সুরঞ্জিত - ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
বিস্মৃতির পৃথিবীতে স্মৃতি জেগে থাকে কেনো মুয়িন পার্ভেজ?
মুয়িন পারভেজ - ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১২:২১ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ, কন্থৌজম, আপনার অক্ষরবৃত্তলীন মন্তব্যের জন্য। ‘মুক্তাঙ্গন’-এ আপনাকে নিয়মিত পাব, আশা করছি। মণিপুরী দিনগুলো নিয়েও তো আপনি আমাদের উপহার দিতে পারেন কোনও স্মৃতিজাগানিয়া রচনা!