পুতুল প্রতিভা : মওদুদ আহমেদের গোপন ডায়েরি

আমি প্রতিদিন দেখতাম আর ভাবতাম কখন আমি পুতুল হব, কখন আমাকে নিয়ে কেউ খেলবে, কখন ওরা আমাকে নিয়ে সময় কাটাবে, শুধু একটা কথা ওরা কখনো টের পাবে না[...]

ছোটবেলায় সবচেয়ে ভাল লাগত পুতুলখেলা দেখতে, পুতুলকে পেতে পুতুলকে নিয়ে খেলতে আমার ভাল লাগত না, আমি প্রতিদিন দেখতাম আর ভাবতাম কখন আমি পুতুল হব, কখন আমাকে নিয়ে কেউ খেলবে, কখন ওরা আমাকে নিয়ে সময় কাটাবে, শুধু একটা কথা ওরা কখনো টের পাবে না, আমি আর সব পুতুলের মতো কখনো হব না – আমি হব জ্ঞানী পুতুল। তেমন করে আমি আছি, চলছি এবং রয়ে গেছি – অনেকে বলে, আবার অনেকে ঠিক বলে না – অনেকে বোঝে, আবার অনেকে ঠিক বোঝে না – অনেকে দেখে, আবার অনেকে ঠিক দেখে না – পুতুল জ্ঞানী হলে কী হতে পারে, অন্যেরা ভাবতেও পারে না – অথচ কতদিন ধরে আমি এদেশের কত বড় সম্পদ, জ্ঞানী পুতুলের কত বড় এক দৃষ্টান্ত।

কারো সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, কারো সাথে আমার কোনো আত্মীয়তা নেই, আমি চলি হাতবদলের প্রাপ্তি ও ঝুঁকির গণিতে দিনবদলের হাতের পুতুল হতে। তবে একটা কথা বলি, ম্যাডামকে আমার খুবই পছন্দ – এত ভাল পুতুল খেলতে আমি আর কাউকে দেখিনি – তার সাথে আমার একটাই সমস্যা, শুধু ভয় হয়, সারাক্ষণ এই সংশয়ে থাকি, তিনি কি আমার চেয়েও উঁচুমানের পুতুল। এই জায়গায়টায় আমি খুব অসহায় : এক পুতুল কি আরেক পুতুল নিয়ে পুতুল খেলতে পারে? এর উত্তর আমার জানা নেই, কিন্তু এই ভয়ের রাজ্যে আমার বসবাস সেদিন থেকে যেদিন থেকে আমি ম্যাডামের পুতুল হতে পেরেছি। তাকে আমার পছন্দ তাকেই আমার ভয়।

কিন্তু আমি হয়ত কিছু একটা গুছিয়ে নিয়েছি – আমরা পুতুলেরা তো নিজেরা জানি না কী ঘটতে চলেছে আমাদের কপালে, সে আমরা যতই প্রতিভাবান পুতুল হই না কেন – কিন্তু কয়েকদিন থেকে মনে হচ্ছে আমি হয়ত কিছু একটা গুছিয়ে নিয়েছি – আমি হয়ত আরো উন্নত পুতুল হয়ে উঠছি ম্যাডামের থেকে, ম্যাডামকে ছাড়িয়ে, ওই… না, বলব না।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

১৩ comments

  1. রায়হান রশিদ - ৫ ডিসেম্বর ২০১০ (৮:২৮ অপরাহ্ণ)

    . . . আমি প্রতিদিন দেখতাম আর ভাবতাম কখন আমি পুতুল হব, কখন আমাকে নিয়ে কেউ খেলবে, কখন ওরা আমাকে নিয়ে সময় কাটাবে . . .

    – কারো সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, কারো সাথে আমার কোনো আত্মীয়তা নেই, আমি চলি হাতবদলের প্রাপ্তি ও ঝুঁকির গণিতে দিনবদলের হাতের পুতুল হতে।

    – শুধু ভয় হয়, সারাক্ষণ এই সংশয়ে থাকি, তিনি কি আমার চেয়েও উঁচুমানের পুতুল।

    – এই জায়গায়টায় আমি খুব অসহায় : এক পুতুল কি আরেক পুতুল নিয়ে পুতুল খেলতে পারে?

    – তাকে আমার পছন্দ তাকেই আমার ভয়।

    – কিন্তু আমি হয়ত কিছু একটা গুছিয়ে নিয়েছি . . . কয়েকদিন থেকে মনে হচ্ছে আমি হয়ত কিছু একটা গুছিয়ে নিয়েছি –

    – আমি হয়ত আরো উন্নত পুতুল হয়ে উঠছি ম্যাডামের থেকে, ম্যাডামকে ছাড়িয়ে, ওই… না, বলব না।

    অসামান্য এই লাইন ক’টি, মাসুদ ভাই। পুতুল-প্রবর মনে হয় এখনো জানেন না পুতুল-মানস নিয়ে ব্লগবনে ফিসফাস চলছে! এই ‘গোপন ডায়রী’ সিরিজটি আরও কম বিরতিতে, আরও বিশদে কি চালু রাখা সম্ভব? জানি, গোপন ডায়রীর মতো জিনিস চাইলেই তো আর হাতে পাওয়া যায় না, তবে একটু ভেবে দেখার আবেদন থাকলো।

  2. নূপুর - ১১ ডিসেম্বর ২০১০ (১:৫০ অপরাহ্ণ)

    কি দিলেন দাদা!
    আপনার গদ্য পড়লে মনটা তরতাজা হয়ে যেতে বাধ্য।

  3. নুর নবী দুলাল - ১৫ ডিসেম্বর ২০১০ (৭:২৭ অপরাহ্ণ)

    মাসুদ ভাই,
    আপনার এ গদ্যখানা পড়ে অনেক দিন পর অমৃতগদ্যের স্বাদ পেলাম। ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে পারেন।

  4. মাসুদ করিম - ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ (৩:১২ অপরাহ্ণ)

  5. মাসুদ করিম - ২৬ মে ২০১৩ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)

    ম্যাডামের স্বামীর তাহের হত্যা বিষয়ে কিছু কথা ইংরেজিতে কোনো এক বইয়ে লিখে বিপদে আছেন পুতুল প্রতিভা। পুতুল প্রতিভা কি দেশে থাকেন না? তিনি কি প্রমতিকে চেনেন না? তিনি কি তার সাহায্য নিতে পারেন না? নাকি প্রমতিও তাকে ‘সরিবিদ্যা’ শেখাতে এগিয়ে আসছে না? ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আছে প্রমতি? ম্যাডামের ইঙ্গিত পেলেই পুতুল প্রতিভাকে ‘সরিবিদ্যা’ শিখিয়ে দেবে প্রমতি?

  6. Pingback: হন্যতে : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোপন ডায়েরি | মাসুদ করিম

  7. মাসুদ করিম - ৭ জুন ২০১৩ (৬:১৬ অপরাহ্ণ)

  8. মাসুদ করিম - ১১ আগস্ট ২০১৩ (১১:৩৪ অপরাহ্ণ)

  9. মাসুদ করিম - ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (৮:৪১ পূর্বাহ্ণ)

  10. মাসুদ করিম - ৩০ মে ২০১৫ (৩:০২ অপরাহ্ণ)

    কথাগুলো তোলা থাক এখানে।

    জিয়ার দর্শনে বিএনপির পুনর্গঠনই এখন চ্যালেঞ্জ: মওদুদ

    জিয়াউর রহমানের দর্শনের ভিত্তিতে বিএনপিকে পুনর্গঠিত করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা দলের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ বলেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।

    শনিবার সকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়ার ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে একথা বলেন তিনি।

    মওদুদ বলেন, “আজ গণতন্ত্র সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে বিএনপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। এজন্য আমাদের দল পুনর্গঠন করতে হবে। শহীদ জিয়ার দর্শনের আদলে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে হবে।”

    বিএনপির প্রতিষ্ঠায় জিয়ার সহযোগীদের অন্যতম মওদুদ বলেন, “জিয়াউর রহমান উদার রাজনীতি করতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি চরম ডানপন্থি দল হবে না, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।’ শহীদ জিয়া যে দর্শন দিয়ে গেছেন, তা এখনো আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারিনি।

    “এখন আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে- দলকে পুনর্গঠন করা। শুধু তাই নয়, বিএনপির রাজনীতিকেও শহীদ জিয়ার আর্দশে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। তবেই আমরা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারবো।”

    সকালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়ার কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মওদুদ আহমদ।

    জিয়া সরকারের ডাক ও তারমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি জিয়ার দর্শন প্রতিপালনে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা সেই রাজনীতি করতে চাই, যে রাজনীতি জিয়া আমাদের শিখিয়ে গেছেন।’’

    একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা, সেনা অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসা, বিএনপি গঠন এবং দেশকে একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জিয়ার অবদান ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

  11. মাসুদ করিম - ৮ জুন ২০১৭ (১০:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    বাড়ি মওদুদকে ছাড়তেই হল

    বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ চার দশক ধরে গুলশানের যে বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর অভিযান চালিয়ে সেই বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

    রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমানের নেতৃত্বে বুধবার বেলা ১২টার দিকে গুলশান এভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ওই বাড়িতে অভিযান শুরু হয়।

    এরপর রাজউকের একটি ট্রাক ও তিনটি পিকআপ ভ্যানে করে ওই বাড়ির মালপত্র মওদুদ ও তার এক আত্মীয়র মালিকানাধীন অন্য দুটি বাড়িতে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলে।

    ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় ৩০০ কোটি টাকার ওই সম্পত্তিতে উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সেখানে ছিল; ছিল জলকামান, প্রিজনভ্যান, সাঁজোয়া যান ও রাজউকের বুলডোজার।

    অলিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “এটা রাজউকের সম্পত্তি। দীর্ঘদিন ধরে তারা দখল করে রেখেছিলেন। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমরা দখলমুক্ত করছি।”

    অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ ওই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমরা রাজনীতি করি বলে, বিরোধী দল করি বলেই কি আজকে এই অবস্থা? সরকারি দলের কেউ হলে আজকে এরকম হত? আজকে বিরোধী দল করি বলেই প্রতিহিংসার এই চরম দৃষ্টান্ত।”

    বাড়ির কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মওদুদের স্ত্রী ও মেয়ে আছেন দেশের বাইরে। কেয়ারটেকার ও অন্যরা মিলেই জিনিসপত্র গাড়িতে তোলার জন্য কিছুটা গুছিয়ে দেন।

    একটি পিয়ানো, কাঠের একটি বড় সিন্দুক, অর্ধশতাধিক স্যুটকেস, কয়েক ডজন সোফা ও চেয়ার, বেশ কয়েকটি আলমারি, খাটসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপ নিযন্ত্রণ যন্ত্রসহ গৃহস্থালীর যাবতীয় সামগ্রী ট্রাক ও পিকআপে করে দফায় দফায় সরিয়ে নিতে দেখা যায়।

    মওদুদের জুনিয়র ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আপাতত মালপত্রগুলো দুটো ফ্ল্যাটে রাখা হচ্ছে।

    “গুলশানের ৮৪ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাট আছে, ওটা স্যারের নিজের ফ্ল্যাট। কিছু মালামাল ওখানে যাবে। আর কিছু যাবে ৫১ নম্বর রোডের একটি ফ্ল্যাটে…। সেটা স্যারের এক আত্মীয়র বাসা।”

    আইনি লড়াই
    রাজউকের এক কর্মকর্তা জানান, এক বিঘা ১৩ কাঠা ১৪ ছটাক জমির ওপর ওই বাড়ি। গুলশানের ওই এলাকায় প্রতি কাঠা জমির দাম মোটামুটি ১০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে পুরো সম্পত্তির দাম তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

    ওপর ওই বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে তিনি ওই বাড়ির মালিকানা পান।

    ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র এহসানের স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে নিবন্ধন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।

    ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন। কিন্তু ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে দুদক মামলা করলে চার বছর আগে শুরু হয় আইনি লড়াই।

    মওদুদ সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও রায় তার বিপক্ষে যায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও গত রোববার তা খারিজ হয়ে যায়। ফলে মওদুদের বাড়ি ছাড়া অনিবার্য হয়ে পড়ে।

    রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মওদুদ বলেছিলেন, “দেশে কি আইন নাই? আমি আইনের আশ্রয় নেব। আদালতের আশ্রয় নেব। বাড়ি ছাড়ব না।”

    অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, “মামলায় হেরে গিয়ে এ কথা বলাও দুঃখজনক। অবশ্যই বাড়ি ছাড়তে হবে।”

    অভিযান
    রায়ের দুই দিনের মাথায় বুধবার দুপুরের দিকে ওই বাড়ির দখল বুঝে নিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। বিচ্ছিন্ন করা হয় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ।

    পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ, গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক, পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়াসহ উর্ধ্বতন কর্মকতাদেরও ঘটনাস্থলে দেখা যায়।

    অভিযান শুরুর কিছু সময় পর আইনজীবীর পোশাকে ওই বাড়ির সামনে হাজির হন ব্যারিস্টার মওদুদ। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুরোধে গেট থেকে সরে রাস্তার পাশে দাঁড়ান তিনি।

    বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা ছিল সেটার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে… কোনো আইন নেই? যে এত দিনের মধ্যে আপনাকে বাড়ি ছাড়তে হবে?… আজকে আদালতের কোনো অর্ডার আছে? তাদের (রাজউক) কোনো অর্ডার আছে? একটা বাড়িতে ঢুকে গেল! আমাদের দেশে কি আইন নেই?”

    রাজউক কোনো নোটিস ছাড়াই এ অভিযান চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অলিউর রহমান বলেন, “এটা তো আমাদের সম্পত্তি। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এটা কি উনার সম্পত্তি? নোটিস দেব কেন?”

    রাজউকের এই কর্মকর্তা বলেন, মওদুদ আহমদ এ বাড়ি দখলে রেখেছিলেন ‘অবৈধভাবে’। এখন রাজউক বিধি অনুযায়ী তার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে।

    “আপতত এটা তালাবদ্ধ থাকবে, পরে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। উনার মালামাল তিনি যেখানে চেয়েছেন, সেখানে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হচ্ছে।”

  12. মাসুদ করিম - ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (৯:০৩ অপরাহ্ণ)

    তাহাদের কথা ৩: মঞ্চের আড়ালে সীমাহীন রহস্যময় এক নেতা মওদুদ

    হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে রাজনীতি থাকবেই। নইলে ওই অপদার্থ অসৎ লোভী দুষ্ট লোকগুলো কী করবে?’ শুধু হুমায়ূন আজাদ নন, রাজনীতি নিয়ে অনেকেই অনেক কটূ কথা বলেন। এই সুযোগ করে দিয়েছেন স্বয়ং রাজনীতিবিদরা। আমাদের দেশে এমন অনেক রাজনীতিবিদ আছেন, যাদের কথা, কাজ, আচরণ, চিন্তা-ভাবনা রাজনীতির প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে।

    সুবিধাবাদিতা, সময় ও সুযোগ বুঝে নিজেকে বদলে ফেলার চাতুর্য, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠতে না পারা, বড় বড় বুলি আওড়ানো-এসব দেখে-শুনে সাধারণ মানুষ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হন। আর এ ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে রয়েছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। দেশের রাজনীতিতে বহু অঘটনের নায়ক, দলবদলের মাস্টার, সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কখনো নন্দিত, কখনো নিন্দিত। মঞ্চের আড়ালে তিনি সীমাহীন রহস্যময়। বাংলাদেশের রাজনীতির এক অন্যতম কৌতূহলোদ্দীপক চরিত্র। বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসজুড়ে তার উপস্থিতি ব্যাপক। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন তিন সরকারের আমলেই ছিলেন ক্ষমতার নিউক্লিয়াসে।

    ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশি নির্যাতনের পর ঠাঁই হয়েছিল কারাগারে। এই ঘটনা মনের অজান্তেই তাকে করে তোলে রাজনীতি সচেতন। ঢাকা কলেজ ছাত্রসংসদের আপ্যায়ন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অ্যাডভোকেট ফরমান উল্লাহ খান প্রতিষ্ঠিত খেলাফত রব্বানীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন। পেশাজীবী হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে নানা ভূমিকায় নিজেকে রেখেছিলেন রাজনীতির কক্ষপথেই। বিএনপি আর জাতীয় পার্টি গঠনে পালন করেছেন মুখ্য ভূমিকা। কারাভোগ করেছেন পাকিস্তান আমল, বঙ্গবন্ধু, এরশাদ, ওয়ান ইলেভেন ও মহাজোট সরকারের আমলে।

    কৃতি শিক্ষাজীবনের অধিকারী ব্যারিস্টার মওদুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাস করে বৃটেনের লন্ডনের লিঙ্কন্স্ ইন থেকে অর্জন করেন বার-অ্যাট-ল। দেশে ফিরে হাইকোর্টে ওকালতির একপর্যায়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন আইনি লড়াইয়ে। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনি লড়াই করতে খ্যাতনামা বৃটিশ আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামস কিউসিকে বাংলাদেশে আনতে রেখেছিলেন ভূমিকা। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠকের ভূমিকা ছাড়াও ব্যারিস্টার মওদুদকে পোস্টমাস্টার জেনারেল নিয়োগ করে মুজিবনগর সরকার।

    স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর দিকে কারাভোগ করতে হয়েছে তাকে।

    নানা ঘটনাপরম্পরার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭৭ সালে মওদুদ আহমদ দায়িত্ব পান উপদেষ্টার। বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে আহ্বায়ক করে গঠিত জাগদলের ১৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। পরে জিয়াউর রহমানকে আহ্বায়ক করে বিএনপি গঠিত হলে সে কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন মওদুদ আহমদ। ১৯৭৯ সালে তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কর্মসূচির বিরোধিতা করাসহ নানা কারণে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন জিয়া। কয়েকজন বিদ্রোহী সেনাসদস্যদের হাতে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এরশাদ। অন্যদিকে দলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ৮৫ সালের ২৫ জুন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন মওদুদ আহমদ।

    এরশাদ আমলের প্রথম দিকে তিনি ১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই এরশাদ সরকারে যোগ দিয়ে মন্ত্রিত্ব পান। সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টি গঠনে পালন করেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার ভূমিকা। ১৯৮৫ সালে তিনি যোগাযোগমন্ত্রী, ৮৬ সালে উপপ্রধানমন্ত্রী, ৮৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতার দায়িত্ব পালন করেন। ৮৯ সালে তিনি উপরাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ পান। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে কিছু সময়ের জন্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন এবং পরবর্তী অস্থায়ী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

    জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১-এ এমপি নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। ২০০১ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ৮ম জাতীয় নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলে পরে বগুড়ায় খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া আসন থেকে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন।

    দীর্ঘ দিন রাজনীতির ময়দানে থাকা মওদুদ আহমদের বিশ্বস্ততা নিয়েও বারবার প্রশ্ন উঠেছে। উইকিলিকসের ফাঁস করা তারবার্তায় তাকে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছিল তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ‘আউটার সার্কেল’ এর মানুষ হিসেবে। তবে নিজস্ব কৌশলে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ উতরে গেছেন মওদুদ আহমদ।

    রাজনৈতিক ডিগবাজিতে সীমাহীন সিদ্ধহস্ত ব্যারিস্টার মওদুদ কিন্তু প্রশংসা অর্জন করেছেন বই লিখে। তিনি রচনা করেছেন এক ডজনের বেশি বই। যার মধ্যে রয়েছে- ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট: এ স্টাডি অব পলিটিক্স অ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশনস ইন বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ : এরা অব শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘বাংলাদেশ কনস্টিটিউশনাল কোয়েস্ট ফর অটোনমি’, ‘বাংলাদেশ: ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ’, ‘সাউথ এশিয়া: ক্রাইসিস অব ডেভেলপমেন্ট দি কেস অব বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ: এ স্টাডি অব দ্যা ডেমোক্রেটিক রেজিম’ ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ১৯৯১ থেকে ২০০৬’, ‘চলমান ইতিহাস’, ‘বাংলাদেশ স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা’, ‘কারাগারে কেমন ছিলাম ২০০৭-২০০৮’, ‘সংসদে যা বলেছি’, ও ‘ইন লাভিং মেমোরি অব আমান মওদুদ, হিজ লাইফ অ্যান্ড আর্ট’।

    বাংলাদেশের রাজনীতি ও নেপথ্য ঘটনাপরম্পরা বিশ্লেষণে তার প্রতিটি বইই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিক ও লেখক সত্তার বাইরে তিনি একজন শিক্ষকও। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন এলিজাবেথ হাউস, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফায়ার্স, ফেয়ারব্যাংক এশিয়া সেন্টার এবং হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান ইনস্টিটিউটের ফেলো। তিনি জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলিয়ট স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফায়ার্সের ভিজিটিং প্রফেসর।

    ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে লন্ডনে অবস্থানরত ব্যারিস্টার মওদুদকে পোস্টমাস্টার জেনারেল নিয়োগ করে মুজিবনগর সরকার। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত ডাকটিকিট প্রকাশ ও শুভেচ্ছামূল্য বাবদ অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব্ব নেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের ডাকটিকিট বিক্রি থেকে সংগ্রহ করা অর্থের মোটা অঙ্ক আত্মসাৎ করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

    ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের সময় ব্যারিস্টার মওদুদের বিরুদ্ধে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার চর অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের একান্ত আবেদনে বঙ্গবন্ধু তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, মওদুদ পল্লীকবির জামাতা। তবে মওদুদের কাছ থেকে এই মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয় যে, তিনি জীবনে কোনোদিন রাজনীতি করবেন না। কিন্তু সে অঙ্গীকারনামা ‘মওদুদনামায়’ পরিণত হয়। পরবর্তী জীবনে তিনি কখনো কোনো অঙ্গীকার পালনের ধার ধারেননি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ব্যারিস্টার মওদুদকে তার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে নিয়েছিলেন। ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টারকালেক্টর প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে পরে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার শেষভাগে মওদুদ ছিলেন সে-সময়কার বিএনপির বিদ্রোহী শিবিরে। ১৯৮২ সালে এরশাদের সামরিক শাসনামলে গুলশানের বাড়ি সংক্রান্ত মামলায় মওদুদের বাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়। তিনি ১২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। অবশ্য এ-মামলার পরই ১৯৮৩ সালে এরশাদের সামরিক সরকারেরই মন্ত্রী হয়েছিলেন মওদুদ।

    বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন মওদুদ আহমদ। বিএনপি সরকারের সময় ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের কর্মসূচির বিরোধিতা করায় তাকে উপপ্রধানমন্ত্রী থেকে বরখাস্ত করা হয়। বেগম জিয়ার সঙ্গে ১৯৮৫ সালে কুমিল্লা সফর থেকে ফেরার সময় গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন। ঢাকায় এসে তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত ঘটনা। আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া ও স্বৈরাচার এরশাদ।’ হাসপাতালেও ভর্তি হন মওদুদ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনদিন পরই সেখান থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে গিয়ে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার ইস্যুতে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বিচারপতিদের চাকরির বয়স বাড়িয়ে হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা করার আইডিয়া আসে মওদুদের মাথা থেকেই। এর মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের পথে ঠেলে দেন। ক্যান্টনমেন্ট থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের মামলা চলাকালেও বিতর্কিত হন মওদুদ। চেয়ারপারসনের সেই দুঃসময়ে তিনি ছিলেন বিদেশে।

    দলবদলে সিদ্ধহস্ত এ-নেতা এরশাদ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও উপ-রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদ সরকারের পতনের আগ মুহূর্তেও এরশাদের পক্ষে সংবিধান এবং আইন দেখিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন মওদুদ। পরবর্তী সময়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৯১ সালে বিএনপির মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। সর্বশেষ ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে এমপি হয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। দেখা যাচ্ছে যে মুজিব-জিয়া-এরশাদ-খালেদা সরকারের খেদমত করেছেন দলবদলের রাজনীতির ঝানু খেলোয়াড় মওদুদ।

    বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বিচার বিভাগকে তছনছ করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ। আইনের মারপ্যাঁচে তিনি বিভিন্নভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। বিচারকদের বয়স বাড়িয়ে নিজের দলের লোককে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে তিনি একটি আইন পাস করেন। তার বুদ্ধিতেই জোট সরকার বিচারপতি এম এ আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করে। তিনিই অযোগ্য লোকদের বিচারপতি নিয়োগ করেন। তবে জাল সনদধারী লোককে বিচারপতি নিয়োগ করে ন্যাক্কারতম ইতিহাসটি সৃষ্টি করেছেন মওদুদ। তার কারণেই বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়নি বলে দেশের মানুষ মনে করেছেন।

    মওদুদ সাহেব জীবনে অনেকবার দুর্নীতির অভিযোগে জেলে গিয়েছেন। কিছুদিন জেলে কাটিয়ে তিনি ঠিকই বীরবিক্রমে বেরিয়ে এসেছেন এবং মন্ত্রী হয়েছেন। মওদুদ আহমদকে সবাই সমীহ করেন তার বিরল প্রতিভার জন্য। এক জীবনে এত বেশি দলে এতোবার মন্ত্রী থাকার কৃতিত্ব পৃথিবীতে অন্য কেউ কখনো দেখাতে পেরেছিলেন বলে আমাদের জানা নেই। সালাম জানাই ব্যারিস্টার মওদুদকে এমন বিরল প্রতিভার জন্য। সালাম জানাই তাদেরও, যারা সব কিছু জেনেশুনে এই মওদুদ আহমদদেরই বার বার দলে টানেন, নেতা এবং মন্ত্রী বানান। সালাম জানাই তাদের, যারা এই মওদুদদেরই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠান। ধন্য আমার দেশ, ধন্য দেশের নেতা!

  13. মাসুদ করিম - ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (১২:২৩ অপরাহ্ণ)

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.