এটা এখন একটা প্রচলিত প্রবণতা – পশ্চিম পূর্বের দিকে তাকাতে চায়, পুর্ব পশ্চিমের দিকে – আমাদের রাশিয়ার দিকে গুরুত্ব নিয়ে অগ্রসর হওয়া আমাদের পশ্চিমে তাকানোর প্রবণতার একটি খুবই আগ্রহী পদক্ষেপ, আমরা ঠাণ্ডা যুদ্ধ অতিক্রম করেছি, ঠাণ্ডা যুদ্ধের একটা বড় সুফল আমাদের স্বাধীনতা, আমরা ক্রেমলিনে বিশেষায়িত একটি অধ্যায় হিসেবে রুশ প্রশাসনের খুবই পরিচিত এবং রুশ কূটনৈতিক পরিসরে আমাদের আছে একটি চিরকালীন অবস্থান, এটা এখন অনস্বীকার্য বর্তমান সরকার তার একেবারে প্রথম দিক থেকেই রাশিয়াকে নতুন করে পেতে চেয়েছে এবং পেতে চলেছে, রাশিয়ার দিকে আমাদের কূটনীতির এই অধ্যায়কে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, বিশেষত যখন আমেরিকা এশিয়া-প্যাসিফিক নিয়ে তার দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করছে এবং আমরাও সেখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা করছি, আমাদেরই বহুবিধ ভারসাম্যের জন্য এখন সবচেয়ে অবাক সমাধান রাশিয়া। চীন নয় – কারণ তার মাত্রাটা বড় একরৈখিক, একবারেই বাণিজ্যিক, বড় জোর কিছুটা সামরিক, কিন্তু তাও শুধু অস্ত্র কেনা, তাই তাও বাণিজ্যিক। কিন্তু রাশিয়া, যাকে পশ্চিম বলছি, ইউরোপকে আমেরিকাকে কিন্তু বলছি না, কারণ জাতির অনেক গভীরে চলাচলটা ভাষার, ভাষার অনেক গভীরে চলাচলটা সাহিত্যের, আর সেখানে রুশ সাহিত্যের মতো প্রভাব আর কারো নেই বাংলা সাহিত্যে, তাই এই গভীর সাংস্কৃতিক ঐক্য একদিন রাশিয়ার সাথে আমাদের বড় শক্তির ঐক্য তৈরি করবেই তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক গড়তে একটা বড় বাধা ছিল, যেক্ষেত্রে রাশিয়া যখন আমাদের একদম সাহায্য করতে পারত না, তখন আমরা তার কাছ থেকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই আর্থিক বাণিজ্যিক সহায়তা চেয়েছি, সোভিয়েত অদূরদর্শিতায় তখন রাশিয়ার নিজেরই আর্থিক বাণিজ্যিক অবস্থা খুবই খারাপ, তখন কোনোমতে সাহায্য করতে গিয়ে সত্যিই সাহায্য করা আর হল না, আর তার আগেই আমাদের স্বাধীনতায় যে অতুলনীয় সহায়তা সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছে তার পরে এনিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে বিকল্প পথের সন্ধান করেছে মুজিব সরকার। কিন্তু আজ বাংলাদেশ ও রাশিয়া দুটি দেশই চমৎকার আর্থিক বাণিজ্যিক অবস্থানের উপর দাঁড়িয়ে আছে, আজ সময় এসেছে আমাদের পারষ্পরিক সম্পর্কের গভীরতাকে বহুবিধ প্রবেশাধিকারে অভিষিক্ত করার। দুটি দেশের সম্পর্কের এমন কোনো পর্যায় নেই যেখানে বাংলাদেশ ও রাশিয়া একে অপরকে সাহায্য করতে না পারে। আরেকটি ব্যাপারে রাশিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের কাছে, রাশিয়া শুধু বাংলাদেশের কাছে পশ্চিমে তাকাও নীতির শ্রেষ্ঠ অংশীদার নয়, রাশিয়া এক অনন্য ঐতিহাসিক অর্থে বাংলাদেশের জন্য মধ্য এশিয়ার দুয়ারও।
আমি সচরাচর একটা অন্য লক্ষ্যে দক্ষিন, দক্ষিণপশ্চিম, উত্তর ও মধ্য এশিয়ার এই সংঘবদ্ধতা নিয়ে ভাবি। যদি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্জনের চেষ্টার মধ্য দিয়ে এদেশগুলো পরস্পরের আরো কাছাকাছি আসতে পারে তা হলে পশ্চিমের রক্তক্ষয়ী শান্তির আন্তর্জাতিক উল্লম্ফনের চেয়ে অনেক কার্যকরী শান্তি আনতে পারবে এই অঞ্চলে। বাংলাদেশের এক্ষেত্রে বড় সুযোগ রয়েছে, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ এই দেশগুলোতে শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থান তৈরি করতে পারে এবং এঅঞ্চলের দারিদ্রমুক্তিতে বাংলাদশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় সংহত ভূমিকা রাখতে পারে। জোটনিরপেক্ষ, ন্যাটো, ওআইসি, এসসিও, আসিয়ান — এগুলো ভারত, ইরান, সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান, ইউরোপ, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, আমেরিকাকে ব্যস্ত রেখেছে কূটনৈতিকভাবে। বাংলাদেশের একটা কূটনৈতিক পরিসর দরকার নিজেকে ছড়িয়ে দিতে, বাংলাদেশ পারে দক্ষিন, দক্ষিণপশ্চিম, উত্তর ও মধ্য এশিয়ার এই সংঘবদ্ধতা নিয়ে নেতৃত্ব দিতে।
বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনা আছে এই বৃহৎ সংঘে, সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের রাশিয়ার সাথে সম্পর্ককে গভীর ও প্রাত্যহিক করে তুলতে হবে। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি এই বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক এই শতকে বিশ্বকূটনৈতিক সম্পর্কের গভীরতম সম্পর্কের একটি হিসেবে আগামী দিনগুলোতে প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত হবে।
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
