চীনে ভাষ্যকারের অভাব আছে আর ভারতে ভাষ্যকারের প্রাদুর্ভাব। তাই চীনের বিষয়ে জানতে উপযুক্ত লোক খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হয়, তার চেয়ে নিজের চেষ্টায় যতটুকু জানা যায় ততটুকুই লাভ। ভারতকে জানতে উপযুক্ত লোকের অভাব হয় না, কিন্তু নিজের মতো করে ভারতকে জানতে প্রচুর বাধার সম্মুখীন হতে হয়, কারণ জানার আগেই এতসব ধারনার সাথে পরিচিত হয়ে যেতে হয় — তখন ধারনার ভুলশুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে আসল জানাটাই আর হয়ে ওঠে না।
ভারতের বড় শহরগুলোর কোনো একটিতে গিয়ে আপনি যদি সমকালীন রাজনীতি সমাজনীতি নিয়ে আড্ডা মারতে চান — আপনার মনে হবে, আপনি রাজনীতি সমাজনীতির শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে অবস্থান করছেন। কিন্তু সেশহরগুলোতেই যদি আপনি কোনো একটি বিশেষ পণ্য সম্বন্ধে জানতে চেষ্টা করেন, আপনার মনে হবে সবাই আপনার ভক্তি কামনা করছেন। আপনি ভক্তি জ্ঞাপন করলেই ওই বিশেষ পণ্য বিষয়ে যাবতীয় বাবাধর্মী বাচালতা নিরলসভাবে আপনার সামনে পরিবেশিত হতে থাকবে। চীনে আপনি রাজনীতি সমাজনীতি বিষয়ে কোনো বড় শহরের যার সাথেই আলাপ করতে যাবেন, আপনার আলাপ বেশি দূর আগাবে না আর তাদের আগ্রহের চূড়ান্ত অভাবে আপনিও এক পর্যায়ে থমকে যাবেন – মনে মনে ভাববেন ছোট ছোট চোখের এমানুষগুলো আসলেই কিছু দেখতে পায় না। এবার সেখানেই কোনো বিশেষ পণ্য নিয়ে জানতে চান, দেখবেন এক দঙ্গল লোক আপনাকে ওই বিশেষ পণ্যটি সম্বন্ধে জানাতে আগ্রহী, কিছুক্ষণ পর আপনি ওই বিশেষ পণ্যের এতরকম আকার ও ধরনের সাথে পরিচিত হবেন, আপনি দিশাহারা বোধ করতে থাকবেন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে ভারত সফর করেছেন, দুয়েক দিনের মধ্যে তিনি চীন সফর করতে যাচ্ছেন। ভারতের সফরে প্রচুর প্রতিশ্রুতি ও ধারনার সাথে তার পরিচয় ঘটেছে, তিনি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে প্রাজ্ঞ হয়েছেন এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু তিনি কী পেয়েছেন সেবিষয়ে প্রচুর সন্দেহ আছে। কিন্তু তারপরও তিনি অনেক কিছু পাবেন এই ভরসাও তার অমূলক নয়। ভারতের সাথে সম্পর্কে ভক্তিতেই মুক্তি, এই আপ্তবাক্য থেকে আপনি কখনোই সরতে পারবেন না।
কিন্তু আমি সত্যিই জানি না প্রধানমন্ত্রী তার অত্যাসন্ন চীন সফরের জন্য কী কী প্রস্তুতি নিয়েছেন। চীনের কাছ থেকে কিছু পেতে হলে সেটা সরাসরি জানাতে হবে, আমি এই চাই – চীন ওই বিশেষ পণ্য যেভাবেই হোক আপনার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেসাথে তার কোনো এক পণ্যের অসংখ্য আকার ও ধরনের মধ্য থেকে বুঝেশুনে একেবারে সঠিকটাই আপনাকে বেছে নিতে হবে। আপনার বাছাইয়ে ভুল থাকলে চীন কখনো তার দায়িত্ব নেবে না। চীনের কাছ থেকে কিছু পেতে হলে চাওয়ার সময়ই ঠিকঠাক চাইতে হবে। সেখানে ভরসার কিছু নেই। তাই চীনের সাথে কূটনীতিতে সম্পর্কের কোনো দাম নেই, আপনি চীনকে কতটুকু জানেন এবং চীনকে আপনি কতটুকু জানতে চান আপনার সেই আকাঙ্ক্ষার ওপরই নির্ভর করবে চীনের সাথে আপনার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। ঠিক ভারতের সাথে কূটনীতিতে সম্পর্ক যেরকম খুবই গুরুত্বপূর্ণ, চীনের ক্ষেত্রে কিন্তু একেবারেই তা নয়। আপনার ইচ্ছাপত্রটিকে কিছু পণ্যের সমাহার ভাবুন, আপনি উত্তীর্ণ হবেন – আপনার ইচ্ছাপত্রকে যদি ভক্তিসংহিতা করে তোলেন, আপনি উপেক্ষিত হবেন। আমি জয়ী আজ – এ পথে নয় – আমি এই চীনাংশুকটি চাই – এ পথেই খুলবে চীনের দরজা – আপনাকে সার্বক্ষণিক সচেতন থাকতে হবে, তাহলে ঠিকই দেখবেন, ঠিক আপনার চাওয়া চীনাংশুক এসে গেছে আপনার দুয়ারে।
শেখ হাসিনার চীন সফর সফল হোক। বাংলাদেশ চীনাংশুকের স্পর্শধন্য হোক।