প্রমতি

আজ একটি যুগের অবসান হল[...]

আজ একটি যুগের অবসান হল, আমার ব্যক্তিগত সংবাদপাঠের অভ্যাসে, যেসামান্য জায়গাটুকুও ছিল প্রথম আলোর তার পরিসমাপ্তি ঘটল। এই ৫ নভেম্বর ২০১০ থেকে আমি আর একেবারেই প্রথম আলো পড়ছি না। প্রথম আলোর যুগপূর্তির উৎসবে মতিউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের মৌল আদর্শগুলো লিখছেন এরকম

গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং অসাম্প্রদায়িকতা

লিখেছেন এখানেআইনের শাসন, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং অসাম্প্রদায়িকতা ! ভালো, প্রথম আলো।

বাংলাদেশে এখন একটি স্বতন্ত্র পথ তৈরি হয়েছে, কিছু প্রগতিওয়ালা এখন প্রমতির অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এই পথ এই লক্ষ্য অনেক আগেই মতিউর রহমান প্রথম আলোর পথচলা শুরু করতেই নির্ধারণ করেছেন। আমার স্মৃতি আছে স্মৃতিশক্তি নেই – ওয়াহিদুল হক মারা যাবার কয়েকদিন পর, ৪ নভেম্বর ২০১০এ প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় যেখানে তপন মাহমুদের কলিম শরাফী শ্রদ্ধাঞ্জলি ছাপা হয়েছে, সেখানটায় মতিউর রহমান লিখেছিলেন ওয়াহিদুল হক শ্রদ্ধাঞ্জলি, সেই লেখায় ওয়াহিদুল হকের চেয়ে বেশি কথা ছিল মতিউর রহমানের মাকে নিয়ে কারণ ওই একই হাসপাতালে যেখানে ওয়াহিদুল হক মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেখানে বছর কয়েক আগে মতিউর রহমানের মায়েরও মৃত্যু হয়েছিল, সেই লেখায় এমন এক উদ্দেশ্যের কথা ইঙ্গিতে বলা ছিল যেমহান উদ্দেশ্যের সাথে ওয়াহিদুল হক সম্মিলিত হতে ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু মতিউর ও প্রথম আলো সেপথে হাঁটবেন ঠিক করে রেখেছেন – এক এলিটিস্ট সিভিল ‘মিডিয়া’ তারা গড়ে তুলবেন, আর যখন ওই ওয়াহিদুল হক শ্রদ্ধাঞ্জলি তিনি লিখছিলেন তখন তো ফসল তোলার সময়, দেশে তখন সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ‘এলিটিস্ট সিভিল’ সরকার, যেসরকারকে কিছুদিন হল এখন তিনি বলতে শুরু করেছেন ‘সশস্ত্র বাহিনী সমর্থিত অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ – প্রমতির খেয়াল হল যেকোনো নিকট অতীতও নিজের প্রয়োজনে নিমেষে বদলে ফেলা। তাই তো তিনি বলেন, যা কিছু আমার জন্য ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো – এখন তিনি আরো এগিয়ে গিয়ে বলেন, যত খুশি যত পার বদলে যাও বদলে দাও।

আমি ওই পুরনো প্রগতির পথেই হাঁটতে চাই, প্রমতির সঙ্গে কখনো হাঁটিনি তবে খবরাখবর রেখেছি, আজ থেকে খবর রাখাও বন্ধ করে দিলাম।

বিভিন্ন সময়ে ‘মুক্তাঙ্গন’এ প্রথম আলো নিয়ে আমার পোস্ট ও মন্তব্যের লিন্ক।

খবর নেই

গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের ‘গণমাধ্যম,সম্পাদক ও প্রকাশকদের জন্য প্রশিক্ষণ চাই’ লেখাটি বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতের সংকট ও রাজনীতিকে সবার সামনে উন্মুক্ত করেছে

মতিউর রহমান বাংলাদেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান সম্পাদক। তার ‘প্রথম আলো’ বাংলাদেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান দৈনিক পত্রিকা

টিপু সুলতান ও মতিউর রহমান বাংলাদেশের সংবাদ জগতের এক অসম জুটি এবং এক বিশেষ ক্ষমতাচক্রের ঘনিষ্ঠ সহচর। কিন্তু সেটা কি এতদূর পর্যন্ত

ছোটবেলার কোরান শিক্ষার স্মৃতি বলে ‘আল-ইসরাত’ নামে কোনো সুরা কোরানে নেই। আগ্রহীরা খুঁজে দেখতে পারেন। ভুলভালে ভরে যাচ্ছে ‘প্রথম আলো

শুক্রবারের কালের কণ্ঠে প্রথম পাতার খবর মুসলমানদের ইমান ধ্বংসের চক্রান্তে লিপ্ত প্রথম আলো এবং তাদেরই সহযোগী অনলাইন পত্রিকা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর খবর প্রথম আলো বন্ধের দাবি ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের : এবং এই সংবাদ পরিবেশনের ধরনে কালের কণ্ঠ ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের আচরণ খুবই উদ্বেগের

‘প্রথম আলো’ ভুল সংবাদ পরিবেশনের জন্য ক্ষমা না চেয়ে একটা নতুন স্লোগান বানাতে পারে : বদলে যাও, বদলে দাও — ভুল সংবাদ চলতে দাও। ‘জাইকা’র বোর্ড মিটিংই হয়নি কিন্তু প্রথম আলো সেটা করিয়ে ছেড়েছে এবং সেই বোর্ড মিটিংয়ে ঢাকার মেট্রোরেলের ঋণপ্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের আত্মস্বীকৃত সেরা বাংলা পত্রিকা ‘ওয়েট্রেস’এর বাংলা করেছে ‘পরিচারিকা’। আমি শুধু বাকরুদ্ধ নই, সর্বস্বরুদ্ধ। প্রথম আলো এভাবেই বদলে যায় বদলে দেয়

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৪০ comments

  1. কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৬ নভেম্বর ২০১০ (৮:১৩ পূর্বাহ্ণ)

    আপনার লেখাটি একটা আবেগ থেকেই লেখা। এদেশের সংবাদপত্র একেবারে কোনো সুনির্দিষ্ট চরিত্রের ভিতর নেয়। কারণ এটি কোনো সম্পাদকীয় মাধ্যম হিসাবে ডেভলপ করেছে বলে মনে হয় না। একজন সম্পাদক তো সেই পত্রিকার সাংবাদিকদের মুরুব্বি মাত্র, একজন চাকুরে। সে তার চাকুরির স্বার্থে, মধ্যচিত্তীয় তাড়নায়, যা যা করার তা করতে থাকে। তার মগজের ভিতর বিরাজ করে মালিক, সরকার, পরজীবীপুঁজি। আমি একবার বলেওছিলাম মগজে কারফিউ জারি রেখে বিশুদ্ধ সংবাদ হয় না।
    আর একজন মতিউর রহমান একটা সিস্টেমের প্রডাক্ট। ইনকিলাব, সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত, এমনকি প্রথম আলোকে আপনি না হয় ধরে নিলেন আস্থাহীন পত্রিকা। তো, দৈনিক সংবাদ এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যখন একজন সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী সহাস্যে (তার হাসির ধরনটা নিশ্চয়ই আপনার নজরে এসেছে) পদচারণা দেন তখন কী বলবেন? কথা হচ্ছে, এখানে পুজিঁর খেলা চলে।
    আর মুক্তিযুদ্ধের ভিতর কি রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃত একক কোনো আদর্শ ছিল? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বরূপ এক-একজন এক-একভাবে হাজির করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ধারণা রাখি, এটি ছিল একটা জনযুদ্ধ, এতে জনসংস্কৃতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়, আশা জাগে; কিন্তু রাজনৈতিক শক্তি অতি প্রয়োজনেই তাকে পদদলিত করতে থাকে এবং ক্রমাগত শাসন-পেষণ জারি রাখছে।
    মোদ্দা কথা, একজন সম্পাদকের উপর গোস্বা করে একটা সংবাদপত্র না-পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটা কদ্দূর সঠিক তা ভেবে দেখার বিষয়। ‘প্রথম আলো’ কিন্তু ক্লাসিক বুর্জোয়ার পর্যায়ে থেকে অনেক মানবিক কাজ করে যাচ্ছে।

  2. মাসুদ করিম - ১৫ জুলাই ২০১১ (১০:৩০ পূর্বাহ্ণ)

    এখন লেখেন

    সশস্ত্র বাহিনী সমর্থিত অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার

    যখন ওই সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন লিখতেন

    সশস্ত্র বাহিনী সমর্থিত বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার

    যেকোনো বর্তমান অপসৃত হওয়া মাত্র তাকে অস্বাভাবিক ঘোষণার বিকট ‘ব্যক্তিত্ব বিভ্রান্তি’র অসুস্থতায় দীর্ঘদিন থেকে সাহসের সঙ্গে চিকিৎসাহীনভবে ভুগছেন তিনি।

  3. মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০১২ (১০:২৯ পূর্বাহ্ণ)

    বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান দৈনিকের সম্পাদকের এই প্রথম কথা শুনলাম, ভেবেছিলাম বক্তা হিসাবে তিনি তার কর্তা মাহফুজ আনামের মতো পরিশীলিত না হলেও তার অধস্তন মিজানুর রহমান খানের মতো গুছানো হবেন — কিন্তু না তিনি একবারেই হতাশাব্যঞ্জক বক্তা, সত্যিই আরো ভাল আশা করেছিলাম। তবে একটা শব্দের ব্যবহার দেখে খুব মজা লাগল, ‘সন’, বছরের উল্লেখে তিনি এই শব্দটি ব্যবহার করেন, এবং খুবই সচেতনভাবে করেন, মুখ ফসকে একবারও ‘সাল’ বলেন না, নিজেকে কঠোর নিয়মে গেঁথে নিয়েছেন। ১৯৭১ সন, যু্দ্ধের সন — কেন এত সন, সন কে জানে! তিনি কি ‘নামাজ’কে ‘সালাত’ বলেন? ‘খোদা’কে ‘আল্লাহ’ — কঠোর নিয়মের অধীন হয়ে? আমরা তো যখন যেটা মন চায় সেটাই বলি।

  4. মাসুদ করিম - ১৭ জুন ২০১৩ (১১:৪১ পূর্বাহ্ণ)

    মজা পুকুর, মজা নালা, মজা খাল, মজা নদী দেখেছেন — কেন মজা আলো দেখেননি? — প্রথম আলো দেখুন ‘মজা আলো’ দেখা হয়ে যাবে।

  5. মাসুদ করিম - ১২ অক্টোবর ২০১৩ (১০:১৭ পূর্বাহ্ণ)

    ভেবেছিলাম রাজাকার প্রমতির পত্রিকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক নির্বাচনী জরিপ নিয়ে একটিও কথা বলব না, কিন্তু প্রেসে অনএয়ারে যেরকম তোড়জোড় পড়ে গেছে এই জরিপ নিয়ে তাতে কিছু বলতেই হচ্ছে

    বিস্তারিত এখানে

  6. মাসুদ করিম - ২ নভেম্বর ২০১৩ (৬:০৭ অপরাহ্ণ)

  7. মাসুদ করিম - ২১ নভেম্বর ২০১৩ (২:৫২ অপরাহ্ণ)

  8. মাসুদ করিম - ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ (৮:৫৪ অপরাহ্ণ)

    মতিউর রহমানের খেলনা গাড়ির স্টোরকিপার অবকবি* তব সাংবাদিক সোহরাব হাসান নিজের মাথার খুলি ছাড়া আর কিছুই কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না, কারণ ওটা ছাড়া আর সবকিছুই তিনি প্রমতিকে দান করেছেন।

    কোথায় র‌্যাব, কোথায় পুলিশ, কোথায় সরকার?

    ১৯৭১ সালে যে স্বপ্ন ও অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল গণতন্ত্র ও সুশাসন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও আমরা সেই গণতন্ত্র ও সুশাসনের দেখা পাইনি। গণতন্ত্র মানে আইনের শাসন, জনগণের শাসন। গণতন্ত্র মানে পাঁচ বছর পর পর এক দিনের ভোট নয়। গণতন্ত্র মানে স্বৈরাচারের বা রাজাকারের সঙ্গে হাত মেলানো নয়।

    গণতন্ত্র মানে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য জনগণের শাসন। কিন্তু বাংলাদেশের নেতা-নেত্রীরা মনে করেন, গণতন্ত্র হলো তাঁদের দ্বারা, তাঁদের জন্য জনগণের নামে শাসন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রে জনগণ বরাবরই অনুপস্থিত। ৩০০ সংসদীয় আসনের বেশির ভাগের জনপ্রতিনিধিই ‘বহিরাগত’। তাঁরা এলাকায় থাকেন না। শীতের পাখির মতো নির্বাচনের সময়, ঈদে অথবা অন্য কোনো পর্বে এলাকায় যান। আমরা প্রতিবার ৩০০ নতুন জমিদার তৈরি করি। ভারতে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা আছেন, যাঁদের দিল্লিতে নিজস্ব বাড়ি নেই। মন্ত্রিত্ব চলে গেলে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। আর আমাদের মন্ত্রী-সাংসদ তো বটেই, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরও ঢাকায় বাড়ি না থাকলে ইজ্জত থাকে না।

    সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতা ছিলেন শেখ মুজিব। কিন্তু নেতা একা দেশ স্বাধীন করেননি। জনগণ তাঁর সঙ্গে ছিল, তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিল বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। কতিপয় রাজাকার আলবদর ছাড়া সর্বস্তরের মানুষই সেই যুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এখনকার নেতা-নেত্রীরা দেশ শাসনে জনগণের ভূমিকা চান না। একজন জামায়াত-শিবির নামের দানবের কাঁধে সওয়ার হয়েছেন, আরেকজন স্বৈরাচারের হাত ধরে গণতন্ত্র রক্ষা করতে চাইছেন।

    আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা অসম্ভব হতো, এ কথা যেমন ঠিক, তেমনি বেঠিক নয় যে আওয়ামী লীগই যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি বর্তমান ভোটের রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছে। শাহবাগে এবং সারা দেশের গণজাগরণ মঞ্চে হাজার হাজার তরুণ জমায়েত হয়েছে, যাদের অনেকে আওয়ামী লীগকে সমর্থন না করেও যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল।

    নির্বাচনী রাজনীতি বড় জটিল ও কুটিল। প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে কেউ শয়তানের সঙ্গেও হাত মেলায়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার হলো সমগ্র জাতির দাবি। ৪২ বছরের দায়মোচন। সেই দায়মোচনে আওয়ামী লীগের সমর্থক মানুষ যেমন আছে, তেমনি আছে আওয়ামী লীগের বাইরের মানুষও। কিন্তু আওয়ামী লীগ বরাবরই ‘যারা আমার সঙ্গে নেই তারা জামায়াত-শিবির’—এই নীতিতে বিশ্বাস করে। ফলে ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে বিজয়ী দলটি এখন পরাজয়ের শঙ্কায় ভীতসন্ত্রস্ত।

    গণতন্ত্রে জনগণেরই নিয়ামক শক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দল ও নেতারা বরাবর তাদের দূরে রেখেছে। কাছে টেনেছে দলীয় মাস্তান, লাঠিয়াল, চাঁদাবাজ ও গডফাদারকে। পাঁচ বছর পর পর মানুষ যে ভোট দেওয়ার অধিকারটি আদায় করেছিল নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, তা-ও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এ জন্য কেবল সরকার নয়, বিরোধী দলও দায়ী। তারা মুখে যতই বলুক না কেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়—মনে মনে পোষণ করে, দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়।

    ১৯৭১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম প্রবল পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের পরাজিত করে। সেই পরাজয় ছিল সত্যের কাছে মিথ্যার, ন্যায়ের কাছে অন্যায়ের। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে রাজাকার আলবদরদের পরাজয়। কিন্তু আজ কি আমরা সমাজের সেই দানবীয় অপশক্তিকে পরাস্ত করতে প্রস্তুত আছি? যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মাধ্যমে অতীতের অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া গেলেও বর্তমানে যে অন্যায় চলছে, তার প্রতিকারের জন্য আরও কঠিন সত্য সাধনায় আমাদের নিয়োজিত হতে হবে।

    একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর যেখানে সারা দেশের মানুষ স্বস্তিবোধ করার কথা, যেখানে বিজয় মিছিল বের করার কথা, সেখানে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আর জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা দেশজুড়ে নাশকতা চালাচ্ছে। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর তাদের নৈতিকভাবে পরাস্ত, অবনত ও অনুতপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু ভোটের রাজনীতি তাদের আরও উৎসাহিত করেছে।এই বিজয়ের মাসে সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কখন পেট্রলবোমা ছুড়ে হত্যা করা হয়, কখন আগুনে ঝলসে যায় পুরো দেহ। কখন গীতা সেনের মতো উচ্চারণ করতে হয় ‘আমরা অসুস্থ সরকার চাই না। সুস্থ সরকার চাই।’

    এই বিজয়ের মাসে কী করে মৌলবাদের দলটি সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে ফেলল? কী করে জনজীবনের স্বস্তি কেড়ে নিল? কী করে তারা বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে? কী করে বিচারপতি ও মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলা চালায়? তাহলে সরকার কী করছে? জামায়াতের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করার পরও এই শক্তি তারা কোথায় পায়?

    এই বিজয়ের মাসে আমরা কোনো অপশক্তির অট্টহাসি দেখতে চাই না, সেই অট্টহাসির সুযোগ যাঁরা করে দিয়েছেন, আমরা তাঁদের রাজনীতির চিরদিন বিরোধিতা করব। কিন্তু এর বিপরীতে সরকারকেও জনগণের নিরাপত্তায় এগিয়ে আসতে হবে। কেবল পুলিশ দিয়ে, র‌্যাব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা যায় না। এ জন্য চাই নৈতিক শক্তি। চাই সত্যের শক্তি। সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারে যে নৈতিক শক্তি অর্জন করেছিল, একতরফা নির্বাচনে তার অবসান হয়েছে। সর্বদলীয় সরকার সর্বদলীয় হারিকিরিতে পরিণত হয়েছে। যে কারণে সাবেক স্বৈরাচার গণতন্ত্রের এবং সাবেক রাজাকার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের আওয়াজ তোলার সাহস পাচ্ছে।

    যুদ্ধাপরাধের বিচার যে বিশাল একটি আয়োজন, বিরাট কর্মযজ্ঞ, সেটি সরকার কখনোই মানতে চায়নি। তারা চেয়েছে, যেনতেন প্রকারে একটি বিচার শুরু করতে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ কিংবা কৌঁসুলি নিয়োগে তারা যথেষ্ট গাফিলতি করেছে, সে কথা উঠে এসেছে আদালতের রায়েই। এ ধরনের একটি বিচারে সব শ্রেণী-পেশার মুক্তবুদ্ধির মানুষকে একত্র করতে পারলে বিচারের রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির চক্র সারা দেশে যে প্রচণ্ড সহিংসতার প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তা পারত না।

    বিরোধী দল আন্দোলনের নামে যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে, তার নিন্দা করি, বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে সরকার প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে যে আচরণ করছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সংবিধান রক্ষার নির্বাচন চাই না, কার্যকর নির্বাচন চাই। আমরা আন্দোলনের নামে নাশকতা চাই না, নাশকতা রোধের আন্দোলন চাই। মৌলবাদী শক্তির ওপর ভর করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন এগিয়ে নেওয়া যায় না। কেননা মৌলবাদীশক্তি কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। একাত্তরে করেনি, ২০১৩ সালেও করবে না।

    এই ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি নয়, মারমুখী। একে অন্যকে পারলে নিঃশেষ করে দেয়। এই নিঃশেষকরণ প্রক্রিয়ার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আর গণতন্ত্র মানলে, ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান ও আদর্শের কথা শুনতে হবে। গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না।

    বিজয়ের মাসে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এটি যেমন ন্যায়ের বিজয়, তেমনি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার সূচনাও। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আমাদের গর্বের ও আনন্দের মাস। একাত্তরে এই মাসে আমরা পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম। এই মাসে সেই অপশক্তি বিজয়ের অট্টহাসি হাসছে। এই মাসে সারা দেশে তারা ভয়াবহ তাণ্ডব চালাচ্ছে। এত দিন ঢাকার বাইরে তাদের নৃশংসতা দেখেছি। গতকাল ঢাকা শহরকেও তছনছ করে দিয়েছে। এটা কী করে সম্ভব হলো? কোথায় পুলিশ? কোথায় র‌্যাব? কোথায় সরকার?

    সরকারের দাবি, বিরোধী দলের আন্দোলনের সঙ্গে জনগণ নেই। তাহলে সরকারের সঙ্গে কি জনগণ আছে? থাকলে এভাবে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সারা দেশে ও রাজধানীতে নাশকতা চালাতে পারত না। এই বিচারের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে। সমর্থন আছে ফাঁসির রায়ের প্রতিও। তার পরও এ রকম নাশকতা ঘটানোর সুযোগ কীভাবে পেল দুর্বৃত্তরা? রাষ্ট্রের সরকারের, সমাজের কি কিছুই করার নেই?

    প্রতিবারই ঘটনার অনেক পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। তাদের দায়িত্ব নিশ্চয়ই পোড়া গাড়ির গন্ধ শোঁকা নয়। গাড়ি যাতে না পোড়ে, মানুষ যাতে না পোড়ে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া। মানুষ তখনই বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, যখন দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের পাশে নেই। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

    কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা কি সরকারের নীতিনির্ধারক কিংবা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আঁচ করতে পারেনি? পারলে কেন তারা ব্যবস্থা নেয়নি? এ ব্যর্থতার দায় কে নেবে? এর আগে অতি-উৎসাহী দুই প্রতিমন্ত্রী ঘটা করে ফাঁসির দিনক্ষণ দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন। এখন তাঁদের তৎপরতা নেই কেন? কেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঢাকা শহরে লাখো মানুষকে নিয়ে এই জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি শান্তিমিছিলবের করতে পারল না?

    *

  9. মাসুদ করিম - ৩ জানুয়ারি ২০১৪ (১২:২১ পূর্বাহ্ণ)

  10. মাসুদ করিম - ৭ জানুয়ারি ২০১৪ (১২:১৬ পূর্বাহ্ণ)

  11. মাসুদ করিম - ৭ জানুয়ারি ২০১৪ (৪:৪০ অপরাহ্ণ)

    সুধাংশু তুই পালা

  12. মাসুদ করিম - ৮ জানুয়ারি ২০১৪ (১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

    আমরা, বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স (BCBA) অত্যন্ত হতাশা এবং উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোর একটি প্রধান অংশ এই সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটারবিহীন ছবি ছাপলেও, যে কেন্দ্রে লাইন ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভোট দিয়েছে সেসব কেন্দ্রের ছবি প্রথম আলো এবং কালের কণ্ঠসহ কিছু পত্রিকা ফলাও করে ছেপেছে। এমনকি প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ছবি সম্পাদনা করে ভোটারদের কপালে সিঁদুর এবং টিপ বসিয়ে দেওয়ার বা সেগুলোকে হাইলাইট করে ‘প্রধানত হিন্দুরাই এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছে’ এই বার্তাটি ধর্মীয় মৌলবাদী তথা জামাত-শিবির-বিএনপি চক্রর কাছে পৌঁছে দেওয়ার। দেখা গেছে এরকম ছবি প্রকাশের পরপরই দেশব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর উপর হামলা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, নির্যাতন শুরু হয়। ফলে সাম্প্রতিক এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না প্রথম আলো, কালের কণ্ঠসহ দেশের প্রধান পত্রিকাগুলো। যেমনটি এড়াতে পারেনি রুয়ান্ডা আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে গণহত্যার উস্কানীদাতা ‘কাংগুরা’ পত্রিকা। আমরা আগেও দেখেছি, এই পত্রিকাগুলো, বিশেষ করে প্রথম আলো জামাত শিবির বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলোকে ‘দুর্বৃত্ত’দের কাজ বলে চালিয়ে দিয়েছে বেশিরভাগ সময়।

  13. মাসুদ করিম - ৮ জানুয়ারি ২০১৪ (১১:৫৩ অপরাহ্ণ)

  14. মাসুদ করিম - ৩১ মার্চ ২০১৪ (৫:২০ অপরাহ্ণ)

  15. মাসুদ করিম - ১৮ মে ২০১৪ (৫:৪৫ অপরাহ্ণ)

  16. মাসুদ করিম - ২২ মে ২০১৪ (১২:০১ অপরাহ্ণ)

    মারদাঙ্গা রিপোর্ট ‘থম আলো’র

    প্রথম আলো জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি

    ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে এসে প্রথম আলো বন্ধ এবং এর সম্পাদক মতিউর রহমানের গ্রেপ্তার দাবি করেছে ‘সিপি গ্যাং’ নামে একটি অনলাইনভিত্তিক সংগঠন।

    আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে সিপি গ্যাংয়ের অল্প কিছু সদস্য বিক্ষোভ করে এই দাবি জানান। এ সময় তাঁরা প্রথম আলোর কয়েকটি কপিতে আগুন দেন।

    বিক্ষোভকালে সিপি গ্যাংয়ের সদস্যরা ‘প্রথম আলোর আস্তানা জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’, ‘প্রথম আলো বন্ধ করো, মতিকে আটক করো’, ‘ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও করো, প্রথম আলো ঘেরাও করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কোনো ক্ষমা নেই, সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতা প্রথম আলোর বন্ধ চাই, বাংলাদেশের স্বার্থে প্রথম আলো বর্জন করুন, মতিউর রহমানের শাস্তি চাই’ এই ব্যানার নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁদের হাতে ‘লাখো শহীদ দিচ্ছে ডাক, প্রথম আলো নিপাত যাক, ‘জ্বালো রে জ্বালো, প্রথম আলো জ্বালো, ‘প্রথম আলোর আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও, ‘প্রথম আলো বন্ধ করো, মতিকে আটক করো’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড ছিল।

    সিপি গ্যাংয়ের সদস্যরা বিক্ষোভ থেকে প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল এবং প্রকাশনা বন্ধের দাবি জানান। সংগঠনের আহ্বায়ক রাসেল রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবিলম্বে প্রথম আলোর লাইসেন্স বাতিল ও প্রকাশনা বন্ধ করতে হবে এবং এর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ প্রতিবেদনটি প্রকাশের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

    সিপি গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রায় আধা ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। এরপর তাঁরা প্রথম আলোর কয়েকটি কপিতে আগুন দেন।

    এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আগে থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।

    গত শনিবার ‘চা বিক্রেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামে প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক খবরের পাতায় নরেন্দ্র মোদির জীবনী ছাপা হয়। তাতে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর মোদি আরএসএসের প্রচারক হিসেবে যোগ দেন।’

    তবে কেউ কেউ ফেসবুকে সমালোচনা করে বলেন, এর মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা হয়েছে। এমন অবস্থায় গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে প্রথম আলো বর্জনের ডাক দেন। তাঁর এই স্ট্যাটাসের দুই দিন পর আজকের এ কর্মসূচি পালিত হলো।

    তবে ১৭ মে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরদিন ১৮ মে প্রথম আলো প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়। তাতে বলা হয়, ‘চা বিক্রেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী’ প্রতিবেদনটির তথ্যসূত্র ছিল বার্তা সংস্থা আইএএনএস। প্রতিবেদনের সূত্রের তথ্য হুবহু রাখা হয়। বার্তা সংস্থার তথ্যসূত্র ধরেই বলা হয়, আরএসএসের প্রচারক হিসেবে মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন ১৯৭১ সালে ‘পাক-ভারত যুদ্ধের পর’।

    ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ভারত ও পাকিস্তান সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। হয়তো সে কারণে নিজস্ব প্রেক্ষাপটে কোনো কোনো বিদেশি গণমাধ্যম কখনো কখনো একে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধও বলে থাকে। কিন্তু ১৯৭১ সালে বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বছর হিসেবেই সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত।’

  17. মাসুদ করিম - ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (১২:০৭ অপরাহ্ণ)

  18. মাসুদ করিম - ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ (৬:২৯ অপরাহ্ণ)

  19. মাসুদ করিম - ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (১২:০৩ অপরাহ্ণ)

  20. মাসুদ করিম - ১৮ জুন ২০১৫ (১০:১৯ পূর্বাহ্ণ)

    প্রথম আলোর বক্তব্য সত্য নয়: মতিয়া

    বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মঙ্গলবারের বক্তব্যের জবাবে পত্রিকাটির দেওয়া বক্তব্য সত্য নয় জানিয়ে মন্ত্রী বুধবারও সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন।

    সংবাদের ঘটনা তদন্ত করতে গঠিত সরকারি কমিটি প্রথম আলোর সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি- মর্মে পত্রিকাটির বক্তব্য সঠিক নয় জানিয়ে মন্ত্রী বুধবার সংসদে ওই সাংবাদিককে ফোন করার কল লিস্ট প্রকাশ করেন।

    বুধবার প্রথম আলো কৃষিমন্ত্রীর বিবৃতির খবর ছাপিয়ে নিজেদের বক্তব্যে বলে, “সংসদে কৃষিমন্ত্রীর বিবৃতির পরে আমরা ঝিনাইদহ প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি জানান, প্রথম আলোর সংবাদটি সঠিক ও তথ্যভিত্তিক। তা ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির কেউ তাঁর কাছে আসেননি বা ডাকেননি। এ বিষয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।”

    সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতিতে বুধবার মতিয়া প্রথম আলোর খবরটি পড়ে বলেন, “তার সংবাদদাতারে যে ডাকা হয় নাই, বা তার কোনো বক্তব্য শোনা হয় নাই, এটা অসত্য। উনারা আরও কি তদন্ত করে রিপোর্ট করবেন…আমি নিশ্চয়ই সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাই না।”

    প্রথম আলোর ঝিনাইদহ প্রতিনিধিকে ফোন দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে কললিস্ট সংসদে তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “কললিস্টটা উনারা চেক করতে পারেন।”

    তিনি বলেন, “আব্দুল ওয়াদুদ, উপসচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, আহ্বায়ক, তদন্ত কমিটি কোটচাঁদপুর থেকে কল দেন। ফোন নং-…..। ০২/৬/১৫ তারিখ, ৬টা ৪৮ মিনিট। আবার জনাব আজাদ রহমানরে ৮টা ৩০ মিনিট দেওয়া হয়, ……… এ কল দিলে উনি বলেন, আমি খুব ব্যস্ত। বাড়ি চলে যাচ্ছি।”

    মন্ত্রী বলেন, “আসলে যে কারো ভুল হতেই পারে। কিন্তু… যেহেতু কাগজ আছে; কাগজ একেবারে অভ্রান্ত, সত্যের উপর দিয়ে সত্য বলে প্রমাণ করা, এধরনের প্রবণতাটা না থাকা ভালো।”

    ২৭ মে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত একটি সংবাদের সূত্র ধরে সরকারি তদন্তে সে খবরের সত্যতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে মন্ত্রী মঙ্গলবার ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি দেন।

    সংসদে ৩০০ বিধির বিবৃতির পর সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ থাকে না। মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো বিষয়ে এই বিধিতে বিবৃতি দেন।

    কলম পাইলেই মিথ্যা নয়: প্রথম আলোকে মতিয়া

    বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিকতার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদে বলেছেন, অসত্য তথ্য পরিবেশন করা সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থি।

    ২৭ মে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত একটি সংবাদের পর সরকারি তদন্তে সে খবরের সত্যতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে মন্ত্রী মঙ্গলবার আইনসভায় ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি দেন।

    সংসদে ৩০০ বিধির বিবৃতির পর সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ থাকে না। মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো বিষয়ে এই বিধিতে বিবৃতি দেন।

    পত্রিকাটিতে ‘কলের লাঙলের ভর্তুকির বড় ভাগ সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের পকেটে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

    ওই সংবাদের পর কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয় বলে জানান মন্ত্রী মতিয়া।

    ষাটের দশকে মতিয়া যখন বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানও তখন ছাত্র সংগঠনটির মধ্যম সারির নেতা ছিলেন। মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বের পর ছাত্র ইউনিয়নের শামছুদ্দোহা নেতৃত্বাধীন কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন মতিউর।

    পরে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও দলটির মুখপত্র একতার সম্পাদক ছিলেন।

    সাবেক রাজনৈতিক সহযোদ্ধা সম্পাদিত পত্রিকার সমালোচনা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “প্রথম আলো একটি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা। আমরা অনেকেই আগ্রহের সঙ্গে এটা পড়ি। দেশে তাদের বহু পাঠক আছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।

    “কিন্তু কলম হাতে পাইলেই মিথ্যা কথা লেখা। কলম হাতে পাইলেই অসত্য তথ্য পরিবেশন করা, এটা সাংবাদিকতার নীতিমালার বিরোধী।”

    সততার জন্য গণমাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া এই মন্ত্রী বলেন, “এই ধরনের সাংবাদিকতা প্রথম আলোর মতো পত্রিকা করবে, সেটা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। এই জন্যই এই রিপোর্টটা আমি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরলাম।”

    সংসদে উত্থাপিত বক্তব্য প্রথম আলোতেও পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি কাগজেও পাঠাইছি। আমি জানি, কালকে তিন লাইন ছাপাবে। বড় জোর চার লাইন ছাপাবে। তারা সেইটুকুই প্রকাশ করেন যেটুকু তাদেরকে টাচ করে না।”

    পত্রিকাটির সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে সরকারি তদন্ত দল ডেকেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের সংবাদদাতা কমিটির সামনে উপস্থিত হবেন না। আমরা তো শুধু কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়ে এই কমিটি করি নাই।

    “কাজেই এই ধরনের সাংবাদিকতা তারা যত পরিহার করবেন, এটা দেশবাসীর জন্য মঙ্গল। তাদেরও সাংবাদিকতায় সুনামের জন্য অবশ্যপালনীয় শর্ত।”

    খবর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিতে পাওয়ার টিলার ক্রয়ে শতকরা ২৫ ভাগ ভর্তুকি সরকার দেয়। বাকিটা কৃষককে দিতে হয়।

    প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলায় ভর্তুকি পাওয়া ১৫ জনের আটজনই যুবলীগের নেতা-কর্মী। বাকি সাতজন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কর্মী।

    প্রতিবেদনে বলা হয়, “সরকার থেকে ভর্তুকির টাকা নিলেও এই ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ছয়জন কলের লাঙল কিনেছেন। বাকি নয়জন যন্ত্র না কিনে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে ভর্তুকির টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।”

    কৃষিমন্ত্রী জানান, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর তদন্ত কমিটি দুইদিন এলাকায় গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে।

    কমিটির সদস্যদের নামও জানান তিনি সংসদে। তারা হলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধি শাখার আব্দুল ওয়াদুদ, পরিকল্পনা কমিশনের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রিপন এবং বখতিয়ার হোসেন।

    মতিয়া চৌধুরী বলেন, এলাকায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর কৃষকদের নাম প্রকল্পের সদরদপ্তর থেকে চূড়ান্ত করা হয়। এরপর ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে চুক্তি স্বাক্ষরের পর তাদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়।

    “উক্ত প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে উক্ত কৃষকগণ ভর্তুকির অর্থ বাদে অবশিষ্ট ৭৫ভাগ অর্থ পরিশোধ করে তাদের নিজ নিজ সরবরাহকারীর নিকট থেকে পাওয়ার টিলার ক্রয় করেন, যা উপজেলা সদরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নিকট বিতরণ করা হয়।”

    “এরপর সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রকল্প সদর দপ্তরে গৃহিত হলে সেখান থেকে ভর্তুকির টাকা অনুমোদিত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি পরিশোধ করা হয়।”

    তদন্তের ফল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এক্ষেত্রে উপজেলায় কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। তাছাড়া নির্বাচিত কৃষকদেরও ভর্তুকির টাকা সরাসরি দেওয়ার কোনো বিধান নাই। দেওয়াও হয়নি।

    “তদন্তকালে নির্বাচিত কৃষকদের বাড়িতে বা খামারে চুক্তিপত্রে উল্লেখিত পাওয়ার টিলার পাওয়া গেছে। কৃষকদের মধ্যে রাফি এন্টারপ্রাইজ থেকে ১৩ জন এবং কাদের মেশিনারিজ থেকে দুজন পাওয়ার টিলার কিনেছে। প্রতিটি যন্ত্রে অমোচনীয় কালি দিয়ে নিম্মোক্ত কথা আছে, ‘সরকারি ভর্তূকিমূল্য সরবরাহকৃত। হস্তান্তরযোগ্য নহে। খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প’।”

    ভর্তুকিপ্রাপ্তরা সবাই আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “তদন্তকালে দেখা যায়, ১৫ জনের সবাই প্রকৃত কৃষক। তাদের প্রত্যেকেরই আবাদি জমি, কারও কারেও বর্গা জমি রয়েছে। প্রকল্পের নীতিমালা অনুসারে তারা সবাই ভর্তুকি পাওয়ার উপযুক্ত। নীতিমালার শর্ত মেনেই যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বাছাই করা হয়েছে।

    “১৫ জন কৃষকের মধ্যে ৬ জনের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও বাছাই প্রক্রিয়ায় এই পরিচয় ভূমিকা রেখেছে বলে তদন্তকালে প্রতীয়মান হয় নাই।”

    “তদন্ত কমিটি বলেছে, নির্বাচিত ১৫ জন কৃষকের প্রত্যেকেই পাওয়ার টিলার কিনেছে। কাজেই প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবরে অভিযোগ, ভর্তুকি পাওয়া ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জন পাওয়ার টিলার কিনেছে। বাকী ৯জন যন্ত্র না কিনে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ভর্তুকির টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। এটা একেবারেই ভিত্তিহীন।

    “ভর্তুকির টাকা কারও হাতে দেওয়া হয় না। কোম্পানিকে দেওয়া হয়। প্রকাশিত সংবাদে পাওয়ার টিলার না কেনার দায়ে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত আব্দুল খালেক, ফারুক আহাম্মেদ, ফিরোজ আলম, আজিজুল হকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ চরম অসত্য।”

    ফারুকের প্রকৃত নাম ফারুক মোহাম্মদ বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

    তিনি বলেন, তদন্তকালে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক আজাদ রহমানের সঙ্গে কথা বলতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি কমিটির সামনে হাজির হননি।

    সংবাদে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া না যাওয়ায় ওই সংবাদদাতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কমিটি সুপারিশ করেছে বলেও মতিয়া জানান।

    • মাসুদ করিম - ৪ আগস্ট ২০১৫ (৯:৫১ অপরাহ্ণ)

      শেষ পর্যন্ত মতিয়া চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে প্রমতি প্রতিবেদন লেখা হল তাহলে

      কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা

      গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে শুরুতেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, জাতীয় সংসদে দেওয়া তাঁর বিবৃতিতে উৎসাহিত হয়ে তাঁর দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা গত মাসে ঝিনাইদহ আদালতে প্রথম আলোর ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, একজন স্থানীয় সাংবাদিক ও প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে আটটি মানহানির মামলা দায়ের করেছেন। একই বিষয়ে আরও দুটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে। বেগম মতিয়া চৌধুরী আমার নেত্রী, আমাদের ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির সহস্র-লক্ষ সাবেক নেতা-কর্মীর প্রিয় নেতা ছিলেন। এখন তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী।
      প্রথম আলোর একটি সংবাদকে কেন্দ্র করে আটটি মামলা, এটা আমার জন্য নতুন একটি রেকর্ড। বর্তমান সরকারের সময়ে এর আগের রেকর্ডটি ছিল একই অভিযোগে পাঁচ জেলায় পাঁচটি মামলার। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে পাঁচটি মিথ্যা মামলা দেওয়ার পেছনে কোনো কোনো গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল বলে অনেকে বলেছেন। সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই ওই মামলাগুলোর বাদী। এ মামলাগুলো করা হয়েছে বরিশাল, ঝালকাঠি, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও ও ঢাকায়। কিন্তু সব মামলার এজাহারের ভাষা ছিল অভিন্ন। মামলাগুলোয় জামিন নিতে ও হাজিরা দিতে আমাকে এসব জেলায় প্রায়ই যেতে হচ্ছে। আরও কত দিন যেতে হবে জানি না!
      এবার অবশ্য সব মামলাই করা হয়েছে ঝিনাইদহ আদালতে। এখন আমাকে প্রায়ই যেতে হবে ঝিনাইদহ শহরে। সেটা একদিক থেকে ভালো হলো আমার জন্য। একটি জেলা শহরকে আমার ঘনিষ্ঠভাবে জানা-বোঝার সুযোগ ঘটবে। স্থানীয় অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয়ও হবে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই জানতে পারব, শিখতে পারব। তাই মতিয়া আপাকে ধন্যবাদ জানাই।
      আমাদের নেতা মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাসে গঠিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক হয়েছিলাম। তবে তারও আগে থেকে তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিচয়। ১৯৬৪ সালে আমাদের মতিয়া আপার সঙ্গে আমার প্রথম সম্পাদক (সাপ্তাহিক একতা, ১৯৭০ সাল) বজলুর রহমানের বিয়ের চা-অনুষ্ঠানেও (সিদ্দিকবাজারে) উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। ষাটের দশকের সেই অগ্নিঝরা আন্দোলনের দিনগুলোর কত-না স্মৃতি আমাদের! সেই দিনগুলো আর ফিরে আসবে না এই বাংলাদেশে। ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের শেষে মতিয়া আপাসহ আমাদের অনেক বন্ধু ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন। আর আমরা অনেকে সে সময়ের নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিই। এসব সিদ্ধান্ত ছিল কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের। কারণ, আমরা সবাই সে সময় নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলাম।
      আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি আজাদ রহমান, স্থানীয় সাংবাদিক সুব্রত সরকার এবং আমার বিরুদ্ধে আটটিসহ ১০টি মামলা দেওয়ার পটভূমি তৈরি করতে আমাদের মতিয়া আপা মহান জাতীয় সংসদে ‘জনস্বার্থে’ ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দিতে তিনবার দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। এর জন্য তিনি মোট ২২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড সময় ব্যয় করেছেন। টিআইবির (২০১১-২০১২ সালের) হিসাব অনুযায়ী, এই ২২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড কথা বলার পেছনে সংসদের ব্যয় হয়েছে মোট ১ ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা (প্রতি মিনিটে ব্যয় ৭৮ হাজার টাকা)। এখন নিশ্চয়ই এই ব্যয় আরও বেড়েছে। প্রথম আলোর মতো একটি ছোট প্রতিষ্ঠান কিংবা আমাদের মতো নগণ্য ব্যক্তির জন্য জনগণের অর্থের এই অপব্যয় করা হয়েছে।
      আমাদের প্রিয় নেতা মতিয়া চৌধুরী এবার তিন দিন ধরে ‘জনস্বার্থে’ প্রথম আলোর সাংবাদিকতার তীব্র সমালোচনা করার আগেও প্রথম আলো এবং এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে অন্তত দুবার মহান জাতীয় সংসদে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বক্তৃতা দেওয়া হয়, কুৎসা রটানো হয়। প্রথম দফায় আক্রমণ করা হয়েছিল ২০০১ সালের ১২ ও ২৬ জুন। সে সময় জাতীয় সংসদে অনেক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সম্পাদকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিম্ন রুচির ভাষা ব্যবহার করে চরম নোংরা ও অসত্য বক্তব্য দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন ‘বিখ্যাত’ সাংসদ ফেনীর জয়নাল হাজারী। এরপর বিগত সংসদে (২১ সেপ্টেম্বর, ২০১০ সালের সন্ধ্যায়) সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাংসদ শেখ সেলিমসহ কয়েকজন প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অসত্য তথ্য দিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তৃতা করেছিলেন। তাঁরা প্রথম আলোর সম্পাদককে গ্রেপ্তার ও সংসদে তলব করার দাবিও জানিয়েছিলেন। তবে দুবারই দুই স্পিকার জনাব হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (প্রয়াত) এবং জনাব আবদুল হামিদ (বর্তমানে রাষ্ট্রপতি) ওই মন্ত্রী ও সাংসদদের অসত্য, কুৎসা ও অশ্রাব্য বক্তৃতা কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়েছিলেন। এত দিন পর আমাদের নেত্রী অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী জাতীয় সংসদকে ব্যবহার করে কেন আবার নতুন করে একই পথে গেলেন?
      ওই দুই অভিজ্ঞতার পর এবারের এই অপপ্রচার বা মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই আমাদের। কথা শুধু এটুকু, ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের স্থানীয় কৃষি বিভাগের অনিয়ম ও অন্যায় সরকারের এত বড় প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী কেন নিজের কাঁধে টেনে নিলেন? বর্তমান সরকারের আমলে সারা দেশ, সব জেলা আর উপজেলা-ইউনিয়ন থেকে অন্যায়-অবিচার-দুর্নীতি সব দূর হয়ে গেছে? সব পর্যায়ের সব সরকারি কর্মকর্তা আর কর্মচারী কি সাদা ধবধবে সাফসুতরো হয়ে গেছেন? নাকি সর্বত্রই এসব আছে? শুধু নেই মতিয়া আপার কৃষি মন্ত্রণালয়ে?
      উনসত্তর আর সত্তরের সেই দিনগুলোর কথা এখনো সমুজ্জ্বল আমাদের স্মৃতিতে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রক্তাক্ত বিধ্বস্ত বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব তাদের নেতা-কর্মীদের রক্ষা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল। আমার ওপর দায়িত্ব পড়েছিল ঢাকা থেকে মতিয়া আপা আর বজলু ভাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার। সেই দুর্যোগের দিনে ঢাকা থেকে নৌকায় বিভিন্ন পথ ঘুরে তাঁদের নিয়ে উঠেছিলাম আমার নানাবাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। সেখানে তিনি আমার আম্মা, স্ত্রী আর পাঁচ বোনের সঙ্গে ছিলেন বেশ কিছুদিন। প্রবল দুর্যোগভরা সেই সব দিনের মানবিক সান্নিধ্যের স্মৃতি কি আদৌ ভোলা সম্ভব? সেখান থেকেই ঢাকা জেলার কৃষকনেতা ফয়েজ মাস্টার ছোট লঞ্চে করে মতিয়া আপা আর বজলু ভাইকে নিয়ে মেঘালয়ের পথে রওনা হয়েছিলেন।
      যত্রতত্র প্রথম আলো বা সম্পাদকের যতই গালমন্দ-সমালোচনা মতিয়া আপা করুন না কেন, সেই সব দিনের স্মৃতি মনে করে আমাদের মতিয়া আপা বন্ধুবান্ধবের কাছে আমার আম্মাকে ‘এঞ্জেল’ বা স্বর্গীয় দূত বলে স্মরণ করেন। এসব শুনে ও জেনে আমার বেশ ভালো লাগে।
      স্বাধীন বাংলাদেশে আবার নতুন করে সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ে আমরা নতুন উদ্যমে যুক্ত হয়েছিলাম। মতিয়া আপা তখন ন্যাপ নেত্রী। আমি কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী। সাপ্তাহিক একতা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব আবার পড়ে আমাদের প্রিয় বজলুর রহমানের ওপর। আর আমি দায়িত্ব পাই ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের।
      ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ভর্তুকির টাকায় ১৫টি কলের লাঙল কেনা নিয়ে অনিয়মের খবর প্রকাশ করার পর তিনবার সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। এরপর একে একে ১০টি মামলা হয়েছে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে আটটি মানহানির মামলা, দুটি চাঁদাবাজির

      সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সরকারের সঙ্গে ‘ঐক্য ও সংগ্রামের’ নীতি নিয়ে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি রাজনৈতিক সংগ্রাম করছিল। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশ্য কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে আমি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হই। আর আমাদের প্রিয় মতিয়া আপা প্রকাশ্যে ন্যাপের নেতৃত্বে থাকলেও কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন গোপনে। কমিউনিস্ট পার্টির সেই কংগ্রেসে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ রকম অনেক ঘটনা, অনেক স্মৃতি ইতিহাসমুখর হয়ে আছে আমাদের জীবনে।
      এত সব কিছুর পরও ঝিনাইদহ আদালতের আদেশ মান্য করে নাগরিক হিসেবে আমরা সব আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। যত দূর খবর পাচ্ছি, স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো নিয়ে ব্যস্ত আছেন। আটটি মামলার দুটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকারি মৎস্য কর্মকর্তার ওপর। সর্বশেষ মামলাটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে। অথচ কলের লাঙল কেনা নিয়ে ঘটা অনিয়মের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই।
      আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রথম আলোর প্রতিনিধি আজাদ রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার সুপারিশ করেছিল। ওই সময় এসব বিষয়ে আমাদের মতিয়া আপার সঙ্গে প্রথম আলোর ঢাকার জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি টেলিফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য শোনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলাম। যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলেন।’ তিনি আইনি ব্যবস্থার কথাও বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো। তবে তদন্ত কমিটির সব অভিযোগ ছিল শুধু প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধির বিরুদ্ধে। স্থানীয় সাংবাদিক সুব্রত সরকার এবং প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির কোনো অভিযোগ ছিল না। আবার মামলার কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখা গেল, সেখানেও সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আর আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে দেখা যায় সমন জারি করা হয়েছে একাধিক দিনে। অর্থাৎ আসামি সম্পাদককে একাধিক দিন স্থানীয় আদালতে হাজিরা দিতে হবে। এতে চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারব বলে বেশ আনন্দ পাচ্ছি। সে জন্য মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে আবারও ধন্যবাদ জানাই। তাঁর প্রতি আরও কৃতজ্ঞতা এ জন্য যে আমাদের মতিয়া আপা, জাতীয় সংসদে তাঁর ১৬ জুনের বক্তৃতায় বলেছেন, ‘প্রথম আলো একটি লব্ধ প্রতিষ্ঠিত কাগজ। দেশজুড়ে তাদের অনেক পাঠক রয়েছে। আমরা অনেকেই আগ্রহভরে তাদের পত্রিকাটি পাঠ করি।’
      প্রিয় পাঠক, আপনারা জানেন যে গত ২৭ মে প্রথম আলোয় ‘কলের লাঙলের ভর্তুকির বড় ভাগ সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের পকেটে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় ১৫টি কলের লাঙল ক্রয়ে অনিয়মের কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। সেদিনই কৃষি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সে খবরও আমরা প্রথম আলোয় ছাপিয়েছি।
      ১৬ জুন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ‘জনস্বার্থে’ ও আত্মপক্ষ সমর্থনে জাতীয় সংসদে প্রথম বিবৃতি দেন। তিনি আমাদের সংবাদকে অসত্য বলে দাবি করেন। পরদিন প্রথম আলোর সেদিনের একই বিষয়ের সংবাদের ওপর তিনি সংসদে আবার কথা বলেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো আবার দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর নিশ্চিত হয়ে ২ জুলাই আরেকটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘প্রথম আলোর খবর অসত্য নয়, এখনো পাঁচজন লাঙল কেনেননি’।
      ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়, লাঙল যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আটজনই যুবলীগের নেতা। অন্যরাও সংগঠনটির কর্মী। এসব ছাড়াও আরও ছবি, অন্যান্য প্রমাণসহ অনেক তথ্য ছিল ওই প্রতিবেদনে। তারপর আবারও তদন্ত দল কোটচাঁদপুরে যায়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের নেতৃত্বাধীন সেই (একই) তদন্ত দলই আবার নতুন করে তদন্ত করে। অর্থাৎ, যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অভিযুক্ত, সেই মন্ত্রণালয়ই বিচারক।
      ৫ জুলাই বেগম মতিয়া চৌধুরী তৃতীয়বারের মতো সংসদে তাঁর বক্তৃতায় প্রথম আলোকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যতই বানোয়াট নিউজ ছাপান না কেন, এতে যে আমি খুব একটা উত্তেজিত হব, রাগান্বিত হব, এমন না।’ আমাদের নেতা মতিয়া চৌধুরী কথা রেখেছেন। তিনি রাগান্বিত হননি। তবে সংসদে তাঁর শেষ বক্তৃতার দুই দিন পর ৭ জুলাই প্রথম আলোর ঝিনাইদহ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ দ্রুত বিচার আইনে একটি চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়েছে। বাদী কলের লাঙল বিক্রেতা। তাঁর অভিযোগ ছিল অসত্য খবর প্রকাশের আর মামলা করলেন চাঁদাবাজির! আবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল মানহানির অভিযোগে। সেখানে চাঁদাবাজির কোনো কথা ছিল না। ওই বাদী তদন্ত কমিটির কাছে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, সেখানেও চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ তিনি তোলেননি। আবার আটজন বাদীসহ লাঙলপ্রাপ্ত ১০ জন কোটচাঁদপুর থানায় ৪ জুলাই যে জিডি করেছিলেন, তাতে মোট ২০ লাখ টাকার মানহানির অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু আদালতে করা মামলায় আটজন ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার মানহানির অভিযোগ করেছেন। জিডিতে সাক্ষী হয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কলের লাঙলের ডিলার চাঁদাবাজির মামলার বাদী।
      শুধু বর্তমান সময়ের বাংলাদেশে নয়, নিকট বা দূর অতীতের বাংলাদেশে এমন ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। হয়তো আরও বহু বছর আমাদের এমন পরিস্থিতি বা পরিবেশ মেনে নিতে হবে। তাই দৈনিক প্রথম আলোকে ১৬ বছর ধরে সব সরকারের আমলেই মামলা-মোকদ্দমা আর নানামুখী আক্রমণের মধ্য দিয়ে পথ চলতে হয়েছে; এখনো হচ্ছে। কারণ, সরকার, বিরোধী দল আর নানা স্বার্থান্বেষী মহলের রাগ-ক্ষোভ রয়েছে প্রথম আলোর ওপর। সেসবই প্রকাশ পায় নেতাদের বিবৃতি-বক্তৃতা আর মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে।
      বর্তমানে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৬৪টি। এর মধ্যে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গত সাড়ে ছয় বছরে ৫৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০টি মামলা করেছেন আওয়ামী লীগের লোকজন। বাকি ছয়টি মামলা বিগত বিএনপি সরকারের আমলে করা। অবশ্য বিএনপি সরকারের আমলে আরও অনেক মামলা দেওয়া হয়েছিল। কেবল খাগড়াছড়ির বিএনপি নেতা ওয়াদুদ ভূঁইয়া একাই করেছিলেন ২৭টি মামলা। সম্পাদক, প্রকাশকসহ আমাদের কয়েকজন সাংবাদিককে বারবার সেসব মামলায় হাজিরা দিতে খাগড়াছড়ি যেতে হয়েছিল। তবে প্রয়াত বিএনপির নেতা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু এবং ওয়াদুদ ভূঁইয়া প্রমুখের মামলা আদালত শেষ পর্যন্ত খারিজ করে দিয়েছিলেন। অবশ্য বিএনপি আমলের ছয়টি মামলা এখনো বিচারাধীন।
      অন্যদিকে, গত দুই বছরে প্রথম আলোর চার-পাঁচজন জেলা ও থানা প্রতিনিধি সরকারি দলের নেতা ও কর্মীদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। তাঁদের একজনকে চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই আর থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে যেতে হয়েছে। একজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দেশ ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিছুদিন আগে অন্য একজনকে পিটিয়ে হাত-পাসহ সারা শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল। আবার একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া, চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে কারাগারে পুরে রাখা হয়েছিল। তাঁর স্ত্রীকে চাকরিতে হয়রানি করা হয়। শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় সব সময়ই আমাদের জেলা বা উপজেলা সাংবাদিকদের একধরনের ভয়ভীতির পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। এ রকম অবস্থা কখনো কাম্য নয়, গ্রহণযোগ্যও হতে পারে না।
      আসলে গত ৪৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে এ সবকিছুতেই আমাদের অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হয়েছে; এখনো হচ্ছে। যত বাধাই আসুক না কেন, আমরা এসব মেনে নিয়েই স্বাধীন সাংবাদিকতা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। আমরা আমাদের কাজ করে যাব। প্রিয় মতিয়া আপার কাজ তিনি করুন। তিনি আরও সফল হোন। সেটা আমরা সব সময় কামনা করি। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে, কৃষিতে আরও উন্নতি এবং দেশের মানুষের স্বার্থে তার সব কাজকে আমরা সমর্থন জানাব। যেমন জানিয়েছিলাম ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময়েও। সব শেষে আমরা আমাদের প্রিয় নেতা মতিয়া আপাকে আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করছি।

  21. মাসুদ করিম - ২ জুলাই ২০১৫ (১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

    ভারতীয় ক্রিকেট টিমকে ব্যঙ্গ করতে গিয়ে মুস্তাফিজের বোলিং বিশেষত্ব অফট্র্যাক কাটারকেই ব্যঙ্গ করল প্রথম আলোর নাকে খত দেয়া* পাল্টে দাও বেঞ্চমার্ক ‘রসআলো’।

    ভারতীয় ক্রিকেট টিমকে ব্যঙ্গ করতে গিয়ে মুস্তাফিজের বোলিং বিশেষত্ব অফট্র্যাক কাটারকেই ব্যঙ্গ করল প্রথম আলোর নাকে খত দেয়া* …

    Posted by Masud Karim on Wednesday, July 1, 2015

    * নাকে খত দেয়ার আগে নাম ছিল – ‘আলপিন’।

  22. মাসুদ করিম - ১৪ জুলাই ২০১৫ (১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ)

    চোখে ছানি ও উলফাবাণী নিয়ে তাদের পত্রিকা ব্যবসা শুরু হয়েছিল – চোখ অনেক আগেই অন্ধ হয়ে গেছে উলফাবাণী হয়ে গেছে জঙ্গিদানি

    Posted by Masud Karim on Sunday, July 12, 2015

  23. মাসুদ করিম - ২৮ জুলাই ২০১৫ (৬:৫১ অপরাহ্ণ)

  24. মাসুদ করিম - ৩০ আগস্ট ২০১৫ (৮:২১ পূর্বাহ্ণ)

    প্রথম আলোতে লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না : Omar Shehab

    Posted by Masud Karim on Saturday, August 29, 2015

    • মাসুদ করিম - ৩১ আগস্ট ২০১৫ (১২:২০ পূর্বাহ্ণ)

      পত্রিকার প্রাণ হল বিজ্ঞাপন, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে উস্কানি দেয়ার জন্য প্রথম আলো কালের কণ্ঠে সব সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে …

      Posted by Masud Karim on Tuesday, January 7, 2014

  25. মাসুদ করিম - ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (১২:০৮ পূর্বাহ্ণ)

    প্রথম আলোর ছবি কুরুচিপূর্ণ: ইয়াসমীন হক

    বাংলা দৈনিক প্রথম আলোয় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার প্রতিবেদনে যে ছবি ছাপা হয়েছে সেটাকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করে এর সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াসমীন হক।

    তিনি বলেছেন, “৩১ অগাস্ট প্রথম আলোতে আমার একটা ছবি ছাপানো হয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে আমি আঙ্গুল তুলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেনকে ‘শাসাচ্ছি’ এবং তিনি করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছেন।

    “আঙ্গুল নাড়িয়ে কথা বলা আমার একটি বদ অভ্যাস এবং সেই সুযোগটি গ্রহণ করে প্রথম আলো এই কুরুচিপূর্ণ ছবিটি দিয়ে জনাব আখতার হোসেনকে যেভাবে অসম্মানিত করেছে সেটি আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছে।”

    গত ৩০ অগাস্ট শাবিপ্রবিতে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ সময় অধ্যাপক ইয়াসমীনসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন।

    পরদিন পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ওই ছবি দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো।
    ওই ছবিতে দেখা যায়, অধ্যাপক ইয়াসমীন আঙ্গুল তুলে জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেনকে কিছু একটা বলছেন। আর দুই হাত জোড়ে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন ওসি।

    ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, “শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন।”

    তবে ছবিতে যে ভাব প্রকাশ হয়েছে বাস্তবিক অর্থে বিষয়টি তেমন ছিল না জানিয়ে ইয়াসমীন হক বলেন, “প্রকৃতপক্ষে ৩০ অগাস্ট জনাব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে একটি মহিলা পুলিশের দল আমাকে রক্ষা না করলে আমি আরও বড় ধরনের আঘাত পেতে পারতাম এবং সেজন্যে তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

    “প্রথম আলোতে প্রকাশিত ছবিটির জন্যে আমি আজকে জনাব আখতার হোসেনের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। জনাব আখতার হোসেনকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়ার জন্য এবং মহিলা পুলিশের দলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আমি দুটি ছবি যুক্ত করে দিচ্ছি।”

    • মাসুদ করিম - ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (৩:৫১ অপরাহ্ণ)

      কুরুচি [অ্যাট দ্য রেইট অফ] প্রথম আলো – ওরফে 'পাকিস্তানের আলো' / 'উলফার আলো'

      Posted by Masud Karim on Thursday, September 3, 2015

  26. মাসুদ করিম - ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (২:৩০ অপরাহ্ণ)

    দেশের একজন শিক্ষামন্ত্রী কীভাবে এ রকম আজগুবি একটা বিষয় বিশ্বাস করতে পারেন সেটা অবশ্যি আমি পরদিন ভোরবেলাতেই বুঝতে পেরেছিলাম। অনলাইনে খবরটি নিশ্চয়ই আগেই ছাপা হয়েছে, আমি দেখিনি। সারা দেশের সকল পত্রপত্রিকা যখন ছাত্রলীগের এই হামলার নিন্দা করে খবর ছাপিয়েছে, সকল টিভি চ্যানেল যখন খুব গুরুত্ব দিয়ে খবরটি প্রচার করেছে, তখন ‘প্রথম আলো’ তাদের খবরের শিরোনাম করেছে এভাবে: ‘ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক এবং শিক্ষকের হাতে উপাচার্য লাঞ্ছিত’।

    ‘প্রথম আলো’ এই দেশের মূলধারার পত্রিকা। এই দেশের মূলধারার অনেক মানুষ এই পত্রিকা পড়েন, তাদের সার্কুলেশন বিশাল। কাজেই ঘটনার পরের দিন বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ জেনে গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এতই নিকৃষ্ট শ্রেণির প্রজাতি যে, তারা ভাইস চ্যান্সেলরকে লাঞ্ছনা করতে সংকোচ বোধ করেন না। ‘প্রথম আলো’র ইতিহাসে এই প্রথমবার ছাত্রলীগের দুস্কর্মের বর্ণনা ‘হা বিতং’ করে ছাপা হল না!

  27. মাসুদ করিম - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ (৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

    দেশের পক্ষে কাজ করতে দৈনিক প্রথম আলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ

    বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের দশম সম্মেলনে শেষে দেশে ফেরার পর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

    বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল (রোববার) দোহা এয়ারপোর্টে বসে ইন্টারনেটে প্রথম আলোর একটা খবর পড়েছি যে, ৩০ লাখ শ্রমিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পরে অন্য কয়েকটা পত্রিকাও করেছে।

    “হুইচ ইজ টোটালি অ্যা ফলস রিপোর্ট। দিস রিপোর্ট ইজ নাথিং বাট এগেইনস্ট দ্য ইন্টারেস্ট অব আওয়ার গার্মেন্টস ইন্ডাট্রিজ।”

    কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “যে সংগঠনের নামে তারা রিসার্চ করে বের করেছে, এই রকম সংগঠনের নাম আমরা জীবনেও শুনিনি। অথচ নিউজটা খুব প্রমিন্যান্টলি ছাপা হয়েছে।”

    বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্টার্নস সেন্টার ফর বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, তৈরি পোশাকশিল্পের ঠিকাকাজের কারখানার প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করেন। কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কর্মসূচির আওতায় নেই কারখানাগুলো।

    প্রতিবেদনটি কোন সময়ে প্রকাশ করা হয়েছে সে প্রশ্ন রেখে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “রানা প্লাজা ধসের পর আমাদের একটা খারাপ ইমেজ সৃষ্টির চেষ্টা হয়। এটাকে নিরসন করে যখন আমরা অগ্রগতির পথে যাচ্ছি।

    “আন্তর্জাতিক বিশ্বে আমরা স্বীকৃতি আদায় করতে পেরেছি যে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখন কম্প্লায়েন্ট, ঝুঁকিপূর্ণ নয়। যেখানে অ্যালায়েন্স সেই মতেই সনদ দিচ্ছে যে, চার হাজার সাড়ে তিন হাজার শিল্পের মধ্যে ৩২-৩৩টা ঝুঁকিপূর্ণ।”

    তিনি বলেন, যেখানে ইউএস এইড, ইউকে এইড সার্ভে করিয়েছে। যে সার্ভে রিপোর্টে শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তারা জানতে পেরেছে, ন্যূনতম মজুরি ৭ হাজার টাকার বেশি পায় শ্রমিকরা। যদিও ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি, ওভার টাইম নিয়ে তারা ৭ হাজারের বেশি পায়।

    “যেখানে তারা (শ্রমিকরা) বলছে, তাদের কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নাই। সেই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বিশ্বে অ্যাকোর্ড-অ্যালায়েন্স আমাদের পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছে। সেই মুহূর্তে এই রিপোর্ট।”

    তোফায়েল বলেন, “আমরা চাই, আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলো দেশের পক্ষে কাজ করুক। ভালো সংবাদ পরিবেশন না করে, এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন করা সমিচীন না। আমি খুব দুঃখিত। আমার খুব খারাপ লেগেছে, যখন পড়েছি।”

    যখন কেউ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু বলছে না, তখন এই রিপোর্ট- ক্ষোভের সুরে একথা জানিয়ে তিনি বলেন, “যখন ডাব্লিউটিওতে গিয়ে ভালো মর্যাদা নিয়ে আমরা ফিরে আসলাম, সেই মুহূর্তে এই রিপোর্ট। আমার খুব খারাপ লেগেছে।”

  28. মাসুদ করিম - ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ (৫:৪৮ অপরাহ্ণ)

    Matiur Rahman

    Journalism

    MATIUR RAHMAN is the Editor and Publisher of the daily Prothom Alo (First Light), the highest circulated newspaper of Bangladesh. Prothom Alo was launched in November 4, 1998 and he has been the Editor of this leading Bengali daily since then.

    The newspaper’s nonpartisan and uncompromising stance towards presenting the truth as well as its constructive advocacy and unsparing editorials attracted legions of readers in no time and consequently it became the most trusted and respected newspaper of the country.[!!!] In its journey, Prothom Alo has broken all the prevalent circulation, readership and revenue records of the print media industry of Bangladesh and is relentlessly pursuing to take itself to newer heights.[bravo]

    Matiur Rahman has pursued a vigorous editorial policy of strengthening democracy and establishing fundamental human rights. His occasional column ‘Commentary’ has gained tremendous popularity among readers.

    Before launching the daily Prothom Alo, Matiur Rahman worked as the Editor of the weekly Ekota from 1970 to 1991 and the daily Bhorer Kagoj from 1992 to 1998.

    Matiur Rahman was born in January 2, 1946. He completed his Post Graduation Degree in Statistics from Dhaka University in late 60s. During his student life he was actively involved in student politics and was the Central Leader of the then largest student organisation, Bangladesh Students’ Union, from 1962 to 1969. He was also the General Secretary of Dhaka University Sangskriti Sangstha, a cultural organisation of Dhaka University, from 1965 to 1968.

    Matiur Rahman was active in leftist politics of Bangladesh and was one of the central leaders of the Communist Party of Bangladesh (CPB) from 1973 to 1990. As a key person in Dhaka he helped to organise South Asian Association for Regional Cooperation (SAARC) Election Observer Team, which was initiated by Ethnic Study Centre of Sri Lanka and funded by NORAD for the National Parliament Election of Bangladesh in 1991 and 1996. He was also a member of the non-governmental SAARC Election Observer Team for Pakistan National Election held in 1997 and 2002. He attended numerous international seminars and conferences in many countries around the world.

    The Ramon Magsaysay Award Foundation recognised Matiur Rahman’s relentless efforts in 2005 to create mass awareness against acid violence and collect funds to help acid burnt women through Prothom Alo and Prothom Alo Trust in 2005. He was described as “the navigator of positive social and cultural change” in Bangladesh.

    He loves to read books and is also interested in collecting paintings.

  29. মাসুদ করিম - ১৮ মার্চ ২০১৬ (৮:১৪ অপরাহ্ণ)

    প্রথম আলোয় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার ‘গ্রহণযোগ্য নয়’: মুহিত

    অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক বিবৃতিতে বলেছেন, তার যে সাক্ষাৎকার দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে, তার বক্তব্য ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।

    তিনি বলছেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সঙ্গে ‘সাক্ষাৎকারের বাইরেও’ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে, যা পত্রিকাটি ছাপিয়ে দিয়েছে।
    ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত’ শিরোনামে অর্থমন্ত্রীর ওই সাক্ষাৎকার ছিল শুক্রবার প্রকাশিত প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদন।

    সেখানে গভর্নর আতিউর রহমান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মুহিত। বলেছেন, বাজেট ব্যবস্থাপনায় গত সাত বছরে তিনি যা করেছেন, সে ব্যাপারে এই মুহূর্তে তার চেয়ে ‘বিশেষজ্ঞ দ্বিতীয় ব্যক্তি’ পৃথিবীতে নেই।

    শুক্রবার দুপুরে এক বিবৃতিতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেন মুহিত, যার একটি অনুলিপি তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে পাঠিয়েছেন।

    সেখানে প্রথম আলো সম্পাদকের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, “সোহরাব হোসেন ও ফখরুল ইসলাম হারুন গতকাল ১৭ মার্চ আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ বসে একটি সাক্ষাৎকার নেন। সেখানে সাক্ষাৎকারের বাইরেও নানা বিষয় আলোচিত হয় এবং অনেক বিষয়ে আমি সাবধান করে দেই যে তা প্রকাশিতব্য নয়।

    “সচরাচর আমার পূর্ব নির্ধারিত কোনো সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হলে তার খসড়াটি সাক্ষাৎকারীরা আমাকে দেখে দিতে প্রদান করেন এবং আমার সম্পাদিত সাক্ষাৎকারই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।”

    এই সাক্ষাৎকারে ‘সেই রুটিন’ প্রতিপালিত হয়নি বলে মুহিত তার বিবৃতিতে জানিয়েছেন।
    তিনি লিখেছেন, “এই সাক্ষাৎকারে বিশেষ করে প্রতিভাত হলো যে, বয়সের চাপে আমি এখন সদা সতর্ক থাকতে পারি না।”

    সাক্ষাৎকারটি যে ‘চূড়ান্ত অনুমোদন ছাড়া’ প্রকাশিত হয়েছে এবং এর বক্তব্য যে মন্ত্রীর কাছে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’, তা শনিবার ‘প্রথম পৃষ্ঠায় বড় হরফে’ জানিয়ে দিতে প্রথম আলো সম্পাদককে ‘অনুরোধ’ করেছেন মুহিত।

    বিবৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাক্ষাৎকারটি পড়ার পর মর্মাহত ও দুঃখিত হয়েছি। দেশের প্রথম সারির দৈনিকে এ ধরনের সাক্ষাৎকার প্রকাশ আমাকে ব্যথিত করেছে।”

  30. মাসুদ করিম - ২ ডিসেম্বর ২০১৮ (৭:৩২ অপরাহ্ণ)

    হাউস অব কমন্স এর ভূতুড়ে প্রতিবেদন ও সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব

    মোবাইল ফোনে দৈনিক প্রথম আলো পড়ছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়লো একটি প্রতিবেদনে, যার শিরোনাম, ‘হাউস অব কমন্সের প্রতিবেদন: দাবি পূরণ ছাড়া বিএনপির ভোটে আসা ছিল অপ্রত্যাশিত’।[১]

    শিরোনামটি দেখে খটকা লাগলো। প্রায় দুই বছর ধরে আমি যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সেশনাল টিউটর হিসেবে স্নাতক ছাত্র-ছাত্রীদের ‘জেনারেল প্রিন্সিপালস অব কন্সটিটিউশনাল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ল’ পড়াচ্ছি। হাউস অব কমন্স হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সংসদের নিম্নকক্ষ বা লোয়ার হাউস। বিএনপি ও বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘হাউস অব কমন্স’ একটি প্রতিবেদন ছাপিয়ে ফেলেছে – যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক আইন পড়ানোর অভিজ্ঞতার কারণে তা বিশ্বাস হচ্ছিলো না।

    দ্রুত প্রতিবেদনটি পড়লাম। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন লন্ডনে অবস্থানরত জনাব তবারুকুল ইসলাম। ফেইসবুকে তিনি নিজেকে প্রথম আলোর লন্ডন করেসপন্ডেন্ট হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।[২]

    প্রতিবেদনের শুরুতেই জনাব ইসলাম জানাচ্ছেন:

    “বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর ধারে-কাছেও নেই বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স। এক প্রতিবেদনে হাউস অব কমন্স এই মন্তব্য করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিচ্ছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ণ তীব্র রয়ে গেছে। প্রতিবেদনে হাউস অব কমন্স বলেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজনসহ কোনও দাবি পূরণ না হওয়া স্বত্বেও নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের ঘোষণা অপ্রত্যাশিত।”

    এর পর জনাব ইসলাম লিখেছেন:

    “বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন পরিস্থিতি সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের এই প্রতিবেদন ‘রিসার্চ ব্রিফিং’ নামে পরিচিত। দেশটির এমপিদের অবগতির জন্য এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।”

    তিনি আরো জানাচ্ছেন-

    “হাউস অব কমন্সের এই প্রতিবেদনে বিএনপির দাবি-দাওয়া, খালেদার মামলা ও সাজা, সংলাপের আয়োজনসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে।”

    দৈনিক প্রথম আলোর তবারুকুল ইসলাম রচিত এই প্রতিবেদনে অন্তত ছয়বার দাবি করা হয়েছে যে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটি যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স-এর। এই প্রতিবেদনের পঙ্‌ক্তি পড়ে পাঠকদের এমনটাই ভাবা স্বাভাবিক যে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স একটি ‘রিসার্চ ব্রিফিং’ প্রকাশ করেছে যেখানে হাউস অফ কমন্স তার বক্তব্য তুলে ধরেছে। বক্তব্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে এই যে “বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর ধারে-কাছেও নেই”।

    প্রিয় পাঠক, আপনাদের স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি যে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স কোনও ‘রিসার্চ ব্রিফিং’ প্রকাশ করেনি।

    নভেম্বর ২৯, ২০১৮ তারিখে যুক্তরাজ্যের ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’ একটি ‘ব্রিফিং পেপার’ প্রকাশ করে, যার নাম ‘Bangladesh: November 2018 update’।[৩]

    ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স-এর একটি স্বাধীন তথ্য ও গবেষণা ইউনিট। এ কথা তার ওয়েবসাইটে স্পষ্টভাবেই বলা আছে।[৪]

    এখানে আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ‘Bangladesh: November 2018 update’ শিরোনামের ব্রিফিং পেপারটি হাউস অব কমন্স রচনা করেনি, এমনকি হাউফ অব কমন্স-এর কোন সংসদ সদস্যও রচনা করেননি। ব্রিফিং পেপারটি রচনা করেছেন জনাব জন লান (Jon Lunn), যিনি হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির একজন সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট।[৫]

    এরকম অসংখ্য ব্রিফিং পেপার বা রিসার্চ ব্রিফ যুক্তরাজ্যের হাউস অফ কমন্স লাইব্রেরি, হাউস অব লর্ডস লাইব্রেরি ও পার্লামেন্টারি অফিস অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কর্মকর্তারা নিয়মিত ভিত্তিতে রচনা ও প্রকাশ করে থাকেন।

    নভেম্বর ২৯, ২০১৮ তারিখে ‘Bangladesh: November 2018 update’ সহ মোট ৫টি ব্রিফিং পেপার প্রকাশিত হয়েছে হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি থেকে।[৬]

    বাকি ব্রিফিং পেপারগুলোর বিষয়বস্তু ছিল উত্তর আফ্রিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, যুক্তরাজ্যের গৃহায়ণ প্রকল্প ও উইল লেখকদের বিধিনিয়ম।

    ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে যখন আমার পিএইচডি সংক্রান্ত গবেষণা করছিলাম তখন আমাদের ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কিত এমন বেশ কিছু ব্রিফিং পেপার পড়েছিলাম।[৭] এগুলো লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন বিষয়ে অবগত করা যাতে তারা প্রয়োজনে এইসব ব্রিফিং পেপার বা রিসার্চ ব্রিফ পড়ে একটি অবস্থান গ্রহণ করতে সক্ষম হন, যা পরবর্তীতে হাউস অব কমন্স বা হাউস অব লর্ডস-এর সভায় আলোচনা ও ঐকমত্যে পোঁছার পর ওই দুটি সভার ভাষ্য হিসেবে পরিচিতি পাবে। একারণেই জনাব জন লান রচিত ‘Bangladesh: November 2018 update’ এর শেষ পৃষ্ঠায় ‘Disclaimer’-এর নিচে বলা আছে:

    “This information is provided to Members of Parliament in support of their parliamentary duties. It is a general briefing only and should not be relied on as a substitute for specific advice. The House of Commons or the author(s) shall not be liable for any errors or omissions, or for any loss or damage of any kind arising from its use, and may remove, vary or amend any information at any time without prior notice.”[৮]

    সহজ ভাষায় আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট জন লান রচিত ব্রিফিং পেপার কখনোই যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স-এর প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হবে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ‘প্রিন্সিপাল অব পার্লামেন্টারি সভেরিনিটি’, যা যুক্তরাজ্যের সংবিধানের অন্যতম মূলমন্ত্র হিসেবে পরিচিত। প্রিন্সিপাল অব পার্লামেন্টারি সভেরিনিটির কারণেই যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টকে সার্বভৌম ভাবা হয়। এই কারণেই পার্লামেন্টের ক্ষমতা আছে ইচ্ছেমত আইন সৃষ্টি বা বাতিল করার। ফলে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে:

    “Parliamentary sovereignty is a principle of the UK constitution. It makes Parliament the supreme legal authority in the UK, which can create or end any law. Generally, the courts cannot overrule its legislation and no Parliament can pass laws that future Parliaments cannot change. Parliamentary sovereignty is the most important part of the UK constitution.”[৯]

    তাই যখন হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির একজন সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট একটি ব্রিফিং পেপার রচনা করবেন, ‘প্রিন্সিপাল অব পার্লামেন্টারি সভেরিনিটি’র আলোকে সেই ব্রিফিং পেপার ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’র ব্রিফিং পেপার হিসেবে বিবেচিত হবে, এবং তা কখনওই হাউস অব কমন্স বা যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ব্রিফিং পেপার বা প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হবে না। প্রয়োজনে হাউস অব কমন্স একটি সার্বভৌম সত্তা হিসেবে অবশ্যই সেই ব্রিফিং পেপার পড়বে এবং তার সাথে সাথে আরো বহু তথ্য-উপাত্ত ব্যাখ্যা বিবেচনায় নেয়ার পর তার নিজস্ব বক্তব্য প্রকাশ হিসেবে করবে।

    ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’র ব্রিফিং পেপার যেকোনও অবস্থাতেই হাউস অব কমন্স বা হাউস অব লর্ডস-এর প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হবে না, এই বিষয়টি নিয়ে আমি ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক আইনের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের সাথে আলোচনা করেছি। প্রিয় পাঠক, আপনাদের আশ্বস্ত করছি, আমার ব্যাখ্যায় কোনও ভুল নেই।

    বাংলাদেশের নির্বাচনী মাঠে সবার সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই, এমন কোনও কথা যুক্তরাজ্যের ‘হাউস অব কমন্স’ বলেনি। কথাগুলো বলেছেন জন লান, যিনি ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’র একজন সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট। দৈনিক প্রথম আলো ও জনাব তবারুকুল ইসলাম হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির একজন সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট-এর বক্তব্যকে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স- এর বক্তব্য হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন, যা শুধু ভুল নয়, অনৈতিকও বটে।

    পাঠক, প্রথম আলোর সেই প্রতিবেদনের শুরুতেই হাউস অব কমন্স-এর ছবি দেয়া হয়েছে। যেন এই ধারণাই দেয়া হচ্ছে যে, হাউস অব কমন্স-এর সভাকক্ষেই বর্ণিত ব্রিফিং পেপারটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাঠককে বিভ্রান্ত করার এমন কৌশল কোনওভাবেই কাম্য নয়। জনাব তবারুকুল ইসলাম ও দৈনিক প্রথম আলোকে বলবো, এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যাপারে আপনাদের আরো অনেক যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। একজন সাধারণ নাগরিক ও পাঠক হিসেবে বাংলাদেশের একটি অন্যতম দৈনিকের কাছ থেকে আমরা যৎসামান্য পেশাদারিত্ব আশা করতেই পারি।

    • মাসুদ করিম - ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ (৯:২৮ পূর্বাহ্ণ)

      জাতীয় দৈনিকের ভুল সংবাদ এবং পরে ‘প্রকাশিত খবরের ব্যাখ্যা’ প্রসঙ্গে

      অনেকেরই হয়তো নজরে পড়েছে- নভেম্বর ৩০, ২০১৮ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার নাম ছিল- ‘হাউস অব কমন্সের প্রতিবেদন: দাবি পূরণ ছাড়া বিএনপির ভোটে আসা ছিল অপ্রত্যাশিত’। সেখানে বলা হয়েছিল- “বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর ধারে-কাছেও নেই বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স।”

      এর জবাবে ডিসেম্বরের ১ তারিখে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বাংলা মতামত পাতায় আমার ‘হাউস অব কমন্স এর ভূতুড়ে প্রতিবেদন ও সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব’ লেখাটি প্রকাশ হয়। সেখানে আমি বলেছিলাম, ‘Bangladesh: November 2018 update’ নামের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটি যুক্তরাজ্যের সংসদের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব কমন্স’-এর প্রতিবেদন নয়। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি অন্যান্য কয়েকটি জাতীয় দৈনিকেও প্রথম আলোর নভেম্বর ৩০ তারিখের মতো প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছিল। আগে জানলে বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত লেখায় আমি সেই সব পত্রিকার কথাও উল্লেখ করতাম।

      গতকাল (ডিসেম্বর ৩, ২০১৮) প্রথম আলো তার প্রথম পাতায় একটি ব্যাখ্যা ছাপিয়েছে, যার শিরোনাম ‘প্রকাশিত খবরের ব্যাখ্যা’। প্রথম আলোর ই-পেপার থেকে ব্যাখ্যাটি সংগ্রহ করে পড়েছি, কারণ পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে সেই ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি।

      “প্রকাশিত খবরের ব্যাখ্যা”-তে বলা হয়েছে যে ডিসেম্বর ১ তারিখে প্রথম আলোর মুদ্রিত সংস্করণে নভেম্বর ৩০ তারিখের প্রতিবেদনের বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ প্রকাশ হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে রিসার্চ ব্রিফিং সাংসদদের অবগতির জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে যে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়নি যে রিসার্চ ব্রিফিং জাতীয় দলিল হাউস অব কমন্সের অবস্থান বা প্রস্তাব। এছাড়াও ‘প্রকাশিত খবরের ব্যাখ্যা’-তে স্বীকার করা হয়েছে যে, ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’ সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফটি তৈরি করেছিল।

      প্রিয় পাঠক, আপনারা খেয়াল করবেন, নভেম্বর ৩০/ডিসেম্বর ১ তারিখে প্রকাশিত প্রথম আলোর প্রতিবেদনগুলোতে কোথাও ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’ এর কথা বলা হয়নি। সেখানে বার বার সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফিংটিকে যুক্তরাজ্যের ‘হাউস অব কমন্স’-এর প্রতিবেদন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। একদিকে বলা হয়েছে যে রিসার্চ ব্রিফিং সাংসদদের অবগতির জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে, আবার অন্যদিকে বলা হয়েছে যে রিসার্চ ব্রিফিং ‘হাউস অব কমন্স’ এর প্রতিবেদন। এই দুটি কথা পরস্পরবিরোধী। সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফটি যে ‘হাউস অব কমন্সের’ প্রতিবেদন নয়, বরং ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’-র, তা আমি পরিষ্কার করেছিলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত লেখায়।

      ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’ যে সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফটি তৈরি করেছিল – ‘প্রকাশিত খবরের ব্যাখ্যা’-তে প্রথম আলোর এই স্বীকারোক্তি গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য পত্রিকাটি ধন্যবাদ পাবে। প্রথম আলো এটি স্বীকার না করলে সঙ্গত কারণেই পাঠক খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে করতেন যে সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফটি হচ্ছে ‘হাউস অব কমন্স’ এর প্রতিবেদন।

      প্রথম আলোর ‘প্রকাশিত খবরের ব্যাখ্যায়’ শেষ লাইনে বলা হয়েছে- “প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উল্লিখিত রিসার্চ ব্রিফিংটিও তারাই [হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি] তৈরি করেছে এবং তা একইভাবে যুক্তরাজ্যের সংসদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।”

      এ প্রসঙ্গে দুটি কথা বলবো, যা পড়ে প্রথম আলো ও সকল পাঠক আশা করি উপকৃত হবেন। সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফিং ‘যুক্তরাজ্যের সংসদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়েছে বটে, কিন্তু সেই ওয়েবসাইটের কোথায় প্রকাশ হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। আমি করে দিচ্ছি।

      যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ‘হাউস অব কমন্স’-এর নিজস্ব প্রতিবেদন এবং ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির’ প্রতিবেদন আলাদা আলাদা জায়গায় প্রকাশ হয়। ‘হাউস অব কমন্স’-এর নিজস্ব প্রতিবেদন, যেমন ‘Sessional Returns’, ‘Sessional Diary’, ‘Standing Orders of the House of Commons – Public Business’, ‘House of Commons Commission Publications’ ইত্যাদি প্রকাশিত হয় এখানে- https://bit.ly/2BQkplr; এবং ‘হাউস অফ কমন্স লাইব্রেরি’, ‘হাউস অব লর্ডস লাইব্রেরি’ ও ‘পার্লামেন্টারি অফিস অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-এর প্রতিবেদন প্রকাশ হয় এখানে- https://bit.ly/2FYWeoR।

      ‘হাউস অব কমন্স’-এর প্রতিবেদন এবং ‘হাউস অফ কমন্স লাইব্রেরি’ (যেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফিং ছাপানো হয়েছে) যেহেতু সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের প্রতিবেদন, তাই সেগুলো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে স্পষ্টভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থান পেয়ে থাকে।

      প্রথম আলোর নভেম্বর ৩০ তারিখের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর ধারে-কাছেও নেই বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স”। ডিসেম্বর ১ তারিখে প্রথম আলোর মুদ্রিত সংস্করণের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, “হাউস অব কমন্সের প্রতিবেদন”। তথ্যগতভাবে এই কথাগুলো ভুল এবং উদ্দেশ্যের দিক থেকে অনৈতিক।

      যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স “বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর ধারে-কাছেও নেই” – এমন কথা বলেনি বা তার কোনও প্রতিবেদনে প্রকাশ করেনি। করলে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ‘হাউস অব কমন্স’ এর প্রকাশনার নিজস্ব লিঙ্কে (https://bit.ly/2BQkplr) প্রকাশ করতো। যেহেতু বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফিং হাউস অব কমন্সের একজন গবেষক লিখেছেন, তাই হাউস অব কমন্সের লাইব্রেরির প্রকাশনার নিজস্ব লিঙ্কে তা প্রকাশিত হয়েছে (https://bit.ly/2FYWeoR)।

      সাংবাদিক কামাল আহমেদ নিয়মিতভাবে প্রথম আলোতে কলাম লিখেন। ফেইসবুকে অনেকেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর প্রকাশিত আমার লেখাটি শেয়ার করেছেন। শেয়ার করেছেন এমন দুইজন ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জনাব আহমেদ মন্তব্য করেছেনঃ

      “প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেওয়ার এখতিয়ার প্রথম আলোর, আমার নয়। তবে, যে লেখাটি নিয়ে আপনি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সেবিষয়ে আমি আমার ব্যাক্তিগত মতামত দিতে পারি। প্রথমত: হাউজ অব কমন্সের কাজের ধারা সম্পর্কে জানার জন্য এই লিংকের সহায়তা নিতে পারেন। https://researchbriefings.parliament.uk/ এই পোর্টালে যা প্রকাশিত হয় তা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রকাশনা। তবে, কোনো প্রকাশনাকে যদি কেউ পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাবের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন সেটা সেই ব্যাক্তির সমস্যা। […] কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বিভাগ একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করলে সেটির পরিচয় সেই প্রতিষ্ঠানের নামে হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।”

      জনাব আহমেদ, ‘হাউস অব কমন্স এর ভূতুড়ে প্রতিবেদন ও সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব’ লেখায় আমি কোথাও হাউস অব কমন্সের লাইব্রেরির প্রতিবেদনের সাথে পার্লামেন্টের গৃহীত প্রস্তাব গুলিয়ে ফেলিনি। মনোযোগ দিয়ে লেখাটি পড়তে অনুরোধ করবো। ‘Bangladesh: November 2018 update’ নামের রিসার্চ ব্রিফিংকে হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির প্রকাশনা বলতে পারেন। দৈনিক প্রথম আলো নভেম্বর ৩০ বা ডিসেম্বর ১ তারিখের প্রতিবেদনগুলোতে তা বলেনি। দৈনিক প্রথম আলো বলেছে সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফিংটি যুক্তরাজ্যের সংসদের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব কমন্স’ এর প্রতিবেদন।

      ডিসেম্বর ৩ তারিখে প্রকাশিত ব্যাখ্যাতে প্রথম আলো তাদের পূর্ববর্তী অবস্থান পরিবর্তন করে স্বীকার করেছে সংশ্লিষ্ট রিসার্চ ব্রিফিংটি হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির প্রতিবেদন। যুক্তরাজ্যের সংসদের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব কমন্স’ একটি সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান। তার নিজস্ব প্রতিবেদনকে হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির প্রতিবেদনের সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবে না। আসা করি তফাৎটি এবার বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।

  31. মাসুদ করিম - ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ (১২:৪৮ অপরাহ্ণ)

  32. মাসুদ করিম - ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (৪:২৮ পূর্বাহ্ণ)

    পুরুষতান্ত্রিক প্রবন্ধ লেখা যতটা খারাপ, সেটি প্রকাশের ব্যবস্থা করাটাও ততটাই খারাপ। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ কুতসিৎ পুরুষতান্ত্রিক লেখা লিখেছেন, প্রথম আলো সেটি প্রকাশ করেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার যখন শুরু হয়, আসিফ নজরুল ইনিয়ে বিনিয়ে “স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হচ্ছেনা” বলে কথা ছড়াতো, সেগুলো ছাপাতো প্রথম আলো। ২০০৭ এ মিলিটারী যখন ক্ষমতা নেয়, তাদের প্রপাগাণ্ডা ছড়াতো প্রথম আলো। তালির দ্বিতীয় হাতের ব্যাপারে ভুলে গেলে চলবে না।

    //”আপনি বেশ সেক্সিস্ট” বললে এককালে কেউ কেউ খুশি হতো, লজ্জা পেত। ভাবত তাকে সেক্সি বলছি। কারণ সেক্সিস্ট শব্দটার মানে জানত না। সেক্স শুনেই অজ্ঞান। একবার তাও এক কলিগ জিজ্ঞেস করেছিল, “আপু, সেক্সিস্ট কি নতুন কোনো শব্দ?” সেক্সিস্টের অর্থ শুনে উনি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।
    তো, সেক্সিস্ট মানে কী?
    যে ব্যক্তি মানুষের সেক্স অর্থাৎ জৈবিকভাবে প্রাপ্ত লিঙ্গপরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক/অবমাননাকর মতপ্রকাশ/আচরণ করে সে সেক্সিস্ট।
    যারা এতকাল নারীর শরীরের ভাঁজে ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে রহস্য খুঁজেছেন, তা নিয়ে লিখেটিখে ভেবেছেন খুব সাহিত্য হচ্ছে, তাদের এখন জানতে হবে যে সেই দিন শেষ। এগুলো সেক্সিস্ট আচরণ। এগুলো করলে আপনাকে দুয়ো দেওয়া হবে। নারীর রহস্য আর কিছুই না, আপনার নিজের চিন্তার সংকীর্ণ গলির অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া আপনার শুভবুদ্ধি। এটা এখন বুদ্ধিবৃত্তির আস্তাকুঁড়ে যাবে।//Trishia Nashtaran

  33. মাসুদ করিম - ৩১ জুলাই ২০২০ (৪:১২ অপরাহ্ণ)

  34. মাসুদ করিম - ৭ এপ্রিল ২০২৩ (৬:১১ অপরাহ্ণ)

    প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল চেয়ে শহীদ মিনারে মানববন্ধন
    https://www.banglanews24.com/national/news/bd/1089082.details

    প্রথম আলো পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল ও চক্রান্তকারীদের শাস্তি চেয়ে মানববন্ধন করেছে স্বাধীনতা-সচেতন নাগিরক সমাজ।

    বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।

    এতে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতাজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ অভাবনীয় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের নাম উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বারবার উচ্চারিত হয়। একই সঙ্গে একটি নির্বাচিত সরকারের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে নির্বাচন এগিয়ে আসছে। এ সময়ে নানা অপকৌশল শুরু হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মৌলিক দায়িত্ব। একটি বিশেষ পটভূমির উদ্দেশ্যে আমাদের স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে। যেসব পত্রিকা এসব অপকর্মে যুক্ত আছে, তাদের বিরুদ্ধে সবার সম্মিলিত সোচ্চার হওয়াই সময়ের দাবি।

    মহান স্বাধীনতার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এ ধরনের প্রয়াস অব্যহত থাকবে বলে জানান ঢাবি উপাচার্য।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, প্রথম আলো এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের মুখপত্র। তারা আমাদের নাম ছাপায় না। যেখানে অন্য পত্রিকায় আমাদের বিবৃতি ছাপায়। খলনায়ক হওয়ার চেষ্টা করবেন না।

    সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, বাংলাদেশ বিরোধী যে অপশক্তি তাদেরকে জানিয়ে দেওর জন্য এখানে সমবেত হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

    নাট্যব্যক্তিত্ব পিযূষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছিল তৎকালীন জাতীয় দৈনিক। ঠিক তেমনি স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রথম আলোর অর্বাচীন সাংবাদিক ষড়যন্ত্রের জাল তৈরি করল। এটি হঠাৎ করেই হয়নি। একজন মফস্বল সাংবাদিক সংবাদ পাঠাল, এটি হঠাৎ করেই পাবলিশড হয়ে গেছে এরকম না। ওই গোষ্ঠি সুপরিকল্পিতভাবে এটি করেছে। এসময় তিনি প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

    প্রথম আলোর বিরুদ্ধে রমনা থানায় করা মামলার বাদী আইনজীবী মশিউর মালেক প্রথম আলো পত্রিকাকে কালো তালিকাভুক্ত করে পত্রিকা বাতিলের দাবি জানান।

    কর্মসূচিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, জোট ও সংগঠন অংশ নেয়। সেগুলো হলো- স্লোগান ৭১, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, জাতীয় ওলামা সমাজ, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোট, আন্তর্জাতিক শিল্পী সাহিত্যিক সম্মিলিত পরিষদ, বাংলার মুখ, বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া স্মৃতি পাঠাগার, বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ আন্তর্জাতিক পরিষদ, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংঘ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম ব্রিগেড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ, বিচ্চু বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যমঞ্চ, বৃত্তান্ত ৭১ ফাউন্ডেশন।

  35. মাসুদ করিম - ৭ এপ্রিল ২০২৩ (৬:১৩ অপরাহ্ণ)

    প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল চাওয়া এখন ভুল। প্রথম আলো বন্ধ বিষয়ে আমার টুইট, //প্রথম আলো বন্ধ করে দেয়ার সবচেয়ে ভাল সময় ছিল ২০০৯, প্রথম আলো বন্ধ করে দেয়ার সবচেয়ে ভাল সময় আবার আসবে ২০২৮এ, আর প্রথম আলো নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সবচেয়ে ভাল সময় প্রতিদিন।//
    https://twitter.com/urumurum/status/1644386676289175552

  36. মাসুদ করিম - ১০ এপ্রিল ২০২৩ (৪:৩৭ অপরাহ্ণ)

    প্রথম আলো আওয়ামী লীগের, গণতন্ত্রের, দেশের মানুষের ‘শত্রু’: প্রধানমন্ত্রী
    https://bangla.bdnews24.com/media_bn/3n41iqolfg

    সংসদ নেতার বক্তব্যের সমর্থনে সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে ‘ঠিক, ঠিক’ আওয়াজ তোলেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন, ‘শেইম, শেইম’।

    জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দৈনিক প্রথম আলোর কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    তিনি বলেছেন, “প্রথম আলো আওয়ামী লীগের শত্রু, প্রথম আলো গণতন্ত্রের শত্রু, প্রথম আলো দেশের মানুষের শত্রু।”

    জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনে সোমবার সমাপনী ভাষণ দিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানেই প্রথম আলোর প্রসঙ্গ আসে।

    স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন ও ফটো কার্ড নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা বক্তব্য ও কর্মসূচির মধ্যে প্রথমবারের মত বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী।

    তার অভিযোগ, কিছু বুদ্ধিজীবী, ও যারা ‘বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন’ তারা, ‘সামান্য কিছু পয়সার লোভে’ অগণতান্ত্রিক ধারা আনতে এদের (প্রথম আলো) তাবেদারি ও পদলেহন করে।

    সংসদ নেতা বলেন, “(প্রথম আলো) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। এখন দেখা যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাজাপ্রাপ্ত তাদের পক্ষ হয়ে তারা ওকালতি করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে তারা এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে যার কোনো গণতান্ত্রিক অস্তিত্বই থাকবে না।”

    প্রথম আলো নিয়ে যা হয়েছে

    গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”

    ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল।

    ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলেন।

    পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।

    পরদিন একাত্তর টিভি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে দাবি করা হয়, দিনমজুর জাকির হোসেনের নামে যে বক্তব্যটি প্রকাশ করা হয়, সেটি আসলে একটি শিশুর মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে। সে জন্য শিশুটিকে ১০ টাকা ‘ঘুষ’ও দেওয়া হয়েছে। তবে যার নামে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, সেই ‘জাকির হোসেনের’ তালাশ করেনি টেলিভিশনটি।

    প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে ২৯ মার্চ ভোরে তার সাভারের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে তোলা হয়।

    এর মধ্যে এক যুবলীগ নেতা এবং এক আইনজীবী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন শামসের বিরুদ্ধে। আইনজীবীর করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদককেও আসামি করা হয়।

    ওই মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করে শামসকে পাঠানো হয় কারাগারে। ২ এপ্রিল উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর। পরদিন জামিন হয় শামসের। মুক্তি পাওয়ার ছয় দিন পর অন্য মামলাতেও জামিন হয় তার।

    তবে সেই সংবাদের রেশ এখনও রয়ে গেছে। প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সরকার সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন। প্রথম আলোর পক্ষেও নানা বক্তব্য বিবৃতি আসছে।

    ‘শেইম শেইম’

    প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, “মাত্র একটা ছোট্ট শিশুর হাতে ১০টা টাকা দিয়ে, তাকে দিয়ে একটা মিথ্যা বলানো, শিশুর মুখ থেকে কিছু কথা বলানো… কী কথা? ভাত মাংসের স্বাধীনতা চাই।

    “একটা ৭ বছরের শিশু, তার হাতে ১০টা টাকা তুলে দেওয়া এবং তার কথা রেকর্ড করে তা প্রচার করা, স্বনামধন্য একটা পত্রিকা, খুবই পপুলার, নাম তার প্রথম আলো। কিন্তু কাজ করে অন্ধকারে।”

    সংসদ নেতার বক্তব্যের সমর্থনে সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে ‘ঠিক, ঠিক’ উচ্চারণ করেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন, ‘শেইম, শেইম’।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এটা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলি- এরা এদেশে কখনও স্থিতিশীলতা থাকতে দিতে চায় না।”

    ড. ইউনূসের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন

    সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথম আলোর অবস্থান নিয়েও সমালোচনা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে।

    তিনি বলেন, “২০০৭ সালে যখন ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) হয়, তখন তারা উৎফুল্ল। দুটি পত্রিকা আদাজল খেয়ে নেমে গেল। তার সঙ্গে আসেন একজন সুদখোর (ড. মুহম্মদ ইউনূস)। বড়ই প্রিয় আমেরিকার।”

    ড. ইউনূসের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, একটা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। সরকারের বেতন তুলতেন যে এমডি, তিনি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কোথা থেকে পেলেন যে আমেরিকার মত জায়গায় সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেন? দেশে বিদেশে এ অর্থ কোথা থেকে আসে, এটা জিজ্ঞেস করেছে কখনও তারা?

    “এদের কাছ থেকে দুর্নীতির কথা শুনতে হয়! দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ, এদের কাছ থেকে মানবতার কথা শুনতে হয়!

    “গরিবের রক্ত চোষা টাকা পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগ করে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে আবার আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও পেয়ে যায় এবং এসব লোক এদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।”

    ‘আমেরিকা যে কোনো দেশে ক্ষমতা উল্টাতে পাল্টাতে পারে’

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’ নিয়ে এ দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা ‘খুবই বিচিত্র’।

    “আমরা আইয়ুব আমল দেখেছি। ইয়াহিয়া আমল দেখেছি। জিয়ার আমল দেখেছি। জেনারেল এরশাদের আমল দেখেছি। খালেদা জিয়ার আমলও দেখেছি।”

    যুক্তরাষ্ট্র সফরে একটি বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, “আমেরিকায় যখন প্রথমবার যাই, সেখানকার আন্ডার সেক্রেটারির সাথে আমার মিটিং হয়েছিল। বলেছিলাম, আমি একটি মনুমেন্ট দেখে এসেছি। সেখানে লেখা আছে গভমেন্ট অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল। আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি, সে দেশটি হচ্ছে গভমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল।

    “বলেছিলাম, আমেরিকা গণতন্ত্র চর্চা করে তাদের আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত। এটা যখন পার হয়ে যায় তখন কী আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা বদলে যায়? কেন আপনারা একটা মিলিটারি ডিকটেটরকে সমর্থন দিচ্ছেন? আমি এই প্রশ্নটি করেছিলাম।”

    সংসদ নেতা বলেন, “আজকেও বলি…। যে দেশটা আমাদের কথায় কথায় গনতন্ত্রের সবক দেয়, আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু করে কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন কোদন করছেন, ওঠবস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। হ্যাঁ, তারা যে কোনো দেশে ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে আরও বেশি কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে…।

    তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের আমাদের যে এত জ্ঞান দিচ্ছে, কথায় কথায় ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এর কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থাটা কি…?”

    বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত রাশেদ চৌধুরী যে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়ে আছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে যতটা প্রেসিডেন্ট এসেছে সকলের কাছে আমি আবেদন করেছি। আইনগতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমরা ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়েছি।

    “রাষ্ট্রপতির (যুক্তরাষ্ট্রের) কাছে আবেদন করেছি যে এই খুনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাকে আপনারা আশ্রয় দেবেন না। শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতি হত্যাকারী, মন্ত্রী হত্যাকারী। এটা মানবতা লঙ্ঘন। এদেরকে আপনারা আশ্রয় দিয়েন না। ফেরত দেন। কই তারা তো তাকে ফেরত দিচ্ছে না। খুনিদেরকে লালন পালন করেই রেখে দিচ্ছে।”

    ‘৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে কেন এত আপত্তি’

    সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগ যে বিধানের কারণে বন্ধ, বাংলাদেশের সংবিধানের সেই ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবির বিপক্ষে নিজের অবস্থান প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ব্যাখ্যা করেন।

    তিনি বলেন, “৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অনেকেরই আপত্তি। যারা এই আপত্তির কথা তুলছেন, তাদের বোধহয় অভিজ্ঞতার অভাব আছে। এই ৭০ অনুচ্ছেদটাই কিন্তু আমাদের দেশে সরকারের একটা স্থায়ীত্বের সুযোগ এনে দিয়েছে। যার ফলে দেশটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ফ্লোর ক্রস করার কারণে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকার টিকতে পারেনি।

    “এর আগে ১৯৪৬ সালেও একই খেলা হয়েছিল। যার কারণে আমাদের পূর্ব বাংলাটা যেভাবে গঠন হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি। এটা ১৯৫৬ সালের নির্বাচনেও হয়েছিল। পরে মার্শাল ল এসে ক্ষমতা দখল করে।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “কাজেই এ ৭০ অনুচ্ছেদটাই একটি সুরক্ষা দেয় গণতন্ত্রকে সংহত করতে। আর এর ‍সুফল জনগণ পেতে পারে। জানি না কেন কিছু কিছু সদস্যের এর ওপর এত রাগ। কারণ হচ্ছে সরকার ভাঙতে গড়তে বা খেলাটা খেলতে তারা সক্ষম হচ্ছে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।”

    ‘সকলের দিকে দৃষ্টি আছে’

    আওয়ামী লীগ সরকারে এসে কী করেছে, আর তার আগে কী ছিল- তার কিছু হিসাব শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন।

    তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, দেশের মানুষও বিশ্বাস করে, ১৪ বছর একটানা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি। হ্যাঁ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তারপরও আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের মানুষের জন্য অতিরিক্ত দামে জিনিস কিনে এনেও আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি।

    “নিম্ন আয়, মধ্যম আয়, সকলের দিকে আমাদের দৃষ্টি আছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের ভাগ্য গড়তে। এখন গ্রাম আর শহরের পার্থক্য কমে গেছে। শহরের মাঝখানে আরেকটা শহর গড়ে উঠছে। প্রত্যেকটি গ্রামে আমরা নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছি।”

    ‘বিএনপি এতবড় দল কোত্থেকে হয়ে গেল’

    বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। যে বিরোধী দলকে বড় বিরোধী দল বলা হয়, তারা ২০০৮ সালে ২৯টি সিট পেয়েছিল। তারা যদি এত বড় বিরোধী দলই হয়ে থাকে, তাহলে ২৯টি সিট পেল কেন? তারা এতবড় দল কোত্থেকে হয়ে গেল?

    “আর সাজাপ্রাপ্ত আসামি হচ্ছে সেই দলের চেয়ারপার্সন। হত্যা-গুম-খুন-দুর্নীতি-জঙ্গিবাদ-সবকিছুতেই যারা পারদর্শী ছিল। তাদের জন্য দেশের মানুষ আতঙ্কে থাকত। এখন তাদেরকে নিয়ে এত উৎফুল্লতা শুরু করছে। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।”

    বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের ইতিহাস যে বিকৃত করা হয়েছিল, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমনভাবে বিতর্কিত করা হয়েছিল। দেশের অনেক প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধ ও লাখো শহীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস বদলানো হয়েছিল। অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনি। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে।

    “এছাড়া যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। তারা দেশ ও জাতিকে কী দিতে পেরেছে? কিছুই দিতে পারেনি। নিজেদের ভাগ্য গড়তে পেরেছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আজকে তাদের কাছে থেকেও আমাদের গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। তাদের থেকে আমাদের গণতন্ত্রের শিক্ষা নিতে হয়।”

    https://twitter.com/urumurum/status/1645449382874198017

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.