ভদ্রলোক

সুশীল সিভিল নাগরিকের পরিসরে অনেকে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন না – কিন্তু ভদ্রলোকের পরিসরে অনেককেই ধরে যায়[...]

লোক একটি বহুমাত্রিক শব্দ। নিজেকে সে জড়াতে পারে অনেক কিছুর সাথে এবং অনেকেই জড়িয়ে পড়তে পারে তার সাথে। মানুষের সমাজ এই অর্থে যে বিস্তৃত ব্যবহার এই শব্দের সেখান থেকে আরো সুনির্দিষ্ট সুসংহত একটি সমাজকে চিহ্নিত করতে ব্যবহার করতে চাই ভদ্র যোগ করে ‘ভদ্রলোক’ পদবাচ্যটি। সুশীল সিভিল নাগরিকের পরিসরে অনেকে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন না – কিন্তু ভদ্রলোকের পরিসরে অনেককেই ধরে যায় – একবারে সোজা কথায় আমাদের হালের শেখ হাসিনা থেকে আনু মুহাম্মদ সবাইকে নিয়েই আমাদের ‘ভদ্রলোক’। আরো সহজে? আমরা সবাই ভদ্রলোক। শুধু তারাই ভদ্রলোক নন যারা জীবনে কিছুই করতে পারেননি – অসফলেরা, অকৃতকার্যরা, অবহেলিতরা ও অপগণ্ডরা ছাড়া সবাই আমরা ভদ্রলোক। আর আশঙ্কার কথা বা আনন্দের কথা যাই বলুন না কেন Inclusive growth-এর যুগে ভদ্রলোকের সংখ্যা দিকবিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে শুধুই বাড়ছে। সমাজের উপরের তলা ও ক্ষমতার তলাটা এখন অনেক বড়। নগর বন্দর শহর গ্রাম সবখানের জন্যই একথা সত্য। পরিসর প্রতিনিয়ত বাড়ছে শুধু পৃথিবীটা দিনে দিনে ছোট হচ্ছে। অনেকে কথা বলছে একসাথে – জঙ্গি থেকে পরাঙ্মুখ – ভদ্রলোকের গণ্ডির ভেতর ঢুকে যাওয়া প্রতিটি লোক কথা বলছে। যারা হতাশাবাদী, পৃথিবীর ধ্বংসে বিশ্বাসী, তারাও আছে এই গণ্ডির ভেতর, তারা অবশ্য কথা বলছে না – খালি বিড়বিড় করছে। মানুষের সফলতার কৃতকার্যতার এই মহাস্রোতের নিচে যারা আছে অথবা যারা স্বেচ্ছায় অসফল ও অকৃতকার্য হয়ে আছে – অর্থাৎ যারা শুধুই ‘লোক’ – তারা কী ভাবছে বা তাদের নিয়ে ভদ্রলোকরা কী ভাবছে, এই চিন্তার সূত্র কোথায় পাব? ভদ্রলোকে ছেয়ে গেলে সমাজ, সেটাই তো হবে চূড়ান্ত অগ্রগতি? যেদিন এই মানুষের সমাজে ভদ্রলোক ছাড়া আর কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না – সেদিনই কি আসবে মুক্তি?

সেই মুক্তির দিনে পৃথিবী যখন শুধুই ভদ্রলোকের সাথে ভদ্রলোকের করমর্দনে গুঞ্জরিত হয়ে উঠবে তখন আমরা যারা সেই প্রভাতে থাকব না তাদের বড় দুঃখ হবে। ঈর্ষাকাতর হয়ে একটা প্রশ্ন বেফাঁস মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে – তোমাদের সৃষ্টি কোথায়? এরা এত দেখাবে যে আমরা খেই হারিয়ে ফেলব। ওদেরকে কিন্তু খেই হারাতে দেখা যাবে না, ওরা লাইক কমেন্ট বা রিশেয়ার করে ঠিকই বেরিয়ে যাবে।

কিন্তু যেলোকটা প্রতিদিনের গ্লানি নিয়ে পড়ে থাকবে – সে কোথায় কোন মহাশূন্যে পড়ে থাকবে – কোথায় হারিয়ে যাবে – ওই যে স্টেশনের ছেলেটি বলেছিল, বাবা মা মারা যাবার পর এক কাকি আমার দেখাশোনা করত কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই আমি এখানে চলে আসি অবহেলায় অবহেলায় আমি বুঝতে পারি আমার কেউ নেই।

২০ জুন ২০১১
সোমবার ২২:৪৫
চট্টগ্রাম

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.