পার্বত্য আতঙ্ক : সকপ্র

এই পার্বত্য আতঙ্ক বাংলাদেশকে দিশাহারা করবে। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সচরাচর করা প্রশ্ন কিছু এখানে তুলে ধরলাম, আশা করি মন্তব্যে আরো অনেক প্রশ্ন উঠে আসবে।[...]

ধর্মের ক্ষমতার রাজনীতি, জাতিগত রাষ্ট্রনীতির হৃদয়হীন প্রশাসন ও সেনাবাহিনী, পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ-এ পরিণত করেছে। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে এই পার্বত্য চট্টগ্রাম – একে মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া গেলেও মানুষের মনে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে বাঙালিরা হতরিদ্র, পাহাড়িরা বিচ্ছিন্ন ও উপদ্রুত। এখানে প্রশাসন ও সেনাবাহিনী সবকিছুর মালিক। বৌদ্ধ খ্রিস্টান ও মুসলমানেরা এখানে, জনসমাজ বিন্যাসের প্রতিযোগিতার রাজনীতিতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। লিজ এখানে অর্থনীতি, জঙ্গিত্ব এখানকার ভবিষ্যৎ। এই পার্বত্য আতঙ্ক বাংলাদেশকে দিশাহারা করবে। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সচরাচর করা প্রশ্ন কিছু এখানে তুলে ধরলাম, আশা করি মন্তব্যে আরো অনেক প্রশ্ন উঠে আসবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস কি কলোনিয়াল রাষ্ট্রের ইতিহাস?
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দারা সেটেলারদের কাছে পরাজিত। সেটেলার কোনো বিছিন্ন শক্তি নয়। উপনিবেশের খেয়াল নিয়ে কাজ করে যাওয়া বড় জাতিসত্তার রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী, তার উপনিবেশিক কার্যক্রমের রসদ হিসেবে সেটেলারদের এখানে বসতি গড়তে দিয়েছে, এবং তাদের ক্ষমতায়ন করেছে, যেভাবে উপনিবেশিক শক্তিগুলো নেটিভল্যান্ডে করত। পাহাড়ি-বাঙালি দুই বিচ্ছিন্ন ধারা, একজন আরেক জনের কাছে অপরিচিত – সম্পূর্ণ সম্পর্করহিত : এটাই তো উপনিবেশের আদর্শ পরিবেশ। বড় জাতিসত্তার রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী তার রাষ্ট্রের অন্তর্গত একটি দেশীয় ভূখণ্ড জয় করেছে, তার ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোকে সম্পূর্ণ করতলগত ‘কালো’তে পরিণত করেছে। কোনো সিভিল সোসাইটির কোনো অবকাশ পার্বত্য চট্টগ্রামে কখনো ছিল না। প্রভু-ভৃত্য সম্পর্কই সেখানে উচ্চকিত। রাজারা ছিলেন ও আছেন এবং রাষ্ট্রও ছিল ও আছে। এই কলোনিয়াল রাষ্ট্রে রাজাদের বিরুদ্ধে কোনো অভ্যুত্থান দেখা যায় না, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বারো বছরের সংগ্রাম আমরা ‘শান্তি চুক্তি’র মধ্য দিয়ে অবসিত হতে দেখেছি। কিন্তু রাজা ও রাষ্ট্রকে খর্ব করে ওই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মুক্তি ও বিকাশের সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাইনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস কলোনিয়াল রাষ্ট্রের ইতিহাস।

স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ইতিহাসের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস কি এক হতে পেরেছিল?
না, পারেনি। ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো বড় বাঙালি জাতিসত্তার সাথে কখনো ঐক্যসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনি। সহজ সমাধান হিসেবে ‘বাঙালি’ হয়ে যাওয়ার আহবান জাতিসত্তা বিষয়ে জ্ঞানহীনতাকেই প্রকট করেছে। রাজারা আছেন, সংসদ সদস্য আছেন, সংরক্ষণের বদৌলতে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সন্তানরা আছেন – কিন্তু কোনো প্রতিনিধি নেই। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ইতিহাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস নেই।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি সেটেলার কি বাঙালি-পাহাড়ি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের পক্ষে কথা বলতে সক্ষম?
এই কণ্ঠস্বর আমরা অতীতে শুনতে পাইনি। ভবিষ্যতে পাব সেআশা করি না। দেশের সমাজবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদদের জন্য এক বড় ক্ষেত্র হতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম – যেখানে নিবিড় পাঠ আমাদের বাঙালি-পাহাড়ি সম্পর্কের খতিয়ান উপস্থাপন করতে পারত। না হয় যা সাদা চোখে দেখছি, বাঙালি-পাহাড়ি সম্পর্কহীনতা তাকেই চরম ধরে রাজা ও রাষ্ট্রের দাপটই আমাদের দেখে যেতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা কি পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের পক্ষে কথা বলতে সক্ষম?
একমাত্র সম্ভাবনা আছে এখানে, ইতিহাস ইতিহাসের মতো হয়ে ওঠে এখানেই যখন ক্ষুদ্র জাতিসত্তা হাজার বৈরিতা উপেক্ষা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সেপথের সম্ভাবনার কথা ভেবেই ‘বিচ্ছিন্নতা’ নয় ‘অধিকার আদায়’-এর সংগ্রামই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোকে নেতৃত্ব দিতে পারে এমন কেউ বাঙালির সংবেদনশীল অংশকেও নেতৃত্ব দিতে পারবে, এটা বেশ জোরের সাথেই বলা যায়।

বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান এই পরিচয় ও সংঘাত কি সব সম্ভাবনার দ্বাররুদ্ধ করে দেবে?
এটাতেই সবচেয়ে বেশি ভয়। এখানেই ধর্মের ক্ষমতার রাজনীতির শিকার হব আমরা সবাই। এই ত্রিমুখী বৈরিতা যদি পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে, তাহলে এবিষয়ে আর না ভাবাই ভাল। এই ত্রিমুখী বৈরিতা শক্তিশালী হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসকে এখনই মৃত ঘোষণা করতে আর কোনো দ্বিধা থাকবার কথা নয়।

সকপ্র : সচরাচর করা প্রশ্ন।
প্রশ্নগুলো বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের জনকণ্ঠে ছাপানো সাম্প্রতিক কলাম থেকে নেয়া

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৪ comments

  1. নিরাভরণ - ২৭ মার্চ ২০১০ (৩:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। জনকন্ঠের কলামটির লিঙ্ক থাকলেও ভাল হত, পাশাপাশি রেখে দেখা যেত আর কি কি তথ্য বা বিশ্লেষন উঠে আসছে। পাহাড়ী বাঙ্গালি সমস্যা গুলো কেবল রাজনৈতিক নয়। এর মূল উৎস্য বোধকরি বর্ণবাদের সহজাত প্রবৃত্তি। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, জাতিগত ভাবে আমরা যারা বাঙালি আমাদের অন্য ভাষা বা সংস্কৃতির সাথে পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার অভিজ্ঞতা অনেক কম। আর পাহাড়িদের সাথে বাঙালিদের পার্থক্য অনেক প্রকট ভাবে চোখে পড়ার মত একটা দিক। ফলে অচেনা অজানা এই মানুষদের সাথে ঠিক কি ভাবে ব্যবহার করা যায় সেটা বুঝে উঠতে পারে না অনেকে। আর স্বভাবজাত দুষ্টুলোক যারা তারা তো সুযোগ পেলেই উদ্দেশ্য হাসিল করতে লেগে যায়। তাদের অপরাধগুলো সবক্ষেত্রে হয়ত ঠিক পাহাড়িদের জাতিগত পরিচয়ের দ্বারা মটিভেটেড নয় বরং তাদের অপেক্ষেকৃত দুর্বল জাতিগত অবস্থানের ফল। ভিন্ন জাতিসত্ত্বার প্রতি অথবা জাতিসত্ত্বার স্বকিয়তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব না হলে পাহাড়িদের সাথে বাঙালিদের সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান আশা করা কঠিন হবে। তবে স্বল্পমেয়াদে সরকারের উচিত পাহাড়িদের অধিকারকে সমুন্নত করার ব্যবস্থা নেয়া, তাদেরকে প্রয়োজনিয় নিরাপত্তা দেয়া। সরকারকে এক্ষেত্রে পাহাড়িদের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করতে হবে। আর কেবল মাত্র আন্তরিক হলেই হবে না পাহাড়িদের আস্থা অর্জনের দিকটা দেখতে হবে বেশ গুরুত্ব দিয়ে।

    • মাসুদ করিম - ৩০ মার্চ ২০১০ (২:০৮ পূর্বাহ্ণ)

      লিন্কটা দেয়া হয়েছে। ছাপা কাগজে পড়ে পোস্ট তৈরি করেছিলাম এবং লিন্কটা দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সেদিন জনকণ্ঠে ঢোকা যাচ্ছিল না। আবার কখন ওরকম হয় তাই পুরো লেখাটা এখানেও ব্লক করে দেয়া হল।

      বৃহত্তর জাতিসত্তার জাতীয়তাবাদ বনাম ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জাতীয়তাবাদ
      বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
      পার্বত্য চট্টগ্রামে সমাজ পরিবর্তনের সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছে। এ সকল পরিবর্তনকে বিচার করা জরুরী কৃষক অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। সমতল ভূমির কৃষক অভ্যুত্থান এবং পাহাড়ী জনপদে কৃষক অভ্যুত্থানের চরিত্র এক রকম নয়। পাহাড়ী এলাকার তিন রাজার ল্যান্ডলর্ড রাষ্ট্র এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্রের রাষ্ট্রশক্তির জন্য কনটেস্ট করার ধরন ভিন্ন। পাহাড়ী এলাকার ল্যান্ডলর্ড রাষ্ট্রের বিরম্নদ্ধে কৃষক অভ্যুত্থান হয়নি। কৃষক অভ্যুত্থান ঘটেছে বুর্জোয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। পাহাড়ী এলাকার সশস্ত্র সংগ্রামের তিনটি দিক হচ্ছে : একটি সম্ভাব্য রাষ্ট্রশক্তির প্রত্যাশা, এই প্রত্যাশা গ্রহণের স্ট্র্যাটেজি এবং কর্মসূচী, পরস্পর প্রবিষ্ট প্রতিরোধের আখ্যানে। অন্যদিকে, পাহাড়ী জনসাধারণের ল্যান্ডলর্ড রাষ্ট্র ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে বুর্জোয়া রাষ্ট্র প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সাহায্যে অগ্রসর হয়েছে এবং নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের পিছু পিছু অগ্রসর হয়েছে বাঙালী সেটেলাররা, যাদের প্রশাসন ও সেনাবাহিনী নাগরিক অধিকার প্রদান করেছে। তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসকে কিভাবে দেখব? পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস কি কলোনিয়াল রাষ্ট্রের ইতিহাস? কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ইতিহাস? এই প্রশ্নের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব, একটা বৈপরীত্য স্পষ্ট। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালী সেটেলাররা কি বাঙালী-পাহাড়ী নির্বিশেষে সকল নাগরিকের পৰে কথা বলতে সৰম? অপরপৰে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দারা কি পাহাড়ী-বাঙালী নির্বিশেষে সকল নাগরিকের পৰে কথা বলতে সৰম? মনে হয় একটা ‘বিদেশী শক্তি’ (প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী) নাগরিকবিহীন একটা রাষ্ট্রের ওপর শাসন করে চলেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের সম্মতি নয়, একটা ভূখ- ‘জয়’ করার অধিকার বাসত্মবে কার্যকর আছে। সেজন্য মনে হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাষ্ট্র ব্যবস্থা একটা কনোনিয়াল রাষ্ট্রের ব্যবস্থা, যেখানে সিভিল সোসাইটি নেই।
      এই পরিসরে সেটেলার বাঙালীদের অতীতের সঙ্গে পাহাড়ীদের অতীতের কোন সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্কহীনতার মধ্যে রাষ্ট্রের কমান্ডিং ভয়েস থরথর করে উঠছে, যে-ভয়েস ইতিহাসের একটা অতীত পাহাড়ীদের জন্য নমিনেট করে দিচ্ছে। এই নমিনেটেড ইতিহাসের সঙ্গে পাহাড়ীদের কোন সম্পর্ক নেই। সমস্যা হচ্ছে, ইতিহাসের ডিসকোর্স এই চয়েসের ওপর একানত্মভাবে নির্ভরশীল। বাছাই করার অর্থ হচ্ছে অতীতের সঙ্গে (কোন্ অতীত, কার অতীত) সম্পর্ক তৈরি করা সিভিল সোসাইটির অসংখ্য কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলা (নৃবিজ্ঞান এবং ইতিহাসের এৰেত্রে কাজ করা দরকার)। কাজ না হওয়ার দরম্নন রাষ্ট্রের গর্জন কেবল শোনা যায়, নিম্ন কণ্ঠের আওয়াজ হারিয়ে যায়।
      এসব প্রশ্ন এখন পাবলিক স্পেসে দেখা দিচ্ছে এবং শোনা যাচ্ছে। এসব প্রশ্ন হেজিমনির প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধরন। ইতিহাসে, রাজনীতিতে এবং নৃবিজ্ঞানের এসব ভেসে উঠছে। ভেসে উঠছে নাগরিক এবং রাষ্ট্রের মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে। এ সবের দরম্নন রাষ্ট্রের জন্য (পাহাড়ী এলাকার রাষ্ট্রের জন্য) একটা স্থিতিশীল ভিত্তি খুঁজে পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। ইতিহাস কিংবা যে-কোন জ্ঞান চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ৰেত্রে প্রভুত্ব এবং অধসত্মনতার ক্রিটিক্যাল সম্পর্ক বাদ দিয়ে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয় না। পাহাড়ী জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালী জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদ এক না। সে জন্য দু’সত্মরের জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কভিত্তিক, এই সম্পর্কিক ভিত্তি উন্মোচন করে ৰমতা এবং এসার্ট করে অধসত্মন অটোনমি। আবার, আমরা কাজ করে চলেছি জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ এবং এই মতাদর্শের ক্রিটিকের ৰেত্রে, সেজন্য সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি ডিসকোর্স জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের সীমাবদ্ধতা এবং প্রয়োজন মেলে ধরে, দুই বিরোধী জাতীয়তাবাদের মধ্যে সক্রিয় পাহাড়ী জনসাধারণ এবং বাঙালী জনসাধারণ মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করেছে। দুই পৰের জনসাধারণ হয়ে উঠেছে পলিটিক্যাল এ্যাক্টর।
      এই মুখোমুখি অবস্থান কিংবা পরস্পরবিরোধী অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াইকে ভিন্ন দ্যোতনা দিচ্ছে। অন্যপৰে, সেটেলার মহিলাদের জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদ একরঙা, তারা ঘরের মধ্যে থাকে, সমতল ভূমির ঘরসংসারের মতাদর্শ মেনে চলে।
      আবার, সমতল ভূমির সেকু্যলার মতাদর্শের বদলে ধর্মীয় মতাদর্শ সেটেলার মুসলমানদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সে ৰেত্রে প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী ধর্মীয় মতাদর্শ সমর্থন করছে। সেজন্য ধর্মভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রয়াস পাহাড়িয়া অঞ্চলের সেটেলার কমিউনিটির মধ্যে পরিলৰিত হচ্ছে। অপরদিকে পাহাড়িয়া কমিউনিটির মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মভিত্তিক সমাজ এবং খ্রীস্টান ধর্মভিত্তিক সমাজ পূর্ব থেকেই শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। বৃহত্তর জাতিসত্তার জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদ, বর্তমান মুহূর্তে ৰুদ্র জাতিসত্তার জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদের মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এই অবস্থান থেকে থেকে বৈরিতা তৈরি করে চলেছে।

  2. মাসুদ করিম - ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ (১০:০৪ পূর্বাহ্ণ)

    রাঙামাটিতে অর্ধশত পাহাড়ি বসতিতে অগ্নিসংযোগ

    রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় আনারস বাগান নিয়ে বিরোধে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানে অগ্নিসংযোগ করেছে একদল বাঙালি।

    মঙ্গলবার সকালে বুড়িঘাট ইউনিয়নের সুরিদাশ পাড়ায় এ ঘটনায় তিনটি গ্রামের ৫৭টি বসতবাড়ি ও দোকান পুড়ে গেছে।

    এ ঘটনার পর পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

    পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এ ঘটনার জন্য স্থানীয় পুনর্বাসিত বাঙালিদের দায়ী করেছে।

    বুড়িঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রমোদ বিকাশ খীসা জানান, বগাছড়ি এলাকার মো. আফসার আলী গত বছর সুরিদাশ পাড়ায় আনারস রোপণ করেন।

    গত সোমবার এই আনারস বাগানটি কিছু পাহাড়িরা কেটে দিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সকালে শতাধিক বাঙালি বগাছড়িতে জড়ো হয়ে প্রথমে রাঙামাট-খাগড়াছড়ি সড়কে ১৪ মাইলে অবস্থিত চাকমাদের ৭টি দোকানে আগুন দেয়।

    এরপর তারা পার্শ্ববর্তী সুরিদাশ পাড়া, নবীন তালুকদার পাড়া ও বগাছড়ি পাড়ায় ঢুকে ঘরবাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাট চালায়।

    আগুনে ৫০টি বাড়ি ও ৭টি দোকান পুড়ে দেওয়া হয়েছে।

    ঘটনার পর আইন-শৃংখলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি রুটে সড়ক চলাচল বন্ধ রয়েছে।

    জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার আমেনা বেগম, নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা, নানিয়াচর সেনা জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সোহেল আহমদ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

    এ ঘটনায় নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

    জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল জানান, আনারস বাগান নিয়ে এই ঘটনাটি ঘটেছে। সোমবার রাতে এই আনারস বাগানটি কে বা কারা কেটে দেয়। ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসন থেকে এক লাখ টাকা আর্থিক সাহায্যে দেওয়া হয়েছে।

    ঘটনার সাথে জড়িত যেই হোক তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

    এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার বিভাগের সহ-সম্পাদক সজীব চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, বগাছড়ির পুনর্বাসিত বাঙালিরা ৩টি জুম্ম গ্রাম ছুরিদাস পাড়া, নবীন কার্বারী পাড়া ও বগাছড়িতে এ হামলা চালায়।

    হামলাকারীরা বাড়িঘর পোড়ানো ছাড়াও এক বৌদ্ধ ভিক্ষু ও দুইজন পাহাড়িকে মারধর করেছে। একটি বৌদ্ধ বিহারের বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর ও ৫টি পিতলের বুদ্ধমূর্তি লুট করেছে।

    তিনি ঘটনার তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।

  3. মাসুদ করিম - ২৭ আগস্ট ২০১৫ (৫:০৪ অপরাহ্ণ)

    কল্পনা কি বেঁচে আছেন?

    কল্পনা চাকমাকে এখনো অপহৃত হিসেবেই বিবেচনা করছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷ তাই তাঁকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন কিছুটা হলেও দেখছেন কেউ কেউ৷ ১৭ বছর আগের এই অপহরণের প্রত্যক্ষ সাক্ষী কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমার সঙ্গে কথা বলে সেটাই মনে হয়েছে শহীদুলের৷ তবে বাস্তবতা তেমন নয়৷ শহীদুল বলেন, ‘‘আমরা যদি ঠান্ডা বাস্তবতার কথা ভাবি, তাহলে আমাদের সকলের কাছেই বিষয়টি পরিষ্কার৷ শুধু যে তাঁকে ১৭ বছর ধরে পাওয়া যায়নি, তা নয়৷ তাঁর শেষ যে আর্তনাদ ‘দাদা মোরে বাঁচা’ ঐ জায়গা থেকে শোনা যায়৷ তারপর কিন্তু গুলির শব্দ শোনা যায়৷ এবং তারপরের দিন গ্রামবাসী সেই জলাশয়ে (যেখান থেকে আর্তনাদ এবং গুলির শব্দ শোনা গেছে) লাশ খুঁজে বেড়ায়, কিন্তু পায়নি৷”

    শহীদুল বলেন, ‘‘সামরিক বাহিনীর স্বভাবও আমাদের জানা আছে, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে, যেখানে এত রকমের হত্যাকাণ্ড হয়েছে, অত্যাচার হয়েছে, সেই নিপীড়নের ইতিহাসের মধ্যে যখন এরকম একজন শক্তিশালী, বিপ্লবী নেতাকে অপহরণ করা হয়, তারপরে তাঁকে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম৷”

    ‘একমাত্র কাজ শোষণ করা’

    কল্পনা চাকমাকে অপহরণের পর পেরিয়ে গেছে ১৭ বছর৷ এই সময়ে একাধিকবার সরকার বদল হয়েছে৷ কিন্তু কোনো সরকারই অপহরণের বিষয়টি সুরাহায় কার্যত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি৷ তারমানে কি কোনো সরকারই সামরিক বাহিনীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নয়? এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে শহীদুল বলেন, ‘‘আমাদের সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন আছে কিনা সেটাই আমি প্রথমে প্রশ্ন করি৷ ৪৩ বছর ধরে আমরা যে সামরিক বাহিনীকে লালন করছি, তারা কিন্তু দেশরক্ষায় একবারও নিয়োজিত হয়নি৷ আমাদের শান্তি আছে, সেটা ভালো৷ তবে বিশাল অংক এদের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে৷ যেটা শিক্ষায় যেতে পারতো, স্বাস্থ্যে যেতে পারতো, অন্যান্য খাতে যেতে পারতো৷”

    শহীদুল বলেন, ‘‘এমনকি যে জায়গায় তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু আশা করতে পারি, আমাদের সীমান্তে বাঙালিদের যে পাখির মতো গুলি করা হচ্ছে, বিএসএফ-রা গুলি করছে, সেখানে প্রতিবাদ করা, সেখানে অন্তত বাঙালিদের, বাংলাদেশিদের বাঁচানো, সেই কাজেও তারা (সেনাবাহিনী) কোনো কিছু করেনি৷ তাদের একমাত্র কাজ শোষণ করা৷”

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.