এশব্দটির জন্মই হত না যদি আমি ছোট্ট পোস্টের চেয়েও বেশি কিছু না ভাবতাম – আজ সারাদিন ভাবছিলাম নিঃশব্দ পোস্টের কথা, ইউনূসকে নিয়ে একেবারে নিঃশব্দ একটি পোস্ট, কিন্তু নিঃশব্দ পোস্টেরও তো একটা শিরোনাম চাই – তখনই এই শব্দটি আমার মাথায় আঘাত করল – এই একটি শব্দ, ব্যাস আর কিছু নয়। অর্থ কী হবে শব্দটির, শুধু একটি ইঙ্গিত : নিরলস উচ্চারণ করতে করতে একই ভাবে উচ্চারণ করুন ঋণলস। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিরলস পরিশ্রম করেন আর ইউনূস শয়নে স্বপনে নিশি জাগরণে ঋণ দাগেন। ওদেরকে বলি কর্মপিশাচ আর ইউনূসকে বলব ঋণপিশাচ। এ এক বিকট চরিত্র, যে ভাবে, ঋণে ঋণে সয়লাব করে দিয়ে মানুষের সমাজ থেকে দারিদ্র ছিনিয়ে নিয়ে তাকে রেখে দেবেন যাদুঘরে – বোতলে ভূত আটকে রাখার মতো – মন্ত্র থাকবে ওর হাতে, ওই ঋণপিশাচের হাতে, তাকে অখুশি করলে ওই বোতলের মুখ খুলে দারিদ্র ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীর বুকে।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৯ comments
মোহাম্মদ মুনিম - ৯ মার্চ ২০১১ (৮:২০ পূর্বাহ্ণ)
আমার সবসময়েই ডঃ ইউনুসকে overrated মনে হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আর দশটা শিক্ষকের মত জীবন না কাটিয়ে তিনি দুস্থ মহিলাদের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটাকে আপাতদৃষ্টিতে মহতই মনে হয়। গ্রামের মহিলারা শহরের গার্মেন্টস শিল্পে কাজ না করে যদি নিজেদের গ্রামেই স্বাধীন ব্যবসা করে সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারেন, সেটা তো ইতিবাচক ব্যাপারই হওয়ার কথা। কিন্তু বহুল প্রশংসিত গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আসলেই কতখানি দারিদ্র বিমোচন হয়েছে আর কতগুলো দরিদ্র মানুষ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নামক বিশাল ঋণের জালে আটকে আছে, সেটাও তো দেখার বিষয়। ডঃ ইউনুস আমেরিকায় এলে লোকে পয়সা দিয়ে তাঁর বক্তৃতা শুনতে যায়, বনেদী সাংবাদিক চার্লি রোজ কত কয়েক বছরে ডঃ ইউনুসকে পাঁচবার তাঁর অনুষ্ঠানে ডেকেছেন। দারিদ্রকে যাদুঘরে পাঠাবেন এই কথা ডঃ ইউনুস গত বিশ বছর ধরেই বলে আসছেন। কিন্তু এখনও তো দলে দলে বাংলাদেশী বেকার যুবকেরা যাচ্ছে আফ্রিকার মরুভূমিতে, সেখান থেকে পায়ে হেটে ইউরোপে অবৈধ উপায়ে যাওয়ার আশায়। গার্মেন্টসে সস্তায় কাজ করার জন্য নারী শ্রমিকের আর জাহাজ ভাঙ্গার তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কিশোর শ্রমিকেরও অভাব নেই। তাহলে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বাহাদুরিটা কোথায়। লক্ষ লক্ষ ঋণগ্রহীতা মহিলার মধ্যে অল্প কয়েকজন নিজেদের অবস্থার উন্নতি করেছেন, মোবাইল ফোনে কথা বলছেন, ডঃ ইউনুস কি সেটাই বিশ্বব্যাপী দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন? নাকি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক আসলেই দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখতে পেরেছে? আমি নিজেই বছর দশেক আগে চাঁদপুরের এক আর্সেনিক আক্রান্ত গ্রামে গিয়ে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের করুন অবস্থা দেখেছি। অনেকগুলো ঘরেই দেখলাম গ্রামীণের পরীক্ষামূলক আর্সেনিক বিশুদ্ধ-করনের দেশী ফিল্টার। কিন্তু অতি দরিদ্র পরিবারগুলোর এই ফিল্টারের পানি ব্যবহারে কোনই আগ্রহ দেখা যায়নি।
নোবেল পুরস্কারকে পুঁজি করে ডঃ ইউনুস মইন ইউ আহমেদের শাসনকালে তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা গোপন রাখতে পারেননি। আর দশটা নাগরিকের মত রাজনীতি করার অধিকার ডঃ ইউনুসের অবশ্যই আছে, কিন্তু তার রাজনৈতিক দর্শনও খুব সুবিধার মনে হয়নি। মইন উ আহমেদের আমলে দেশের অর্ধেক রাজনীতিবিদকে জেলে পুরে, তুচ্ছ কারণে কারাদণ্ড দিয়ে, সাড়ে তিন দশকের ‘জঞ্জাল’ সাফ করার যে তোড়জোড় শুরু হয়, তাতে ডঃ ইউনুসের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। মইন ইউ আহমেদ যা করতে চেয়েছেন, তা নতুন কিছু নয়, ইস্কান্দর মির্জা থেকে শুরু করে অনেক সেনাশাসকই রাজনীতিবিদদের ‘জঞ্জাল’ সাফ করার চেষ্টা করেছেন, শেষে নিজেরাই জঞ্জালে পরিণত হয়েছেন। রাজনীতি মুক্ত বাংলাদেশ শাসন করছে অল্প কিছু সামরিক/সিভিল এলিট আর জনসাধারণের বাকি অংশ মোড়া বুনে, ভিডিওতে ওয়ালমার্ট পাহারা দিয়ে শান্তিতে দিনযাপন করছে, এই যদি ডঃ ইউনুসের রাজনৈতিক দর্শন হয়, তবে বলতেই হবে তিনি হয় অতি বোকা না হয় অতি চালাক।
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ৮৩ লক্ষ ঋণগ্রহীতা আছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সাথে জড়িত। এই পরিসংখ্যান গ্রামীণ ব্যাঙ্ক বড়াই করে বললেও একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষের অর্থনৈতিক জীবন নিয়ন্ত্রণ করা এক হিসাবে অতি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেশের ভিতরে আরেক দেশ হয়ে উঠার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডঃ ইউনুসের অসম্মানে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তাঁর নিজের দেশের সরকারই কোন বেসরকারি ব্যাঙ্কের এতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠা মেনে নিবে কিনা সন্দেহ আছে।
ডঃ ইউনুসের নোবেল পুরস্কারে যারা সবচেয়ে বেশী আনন্দিত তারা মূলত মধ্যবিত্ত, নোবেল প্রাপ্তির আগে বিদেশে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হতো, নোবেল প্রাপ্তির পরে ইউনুসের কারণে বিশ্বের সবখানেই বাংলাদেশীদের সম্মান বেড়ে গেছে, এ জাতীয় ফালতু গালগল্প মধ্যবিত্তদের বড়ই ভাল লাগে। কিন্তু মধ্যবিত্তদের সাথে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কোনই আর্থিক লেনদেন নেই, আর্থিক লেনদেন আছে লক্ষ লক্ষ স্বল্প শিক্ষিত অতি দরিদ্র মহিলার। ডঃ ইউনুসের নোবেলের কল্যাণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের তথাকথিত সম্মান বৃদ্ধি নিয়ে তাঁদের কোনই মাথাব্যথা নেই, তাঁদের ১৬ দফা শপথ পরিয়ে দল বেঁধে টাকা দেয়া হয়েছে, সে টাকা সুদে আসলে নিয়ম করে বুঝে নেওয়া হচ্ছে। ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, যাই হোক, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের টাকা দিতেই হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, সিনেটর জন কেরী বা নরওয়ের সাহেবদের সামনে লোণের টাকা আদায় হয় না, সাহেবরা দেখেন আমিনা বেগমের কানে মোবাইল ফোন, ডঃ ইউনুসের ফতুয়া পড়া বিনয়ী চেহারা আর সারা বিশ্বের অতি দরিদ্রদের লোণ দিয়ে দিয়ে দারিদ্র্যকে যাদুঘরে পাঠানোর স্বপ্নের কথা। এই চমৎকার প্যাকেজ নোবেল পুরষ্কার না পেলে কে পাবে? পায়ে হেটে আফ্রিকার মরুভূমি পাড়ি দিয়ে, লন্ডন আর নিউইয়র্কের রেস্তোরায় দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার পাঠানো প্রবাসীরা নোবেল পাবেন না, গার্মেন্টস দিন রাত কাজ করা দরিদ্র নারীরা নোবেল পাবেন না, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে কাজ করে ফুসফুস নষ্ট হয়ে যাওয়া কিশোরেরা নোবেল পাবে না। কিন্তু এই নোবেল না পাওয়ারাই বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, ফতুয়া পড়া ডঃ ইউনুস নন। তিনি স্রেফ একজন non conventional ব্যাংকার, যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশের অর্থনৈতিক জীবন।
মাসুদ করিম - ৯ মার্চ ২০১১ (২:৩২ অপরাহ্ণ)
overrated, অতিমূল্যায়িত, হ্যাঁ — অতিমূল্যায়িত শেয়ারের মতোই পেছনে থাকা মহাশক্তিধরদের গড়াপেটার ফসল হলেন ইউনূস।
না, এখানে কিছু একটা হিসাবের ভুলে হয়ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরলে এক-তৃতীয়াংশ হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। ৮৩ লাখের পরিবার ধরে তো সেসংখ্যায় যাওয়া যাবে না। আর একক ভাবে গ্রামীণ ব্যাংক সবচেয়ে বড় ক্ষুদ্রঋণ বিতনণকারী হলেও বাংলাদেশে অন্যান্য ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই ঋণ বিতরণ করে আরো দুই কোটি মানুষের কাছে। সেভাবে দুই কোটি তিরাশি লাখ ধরলে বলা যায় বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ক্ষুদ্রঋণের সাথে অর্থনৈতিকভাবে জড়িত।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে অনেক কাজের তথ্য পাওয়া যায় এদুটি সাইটে : http://www.mra.gov.bd ও http://www.pksf-bd.org।
Pingback: ইউনূসমিতি ৩ | প্রাত্যহিক পাঠ
Pingback: ইউনূসমিতি ৪ | প্রাত্যহিক পাঠ
মাসুদ করিম - ২২ আগস্ট ২০১৩ (৫:৪২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৬ আগস্ট ২০১৩ (১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
আমরা তো শুরু খেকে বলছি ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র ও অতিদারিদ্র বিমোচনে অন্যতম নিয়ামক শক্তি একমাত্র নয়। এখন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন,বাংলাদশে ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র কমিয়েছে ৫% এবং অতিদারিদ্র ১০%।
মাসুদ করিম - ২২ জুলাই ২০১৪ (১:২২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ (৫:৩২ অপরাহ্ণ)