পনেরো বছর আগের একটা লেখা খুঁজে পেলাম। লেখাটি এক পশলা পড়েই মনে হল কবিতার ম্যানিফেস্টো। পনেরো বছর আগের লেখা মানে পনেরো বছর কম বয়সের লেখা, তরুণতর লেখা, কিন্তু সেরকম মনে হল না – ম্যানিফেস্টো বলেই কি এরকম মনে হচ্ছে? নাকি এরকম মনে হওয়াতে একে ম্যানিফেস্টো মনে হচ্ছে? – বেশ দ্রষ্টা দ্রষ্টা গোছের লেখা – সাতাশ বছরের দ্রষ্টাকে ভাল লেগেছে।
তার সৃষ্টিকে দেখা যায় না – কোনো ইন্দ্রিয়ের প্রত্যক্ষ উপভোগের সুযোগ নেই সেখানে। এমনি একটি শিল্পকর্মের সাথে সংযোগের উপাদানটি আবার স্থান ও কালে নির্দিষ্ট মানুষের বহুব্যবহৃত বহুজ্ঞাত কথা বলার ভাষা। মানষের জীবনে এত সহজ কোনো প্রাপ্তি নেই, সেই প্রাথমিক প্রাপ্তিকে মানুষের তীব্র না-জানা ও না-শোনায় পরিণত করাতেই কবিতার সৃষ্টি।
কবিকে এমন ভাবে দেখা হল নিজের স্মৃতিই খুব টলমল করে উঠল।
কবিকে মহৎ বা নগণ্য সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বা নির্যাতিত করে আমাদের কবিতার পরিসর সমৃদ্ধ বা অন্ধ হয়ে যায় না কিন্তু যদি কবিতার শক্তি সুষমা ও শিল্পকে আমরা আমাদের প্রাণের প্রয়োজনীয় প্রকাশ মনে করি, যদি কবিতাকে পোষাক পরার মতই একটি স্বাভাবিক ব্যাপার ধরে নিই এবং স্বাভাবিক ব্যাপারটির উৎকর্ষ শিল্প ও অভাবনীয়তার প্রতি আমাদের আকর্ষণ জন্ম নেয়, তবেই আমরা কবিতার সাথে আমাদের সম্পর্ক ও সংহতিকে আরো নির্ভার ও আরো যোগাযোগসমৃদ্ধ করতে পারব।
অমরতা সমকালীনতা ও স্বল্পকালীনতাকে নাকচ করে দিয়েছে ম্যানিফেস্টো ১৯৯৮।
কবিতায় অমর যেমন কিছু নেই তেমনি সমকালীন বা স্বল্পকালীন কবিতা বলেও কিছু নেই। কবিতার মুহূর্ত সৃষ্টি করতে পারে এমন কবিতাই কবিতা অথবা একটি কবিতার এমন অংশটুকুই কবিতা। এর বাইরে সুবিপুল পংক্তির সাম্রাজ্য শুধু বেঁচে থাকার বা ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্বের বিষয় হওয়ার যোগ্য সংগ্রহশালা। কবিতাকে নিজের অস্তিত্বের নিঃস্বনে পরিণত করতে, কবিতার অস্তিত্বের নিঃস্বনে নিজেকে রূপান্তর করতে এই যে নিরন্তর দ্বন্দ্ব এর ভেতর থেকেই সৃষ্টিশীলতার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় কবিতার তীব্র, চিরকালীন ও অক্ষয় সব মুহূর্ত।
আমার নিজের সাথেই কবিতা আজ অনেক দূর পাড়ি দিয়েছে আরো অনেক দূর পাড়ি দেয়া তার পড়ে আছে। পনেরো বছর আগের এলেখাটি খুঁজে পেয়ে সেপাড়ি দেয়ার আকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে গেছে আরো বিনিদ্র নিষ্ঠায় সৌন্দর্যসৃষ্টির পরিশ্রমে অক্লান্ত অবয়বটাকে দৃঢ় হাতে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।
পাঠককে কী অভিনিবেশেই না দেখা হয়েছে!
আর একজন সৃষ্টিশীল পাঠক – সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও, আমাদের সব ভালবাসা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পরও – নতুন বা পুরাতন কবিতা, নতুন বা পুরাতন কবির জগতের সব প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাস অথবা প্রতিনিয়তের সবরকমের সৃষ্টিশীল বা প্রতিক্রিয়াশীল সমস্ত ঝামেলা চুকিয়ে গভীর অনুষঙ্গ অনুসন্ধান ও আবেগে স্রষআটর জীবন বা প্রক্রিয়াকে অনুভব যতটুকু করতে পারেন তেমনি নিজের জীবনকেও নিবিড়তার নতুন পুরাতন অনেক কুঠুরীতে বসবাসের যোগ্য যেমন করে তোলেন তেমনটি অপাঠক ও স্রষ্টার জন্য অনেকাংশেই সম্ভব নয়।
তখন (#Y1998) ব্রেতোঁদের (#AndreBreton) দ্বারা আকৃষ্ট ছিলাম – আমার কবিতার মেনিফেস্টোও ছিল! #Poetry #MasudKarim twitter.com/urumurum/statu…
— masud karim (@urumurum) June 9, 2013
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৮ comments
মাসুদ করিম - ৩১ জুলাই ২০১৩ (৩:৪৫ অপরাহ্ণ)
নূপুর কান্তি দাশ - ৬ আগস্ট ২০১৩ (২:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ ভাই,সেই লেখাটা!সে এক সময় ছিলো বটে।
মাসুদ করিম - ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ (১১:১৮ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৬ এপ্রিল ২০১৪ (৮:৫০ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (৫:৩৪ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৯ অক্টোবর ২০১৪ (১০:২২ অপরাহ্ণ)
বোর্হেসের বিখ্যাত ইংরেজি বক্তৃতা : দি নর্টন লেকচারস ১৯৬৭-৬৮, ছয়টি বক্তৃতায় কবিতার বিভ্রমের বিস্তার ও বিস্ময় উন্মোচণ করেছেন বহুভাষা ও সংস্কৃতির পাঠক নিরন্তর স্রষ্টা কবিতায় বিশ্বাসী অসামান্য এই লেখক। সংখ্যাঙ্কিত লিন্কগুলোতে ক্লিক করে শুনুন।
মাসুদ করিম - ২১ জুন ২০১৬ (৫:৩৬ অপরাহ্ণ)